বছর ঘুরে আবারও শীত চলে এসেছে। আর শীত মানেই পায়ের প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। তাই বলে তো ফ্যাশনের কথা ভুলে গেলে চলবে না। শীতের পোশাকের সঙ্গে মানানসই শীতের জুতা পরাটাও ফ্যাশনের একটি বড় অনুষঙ্গ। তবে এই সময়ে সব জুতা পরাও যায় না। আবার এই সময়টা ভ্রমণ ও বিয়ের মৌসুম। সবকিছু বিবেচনা করেই শীতের জুতা কিনতে হবে। বাজারে ইতিমধ্যে নানা রকমের শীতের জুতা চলে এসেছে। এসব জুতার নকশাই করা হয়েছে শীতকালের কথা মাথায় রেখে।
ক্যাজুয়াল, সেমি ক্যাজুয়াল, ফরমাল, স্পোর্টি, ভ্রমণ- সব ধরনের জুতায় ভরে গেছে বাজার। দামি থেকে শুরু করে কম দামি সবই পাওয়া যাচ্ছে। সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে এসব জুতার দাম। যারা ব্র্যান্ডের জুতা পছন্দ করেন, তাদের জন্য অ্যাপেক্স, বাটা, ওরিয়ন, বে এম্পোরিয়াম এনেছে নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা। আবার একটু কমে দামাদামি করে কেনার জন্য রয়েছে রাজধানীর চৌরঙ্গী বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ইস্টার্ন প্লাজার জুতার দোকান।
ওরিয়নের ব্যবসায় উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘শীতের শুরুতেই রঙিন ও আরামদায়ক জুতার চাহিদা বেড়ে গেছে। কেডস, লোফার, স্নিকার্স- এসব বেশি চলছে ওরিয়নে। বুটের সঙ্গে সাধারণত জিনসের প্যান্ট আর জ্যাকেট পরলেই ভালো দেখাবে।’
বাটার লেডিস অ্যান্ড চিলড্রেন কালেকশনের সহকারী ব্যবস্থাপক ফাহিমা পারভীন জানালেন, শীতকালে মেয়েদের মধ্যে চাহিদা বেশি ব্যালিরিনা জুতার। তিনি বলেন, ‘শীতে মেয়েরা মখমলের নকশার জুতা ও স্যান্ডেল বেশি পছন্দ করে। কেননা মখমল শীতের প্রকৃত ফ্যাশন ফুটিয়ে তোলে। এই জুতাগুলো সাধারণত বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার মতো ফরমাল।’
এ ছাড়া মেয়েদের বুট জুতাও ইদানীং নজরে এসেছে ক্রেতাদের। এসব বুট জুতা চামড়ার তৈরি। বিভিন্ন কাটের নকশার পাওয়া যাবে বাজারে। তবে পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে একজোড়া বুট জুতা পরে নিলেই স্টাইলে চলে আসবে নতুনত্ব। অনেক দোকানেই এই বুট স্টাইলের ‘হাইনেক’ (উঁচু গলা) জুতার দেখা মিলছে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য এসব জুতা আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছে। কোনো জুতার গলা উঁচু হয়েছে গোড়ালি পর্যন্ত, কোনোটা আবার গোড়ালি ছাড়িয়ে আরও ওপরে উঠেছে। মেয়েদের তো হাঁটুসমান বুটও পাওয়া যাচ্ছে হিলযুক্ত বা ছাড়া।
বাটার মেল অ্যান্ড স্পোর্টস বিভাগের কালেকশন ম্যানেজার রেজাউল হায়দার বলেন, ‘শীতে পা ঢাকাটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ফ্যাশন করাও জরুরি। এখন ছেলেদের জন্য ফরমাল, সেমি ফরমাল, ক্যাজুয়াল জুতা তো বাজারে আছেই, সেই সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে বুট জুতারও। এগুলো কিছুটা সেমি ক্যাজুয়াল। হাঁটা কিংবা ভ্রমণের জন্য আলাদা নকশার জুতা আছে। আরও আছে দম্পতিদের জন্য নকশা মেলানো জুতো। শীতে ক্যাজুয়াল স্পোর্টি জুতা বেশি বিক্রি হয় বলে জানালেন রেজাউল হায়দার।
তরুণদের পছন্দ নিয়ে প্লাস পয়েন্টের ফ্যাশন ডিজাইনার ও কর্ণধার বিপুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যে কনকোয়েস্ট বা হাই হিলড অ্যাঙ্কল শু পাওয়া যায় সেগুলো ইয়াং ছেলেরা আউটিংয়ে যেতে বা পার্টিতেও খুবই পরছে। এ ছাড়া যেগুলো ফেব্রিকের তৈরি, লেদারের নয়, সেগুলোও পরতে খুবই আরামদায়ক হয়। আর লোফার্স তো আছেই।
কোথায় পাবেন
বাটা, বে এম্পোরিয়াম, অ্যাপেক্স, ম্যাভেরিক, পাওয়ার, এক্সেটসি, স্প্রিন্ট, লোটো, জেনিস, আরবানা, টরাস, প্লাস পয়েন্ট, ফ্রিল্যান্ড ও ক্যাটস আই, এক্সটেসিসহ বিভিন্ন শোরুমে পাবেন পছন্দের জুতা।
দাম
কালার ও মানের ভিত্তিতে জুতার দাম একেক জায়গায় একেক রকম। সেক্ষেত্রে রিবেক বা গুচি কালেকশনগুলোর দাম পড়বে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে প্রায় ৪ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে। বিভিন্ন ডিজাইনের উডল্যান্ড জুতাগুলোর দাম পড়বে ১ হাজার ৯৯৫ থেকে ৪ হাজার ৫৯৫ টাকা। জেনিসে কনভার্স ও কেডস পাওয়া যায় ৮৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৯৯০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া জিএমটি, ভ্যালরওয়ালফ, চিং মিং সু শপে রয়েছে নতুন কনভার্সের যাবতীয় কালেকশন। এগুলোর দাম পড়বে ১ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ৭ হাজার ৯৫০ টাকার মধ্যে। বাটার স্টোরগুলোতে জুতা পাওয়া যাবে ৭৫০ থেকে ৭ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। এদের মধ্যে নর্থ স্টারের দাম শুরু ৯৯০ টাকা থেকে। এ ছাড়া গ্যালারি এপেক্সে ৯০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। চাইলে নন-ব্র্যান্ড জুতাও কিনে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে যেতে হবে রাজধানীর ফরচুন মার্কেট, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, গুলিস্তানসংলগ্ন ফুটপাতে। এখানে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে আপনার পছন্দের জুতা খুঁজে পেতে পারেন।
বিশেষ পরামর্শ
লেদারের জুতা নরম শু-ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করুন। নরম শু-ব্রাশ না পেলে পুরোনো সুতি কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন। জুতা ভিজে গেলে কখনো আগুন বা কড়া রোদে শুকাবেন না। জুতা পরার সময় জোর করে পা ঢোকাবেন না। একেবারে এঁটে থাকে এ ধরনের জুতা এড়িয়ে চলুন। আবরণওয়ালা জুতা নিয়মিত পরলে অবশ্যই দিনে কয়েক ঘণ্টা পায়ে যেন বাতাস লাগে, সে ব্যবস্থা করবেন। উঁচু বা হিল জুতা র্যাকে রাখার সময় ফ্ল্যাটভাবে শুইয়ে রাখবেন। জুতা দুটির মুখ একে অপরের বিপরীতে থাকবে। চটি জুতার সোল ক্ষয়ে গেলে তা তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করে নিতে হবে। যাদের পা খুব ঘামে, তারা আবরণওয়ালা জুতা না পরলেই ভালো করবেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা