আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ১০:০৫
স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আর ছয়টি গুলি
ক্রীড়া ডেস্ক

স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আর ছয়টি গুলি

বাজ্জোর পেনাল্টি গেল বার উঁচিয়ে, শিরোপার উদযাপন ব্রাজিল গোলকিপারের

মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ। জুন-জুলাইয়ের টান ভুলে নভেম্বর-ডিসেম্বরেই প্রথম বিশ্বকাপ। আয়োজকদের নিয়ে সবচেয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারীও হয়তো। দেখতে দেখতে অপেক্ষা ফুরিয়ে আসছে, বিশ্বকাপের আর ৭ দিন বাকি। বিশ্বকাপের আগের আসরগুলো নিয়ে ধারাবাহিকের ত্রয়োদশ পর্বে আজ স্মৃতি ফিরছে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে।

পূর্বাভাস বুঝি একেই বলে!

পেনাল্টি মিসের দুটি ছবি। এক ছবি দিয়েছিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপ শুরুর বার্তা, আরেক ছবি দিয়ে পর্দা নেমেছিল টুর্নামেন্টের। মাহাত্ম্য, গুরুত্ব, প্রভাবের দিক দিয়ে দুই পেনাল্টি মিসের তুলনা চলে না কোনোভাবেই। প্রথম মিসটা দ্বিতীয়টির চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে।

প্রথম পেনাল্টিটা তো সে অর্থে পেনাল্টিই নয়। সেটি আলংকারিক, আনুষ্ঠানিক। বক্সের ভেতরে থেকে এমনিই একটি শট নেয়া। দ্বিতীয়টি একজন ফুটবলারের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা নির্ধারণের ঠিক আগ মুহূর্তের। প্রথমটি মিস করা ব্যক্তির কিছুই আসে যায়নি, এখনো মনে পড়লে হয়তো হেসে উড়িয়ে দেন তিনি। পরেরটি যিনি মিস করেছেন, তাকে হতাশার গ্লানি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এখনো। বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন।

প্রথমজন ডায়ানা রস। দ্বিতীয়জন রবের্তো বাজ্জো। প্রথমজনকে না চিনলেও সমস্যা নেই, আপনাকে কেউ শূলে চড়াবে না। দ্বিতীয়জনকে ফুটবলপ্রেমী মাত্রই চিনবেন। ফুটবল মাঠে যার নৈপুণ্যকে প্রায়ই ছাপিয়ে যায় ওই পেনাল্টি মিসের হতাশা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে বাজ্জোর ওই মিসই নিশ্চিত করেছিল দুই যুগ পর বিশ্বকাপে বিজয়মাল্য শোভা পাচ্ছে ব্রাজিলিয়ানদের গলায়। আর কয় মাস আগেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের উপাধি পাওয়া বাজ্জোর ইতালিকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে।

ডায়ানা রসের পেনাল্টির ওপর অবশ্য বাজ্জোর মতো জাতিগত স্বপ্নের বাঁচা-মরা নির্ভর করছিল না। পেনাল্টিটা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের ওই গায়িকার পারফরম্যান্সের শোভাই বাড়িয়েছিল শুধু। কথা ছিল, গান গাইতে গাইতে বলে লাথি মারবেন ডায়ানা, পোস্টের সামনে গোলকিপার থাকলেও বল আটকানো হবে না। বল জড়াবে জালে, আর সঙ্গে সঙ্গে দুই ভাগ হয়ে যাবে গোলপোস্ট। ডায়ানা সে পেনাল্টি মেরেছিলেন অনেক অনেক বাইরে। তাতে কী! গোলপোস্ট ভাগ ঠিকই হয়েছিল। তা দেখে হয়তো মৃদু হেসেছেন বিশ্বের তাবৎ ফুটবলপ্রেমীরা। যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেয়ার খবর শুনে ইউরোপের এক নামকরা সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ আয়োজন করা আর আফ্রিকায় আইস-স্কি আয়োজন করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’ ডায়ানার মিস দেখে তিনিও ওই হেসে খুন হওয়াদের দলেই ছিলেন হয়তো!