মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি ও তৈলংপাড়া আদিবাসী গ্রামে এখনো পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্কুল কিংবা স্বাস্থ্যসেবা। ফলে কষ্টে জীবনযাপনের কথা জানিয়েছেন এখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ।
উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নে কালেঞ্জী খাসিয়াপুঞ্জি। আর তৈলংপাড়া গ্রাম ইসলামপুর ইউনিয়নে। দুই গ্রাম মিলিয়ে পরিবার আছে ১২৩টি। গ্রামের বাসিন্দারা ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের। তারা কুয়ার পানি পান করেন। বিভিন্ন সময় শিশুরাসহ অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে।
তৈলংপাড়ার বাসিন্দা ইতি দেব বর্মা বলেন, হাসপাতালে যেতে হলে ৬ কিলোমিটার দূরে বাইসাইকেল চালিয়ে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আনতে হয়। ফোনে কোনো নেটওয়ার্ক না থাকায় অটোচালকদের কল করে ডাকার সুযোগ নেই। অসুস্থ হলে অনেক কষ্ট করতে হয়।
তৈলংপাড়া গ্রামের আদিবাসী নেতা করুনা দেব বর্মা বলেন, দুর্গম পাহাড়ি কাদাযুক্ত সড়ক যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। কেউ তাদের নীরব কান্না শুনতে পান না। গর্ভবতী নারী ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারম্যান জিডিসন প্রধান সুচিয়ান বলেন, ‘চার বছর ধরে বিদ্যুতের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেন না। বনের অন্য পুঞ্জিগুলোয় বিদ্যুৎ দেয়ার সময় কোনো সমস্যা হয়নি। শুধু আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে বন বিভাগের যত সমস্যা।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম মীর গোলাম ফারুক বলেন, বন বিভাগের ছাড়পত্র না থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না।
আর সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তৌফিকুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ ফরেস্টে বিদ্যুৎ দেয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা আছে।
তবে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিষয়ে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎ দেয়া বন আইনে নিষেধ, কিন্তু সেখানে কীভাবে বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে তা জানেন না। বিষয়টি বন বিভাগের বন্য প্রাণী বিভাগের দায়িত্বে, সিলেট বন বিভাগের নয়।
সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎ দেয়ার ক্ষেত্রে বন বিভাগের বাধার বিষয়ে উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায় বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, প্রধান বন সংরক্ষককে জানান। তৈলংপাড়ায় বিদ্যুৎ দেয়ার বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।’
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দাল হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ হলো ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, কিন্তু আমার এলাকার কালেঞ্জীপুঞ্জিসহ দুই-তিনটা গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, তিনি ত্রিপুরা পল্লি ও কালেঞ্জীপুঞ্জি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। কিছু পরিবারে সোলার ব্যবস্থা আছে। এ বছর উপজেলা পরিষদের এডিপি থেকে রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে এবং আগামী বছর নিরাপদ পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে।
ইউএনও বলেন, বন বিভাগের জায়গায় বসতি হওয়ায় বন বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ দিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়ে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়েছে। যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ যায়নি সেসব জায়গায় হয়তো আইনগত বাধা আছে। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে।
পানি ও যোগাযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ইউএনওকে বলে একটা প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা