আপডেট : ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ২২:৪৫
সনদ নেই তবু তিনি চিকিৎসক!
নিজস্ব প্রতিবেদক

সনদ নেই তবু তিনি চিকিৎসক!

অভিযুক্ত সাহাদাত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসাবিদ্যার সনদ না থাকলেও দিব্বি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন সাহাদাত হোসেন (৫২) নামের এক ব্যক্তি। তার অপচিকিৎসায় আল আমিন হোসেন খোকন (৪২) নামে এক মুদি দোকানির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

মৃত আল আমিন হোসেন খোকনের মা মণি জেনারেল স্টোর নামে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণ আজমপুরের মুন্সি মার্কেটে একটি মুদি দোকান রয়েছে। তার জান্নাতুল খুসবু (১৪) এবং মহিবুল্লা তাসিন (১২) নামে দুটি ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে।

জানা যায়, আল আমিন গত ১৪ অক্টোবর সকাল ৮টার দিকে দোকানে যাওয়ার পর হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পাশের মারিয়া ফার্মেসিতে যান। তখন ফার্মিসিটির মালিক এবং এলাকায় চিকিৎসক বলে পরিচয় দেওয়া সাহাদাত হোসেন আল আমিনকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রাখেন। পরে বুকের ব্যথায় খুব অসুস্থ বোধ করার কথা জানালে অভিযুক্ত চিকিৎসক সাহাদাত হোসেন রোগী আল আমিনের হাতের শিরায় ২টি ইনজেকশন দেন। ইনজেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বমি করে ফার্মেসির মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় ফার্মেসির মালিক সাহাদাত হোসেন মার্কেটের কয়েকজনের সহায়তায় মৃতপ্রায় আল আমিনকে উত্তরার আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতাল থেকে আল আমিনের মৃত্যুর যে সনদ দেওয়া হয়, তাতে হাসপাতালের চিকিৎসক ব্রড ডেড এবং পুলিশ কেস হিসেবে মৃত আলামিনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু বিষয়টি অতি কৌশলে আড়াল করেন ভুয়া চিকিৎসক সাহাদাত হোসেন। মৃতের পরিবারের সদস্যরা তখন খেয়াল করেননি মৃত্যু সনদে কী লেখা রয়েছে।

একজন সুস্থ মানুষ দোকানে বসা ছিল, বুকে ব্যথা নিয়ে ফার্মেসিতে গেল আর কিছুক্ষণ পর তিনি মারা গেলেন! এসব নিয়ে মুন্সি মার্কেটে কানাঘুষা ও বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে মৃত আলামিনের পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয় এবং তারা যোগাযোগ করেন চিকিৎসক নামধারী ফার্মেসির মালিক সাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। আল আমিনকে কী ধরনের চিকিৎসা দিয়েছিলেন জিজ্ঞাসা করা হলে তখন সাহাদাত হোসেন স্বীকার করেননি যে রোগীর হাতের শিরায় পরপর দুটি ইনজেকশন দিয়েছিলেন।

মৃতের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সন্দেহ আরও বেড়ে গেলে কয়েক দিন পর তারা আবার ফার্মেসিতে যান এবং ঘটনার দিনের ফার্মিসিতে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান। আর তখনই মূল ঘটনা বের হয়ে আসে। সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, আলামিনের হাতের শিরায় পরপর দুটি ইনজেকশন দেওয়ার দৃশ্য। ফুটেজে আরও দেখা যায়, ইনজেকশনগুলো দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আল আমিনের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য। তখন সাহাদাত ইনজেকশন দেওয়ার করার কথা স্বীকার করেন।

এ ঘটনার ২ মাস পর গত ১৯ ডিসেম্বর মৃত আল আমিন হোসেন খোকনের স্ত্রী আসমা হোসেন বাদী হয়ে ভুয়া চিকিৎসক সাহাদাত হোসেনকে প্রধান আসামি করে ঢাকার মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এজাহারে বাদী আসমা হোসেন উল্লেখ করেন, ‘আসামির শুধুমাত্র ওষুধ বিক্রির ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে। তিনি ডাক্তার না হয়েও ডাক্তার পরিচয়ে রোগীর (আল আমিনের) হাতের শিরায় ইনজেকশন দিয়ে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীর উপযুক্ত বিচার চাই।’

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। উপযুক্ত সাক্ষীপ্রমাণ সাপেক্ষে যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে।’