আওয়ামী লীগ নেতা দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছে পরিবার। স্বজনদের ধারণা বিপ্লবকে পিটিয়ে হত্যার পর বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হয়েছে।
তবে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো সূত্র পাননি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ঢাকা জেলা পুলিশসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা নৌপুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিটও ছায়া তদন্ত শুরু করেছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহজামান বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এখনো হত্যাকাণ্ডের কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।
৭ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরের বাসায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লব। ৯ নভেম্বর এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বোন শাশ্বতী বিপ্লব। গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে বিপ্লবের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ।
মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, তাকে হত্যা করা হতে পারে। তার মাথায় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথার পেছনের দিকে বেশি আঘাত দেখা গেছে। এ ছাড়া বুকের দুই পাশেও আঘাতের দাগ আছে। ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে।
বিপ্লব নিখোঁজ হওয়ার দিন বুড়িগঙ্গার সোয়ারীঘাট দিয়ে নৌকা পারাপারের সময় লঞ্চের ধাক্কায় এক ব্যক্তি নৌকা থেকে পড়ে যান বলে পুলিশ জানতে পারে। ওই ব্যক্তিই দুরন্ত বিপ্লব কি না, তা জানার জন্য নৌকার মাঝিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত এ তথ্যের কোনো সত্যতা পায়নি পুলিশ।
দুরন্ত বিপ্লবের এক বন্ধু বলেন, নৌকা থেকে একজন লোক পানিতে পড়ে গেলে সাধারণত ফায়ার সার্ভিসে জানানোর কথা। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসে এমন কোনো তথ্য জানানো হয়নি। নৌকা থেকে একজন পড়ে গেল আর অন্য যাত্রীরা নির্বিকার হয়ে চলে এল তা হতে পারে না। এটি আসলে পুরোটাই ভিত্তিহীন কথাবার্তা। পুলিশের উচিত, গুরুত্ব দিয়ে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা।
দুরন্ত বিপ্লবের বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, তার ভাইয়ের কারও সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল বলে তাদের জানা নেই। তার ভাইও কখনো তাদের এ বিষয়ে কিছু বলেনি। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলেছেন, বিপ্লবকে ভারী বস্তু দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের চাওয়া যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত পুলিশ খুঁজে বের করবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেরানীগঞ্জ ও কামরঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গার দুই পাড় অপরাধপ্রবণ এলাকা। সন্ধ্যার পর এসব এলাকায় ছিনতাইকারীর ওঁৎ পেতে থাকে। কোনো ছিনতাইকারী গ্রুপের হাতে দুরন্ত বিপ্লব পড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, তার পকেট থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ খোয়া গেছে।
নারায়ণগঞ্জ পাগলা নৌ-থানা পুলিশের পরিদর্শক শাহাজাহান আলী মণ্ডল জানান, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নদী থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাগুলো নৌপুলিশ তদন্ত করে থাকে। তারা মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।
দুরন্ত বিপ্লব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া তিনি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা