তুরস্ক-সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জনপদের পর জনপদ। থামছে না লাশের মিছিল। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি এই ধ্বংসস্তূপেই মিলছে প্রাণের সন্ধান। বিধ্বস্ত ভবন খুঁড়ে জীবিত মানুষ এমনকি প্রাণীকে নিয়ে আসছেন উদ্ধারকারীরা। উদ্ধারকাজে চোখে পড়ছে অনেক মানবিক নজির। হয়তো জীবিত মানুষেরা উদ্ধারকারীদের জড়িয়ে কাঁদছেন, অথবা উদ্ধারকারীরা জীবিত বের করে আনা শিশুকে বুকে আগলে চোখের পানি ফেলছেন। এমনকি উদ্ধার হওয়া প্রাণীদের হৃদয়স্পর্শী আচরণও ভিডিও আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এমনই এক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনার খবর দিয়েছেন ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তন গেরাশচেঙ্কো। তিনি জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে তুরস্কে বিধ্বস্ত ভবন থেকে একটি বিড়াল উদ্ধার হয়েছিল। মার্দিন ফায়ার ডিপার্টমেন্টের যে উদ্ধারকারী ওই বিড়ালটিকে বের করে এনেছেন, এখন তাকে ছেড়ে যেতে চাইছে না প্রাণীটি।
A cat was saved from under the rubble in Turkey. It now refuses to leave its rescuer's side. pic.twitter.com/Nveaxu3QrG
— Anton Gerashchenko (@Gerashchenko_en) February 16, 2023
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে উদ্ধারকারী ও বিড়ালটির একটি ভিডিও পোস্ট করেন গেরাশচেঙ্কো। এতে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা উদ্ধারকারীর কাঁধেই বসে আছে ‘রাবল’ নামে বিড়ালটি। মাঝে মাঝে উদ্ধারকারীর গালে আদুরে স্পর্শ দিচ্ছিল সে।
সবশেষ শনিবার রাতে বিড়ালটির আপডেট জানিয়ে আরেকটি টুইট করেন গেরাশচেঙ্কো। এতে তিনি জানান, উদ্ধারকারী আলী সাকাসই রাবল নামে বিড়ালটিকে লালন-পালনের ভার নিয়েছেন। তার নাম দেয়া হয়েছে ‘এনকাজ’। তারা একসঙ্গে সুখী জীবন কাটাক।
প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত গেরাশচেঙ্কোর ওই পোস্ট দেখেছেন প্রায় ৬০ লাখ ভিউয়ার। লাভ রিঅ্যাকশন পড়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার বারেরও বেশি। এছাড়া ওই পোস্ট আবার রিটুইট (শেয়ার) করেছেন সাড়ে ১৭ হাজার ব্যবহারকারী।
I posted yesterday about a cat saved from the rubble in Turkey who refused to leave his rescuer's side.
The rescuer's name is Ali Cakas and he adopted the cat, naming him Enkaz - "rubble" in Turkish.
May they have a happy life together!
📷- jcacs_1/ Instagram pic.twitter.com/ztgbZbAHyT— Anton Gerashchenko (@Gerashchenko_en) February 17, 2023
পোস্টটির মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, ‘কত সুন্দর ঘটনা। স্রষ্টা তাদের সহায় হোন’।
আরেকজন লিখেছেন, ‘উদ্ধার এলাকায় তাকে (আলী সাকাস) বিড়ালটির জড়িয়ে থাকার ভিডিও দেখেছি। তিনি হাসছিলেন এবং বিড়ালটিকে চুমু খাচ্ছিলেন। চমৎকার বিষয় এটা।’
অন্য এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘সম্ভবত আজকের সেরা খবরটি দেখা হলো।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার শিশুদের নিয়মিত টিকাদানের সময়সূচীতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
কোন প্রমাণ ছাড়াই তিনি দুরারোগ্য ও অত্যন্ত সংক্রামক হেপাটাইটিস বি’র বিরুদ্ধে নবজাতকদের টিকা দেওয়ার ‘কোন কারণ নেই’ বলে দাবি করেছেন।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বলব, অপেক্ষা করুন, যতক্ষণ না শিশু ১২ বছর বয়সে পৌঁছায় এবং পরিপূর্ণভাবে গঠিত হয়।’
এটি চিকিৎসাবিদ্যায় প্রচলিত ব্যাপক মতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, লিভারের ক্ষতি ও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, এমন রোগের মাতৃ সংক্রমণ রোধ করার সর্বোত্তম উপায় হল শিশুকে জন্মের প্রথম দিনেই টিকা দেওয়া।
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
যুক্তরাজ্য সরকার তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে ফিলিস্তিনের একটি মানচিত্র আপডেট করেছে। পূর্বে উল্লেখ করা ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল’ লেখার পরিবর্তে এখন ‘ফিলিস্তিন’ লেখা হয়েছে। গত রোববার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। এর পরেই তাদের ওয়েবসাইটের মানচিত্র ও বিভিন্ন নথিতে ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল’ লেখার পরিবর্তে এখন ‘ফিলিস্তিন’ লেখা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন অংশে—যেমন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জন্য ভ্রমণ পরামর্শ, বিদেশে যুক্তরাজ্য দূতাবাসের তালিকা এবং অঞ্চলভিত্তিক সরকারি মানচিত্রে আগের উল্লেখগুলো বদলে ‘ফিলিস্তিন’ বসানো হয়েছে।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারা কোনো সরকার বা নিরাপত্তা কাঠামোয় ভূমিকা নিতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলি উভয় জনগণের সমান অধিকার রক্ষা ও শান্তির পথে সমর্থন করার জন্য বৃহত্তর আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ব্রিটেন এখন কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার পর তৃতীয় জি-সেভেন দেশ, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সৌদি আরব ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি সম্মেলনের আগেই এই ঘোষণা এলো।
এখানে ফ্রান্সের নেতৃত্বে আরো কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রতিশোধ না নিতে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, তিনি ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন যে, তারা যেন যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রতিশোধ হিসেবে পশ্চিম তীরের আরও কিছু অংশ দখল না করে।
গতকাল সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে যোগদানের আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনে ফ্রান্স এবং আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশেরও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে যোগদানের আগে কুপার বিবিসির সাথে কথা বলছিলেন, যেখানে ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্র একই রকম ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্য তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে উল্লেখযোগ্য একটি পরিবর্তন এনে গত রোববার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এই স্বীকৃতি ঘোষণা করেন। রোববার কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পতুর্গালও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি সন্ত্রাসবাদকে পুরষ্কার দেওয়ার মতো।
বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে কুপার জানান, ইসরায়েল এই ঘোষণাকে পশ্চিম তীরের আরও কিছু অংশ দখলের অজুহাত হিসেবে নেবে কি না, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে বলেন, তিনি ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি এবং তার সরকারের অবশ্যই তা করা ঠিক হবে না।
কুপার বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি যে, আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সর্বোত্তম উপায় হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কুপার আরও বলেন, ‘এটি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য করা হয়েছে এবং এটি করতে সক্ষম হওয়ার জন্য আমরা এই অঞ্চলজুড়ে সকলের সাথে কাজ চালিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিই যে ইসরায়েল রাষ্ট্র... তেমনি আমাদের ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকারকেও স্বীকৃতি দিতে হবে।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুপার মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য একটি কাঠামো তৈরিতে আন্তর্জাতিক ঐকমত্য তৈরির জন্য সোমবার জাতিসংঘের সম্মেলনে জোর দেবেন।
রোববার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণার সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলেন, তিনি শান্তি এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবিত করতে চান।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ‘হবে না’।
বিবিসি রেডিও ফোর টুডে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন, ‘এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ইহুদি সম্প্রদায় যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টিকে কখনওই ক্ষমা করবে না।’
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া সঙ্গে একইদিনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ পর্তুগাল। গত রোববার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো র্যাঞ্জেল জানান ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে পর্তুগাল।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘে পর্তুগালের স্থায়ী মিশনের সদর দপ্তর থেকে পাওলো র্যাঞ্জেল সংবাদিকদের বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি হলো পর্তুগিজ পররাষ্ট্র নীতির মৌলিক, অপরিবর্তনীয় নীতির বাস্তবায়ন। তিনি বলেন, ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ হিসেবে দ্বিরাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সমর্থন করে পর্তুগাল। গাজায় যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পর্তুগিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় মুছে দেবে না। গাজায় ইসরায়েল সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, ধ্বংস এবং সেখানে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের নিন্দা জানান তিনি। এর আগে একইদিনে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রথম জি-৭ দেশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিল এবং সোমবার নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশ একই পথে হাঁটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অবরুদ্ধ গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এর অংশ হিসেবে গাজা সিটির সাবরা মহল্লায় একই পরিবারের অন্তত ২৫ জনকে হত্যা করেছে তারা। গত রোববার ভোরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সাবরা এলাকার কয়েকটি বাড়িতে বোমা বর্ষণ করে। আগস্টের শেষ দিকে এ এলাকায় প্রবেশ করে ট্যাংক মোতায়েন করে ইসরায়েল, যাতে পুরো অঞ্চল দখল ও ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়।
হামলার পর অন্তত ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। স্থানীয় লোকজন ও উদ্ধারকর্মীরা হাত দিয়ে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে খুঁজছেন আটকে পড়া মানুষকে। পরিবার-পরিজনের আশঙ্কা, এখনো প্রায় ৫০ জন ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন।
সাবরা এলাকার ওই পরিবার আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে এখনো কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
এক স্বজন বলেন, ‘আমি সারা বিশ্বকে অনুরোধ করছি—আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আমাদের প্রিয়জনেরা জীবন্ত কবর হয়ে আছে। আমরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে তাদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু পৌঁছাতে পারছি না।’
তিনি অভিযোগ করেন, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি ড্রোন। তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি, ড্রোন থেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। পাঁচজন এগোলে চারজন মারা যায়, একজন বেঁচে থাকে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, আহতদের ছোট একটি গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, চারপাশে মানুষ ভিড় করে আছে। আরেকটি ভিডিওতে এক মা চিৎকার করে বলছেন, ইসরায়েলি হামলায় তিনি তার ‘সব সন্তানকে হারিয়েছেন’। গাজা সিটির দক্ষিণে সাবরা মহল্লায় এ হামলা হয়।
এছাড়া গাজা সিটির পশ্চিমে শাতি শরণার্থী শিবির ও দক্ষিণ-পশ্চিমের তাল আল-হাওয়া মহল্লাতেও ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
নাসর এলাকার লাভাল টাওয়ার ও এর পাশের একটি বাড়িতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।
গাজার মধ্যাঞ্চলের বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চারটি শিশু রয়েছে। আল-জাজিরাকে এক জরুরি সূত্র জানিয়েছে, হামলাটি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত একটি ক্লিনিকের কাছাকাছি চালানো হয়।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, চিকিৎসা সূত্রের বরাতে জানা গেছে—ভোর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার বিকেলে জানিয়েছিল, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ২৮৩ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৫ জন।
এ ছাড়া ইসরায়েলি অবরোধ ও কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন মারা গেছেন। এতে অনাহার ও খাদ্যাভাবজনিত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪০, যাদের মধ্যে ১৪৭ শিশু রয়েছে।
গতকালও বহু ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। জোরপূর্বক গাজা সিটির কয়েক লাখ মানুষকে উচ্ছেদ ও দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা এবং গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই অভিযান চালাচ্ছে তেল আবিব।
তীব্র রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিরোধের পর অবশেষে এক অনুষ্ঠানে হাত মিলিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সাবেক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং কোটিপতি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক।
ঘটনাটি ঘটে অ্যারিজোনায় আয়োজিত ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণসভায়, যেখানে ট্রাম্প ও মাস্কের একান্ত কথোপকথন ও করমর্দনের দৃশ্য রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনা তৈরি করেছে—দুইজনের সম্পর্ক কি পুনরায় জোড়া লাগছে?
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে স্টেডিয়ামে আয়োজিত স্মরণসভায় ট্রাম্প মাস্কের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন এবং করমর্দন করেন।
চার্লি কার্ককে ১০ সেপ্টেম্বর উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ট্রাম্পের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট প্রচারে মাস্ক প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করেছিলেন। নির্বাচনের পরও তিনি ট্রাম্পের নেতৃত্বে গঠিত ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন—একটি বিতর্কিত সংস্থা যা সরকারি চাকরিজীবীদের হাজারো পদ বিলুপ্ত করে।
তবে হোয়াইট হাউসের বড় কর ও ব্যয়ের বিল নিয়ে মতবিরোধের জেরে মাস্ক ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। সামাজিক মাধ্যমে একাধিকবার প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমালোচনা করেন মাস্ক এবং এমনকি ‘এপস্টেইন ফাইলসে’ ট্রাম্পের নাম থাকার অভিযোগও তোলেন। ট্রাম্পও পাল্টা মন্তব্য করেন যে, মাস্ককে ‘বহিষ্কার’ করার বিষয়টি তিনি বিবেচনা করছেন।
এরপর মাস্ক ঘোষণা দেন নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমেরিকা ফার্স্ট পার্টি’ গঠনের, যদিও বাস্তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম দেখা যায়নি।
স্মরণসভায় ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের একটি ছবি ‘X’ (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে মাস্ক লেখেন: ‘For Charlie.’ তবে রোববারের এই সাক্ষাৎ তাদের মধ্যকার বিরোধের পর প্রথম সাক্ষাৎ কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের (আইডিএফ) পরিবর্তে একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্স। যুদ্ধ শেষে এই বাহিনী অঞ্চলটির দায়িত্ব নেবে এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার কাজ করবে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল প্রাপ্ত খসড়া প্রস্তাবের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, এই বাহিনীকে জাতিসংঘ অনুমোদিত একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যুদ্ধবিরতির পর তা গাজায় দায়িত্ব নেবে। এতে ধাপে ধাপে গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবে মিসর, জর্ডান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারকে এ বাহিনীর নেতৃত্বের জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘পরিবেশ অনুকূল হলেই অল্প সময়ে জাতিসংঘ অনুমোদিত, আঞ্চলিক নেতৃত্বাধীন একটি অস্থায়ী স্থিতিশীলতা মিশন মোতায়েনের বাস্তবসম্মত রূপরেখা’ এটি।
গত জুলাইয়ে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে প্রণীত নিউইয়র্ক ঘোষণায় এই ভিত্তি স্থাপন করা হয়। কাতার ও মিসরসহ আরব দেশগুলো এ ঘোষণায় সমর্থন জানায়। চলতি মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তা প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে এবং জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী ‘একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন’ গঠনে দেশগুলো সমর্থন জানাচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, ‘এই মিশন পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। এর মূল লক্ষ্য হবে—ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা দেওয়া, পিএ—এর কাছে ধাপে ধাপে নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তর করা, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ও তার নিরাপত্তা বাহিনীকে সক্ষম করে তোলা এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা।’
ফরাসি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন বা বিশেষ রাজনৈতিক মিশনের আকারে হতে পারে। এতে বৈধতা ও নিরপেক্ষতা থাকবে। তবে একটি ছোট আকারের অ্যাডহক বহুজাতিক বাহিনী দ্রুত মোতায়েন সম্ভব হবে এবং তা স্থল পরিস্থিতি বিবেচনায় সহজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
অর্থায়ন হবে উপসাগরীয় দেশগুলোর মতো স্বেচ্ছা দাতাদের কাছ থেকে। বাধ্যতামূলক জাতিসংঘ চাঁদা থেকে নয়। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেও এ মিশন পাঠানো যেতে পারে। তবে যুদ্ধবিরতি আগে নিশ্চিত করা হলে সেটি ‘সবচেয়ে কার্যকর’ হবে।
খসড়ায় দুই ধাপের মোতায়েন পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষা, ধীরে ধীরে হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ হবে। দ্বিতীয় ধাপে বাহিনী দীর্ঘ মেয়াদে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এ জন্য কসোভো ও পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে।
এ বাহিনী ফিলিস্তিনি নির্বাচন আয়োজন এবং গাজার পুনর্গঠনেও সহায়তা করবে। শুরুতে এটি শুধু গাজায় মোতায়েন হবে। তবে খসড়ায় সতর্ক করা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে শুধু গাজায় সীমিত থাকলে পশ্চিম তীর ও গাজার মধ্যে স্থায়ী বিভাজন তৈরি হতে পারে।
খসড়ায় ইসরায়েল প্রসঙ্গ মাত্র একবার এসেছে। পিএ—এর ভূমিকার ঘোর বিরোধী ইসরায়েল এ পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া কাতারের সম্পৃক্ততা নিয়েও ইসরায়েলের আপত্তি থাকতে পারে। এখানে সরাসরি হামাসকে নিরস্ত্র করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এটি সম্প্রতি টনি ব্লেয়ারের পরিকল্পনার তুলনায় বেশি স্পষ্ট। ব্লেয়ার মূলত গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন শাসন কাঠামো গঠনের কথা বলেছিলেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ফরাসি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে তিনি এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন।
মাখোঁ বলেন, আরব দেশগুলোকে যুক্ত করতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি ছিল। তিনি জানান, ফরাসি পরিকল্পনায় ‘ইসরায়েলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি সেনাদের যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টি থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘এতে জর্ডান ও মিসর সরাসরি যুক্ত থাকবে। অন্যরা অর্থায়নে প্রস্তুত। আর অবশ্যই এটি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে করা হবে।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, পরিকল্পনার মূল বিষয় হলো ‘হামাসকে ভেঙে দেওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যার সমাধান একটাই—হামাসকে নিরস্ত্র করা, তাদের যোদ্ধাদের কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ডিডিআর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া। নিশ্চিত করতে হবে, হামাস আর কখনো সরকারে থাকবে না। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গাজা ছাড়তে হবে, আর কিছুজনকে চরমপন্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
মাখোঁর ভাষায়, ‘এটি করতে হলে আন্তর্জাতিক বাহিনী সেখানে থাকতে হবে।’
ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিরা দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য আলোচনা না করা পর্যন্ত, জার্মানি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না।
ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের প্রাক্কালে জার্মানি একথা জানিয়েছে।
রোববার অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা ও পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্সও এই অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই স্বীকৃতির লক্ষ্য হল— গাজায় ইসরাইলের অভিযানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ইসরাইলের এই অভিযানে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং সেখানকার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরাইলের মিত্রদের কাছ থেকেও এই হামরার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল বলেন, ‘একটি আলোচনার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান হল সেই পথ, যা ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদেরকে শান্তি, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের সুযোগ করে দিতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, জার্মানির জন্য, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রক্রিয়ার শেষেই আসবে। তবে এই প্রক্রিয়াটি এখনই শুরু হওয়া উচিত।
তীব্র বিরোধের পর অবশেষে হাত মেলালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সাবেক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও কোটিপতি ইলন মাস্ক। ডানপন্থী কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণসভায় এ ঘটনা ঘটায় জল্পনা শুরু হয়েছে যে দুইজনের সম্পর্ক আবারও মেরামতের পথে কিনা।
দ্য গার্ডিয়ানে খবরে বলা হয়, অ্যারিজোনার একটি স্টেডিয়ামে আয়োজিত কার্কের স্মরণসভা অনুষ্ঠানে ট্রাম্প মাস্কের সঙ্গে হাত মেলান ও কিছুক্ষণ আলাপ করেন। সেখানে হাজার হাজার মানুষ চার্লি কার্ককে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
কার্ককে ১০ সেপ্টেম্বর উটাহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মাস্ক ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে ২৭০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ দান করেছিলেন এবং রিপাবলিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর তিনি ট্রাম্পের নেতৃত্বে গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি- এর দায়িত্বে ছিলেন। এই বিতর্কিত সংস্থা মার্কিন ফেডারেল কর্মীবাহিনী ও এজেন্সিগুলোর হাজারো পদ বিলুপ্ত করে, যেগুলোকে অপচয়, জালিয়াতি ও দুর্নীতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
কার্ককে ১০ সেপ্টেম্বর উটাহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুলি করে হত্যা করা হয়।
মাস্ক ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে ২৭০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ দান করেছিলেন এবং রিপাবলিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর তিনি ট্রাম্পের নেতৃত্বে গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি- এর দায়িত্বে ছিলেন। এই বিতর্কিত সংস্থা মার্কিন ফেডারেল কর্মীবাহিনী ও এজেন্সিগুলোর হাজারো পদ বিলুপ্ত করে, যেগুলোকে অপচয়, জালিয়াতি ও দুর্নীতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
স্মরণসভায় ট্রাম্পের সঙ্গে বসা একটি ছবি মাস্ক তার এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে লিখেছেন: “ফর চার্লি।”
তবে রবিবারের এ সাক্ষাৎ দুইজনের মধ্যে বিভেদের পর প্রথম সাক্ষাৎ কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভারত-পাকিস্তানসহ সাত যুদ্ধ থামিয়েছি, আমার সাতটা নোবেল পাওয়া উচিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মন্তব্য করেছেন।
গত শনিবার আমেরিকান কর্নারস্টোন ইনস্টিটিউটের ফাউন্ডার্স ডিনারে বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বিশ্ব মঞ্চে আমরা এখন এমন কাজ করছি, যা আগে কখনো হয়নি। আমরা শান্তি চুক্তি করছি, যুদ্ধ বন্ধ করছি। আমরা ভারত-পাকিস্তান, থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করেছি।
তিনি আরও বলেন, ভাবুন তো ভারত ও পাকিস্তানের কথা। আমি কীভাবে সেটা থামালাম জানেন? বাণিজ্যের মাধ্যমে। তারা বাণিজ্য করতে চায়। আমি দুই দেশের নেতাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখি। কিন্তু যুদ্ধ থামানোর জন্য আমরা এই পথই নিয়েছি।
ট্রাম্প দাবি করেন, শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কসোভো-সার্বিয়া, ইসরায়েল-ইরান, মিসর-ইথিওপিয়া এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো—সব মিলিয়ে সাতটি যুদ্ধ তিনি বন্ধ করেছেন। তার ভাষায়, এর মধ্যে ৬০ শতাংশ যুদ্ধই থেমেছে বাণিজ্যের কারণে।
তিনি বলেন, ভারতের ক্ষেত্রে আমি বলেছিলাম, তোমরা যদি যুদ্ধ করো তাহলে বাণিজ্য হবে না। তোমাদের তো পারমাণবিক অস্ত্রও আছে। এরপর তারা যুদ্ধ বন্ধ করল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, অনেকে বলেছে, আমি যদি এ সংঘাত বন্ধ করতে পারি, তাহলে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব। আমি বলেছি, আমি তো সাতটি যুদ্ধ থামিয়েছি। প্রতিটির জন্য আলাদা নোবেল পাওয়া উচিত।
ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বন্ধ করাও তার পক্ষে সম্ভব। কারণ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো। যদিও তিনি পুতিনের আচরণে হতাশ হয়েছেন।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রোববার একযোগে এই তিন দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল। এর মধ্য দিয়ে শিল্পোন্নত (জি সেভেন) সাত দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রথম ফিলিস্তিনকে এই স্বীকৃতি দিল। নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশ একই পথে হাঁটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কানাডা প্রথম ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক বিবৃতিতে বলেন, আজ থেকে কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয় রাষ্ট্রের একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই দুই দেশের পর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহতা বাড়তে থাকার মুখে আমরা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ও শান্তির সম্ভাবনাকে জাগিয়ে রাখতে কাজ করছি। এর অর্থ একটি টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েল–যার কোনোটি এই মুহূর্তে আমরা দেখছি না।’
এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির সময় এখন এসেছে।
‘তাই আজকে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ও শান্তির আশা পুনরুজ্জীবিত করতে আমি এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্পষ্টত ঘোষণা করছি যে, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’
গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে সেখানে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলা ও গুলিতে নিহত হচ্ছে অসংখ্য ফিলিস্তিনি। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে নারী, শিশু ও অসহায় বৃদ্ধরা। ত্রাণবাহী গাড়ি ও সহযোগিতামূলক সামগ্রী আটকানো হচ্ছে সীমান্তে।
হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নেই। জীবনের জন্য ন্যূনতম চাহিদাটুকুও মেটাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। অথচ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে।
সংঘাতের প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর অধিকাংশই ইসরায়েলকে সমর্থন করলেও ব্যতিক্রম ছিল কয়েকটি পশ্চিমা দেশ।
তাদের মধ্যে স্পেন ও আয়ারল্যান্ড অন্যতম। নতুন করে এবার ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেরই জানার আগ্রহ তৈরি হতে পারে যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কয়টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বোভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দিচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের ১৪৬টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে ২০২৫ সালের স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। ২০২৪ সালে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাহামা, ত্রিনিনাদ অ্যান্ড টোবাগো, জামাইকা অ্যান্ড বারবাডোজ।
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যতার জন্য প্রচারণা চালানোর পরে জাতিসংঘে যোগদানে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হয়।
যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রটিকে অর্থ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনের ‘সদস্যপদহীন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ পরিস্থিতি পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেয় ও ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দেশটিকে একটি পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আইসল্যান্ড, চিলি, গায়ানা, পেরু, সুরিনাম, উরুগুয়ে, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, লাইবেরিয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনস, বেলিজ, ডোমিনিকা, অ্যান্টিগুয়ে এবং বারবুডা, গ্রেনাডা।
২০১২ সালে থাইল্যান্ড, ২০১৩ সালে গুয়েতামালা, হাইতি, ভ্যাটিকান সিটি, ২০১৪ সালে পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে সুউডেন, ২০১৫ সালে সেইন্ট লুসিয়া, ২০১৮ সালে কলোম্বিয়া, ২০১৯ সালে সেইন্ট কিটিস এবং নেভিস ও ২০২৩ সালে মেক্সিকো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
অসলো চুক্তির অধীনে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে আর তা হয়ে ওঠেনি। তবে ২০০৪ সালে পূর্ব তিমুর, ২০০৫ সালে প্যারাগুয়ে, ২০০৬ সালে মন্টিনিগ্রো, ২০০৮ সালে কোস্টারিকা, লেবানন, আইভরি কোস্ট, ২০০৯ সালে ভেনিজুয়েলা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও ২০১০ সালে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও ইকুয়েডর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম অসলো চুক্তি সই হয়। চুক্তির আওতায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উভয় পক্ষই কয়েক দশক ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করে। ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো চুক্তি সই হয়। সেখানে ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনকেও রাষ্ট্র হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলা হয়। তারও আগে ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম ইন্তিফাদার শুরুতে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন, যার রাজধানী ছিল জেরুজালেম। আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স থেকে ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন ইয়াসির আরাফাত। আর প্রথম দেশ হিসেবে আলজেরিয়া-ই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
আলজেরিয়া স্বীকৃতি দেওয়ার পর ওই বছরেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, কিউবা, জর্দান, মাদাগাস্কার, মাল্টা, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, সার্বিয়া, জাম্বিয়া, আলবেনিয়া, ব্রুনাই, জিবুতি, মরিশাস, সুদান, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, মিসর, গাম্বিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, সেশেলস, শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়া, রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, চীন, বুরকিনা ফাসো, কোমোরোস, গিনি, গিনি-বিসাউ, কম্বোডিয়া, মালি, মঙ্গোলিয়া, সেনেগাল, হাঙ্গেরি, কেপ ভার্দে, উত্তর কোরিয়া, নাইজার, রোমানিয়া, তানজানিয়া, বুলগেরিয়া, মালদ্বীপ, ঘানা, টোগো, জিম্বাবুয়ে, চাদ, লাওস, সিয়েরা লিওন, উগান্ডা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, সাও টোমে এবং প্রিন্সেপ, গ্যাবন, ওমান, পোল্যান্ড, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বতসোয়ানা, নেপাল, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ভুটান, পশ্চিম সাহারা।
তাছাড়া ১৯৮৯ সালে রুয়ান্ডা, ইথিওপিয়া, ইরান, বেনিন, কেনিয়া, নিরক্ষীয় গিনি, ভানুয়াতু, ফিলিপাইন, ১৯৯১ সালে ইসোয়াতিনি, ১৯৯২ সালে কাজাখস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, জর্জিয়া, বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা, ১৯৯৪ সালে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিজস্তান ও ১৯৯৮ সালে মালাউই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইরান থেকে শুরু করে ইয়েমেন—প্রায় সবখানেই সামরিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েল এখন কার্যত আঞ্চলিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দুতে। এর মধ্যেই সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান হামলা চালায় তেলআবিব। ওই ঘটনার পর এবার তুরস্কেও উদ্বেগ বেড়েছে। আঙ্কারার কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য কি তবে তুরস্ক?
কাতার থেকে তুরস্ক: বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে বিমান হামলা চালানোর পর আন্তর্জাতিক গবেষক ও বিশ্লেষকদের নজর ঘুরে যায় তুরস্কের দিকে। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল রুবিন স্পষ্টভাবে বলেন, তুরস্ক ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেটে পরিণত হতে পারে। তার সতর্কবার্তায় আরও উল্লেখ ছিল—ন্যাটো সদস্যপদও হয়তো এই আক্রমণ থেকে তুরস্ককে রক্ষা করতে পারবে না।
একই সুরে ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেইর মাসরি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আজ কাতার, কাল তুরস্ক।’
এর প্রতিক্রিয়ায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা তীব্র সতর্কতা দিয়ে বলেন, যদি ইসরায়েল তুরস্কের ওপর হামলার চিন্তাও করে, তবে দেশটির জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।
তুরস্ককে ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে দেখছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
গত কয়েক মাস ধরেই ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো তুরস্ককে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। বিশেষ করে, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের সক্রিয় উপস্থিতি এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়ার পুনর্গঠনে দেশটির ভূমিকা—এসবকে ইসরায়েল নতুন হুমকি হিসেবে বর্ণনা করছে।
এই প্রেক্ষাপটেই তুরস্ক গত আগস্টে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানায়। আঙ্কারার মতে, এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বার্তাও।
যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা ও ন্যাটো নিয়ে শঙ্কা
কাতারে বিমান হামলার পর তুরস্কের ভেতরে আরেকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে—ন্যাটোর প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর? কারণ, কাতারকে যুক্তরাষ্ট্র ‘মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবু ইসরায়েলের হামলার পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
আটলান্টিক কাউন্সিলের নন-রেসিডেন্ট ফেলো ওমর ওজকিজিলসিক আল জাজিরাকে বলেন, তুরস্ক বুঝে গেছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর ওপর নির্ভর করে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তার মতে, ইসরায়েল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং এর পেছনে ওয়াশিংটনের নীরব সমর্থন রয়েছে।
নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ পরিকল্পনা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণাকে খোলাখুলিভাবে সমর্থন করেছেন। আগস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, আমি এই ধারণায় বিশ্বাস করি।’
আঙ্কারার কাছে এই মন্তব্য নিছক প্রতীকী কোনো বক্তব্য নয়; বরং এটিকে তুরস্কের আঞ্চলিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থের সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গ্রেটার ইসরায়েলের উদ্দেশ্য হলো—এ অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর ও বিভক্ত করে রাখা।’
গাজা থেকে তিউনিসিয়া: ইসরায়েলের আগ্রাসী উপস্থিতি
ইসরায়েল শুধু গাজা কিংবা পশ্চিম তীরেই সীমাবদ্ধ নেই। সম্প্রতি তারা সিরিয়ায় একাধিক হামলা চালিয়েছে, ইয়েমেনেও বিমান হামলা করেছে। এমনকি গাজায় সাহায্যবাহী বহর বহনকারী জাহাজের ওপর তিউনিসিয়ার উপকূলে আক্রমণ চালায়। ইরানের সঙ্গেও সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ইসরায়েল।
সব মিলিয়ে তেলআবিবের সামরিক তৎপরতা এখন প্রায় গোটা অঞ্চলের প্রতিটি সংঘাতময় এলাকায় বিস্তৃত হয়ে পড়েছে।
আঞ্চলিক আধিপত্যের নকশা
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম বারাক স্বীকার করেছিলেন—ইসরায়েল কখনোই একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সিরিয়া চায় না।
সিরিয়ার ওপর হামলা, লেবাননে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে আঘাত, ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ—সবকিছুই ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েল ধাপে ধাপে প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করছে।
সংঘর্ষের পরবর্তী ক্ষেত্র: সিরিয়া?
তুরস্কের সাবেক নৌ-অ্যাডমিরাল ও ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ কৌশলের স্থপতি সেম গুরদেনিজ মনে করেন, তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্ভাব্য প্রথম সরাসরি সংঘর্ষের ক্ষেত্র হতে পারে সিরিয়ার ভূমি ও আকাশসীমা।
তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাস ও ইসরায়েল মিলে সাইপ্রাসে যে সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি গড়ে তুলছে, তা তুরস্কের ব্লু হোমল্যান্ড কৌশলকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
পরিশেষে
বর্তমানে তুরস্ক-ইসরায়েল সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণা, কাতারে বিমান হামলা, সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রতিযোগিতা—সবকিছু মিলিয়ে আঙ্কারার চোখে এখন ইসরায়েল কেবল প্রতিবেশী নয়, বরং এক আগ্রাসী শক্তি, যে আঞ্চলিক একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
অন্যদিকে তুরস্কও তার সামুদ্রিক ও আঞ্চলিক কৌশল শক্তিশালী করছে এবং সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্ক কোন পথে যাবে, তা এখন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এক বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাগরাম ঘাঁটি ফেরত দেবে না আফগানিস্তান। দেশটির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষেপেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘাঁটি ফেরত না পেলে ‘খারাপ কিছু’ করার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
গত শনিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, বাগরাম ঘাঁটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান যদি এটি ফিরিয়ে না দেয়, তবে খারাপ ঘটনা ঘটবে।
কয়েক দিন আগে ট্রাম্প যুক্তরাজ্য সফরকালে বাগরাম ঘাঁটি ফের যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, আমরা এটিকে ফেরত আনার চেষ্টা করছি… আমরা চেষ্টা করছি কারণ তাদের আমাদের কাছ থেকে কিছু প্রয়োজন। তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন।
বাগরাম ঘাঁটির গুরুত্ব
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি বাগরাম। দীর্ঘ দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন তালেবানবিরোধী যুদ্ধে অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এটি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর তালেবান সরকার উৎখাতে এ ঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২০২১ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে ঘাঁটিটি ছাড়ে। এর পরপরই তালেবান দ্রুত দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
মানবাধিকার বিতর্ক
বছরের পর বছর ধরে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাগরাম ঘাঁটিকে নিয়ে নানা অভিযোগ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এখানে আটক বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ এটি নিয়মিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
ট্রাম্পের অবস্থান
ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে বারবার বাগরাম হারানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যর্থ কূটনৈতিক কৌশলের কারণে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল অবস্থায় সরে যায়। এছাড়া তিনি দাবি করেন, আফগানিস্তানে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
শনিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকরা যখন তাকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র কি আবার বাগরাম দখল করার পরিকল্পনা করছে কি না, তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সে বিষয়ে এখনই কিছু বলব না। তবে আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছি। আমরা এটি চাই, খুব শিগগির চাই। যদি তারা তা না করে, তবে আপনারা শিগগিরই জানতে পারবেন আমি কী করতে যাচ্ছি।’
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় একদিনে আরও অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনী টানা আকাশ ও স্থল হামলা চালিয়ে গাজা শহর দখলের চেষ্টা করেছে, যেখানে একজন খ্যাতনামা চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরাও নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক ভবন, আশ্রয়কেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু এবং এমনকি সামরিক নির্দেশে শহর ছাড়তে থাকা একটি ট্রাকেও বোমা হামলা চালিয়েছে। গত শনিবার ভোরে গাজা শহরের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার বাড়িতে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন আবু সালমিয়ার ভাই, ভাবি এবং তাদের সন্তানরা। আবু সালমিয়া বলেন, ‘ভাই ও তার স্ত্রীর মরদেহ দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। এখানে সবকিছুই সম্ভব, যেমন সবচেয়ে প্রিয়জনকে শহীদ বা আহত অবস্থায় দেখতে হয়।’
হামাস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ডাক্তারদের শহর ছাড়তে বাধ্য করার জন্য একটি ‘সন্ত্রাসী বার্তা’। তারা আরও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ১,৭০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে এবং আরও ৪০০ জনকে বন্দি করেছে। আরেকটি ইসরায়েলি হামলায় গাজা শহর ছেড়ে যাওয়া একটি ট্রাকে থাকা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়, এতে অন্তত চারজন নিহত হন। এই হামলাটি শহরের নাসর এলাকায় ঘটেছিল।
কেন্দ্রীয় গাজার আজ-জাওয়াইদা থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানান, নিহতরা অবিরাম বিমান হামলা, কামানের গোলা এবং ড্রোন হামলা থেকে বাঁচতে শহর ছাড়ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী বিস্ফোরক ভর্তি রোবটও ব্যবহার করছে, যা পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে এবং বড় ধরনের ক্ষতি করছে। এগুলো বিস্ফোরিত হলে মনে হয় যেন ভূমিকম্প হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকরা আটকে পড়া বা আহত ফিলিস্তিনিদের কাছেও পৌঁছাতে পারছেন না।
ইসরায়েলি ৪৬ বন্দির ছবি প্রকাশ করল হামাস
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা গাজার অবশিষ্ট বেশিরভাগ বন্দির একটি ‘বিদায়ী ছবি’ প্রকাশ করেছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ তাদের জীবন বিপন্ন করতে পারে।
শনিবার আল-কাসসাম ব্রিগেড তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ৪৬ জন বন্দির ছবি প্রকাশ করে। প্রতিটি ছবিতে ‘রন আরাদ’ নামে একজন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পাইলটের নাম লেখা আছে। ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ লেবাননে ওই পাইলট ‘নিখোঁজ’ হন, যাকে আজও পাওয়া যায়নি।
ছবির পাশাপাশি লেখা হয়েছে, ‘নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমি এবং (সামরিক প্রধান) জামিরের আত্মসমর্পণের কারণে... গাজা সিটিতে অভিযানের শুরুতে তোলা একটি বিদায়ী ছবি।’
এদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের বিশ্বাস গাজায় এখনো প্রায় ২০ জন বন্দি জীবিত আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, ২০ জনেরও কম বন্দি জীবিত থাকতে পারে।
ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, তারা সমস্ত জীবিত ও মৃত বন্দিকে ফিরিয়ে আনবেন এবং হামাসকে ‘ধ্বংস’ করবেন।
তবে হামাস বারবার সতর্ক করে আসছে, ইসরায়েলি আক্রমণ তীব্রতর হলে বন্দীদের জীবন বিপন্ন হবে। কেননা ইতোমধ্যে কয়েকজন ইসরায়েলি বোমায় নিহত হয়েছেন।
হামাসের এই ছবিটি প্রকাশের পর ইসরায়েলের শহরগুলোর রাস্তায় লাখ লাখ লোক আবারও সরকারের নিন্দা জানাতে নেমে এসেছে। তারা যুদ্ধের অবসান এবং সমস্ত বন্দিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি তাৎক্ষণিক ও বিস্তৃত চুক্তির দাবি জানায়।
এই মাসের শুরুতে, হামাস দুই ইসরায়েলি বন্দির একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এরও এক মাস আগে আরও দুই ক্ষীণকায় ইসরায়েলি বন্দির ফুটেজ প্রকাশ হয়েছিল।
গাজা সিটির বৃহত্তম কেন্দ্রে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বিমান হামলা অব্যাহত থাকার পর ইসরায়েল সম্প্রতি স্থল আক্রমণ তীব্র করে। এর ফলে লাখ লাখ বাসিন্দা পালিয়ে গেছে।
ফের গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা
গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা। তীব্র অবরোধ ও অভিযানের পরেও রোববার এ হামলা চালানো হয়। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কিছুক্ষণ আগে উত্তর গাজা উপত্যকা থেকে দক্ষিণ উপকূলীয় শহর আশদোদে দুটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।
আরও জানানো হয়েছে, একটি রকেট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত করা গেলেও দ্বিতীয় রকেটটি একটি খোলা জায়গায় আঘাত করে। আশদোদে হামলার পর নিকটবর্তী শহরগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠার কারণে হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আহত বা বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, ব্যাপক অভিযানের কারণে গাজা থেকে প্রজেক্টাইলসহ দূরপাল্লার আক্রমণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে আইডিএফের স্থল আক্রমণের কারণে গাজার প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা।