বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ খুন নয় ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে দাবি ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)। প্রায় এক মাসের বেশি সময় তদন্ত করে তারা ফারদিনের আত্মহত্যার বিষয়টি ‘নিশ্চিত’ হতে পেরেছে।
এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ডিবি কার্যালয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন বলেন, ঘটনার তদন্ত করে ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বলেন, হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন বলে আমাদের ধারণা।
ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কিছু কারণ তুলে ধরেছে ডিবি। সেগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো-
# ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মূখী ছিলেন। সবার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারতেন না।
# তার রেজাল্ট গ্রাজুয়ালি খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে ৩.১৫ তারপর কমতে কমতে ২.৬৭ যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানত না।
# বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল যেটা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিল। বন্ধুরা তাকে ৪০ হাজার টাকা দেয়।
# নিজে টিউশন করে ৪ টা। সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনা করায়। নিজের জন্য কিছু করে না। তারপরও বাড়িতে শাসন, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। হলে থাকা যাবে না। এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল যেটা ভিকটিম মানতে পারে নাই।
# ফারদিন নূর পরশ এর ২ টা নাম্বারে বি-পার্টি (যারা কল করেছে) ছিল সর্বমোট ৫২২ টি। ওই দিন রাতে সে যেখানে সেখানে ঘুরেছে তার সেলে কোন বি-পার্টি সার্চ করে পাওয়া যায় নাই একই অবস্থানে। সে যে ভাবে উন্মাদের মত ঘুরে বেড়িয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয় যে, মানসিক ভাবে ডিস্টার্বড ছিল। কারো সাথে ওই দিন রাতে দেখা করে নাই। সে বাবুবাজার ব্রিজ টার্গেট করে। ১০:৫৩, ১১:০৯ এই সময় বাবুবাজার ব্রিজ অনেক ব্যস্ত থাকায় সম্ভবত সে ওখান থেকে পিছপা হয়। তারপর নিজের সাথে নিজে কথা বলে সময় নেয়। তারপর আবার তার নিজের বাসা অতিক্রম করে ডেমরা সেতুতে যায়। শেষ গ্রামীণ নাম্বার এর আইপিডিআর এ তার অবস্থান সেতুর উপর অনুমান করা হয়। গ্রামীণ নাম্বারের ফোর জি সেল ১৩, ৩২, ৩৩ তার লোকেশন যেটা লেগুনা ড্রাইভার যেখান নামিয়েছিল বলছে তার সাথে মিল পাওয়া যায়। বিশেষ করে ৩২ সেল টা ঠিক ব্রিজের উপর দেখায়। নদীর এপার বা ওপার গেলে ৩২ সেল পাওয়া যায় না। এটাতে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বশেষ সেতুর ঠিক মাঝখানে তার অবস্থান ছিল।
# এরকম একটা উদাহরণ আছে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্নহত্যা করেছিল।
আত্নহত্যার আগে সারারাত ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছিল। আমাদের ভিকটিমও এরকম একা একা ঘুরে রেড়িয়েছে উদ্দেশ্যহীন। বুশরা কে রাত ০৯.৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং কারোও সাথে দেখা করে নাই। তার গত ১ বছরের সিডিআর পর্যালোচনা করেলে পূর্বে কখনও এমন দেখা যায় নাই ।
# ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সাথে মেসেনজার এবং টেলিগ্রামে অনেক কথোপকথোন রয়েছে যেখানে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছে বহুবার। মুমুর ভাষ্যমতে ফারদিন হতাশাগ্রস্থ ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে করেন।
# যে ডাক্তার ময়নাতদন্ত করেছেন তাদের সাথে আমরা অনেকবার যোগাযোগ করি। ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসে নাই। আসলে পূণাঙ্গ মতামত তারা দিবেন। প্রাথমিকভাবে যেটা দিয়েছে সেখানে মাথায় আঘাতের কথা বলা আছে। কিন্তু খুবই সামান্য আঘাত যেটাতে নিশ্চিত হবে না বলে মৌখিকভাবে জানান। এই আঘাতে সর্বোচ্চ অজ্ঞান হতে পারে মর্মে জানান। যদিও মিডিয়ার সামনে বলে ফেলেছেন মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলে পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উঠে আসতো। সুরতহাল রিপোর্টে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নাই
# সবশেষ পয়েন্টে জানানো হয় ফারদিন সাঁতার জানতেন না।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা