স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধার কাজের সাহায্যের জন্য রাশিয়ার উদ্ধারকারীরা যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এবং তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, দ্রুততম সময়ে সিরিয়ার উদ্দেশে রাশিয়ান উদ্ধাকারীরা রওনা হবে। আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মস্কোর সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ার ধ্বংস্তুপ সরাতে রাশিয়ার ৩০০ সেনাসদস্য দেশটিতে কাজ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ (ইউএসজিএস) জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গাজিয়ানতেপের শহর নুরদায়ির ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর কেন্দ্রস্থল ছিল সমতলের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে।
নুরদায়ি শহরটি তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এই দুটি দেশ ছাড়াও লেবানন ও সাইপ্রাসে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ৮০০ কিলোমিটার দূরের গাজা উপত্যকায়ও অনুভূত হয়েছে কম্পন।
তুরস্কে সোমবারের এই ভূমিকম্পকে ১৯৩৯ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেবার একই মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ৩০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়। বিগত ২৫ বছরে সাতবার তুরস্কে ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এবারের ভূমিকম্প সবচেয়ে শক্তিশালী বলছেন ভূতত্ত্ববিদরা।
কম্পনের তীব্রতা এবারে এতই বেশি ছিল যে মূল ভূমিকম্পের পর অন্তত ৬৬টি পরাঘাত অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৩০০ জনের মৃত্যুর খবর দিছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
পাকিস্তানের গিলগিট-বেলুচিস্তান পর্বতে তুষারধসে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হন আরও ২৬ জন। আস্তোর জেলায় শনিবার এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর- জিও নিউজের।
পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক তোফায়েল মির জানান, খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন উদ্ধারকর্মীরা। যারা তুষারধসে আটকা পড়েছেন তাদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
বিবিসি জানায়, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার, চিকিৎসকদের একটি দল, অ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন গিলগিট-বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খালিদ খুরশিদ খান। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে উদ্ধার তৎপরতার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিশ্বে ৮ হাজার মিটার উচ্চতার ১৪টি শৃঙ্গের মধ্যে পাঁচটি এই অঞ্চলে অবস্থিত। পাকিস্তানে থাকা হিমবাহগুলোর মধ্যে প্রায়শই তুষারধসের খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে এই সময়ে এমন দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
২০১২ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ তুষারধসে দেশটির ১২৯ সেনা ও ১১ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নতুন পার্লামেন্ট ভবনের উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভবনটির উদ্বোধন কে করবেন, এই নিয়ে বিতর্কে ভারতের ১৯টি বিরোধীদল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বর্জন করে। দেশের প্রেসিডেন্টকে নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করতে না বলায় মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছে এসব দলগুলো।
গত বুধবার কংগ্রেসসহ ১৯টি বিরোধীদল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কটের ‘সম্মিলিত সিদ্ধান্ত’ জানিয়ে দেয়। কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও দলটির অন্যতম নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, পার্লামেন্টের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভবনটি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে দিয়ে উদ্বোধন করানো উচিত ছিল।
কংগ্রেসের এমপি জয়রাম রমেশ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মবার্ষিকীর দিনে করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘এমন একজন মানুষের জন্মবার্ষিকীর দিনে অনুষ্ঠানটি করা হচ্ছে যিনি সারাজীবন ধরে প্রবলভাবে মহাত্মা গান্ধীর বিরোধিতা করে গেছেন।’
বিবিসি জানায়, হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রবক্তা সাভারকরের জন্মবার্ষিকীতে এ অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছে বিরোধীদলগুলো।
বিরোধীদের এই বয়কটকে ‘গণতন্ত্রের অসম্মান’ বলে অভিহিত করেছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
ভারতের রাজধানীকে ঔপনিবেশিকতার প্রতীক থেকে মুক্ত করতে মোদী সরকারের নেয়া উদ্যোগ সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অংশ দেশটির নতুন এই পার্লামেন্ট ভবন।
রোববার সকালে নতুন পার্লামেন্ট ভবনে স্বর্ণদণ্ড ‘সেঙ্গল’ স্থাপন করেন মোদী। বেদমন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে স্পিকারের আসনের পাশে বিশেষ এই দণ্ডটি স্থাপন করেন তিনি, এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় পার্লামেন্টের স্পিকার ওম বিড়লা। এরপরই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে এই স্বর্ণদণ্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলে দাবি বিজেপির। কিন্তু তাদের এই দাবিকে ‘মিথ্যা ও আজগুবি’ অভিহিত করে উড়িয়ে দিয়েছে প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস, এই সেঙ্গেলের বিষয়ে কোনো প্রামাণ্য নথি নেই বলে পাল্টা দাবি করেছে তারা।
নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধনের সময় ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে মোদী ৭৫ রুপির একটি কয়েনও অবমুক্ত করেছেন। ঔপনিবেশিক আমলের পুরনো পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ৯৭০ কোটি রুপি ব্যয়ে ৬৪ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে ত্রিভুজাকৃতির চারতলা এই নতুন পার্লামেন্ট ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, নতুন পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশের তিনটি প্রধান ফটক আছে, সেগুলোর নাম জ্ঞান দ্বার, শক্তি দ্বার ও কর্ম দ্বার। নতুন লোকসভা হলে ৮৮৮টি আসন আছে, তবে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশন চলাকালে নিম্নকক্ষের এই হলে ১২৭২ জন সদস্য বসতে পারবেন। এই নিম্নকক্ষের নকশা করা হয়েছে ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূরের আদলে। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার নকশা করা হয়েছে ভারতের জাতীয় ফুল পদ্মের আদলে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ রোববার রান অফ বা দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ চলছে। আজকে জনতার ভোটেই চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান নাকি কামাল কিলিচদারোগ্লু হবেন।
বিবিসি জানায়, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে ভোট। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে লাইন দেখা যায় ভোটারদের। এমনকি গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটের চেয়েও এবার ভোটারদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। ৮০ বছরের এক নারী আগেভাগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে ভোর ৫টায় অ্যালার্ম সেট করেছেন বলে জানিয়েছেন বিবিসিকে।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, এবার দ্রুতই ফলাফল পাওয়া যাবে। মধ্যরাত নাগাদই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে।
ভোটারদের টানতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন বতর্মান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং বিরোধী জোটের প্রার্থী কিলিচদারোগ্লু। জাতীয়তাবাদীদের ভোট টানতে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ সিরিয়ার শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিলিচদারোগ্লু। তার এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কিলিচদারোগ্লুর জয় হবে সন্ত্রাসীদের বিজয়।’
তুরস্কের রাজনীতিতে টানা ২০ বছর আধিপত্য ধরে রেখেছেন এরদোয়ান। তিনি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশায় এবারের নির্বাচনে লড়ছেন। প্রথম দফার ভোটে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিচদারোগ্লু পান প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট।
এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম রাউন্ডেই জিতেছিলেন এরদোয়ান। গত ১৪ মে প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। এতে দেশটিতে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রথম দফার ভোটে এগিয়ে থাকায় জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী এরদোয়ানপন্থিরা। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ২২ বছর বয়সী ছাত্র ওসমান চাকির আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, তুরস্কে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এরদোয়ানকেই ক্ষমতায় ফিরে আসতে দেখব।’
তুরস্কে অর্থনৈতিক সংকট, গত ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু, ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রবল সমালোচনার পরও ভোটাররা প্রথম দফায় এরদোয়ানকে কেন প্রত্যাখ্যান করেননি সে প্রশ্ন আলোচনায় এসেছে।
এ ব্যাপারে ইস্তাম্বুলের কাদির হ্যাস ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সোলি ওজেল বিবিসিকে বলেন, ‘এরদোয়ানের যে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে, এটা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। তার শরীর থেকে ক্ষমতার আভা বের হয়। এটা এমন এক জিনিস যা কিলিচদারোগ্লুর নেই।’
এদিকে প্রথম দফায় এরদোয়ানের চেয়ে অন্তত ২৫ লাখ ভোটে পিছিয়ে পড়েন বিরোধী জোটের প্রার্থী কিলিচদারোগ্লু। তবে তিনি হাল ছাড়তে নারাজ। তিনি মনে করেন, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের ফলাফল বদলে যেতে পারে। এর জন্য তার প্রথম দফায় তৃতীয় স্থানে থাকা অতি-জাতীয়তাবাদী প্রার্থীর সিনান ওগানের ২৮ লাখ ভোটারের সমর্থন লাগবে। অন্যথায় প্রথম দফায় অংশ না নেয়া প্রায় ৮০ লাখ ভোটারের এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।
বিবিসি জানায়, নির্বাচনের শেষ সপ্তাহে ৪ ঘণ্টা বাবালা টিভি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন কিলিচদারোগ্লু। তুরস্কের ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের কাছে এই ইউটিউব সম্প্রচারটি পৌঁছেছে।
তরুণ নির্বাচনী প্রচারক মেহেটেপের মতে, তুরস্কে প্রথম দফার ভোটে অংশ না নেয়া অনেক তরুণ ভোটারের ওপর বাবালা টিভির প্রচারণা বেশ প্রভাব ফেলবে।
রিপাবলিকান পিপলস পর্টির নেতা কিলিচদারোগ্লু তুরস্কের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী নেতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছয়টি বিরোধী দলের জোট তাকে সমর্থন দিয়েছে।
তবে প্রথম দফায় এরদোয়ানকে এগিয়ে থাকতে দেখে বিরোধী দলগুলোর অনেক সমর্থক হতাশ হয়ে পড়েছেন। তেমনই একজন ভোটার হলেন ইস্তাম্বুলের চিহানগির এলাকার একটি কাপড় ব্যবসায়ী ওলজাই। তিনি বলেন, ‘১৪ মে প্রথম দফা ভোটের দিন আগে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম। মনে হচ্ছিল, এরদোয়ানের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাব, তবে এখন মনে হচ্ছে তাকে হারানো যাবে না।’
৩৪ বছর বয়সী ওলজাই বলেন, ‘ফের আগের মতো উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়া কঠিন। কারণ মনে হচ্ছে বিষয়টির সুরাহা হয়ে গেছে, তবে অবশ্যই আমি ভোট দেব। কারণ এটা আমার দায়িত্ব।’
এদিকে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সত্যিকার অর্থে ভোটারদের নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু তুরস্ক গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মৌলিক নীতিমালা পূরণ করেনি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয় এবং তারপর হিরোশিমা নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা পারমাণবিক বোমায় হাঁটুর ওপর বসে পড়েছিল একসময়ের পরাক্রমশালী ঔপনিবেশিক শক্তি জাপান। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে যুদ্ধের পর তাদের নতুন সংবিধানে একটি ধারা (আর্টিকেল নাইন) যোগ করে জাপানকে বলতে হয়েছিল যে, তারা আর কখনো যুদ্ধ করবে না, এবং কোনো সেনাবাহিনী রাখবে না। পরবর্তীকালে জাপানি রাজনীতিকদের অনেকেই খোলাখুলি বলেছেন, সংবিধানের ওই নবম ধারা জাপানকে দুর্বল করেছে। কিন্তু কোনো রাজনীতিবিদ একে উল্টে দেয়ার সাহস করেননি।
কিন্তু এই শতকের প্রথম দিক থেকে জাপানি নেতারা সেই সাহস দেখাতে শুরু করেন। শুরু করেছিলেন জুনিচিরো কোইজুমি। এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন শিনজো আবে। আর এখন তার উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা কোনো রাখঢাক করছেন না। কিশিদার সময় জাপান প্রচুর অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনেছে এবং কিনছে। বিমানবাহী একাধিক জাহাজ সংস্কার করছে। শত শত মার্কিন টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার অর্ডার দিয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ৩১১ বিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিশিদা, যা দেশটির জিডিপির ২ শতাংশ এবং আগের পাঁচ বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।
অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, জাপান শেষ পর্যন্ত তাদের সেই যুদ্ধবিরোধী, শান্তিকামী দেশের ইমেজ পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ঠিক কেন জাপান এখন তাদের প্রতিরক্ষা নিয়ে এত তৎপর হয়ে উঠেছে? চীন-জাপান সম্পর্কের গবেষক ও বিশ্লেষক এবং কুয়ালালামপুরে মালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে জাপান বেশ কিছুকাল ধরেই উদ্বিগ্ন। ইউক্রেনে রুশ হামলা জাপানের সেই উদ্বেগ আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ড. আলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ হামলার পর জাপান বিচলিত যে রাশিয়া যদি এমনটি করতে পারে, তাহলে চীনও তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে। তাদের ভয় যদি চীন তা করে এবং তাইওয়ান চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তাহলে চীনের নৌবাহিনীর যে শক্তি তাকে আটকানোর আর কোনো উপায় থাকবে না।’
জাপানের ভয় তাইওয়ান নিয়ে চীনের যুদ্ধ বাধলে তাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়বে এবং তাদেরও জড়িয়ে পড়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাইওয়ানের খুব কাছেই জাপানের সর্ব দক্ষিণের কিছু দ্বীপ অবস্থিত। সেগুলোতে চীন হাত দেবে কি না তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ওকিনাওয়া দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি চীনের টার্গেট হতে পারে কি না তা নিয়েও জাপানে বেশ কয়েক বছর ধরে কথাবার্তা হচ্ছে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়েও জাপান গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা চীনের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থি অবস্থান নিয়েছেন। চীন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হবে জেনেও তিনি এমনকি সম্প্রতি ন্যাটো সামরিক জোটকে টোকিওতে একটি মিশন খোলারও অনুমতি দিয়েছেন।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং রাজনীতির অধ্যাপক জাজুটো সুজুকি বিবিসিকে বলেন, ‘জাপানের ভেতরে একটি সাধারণ বোধ তৈরি হয়েছে যে দেশের চারপাশটা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।’
সে কারণেই সাম্প্রতিক কিছু জনমত জরিপ বলছে, জাপানের সিংহভাগ মানুষ প্রতিরক্ষা জোরদার করার পক্ষে। ৯০ শতাংশ জাপানি এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ করার পক্ষে। ৫১ শতাংশ সংবিধানের নবম ধারা সংশোধনের পক্ষে। ফলে, কিশিদা এবং তার দল এলডিপির ওপর তেমন চাপ নেই। জাপানকে দিনকে দিন অস্ত্রে সজ্জিত করা হচ্ছে, এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে আয়ত্তে রাখার যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি, তা বাস্তবায়নে জাপান এখন প্রধান একটি ভূমিকা রাখছে।
ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্যের শহর কায়রো। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের টানে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ করেন। বিশ্বের অন্যতম এই মেগা শহরের অবকাঠামো আরও উন্নত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। তারই অংশ হিসেবে নতুন নতুন সড়ক তৈরি হচ্ছে। আর এই সড়ক তৈরি করতে গিয়েই শহরটিকে কাঁদাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ভেঙে ফেলছে প্রাচীন, ঐতিহাসিক স্থাপনা।
কায়রোর শতবর্ষ প্রাচীন কবরস্থান সৈয়দিয়া নাফিসায় গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। অসংখ্য মানুষ কবরস্থানে এসেছেন। তবে কাউকে সমাধিস্থ করতে নয়। বরং স্বজনের দাফন করা মরদেহ তুলে অন্যত্র স্থানান্তর করতে।
ইমান নামে এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘গত বছর মা মারা যাওয়ায় যে কষ্ট পেয়েছিলাম, এখন তার দ্বিগুণ কষ্ট পাচ্ছি। মায়ের মরদেহ এখন এখান থেকে তুলে নিয়ে দূর মরুভূমির অন্য এক স্থানে কবরস্থ করতে হবে। সেই সঙ্গে বহু আগে মারা যাওয়া দাদি, নানির ধ্বংসাবশেষও আমাকেই বস্তায় ভরে সরিয়ে নিতে হচ্ছে।’
মৃতের নগরী বলে পরিচিত কায়রোতে এই দহনকাল চলছে দুই বছর ধরেই। শহরের ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন নতুন সড়ক, উড়াল সেতুসহ নানা অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। আর তার নিচে চাপা পড়ছে শহরের গৌরবময় ইতিহাস, মৃত ব্যক্তিদের শেষ আশ্রয়স্থল আর জীবিতদের বেদনা আর হাহাকার।
বিলিয়ন ডলারের এসব প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করছে সরকার। আর সে কারণেই মানুষের বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে কবরস্থান পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিয়ে চলছে কর্মযজ্ঞ।
সে জন্যই ১৯৫২-এর অভ্যুত্থানে পতন হওয়া রাজা ফারুকের স্ত্রী রানি ফরিদার সমাধিক্ষেত্র ভেঙে তার দেহাবশেষ সরিয়ে নেয়া হয়েছে একটি মসজিদের পাশে। এমনকি ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফার আব্দুল্লাহ জুহদি, যার কাজ এখনো শোভা পাচ্ছে মক্কা-মদিনার মসজিদে, তার কবরও স্থানান্তর করা হয়েছে। বিংশ শতকের মিসরীয় ঔপন্যাসিক তাহা হুসেইনের কবরও গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সপ্তম শতকে নির্মিত পুরাতন কায়রোর বিভিন্ন স্থাপনাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুঃখ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা আল সাদেক বলেন, ‘সমাধিসৌধগুলো থেকে আমরা ইতিহাসের অনেক কিছু জানতে পারি। এভাবে ঐতিহাসিক একটি শহরের ইতিহাসকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা ঠিক হচ্ছে না। এগুলো অমূল্য সম্পদ। এগুলোকে রক্ষা করা প্রয়োজন ছিল।’
স্থপতি গালিলা আল কাদি আশির দশক থেকে কায়রো শহর ও এর বাসিন্দাদের নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে শহরটি এর মহামূল্যবান ঐতিহ্য হারাতে যাচ্ছে। এই সরকার আসলে জানেই না ঐতিহ্যের অর্থ কী। তাই আগের সব সরকার দেশটির ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতন হলেও বর্তমানে তা নেই।
সূত্র: বিবিসি
প্রশান্ত মহাসাগরের অত্যন্ত গভীরে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি নতুন প্রজাতির জীবের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মহাসাগরের ক্লারিওন-ক্লিপারটন জোনে (সিসিজেড) এই প্রজাতির জীবগুলো বাস করে। কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে মহাসাগরে অজানা জীববৈচিত্র্যের কথা তুলে ধরা হয়।
আল-জাজিরা জানায়, প্রশান্ত মহাসাগরের সিসিজেড অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ থেকে মেক্সিকোর মাঝামাঝি প্রায় ৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। খনিজে সমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল পাওয়া যাওয়ার কথা জানা গেছে। গবেষকরা জানান, প্রশান্ত মহাসাগরের সিসিজেডে ৫ হাজার ৫৭৮টি প্রজাতির জীবের সন্ধান পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে বিজ্ঞানীদের কাছে ৯২ শতাংশই নতুন।
গবেষক দলের প্রধান ও ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম লন্ডনের সমুদ্রের পরিবেশবিদ মুরিয়েল রবোন বলেন, নতুন প্রজাতির মধ্যে ৪৩৮টি প্রজাতি আগে থেকেই পরিচিত। তবে বাকি ৫ হাজার ১৪২টি প্রজাতি নতুন। রবোন বলেন, ‘এই জীবগুলো কোন প্রজাতির তার কোনো বর্ণনা এখনো মেলেনি। আমরা এখন পর্যন্ত এদের বংশ সম্পর্কে জানতে পেরেছি কিন্তু প্রজাতি এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’
মহাসাগরে সন্ধান মেলা বেশির ভাগ প্রজাতি ছিল আর্থ্রোপড, অমেরুদণ্ডী প্রাণী- যেগুলো এক্সোস্কেলেটন কাইটিন দিয়ে তৈরি। যেমন চিংড়ি, কাঁকড়া এবং ঘোড়ার নাল আকৃতির কাঁকড়াজাতীয় প্রজাতি। অন্যগুলোর মধ্যে অ্যানিলিড এবং নেমাটোডা গ্রুপের কৃমি রয়েছে।
দুই হাজার বছরের বেশি পুরোনো বিশাল পাথরের একটি ভাস্কর্য মেক্সিকোয় ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘আর্থ মনস্টার’ বা ‘পৃথিবীর দৈত্য’ খ্যাত ভাস্কর্যটি ওলমেক সভ্যতাকালে নির্মিত। কয়েক দশক ধরে এটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিজেদের ভাস্কর্যটি ফেরত পেয়ে উচ্ছ্বসিত মেক্সিকো। আগ্নেয়গিরির পাথরে খোদাই করা প্রায় ১.৮ মিটার লম্বা ও ১.৫ মিটার চওড়া ভাস্কর্যটির ওজন এক টনেরও বেশি। মেক্সিকো সিটির ঠিক দক্ষিণে মোরেলোস রাজ্যের চালকাতজিঙ্গো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে এটি পাওয়া গিয়েছিল। এটি মেক্সিকোর একটি সুপ্রাচীন পুরাকীর্তি।
১৯৬০-এর দশকে মধ্য মেক্সিকো থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়ে যায়। এর পর থেকে ভাস্কর্যটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী সংগ্রাহকদের হাতে ছিল। সেই সঙ্গে জনসম্মুখেও এটির প্রদর্শনী হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কের কৌঁসুলিদের সঙ্গে মিলিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে পুরাকীর্তি পাচার মোকাবিলাকারী এজেন্টরা আর্থ মনস্টার ভাস্কর্যটি উদ্ধার করেন।
ভাস্কর্যটির বিশাল খোলা মুখের অংশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রত্নতাত্ত্বিক সারা লাড্রন ডি গুয়েভারা। মেক্সিকোর হুয়াস্টেক সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ সারা জানান, অন্য কোনো ভাস্কর্যের এমন রূপ আছে বলে তিনি মনে করতে পারছেন না।
মায়া ও অ্যাজটেক সংস্কৃতির পূর্ববর্তী ওলমেক সভ্যতার কারিগররা বিশাল পাথরের মাথা, মূর্তি এবং সোজা স্ল্যাব তৈরির জন্য পরিচিত ছিল। ওলমেক কারিগরদের তৈরি আর্থ মনস্টার ভাস্কর্যটি ৮০০-৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।
রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে কিয়েভ প্রস্তুত আছে। ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ওলেকসি দানিলভ সংবাদমাধ্যম বিবিসির কাছে এমন মন্তব্য করেছেন। তবে দানিলভ ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধারে এই পাল্টা আক্রমণ কবে শুরু হবে তার সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাননি। ইউক্রেনীয় এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এটা কাল, পরশু বা সপ্তাহখানেকের মধ্যেই শুরু হতে পারে।’
বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি হিসেবে দানিলভ দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময়ের মধ্যেই দানিলভের কাছে জেলেনস্কির ফোনকল আসে। এ সময় তাকে পাল্টা আক্রমণসংক্রান্ত আলোচনার জন্য একটি বৈঠকে হাজির হতে বলা হয়।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দানিলভ সতর্ক করে বলেন, ‘এই পাল্টা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউক্রেন সরকারের এখন ভুল করার কোনো অধিকার নেই। কারণ, এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ, যা আমরা হারাতে পারি না।’
দানিলভ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহর থেকে ওয়াগনারের কিছু যোদ্ধাকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রুশ ওই ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনীকে অন্য তিনটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন শুরুর খবরে ‘সম্পূর্ণ শান্ত’ থাকার কথা জানিয়ে জানিয়ে দানিলভ বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য কোনো খবরই নয়।’
রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনার কথা ইউক্রেন কয়েক মাস ধরেই বলে আসছে। কিন্তু সেনাদের প্রশিক্ষিত করতে এবং পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সামরিক অস্ত্র সরঞ্জাম পেতে দেশটি সময় নিচ্ছে। এই ফাঁকে রুশ বাহিনীও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করে ফেলছে।
চীনা দূত-রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গত শুক্রবার চীনের বিশেষ দূত সি হুইকে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে ‘প্রধান বাধাগুলোর’ কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে দোষারোপ করেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ সময় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সংঘাতের একটি রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সমাধানে মস্কোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে শান্তি আলোচনা ফের শুরু করতে ইউক্রেনীয় পক্ষ এবং তাদের পশ্চিমা পরামর্শদাতাদের দ্বারা সৃষ্ট প্রধান বাধাগুলোর কথা উল্লেখ করেন।
কথায় আছে ‘মশা মারতে কামান দাগা’। তবে এই সরকারি কর্মকর্তা মশা মারতে কামানের দারস্থ না হলেও বাঁধের ১৫ ফুট গভীর পানিতে পড়ে যাওয়া সাধের ফোনটি উদ্ধারে শরণাপন্ন হয়েছিলেন দুটি পাম্পের। ফোন উদ্ধারে ৩০ হর্স পাওয়ারের সেই পাম্প দুটি দিয়ে টানা তিন দিন ধরে সেচা হলো বাঁধের ২১ লাখ লিটার পানি, সেই পরিমাণ পানি দিয়ে ১ হাজার ৫০০ একর জমি চাষ করা যেত!
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের ছত্তিশগড়ের কাঁকের জেলার কোইলিবেড়া ব্লকে খেরকাট্টা বাঁধে গত রোববার বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন রাজেশ বিশ্বাস নামে দেশটির খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। হঠাৎ হাত ফসকে বাঁধের পানিতে পড়ে গিয়েছিল ১ লাখ ভারতীয় রুপি দামের মোবাইল ফোন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পানির মধ্যে থেকে ফোন খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন ওই কর্মকর্তা। কিন্তু খুঁজে না পাওয়ায় বাঁধ থেকে পানিই তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার পরই ৩০ হর্স পাওয়ারের দুটি পাম্প নিয়ে এসে টানা তিন দিন ধরে বাঁধের পানি ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজেশের বিরুদ্ধে।
দেশটির সেচ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাঁধ থেকে যে পরিমাণ পানি ফেলা হয়েছে, সেই পানি দিয়ে ১ হাজার ৫০০ একর জমি চাষ করা যেত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সময় গত সোমবার সন্ধ্যায় পাম্প লাগিয়ে বাঁধ থেকে পানি তোলা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সেচ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযোগ পেয়ে পানি সেচা বন্ধ করেন।
সেচ অধিদপ্তর জানিয়েছে, তিন দিনে বাঁধ থেকে ৯ ফুট পানি ফেলা হয়। এত ফেলার পরও বাঁধে ৬ ফুট গভীর পানি ছিল। গরমের সময় ১০ ফুটের বেশি পানি থাকে এই বাঁধে। প্রাণীরা প্রায়ই এই বাঁধে পানি খেতে আসে।
কেন এই কাজ করলেন? আর কে তাকে বাঁধের পানি ফেলার অনুমতি দিয়েছিল জানতে চাইলে রাজেশ দাবি করেন, সেলফি তোলার সময় ফোনটি পানিতে পড়ে গিয়েছিল। যেহেতু ফোনে খাদ্য অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সব নথি ছিল, তাই সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু যারা ফোন খোঁজার জন্য পানিতে নেমেছিলেন তারা জানান, পানির নিচে পাথর থাকায় ফোনটি পাওয়া যায়নি। রাজেশের দাবি, এর পরই তিনি সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তাকে ফোন করেন। বাঁধের পানি তুলে ফেলার জন্য তার কাছে অনুরোধ করেন। তখন তিনি নাকি তাকে অনুমতি দেন, তিন-চার ফুট পানি তুলে নিলে কোনো অসুবিধা হবে না। কারণ ওই পানি ‘কোনো কাজে লাগে না’। এর পরই পাম্প দিয়ে বাঁধের পানি তোলা শুরু করেন রাজেশ।
অবশ্য এতকিছু করেও শেষ রক্ষা হয়নি রাজেশের বরং ‘দুকূল’ই হারিয়েছেন তিনি। তিন দিন ধরে পানির নিচে থাকায় রাজেশের সাধের ফোনটা আর কাজ করছে না। এদিকে এত পানি ‘অপচয়’ করার জন্য তাকে সামরিক বরখাস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রায় ৫০০ শরণার্থীবাহী একটি নৌকা মধ্য ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হয়েছে। এসব শরণার্থীর মধ্যে এক নবজাতক শিশুসহ অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও রয়েছেন। দুটি মানবিক সংস্থা গতকাল শুক্রবার এই তথ্য দিয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, সাগরে বিপদগ্রস্ত নৌকার শরণার্থীদের কলে সাড়া দেয় অ্যালার্ম ফোন নামের একটি সংগঠন। শুক্রবার সংগঠনটি জানায়, গত বুধবার সকালে তারা নৌকাটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। ওই সময় মাল্টা এবং ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ সিসিলি থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে, লিবিয়ার বেনগাজি বন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে নৌকাটি ইঞ্জিন বিকল অবস্থায় ভাসছিল।
ইতালীয় এনজিও ইমার্জেন্সি গত বৃহস্পতিবার বলেছে, জাহাজ লাইফ সাপোর্ট ও ওশান ভাইকিং এবং আরও একটি দাতব্য জাহাজ ২৪ ঘণ্টা ধরে নিঁখোজ নৌকাটি খুঁজছে। তবে সেটির সন্ধান মেলেনি।
ইমার্জেন্সির এক মুখপাত্র শুক্রবার বলেন, নৌকাটির সন্ধানে সাগরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই নৌকায় থাকা লোকদের হয়তো অন্য কোনো নৌকায় তুলে নেয়া হয়েছে কিংবা তারা ইঞ্জিন ঠিক করে সিসিলির দিকে যেতে পারেন।
এদিকে ইতালির কোস্টগার্ড গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পৃথক অভিযানে ভূমধ্যসাগর থেকে ৪৭৩ জন এবং ৬৭১ জন শরণার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। অ্যালার্ম ফোন বলছে, উদ্ধারকৃত শরণার্থীরা নিখোঁজ নৌকার যাত্রী নন।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় নিপ্রো শহরে একটি ক্লিনিকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত দুজন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্লিনিকের ধ্বংসযজ্ঞের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। এতে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তৎপরতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। চিকিৎসাকেন্দ্রে হামলায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘রুশ সন্ত্রাসীরা আরও একবার মানবতা ও সত্যের বিপরীতে তাদের যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিশ্চিত করেছে।’
এর আগে আঞ্চলিক গভর্নর শেরহি লিসাক বলেছিলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীতে হামলা হয়। তিনি বলেন, ‘এটি খুবই কঠিন রাত ছিল। শহরজুড়ে হামলার প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে।’
ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাশিয়া থেকে রাতভর ছোড়া ১৭টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩১টি ড্রোন তারা ভূপাতিত করেছে। কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ড্রোন নিপ্রোর কয়েকটি স্থাপনা এবং পূর্বাঞ্চলীয় নগরী খারকিভের তেলের ডিপোয় আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকেও হামলার নিশানা করা হয়।
ইউক্রেনে যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না রাশিয়া
শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক মিলি গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক বিজয় অর্জন করতে পারবে না। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, শিগগিরই মস্কোর সব সেনাকে কিয়েভের জোরপূর্বক বিতাড়িত করার সম্ভাবনা কম।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মিলির মন্তব্য থেকে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়িত্বের পথে হাঁটছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষই স্পষ্ট বিজয় অর্জনের অবস্থানে নেই এবং এ যুদ্ধ নিয়ে বর্তমানে কোনো আলোচনা হচ্ছে না।
ইউক্রেনকে সমর্থন করা এমন কয়েক ডজন দেশের অংশগ্রহণে ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মিলি বলেন, ‘এই যুদ্ধে রাশিয়া সামরিকভাবে বিজয় অর্জন করতে পারবে না।’
মিলি বলেন, কিয়েভের সরকারকে উৎখাত করাসহ রাশিয়ার মূল কৌশলগত উদ্দেশগুলো ‘সামরিকভাবে অর্জন সম্ভব নয়। তারা এমনটা করতে পারবে না।’
মুক্তি পেলেন ১০৬ বন্দি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দপ্তরের প্রধান আন্দ্রিয়ে ইয়ারমাক গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের পর বাখমুত শহর থেকে ১০৬ ইউক্রেনীয় বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় ইয়ারমাক লিখেছেন, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ কর্মকর্তা এবং ৯৮ জন সেনা রয়েছেন।
ইয়ারমাক বলেন, ইউক্রেন সরকার রুশ বাহিনীর হাতে আটক সব ইউক্রেনীয় সেনাকে মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
এদিকে যুদ্ধবন্দিদের চিকিৎসার সমন্বয়কারী একটি সংগঠন জানায়, দুই বিদেশি এবং এক ইউক্রেনীয় নাগরিকের মরদেহ কিয়েভে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওই সংগঠন জানায়, ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের আওতায় ১৩৯ জন বেসামরিক নাগরিকসহ ইউক্রেনের মোট ২ হাজার ৪৩০ জন নাগরিককে মুক্ত করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়া বলেছিল, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এদিকে কিয়েভ বলেছে, তারা এখনো এ শহরের একটি জেলায় কিছু সুযোগ-সুবিধা এবং বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রণ করছে।
জাপানের নতুন নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেনে আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাপান। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাশিয়ার সামরিক খাতের পাশাপাশি নির্মাণ ও প্রকৌশল খাতকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। জাপান সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র হিরোকাজু মাতসুনো সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়ার ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সম্পদ জব্দ করা, সামরিকসম্পর্কিত সংস্থাগুলোতে পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ রাশিয়ায় নির্মাণ ও প্রকৌশল পরিষেবা রপ্তানির ওপর জাপানি নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে।
জাপান সরকার জানায়, উচ্চস্তরের সামরিক কর্মকর্তাসহ ১৭ ব্যক্তি ও ৭৮টি গোষ্ঠীর সম্পদ জব্দ এবং রুশ মোবাইল ফোন অপারেটর মেগাফোনসহ ৮০টি সংস্থা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, তার স্ত্রী বুশরা বিবি এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীর নাম ‘নো ফ্লাই লিস্টে’ অন্তর্ভুক্ত করেছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির কর্মকর্তারা জানান, ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সঙ্গে পিটিআইয়ের অচলাবস্থা সম্পর্কের মধ্যে ইমরান ও তার সহযোগীরা যেন বিদেশে চলে যেতে না পারেন, সে জন্য এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, পাকিস্তানের দ্য ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) ইমরানের নাম নো ফ্লাই লিস্টে যুক্ত করেছে। পাকিস্তানের অন্তত দুজন কর্মকর্তা গতকাল শুক্রবার জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএর কাছে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাধারণত কারও নাম দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাজনিত কোনো তালিকায় থাকলে ওই নাম বিভিন্ন বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এমন ক্ষেত্রে তালিকায় থাকা ব্যক্তি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেশ ছাড়তে পারেন না।
আল-জাজিরা জানায়, সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় তাণ্ডব চালানোর দায়ে ইমরানের বহু নেতা-কর্মী মামলায় ফেঁসে গেছেন। এমন অবস্থায় পাকিস্তান সরকার তাদের বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগও আটকে দিল। সামরিক স্থাপনায় হামলাকারীদের দেশটির বির্তকিত সামরিক আদালতে বিচার করা হবে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে। পাকিস্তান সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে।
গত ৯ মে ইসলামাবাদের আদালতে জামিন চাইতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন ইমরান। এর প্রতিবাদে ইমরানের সমর্থক নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসেন। পুরো দেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরসহ সামরিক স্থাপনায় ভাঙচুর চালান। প্রবল বিক্ষোভের মুখে উচ্চ আদালতের রায়ে মুক্তি পান ইমরান। তবে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানোয় দায়ে পিটিআইয়ের অনেক শীর্ষ নেতা, সাংবাদিকসহ অন্তত চার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হন। অবস্থা প্রতিকূলে দেখে পিটিআইয়ের বহু সাবেক নেতা-কর্মী ইমরানের সঙ্গে এখন দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন।
নো ফ্লাই লিস্টে ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিসহ কাসিম সুরি, মুরাদ সাঈদ, হাম্মাদ আজহার, ইয়াসমিন রশিদ ও আসলাম ইকবালের মতো পিটিআইয়ের প্রভাবশালী নেতাদের নামও আছে। আছেন সদ্যই দলত্যাগকারী আসাদ উমর ও মালিকা বোখারির মতো রাজনীতিকরাও। এদিকে এক টুইট বার্তায় ইমরান নো ফ্লাই লিস্টে তার নাম যুক্ত করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে ‘ধন্যবাদ’ জানান। তিনি আরও জানান, বিদেশে তার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স বা সম্পত্তি নেই। এ কারণে তার দেশ ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। এদিকে পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসবিরোধী আদালত ইমরানের ১৬ সমর্থককে সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরের আদালত সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে অভিযোগের রায়ে বলেছেন, সামরিক আদালতের অধীনে সামরিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত এবং বিচার করা হবে। রায়টিতে শহরের কারাগার কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য অভিযুক্তের হেফাজত সংশ্লিষ্ট সামরিক অফিসারের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মাঝ আকাশে উড়োজাহাজের জরুরি দরজা খুলে ফেলা এক যাত্রীকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবতরণের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খোলা দরজা নিয়েই ১৯৪ যাত্রীর উড়োজাহাজটি শুক্রবার দায়েগু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে নামতে সক্ষম হয়েছে।
আসিয়ানা এয়ারলাইন্সের ওই ফ্লাইট স্থানীয় সময় সকালে জাপানের জেজু দ্বীপপুঞ্জ থেকে রওনা দিয়েছিল। আটক ব্যক্তির নাম বা তিনি কোন দেশের নাগরিক তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
জরুরি দরজা খুলে ফেলার ঘটনায় ওজেড৮১২৪ ফ্লাইটটির আধা ডজন যাত্রী শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতায় পড়েন। তাদের পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।
যে যাত্রী আকাশে থাকা অবস্থাতেই উড়োজাহাজের দরজা খুলে ফেলেছিলেন তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। উড়োজাহাজটি দক্ষিণ কোরিয়ায় অবতরণের পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।