আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৪:৩২
সিংড়ায় বিএডিসির খাল এখন কৃষকের গলার কাঁটা
অপরিকল্পিত খননে সেচ সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

সিংড়ায় বিএডিসির খাল এখন কৃষকের গলার কাঁটা

নাটোরের সিংড়ায় অপরিকল্পিতভাবে শৈলমারী খাল খননের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের সিংড়ায় পাটসাঐল-শৈলমারী খাল খননে অনিয়ম এবং অপরিকল্পিত খাল খননের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে খাল খনন করে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। খাল খননের ফলে কৃষি জমির ওপর প্রভাব পড়েছে।

প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে খালের পাড়ে কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে খালের নকশা অনুযায়ী খনন কাজ না করার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া কৃষকদের জমিতে মাটি ফেলে জমির আবাদ নষ্ট এবং ফসল ঘরে তোলার সুবিধা বঞ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য খাল খনন কৃষকের গলার কাঁটা হয়েছে। সেখানে বরেন্দ প্রকল্পের গভীর নলকূপ ও হুমকির মুখে পড়েছে। শফিকুল ইসলাম ও আবুল কাসেমের লিজকৃত জমিতে খাল খননেরও অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে খাল দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়।

জানা যায়, ২০২৩- ২৪ অর্থবছরের আওতায় পাটসাঐল-শৈলমারী খাল খনন করে বিএডিসি। সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসের ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল কালাম, ১২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান জাহিদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আহম্মদ আলী, সহযোগী ফুলচান আলী, ইয়াদ আলীর নেতৃত্বে খাল খনন করা হয়। খালের দুই ধারে কৃষি জমির ওপর মাটি ফেলে সেই মাটি বিক্রির প্রস্তুতি নেয় ওই প্রভাবশালী মহল। ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসসহ তার অনুসারীরা। গত ১৭ ডিসেম্বর স্থানীয় আশরাফুল ও আবুল কাসেমের মধ্যে খালের মাছ মারা নিয়ে সংঘর্ষ ঘটে।

আবুল কাসেমের ছেলে মিলন দাবি করে বলেন, ‘খাল খননের নামে আমাদের জায়গা দখল করা হয়। ১৩৮ দাগের ৪ বিঘা জমি আমরা সরকার থেকে লিজ নিয়েছি, জায়গা আমাদের। ৪৫ বছর থেকে ভোগ দখল করে আসছি। সেখানে একটি মহলের উসকানিতে লাঠিসোঁটা নিয়ে মাছ মারতে যায় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আশরাফুল, ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মোস্তফা, ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্টু, ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি খোরশেদ আলম, পৌর শ্রমিক দলের নেতা রবিউল, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মেরাজুল ইসলাম ও তার লোকজন। এর মাধ্যমে বিধিনিষেধ অমান্য করা হয়েছে।

ছাত্রদল নেতা আশরাফুল বলেন, সরকারি খালে মাছ ধরার অধিকার সবার, খাল কখনো কেউ লিজ নিতে পারে না। আমরা খালে মাছ মারতে গেলে কাসেমের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে।

স্থানীয়রা জানান, এই মাঠে আ. মান্নান তার ৩০ বিঘা জমি আবাদ করেন। এছাড়া জুয়েল ২ বিঘা, রজব আলী ২০ বিঘা, বদিউজ্জামান ২০ বিঘা, আবু তালেব ২০ বিঘা, আ. লতিফ ১৫ বিঘা, আ. সালাম ১০ বিঘা, জিন্নাহ ৩০ বিঘা, সের আলী ১৫ বিঘা, জয়নাল-৩০ বিঘা, আ. হালিম-১০ বিঘা, মোস্তফা -১৫ বিঘা জমিসহ অর্ধশত কৃষক এ মাঠে আবাদ করেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা সেচ সুবিধা বঞ্চিত। খালের দুই ধারে মাটি পড়ে থাকায় চলাচলের রাস্তা নেই, কোনো যানবাহন যেতে পারে না। এতে আবাদে ব্যয় দ্বিগুণ বেড়েছে। এ জন্য অপরিকল্পিত খাল খননকে দায়ী করছেন তারা। এজন্য খালের দুই পারে মাটি অপসারণ, খালের ওপর দুটি ব্রিজ স্থাপন, চলাচলের রাস্তা সমতল করার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

বিএডিসি সূত্রে জানায়, ২০২৩/২৪ অর্থবছরে পাবনা নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলার ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনিশা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১২০০ মিটার খাল খননের কাজ হাতে নেয়। এতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

বিএডিসির সিংড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মানিক রতন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং কৃষকদের সুবিধার্থে খাল খনন প্রজেক্ট বিএডিসির আওতায় করা হয়। সিংড়া উপজেলায় প্রায় ১৮৬ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। শৈলমারী খাল সরকারি খাল লিজ নেওয়ার কথা শুনেছি, জেনেছি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।