আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০০:৩৭
সাইকেল রপ্তানিতে আশার আলো
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাইকেল রপ্তানিতে আশার আলো

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় গত অর্থবছর সাইকেল রপ্তানি থেকে আয় তলানিতে নেমেছিল। গত কয়েক মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই খাতের রপ্তানি। পরিবেশবান্ধব বলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাইসাইকেল এখন আগের মতোই রপ্তানি হচ্ছে। ব্রিটেন, জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাইকেল রপ্তানি হয়। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৪ কোটি ২৩ লাখ ডলারের সাইকেল রপ্তানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

সর্বশেষ নভেম্বর মাসে বেড়েছে ১৫৭ শতাংশ। এই মাসে সাইকেল রপ্তানি থেকে ৯০ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আয় হয়েছিল ৩৫ লাখ ১০ হাজার ডলার।

অথচ গত অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় কমেছিল ৪২ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে কমেছিল ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাইকেল রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১৪ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ডলার।

বাইসাইকেল রপ্তানি থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ১৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আরও বেশি ৫৮ শতাংশ; ওই অর্থবছরে ১৩ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় হয়েছিল তার আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) আয়ের অঙ্ক ছিল ৮ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠান এখন বাইসাইকেল রপ্তানি করে। একটি হচ্ছে- মেঘনা গ্রুপ। আরেকটি প্রাণ-আরএফএলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ। দুটি প্রতিষ্ঠানই গত কয়েক বছরে বাইসাইকেল রপ্তানি বাড়াতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, বাড়িয়েছে বিনিয়োগ। মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ মেঘনা গ্রুপের দখলে।

এই গ্রুপের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাইসাইকেল রপ্তানি একেবারেই কমে গিয়েছিল। সেই ধাক্কা কেটে ফের বাড়তে শুরু করেছে রপ্তানি। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি বাড়ছে। এখন প্রতি মাসেই বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমাদের সাইকেলের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপীয় অর্থনীতি বেশ সংকটের মধ্যে পড়েছিল। সব দেশেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছিল, অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছিল। তার প্রভাব পড়েছিল সাইকেল রপ্তানিতে। এখন সে সংকট কেটে গেছে। মানুষ আগের মতোই সব পণ্য কিনছে। তাই সাইকেল রপ্তানিও বাড়ছে।

এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে সাইকেল রপ্তানি থেকে আগের চেয়েও বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসবে বলে জানান তিনি।

সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, ‘আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। উৎপাদন বাড়িয়েছি। আশা করছি, গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে ২৫-৩০ শতাংশ বেশি রপ্তানি হবে।’

জানা গেছে, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজের বছরে ৯ লাখ বাইসাইকেল তৈরির সক্ষমতা আছে। যার এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপে রপ্তানি করা হয়। বাকিটা দেশের বাজারে বিক্রি হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যানবিষয়ক সংস্থা ইউরোস্ট্যাট এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৃতীয় ও বিশ্বের অষ্টম বাইসাইকেল রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া বাইসাইকেলের ৮০ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। বাকিটা যায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে।

ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম দিকে এ খাত থেকে তেমন আয় না হলেও ২০০৮ সাল থেকে বাড়তে শুরু করে রপ্তানি। রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমানে ফ্রিস্টাইল, মাউন্টেন ট্রেকিং, ফ্লোডিং, চপার, রোড রেসিং, টেন্ডমেড (দুজনে চালাতে হয়) ধরনের বাইসাইকেল রপ্তানি হচ্ছে।

এসব সাইকেল তৈরির জন্য কিছু যন্ত্রাংশ বাংলাদেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হলেও বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই দেশে তৈরি হচ্ছে। বিশেষত চাকা, টিউব, হুইল, প্যাডেল, হাতল, বিয়ারিং, আসন তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

ইউরোপের বাজারে বাইসাইকেল রপ্তানির শীর্ষে আছে তাইওয়ান। পরের অবস্থানে আছে থাইল্যান্ড। বাহন হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাইসাইকেল এমনিতেই পছন্দ করেন অনেকে। একদিকে স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এবং অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব- এ দুটো কারণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাইকেলের চাহিদা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ইউরোপিয়ান সাইক্লিস্ট ফেডারেশন বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ইউরোপে প্রতিবছর তিন কোটি সাইকেল বিক্রি হবে। অর্থাৎ এখন যা বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে আরও এক কোটি বেশি বিক্রি হবে। বাংলাদেশের জন্য এটি আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।