আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ১৮:৪৫
ধর্মঘটে স্থবির সদরঘাট, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
প্রতিনিধি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ধর্মঘটে স্থবির সদরঘাট, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

সদরঘাটে এসে দেখেন ফাঁকা পন্টুন, নেই কোনো লঞ্চ। হতাশ হয়ে বসে পড়েন অনেক যাত্রী। ছবি: দৈনিক বাংলা

১০ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে স্থবির হয়ে আছে রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী নৌযানগুলোও। সকাল থেকে ছাড়ছে না কোনো লঞ্চ। এতে গন্তব্যে যেতে সদরঘাটে আসা যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত এই ঘাটের পন্টুন ধর্মঘটের কারণে ফাঁকা পড়ে আছে। শ্যামবাজার ঘাটে জড়ো করে রাখা হয়েছে লঞ্চ। অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে টার্মিনাল এলাকা, নেই নৌশ্রমিকদের হাকডাঁক কিংবা লঞ্চের সাইরেন।

এদিকে ধর্মঘটের বিষয় না জানা থাকায় ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ ঢাকার বাসায় ফিরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ সদরঘাট থেকেই বিকল্প বাহন হিসেবে পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যে। জানা গেছে, এখান থেকে চাঁদপুরে যেতে মাইক্রোবাসে ভাড়া পড়ছে জনপ্রতি ৭০০ টাকা এবং পিকআপ ভ্যানে পড়ছে ৪০০ টাকা।

রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর থেকে সদরঘাটে আসা ইসমত আরা বলেন, ‘চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। মিরপুর থেকে এখানে বাসে আসতে ২ ঘণ্টা লেগেছে। এসে দেখি লঞ্চ নেই। ঢাকায় এসেছি ডাক্তার দেখাতে। বাসে চড়তে পারি না। সঙ্গে ২ বছরের ছেলে রয়েছে, বাসে অস্থির হয়ে যায়। এখন কিছু করার নেই। যাত্রাবাড়ী গিয়ে বাস পাই কি না দেখতে হবে।’

মুগদা এলাকা থেকে আসা মেহেদী হাসান বলেন, ‘চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। এখন বাসে যাবো ভাবছি। আগেভাগে জানা থাকলে ভোগান্তি হতো না।’

ফাঁকা সদরঘাটের পন্টুন। ছবি: দৈনিক বাংলা

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন আহমেদ জানান, ‘রাত থেকে বিভিন্ন রুটের ৩৫টি লঞ্চ সদরঘাটের পন্টুনে ভিড়েছে। সকাল থেকে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল চাঁদপুর ও ইলিশায় (ভোলার ঘাট), একটাও ছেড়ে যায়নি। শুধু সকালে একটি লঞ্চ ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।’

এদিকে দাবি আদায়ে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিতে চলমান কর্মবিরতিতে সারাদেশের নৌযান শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন, শতভাগ শ্রমিক অংশ নিয়েছেন আন্দোলনে। আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হলে আমরা কর্মসূচি তুলে নেবো।’

এ ব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘লঞ্চ না চললে তাদেরও (শ্রমিক) লস, আমাদেরও ক্ষতি। এখনো আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়নি। আমরা চাচ্ছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।’

যে দাবিতে আন্দোলন
নৌযান শ্রমিকরা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবিগুলো হলো- নৌযান শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস দিতে হবে, বাল্কহেডের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে, বাংলাদেশের বন্দরসমূহ থেকে পণ্যপরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করতে হবে, চট্টগ্রাম বন্দরে পোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করতে হবে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে, বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ ভাগ কার্যকর করতে হবে।