আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ২১:৩৯
মুন্সীগঞ্জে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা
মরদেহ ফেলা হয় দিঘীতে
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি    

মুন্সীগঞ্জে ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা

অভিযুক্ত আইসক্রিম বিক্রেতা সাব্বির। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে ছয় বছরের শিশুকে আমবাগানে নিয়ে যান বিক্রেতা। সেখানে তিনি শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হলে তার নাক-মুখ চেপে হত্যা করেন। এরপর সেই লাশ বস্তায় ভরে দিঘীর কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই আইসক্রিম বিক্রেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আটকের পর রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিখোঁজ শিশু ফাতেমা আক্তারের (৬) মরদেহ উপজেলার রশুনিয়া গ্রামের নূরানী মাদ্রাসার পাশের দিঘী থেকে উদ্ধার হয়।

এদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা শুক্রবার সকালে অভিযুক্ত আসামির বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বলে জানা যায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে খালার সঙ্গে বাড়ির পাশের রশুনিয়া নূরানীয়া মোহাম্মদীয়া মাদ্রাসার ১২তম ওয়াজ মাহফিলে যায় ফাতেমা। পরে সেখানে থাকবে বলে বায়না ধরলে তার খালা মাদ্রাসা পড়ুয়া ফাতেমার বড় ভাই ইসমাইলের কাছে তাকে রেখে আসে। কিন্তু ইসমাইল তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ফাতেমা খেলাচ্ছলে রাস্তার দিকে গিয়ে নিখোঁজ হয়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে শিশুটির স্বজনরা জানতে পারেন, শেষবার তাকে আইসক্রিম বিক্রেতা সাব্বিরের (২৫) সঙ্গে দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাতেই এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সাব্বির সন্দেহজনক জবাব দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে পিটুনি দেন এলাকার লোকজন। পরে সাব্বিরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এ ঘটনায় পরদিন ফাতেমার মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে সাব্বিরকে প্রধান অভিযুক্ত করে সিরাজদিখান থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সাব্বিরকে আদালতে প্রেরণ করে ২ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে সাব্বির জানায়, ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গুম করতে সেটি দিঘীতে ফেলে দেয় সে। পরে তারই দেখানো জায়গা (দিঘী) থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহেদ আল মামুন এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত অপহরণ মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে।

তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে তাকে (সাব্বির) এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে শিশুটিকে হত্যা এবং হত্যার পর লাশ গুমের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। আসামির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে কচুরিপানার নিচ থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাব্বির ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

সাব্বিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে শিশুটির চাচা বলেন, ‘শিশুটির বাবা বিদেশে থাকে। ওর মা প্রায় অচেতন হয়ে আছে। বাচ্চা একটা মেয়ের সঙ্গে এমন নির্মমতা হলো। আসামি সাব্বিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’