বিলুপ্তির অন্তরালেই ছিল এর ফিরে আসার বারতা। তাই যেন বিলুপ্ত হয়ে যেতে যেতেই আবার রঙিন পাখায় ভর করে ফিরে এল ছটফটে এই ফেন্ডার’স ব্লু প্রজাপতি। বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির প্রজাপতির তালিকায় রয়েছে এর নাম।
যুক্তরাষ্ট্রের মৎস্য ও বন্যপ্রাণী সেবা সংস্থা জানায়, এই প্রজাপতি একসময় এতটাই দুর্লভ হয়ে পড়ল যে বিশেষজ্ঞরা একে মহাবিপন্নর তালিকা থেকে সরিয়ে বিলুপ্তির খাতায় এর নাম লিখে দেন। ১৯৩৭ সালে এ ঘটনা ঘটে। পরে ১৯৮৯-এর দিকে আবার কোনো কোনো স্থানে এর দেখা মেলে। বর্তমানে এই ফেন্ডার’স ব্লু প্রজাপতি দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের উইলামেট উপত্যকায়। সেখানে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে ব্যাপক কার্যক্রম চালানো হয়। ফলে ২০০০-এর তুলনায় ২০১৮ সালে প্রায় চার গুণ বেড়ে যায় প্রজাপতির সংখ্যা।
ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ইভানস্টন টাউনশিপ হাইস্কুলের জীববিজ্ঞান ও নগর কৃষিবিষয়ক শিক্ষক এবং প্রজাপতি সুরক্ষা কর্মী সুজুদ ওটমান বলেন, “এভাবে একটি প্রজাতির ফিরে আসা আমাদের জন্য ‘আশার চিহ্ন’। তার মানে, অন্যান্য বিপন্ন প্রজাতিকেও আমরা সুরক্ষা দিতে পারি।”
সিএনএনকে ওটমান জানান, ফেন্ডার’স ব্লু প্রজাপতি এক অনন্য প্রজাপতি। এরা শুধু কিনসেইড’স লুপাইন নামের একটা গাছেই ডিম পাড়ে। এই গাছ আর এই প্রজাপতি পরস্পরের ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। কিনসেইড’স লুপাইনগাছের সংখ্যাও এখন অনেক কমে গেছে।
এই পতঙ্গটি তার জীবনচক্রের কারণেও বেশ অদ্ভুত। যখন এটি শুয়োপোকা অবস্থায় থাকে, তখন এর বিকাশ হয় বিলম্বিত। খুব ধীরে ধীরে এটি প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়। আর প্রাপ্তবয়স্ক একটি প্রজাপতির আয়ু মাত্র ১০ দিন। অর্থাৎ এ সময়টুকুর মধ্যেই তাকে বন্ধু খুঁজে প্রজনন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে হয়।
ওটমান বলছেন, আবাসনসংকট আর কৃত্রিম বনায়ন এর প্রধান শত্রু। তাই প্রজাপতিগুলোর জন্য প্রেইরি সমভূমি প্রাকৃতিকভাবে এখন যেমন আছে, তেমনই রেখে দেয়া উচিত। এখানে বনায়ন করতে চাইলেই সমস্যা। এমনকি প্রাকৃতিক দাবানলও খারাপ কিছু নয়। এটি প্রতিরোধ করার প্রয়োজন নেই।
‘পরাগায়ন ঘটিয়ে প্রজাপতি আমাদের বাস্তুতন্ত্র বা প্রতিবেশ রক্ষা করে। খুব বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টি দিয়ে না দেখলে বিষয়টি সহজে বোঝা যায় না। তাই বিপন্ন প্রজাপতিগুলোকে রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফেন্ডার’স ব্লু প্রজাপতি যেহেতু ফিরে এসেছে, তাই আমার জোর বিশ্বাস মোনার্ক প্রজাপতিও একসময় ফিরে আসবে। গত জুলাইয়ে আইইউসিএন (প্রকৃতি সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন) একে মহাবিপন্ন প্রজাতির তালিকায় ফেলেছে,’ জানালেন ওটমান।
তীব্র গরমে লাইভ সংবাদ পড়ার সময় জ্ঞান হারিয়েছেন কলকাতার এক টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপিকা। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিরিয়ালের একজন পরিচিত অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। তার নাম লোপামুদ্রা সিনহা। দীর্ঘদিন সংবাদ পাঠ করছেন।
গতকাল শুক্রবার নিজের ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লাইভ নিউজ চলার সময় আমার বিপি (রক্তচাপ) মারাত্মক কমে যায়, আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। বেশকিছুক্ষণ ধরেই আমার শরীর খারাপ লাগছিল, মনে হচ্ছিল একটু পানি খেলে ঠিক হয়ে যাবে। আমি কোনোদিন পানি নিয়ে সংবাদ পড়তে বসি না। সেটা ১০ মিনিটের নিউজ হোক বা আধ ঘণ্টার, কখনো প্রয়োজন পড়েনি। ফ্লোর ম্যানেজারকে ইশারা করে পানির বোতল চাই। সেই সময় জেনারেল স্টোরি যাচ্ছিল, কোনো বাইট চলছিল না। ফলে আমি পানি খেতে পারচ্ছিলাম না। অবশেষে একটা বাইট আসায়, পানিটা অবশেষে খাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল বাকি চারটি নিউজ স্টোরি আমি শেষ করতে পারব। দুটো কোনোরকমে কমপ্লিট করি, তিন নম্বরটা হিট ওয়েভের ওপর স্টোরি ছিল। সেটা পড়ার সময়ই আমার আস্তে আস্তে কথাটা জড়িয়ে যাচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম আমি শেষ করতে পারব, নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু না…অসুস্থতা তো বলে কয়ে আসে না। ওই স্টোরিটার সময় আমি আর দেখতেই পাচ্ছিলাম না। টেলিপ্রমটারটা আবছা হতে হতে শেষে আমি ব্ল্যাকআউট হয়ে যাই..’।
টিভির নিউজ ফ্লোর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলেও ওইদিন সেটি কাজ করছিল না বলেন জানান লোপামুদ্রা। ফলে ফ্লোর মারাত্মক গরম হয়ে পড়েছিল।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বার্বাডোস। আজ শনিবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে বার্বাডোস ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। বার্বাডোসের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।’
বার্বাডোসের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী কেরি সিমন্ডস বলেন, মন্ত্রিসভা মনে করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে। বার্বাডোস সর্বদা জাতিসংঘের নীতি মেনে চলে। আমরা মনে করি, চলমান সংঘাত নিরসনে একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান হওয়া উচিত।’
বার্বাডোসের নীতির আলোকেই ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই মন্ত্রী। তবে সিদ্ধান্তটি ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে কোন প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি।
বার্বাডোস ফিলিস্তিনকে স্বাধীনরাষ্ট্র হিসেবে দেওয়ায় জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪০টি এখন ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে, সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায়, ভোগান্তি কমেনি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের। এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান।
রেকর্ড ভাঙা ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মরুভূমির দেশটিতে এক বছরের গড় বৃষ্টিপাত হয় ৯৪ মিলিমিটার। সেখানে দুই দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যায় তলিয়ে যায় বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম দুবাই বিমানবন্দর। ব্যাহত হয়েছে কয়েক শ ফ্লাইট।
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে রাজধানী আবুধাবিতে প্রবেশের সব সড়ক। এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে অনেকে। পানির কারণে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, থমকে আছে বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা। এমন অবস্থায় বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারছে না অনেক যাত্রী। আটকে থাকা যাত্রীদের খাবার দিতে পারছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পানি জমে থাকায়, অনেক সড়কে এখনো স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও কর্তৃপক্ষের।
তবে বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল। তবে এখনো বিলম্বিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বুকিং নিশ্চিত যাত্রীদের চেক-ইন করার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমিরাটস এয়ারলাইন দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩নং টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তার নির্দেশ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান।
দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা
ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরটির বহু বাড়ি ও শপিং মল হাঁটু পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। দুবাইয়ের মতো শহরে এ ধরনের চিত্র অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পরে দুবাই বিমানবন্দরই হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছে আট কোটি যাত্রী। দুবাই বিমানবন্দর তলিয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে শতশত ফ্লাইট। বিমানবন্দরের ভেতরে চরম এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দুবাই বিমানবন্দর যেভাবে তলিয়ে গেছে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটি প্লাবিত হওয়ায় দুবাইগামী ও দুবাই ছেড়ে আসা ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
প্রসূন রায় নামের এক ব্যক্তি জানান, গত তিন দিন ধরে দুবাই বিমানবন্দরে আটকে আছেন তিনি। দুবাই থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ফ্লাইট ছিল প্রসূন রায়ের। মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরে যাওয়ার পর তিনি ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন; কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে পারেননি।
তিনি বলেন, আটবার তার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট কখন ছেড়ে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফ্লাইটের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে এন্ট্রি ভিসা নিয়ে শহরের ভেতরে এসেছি। কারণ, এয়ারপোর্টের ভেতরে কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই।
তার বর্ণনা অনুযায়ী, হাজার হাজার যাত্রী দুবাই এয়ারপোর্টের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। অনেকে স্লোগান দিচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও কূলকিনারা করতে পারছে না। পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গাড়িগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলোর ব্রেক কাজ করছিল না। ফলে একটি গাড়ি গিয়ে আরেকটি গাড়িকে ধাক্কা মেরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। অনেক গাড়ি রাস্তায় পানির মধ্যে ডুবে ছিল।
ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে যারা বুধবার দুবাইতে অবতরণ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্বিষহ। অবতরণ করার জন্য বিমানগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশে চক্কর দিলেও অবতরণের অনুমতি পাচ্ছিল না। বিমানবন্দরের বাইরে শতশত গাড়ি বিকল অবস্থায় পড়ে ছিল।
রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অনেকবার ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছেছেন। ঢাকায় তিনি ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দুবাইয়ের উদ্দেশে প্লেন ছেড়ে যায়। দুবাইতে সিনেমার মতো যাত্রা। এক ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিট প্লেনের ভেতরে বসে আছি। কারণ, কোনো গ্রাউন্ড সার্ভিস নেই।
তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আকিব ইরফানের। তার স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকা আসার কথা ছিল। এক দিন অপেক্ষা করার পর শেষপর্যন্ত তিনি ঢাকার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠতে পেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফ্লাইট কনফার্ম না হলে কাউকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, ভেতরে যাত্রীদের এত বেশি চাপ তৈরি হয়েছে যে আর যাত্রী ভেতরে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
দুবাই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন ব্রিটিশ ট্যুরিস্ট অ্যান উইং, তার স্বামী ও তিন সন্তান। তারা লন্ডনের হিথ্রোতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। অ্যান উইং বলেন, এটা খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমাদের পশুর মতো করে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক। আমার পরিবারের সদস্যদের কাছে কোনো খাবার নেই।
ইরানের ইস্পাহানে ইসরায়েলের হামলার পর আজ শুক্রবার পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এশিয়ার শেয়ার ও বন্ডে ধস নামে, যেখানে উল্লম্ফন দেখা যায় স্বর্ণ ও অশোধিত জ্বালানি তেলের দামে।
সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি জানার পর পুঁজিবাজার ও তেলের বাজারে শুরুতে যে প্রভাব পড়ে, সেটি কমে এসেছে। হামলার পরিসর ছোট এবং কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি বলে ইরানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন বাস্তবতা সৃষ্টি হয়।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিভিত্তিক এমএসসিআইয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সূচকের পতন হয় দুই দশমিক ছয় শতাংশ, যেটি পরবর্তী সময়ে কমে দাঁড়ায় দুই শতাংশে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কায় ব্রেন্টের অশোধিত জ্বালানি তেলের দাম শুরুতে চার দশমিক দুই শতাংশ বাড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কমে বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই দশমিক চার শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধি কমার পর ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্টের অশোধিত তেলের দাম দাঁড়ায় ৮৯ দশমিক ২২ ডলারে।
সিরিয়ার দামেস্কে গত ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় নগর ইস্পাহানে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানায়, ইস্পাহানের একটি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানা যায়নি। ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের খবরে বলা হয়, ‘ইস্পাহান প্রদেশের পরমাণু ক্ষেত্রগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ইস্পাহানের কাছে বিস্ফোরণের পর কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। সেখানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়নি।
ইস্পাহান শহরের কাছে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম।
ভারতে ছয় সপ্তাহব্যাপী লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার থেকে। নির্বাচনে হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জয় প্রায় নিশ্চিত বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এএফপি।
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম এ নির্বাচনে মোট ৯৬ কোটি ৮০ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে।
গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত হরিদ্বারে একটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে লোকজনকে ধৈর্য নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভোটের বুথ খোলার আগেই সেখানে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
স্থানীয় ২৭ বছর বয়সী এক অটোরিক্সা চালক বলেন, ‘আমি এখানে ভোট দিতে এসেছি কারণ দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমি খুশি। আমি ব্যক্তিগত কল্যাণে নয়, দেশের সমৃদ্ধির স্বার্থে ভোট দেব।’
৭৩ বছর বয়সী মোদি এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তার এক দশকের শাসনামলে বিশ্বব্যাপী ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটি অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়েছে।
নির্বাচন শুরু হওয়ার পরপরই তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় লিখেছেন, ‘আমি দেশের সকল ভোটারকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি ভোটই গুরুত্বপূর্ণ।’
২০১৪ এবং ২০১৯ সালে দুটি ভূমিধস বিজয়ে মোদি ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্ব দেন।
প্রকাশিত মতামত জরিপ ভারতে বিরল হলেও গত বছর পিউ পরিচালিত সমীক্ষায় দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ জনগণ মোদির পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। খবরে বলা হয় ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে সাতটি ধাপে ভারতে ভোট গ্রহণ করা হবে। দেশজুড়ে ১০ লাখেরও বেশি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। আগামী ৪ জুন একযোগে ভোট গণনা শুরু করা হবে।
ইসরায়েল ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র নয় ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করছে ইরানের একটি সরকারি গণমাধ্যম। আজ শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমটি বলছে, ‘দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কয়েকটি ড্রোন ধ্বংস করেছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলার কয়েক দিন পরই পাল্টা হিসেবে এ হামলা হলো।’
ইসরায়েলের আজকের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয় বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে। তবে হামলার আগে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছিল তারা।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস বলছে, মধ্যাঞ্চলের শহর ইস্পাহানের একটি সেনাঘাঁটির কাছাকাছি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছে, এটা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়। ইরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার কারণেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, মধ্যরাতের একটু পরেই ‘ইস্পাহানের আকাশে তিনটি ড্রোন দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। আর এর ফলে ড্রোনগুলো আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়।’
ইরানের এ ভাষ্য নিয়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ জানায়, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত হেনেছে। তবে কোথায় আঘাত হানা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তারা দেননি। আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া অন্য কোনো যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা-ও জানাননি। কিন্তু ইরানের পক্ষ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
বিশ্লেষক এবং পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের চলমান যুদ্ধ এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আজকের হামলার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাঁদের ভূখণ্ডে কোনো হামলা হলে এর ‘চরম জবাব’ দেবে তাঁর দেশ।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রথম দফায় ১০২ আসনে ভোটগ্রহণ চলবে। আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তিন আসন— জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার।
এ ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং মেঘালয়ের দু’টি করে আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। একটি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে ছত্তীসগঢ়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর, জম্মু ও কাশ্মির, লাক্ষাদ্বীপ এবং পন্ডিচেরিতে। বিহারের চার আসনেও শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ।
মণিপুরে মোট দু’টি লোকসভা আসন। ইনার মণিপুর এবং আউটার মণিপুর। তবে নির্বাচন কমিশন আউটার মণিপুরকে ভাগ করে দু’দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার তাই আউটার মণিপুরের একাংশে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। বাকি অংশে ভোটগ্রহণ হবে ২৬ এপ্রিল।
এ ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং মেঘালয়ের দু’টি করে আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। একটি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে ছত্তীসগঢ়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর, জম্মু ও কাশ্মির, লাক্ষাদ্বীপ এবং পন্ডিচেরিতে। বিহারের চার আসনেও শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ।
পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড এবং মহারাষ্ট্রের ছয় আসন, উত্তরপ্রদেশের আট আসন, রাজস্থানের ১২ আসনে ভোটগ্রহণ করাচ্ছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে ৩৯টি আসনে ভোটগ্রহণ চলছে।
ভোট শুরুর ঠিক আগে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে দেশবাসীকে রেকর্ড সংখ্যক ভোটগ্রহণের আবেদন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইংরেজি, হিন্দি, তামিল, মারাঠি, বাংলা এবং অসমিয়া— মোট ছয় ভাষায় পোস্ট করেন তিনি।
মোদী তার পোস্টে লেখেন, ভোটারদের প্রতি আমার আবেদন রেকর্ড সংখ্যক ভোটদানের। বিশেষ করে তরুণ ও প্রথমবারের ভোটদাতাদের আমি বিপুল সংখ্যায় ভোটদানের আহ্বান জানাই। সর্বোপরি, প্রত্যেকটি ভোটের গুরুত্ব আছে, আর প্রতিটি কণ্ঠস্বরই গুরুত্বপূর্ণ!
ইরানের একটি স্থানে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি এ খবর জানায়।
এবিসির বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার জানায়, ইরানের কেন্দ্রস্থলে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
সিরিয়ার দামেস্কে গত ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই ইরানে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেল।
এবিসির প্রতিবেদনের সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানায়, দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানের একটি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানা যায়নি।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ইস্পাহান, সিরাজ ও তেহরানে বিমান চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে।
ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক ক্ষেত্র রয়েছে ইস্পাহান প্রদেশে। অঞ্চলটিতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কেন্দ্রে থাকা নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রও রয়েছে।
আজ (শুক্রবার) থেকে শুরু হচ্ছে ভারতে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। সারা দেশে সাত দফায় এবার ভোটগ্রহণ চলবে। শেষ দফার ভোটগ্রহণ হবে ১ জুন। ভোট গণনা এবং ফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। ইতোমধ্যেই এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দলের প্রচার-প্রচারণাসহ দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই শুধু সেদেশেই নয়, বিদেশেও ভারতের সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা এবং আগ্রহ রয়েছে। এতদ্বতীত, এশিয়া মহাদেশে ভারত এই মুহূর্তে চিনের পাশাপাশি এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। সে কারণেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ পাশ্চাত্যের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও ভারতের নির্বাচনের ওপর নজর রাখছে। প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা এ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে ভারতে পৌঁছেছেন। নির্বাচনকে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ করার জন্য দেশটির নির্বাচন কমিশন বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে দেশটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৯৬ কোটি ৮৮ লাখ ২১ হাজার ৯২৬। ২০১৯ সালের তুলনায় পুরুষদের চেয়ে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নির্বাচন বরাবরই এক অনিশ্চয়তার খেলা। শেষ পর্যন্ত কে বাজিমাত করবে তা আগে থেকে ভবিষ্যৎ বাণী করা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন সমীক্ষক সংস্থা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে ভোটারদের মন বোঝার চেষ্টা করছে এবং প্রায় সবার সমীক্ষাতেই একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি তৃতীয়বারের মতো কেন্দ্রে সরকার গড়তে যাচ্ছে। কোনো কোনো সমীক্ষা বলছে, গতবারের আসন সংখ্যার চেয়েও বিজেপি এবার বেশি আসন লাভ করবে। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বিজেপি একাই এবার ৩৭০ আসন লাভ করবে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পাবে ৪০০-এর বেশি আসন। নির্বাচনের ফল যদি তাই হয়, তবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক ও দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পর নরেন্দ্র মোদি হবেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি টানা তিন মেয়াদে দেশ শাসন করবেন।
উল্লেখ্য, ভারতে লোকসভার আসনসংখ্যা ৫৪৩। সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভের জন্য ন্যূনতম ২৭৩টি আসন দরকার। বর্তমানে সপ্তদশ লোকসভায় বিজেপির একক আসন সংখ্যা ৩০৩। বিজেপির শরিকদের আসন সংখ্যা ৫০। বর্তমান লোকসভার মেয়াদ ১৬ জুন শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন হাউস গঠন করতে হয়।
বিজেপির কাছে এবার প্রধান চ্যালেঞ্জ গত নির্বাচনের এই বিপুল সাফল্যকে ধরে রাখা এবং আরও বেশি সংখ্যক আসন জিতে আসা। নির্বাচনে সাফল্য পেতে বিজেপির প্রধান ভরসা নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি। এ কথা অনস্বীকার্য যে এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদির বিকল্প কোনো নেতা নেই। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন মনে করেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই ভারত প্রগতি এবং উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মহলে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তাও দেশের ভেতরে নরেন্দ্র মোদিকে এগিয়ে রেখেছে। নরেন্দ্র মোদির এই ভাবমূর্তির ওপর নির্ভর করে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ বিজেপির কাছে কোনো কঠিন বিষয় নয়। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধীরা নরেন্দ্র মোদির বিকল্প হিসেবে কোনো গ্রহণযোগ্য মুখ তুলে ধরতে পারেননি। বরং ভোটগ্রহণের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই তাদের দিশেহীন অবস্থা প্রকট হচ্ছে।
লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে কারও কোনো দ্বিধা না থাকলেও, কোনো কোনো সমীক্ষক অবশ্য মনে করছেন বিজেপির আসন সংখ্যা এবার গতবারের তুলনায় কমতে পারে। এর কারণ হিসেবে তারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তুলে ধরছেন। তারা বলছেন, দেশে গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার এবং তার সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা, অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, সামাজিক ভারসাম্য ক্রমেই নষ্ট হতে বসা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বাড়াবাড়ি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ এগুলোর খেসারত কিছুটা হলেও বিজেপির সরকারকে দিতে হবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচলপ্রদেশ, পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দক্ষিণে কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটকে বিজেপির আসন কমবে। উত্তরে হিমাচল প্রদেশেও বিজেপি আশানুরূপ ফল করবে না। দিল্লি, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানাতেও বিজেপির ফল আশানুরূপ হবে না। বর্তমানে বিজেপি এককভাবে এবং শরিকদের সঙ্গে জোট গড়ে ১৮টি বিধানসভায় ক্ষমতায় রয়েছে। এ বিধানসভার প্রায় প্রত্যেকটিতেই বিজেপি বিরোধীদের ধূলিসাৎ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনসংখ্যা জোগাড় করে নিতে পারে। কী হবে তা এখনই বলা যায় না। তার জন্য ৪ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
দুই বাংলার বাঙালিরা অবশ্য বেশি আগ্রহী পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে। দেশের অন্যান্য অংশের মতোই পশ্চিমবঙ্গে ভোট গ্রহণ হবে সাত দফাতেই। প্রথম দফা শুরু হবে আজ। শেষ দফা ১ জুন। ফলাফল ৪ জুন। গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপি উল্লেখযোগ্য ফল করেছিল। ১৮টি আসন লাভ করেছিল। ২২টি আসন লাভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২টি আসন গিয়েছিল কংগ্রেসের ঝুলিতে।
এবার বিজেপি তাদের ১৮ টি আসন ধরে রেখে আরও এগুতে পারে কি না সে দিকে সবার নজর রয়েছে। স্বয়ং অমিত শাহ নিজে এবার বাংলায় এসে দলের কাছে ৩৫ টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি বলছেন ৪২ টি আসনে জেতার লক্ষ্য নিয়ে এবার এগোতে হবে। ৪০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে গেলে যে বাংলা থেকে আরও আসন দখল করতে হবে সেটা মোদি-শাহ জানেন। সে জন্য পশ্চিমবঙ্গে জেতার ব্যাপারে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই এই রাজ্যে ঘনঘন প্রচারে আসছেন মোদি-শাহ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও মোদি-শাহ পশ্চিমবঙ্গের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
বিজেপি নেতৃত্ব যতই দাবি করুণ না কেন, নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ এবং সমীক্ষকরা সকলেই একমত হচ্ছেন যে, এবারের নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির আসন কমবে। উত্তরবঙ্গে কিছু আসন বিজেপি পেলেও দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
নির্বাচনি বিশ্লেষক এবং সমীক্ষকরা বলছেন যে, জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদির বিকল্প যেমন কোনো নেতা নেই তেমনি বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কেউ নেই। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকটাই অপ্রতিরোধ্যভাবেই এগুবেন। জাতীয় স্তরে বিজেপি অনেক এগিয়ে থাকলেও বাংলায় তার প্রভাব তেমন পড়বে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই এগিয়ে থাকার অনেক কারণ রয়েছে। যার অন্যতম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের চালু করা বেশ কিছু সামাজিক প্রকল্প যার সুফল বাংলার গ্রামীণ এবং প্রান্তিক মানুষ পেয়েছেন। এই সব প্রকল্পের ভেতর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পগুলো রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ এলাকায় সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি, বিদ্যুৎ এবং পানীয় জল সরবরাহ, সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর উন্নতি সাধনও মমতার আমলেই হয়েছে। এসব কারণে গ্রামীণ এবং প্রান্তিক মানুষের বৃহদংশের সমর্থন তার প্রতি রয়েছে। এই রাজ্যের এক বড় অংশের ভোটার মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা মনে করে, মমতার আমলে সামাজিকভাবে তারা নিরাপদ রয়েছে। ফলে তাদের বৃহদংশের ভোটও মমতার দিকে যাবে। মহিলাদের জন্য মমতার চালু করা নানা প্রকল্পে মহিলা ভোটারদের একটা বড় অংশের সমর্থন মমতা বরাবরই পান। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে করছেন না নির্বাচনী বিশ্লেষকরা।
এর উল্টোদিকে বিজেপির হাল যথেষ্টই খারাপ। গত লোকসভা নির্বাচনে মোদি হাওয়ায় ভর করে ১৮ টি আসন জেতার পরেও এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদরা তাদের নির্বাচনী কেন্দ্রের উন্নতিকল্পে কোনো কাজই প্রায় করেনি। তা নিয়ে ভোটারদের ভেতর ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। তার কিছুটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল ২০২১ -এর বিধানসভা নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে মোদি-শাহ বাংলায় এসে ২০০ আসন জেতার কথা বললেও ৭০-এর বেশি আসন পায়নি বিজেপি। সাংগঠনিক দিক দিয়েও বিজেপি এই রাজ্যে যথেষ্ট দুর্বল। উত্তরবঙ্গে কিছুটা সংগঠন থাকলেও, দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির সংগঠন বলতে প্রায় কিছুই নেই। যেটুকু আছে তার ভেতর এত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে তার ওপর ভর করে নির্বাচনে লড়া মুশকিল।
এ ছাড়া বিজেপির নেতৃত্বে অন্য রাজ্য থেকে আসা অবাঙালি নেতৃত্ব এবং বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের আত্মস্থ না হতে পারাটিও বাংলার মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না। ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির এই রাজ্যে ভরাডুবি হওয়ার একটা অন্যতম কারণ ছিল এই অবাঙালি নেতৃত্ব।
পাশাপাশি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি বাংলায় ব্যর্থ হয়েছে। চরিত্রগতভাবে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি ধর্মীয় রাজনীতি কখনো মেনে নেয়নি। রাম মন্দির ইস্যু বাংলায় কোনো ছাপই ফেলেনি। অতি সম্প্রতি বিজেপি যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু করেছে তা শেষ পর্যন্ত বিজেপিকেই অস্বস্তিতে ফেলেছে। এই আইনের ফলে নাগরিকত্ব হারাতে হতে পারে বলে আশঙ্কিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ থেকে চলে আসা বহু মানুষই। শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলাফল কী হবে তা জানে একমাত্র ভোটাররাই। তারা কাকে সমর্থন করবে তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। যে যার নিজের ভোটটা নিঃশব্দেই দিয়ে আসবে। তবে এটুকু আঁচ করা যাচ্ছে দিল্লিতে মোদি আর বাংলায় দিদি তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখবেন এবারও।
আগামীকাল শুক্রবার ভারতে শুরু হচ্ছে আঠারোতম লোকসভার নির্বাচন। সাত দফায় এবার লোকসভার ৫৪৩টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রয়েছে ৪২টি আসন। কাল পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার নির্বাচন হবে লোকসভার তিনটি আসনে। আসন তিনটি হলো-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার আসন। আর বাকি ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে কাল নির্বাচন হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একই সঙ্গে কাল নির্বাচন হবে অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভার ৬০টি এবং সিকিমের ৩২টি আসনে।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলো পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে।
পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক, কংগ্রেসের পিয়া রায় চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের নীতীশ চন্দ্র রায়। রয়েছে অন্য ছোটখাটো দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। জলপাইগুড়ি আসনে লড়ছেন তৃণমূলের নির্মল চন্দ্র রায়, বিজেপির জয়ন্ত কুমার রায়, বামফ্রন্টের সিপিএম প্রার্থী দেবরাজ বর্মণ। রয়েছে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। আলিপুরদুয়ার আসনে লড়ছেন তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক, বিজেপির মনোজ টিগ্গা, বামফ্রন্টের মিলি ওঁরাওসহ অন্যান্য ছোট দল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২২, বিজেপি ১৮ এবং কংগ্রেস ২টি আসনে। বামফ্রন্ট ছিল শূন্য। আর গোটা দেশের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩০৩টি, কংগ্রেস ৫২টি, সমাজবাদী পার্টি ৫টি, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ এবং টিডিপি ২টি আসনে জিতেছিল।
গত নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ৬ জন, ওডিশার বিজেডির ৫ জন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন। আর এ বছর ভারতে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন (১৮-১৯ বছর) ১ কোটি ৮০ লাখ ভোটার।
পশ্চিমবঙ্গে এবার ভোট দেবেন ৭ কোটি ৬৯ লাখ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৯৮১ জন। নারী ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৯৬০ জন। রাজ্যে ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ১ হাজার ৮৩৭ জন। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশন ভোট নির্বিঘ্ন করতে সব ভোটকেন্দ্রের জন্য ২৬৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আরও থাকছে ১১ হাজার রাজ্য পুলিশ। নির্বচন কমিশন এই রাজ্যের কোচবিহার আসনের ২ হাজার ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৬টি কেন্দ্র, আলিপুরদুয়ারের ১ হাজার ৮৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৯টি এবং জলপাইগুড়ির ১ হাজার ৯০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯১টি ভোটকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রথম দফার এই তিন আসনের নির্বাচনে ২০১৯ সালে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থীরা। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিক, জলপাইগুড়িতে জয়ন্ত রায় এবং আলিপুরদুয়ারে জন বারলা। বিজেপি এবার জন বারলাকে মনোনয়ন না দিয়ে রাজ্য বিধানসভার বিজেপির চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গাকে মনোনয়ন দিয়েছে। গত নির্বাচনে এই তিনটি আসনে বিজেপি তৃণমূল প্রার্থীদের পরাজিত করেছিল বিপুল ভোটের ব্যবধানে। এবারও বিজেপি আশাবাদী, এই তিনটি আসনেই আবার তারা জিততে চলেছে। কারণ, এখনো পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ এলাকায় বিজেপি শক্তিশালী।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ২৫ হাজার টন বিস্ফোরকদ্রব্য ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডগুলোর জন্য নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ। তার ভাষ্য, এসব বিস্ফোরকের বেশির ভাগ ছোড়া হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে।
আল জাজিরা বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাবে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া হামলার প্রথম সপ্তাহে গড়ে ২৫০ জন নিহত হন বলে জানান আলবানিজ। জাতিসংঘের বিশেষ দূতের ভাষ্য, গাজায় হামলার শুরুর সপ্তাহে ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়’ ইসরায়েল দুই হাজার পাউন্ড বাঙ্কার বাস্টার বোমা ছোড়ে।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত জিপি হটভলির এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত কথাগুলো বলেন আলবানিজ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম স্কাই নিউজকে হটভলি বলেন, ‘শুধু ভাবুন, জেরুজালেমের মতো কোনো শহরের মাঝখানে বিশাল একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়লে বিষয়গুলো কেমন ঠেকত।
‘শুধু ভাবুন, এটি লোকালয় এবং জনগণ ও শিশুদের ওপর আঘাত করছে।’
গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে প্রাণঘাতী হামলার প্রতিশোধ নিতে কয়েক দিন আগে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলে এটিই ছিল ইরানের সরাসরি প্রথম কোনো হামলা।
যদিও কনস্যুলেটে হামলা চালানোর কথা ইসরায়েল স্বীকার করেনি। তবে এই হামলার পর এখন ইসরায়েলও প্রতিশোধ নেওয়ার উপায় খুঁজছে। এমন অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে বড়সড় যুদ্ধের সূচনা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
তবে হিজবুল্লাহ বা ইরান কেউই বর্তমানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় বলে মন্তব্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এমনকি আঞ্চলিক সংঘাত সৃষ্টি হলে তা ‘কারও স্বার্থেই ভালো হবে না’ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ বা ইরান কেউই বর্তমানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান মঙ্গলবার ফরাসি দৈনিক লে মন্ডেকে বলেছেন। সপ্তাহান্তে ইসরায়েলে ইরানের হামলা সম্পর্কে জোসেপ বোরেল বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েক দিন আগে সতর্ক করা হয়েছিল।’
জোসেপ বোরেল আরও বলেছেন, ‘আক্রমণের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন- তারা শুধু সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, তিনি আমাকে বুঝিয়েছেন- এটি ছিল কেবল নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া। আপনি যখন ক্ষতি করতে চান, তখন আপনি এমন কোনো ড্রোন পাঠাবেন না, যেটি আঘাত হানতে ছয় ঘণ্টা সময় নেয়।’
তার ভাষায়, ‘বর্তমানে হিজবুল্লাহ বা ইরান কেউই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়।’
ইইউ পররাষ্ট্র নীতির এই প্রধান জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো উত্তেজনা এড়ানো। তিনি উল্লেখ করেছেন, আঞ্চলিক সংঘাত ‘কারও স্বার্থে, বিশেষ করে গাজার স্বার্থে ভালো কিছু নয়’।
জোসেপ বোরেল জোর দিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতি এবং ঐক্য ছাড়া অন্য কোনো ক্ষমতা নেই, যদিও জার্মানিসহ কিছু সদস্য দেশের ইসরায়েলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘আমেরিকানরা চাইলে অন্য উপায় ব্যবহার করতে পারে, বিশেষ করে ইসরায়েলে তাদের অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়ে। তারা অতীতে অপরিবর্তনীয় নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আজ, আমি মনে করি, তাদের যে সুবিধা আছে তা তারা ব্যবহার করতে চায় না।’
তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত সম্পর্কে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ‘স্পষ্ট এবং গভীর বিভাজন’ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে কিছু দেশ- যেমন ফ্রান্স অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে শুরু করেছে।
বোরেল জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সর্বদা পারস্পরিক সম্মতিসূচক অবস্থান উপস্থাপনের চেষ্টা করি: যদি ইউক্রেনের অবরুদ্ধ জনসংখ্যার জন্য পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য বন্ধ করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি হয়, তাহলে গাজাতেও তা একই।’
তার ভাষায়, ‘যদি আমরা এই সার্বজনীনতাবাদী অবস্থান গ্রহণ না করি, তাহলে আমাদেরকে দ্বিচারিতা বা ভণ্ডামির জন্য অভিযুক্ত করা হবে।’
এর আগে সিরিয়ার রাজধানীতে তেহরানের কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার গভীর রাতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান এ হামলা চালায়। যদিও বেশিরভাগ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারপরও উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি হতে পারে বলে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে।
মূলত গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলে রাতারাতি ৩০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে তেহরান। এর বেশিরভাগই ইরানের অভ্যন্তর থেকে নিক্ষেপ করা হয়।
তবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রবাহিনী।
এদিকে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা আর না বাড়ানোর বিষয়ে বোঝাতে ইসরায়েল সফরে গেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন। এই সফরে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ইরানের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। যদিও এখনো পাল্টা আক্রমণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি তেল আবিব।
তবে এই উত্তেজনা যাতে আঞ্চলিকভাবে বড় পরিসরে ছড়িয়ে না পড়ে সেই উদ্যোগ নিতে ডেভিড ক্যামেরুনের এই হঠাৎ সফর।
তিনি ইসরায়েল সরকারকে স্মার্ট ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার জেরুজালেমে পৌঁছে ক্যামেরুন বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানাতেই সেখানে গিয়েছেন। পরবর্তীতে কী ঘটবে সে বিষয়ে ভাবার এখনই উপযুক্ত সময়। কিন্তু এটা পরিষ্কার ইসরায়েল আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেবে।
ক্যামেরুন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উত্তেজনা যতটা সম্ভব কমের মধ্যে রেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি জানান, ইসরায়েলের হামাসকেই মূল ফোকাসে রাখতে হবে। তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
আকস্মিক বর্ষণে প্লাবিত হয়ে গেছে দুবাইয়ের বিমানবন্দর। প্রবল বজ্রঝড় ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহরটি। রেকর্ড করা হয়েছে ৭৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। জলমগ্ন হয়ে পড়ায় দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অর্ধশতাধিক ফ্লাইট বাতিল ও বুধবার রাত পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার গভীর রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে পুরো বছর জুড়ে দুবাইয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হতো ৯৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার।
প্রবল বৃষ্টির কারণে সোমবার রাত থেকেই অকার্যকর হতে থাকে বিভিন্ন পরিষেবা। প্রবল বর্ষণের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার রাতেই দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট অবতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বুধবার রাত পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে বিমানবন্দরে চেক-ইন।
এদিকে প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে ওমানে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।