আপডেট : ১২ এপ্রিল, ২০২৫ ১৪:৫৭
কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসল বিজুর ফুল
উৎসবে মাতোয়ারা পার্বত্য চট্টগ্রাম
বিজয় ধর, রাঙামাটি

কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসল বিজুর ফুল

কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আয়োজন। ছবি: দৈনিক বাংলা

বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবে মাতোয়ারা পার্বত্য চট্টগ্রাম। আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসল বিজুর ফুল।

শনিবার সকালে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আয়োজন। পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব ১৯ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠীর জলকেলি’র মাধ্যমে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা।

২৯ চৈত্র ১২ এপ্রিল শনিবার সকালে হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে দিনটি উদযাপন করে থাকে। তবে এটি ‘ফুল বিজু’ নামে বেশি পরিচিত। রাঙামাটির শহরের গর্জনতলী মধ্যম দ্বীপে কাপ্তাই হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল ভাসিয়ে এর উদ্বোধন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার।

পূর্ণময় এই দিনে দেশ ও দশের মঙ্গল কামনা করছেন পাহাড়িরা। সবেমাত্র পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে সূর্য। তার লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে হ্রদের বুকে। সেই ভোরে নানা বয়সি মানুষ ফুল নিয়ে জড়ো হতে থাকে ঘাটে। ডালায় থাকা রক্তজবা, রঙ্গণ গাদাসহ নাম না জানা বুনো ফুল কলা পাতায় সাজাতে ব্যস্ত সবাই। উদ্দেশ্য গঙ্গা দেবীর আরাধনার হ্রদের জলে ফুল নিবেদন। এ উৎসবে নারীরা পরিধান করেছে বাহারি রঙের পিনোন হাদি আর ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবি/ফতুয়া। দেখে মনে হবে হ্রদের পাড়ে বসেছে রঙের মেলা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই সামাজিক উৎসবে ব্যস্ত প্রতিটি পল্লী। বাংলাবর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু- এভাবে ভিন্ন ভিন্ন নামে উদযাপন করে। যা বৈসাবি নামে বেশি পরিচিত। পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে পুরানো বছরের সব গ্লানি, হিংসা, বিভেদ নদীর জলে ভেসে যাবে। আর নতুন বছর বয়ে আনবে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি- এমন প্রত্যাশায় রাঙামাটি শহরের গর্জনতলী, রাজবিহার ঘাট, কেরানী পাহাড়ঘাট সহ, বিভিন্ন এলাকায় ভাসানো হয় বিজুর ফুল।

গর্জনতলী ঘাটে ফুল ভাসাতে আসা অমিয় ত্রিপুরা বলেন, ‘সকালে ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজিয়ে এখন ফুল ভাসাতে এসেছি। ফুল ভাসনোর মধ্যে দিয়ে পুোনো বছরের দুঃখ বেদনা গ্লানি পানিতে ভাসিয়ে দিলাম এবং নতুন বছর যেন সুন্দর হয়।’

রাজ বনবিহার ঘাটে ফুল ভাসিয়ে শ্রাবণী চাকমা বলেন, এটি পার্বত্য অঞ্চলের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। হ্রদে ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি, ‘আগামী বছরটা যেন আরও সুখশান্তিতে কাটাতে পারি। পার্বত্য এলাকাসহ সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হউক’।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র দিনে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করেছি। আমরা যাতে সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে সকল জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করতে পারি।’

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। সবার মাঝে সম্প্রীতি অটুট থাকুক। আর আগামী দিনগুলোতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলাদেশ, এটাই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা। এসময় অন্যান্যর মধ্যে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ,ত্রিপুড়ার কল্যান ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা প্রীতি কান্তি ত্রিপুড়া, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি শংকর ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজ বনবিহার ঘাটে কাপ্তাই হ্রদের জলে হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্য ফুল বাসিয়ে এর উদ্বোধন করেন রাঙামাটির সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। তিনি বলেছেন, পাহাড়ে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আজকের দিনটি বিশেষ একটি দিন। কারণ এদিন থেকেই নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই ফুল ভাসানোটা এখন সম্প্রীতির উৎসবে রুপ নিয়েছে। সবাই একসঙ্গে একত্রিত হয়ে ফুল নিবেদন করে প্রার্থনা করে। আজকের দিনে আমাদের চাওয়া হলো, আগামী দিনেগুলোতে যাতে সবাই মিলেমিশে সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারি।

এসময় অন্যান্যর মধ্যে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০২৫ উদযাপন কমিটির সভাপতি সাবেক উপ সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈসাবীর আমেজ পুরো জেলা জুড়ে সাজ সাজ রব।