আপডেট : ১২ মার্চ, ২০২৫ ২০:১০
৫ মামলার আসামি, পুলিশ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ
রহস্যজনক ভূমিকায় ওসি
নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ মামলার আসামি, পুলিশ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ মামলার আসামীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার বি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে এ ঘটনা ঘটে।

‎‎পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামীর নাম- গোলাম মোস্তফা। তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৫ টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো হলো- মোহাম্মদপুর থানার মামলা নম্বর-৬৯, রামপুরা থানার মামলা নম্বর-১৮, বাড্ডা থানার মামলা নম্বর-১৬, ক্যান্টমেন্ট থানার মামলা নম্বর-১৬ ও চকবাজার থানার মামলা নম্বর-৫৬।

‎‎পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জানুয়ারীর ১৪ তারিখ ৫ মামলার আসামী ও আওয়ামীলীগের সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানকে সহযোগী গোলাম মোস্তফা ও হাফিজুর রহমান লিকুর অন্যতম ক্যাশিয়ার এবং বৈষম্যবিরোধী একাধিক মামলার আসামী আনিসুর রহমান সোহাগ রাত ১০ টায় মোহাম্মদপুর থানায় প্রবেশ করে ওসি আলি ইফতেখার হাসানের সঙ্গে মিটিং করেন। ওসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর থেকে তারা মামলার আসামী হয়েও এলাকায় নিয়মিত ঘুরে বেড়ান। গতকাল বুধবার এদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেও ওসির নির্দেশে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ওসির অধস্তন অফিসাররা।

‎সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ১১ টায় লালমাটিয়া এলাকার বি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ওপর সকাল ১১টায় মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৫ মামলার আসামী গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করতে যায়। তাকে গ্রেপ্তার করে হাতকড়া পড়ানোর পর আশপাশে থাকা ৮-১০ জন সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আসামী ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তিতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। এছাড়াও, আসামীকে গ্রেপ্তারের পর আসামী মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে ফোন করেন। এ সময় ওসি আসামীকে ধরতে যাওয়া অফিসারদের ফোন করে আসামীকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে নির্দেশ দেন। আসামীকে কেন ধরতে গেছে এমন ধমক দিয়ে অফিসারদের তিনি শাসন করেন।

‎‎প্রতক্ষ্যদর্শী শরীফুল জানান, সকাল ১১ টায় বেশ কয়েকজন অফিসারসহ পুলিশের একটি টিম রাস্তা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আশপাশে থাকা ৮-১০ জন সিকিউরিটি গার্ড ও আশপাশে কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর আতর্কিত হামলা করে। তাদের ওপর হামলার পরও তারা ওই লোককে হাতকড়া পরায়। তখন পুলিশ দেখলাম ফোনে কার সাথে কথা বলার পর তার হাতকড়া খুলে দিয়েছে। পরে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম, ওই লোকের নামে বৈষম্যবিরোধে আন্দোলনের একাধিক মামলা আছে। মনে হয়েছে সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে পুলিশকে মেরে ফেলবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন তারা।

‎‎পুলিশের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া সিকিউরিটি গার্ড দেলোয়ার জানান, সকাল ১১ টার দিকে এভোরেজ স্কুলের মালিক আমাদের স্যার গোলাম মোস্তফা স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠছিল। এ সময় পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল। ওই সময় তার এক হাতে হাতকড়াও লাগায়। সাথে সাথে আমরা যারা ছিলাম সবাই পুলিশকে ঘেরাও করে ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে যাই। ওই সময় পুলিশের সাথে আমাদের লোকজনের ধাক্কাধাক্কি হয়। তখন মোবাইল ফোনে আমাদের কর্তৃপক্ষ থানার ওসিকে বিষয়টি জানালে পুলিশ তার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যায়। এ সময় দেলোয়ারের সাথে যুক্ত হয় আরও দুই সিকিউরিটি গার্ড হাফিজ ও রেজা। তারা জানান, পুলিশের এতো বড় সাহস কোন কিছু ছাড়া আমাদের সামনে থেকে আমাদের স্যারকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবে। গ্রেপ্তার করতে আসছে দেখে আমরা সবাই পুলিশকে উল্টা আটক করেছি। তাদেরকে ওই সময় ওয়ারেন্ট দেখাতে বলেছি। তারা মোবাইলে কাগজ দেখায়। কোন কাগজপত্র সাথে নিয়ে আসে নাই।

‎‎এ ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানান, সকালের দিকে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার করতে লালমাটিয়া এলাকায় যায়। আসামী গ্রেপ্তার করার বিষয়টি আমি অবগত। কিন্তু আসামী গ্রেপ্তারের সময় ওই আসামীর লোকজন মব সৃষ্টি করে আমাদের পুলিশের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ আসামীকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আমরা খুব শিগগিরই আসামীর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। যতটুকু জানি থানা পুলিশ আসামি থাকার তথ্য পেয়ে গিয়েছিল কিন্তু তাকে পায়নি। আসামীকে ছেড়ে দেওয়া বা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার বিষয়ে আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে দেখছি বিষয়টা।