আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০২
ঋণ জটিলতা-মহামারিতে ৫ বছর পার, মেয়াদ শেষে শুরু নির্মাণকাজ
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ঋণ জটিলতা-মহামারিতে ৫ বছর পার, মেয়াদ শেষে শুরু নির্মাণকাজ

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা: ছবি সেতু বিভাগের সৌজন্যে

চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল সাভার থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। কিন্তু চীন থেকে ঋণের অর্থ পাওয়া নিয়ে জটিলতা ও করোনা মহামারির জন্য নির্দিষ্ট সময়ে কাজই সেভাবে শুরু করা যায়নি। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। অবশেষে নির্মাণকাজ শুরু হলো প্রকল্পটির। শনিবার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্প সূত্র জানায়, জিটুজি অর্থাৎ সরকারি পদ্ধতিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি নেয়া হয়। তবে চীন থেকে ঋণের অর্থ পাওয়া নিয়ে জটিলতা ও করোনা মহামারির জন্য নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়নি। তবে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে।

২০১৭-এর জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা ছিল ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর অর্ধেকেরও বেশি অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে চীন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পটি সংশোধন করে আরও চার বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সঙ্গে নির্মাণব্যয়ও বেড়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকায়।

প্রকল্পের নির্মাণকাজের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের কাজ হবে তিন ভাগে। টঙ্গীর কামারপাড়ার পর থেকে মূল নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় কাজ শুরু করতে যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প পথ তৈরি করা হচ্ছে। যেহেতু দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গাড়ি ঢাকায় এই পথে প্রবেশ করে, তাই নির্মাণকাজের সময় যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গেছে। ডাইভারশন করে যানবাহন চলাচল ঠিক রেখেই নির্মাণ কাজ করব, যাতে যানজট না লাগে। যেহেতু ব্যস্ত করিডরে কাজ হচ্ছে, তাই কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা মেনেই কাজ হবে। এখন প্রকল্পে আর কোনো ধরনের জটিলতা নেই। যেহেতু চীনের এক্সিম ব্যাংক টাকা দিচ্ছে, তাই ডলার সংকটেও কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আশা করছি ২০২৬ সালের জুনেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করতে পারব।’

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থিত ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সঙ্গে যুক্ত করবে। অন্যদিকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজও চলমান। এই এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পয়েন্টে যুক্ত হবে।

এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা ইপিজেড থেকে আশুলিয়া, আব্দুল্লাহপুর, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি কাওলা হয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৪ কিলোমিটার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি করবে। আশুলিয়া-নবীনগর-বাইপাইল হয়ে সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টি জেলার আনুমানিক চার কোটি মানুষ এই প্রকল্প বাস্তবায়নে লাভবান হবে।

প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উড়াল সড়কে ওঠানামার জন্য তৈরি করা হবে ১৬টি র‍্যাম্প। র‍্যাম্পগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি প্রায় ১৪ কিলোমিটারের বেশি সড়ক নির্মাণ তৈরি করা হবে একই প্রকল্পের মাধ্যমে। এ ছাড়া নবীনগর এলাকায় তৈরি করা হবে ১ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার, ২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার সেতু, ৫০০ মিটার ওভারপাস। করিডরটিতে টোলপ্লাজা তৈরি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নও করা হবে।

প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবে (ডিপিপি) বলা হয়েছে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন হলে দেশের জিডিপিতে শূন্য দশমিক ২১৭ শতাংশ প্রভাব ফেলবে এ উড়াল সড়ক।

তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারা একটা ব্যর্থতা। এতে প্রকল্প থেকে যে ধরনের উপযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল, তা পাওয়া যাবে না।