আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০২২ ১৯:১৮
যে ক্ষত পূরণ হওয়ার নয়

যে ক্ষত পূরণ হওয়ার নয়

ছবি: সংগৃহীত

১৫ আগস্ট বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত ও বর্বরোচিত দিন। সেদিন ভোররাতে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের বুলেট কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা সৌভাগ্যক্রমে দেশের বাইরে থাকায় নির্মম এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রক্ষা পান। এই ভয়াল রাত বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে কয়েক দশক পিছিয়ে দিয়েছে, ক্রীড়াঙ্গনেও পড়েছে তার ছাপ। সেদিনের হত্যাকাণ্ড দেশের ক্রীড়াঙ্গনকেও অভিভাবকশূন্য করে দিয়েছিল, জাতি হারিয়েছিল দেশসেরা কিছু ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ক্রীড়া সংস্কৃতি নিয়ে আজকের এ আয়োজন।

শিরোপা হাতে বঙ্গবন্ধু। ছবি: সংগৃহীত

ক্রীড়াবিদ বঙ্গবন্ধু

পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন পরিচিত ফুটবলার। বঙ্গবন্ধুও হেঁটেছেন বাবার দেখানো পথে। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল; খেলতেন হকি, ভলিবলও। স্কুল ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার উদ্যোগেই ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মিশন স্কুলে গড়ে উঠেছিল ফুটবল ও ভলিবল দল। একসময় তিনি প্রাদেশিক পর্যায়ের ফুটবল দলেও জায়গা করে নেন।

১৯৪০ সালের শুরুতে তিনি রাজধানী ঢাকায় ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। নিয়মিত খেলার সুযোগ না থাকলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪১ থেকে আমৃত্যু ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুমে বগুড়ায় একটি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন  করা হয়েছিল। এই টুর্নামেন্টে তার নেতৃত্বে ওয়ান্ডারার্স ক্লাব অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে বাস্কেটবলও খেলেছেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে ১৯৭২ সালে গঠন করেন ‘ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’। ওই সময়ে এই সংস্থাটি শিক্ষা-সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। পরে ক্রীড়াঙ্গনের আইনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয় বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট।

শেখ কামাল। ছবি: সংগৃহীত
শেখ কামাল। ছবি: সংগৃহীত

অনন্য এক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব- শেখ কামাল

বঙ্গবন্ধুর বড় পুত্র শেখ কামাল ছিলেন একজন অতুলনীয় ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। ‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’ তারই হাতে গড়া। তবে সংগঠক শেখ কামালের চেয়েও অনেকের স্মৃতিতেই বেশি উজ্জ্বল শেখ কামালের খেলোয়াড়ি দক্ষতা। পেস বোলার ছিলেন, ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য। বল হাতে ওপেনিং করেছেন জাহাঙ্গীর শাহ বাদশার সঙ্গে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল ও বাস্কেটবল দলেও ভূমিকা রেখেছেন।  ১৯৭৫ সালে ঢাকা ক্রিকেট লিগের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী ক্রীড়া চক্র দলে ছিলেন। সে বছরই বাস্কেটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ওয়ান্ডারার্স দলে খেলেছেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সলিমুল্লাহ হলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হয়েছিলেন দ্রততম মানব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ব্যাডমিন্টনের দ্বৈতে রানার্সআপও হয়েছিলেন।

সুলতানা কামাল খুকি। ছবি: সংগৃহীত

সুলতানা কামাল খুকি- একজন চ্যাম্পিয়ন

খুকি তখনো বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন নন। ১৯৭৩ সালে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন জাতীয় দলের ক্রীড়াবিদরা। বঙ্গবন্ধু খুকির কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘বাঙালির মান রাখতে পারবি তো?’ খুকির উত্তর, ‘পারব।’ প্রতিযোগিতায় লংজাম্পে দ্বিতীয় হন তিনি। এটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম কোনো পদক জয়।

১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হন সুলতানা কামাল খুকি। দেশের ক্রীড়াঙ্গন তাকে অবশ্য বহু আগ থেকে চেনে। ১৯৬৬ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের লংজাম্পে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জেতেন খুকি। ১৪ বছরের খুকি তখন স্কুলপড়ুয়া।

১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে লংজাম্পে নতুন রেকর্ড গড়ে চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৭০ সালে অল পাকিস্তান উইমেন্স অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে হার্ডলসে নিজের রেকর্ড ভেঙে জেতেন স্বর্ণপদক। মেয়েদের মধ্যে সেরা হন খুকি। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ১০০ মিটার হার্ডলস , লংজাম্প ও হাইজাম্প-তিন বিভাগেই সেরা , ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দ্বিতীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাথলেটিক্সে প্রথম নারী ‘ব্লু’ সুলতানা কামাল খুকি। মৃত্যুর কিছু দিন আগেও ১৯৭৫ সালে হার্ডলসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন খুকি।

শেখ জামাল-ফুটবলার, ক্রিকেটারও

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালও ছিলেন খেলোয়াড়। ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি তার ছিল বিশেষ ঝোঁক। প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে খেলেছেন আবাহনী ক্রীড়া চক্র ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে। আবাহনী ক্রীড়া চক্রে ক্রিকেটও খেলতেন শেখ জামাল।