সম্প্রতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ব্যতিক্রমী পোস্টার চোখে পড়েছে। মাস তিনেক আগে হাতে আঁকা পোস্টার ফিরিয়ে আনলেন ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার নির্মাতা দীপংকর দীপন। কামার আহমাদ সাইমনের ‘অন্যদিন...’ সিনেমার পোস্টার প্রশংসিত হয়। ২০২২ সালের জনপ্রিয় সিনেমা ‘হাওয়া’র পোস্টার নিয়েও হয় বেশ আলোচনা। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাগজ’ সিনেমার মাটি দিয়ে তৈরি পোস্টারটি বাংলা চলচ্চিত্রের পোস্টারের ইতিহাসে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে।
নির্মাতা জুলফিকার জাহেদির সিনেমা ‘কাগজ’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর। এফডিসিতে গেলে চোখ আটকে যাবে একটি পোস্টারের দিকে, যা মূলত একটি মাটির পোস্টার! নির্মাতা শুরুতে একটি থ্রিডি পোস্টার তৈরি করার পরিকল্পনা করেন। সিনেমা হলের বাইরে দুই পাশে দুটি চশমা থাকবে। যেকোনো দর্শক থ্রিডি চশমা চোখে দিলেই ত্রিমাত্রিক পোস্টারটি তার চোখের সামনে ভেসে উঠবে। এমন ভাবনা মাথায় এলেও, নির্মাতার মনে দেখা দেয় শঙ্কা। কেননা, এ দেশে এই সংস্কৃতি এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। সবাই কি গ্রহণ করবে? এমন প্রশ্ন জাগে তার মনে। তাই পরিকল্পনার পরিবর্তন ঘটে। থ্রিডি পোস্টার থেকে মাটির পোস্টার তৈরি করার পরিকল্পনা আসে।
শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন নির্মাতা। খোঁজখবর নেয়ার পর হতাশই হয়ে যান তিনি। কারণ পোস্টার তৈরিতে গুনতে হবে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। বাজেটের সঙ্গে ব্যাটে-বলে মিলছিল না। তারপর কলেজ জীবনের বন্ধু রকি চাকির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তার কাছ থেকে পাওয়া গেল আশার আলো। রকি চাকির মেয়ে চারুকলার শিক্ষার্থী। তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন চিত্রশিল্পী রিংকুর সঙ্গে। তারপর সামনাসামনি কথাবলা হলো। তাকে পরিকল্পনা জানানোর পর পোস্টারের ধারণাটি পছন্দ হয় রিংকুর। তিনি জানান, পরিকল্পনাটা পছন্দ হয়েছে; টাকা বড় কথা নয়, কাজটা তিনি করতে চান।
চিত্রশিল্পী রিংকু দুজন সহকারী নিয়ে এক মাসের প্রচেষ্টায় মাটির পোস্টারটি তৈরি করেন। বিভিন্ন প্রকার মাটি দিয়ে ডিজাইন তৈরি করা হয়। পরে খণ্ড খণ্ড সেই মাটির ডিজাইন একত্র করে মূল পোস্টার তৈরি হয়। সম্পূর্ণ বানানো শেষ হওয়ার পর কাঠের ফ্রেম দিয়ে চারদিক বাঁধাই করা হয়। রং-তুলি দিয়ে করা হয় অলংকরণ।
নির্মাতা জানান, দিন যত গড়াবে তত পোস্টারটির রং বদল হবে। সম্পূর্ণ পোস্টারটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। দুটি পোস্টার তৈরি করা হয়। একটি পোস্টার যমুনা ফিউচার পার্কের ভেতরে রাখা হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি এফডিসির ভেতরে। দর্শকরা আগ্রহ নিয়ে পোস্টারটির সঙ্গে ছবি তুলছেন। তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা পোস্ট করছেন। এ ছাড়া পরিচালক সমিতির নির্বাচনে পোস্টারটি নিয়ে প্রশংসা করেন অনেক নির্মাতারা।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা