আপডেট : ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ১০:০৮
রাজবাড়ীতে হবে ওয়াগন ও ক্যারেজ কারখানা
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা

রাজবাড়ীতে হবে ওয়াগন ও ক্যারেজ কারখানা

রাজবাড়ীতে একটি নতুন ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। কারখানা নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নকশা ও দরপত্র তৈরি করার একটি প্রকল্প ২০২০ সালে নিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। ১৮ মাসের এই প্রকল্প ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই ফুরিয়ে গেছে মেয়াদ। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এখন শেষ সময়ে এসে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার চুক্তি হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নকশা ও দরপত্র তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চুক্তি করছে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ‘সিস্ট্রা’। এদের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট লিমিটেড বাংলাদেশ’ কাজ করবে। রেল ভবনে আজ বুধবার এই চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ২৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই অর্থের জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। এদিকে এই প্রকল্পের সময় আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. কুদরত-ই-খুদা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পের প্রথম ধাপ হিসেবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং বিস্তারিত ডিজাইন করে তারপরে মূল নির্মাণকাজ শুরু হবে। তবে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যায়নি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। যেহেতু এখন চুক্তির কাজটা হচ্ছে, তাই আমরা আশা করছি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে সমীক্ষার কাজ শেষ হবে।’

এদিকে নতুন ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা করার বিষয়ে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সৈয়দপুর যে কারখানা আছে সেখানে ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত করার ভার নিতে পারছে না। একই সঙ্গে রেলের আরও কোচ এবং ওয়াগণ মেরামত করতে হয়। ফলে ভবিষ্যতে একটি কারখানা এত লোড নিতে পারবে না। তাই সরকাকের নির্দেশে রাজবাড়ীতে আরেকটি ক্যারেজ ও ওয়াগন কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই কারখানা নির্মাণ হলে ক্যারেজ এবং ওয়াগনের মেরামতের পরিমাণ বাড়বে।

প্রকল্পের বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যের বিষয়ে নথিতে বলা হয়েছে, রেলের পশ্চিম অঞ্চলে চলমান রেললাইন নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ এবং মেরামত সুবিধার উন্নতির জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে। এর ফলে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ক্যারেজ এবং ওয়াগন বিভাগের জন্য একটি বড় আকারের রোলিং স্টক প্রয়োজন হবে। সে জন্যই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামতের কাজ করা হয় সৈয়দপুর কারখানায়।

প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রমের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ২১ জুন ‘ইনভাইটেশন ফর এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ (ইওআই) আহ্বান করা হয়েছিল। ইওআই ক্লোজিং এর সময় ছিল ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু মহামারির কারণে ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইওআই প্রস্তাব দাখিলের সর্বশেষ সময় দুই বার বাড়ানো হয়।

এতে ১৪টি প্রতিষ্ঠান ইওআই প্রস্তাবনা দাখিল করেছিল। প্রস্তাবনাগুলো যাচাই-বাচাই করে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি হওয়ায়, মহামারির সময়ে চলাচলে বিধিনিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। ফলে কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। যে কারণে চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ করতে এবং চুক্তি সম্পন্ন করতে সময় লেগে যায়। আর তাই দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়।

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু না হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সরকারের আগ্রহী প্রকল্পগুলোতে পরামর্শক নিয়োগ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা উচিত। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরও নিজেদের তাগিদ দেয়া উচিত ছিল এই কাজগুলো দ্রুত শেষ করার।’