ডলারের দাম বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেড় মাস পর আবারও ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ৬ নভেম্বরের পর এই রিজার্ভ কমতে শুরু করে। চলতি মাসের শুরুতে যা ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে যায়। পরবর্তীতে মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়ে আবারও ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে রিজার্ভের তিনটি হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমটি হলো বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভ। দ্বিতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তহবিল বা ঋণের অর্থ বাদ রাখা হয়। আর তৃতীয়টি হলো ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রোস রিজার্ভ গতকাল সোমবার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার। গত ১ ডিসেম্বর যা ছিল ২৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ গতকাল ২০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত ১ ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১৮ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। তবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৫ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।
জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আমদানি পণ্যের বিল বাবদ ১৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। এর ফলে আইএমএফের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে। গত ১ ডিসেম্বর শেষে যা সামান্য বেড়ে ১৮ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার হয়। এরপর সর্বশেষ তিন সপ্তাহে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার বেড়ে এই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল। বিশেষ করে ডলারের দাম ১২০ টাকায় ছিল। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রাখে। বিপরীতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম বাড়ায় বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। যার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বাড়ছে।
চলতি মাসের মাত্র ২১ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। শনিবার পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২০০ কোটি ৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে)। এর আগে এত কম সময়ে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। অর্থ পাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে হুন্ডি চাহিদা কমে ব্যাংকিং চ্যানেলে এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২১ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। চলতি মাসের বাকি ১০ দিন এ হারে প্রবাসী আয় এলে মাস শেষে রেমিট্যান্স প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এর আগে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাইতে। করোনার কারণে হুন্ডি প্রায় বন্ধ থাকায় ওই সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স ব্যাপক বাড়ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে প্রবাসী আয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই ছাড়া প্রতি মাসেই আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে প্রথম মাস জুলাইতে রেমিট্যান্স নেমেছিল ১৯১ কোটি ডলারে। এরপর থেকে ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে জুলাই-নভেম্বর সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন বা এক হাজার ১১৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৩৩ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।
দেশে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা দেশি মুদ্রায় প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার মতো। গত বছরের নভেম্বরে দেশে এসেছিল ১৯৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে এবার একই সময়ে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এর আগে গত অক্টোবরে দেশে ২৩৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছিল, যা ২০২৩ সালের অক্টোবরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। গত সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ডলার ও আগস্টে ২২২ কোটি ডলার প্রবাসী আয় আসে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা