বর্ষীয়ান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুমিত্রা সেন আর নেই। মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে ভারতের বিখ্যাত এই সংগীতশিল্পী মারা যান বলে খবর দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এছাড়াও গত বছর ২১ শে ডিসেম্বর তার ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এর পর থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। আগামী মার্চ মাসেই ৯০ বছর হতো শিল্পীর।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, নিউমোনিয়া থেকেই দেহে অন্য জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল শিল্পীর। গত সোমবার রাতেই বাড়ি নিয়ে আসা হয় সুমিত্রা সেনকে। বাড়ি থেকেই শিল্পীর চিকিৎসা চলবে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। কিন্তু, মঙ্গলবার ভোরেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই শিল্পী।
সুমিত্রা সেনের দুই মেয়েও বাংলা সংগীত জগতে ছাপ ফেলেছেন। তার বড় মেয়ে শিল্পী ইন্দ্রাণী সেন। ছোট মেয়ে শ্রাবণী সেন। মঙ্গলবার ভোরে শ্রাবণী সেন ফেসবুকে লেখেন, ‘আজ মা ভোরে চলে গেলেন।’
আনন্দবজারের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯৫১ সালে কুমারী সুমিত্রা দাশগুপ্ত নামে প্রথমে দুটি নজরুলগীতি (‘গোঠের রাখাল বলে দে রে’, ‘বেদনার বেদী তলে’) রেকর্ডিংয়ের মধ্যে দিয়ে শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সদ্য প্রয়াত শিল্পী। নজরুলগীতি ছাড়াও পল্লীগীতি ও আধুনিক গানের রেকর্ড রয়েছে তার।
সুমিত্রা সেন রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করেছেন দেড়শোরও বেশি। ষোলোটি ছবিতে রবীন্দ্রসংগীত প্লে-ব্যাক করেছেন। উত্তমকুমারের অনুরোধে ১৯৬০ সালে ‘শুন বরনারী’ ছবিতে গানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় প্লে-ব্যাক। সন্তোষ সেনগুপ্তের পরিচালনায় ‘শ্যামা’, ‘শাপমোচন’, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘বর্ষামঙ্গল’, ‘বসন্ত’ বা ‘মায়ার খেলা’ (পরিচালনা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) এর মতো নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যে গান তাকে স্বকীয় আসনে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
গীতি আলেখ্য ‘যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়’ এও তার কণ্ঠ রয়েছে। শিল্পী জীবনে কাজ করেছেন ওস্তাদ আলি আকবর খান, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, রবীন চট্টোপাধ্যায়, ভি বালসারা, তিমির বরণ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো বহু সংগীত পরিচালকের সঙ্গে। পঙ্কজকুমার মল্লিকের পরিচালনায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র গানেও (মাগো তব বীণে সঙ্গীত) কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ‘সংগীত-নাটক অ্যাকাডেমি’ পুরস্কারসহ নানা স্বীকৃতি।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা