ভোলার চরফ্যাশনে ভূমিহীন নারী বকুল বেগম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক। অপরাধীদের হাতে বকুলের পরিবারের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, হত্যার ঘটনায় বকুলের স্বামী আলম বাচ্চু মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। শুধু তাই নয়, অপরাধীদের নাম বলতেও নিষেধ করছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবারের এ বিবৃতিতে বলা হয়, ভোলার চর মুজিবনগরের ভূমিহীনদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন ক্রমাগত বাড়ছে। অপরাধীচক্র এক শ্রেণির পুলিশের সহায়তায় এই অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যার অংশ হিসেবে গত ৩০ নভেম্বর রাত ১টার দিকে ১৪/১৫ জন সন্ত্রাসী ভূমিহীন নেতা আলম বাচ্চুর বাড়িতে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার স্ত্রী বকুলকে কুপিয়ে হত্যা করে। বকুল মারা যাওয়ার আগে হত্যাকারীদের নাম বলে যান।
এ ঘটনায় বকুলের স্বামী আলম বাচ্চু মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পুলিশ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলে। পরে ভোলার তজিমুদ্দিন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাসুম বিল্লাহর উপস্থিতিতে এলাকার অলিল চৌকিদারকে বাদী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলম বাচ্চু বাদী হয়ে ভোলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (পিটিশন কেস) করেছেন। যার নম্বর ৭৩৭/২০২২। আদালত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দুলার হাট থানাকে সংশ্লিষ্ট নথি আদালতে সোপর্দ করার আদেশ দেন।
বিবৃতিদাতারা অভিযোগ করেন, হত্যা মামলা হলেও অভিযুক্তরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। গত ১৪ ডিসেম্বর র্যাব মামলার অন্যতম আসামি আসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে যারা ভূমিহীন নেতা আলম বাচ্চুর সঙ্গে ভূমিহীন আন্দোলনে যুক্ত তাদের পুলিশ গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর আলম বাচ্চুর সঙ্গে ভূমিহীনদের আন্দোলনের সহযোগী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. আব্দুল মালেক ও চরের ভূমিহীন কর্মী মান্নানকে পুলিশ এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন বা এলাকার কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি।
আব্দুল মালেকের ছেলে মো. সোহাগ অভিযোগ করেছেন, তার বাবাকে হত্যা মামলার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখাতে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পুলিশ অকথ্য নির্যাতন করছে। সেই সঙ্গে যারা আলম বাচ্চুর স্ত্রী বকুল বেগমের হত্যার বিচার দাবি করছেন তারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। গত ২৪ ডিসেম্বর ভোলা এস পি অফিসে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আব্দুল মালেক চরের জমি দখলের জন্য বকুল বেগমকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন এবং তারা এর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মারা যাওয়ার আগে বকুল বেগম বারবার খুনিদের নাম উল্লেখ করলেও অভিযুক্ত আসলাম পেয়াদা, বশির ও শাহজাহান সরদারের ছেলেদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না।
হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবিতে তজিমুদ্দিন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুম বিল্লাহ এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে প্রত্যাহার ও বকুলের স্বজনদের হয়রানি বন্ধে এসপি সাইফুল ইসলামের অপসারণ দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন-
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট তবারক হোসেইন, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টর সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য ড. স্বপন আদনান, আলোকচিত্রী ড. শহীদুল আলম, লেখক রেহনুমা আহমেদ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, সমাজকর্মী শিরীন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আলম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, গবেষক ও অধিকারকর্মী রোজিনা বেগম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট হানা শামস আহমেদ, সামাজিক সংগঠন ‘সাংগাত’র কোর মেম্বার মুক্তাশ্রী চাকমা, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, বাংলাদেশ কৃষাণী সভার সভাপতি ড. শামসুন্নাহার খান ডলি, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতির সভাপতি অমলিক কিসকু, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারভীন হাসান।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা