রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও লাগামহীন হয়ে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং মঙ্গলবার বলেন, কিছু দেশকে যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ছিন মূলত যুক্তরাষ্ট্রকেই ইঙ্গিত এমন মন্তব্য করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
চীন ও রাশিয়া গত বছর ‘সীমাহীন অংশীদারত্বের’ ঘোষণা দেয় চীন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের শাস্তির মুখে পড়ে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য চীন এ পর্যন্ত তার মিত্র দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়নি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য চীন রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ দেয়ার কথা বিবেচনা করছে। রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে তার ফল ভালো হবে না বলে চীনকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বেইজিং জানায়, তারা রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহ করছে না।
বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। এই যুদ্ধ লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে। তাই অবিলম্বে এই যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালা বন্ধ করতে কয়েক দেশের আহ্বান জানাচ্ছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের নাম উচ্চারণ না করে ছিন বলেন, ওদের অবশ্যই ‘আজ ইউক্রেন কাল তাইওয়ান’ জাতীয় প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।
এদিকে চীনের আরেক শীর্ষ কূটনৈতিক ওয়াং ই রাশিয়ায় যাচ্ছেন। মস্কোয় মঙ্গলবার পৌঁছানোর কথা তার। অন্যদিকে আগামী শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘শান্তি ভাষণ’ দিতে যাচ্ছেন। ঘটনাক্রমে ওই দিন ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তি হবে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ওয়াংয়ের রাশিয়া সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ফিলিস্তিনের গাজার শাসক দল হামাসের সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর ৬১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির বরাত দিয়ে শনিবার আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুক্রবার পর্যন্ত নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ৫৪ জন ফিলিস্তিন, চারজন ইসরায়েল ও তিনজন লেবাননের নাগরিক।
সিপিজের ভাষ্য, যুদ্ধে ১১ জন সাংবাদিক আহত ও তিনজন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৯ সাংবাদিক।
সংস্থাটি আরও জানায়, অনেক সাংবাদিক নিহত, নিখোঁজ কিংবা হুমকির শিকার হওয়ার অসমর্থিত খবর পাওয়া গেছে, যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েলে ঢুকে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় নির্বিচার হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অবরুদ্ধ উপত্যকায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত হয় ১৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে হামাসের হামলায় নিহত হয় প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি।
গোটা বিশ্বে যেভাবে বিশাল আকারে মাংস খাওয়ার চল দেখা যাচ্ছে, তা শরীর ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে পরিবেশেরও ক্ষতি করছে। জার্মানিতে প্রকৃত মাংসের বদলে ‘ভিগান’ বিকল্প জনপ্রিয় করার নানা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।
ডানিয়েল কিস সসেজ তৈরি করেন। তবে যে সে সসেজ নয়। তার সসেজে কোনো মাংস নেই, পুরোপুরি ভিগান। জার্মানির অনেক মানুষের কাছে সেটাই একটা সমস্যা। ডানিয়েল বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু কটু মন্তব্য পেয়েছি। অনেকে আমাদের দ্রুত বিনাশ কামনা করেছেন। অনেকে চেয়েছেন, আমাদের গোটা কোম্পানি যেন বন্ধ হয়ে যায় বা কেউ সেটা ধ্বংস করে দেয়।’
জার্মানি মাংসের দেশ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় এমন উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। শূকরের মাংসের নানা রূপ ও কারি সসেজ চিরায়ত পদের মধ্যে পড়ে। অনেকের ভয়, তাদের কাছ থেকে সেসব কেড়ে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভিগান বিকল্প কি সত্যি জার্মান জীবনযাত্রার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে? ড্রেসডেন শহরে ‘ভেগান কসাইখানা’ নজর আকর্ষণ করছে। সেখানে এমন সব বিকল্প পাওয়া যায়, যা মাংসের প্রয়োজন মেটাতে পারে। সে কারণে অনলাইনে অনেক প্রশংসার পাশাপাশি হুমকি ও গালাগালও শোনা গেছে।
নিল্স স্টাইগার ও তার সহযোগীরা কিন্তু মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করতে চান না। মাংস ছাড়া বিকল্প খাদ্যতালিকা যে সম্ভব, শুধু সেটাই তারা তুলে ধরতে চান। নিল্স বলেন, ‘আমি নিজে পাঁচ বছর আগে ভিগান হয়েছি। আগে বেশি মাংস খাওয়ার কারণে আমি পরিচিত ছিলাম। আমি বন্ধুদের সঙ্গে বারবিকিউ করতাম এবং মাংসের স্বাদ খুব উপভোগ করতাম। আমি এখনো সেই স্বাদ পছন্দ করি। শুধু মাংস ছাড়া। আমি চাই না, সে কারণে প্রাণী হত্যা হোক বা কৃষিজমি ব্যবহার করা হোক।’
জার্মানিতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা কমেই চলেছে। ২০২২ সালে দেশটিতে বছরে মাথাপিছু ‘মাত্র’ ৫২ কিলোগ্রাম মাংস খাওয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালের পর যা সবচেয়ে কম হার। কম মাংস খাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশের জন্য পশুকেন্দ্রিক শিল্পক্ষেত্র দায়ী।
কোম্পানির রন্ধন বিষয়ের প্রধান হিসেবে ডানিয়েল কিস মূলত ভালো রান্না করতে চান। মাংসের স্বাদ নকল করা মোটেই কঠিন নয়। তার জন্য বিশেষ মসলা রয়েছে। সঠিক টেক্সচার সৃষ্টি করাই আসল চ্যালেঞ্জ।
ডানিয়েল বলেন, ‘আমি যখন সবাইকে বলি গুলাশ রান্না করছি, তখন সেই পদের মধ্যে ছোটবেলায় মা বা দাদি-নানির রান্নার স্বাদ কিছুটা হলেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হয়। তা ছাড়া সসেজ খাওয়ার সময় কার্টিলেজে কামড় দেয়ার মতো অনুভূতি পেতে হবে। অথবা স্টেক খাওয়ার সময়েও মাংসের মতো স্বাদ পেলে ভালো হয়।’
বার্লিনেও ২০১৭ সাল থেকে এক ভিগান মাংসের দোকান রয়েছে। সেখানেও উত্তেজনা কম নয়। মালিক পাউল পলিঙার বলেন, ‘আমরা নাকি এই পেশাকে অপবিত্র ও অসম্মান করছি, এমন সব কথা শুনতে পাই।’ তবে ড্রেসডেনের ‘ভিগান’ মাংসের দোকানের তুলনায় তাদের উদ্দেশ্য আলাদা। তারা মাংস ও সসেজের মৌলিক স্বাদ অনুকরণের চেষ্টা না করে একেবারে নিজস্ব স্বাদ ও পণ্যের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন।
পাউল বলেন, ‘আমাদের কাছে স্বাদই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা কিছু সৃষ্টির সময় খতিয়ে দেখি, নিজেরাই সেই স্বাদ উপভোগ করছি কি না।’
ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকা আরও ৩০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির মধ্যে এটি সপ্তম ধাপে বন্দি ও জিম্মি বিনিময়। এদিকে যুদ্ধবিরতির পরই ফের হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলার পাল্টা জবাব দেয়া শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি জিম্মিদের মধ্যে দুজন শিশু ও বাকি ছয়জন নারী। তাদের মধ্যে আবার কয়েকজন বিভিন্ন দেশের দ্বৈত নাগরিক।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, এই আটজনকে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি কারা বিভাগ জানিয়েছে, তারা আরও ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের দখলকৃত জেরুজালেমে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে ঘটা সেই হামলায় তিন ইসরায়েলি নিহত এবং আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল পৌনে ৮টায় জেরুজালেমের এক জনাকীর্ণ বাস স্টপেজে দুই অস্ত্রধারী এই হামলা চালায়। আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
‘ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীরা’ এই হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে এক বিজ্ঞপ্তিতে ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, সকালের কর্মব্যস্ত সময়ে দুই ফিলিস্তিনি অস্ত্রধারী একটি গাড়িতে চেপে জেরুজালেমের একটি বাসস্টপে আসে এবং অপেক্ষমাণ যাত্রীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন দুজন এবং আহত হন আরও আটজন। হতাহতরা সবাই ইসরায়েলের নাগরিক। এরপর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিনে। এর মধ্যে ২৪ বছর বয়সী এক নারী এবং সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ রয়েছেন। পুলিশ আরও জানায়, এম-১৬ রাইফেল ও হ্যান্ডগানবহনকারী দুই অস্ত্রধারীকে সেখানেই হত্যা করা হয়েছে। তাদের গাড়ির ভেতর আরও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাব দিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা
ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাব দেয়া শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনারা নতুন করে যে আগ্রাসন শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে শক্ত জবাব দিচ্ছে হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলন। ফিলিস্তিনের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজার কয়েকটি এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। গাজা উপত্যকার কাছের কয়েকটি ইহুদি বসতিতে সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা গাজা থেকে ছোড়া একটি রকেট ভূপাতিত করেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার উত্তরে ইসরায়েলের সেদরত শহরে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে সেখানে আগুনের কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে ছোড়া রকেটে ইসরায়েলি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখা আল-কুদস ব্রিগেড বলেছে, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবাদে ইসরায়েলের শহরগুলোতে রকেট হামলা চালিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য ইজ্জাত আল-রিশক বলেছেন, গত ৫০ দিনে ইসরায়েল যা অর্জন করতে পারেনি, নতুন করে আগ্রাসন শুরু করেও তা অর্জন করতে পারবে না।
এ সময় ইজ্জাত আল-রিশক ফিলিস্তিনি জনগণের দৃঢ় সংকল্প এবং প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বীরত্বের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করি। আমরা তাদের অপরাধ, নাৎসি আগ্রাসনের নিন্দা করছি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।’
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে নজিরবিহীন সামরিক অভিযান চালায়। ওই অভিযানে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দি করে নিয়ে গাজা উপত্যকায় ফিরে যায়। সেদিন থেকেই ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় ভয়াবহ অভিযান শুরু করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ছয় হাজার শিশুসহ ১৪ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলে সামরিক অভিযানের বিষয়ে আল-জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতার জবাবে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এবং আমাদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেবে। এগুলোই হামাসের এই অভিযানের কারণ।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস জানিয়েছেন, বাংলাদেশ তাদের দীর্ঘদিনের ইতিহাস মেনে গণতান্ত্রিক সুশাসনের প্রতি সম্মান জানাবে।
'আমরা আশা করবো বাংলাদেশ তাদের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক সুশাসনের বলিষ্ঠ ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানাবে এবং আসন্ন নির্বাচনটি মুক্ত ও নিরপেক্ষ হবে। সে অনুযায়ী একে মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া যাবে', বলেন তিনি।
নিউইয়র্কে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এক বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশকে মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সহায়তায় করার জন্য জাতিসংঘ কী উদ্যোগ নিচ্ছে। এর জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ডেনিস আরও জানান, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে মাথায় রেখে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
'নিশ্চিতভাবেই এতে দেশটি আরও সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠবে এবং এতে তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে ও একে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি, যার ওপর নির্ভর করে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।'
ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, বাংলাদেশকে এজেন্ডা ২০৩০ অনুযায়ী টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের জন্য শুভকামনা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
মার্কিন কূটনীতিক ও বিতর্কিত নোবেল বিজয়ী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।
কিসিঞ্জার ছিলেন হার্ভার্ডের একজন অধ্যাপক যিনি পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে নাম লেখান। মার্কিন-সোভিয়েত শীতল যুদ্ধের অন্যতম কারিগর মনে করা হয় তাকে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস এর বরাতে নিশ্চিত করেছে এ খবর।
১৯২৩ সালে জার্মানিতে তার জন্ম হলেও ১৯৩৮ সালে তার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসে। ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পান এবং তিন বছরের জন্য দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন রাজনীতিতে বিপুল ক্ষমতা লাভ করেন। এর মাধ্যমে তার পূর্ণকালীন অধ্যাপনাও শেষ হয়।
পরে তিনি নিক্সনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের আমলেও তিনি একই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ইসরায়েল এবং প্রতিবেশীদের ইয়ম কিপুর যুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে প্যারিস শান্তিচুক্তি করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।
১৯৭৩ সালেই তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এ নিয়ে শুরু হয় চরম বিতর্ক। তার সঙ্গে নোবেল পান উত্তর ভিয়েতনামের নেতা লি ডুক থো, যিনি এটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।
জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এ কূটনীতিক ছিলেন ইহুদী ধর্মের অনুসারী। রাজনীতি করতেন রিপাবলিকান দলে।
আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস। এটি একটি রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান।
ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলার ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্ককে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গত মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সংবাদ সম্মেলনে হামাস নেতা ওসামা হামদান এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘গাজার জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিধি কতটা বিস্তৃত, তা দেখার জন্য আমরা ইলন মাস্ককে গাজা সফরের আমন্ত্রণ জানাই। ৫০ দিনের মধ্যে গাজার নিরীহ বেসামরিক মানুষের ওপর ফেলা হয়েছে ৪০ হাজার টনের বেশি বোমা। আমি ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে পুনর্মূল্যায়ন এবং ইসরায়েলকে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানাই।’
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষী পোস্ট ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। গাজায় নির্বিচারে ইসরায়েলি বোমা হামলার সমালোচনার জন্য মাস্কও নিন্দিত হন। ইসরায়েল সফর করার পরই এবার তাকে গাজা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হলো।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন মাস্ক। ইসরায়েলে দুই দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। তারপর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ সম্পর্কে সুরও কিছুটা পাল্টে যায় ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল এই ধনকুবেরের।
গাজায় বোমা ফেললে তা ইসরায়েলের জন্যই খারাপ ফল বয়ে আনতে পারে বলে কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ইলন মাস্ক। তিনি বলেছিলেন, হামাসের একজন সদস্যকে মারার মাধ্যমে তারা কতজন হামাস যোদ্ধাকে সৃষ্টি করছে? গাজায় কারও সন্তানকে যদি খুন করা হয়, তাহলে জন্ম নেবে কয়েকজন হামাস যোদ্ধা।
কিন্তু ইসরায়েল সফরের পর মাস্ক বলেন, হামাসকে লক্ষ্যবস্তু বানানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ওই সময় বেসামরিকদের হতাহতের ব্যাপার এড়িয়ে যান এই ধনকুবের। এ ছাড়া গাজায় নিজ প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার কথাও আগে বলেছিলেন মাস্ক। কিন্তু ইসরায়েল সফরের পর তিনি জানান, ইসরায়েলের অনুমোদন ছাড়া গাজায় ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে না।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে জার্মানিতে প্রায় এক হাজার ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চরম সহিংস ঘটনাও রয়েছে। দেশটির একটি প্রধান জরিপ সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মানিভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানিতে ইহুদিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখে জার্মান সরকারের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন অন অ্যান্টিসেমেটিজম (আরআইএএস) বিভাগটি। আরআইএএসের গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বরের মধ্যে দিনে গড়ে অন্তত ২৯টি ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা ঘটেছে জার্মানিতে।
ইহুদিরা বাস করেন এমন বাসার দেয়ালে বা রাস্তার দেয়ালে বিদ্বেষপূর্ণ গ্রাফিতি আঁকা, এমনকি তাদের মারধর করার মতো ঘটনাও ঘটেছে এই সময়কালে।
২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০২৩ সালে ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনা ৩২০ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
আরআইএএস জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বরের মধ্যে মোট ৯৯৪টি যাচাই হওয়া ঘটনাকে খতিয়ে দেখেছে তারা। এর মধ্যে আছে তিনটি চরম সহিংসতা, ২৯টি হামলা, ৭২টি নির্দিষ্ট সম্পত্তি ধ্বংস, ৩২টি হুমকি দেয়া, ৪টি ইহুদিবিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য চিঠি আকারে গণহারে ছড়ানো, ৮৫৪টি ক্ষতিকর আচরণের অভিযোগ।
৮৫৪টি ক্ষতিকর আচরণের মধ্যে রয়েছে ১৭৭টি ইহুদিবিদ্বেষী জমায়েতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গত মঙ্গলবার ছিল ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পঞ্চম দিন। একদিনে তারা পরস্পরের মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় করেছে। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নেতাদের বৈঠক হয়েছে। মঙ্গলবার কাতারের দোহায় বৈঠকটি হয় বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলেছে, সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস এবং মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানির বৈঠক হয়। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে বর্ধিত যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। মিসরের কর্মকর্তারাও সেখানে অংশ নিয়েছিলেন।
সূত্র বলছে, নারী ও শিশু জিম্মিদের পাশাপাশি হামাস যেন পুরুষ এবং সামরিক সদস্যদেরও মুক্তি দেয়, তা নিশ্চিত করাসহ নতুন ধাপে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। হাতেগোনা কয়েক দিনের যুদ্ধবিরতি না হয়ে টেকসই যুদ্ধবিরতির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকের ফলাফল কী, তা নিশ্চিত করতে পারেনি সূত্রটি।
সম্প্রতি কাতার, মিসর, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস ও ইসরায়েল। প্রাথমিকভাবে ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় চার দিনের যুদ্ধবিরতি, যা গত সোমবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। চার দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগে সোমবার মধ্যস্থতাকারী কাতার ঘোষণা করে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও দুই দিন (মঙ্গল ও বুধবার) বাড়ানো হচ্ছে। সে অনুযায়ী গতকাল বুধবার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত-সংক্রান্ত একটি বৈঠকে অংশ নিতে সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস দোহায় গেছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি।
চলমান যুদ্ধবিরতি আরও পাঁচ দিন বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র ইয়েলন লেভি। যুদ্ধবিরতি ও সংঘাত নিয়ে ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বন্দিবিনিময় অব্যাহত রেখে চলমান যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া আরও পাঁচ দিন বাড়ানো যেতে পারে।’
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র বলেন, ‘হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি দেয়া অব্যাহত রাখে, তাহলে আমরা আরও ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেব। হামাস যখন জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করবে, তখন আমরা তাদের ওপর সামরিক চাপ সৃষ্টি করব।’
যুদ্ধবিরতিতেও থেমে নেই গ্রেপ্তার
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের গাজায় গত শুক্রবার চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যুদ্ধবিরতি আরও দুই দিন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম ৪ দিনে ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। তাদের মধ্যে ১১৭ জন শিশু ও ৩৩ জন নারী।
একই সময়ে হামাস ৬৯ জিম্মিকে মুক্তি দেয়। তাদের মধ্যে ৫১ জন ইসরায়েলি ও ১৮ জন অন্যান্য দেশের নাগরিক।
ইসরায়েলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে বেসরকারি সংগঠন প্যালেস্টাইন প্রিজনার্স সোসাইটি। সংগঠনটির তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতির প্রথম চার দিনে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর থেকে অন্তত ১৩৩ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল।
সোসাইটির মুখপাত্র আমানি সারাহনেহ বলেন, যত দিন ইসরায়েলি দখলদারি থাকবে, তত দিন ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার বন্ধ হবে না। মানুষকে এ বিষয় অবশ্যই বুঝতে হবে। কারণ, এটি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দখলদারদের একটি কেন্দ্রীয় নীতি। এটি ফিলিস্তিনিদের যেকোনো ধরনের প্রতিরোধ আটকানোর একটি কৌশল।
আমানি সারাহনেহ আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তার ইসরায়েল শুধু গত ৭ অক্টোবরের পর থেকেই করছে না, ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি ইসরায়েলের একটি দৈনন্দিন কাজ। যুদ্ধবিরতির প্রথম চার দিনে আরও বেশিসংখ্যক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে তারা ধারণা করেছিলেন।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, হামাসের এই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া দুই শতাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েল থেকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে হামাস।
জবাবে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজাকে অবরুদ্ধ করে নির্বিচারে বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পাশাপাশি তারা গাজায় স্থল অভিযান চালিয়ে আসছিল।
গাজার হামাস সরকারের তথ্যানুযায়ী, অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ১৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোকজন। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার শিশু রয়েছে
অস্ট্রেলিয়ায় আগামী বছর থেকে ই-সিগারেটের আমদানি নিষিদ্ধ করছে দেশটির সরকার। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর: আল-জাজিরার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, শুধু ই-সিগারেট আমদানি নয়, বরং এ-সংক্রান্ত কোনো উপকরণ উৎপাদন এমনকি প্রচারও নিষিদ্ধ করবে অস্ট্রেলীয় সরকার। ই-সিগারেট সেবন বন্ধে ২০২৪ সালে আইনও পাস করবে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
অস্ট্রেলীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দীর্ঘমেয়াদি ধূমপান ছাড়তে ই-সিগারেট সহায়ক হিসেবে প্রথম দিকে গণ্য করা হতো। ধূমপান ছাড়ার জন্য এটি হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। তবে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এমনকি এটি ‘বিনোদনমূলক পণ্য’ হিসাবে বিকশিত হয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্ক বাটলার বলেন, ‘এটি বিনোদনমূলক পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হয়নি। তবে এখন এটিই হয়ে উঠেছে বিনোদন পণ্য। বেশিরভাগ ই-সিগারেটে নিকোটিন থাকে এবং শিশুরা দিন দিন আসক্ত হয়ে উঠছে।’
অস্ট্রেলীয় সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ১৪-১৭ বছর বয়সী প্রতি সাত শিশুর একজন ই-সিগারেটে আসক্ত।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
মালয়েশিয়ায় একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে তিন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। পেনাংয়ের ওই ভবনের নিচে আরও অন্তত নয়জন শ্রমিক চাপা পড়েন বলে দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
সংবাদমাধ্যমটির খবরে আরও জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে নয়টার দিকে ভবন ধসের এ ঘটনা ঘটে। পেনাংয়ের উপ-পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ উসুফ জান মোহাম্মদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত উদ্ধারকারীরা আটকা পড়া ৯ শ্রমিকের মধ্যে পাঁচজনকে খুঁজে পেয়েছেন। ধসের সময় ঘটনাস্থলে ১৮ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন।
মোহাম্মদ উসুফ জানিয়েছেন, প্রথমে প্রায় ১২ মিটার লম্বা এবং প্রায় ১৪ টন ওজনের একটি বিম পড়ে যায়। এরপর আরো ১৪টি বিম ভেঙে পড়ে।
মোহাম্মদ উসুফ বলেন, এখন পর্যন্ত তারা নিহত তিনজনকে শনাক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনাস্থলে ও একজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। গুরুতর আহত আরো দুজনকে চিকিৎসার জন্য পেনাং হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তাদের ধারণা ধসে পড়া কাঠামোর নিচে আরো চারজন এখনো আটকা আছে। এসব শ্রমিকরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।
পেনাং ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগের উপ-পরিচালক জুলফাহমি সুতাজি বলেন, ভবনের কাঠামোর ওজনের কারণে উদ্ধার কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে। ভারী স্থাপনা অপসারণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বড় যন্ত্র প্রয়োজন। অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ অব্যাহত আছে।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তিপেল আরও ৩০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু। পক্ষান্তরে ১২ জন বন্দিকে মুক্ত করে দিয়েছে হামাস।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ১২ জনের মধ্যে ১০ জন ইসরায়েলি রয়েছে যাদের মধ্যে একটি শিশু এবং ৯ জন নারী। এই দফায় মুক্তি পাওয়াদের মধ্যে বাকি ২ জন থাই নাগরিক।
এদিকে ইস্রায়েলের প্রিজন সার্ভিস জানিয়েছে তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লা এবং জেরুজালেমের দুটি কারাগার থেকে ৩০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে দুই পক্ষই আরও বেশি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যার মধ্যে ৪০ শতাংশই শিশু। তাছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা প্ল্যাটফর্মের কর্মকর্তা ও মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোনকে ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত করেছে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্যটি ছাড়া বিস্তারিত আর কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রতি রাশিয়া কঠোর হওয়া শুরু করেছে মূলত ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির যুদ্ধ বাধার পর থেকে। ফেসবুক ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষে অবস্থান নেয়াই এ কঠোরতার মূল কারণ। ২০২২ সালের ফেসবুককে ‘সন্ত্রাসী ও চরমপন্থি সংস্থা’ হিসেবে আখ্যা দেয় রুশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গকে রাশিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও প্রদান করে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ায় বন্ধ রয়েছে ফেসবুক, এটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইনস্টাগ্রাম এবং অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। প্রতিটির বিরুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য বিশ্বের প্রতি একক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে মস্কো। যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এ তিনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতেন রাশিয়ার নাগরিকরা। বিশেষ করে, তরুণ রুশদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল ইনস্টাগ্রাম।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকায় বন্দি জিম্মি মুক্তি ও মানবিক সহায়তা সক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। খবর সিনহুয়ার।
ফোনালাপকালে বাইডেন গত তিন দিনে হামাসের হাতে বন্দি থাকা জিম্মিদের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দুই নেতা হামাসের হাতে বন্দি সকল জিম্মির মুক্তির ক্ষেত্রে সমর্থন অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ ব্যাপারে দুই নেতা সম্মত হয়েছেন যে- কাজটি এখনো শেষ হয়নি এবং তারা এক্ষেত্রে সকল জিম্মির মুক্তির জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন। উভয় নেতা আগামী দিনগুলোতে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখতে সম্মত হয়েছেন।’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুই নেতা গাজায় যুদ্ধ বিরতি এবং মানবিক সহায়তা আরো বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন।