নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে প্রতি বছরের মতো এবারও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মাছের মেলা। শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই মেলায় চলে মাছ কেনা ও বিক্রির উৎসব। দিনের শুরুতেই জমতে শুরু করে মেলাটি।
স্থানীয়রা বলছেন, এই মাছের মেলার রয়েছে মজার একটি দিক। এখানে কেবল মাছ বেচাকেনাই হয় না, বরং চলে প্রতিযোগিতাও। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটি বড় বিবেচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। এ প্রতিযোগিতায় শ্বশুররাও নীরবে অংশ নেন। আর মেলাকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে শুরু হয় উৎসব। বাড়িতে বাড়িতে মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকেই দাওয়াত দেয়া হয়। নিমন্ত্রণ করা হয় আত্মীয়স্বজনদেরও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারের এ মেলায় সারিবদ্ধভাবে মাছ সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। উঠেছে বিরাট বিরাট সব মাছ। দূরদূরান্ত থেকে দলে দলে লোকজন মেলায় এসেছেন মাছ কিনতে। খালি হাতে ফিরছেন না কেউ। সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন।
সুন্দর করে সাজানো কাতল, রুই, মৃগেল, গ্রাস কার্প, কার্প, কালবাউশ, বিগ হেড, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ। ভোর থেকে বসেছে সারি সারি মাছের দোকান। চলছে হাঁকডাক ও দরদাম। মেলায় রয়েছে তিন কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি ওজনের মাছও।
মেলায় মাছ কিনতে আসা ছালজারুল ইসলাম বলেন, অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি। মেলা থেকে ১২ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ ১০ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
২০ কেজি ওজনের একটি গ্রাস কার্প মাছ কিনেছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, এই মেলার নাম শুনেছি। এখানে অনেক বড় বড় মাছ পাওয়া যায়। এ জন্য এখানে মাছ কিনতে এসেছি। মাছ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাব।
স্থানীয় কালাই পৌরসভার পূর্বপাড়ার তাইফুল ইসলাম বাবু দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই মাছের মেলাটি এক যুগ ধরে চলে আসছে। মেলাকে কেন্দ্র করে এই মেলায় বড় পুকুর, দীঘি ও নদী থেকে নানা জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা।
মাছ-বিক্রেতা তায়েব আলী দৈনিক বাংলাকে বলেন, মেলায় ছোট-বড় মিলে ৫০টি মাছের দোকান বসেছে। প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মাঝারি আকারের মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
আরেক মাছ-বিক্রেতা আব্দুল লতিফ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রতি বছরই এ মেলায় মাছ বিক্রির জন্য আসি। প্রত্যেক বিক্রেতা এই মেলায় ১০-১২ মণ করে মাছ বিক্রি করে থাকেন। এবার সকাল থেকে ক্রেতারা এসেছেন মাছ কিনতে।’
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম বলেন, নবান্নের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সাধারণত এই মেলা বসে। প্রায় ১৪ বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে মেলাটি।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা মৎস্য সহকারী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার আলী দৈনিক বাংলাকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও এখানে নবান্ন উপলক্ষে মাছের মেলা চলছে। এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মেলায় যেন কেউ বিষযুক্ত মাছ বিক্রি করতে না পারেন, সে দিকে কঠোর নজরদারি রয়েছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা