আপডেট : ২ জানুয়ারি, ২০২৫ ২১:১৫
ভ্যাট বাড়লেও নিত্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়বে না: অর্থ উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভ্যাট বাড়লেও নিত্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়বে না: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সরকার ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে নিত্যপণ্যের বাজারে ‘প্রভাব পড়বে না’ বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাড়ানো হলেও সেটি সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিকে তেমন প্রভাবিত করবে না। এতে পণ্যের দামও বাড়বে না। আর সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কারণ অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের ওপর সব ভ্যাট শূন্য করে দিয়েছি।’

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে রান্নার গ্যাস, প্লাস্টিকের টিফিন বক্স, জুতাসহ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের নানা পণ্য রয়েছে। এসব সংশোধনীসহ মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়ায় বুধবার ১ জানুয়ারি সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে মানুষের জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির মূল ওয়েটের ইন্ডিকেটরগুলো হলো চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। আমরা যে সকল জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছি – এগুলো আমাদের মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।’নেপাল, ভুটান বা বিশ্বের অন্য দেশে এত লো ট্যাক্স নেই জানিয়েছে তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় বলেছি, সেখানে আমরা কর প্রায় জিরো করে নিয়ে আসবো। চূড়ান্তভাবে ভোক্তা ১৫% ট্যাক্স দিচ্ছে না। ইনপুটের জন্য সে রিবেট পাবে।’

বিমানভাড়ার ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিমানের ভাড়ার ক্ষেত্রে আগে ৫০০ টাকা ছিল, সেটি ২০০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বিমানে এখন লোকজন মোটামুটি চড়ে। তারা ২০০ টাকা বেশি দিতে পারবে না বলে মনে হয় না। এগুলো মার্জিনাল।’তিন তারকার ওপর যে রেস্টুরেন্টগুলো, সেগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাতের রেস্টুরেন্ট বা অন্য রেস্টুরেন্ট থেকে তো নেয়া যাবে না। থ্রেসহোল্ড আছে, যাদের টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার ওপর, তাদের ক্ষেত্রে এটা আসবে। অন্য কোনো ব্যবসা তো এটার মধ্যে আসছে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস পর এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হচ্ছে, এ বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা করার কারণটা হলো কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাজস্ব গ্যাপ এত বেশি, আমি তো আর বড় করে ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং করে এগোতে পারব না।’ আইএমএফের পরামর্শে এটি করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, সবদিক চিন্তা-ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনে হয় না কষ্ট হবে। জনগণের স্বস্তি না পাওয়ার তো কোনো কথা না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটি খাতে আমরা বরাদ্দ কমাব না, বরং আমরা বৃদ্ধি করব। কিন্তু আমাদের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। ধার করে বেশিদিন চলা যায় না।’

যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়বে

বুধবার মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন পেলেও কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর সূত্রে কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে জানা গেছে।

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, রেস্তোরাঁয় বিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এতদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা এসি রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হতো। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

পোশাক কেনার ক্ষেত্রেও ভ্যাটের হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর ৭.৫% ভ্যাট রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় ফ্লাইটে শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, সার্ক দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ৩,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

নন-এসি হোটেল সেবার ভ্যাট হারও বাড়তে পারে। বর্তমানে ননএসি হোটেল সেবার ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্য যেসব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড তৈরিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।