আপডেট : ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ ০০:১৪
ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিচ্ছেন আজ
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিচ্ছেন আজ

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ক্যাপিটল হিলের কংগ্রেস ভবনের একটি অংশে অনুষ্ঠিত হবে এই শপথ অনুষ্ঠান। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে এমনটি করা হচ্ছে বলে ট্রাম্প নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। এর আগে ১৯৮৫ সালে ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান। সেবারও তীব্র ঠাণ্ডার কারণে শপথ অনুষ্ঠান ক্যাপিটলের রোটুন্ডায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে প্রায় ৪০ বছর খোলা স্থানের পরিবর্তে ক্যাপিটল হিলের ভেতরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান।

শপথ নেওয়ার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরে আসবেন। এই অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হবে এবং ট্রাম্প-ভ্যান্স প্রশাসনের সূচনা হবে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ঐতিহাসিকতার একটি মিশ্রণ রয়েছে। এটি শুধু ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি আয়োজন নয়, আমেরিকার ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাও।

জানা গেছে, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশব্যাপী অভিবাসন আইন প্রয়োগ জোরদার করার পরিকল্পনা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতাকে, যার মধ্যে আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও। কিন্তু চিনপিং নন, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেংকে পাঠাচ্ছে চীন।

এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চীনের কোনো ঊর্ধ্বতন নেতা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে শপথ নিতে দেখবেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ নেই। তবে ট্রাম্প সেই রেওয়াজ ভেঙেছেন। হিস্ট্রি ডটকমের তথ্য অনুসারে, ১৯৩৩ সালে সংবিধানে ২০তম সংশোধনী আনা হয়।

এই সংশোধনী অনুসারে অভিষেকের দিন ২০ জানুয়ারি এবং নতুন কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন শুরুর জন্য ৩ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এর চার বছর পর ১৯৩৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথমবার প্রেসিডেন্টের অভিষেক দিবস পালন করা হয়, যা এখনো চলছে।

শপথগ্রহণের পর ট্রাম্প তার নতুন প্রশাসনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তুলে ধরবেন। এরপর তিনি ক্যাপিটল ভবনের প্রেসিডেন্টস রুমে গুরুত্বপূর্ণ নথিতে স্বাক্ষর করবেন এবং কংগ্রেস আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। দিনের শেষে ক্যাপিটল হিল থেকে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রাতে তিনটি আনুষ্ঠানিক ‘বল’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বক্তব্য দেবেন।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেসের সদস্য, বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও থাকবেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন ক্যারি আন্ডারউড। তিনি ‘আমেরিকা দ্য বিউটিফুল’গেয়ে শপথগ্রহণের মঞ্চে শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পাশাপাশি আমেরিকান ডিসকো গ্রুপ দ্য ভিলেজ পিপল এবং কান্ট্রি সংগীতশিল্পী লি গ্রিনউডও উপস্থিত থাকবেন। আমেরিকান ডিসকো গ্রুপ ভিলেজ পিপল তাদের জনপ্রিয় গান ‘ওয়াইএমসিএ’পরিবেশন করবে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারকালে এই গান ব্যবহৃত হয়েছিল।

শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলেন যারা

নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ গ্রহণ—সবকিছুতেই অভিনবত্বের ছোঁয়া রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নীতির মূলমন্ত্রই হলো ’নতুনত্ব’, এবং এতে তিনি আবারো প্রমাণ করলেন যে, প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি চমক সৃষ্টি করতে জানেন। সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসন্ন সোমবার তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যে বিশেষ কিছু উপস্থাপন করবেন, সে ব্যাপারে নানা আলোচনা চলছে।

প্রসঙ্গত, সাধারণত প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যান্য দেশের সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোর রীতি নেই, তবে ট্রাম্প এই পুরোনো রীতি ভেঙে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম আমন্ত্রিতদের তালিকায় নেই। তবে, অন্যদিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেইর নাম প্রথম সারিতে রয়েছে। মিলেই ইতোমধ্যেই তার উপস্থিতির নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এর আগে, চলতি মাসের শুরুতে, মেলোনি ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে এক সফর করেছিলেন এবং ট্রাম্প তাকে ‘দুর্দান্ত নারী’হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়, যদি কোনো বাধা না আসে।

এছাড়া, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবানও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। কিন্তু অরবানের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এভাবে, ট্রাম্প তার শপথ অনুষ্ঠানে একে একে ভিন্ন ভিন্ন দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে তার নিজস্ব প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট।