গভীর রাতে সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো নাশকতার প্রমাণ মেলেনি বা কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি বলে জানিয়েছে ওই ঘটনায় গঠিত উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি। প্রাথমিক রিপোর্টে তারা জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বিদ্যুতের ‘লুজ কানেকশনের’ কারণে।
আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একাধিক দল কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল ছিল, দমকল বাহিনীর যারা ফায়ার হ্যান্ডেল করে তাদের এক্সপার্ট ছিল, সেনাবাহিনী থেকে তাদের বোম্ব স্কোয়াড ছিল, তাদের বিশেষায়িত কুকুরগুলো-ডগ স্কোয়াড তারাও কাজ করেছে। পুলিশের সিআইডি থেকে তারা কাজ করেছে।
নাসিমুল গনি বলেন, ‘এরা সকলে মিলে একত্রে একটি বিষয়ে এক মত হয়েছি যে এটি একটি লুজ কানেকশনের কারণে ইলেকট্রিসিটি থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়েছে। এটি আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত। এতে অন্য কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আমরা খুঁজে পাইনি।’
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে গঠিত আট সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গতকাল বিকেল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান সংবাদিকদের সামনে আসেন।
গত বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লেগে ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় থাকা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর পুড়ে যায়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার।
কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়, যে সময়সীমা শেষ হয় সোমবার। পরে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় এক দিন বাড়িয়ে নেয় কমিটি।
বিফ্রিংয়ে তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সোর্স একটাই তবে টানেলের কারণে অন্যদিকে গিয়েছে। ফলে ছয়তলা শেষ না করে, সাততলার আগুন নেভানো সম্ভব ছিল না। বাইরে থেকে দুই জায়গায় আগুন মনে হলেও, এটা আসলে ইন্টারকানেক্টেড বলে এমন মনে হয়েছে।
অধ্যাপক বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় আমরা সুনির্দিষ্ট একটি রিপোর্ট তৈরি করতে পেরেছি। যদিও সুনির্দিষ্ট বলছি, তারপরও এটিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করার জন্য আরও বেশ কিছু টেস্ট দেশে-বিদেশে করাব। আমরা স্যাম্পল পাঠিয়েছি। সে রিপোর্টগুলো পেলে আমাদের রিপোর্ট আরও নিশ্চিত হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি, ভিডিও পাওয়ার আগে এবং পরে মিলিয়ে দেখেছি, ফলাফল একই।’
এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব হাসান বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া ফ্লোরগুলোতে কোনো ধরনের বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াড দিয়ে সার্চ করিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস থেকে যে নমুনা পাওয়া গেছে তাতেও কোনো ধরনের বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।’
ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘করিডরে আগুন থাকায় নেভাতে দেরি হয়েছে, কলাপসিবল গেট থাকায় তা কেটে ভিতরে ঢুকতে হয়েছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কারণে আগুন বেশি ছড়িয়েছে। পর্যাপ্ত পানি ছিল না।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা