ইতালির সেরা পনিরগুলোর একটি পেকোরিনো। চাহিদাও বেশ। অথচ লোরেতো পাসিত্তির পনিরগুলোর কোনো গতি হচ্ছিল না। একে তো রেস্তোরাঁ খোলা নেই, তার ওপর বাড়তি উৎপাদন ব্যয় আর গ্রাহকদের খরচ কাটছাঁটে লোরেতোর কপালের ভাঁজ বাড়ে বৈ কমে না।
এই ঘটনা করোনাকালীন। লোরেতোর দশা ইতালির সব পেকোরিনো উৎপাদকের। পুরো শিল্প হুমকির মুখে। লোরেতো দেখলেন সামনে একটাই খোলা পথ। শত শত বছর আগে পূর্বসূরিরা যা করতেন, তিনিও তা-ই করলেন। গুহায় বন্দি করেন সব পনির।
ইতালির লাজিওর পিসিনিস্কো গ্রামে লোরেতোর পনিরের দোকান। নাম লা কাসিওস্তেরিয়া দি কাসা লরেন্স। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘লকডাউনের সময় আমার প্রায় সবকিছু শেষ হয়ে যায়। তবে পনির মাটির নিচে রাখার এই প্রাচীন পদ্ধতির কারণে সব ফিরে পাই।’
ভেড়ার দুধ থেকে তৈরি নোনতা স্বাদের পেকোরিনো নানাভাবে বাজারে আসে। পরিবেশনেও ভিন্নতা আছে। একটি সংস্করণ তৈরি হয় রাজধানী রোমের উপকণ্ঠের লাজিও অঞ্চলে। ‘পেকোরিনো রোমানো’ নামের সে পনিরের ব্যবহার ইতালিজুড়ে। নানা পদের খাবারে ব্যবহারও বেশ।
ইতালিতে দুই হাজার বছর ধরে তৈরি হচ্ছে পেকোরিনো রোমানো। দীর্ঘদিন রাখা যায় বলে রোমান সেনাদের খাবার হিসেবে উপযুক্ত ছিল। লবণ দিয়ে স্থায়িত্ব আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় মধ্যযুগে।
রোমান সাম্রাজ্যের পতন হলেও টিকে যায় পেকোরিনো রোমানো। করোনার ধাক্কাও সামলে ওঠে সহজেই। কারণ পেকোরিনোর অন্য ধরনগুলোর তুলনায় বাড়িতে এর ব্যবহার বেশি। ২০২০ সালে লকডাউন শুরু হলে পরিবারগুলো বরং মজুত করতে শুরু করে।
বিপদে পড়েন অন্যান্য পেকোরিনো বিক্রেতারা। লোরেতো পাসিত্তি বলেন, ‘করোনার সময় আমি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বিক্রির চেষ্টা করেছি। অনলাইনে স্টোর খুলেছি। কাজের কাজ কিছু হয়নি। এরপর উৎপাদনের ধারা বদলে দিলাম।’
২০২০ সালের জুলাইয়ে আকারে বড় পনির বানাতে শুরু করেন লোরেতো, যেন একসঙ্গে অনেক পনির সংরক্ষণ করতে পারেন। এরপর সেগুলো মধ্য ইতালির এমিলিয়া-রোমানিয়ায় চার মিটার গভীর এক চুনাপাথরের গুহায় সংরক্ষণ করা শুরু করেন।
ভূগর্ভে খাবার সংরক্ষণের প্রাচীন এই কৌশলের নাম ফোসা। এতে সময়ের সঙ্গে পনির আরও উন্নত হয়। একই পদ্ধতিতে পনির সংরক্ষণ করেন রোমের রেস্তোরাঁমালিক মাসিমো ইনোসেন্তি। তার রেস্তোরাঁর মেঝের নিচ দিয়ে চলে গেছে দুই হাজার বছরের পুরোনো এক গুহা। সেই রোমান সাম্রাজ্যের আমলের। সেখানেই পেকোরিনো সংরক্ষণ করেন তিনি।
ইনোসেন্তির রেস্তোরাঁর হেঁশেল সামলান বাংলাদেশের শাহিন গাজী। দেশে মায়ের কাছে প্রথম সি ফুড তৈরি শেখেন তিনি। ২০১০ সালে নেচ্যিতে যান শাহিন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি পেকোরিনোর ভক্ত। প্রখর স্বাদের অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে বেশ যায় এটি। সে কারণে রোমান রসনার জন্য একদম পারফেক্ট।’
লোরেতো পাসিত্তি পনির সংরক্ষণের জন্য গুহা পূর্ণ করে তিন মাসের জন্য বন্ধ করে দেন। এতে পনির অক্সিজেন শুষে নেয়ার সময় পায়, তা ছাড়া পরিপক্ব হলে স্বাদ-গন্ধও বাড়ে। স্বাভাবিকভাবে পনির পাঁচ থেকে ছয় মাস সংরক্ষণ করা গেলেও এই প্রক্রিয়ায় তা ১৮ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পনিরের কাঁচামালেও করোনার ধাক্কা লেগেছে। লোরেতোর দোকানের অদূরেই সেতেফ্রাতি। সেখানে ৯ পুরুষ ধরে মেষ পালন করেন মারিয়া পিয়া ও তার ভাই আন্তোনিওর পরিবার। প্রত্যেক জুনে ভেড়ার পাল নিয়ে ১৭ কিলোমিটার দূরের এক সমতল ভূমিতে যান তারা। এই ভেড়ার দুধ থেকে তৈরি পেকোরিনো পনিরেই তাদের পারিবারিক ব্যবসা চলে। তবে প্রাণিখাদ্য আর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খেতে শুরু করেন তারা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলায় ভুট্টা উৎপাদন শুরু করে পিয়া পরিবার। বছরে উৎপাদন ১২ হাজার কেজি হলে প্রতি ১০০ কেজিতে ২০ ইউরো বাচে তাদের। ব্যয়সংকোচনে এমন অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয় তাদের।
করোনার সময় জ্বালানিব্যয় লিটারপ্রতি আধা ইউরো থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৩০ ইউরোতে ওঠে। সার্বিক খরচ ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। অথচ পনিরের দাম বড়জোর ১০ শতাংশ বাড়াতে পেরেছেন বিক্রেতারা, তা-ও বিক্রি কমেছে ২৫ শতাংশ। বিশেষ করে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় কেজিপ্রতি ৪০ ইউরোর পেকোরিনো কেনার লোক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনলাইন কিংবা ঘরে ঘরে গিয়ে বিক্রির চেষ্টা না করলে অবস্থা আরও খারাপ হতো।
তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারে আরব সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ করছে পাকিস্তান। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের (পিপিএল) এ পরিকল্পনার কথা গত বুধবার জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
পিপিএলের মহাব্যবস্থাপক আরশাদ পালেকার ব্লুমবার্গকে জানান, সিন্ধুর উপকূল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে, সুজাওয়ালের কাছে এই কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হচ্ছে। ইসলামাবাদে তেল-গ্যাস সম্মেলনের সাইডলাইনে তিনি এসব কথা বলেন।
আরশাদ পালেকার জানান, ছয় ফুট উচ্চতার এই প্ল্যাটফর্মটি জোয়ার-ভাটার প্রভাব ঠেকিয়ে দিনরাত অবিরাম অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে সহায়তা করবে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জুলাইয়ে সামাজিক মাধ্যমে পাকিস্তানের ‘বিরাট তেল মজুত’ প্রসঙ্গে আগ্রহ দেখানোর পর দেশটির দূরবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে খনন কার্যক্রম নতুন গতি পেয়েছে। এরপর থেকেই পিপিএল, মারি এনার্জিস লিমিটেড ও প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল অয়েল অ্যান্ড গ্যাস- এই তিন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে অফশোর অনুসন্ধানের লাইসেন্স দিয়েছে ইসলামাবাদ।
পালেকার বলেন, পাকিস্তানের জন্য এ প্রকল্পটি প্রথম হলেও আবুধাবিতে এমন কৃত্রিম দ্বীপে সফল ড্রিলিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে।
তার তথ্য অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে দ্বীপের নির্মাণকাজ শেষ হবে ও এরপরই কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২৫টি কূপ খননের পরিকল্পনা করেছে।
এদিকে, বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ভিটল জানিয়েছে, পাকিস্তানে জাহাজের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য সর্ববৃহৎ লো-সালফার ফুয়েল অয়েল (ভিএলএসএফও) চালান সরবরাহ করা হয়েছে। দেশটির বৃহত্তম শোধনাগার সিঙ্গারিজকো এই চালান সরবরাহ করেছে।
সিঙ্গারিজকো জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএমও) নির্ধারিত কম সালফার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রস্তুত এই জ্বালানি উৎপাদন শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তাদের প্রথম বড় আকারের ক্রুড অয়েল চালানের পর থেকেই।
এই নতুন জ্বালানি সরবরাহের ফলে পাকিস্তানে জাহাজ রিফুয়েল করার পর পূর্ব থেকে পশ্চিমে দীর্ঘ রুটে যাতায়াতের জন্য আর অতিরিক্ত কোথাও থামতে হবে না। একই সঙ্গে দেশটিতে পরিবেশসম্মত সামুদ্রিক জ্বালানির স্থানীয় মজুতও বাড়বে।
আফগান সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ২৩ জঙ্গিকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় দুটি অভিযান চালিয়ে অন্তত ২৩ জঙ্গিকে হত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এর ঠিক এক সপ্তাহ আগেই ইসলামাবাদে আদালত চত্বরে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন।
সেনাবাহিনী জানায়, নিহত জঙ্গিরা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা এর সহযোগী গোষ্ঠীর সদস্য। পাশাপাশি দেশটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এসব গোষ্ঠীকে সহায়তা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কুররম জেলায় এ অভিযান চালানো হয়। এই প্রদেশের সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ফিরে আসার পর থেকে অঞ্চলটিতে সহিংসতা আরও বেড়েছে।
বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলেছে, ‘বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে পাকিস্তান পূর্ণ গতিতে অভিযান চালিয়ে যাবে।’
ইসলামাবাদ বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, আফগান সরকার পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী—বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। এসব গোষ্ঠী পাকিস্তানে প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি ইসলামাবাদের।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধেও কড়া ভাষায় অভিযোগ তুলছে যে দেশটির ভেতরে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে দিল্লি। তবে ভারত ও আফগানিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত সপ্তাহে ইসলামাবাদে আদালত চত্বরে আত্মঘাতী হামলায় ১২ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। পাকিস্তানের দাবি, এই হামলার পরিকল্পনা আফগানিস্তান থেকে করা হয়েছে। পাকিস্তানি তালেবানের একটি উপগোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেছে।
এ হামলার ফলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত মাসে সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, যা ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। এর পর থেকে এ পর্যন্ত দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বৃহস্পতিবার বলেছেন, অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ ও তীব্র পানিসংকটের কারণে দেশের রাজধানী তেহরান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া উচিত।
এই ধারণা তিনি এর আগেও তুলেছিলেন—বিশেষত এ বছর তেহরানে বৃষ্টিপাত শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
তিনি সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএকে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। (রাজধানী স্থানান্তর) একটি প্রয়োজন।
আমরা এই এলাকায় আরো জনসংখ্যা ও নির্মাণের বোঝা চাপিয়ে দিতে পারি না। আমরা উন্নয়ন করতে পারি, কিন্তু এ অঞ্চলের পানিসংকট সমাধান করতে পারি না।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট সতর্ক করেছিলেন, শীত শুরুর আগে বৃষ্টি না হলে বর্তমান রাজধানী খালি করে দিতে হতে পারে—যদিও তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
তেহরান আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত—যেখানে গরম, শুষ্ক গ্রীষ্ম সাধারণত শরতের বৃষ্টি ও শীতের তুষারে প্রশমিত হয়।
কিন্তু এ সময় সাধারণত বরফে ঢাকা যে পর্বতচূড়াগুলো থাকে, সেগুলো এখনো সম্পূর্ণ শুকনো।
জলসংকট মোকাবিলায় সরকার তেহরানের এক কোটি বাসিন্দার জন্য পর্যায়ক্রমে পানির সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পেজেশকিয়ানের সরিয়ে নেওয়ার ধারণা সমালোচনার মুখে পড়েছে, বিশেষ করে স্থানীয় গণমাধ্যমে। সংস্কারপন্থী দৈনিক হাম মিহান তার মন্তব্যকে ‘রসিকতা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
পরবর্তীতে সরকার জানায়, প্রেসিডেন্ট শুধুই পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে চেয়েছেন—এটি কোনো চূড়ান্ত পরিকল্পনা নয়।
গত সপ্তাহে ইরান ঘোষণা করেছে, বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়াতে তারা ক্লাউড সিডিং (মেঘে বীজ ছড়ানো) কার্যক্রম শুরু করেছে।
গত বছর থেকে পেজেশকিয়ান রাজধানী স্থানান্তরের পেছনে যে কারণগুলো তুলে ধরছেন, সেগুলো হলো—তীব্র যানজট, জলসংকট, সম্পদ ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা এবং মারাত্মক বায়ুদূষণ।
এ বছরের জানুয়ারিতে সরকারি মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি জানিয়েছিলেন, কর্তৃপক্ষ রাজধানীকে দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত তুলনামূলকভাবে অনুন্নত মাকরান অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
যদিও কোনো চূড়ান্ত পরিকল্পনা তখনো দেওয়া হয়নি, ওই প্রস্তাবও সমালোচনার মুখে পড়ে।
জেডিইউর শীর্ষ নেতা নীতীশ কুমার রেকর্ড দশমবারের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।
বৃহস্পতিবার পটনার গান্ধী ময়দানে অনুষ্ঠিত এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাসহ এনডিএর শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৭৪ বছর বয়সী নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের ১৯ বছরের ধারাবাহিক মেয়াদে আরেকটি নতুন অধ্যায় যোগ করলেন এবং দেশের দীর্ঘতম সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রি ও মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করলেন।
রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান নীতীশ কুমারসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদ ও গোপনীয়তার শপথ পাঠ করান।
নীতীশ কুমারের সঙ্গে শপথ নেন বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ ও ওবিসি মুখ হিসেবে বিবেচিত সম্রাট চৌধুরী।
এছাড়া বিজেপি থেকে আরও তিন নেতা—দিলীপ জয়সওয়াল, বিজয় কুমার সিনহা এবং মঙ্গল পাণ্ডে—মন্ত্রিপদে শপথ নেন।
একই অনুষ্ঠানে জেডিইউর পক্ষ থেকে বিজয় কুমার চৌধুরী, বিজেন্দ্র প্রসাদ যাদব এবং শ্রাবণ কুমার মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার ওভাল অফিসে এবিসি নিউজের প্রধান হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা মেরি ব্রুসকে তিরস্কার করেন। সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রশ্ন করায় ট্রাম্প ক্ষিপ্ত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যুবরাজের নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানালেও, ট্রাম্প ব্রুসকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্ন করে আমাদের অতিথিকে অস্বস্তিতে ফেলবেন না।’ তিনি প্রশ্নটিকে ‘ভয়ংকর, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং একেবারে বাজে’ বলে অভিহিত করেন।
সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘অনেকেই ওই ভদ্রলোককে (খাসোগি) পছন্দ করত না। আপনি তাকে পছন্দ করুন বা না করুন, মাঝে মাঝে এমন ঘটনা ঘটে।’ এই কথোপকথনগুলো হয় সৌদি এজেন্টদের হাতে খাসোগির মৃত্যু ও অঙ্গচ্ছেদের ঘটনার পর যুবরাজের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়।
এবিসি নিউজের হোয়াইট হাউস সম্পর্কিত প্রধান সংবাদদাতা ব্রুসের প্রতি ট্রাম্পকে বেশ হতাশ মনে হচ্ছিল। ট্রাম্পকে ব্রুস যখন আরেকটি প্রশ্ন করেন, কেন তিনি একতরফাভাবে অর্থদাতা জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইলগুলো প্রকাশের নির্দেশ দেননি, তখন ট্রাম্প আবার তাকে অপমানিত করেন। এর প্রত্যুত্তরে ট্রাম্প মেরি ব্রুসকে বলেন, ‘প্রশ্ন করা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই; আপত্তি আপনার আচরণ নিয়ে।’
কড়া ভঙ্গিতে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় আপনি একজন জঘন্য রিপোর্টার। আপনি যেভাবে প্রশ্নগুলো করেন, সেটা আপত্তিকর।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি একজন জঘন্য মানুষ এবং একজন জঘন্য রিপোর্টার।’ এছাড়া প্রেসিডেন্ট এবিসি নিউজকে ‘একটা বাজে কোম্পানি’ বলে উল্লেখ করে বলেন, নেটওয়ার্কটির সম্প্রচার-লাইসেন্স ‘কেড়ে নেওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, তার শীর্ষ সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক ব্রেনডান কারের এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
ন্যাশনাল প্রেসক্লাব মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছে, মিস্টার খাসোগির মৃত্যু ছিল ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আক্রমণ।’ সংস্থাটি বলেছে, ‘একজন সাংবাদিককে হত্যার ঘটনাকে ছোট করে দেখা বা তার পক্ষে সাফাই গাওয়ার মতো মন্তব্য বাস্তব জগতে প্রভাব ফেলবে।’ যদিও ট্রাম্প নিয়মিতই সংবাদমাধ্যমকে হেয় করে কথা বলেন, তবে তিনি পুরুষ ও নারী উভয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গেই তীব্র অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেছেন।
গত শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানে বসে ট্রাম্পের কাছে ব্লুমবার্গ নিউজের সাংবাদিক ক্যাথরিন লুসি যখন এপস্টিন সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশ না করার কারণ জানতে চান, তখন ট্রাম্প তাকে বাধা দেন এবং বলেন, ‘চুপ! চুপ করো, পিগি।’ এই ধরনের স্কুল জীবনের অশ্রাব্য ভাষা ট্রাম্প আগেও ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক মিস ইউনিভার্স অ্যালিসিয়া মাচাদো।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প অবশেষে ব্রুসের উত্তর আর না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আপনার উচিত ফিরে যাওয়া এবং কীভাবে রিপোর্টার হতে হয়, তা শেখা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনার কাছ থেকে আর কোনো প্রশ্ন চাই না।’
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে বড় ধরনের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ হামলায় তিন শিশুসহ ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৯৩ জন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর এটিই অঞ্চলটিতে রাশিয়ার অন্যতম প্রাণঘাতি হামলা। স্থানীয় সময় গত বুধবার ভোরে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের টার্পোনিল শহরে এই হামলায চালিয়েছে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের লভিভ এবং ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চলেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহরের তিনটি জেলায় ড্রোন হামলায় ৩০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ান এক্স-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আবাসিক ফ্ল্যাটে আঘাত করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, টার্পোনিল হামলায় উল্লেখযোগ্য ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে এবং অনেক হতাহত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে আছেন বলে জানা গেছে। এই হামলায় রাশিয়া ৪৭০টির বেশি ড্রোন এবং ৪৭টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
এছাড়া দেশটির বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কথাও জানানো হয়েছে। এর আগে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর খারকিভে রুশ হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ও অস্ত্র ছাড়ের প্রস্তাব দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র যে খসড়া শান্তি চুক্তির কাঠামো প্রস্তাব করেছে, তাতে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ও অস্ত্র ছাড় দিতে হতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবগত দুই ব্যক্তি। গত বুধবার তারা জানান, ওয়াশিংটন কিয়েভকে প্রস্তাবের মূল অংশ মেনে নিতে বলেছে। দুই সূত্র মতে, প্রস্তাবে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর আকার কমানোর কথাও বলা হয়েছে।
এমন প্রস্তাব কিয়েভের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ পূর্ব ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন জোরদার হচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি একই সময়ে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি মোকাবিলা করছেন। বুধবার সংসদ জ্বালানি ও ন্যায়মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে।
হোয়াইট হাউজ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্স–এ বলেছেন, উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন যুদ্ধ থামাতে সম্ভাব্য ধারণার তালিকা প্রস্তুত করছে। ইউক্রেনের মতো জটিল ও প্রাণঘাতী যুদ্ধ থামাতে প্রয়োজন বাস্তবসম্মত ধারণার বিস্তৃত বিনিময়। টেকসই শান্তির জন্য উভয় পক্ষকে কঠিন হলেও প্রয়োজনীয় ছাড় দিতে হবে।
এক শীর্ষ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র যে প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে তা নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে রাশিয়ার আলোচনা হয়েছে বলে কিয়েভ ‘সংকেত’ পেয়েছে। তবে এসব প্রস্তাব তৈরিতে ইউক্রেনের কোনও ভূমিকা ছিল না।
বুধবার তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর টেলিগ্রামে দেওয়া মন্তব্যে জেলেনস্কি ওয়াশিংটনের প্রস্তাব সরাসরি উল্লেখ না করলেও যুক্তরাষ্ট্রের ‘কার্যকর নেতৃত্বের’ আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, তিন বছর ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই যথেষ্ট শক্তি রাখেন। এরদোয়ান বিভিন্ন আলোচনার ফরম্যাট প্রস্তাব করেছেন এবং তুরস্ক আলোচনা আয়োজনে প্রস্তুত।
যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন উদ্যোগের ইঙ্গিতে বুধবার ইউক্রেনের সরকারি বন্ডের দাম কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। কিয়েভ ও মস্কোর মুখোমুখি বৈঠক শেষ হয়েছে সর্বশেষ ২০২২ সালের জুলাইয়ে ইস্তাম্বুলে। তারপর থেকে রাশিয়ার প্রায় চার বছরের যুদ্ধ অব্যাহত থেকেছে।
শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা জোরদার হলেও মস্কো নিজের শর্ত থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়নি। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগেই দাবি জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে এবং চারটি প্রদেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এই চার প্রদেশকে রাশিয়া নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। এসব দাবি থেকে মস্কো সরে আসার কোনও লক্ষণ নেই এবং ইউক্রেনও বলছে তারা এসব মানবে না।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে এবং শীত ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা নিয়মিত ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। ন্যাটো সদস্য তুরস্ক কিয়েভ ও মস্কো উভয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং ২০২২ সালের যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে একমাত্র শান্তি আলোচনা আয়োজন করেছিল। বুধবারের আঙ্কারা বৈঠকে রুশ প্রতিনিধিরা অংশ নেননি। তবে ক্রেমলিন বলেছে, আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক যদি কোনও ফল তুলে ধরে, পুতিন তা নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত।
ভূখণ্ডের বিনিময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা?
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এক প্রতিবেদনে একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পরিকল্পনায় কিয়েভকে পূর্ব ইউক্রেনের এমন কিছু এলাকা মস্কোকে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যেগুলো বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এর বিনিময়ে কিয়েভ ও ইউরোপের জন্য ভবিষ্যৎ রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে।
এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, এসব প্রস্তাব সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসনের কিয়েভকে চাপে ফেলার আরেক প্রচেষ্টা। তার মতে, ইউক্রেনের অবস্থান বা ইউরোপীয় মিত্রদের মতামত বিবেচনায় না নিলে কোনও সমাধান টেকসই হবে না। আরেক কূটনীতিক বলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী কমানোর প্রস্তাব রুশ শর্তের মতো শোনায়, গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার মতো নয়।
এদিকে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে কিয়েভে অবস্থান করছে। সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ র্যান্ডি জর্জও রয়েছেন দলে। বৃহস্পতিবার তারা জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে এক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
৭ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথম ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজকে আতিথ্য দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে হোয়াইট হাউসে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ট্রাম্প। বেশ কয়েকটি কারণে এই সফর রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
হোয়াইট হাউস গত মঙ্গলবার প্রিন্স মোহাম্মদের জন্য লাল গালিচা বিছিয়েছে। ট্রাম্প তাকে মার্চিং ব্যান্ড, পতাকাবাহী ঘোড়সওয়ার এবং একটি সামরিক ফ্লাইওভারের মাধ্যমে স্বাগত জানান।
আতিথেয়তার এই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন এটিই ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্প একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যকে পেতে চান, যা এই অঞ্চলের মিত্রদের সাথে আর্থিক বিনিয়োগ এবং মার্কিন অংশীদারিত্ব দিয়ে পরিচালিত হবে, বিশেষ করে সৌদি আরব।
যুবরাজ মোহাম্মদের আগমনের পর, তিনি এবং ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দুই নেতা ব্যবসায়িক সুযোগ, শান্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং প্রযুক্তি ব্যবসা নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া ট্রাম্প-যুবরাজ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে ইতোমধ্যেই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্কসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলো এসেছে।
বৈঠকের মূল বিষয়গুলো এখানে দেওয়া হল: ১. সৌদি আরব-ইসরাইল সম্পর্ক নিয়ে ভালো আলোচনা: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সৌদি আরবকে তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগদান করাতে চান, যা ইসরাইল এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
যুবরাজ মোহাম্মদ এবং ট্রাম্প সম্ভাব্য চুক্তির বিস্তারিত বা সময়সীমা না জানিয়েই এই বিষয়ে সম্ভাব্য অগ্রগতির ইঙ্গিত দেন। তবে, ক্রাউন প্রিন্স পুনর্ব্যক্ত করেন, রিয়াদ একটি সম্ভাব্য চুক্তির অংশ হিসাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে দেখতে চায়।
২. সৌদি আরবের জন্য প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র মর্যাদা এবং একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি: হোয়াইট হাউসে সৌদি নেতার জন্য আয়োজিত ডিনারে ট্রাম্প রিয়াদকে ন্যাটো বহির্ভূত ‘প্রধান মিত্র’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এই মর্যাদা অনুযায়ী কোনো দেশকে উন্নত মার্কিন অস্ত্র ব্যবস্থার যে বিস্তৃত লাইসেন্সিং প্রোটোকলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা ছাড়াই মার্কিন সামরিক হার্ডওয়্যার, বিক্রয় এবং অন্যান্য সহযোগিতা দ্রুত অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়।
৩. ট্রাম্প বলেছেন ইরান চুক্তি চায়: জুন মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় ট্রাম্প আবারো সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবার পক্ষ থেকে এটি করেছি, এবং ফলাফল অসাধারণ ছিল। কারণ আমাদের কাছে সেরা পাইলট, সেরা সরঞ্জাম, সেরা বিমান, সেরা সবকিছু আছে।’
৪. ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ: দুই নেতার প্রকাশ্য বক্তব্যের শুরুতেই, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের প্রত্যাশিত বিনিয়োগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যা শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়াগ হতে পারে। বলেন, মি. আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছেন।
সৌদি যুবরাজের পক্ষ থেকেও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্ভবত ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
৫. প্রশংসা আর হাসি: হোয়াইট হাউসে যুবরাজ আসার পর থেকেই ট্রাম্প এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের মুখে হাসি ছিল। এক পর্যায়ে, ট্রাম্প যুবরাজ মোহাম্মদের হাত ধরেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি যুবরাজকে চমৎকার এবং প্রতিভাবান বলে বর্ণনা করেন। বলেন, ‘আজ ওভাল অফিসে আমাদের একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি আছেন, এবং আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু - আমার খুব ভালো বন্ধু।’
বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ভারতের আদানি গ্রুপকে সিঙ্গাপুরে সালিশি আদালতে মামলা না চালানোর আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. বজলুর রহমান ও বিচারপতি ঊর্মি রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
গত ছয় নভেম্বর পিডিবি চেয়ারম্যান ও জ্বালানি সচিবকে তিন দিনের মধ্যে আদানি গ্রুপের সঙ্গে একতরফা বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা বা বাতিল করতে লিগ্যাল নোটিস পাঠান আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম।
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আসার আগেই যদি সিঙ্গাপুরে আদানি তাদের পাওনা নিয়ে সালিশি কার্যক্রম শুরু করে তাহলে ওই তদন্তের গুরুত্ব থাকবে না। এ কারণে তারা নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন। আদানির সঙ্গে করা চুক্তিতে অনেক অনিয়ম হয়েছে।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ চুক্তি নিয়ে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী আদেশ দেন। এতে আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তির বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন আদালত।
তদন্তে নেমে আদানির বিদ্যুৎ আমদানিতে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় এনবিআর। বহুল আলোচিত এ চুক্তির সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পাস কাটিয়ে শুল্ক ও কর অব্যাহতি দেওয়ার তথ্যও উঠে এসেছে সংস্থাটির তদন্তে।
এর আগে আদানি গ্রুপ জানায়, বাংলাদেশে রপ্তানি করা বিদ্যুতের দাম-সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানে দুই পক্ষই আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়ায় যেতে সম্মত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সরকার জানিয়েছে, আলোচনায় অগ্রগতি থাকলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
আদানি গ্রুপ বলছে, চুক্তি অনুযায়ী যেকোনো মতানৈক্য সমাধানে আন্তর্জাতিক সালিশি প্রক্রিয়াই একমাত্র পথ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাওনা ২০ কোটি ডলার নিয়েই মতানৈক্য হয়েছে। এই অঙ্কের অর্থ নিয়েই তারা সালিশিতে যেতে চাইছে।
তারা আরও জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড যে দাম দিতে সম্মত হয়েছে, সেই অনুযায়ী নিয়মিত অর্থ তারা পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুরোনো বকেয়া হিসাবে সাড়ে ১৩ কোটি ডলার এখনো পাওনা আছে। এই অর্থ ১০ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল তারা।
এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করছেন, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
তবে সালিশি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা আদানি গ্রুপ ঘোষণা করার ঠিক আগেই বাংলাদেশের সরকার ইঙ্গিত দিয়েছিল যে দেশটির বিদ্যুৎ খাতে আগের সরকারের আমলে যেসব চুক্তি হয়েছিল, তাতে অনেক দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে।
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে আদানি গ্রুপ। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পুরোটাই বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এছাড়া ভারত সরকারিভাবেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে থাকে। গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম নিয়ে আদানি গ্রুপের সঙ্গে মতানৈক্য চলছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে গুরুতর জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারারসহ শত শত সেনা সদস্য আগাম অবসরের আবেদন করায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি গণমাধ্যম।
খবরে বলা হয়, নতুন এই পদত্যাগের ঢেউ এমন এক সময়ে দেখা দিচ্ছে যখন বাধ্যতামূলক সেনা ড্রাফটে এড়ানো, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গাজা উপত্যকায় দীর্ঘমেয়াদি সামরিক উপস্থিতির কারণে ইসরাইলি বাহিনী চরম চাপে আছে।
ইয়েদিয়োথ আহরনোথ পত্রিকা বরাতে বরাতে জানা যায়, সামরিক বাহিনীর কর্মী প্রশাসনের প্রতিনিধিরা নেসেটের সংশ্লিষ্ট কমিটিকে জানিয়েছে যে, প্রায় ৬০০ ক্যারিয়ার সেনা সদস্য ও কর্মকর্তা আগাম ‘অবসর/পদত্যাগ’ করতে চেয়েছেন।’
এদের অনেকেই এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, যেসব পদে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু করার পর সেনাবাহিনী নতুন জনবল সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে।
এক সামরিক কর্মকর্তা আইনপ্রণেতাদের বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন আমরা অনেকের অবসার মুলতবি রেখেছিলাম, কারণ তাদের জায়গায় কাউকে দিতে পারিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ সেনা লেফটেন্যান্ট কর্নেল বা তার নিচের পদমর্যাদায় অবসর নিয়েছেন, যার ফলে মধ্যপর্যায়ের কমান্ড কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে—যা পর্যবেক্ষকদের মতে বড় ধরনের সংকেত।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মী কর্মকর্তা বার ক্যালিফা জানান, অফিসারদের জন্য অতিরিক্ত পেনশন সুবিধা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের রায় এই সংকটকে আরও তীব্র করেছে এবং বাহিনীর মনোবলে বড় আঘাত দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: প্রেস টিভি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তার জনপ্রিয়তা কমে গেছে। বুধবার সৌদি আরবের ব্যবসায়ী নেতা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, জরিপে দেখা যাচ্ছে তার প্রতি সমর্থন কমেছে। তবে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের কারণে তা আবার বাড়ছে বলেও মনে করেন তিনি। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ডের।
চলতি সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ইপসোসের একটি মতামত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৩৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে সর্বনিম্ন।
কর্মসংস্থান, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, অভিবাসননীতিসহ নানা কারণে সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থন কমছে।
ট্রাম্প তার জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার জন্য মুদ্রাস্ফীতির কথা উল্লেখ করেছেন। রয়টার্স ও ইপসোসের জরিপ অনুসারে, মাত্র ২৬ শতাংশ মার্কিনি বলেছেন যে ট্রাম্প জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে ভালো কাজ করছেন।
ট্রাম্প মুদ্রাস্ফীতির জন্য ডেমোক্র্যাটদের দোষারোপ করে বলেন, ‘এখন আমাদের একটি সুন্দর, স্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে - আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি আরো কিছুটা কমবে।’
জরিপে দেখা যায় যে, কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট করা মার্কিনিদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন স্নাতক পাস না মার্কিনিদের তুলনায় কম।
এই সপ্তাহের জরিপে, কলেজ ডিগ্রিধারী বা তার বেশি উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ ট্রাম্পের কর্মসংস্থান সৃষ্টির নীতিকে সমর্থন করেছেন। আর কলেজ ডিগ্রিবিহীনদের মধ্যে ৪২ শতাংশ ট্রাম্পের নীতিকে সমর্থন করেছেন।
গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে হামাস ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবে বলে এটিকে হামাস প্রত্যাখ্যান করলেও গাজায় দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর পক্ষে ফিলিস্তিন সরকার। এদিকে গাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে ওয়াশিংটন কাজ করছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে ট্রাম্পের উদ্যোগের মাঝেই লেবাননে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১৩ জনকে হত্যা করেছে তেল আবিব।
২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনের ক্ষতচিহ্ন এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি গাজাবাসী। কখনও ইসরাইলি আচমকা হামলা কিংবা কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত, সবকিছু মিলিয়ে দুঃখ আর দুর্দশাকে সাক্ষী রেখেই দিন কাটাচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির লাখ লাখ মানুষ।
আন্তর্জাতিক চাপ ও একের পর এক দেশের ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির মাঝে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরাইল। তবে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি নিয়ে জানিয়ে আসছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
এরইমধ্যে গত সোমবার ট্রাম্পের প্রস্তাব করা ২০দফা শান্তিচুক্তির বিষয়ে ভোটাভুটিতে অংশ নেয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। এতে পাস হয় স্থিতিশীলতা রক্ষায় গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাবটি। তবে তা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে হামাস।
গত মঙ্গলবার হামাস জানায়, বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী গাজায় বহুজাতিক বাহিনী গঠন করা হলে ক্ষুণ্ণ হবে ফিলিস্তিনিদের অধিকার। ইসরাইলি মদতপুষ্ট দেশগুলোর সমন্বয়ে গাজায় শান্তি বাহিনী গঠন হলে তা রুখে দিতেও প্রস্তুত গোষ্ঠীটি।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম বলেন, ‘প্রস্তাবে ইসরাইলি দাবিগুলো প্রাধান্য পেলেও ফিলিস্তিনি জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। নেতানিয়াহু চায় না যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকুক। বরং তিনি গাজায় নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত।’
তবে ভিন্ন কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। গাজায় দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক বলেছেন তারা।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহীন বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রস্তাব দীর্ঘমেয়াদী শান্তি অর্জনের একটি প্রথম ধাপ। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে হোয়াইট হাউজে সৌদি যুবরাজের আগমন উপলক্ষে আয়োজিত ডিনার অনুষ্ঠানে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘শান্তি পরিষদের আকার বড় হবে। কেননা এখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা থাকবেন। এমন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা আগে কখনও হয়নি। এর সভাপতি হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
এদিকে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে সৌদি আরবকে ট্রাম্প বার বার চাপ দিলেও যুবরাজ সালমান বলছেন- দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ছাড়া তা সম্ভব নয়।
তবে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির কথা বললেও যুদ্ধবিরতি ভেঙে লেবাননের একটি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তেল-আবিবের দাবি, সন্ত্রাসীদের দমনে পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে তারা। তবে অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলছে লেবানন সরকার।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে নির্যাতন-নিপীড়নকারী ইসরায়েলিদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গত সোমবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করছি যে পশ্চিম তীরে (ইসরায়েলিদের) একটি ছোটো, চরমপন্থি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ছড়ানো এবং আইন নিজেদের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পশ্চিম তীরের দাঙ্গাকারীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণভাবে আইনের প্রয়োগ করতে আমি ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।
পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, পশ্চিম তীরে সহিংসতা বন্ধে আলাদাভাবে রসদ বরাদ্দ এবং অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিতে পারে ইসরায়েরের সরকার।
যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান বেথলেহেম বর্তমান ফিলিস্তিনে অবস্থিত। সেই বেথলেহেমের নিকটবর্তী গ্রাম জাবায় গত সোমবার বেশ কয়েকটি বাড়িঘর এবং যানবাহনে আগুন দিয়েছে ইসরায়েলি দাঙ্গাকারীরা। এর আগে পশ্চিম তীরের সা’র গ্রামেও একই কাজ করেছে তারা।
গত সোমবার জাবায় দাঙ্গার পর জরুরি বৈঠকে বসে ফিলিস্তিনের মন্ত্রিসভা। সেই বৈঠক শেষে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলিদের হামলা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে বিবৃতি দেয় ফিলিস্তিনের মন্ত্রিসভা। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি দাঙ্গাকারীরা অহরহ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে এবং তাদেরকে পূর্ণমাত্রায় সমর্থন ও সুরক্ষা দিচ্ছে ইসরায়েলের সরকার।
ফিলিস্তিনের মন্ত্রিসভার এই বিবৃতি প্রদানের কিছুক্ষণ পরেই ইসরায়েলি দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়ে বিবৃতি দেন নেতানিয়াহু।
৫ হাজার ৬৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট পশ্চিমতীরে বসবাস করেন প্রায় ২৭ লাখ ফিলিস্তিনি। প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় পশ্চিম তীরকে। গাজায় যুদ্ধবিরতির পর থেকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
খবর রয়টার্স’র।
ইরানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ফের শুরু করতে ইচ্ছুক ইরান যদি তা সম্মান ও মর্যাদার ভিত্তিতে করা হয়।
তেহরান থেকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে কামাল খারাজি বলেন, প্রথম পদক্ষেপ তাদেরই নিতে হবে এবং দেখাতে হবে যে, আমরা যে শর্ত দিয়েছি তাতে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত এবং এটা হতে হবে সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।
কামাল খারাজি আরও বলেন, বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা এবং আলোচনার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এজেন্ডা আগে থেকেই প্রস্তুত করা হবে। দুর্ভাগ্যবশত, প্রেসিডেন্ট (ডনাল্ড) ট্রাম্প কূটনৈতিক আলোচনায় বিশ্বাস করেন না বরং লক্ষ্য অর্জনের জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে পছন্দ করেন।
সাক্ষাৎকারে খারাজি জানান, জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পর থেকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে ইরানের শর্তগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত আছে এবং থাকবে। কারণ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং চিকিৎসার জন্য জ্বালানির প্রয়োজন।
খারাজি আরও বলেন, তেহরানের ক্রমবর্ধমান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে থাকবে। তার কথায়, ‘আমরা কেবল পারমাণবিক বিষয় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করব।’
পরমাণুবিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন ও ইরানের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু আলোচনার মাঝখানে জুন মাসে ইসরায়েল ইরানে আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে এবং ওয়াশিংটনকেও এতে টেনে আনে।
সাক্ষাৎকারে খারাজি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে নয়, সমৃদ্ধকরণের মাত্রা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার মূল্য আলোচ্য। ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের সঙ্গে আরেকটি সংঘাতের বিষয়ে উদ্বিগ্ন কি না জানতে চাইলে খারাজি বলেন, সবকিছুই সম্ভব। তবে আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার হলেও এই দুই দেশকে প্রতিবেশী বলা যায়। কেননা, দুই দেশেরই অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম পাড়ে। দুটি দেশই বৃহত্তর আমেরিকা মহাদেশের অংশ। কিন্তু, বন্ধু হওয়ার পরিবর্তে শত্রুতায় জড়ালো কেন দেশ দুটির সরকার? আর কেনই বা ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরো হয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাশক্তিধর রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চক্ষুশূল?
তবে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ জটিল। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর সংঘাত মূলত তেল, রাজনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার মাদক চোরাকারবারিদের ওপর নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। ট্রাম্পও চাচ্ছেন ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালিয়ে দেশটির শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে।
গত ২ সেপ্টেম্বর ভেনেজুয়েলার একটি নৌযানে মার্কিন সেনারা হামলা চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। এমন পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার তেল সম্পদের প্রসঙ্গটি বেশি করে সামনে চলে আসে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খনিজ তেল আছে। ২০২৩ সালের হিসাবে ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুত আছে সেখানে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সৌদি আরবের আছে ২৬৭ বিলিয়ন ব্যারেল এবং ২০৮ বিলিয়ন ব্যারেল তেলের মজুত নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে ইরান।
সেই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের মজুদ আছে ৫৫ বিলিয়ন ব্যারেল। বৈশ্বিক হিসাবে দেশটির অবস্থান নবম। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভেনেজুয়েলায় তেলের মজুদ পাঁচ গুণের বেশি।
ভেনেজুয়েলার মূল আয় তেল বিক্রি থেকে আসলেও বর্তমানে তা কমে গেছে। এ প্রসঙ্গে ইরাকের কথা মনে করা যেতে পারে। গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে- এমন অভিযোগ নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী ২০০৩ সালে ইরাকের ওপর আগ্রাসন চালায়। পরে জানা যায়, ইরাকে সে ধরনের অস্ত্র নেই এবং সেখানে মার্কিন হামলার মূল লক্ষ্য ছিল তেল-গ্যাসের খনিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
সেসময় আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল। তা হলো- ইরাকের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের ‘চক্ষুশূল’। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় ছিল রিপাবলিকান পার্টি। এবারও তারাই ক্ষমতায়। তাহলে মাদুরোকে কি দক্ষিণ আমেরিকার ‘সাদ্দাম’ হিসেবে বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন?
একটি ‘অভিযোগ’ সামনে এনে পুরোমাত্রার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন সেনারা? ইতোমধ্যে তারা ভেনেজুয়েলার প্রতিবেশী ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয় সামরিক মহড়াও সেরে নিয়েছে। তবে এসবের পাশাপাশি মাদুরোর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। আগামী দিনে পরিস্থিতি কোনদিকে যায় এখন যেন তাই দেখার বিষয়।