ভারতে অরুণাচল প্রদেশের মান্ডালায় বৃহস্পতিবার সামরিক বাহিনীর একটি চিতা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় দুই পাইলট নিহত হয়েছেন।
ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ড জানায়, মান্ডালার পূর্বে বাংলাজাপ গ্রামের কাছে হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
এনডিটিভি জানায়, হেলিকপ্টারটি বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে পশ্চিম কামেং জেলার সাংগে গ্রাম থেকে আসামের মিসামারি এলাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে।
উড্ডয়নের ১৫ মিনিটের মাথায় এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর সঙ্গে হেলিকপ্টারটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বমডিলার পশ্চিমে মান্ডালা পাহাড়ে সেটি ভেঙে পড়ে।
সৌদি আরবের আকাশে মঙ্গলবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। সে হিসাবে দেশটিতে শাবান মাস পূর্ণ হবে আগামীকাল বুধবার। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে সিয়াম সাধনার মাস রমজান।
সৌদি আরবের সুপ্রিম কোর্টের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ। এদিকে খালিজ টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আকাশেও মঙ্গলবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। দেশটির চাঁদ দেখা কমিটি জানিয়েছে, সৌদি আরবের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতেও বৃহস্পতিবার শুরু হবে রমজান মাস।
এদিকে বাংলাদেশে রমজান মাসের চাঁদ দেখতে বুধবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। এদিন চাঁদ দেখা গেলে বাংলাদেশেও বৃহস্পতিবার রমজান মাস শুরু হবে। তবে সাধারণত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পরদিন বাংলাদেশের আকাশে চান্দ্র মাসের চাঁদ দেখা যায়। সে হিসাবে বাংলাদেশে এ বছর রমজান মাস শুরু হতে পারে শুক্রবার।
মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, কুয়েত, ওমান, মিসর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরেও বৃহস্পতিবার থেকে রমজান মাস শুরু হবে।
খালিজ টাইমসের খবর বলছে, চার বছরের মধ্যে এ বছরই প্রথম করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধমুক্ত রমজান মাস পালন করতে পারবেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিকরা। ফলে তারা বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে সেহেরি ও ইফতার আয়োজন করতে পারবেন। মসজিদ এবং মার্কেটগুলোতেও কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না।
চরম আর্থিক সংকটে থাকা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এ কথা জানিয়েছেন। আইএমএফের বোর্ডও এই ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এই ঋণ-সহায়তা পেয়ে শ্রীলঙ্কা একটু আশার আলো দেখতে পেল। অবশ্য এতে তাদের ঋণের বোঝাও বাড়ল।
ডয়চে ভেলে জানায়, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আইএমএফ ২ দশমিক ৯০০ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তার (বেলআউট) অনুমোদন দিয়েছে। তিনি আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সহযোগীদের এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে দীর্ঘ মেয়াদে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চান।
শর্তসাপেক্ষে দেয়া এই ঋণ-সহায়তার বিষয়ে আইএমএফ জানিয়েছে, তারা অবিলম্বে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ কোটি ডলার দেবে। এই অর্থ দিয়ে প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কা তাদের সংকট সামলাতে পারবে। কিন্তু সেই সঙ্গে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনটি বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এই তিন শর্তের আওতায় শ্রীলঙ্কাকে কর-ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হবে এবং দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
শ্রীলঙ্কা গত এপ্রিলে দেউলিয়া হয়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি ৭০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে বেলআউট ঋণ নেয়ার আবেদন করে। এর পূর্বশর্ত হিসেবে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। শ্রীলঙ্কার জ্বালানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই ঘোষণা দেন।
দেশটিতে গত বছরও ৭৫ শতাংশ বেড়েছিল বিদ্যুতের দাম। ফলে ইতোমধ্যে গত বছরের তুলনায় জানুয়ারিতে ৫৪ শতাংশ বেশি মূল্যস্ফীতি ও ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত আয়করের বোঝায় চরম দুর্দশায় আছেন দেশটির জনগণ। বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। সর্বশেষ এই উদ্যোগে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মত দেন।
বিরোধী পক্ষ ও জনগণের অসন্তোষের ভিত্তিতে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও তার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তবে সোমবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে মাখোঁর নেতৃত্বাধীন সরকার অল্পের জন্য পার পেয়েছে।
জনরোষ সৃষ্টিকারী পেনশন সংস্কার আইনকে কেন্দ্র করে এ অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হলো। প্রস্তাবটি পাস হলে তা মাখোঁর সরকারকে ডুবিয়ে দিত আর পেনশন আইনটি বাতিল হতো। সেটা না হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি অনুভব করছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
সোমবারের ত্রিপক্ষীয় এই অনাস্থা ভোটে প্রস্তাবের পক্ষে ধারণার চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। পার্লামেন্টের ২৭৮ জন সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যা প্রস্তাবটি পাস হতে প্রয়োজনীয় ২৮৭ ভোট থেকে যা মাত্র ৯টি কম। নতুন পেনশন আইনে অবসরের বয়সসীমা ২ বছর বাড়িয়ে ৬৪ করা হয়েছে।
অনাস্থা ভোটে মাখোঁর সরকারের উতরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ পুলিশ অন্তত ২০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্যারিসের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ধর্মঘটের কারণে কয়েক দিন ধরে জমে থাকা আবর্জনার স্তূপে সোমবার প্রতিবাদকারীদের লাগানো আগুন নেভাতে ছুটে যান দমকল বাহিনীর কর্মীরা। বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। কয়েকটি স্থানে বিশেষ মোটরবাইক ব্যবহার করা পুলিশ কর্মকর্তারাও বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হন।
অনাস্থা ভোটের পর পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা তাদের পরিকল্পনা পাল্টাবেন বলে জানিয়েছেন। আর শ্রমিক সংগঠনগুলো আগামী বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে প্রতিবাদে নামার প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ফরাসি সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদ বলবৎ করে পার্লামেন্টে ভোটাভুটিকে এড়িয়ে পেনশন বিল পাস করিয়ে নেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। বিরোধীরা বলছেন, তার এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে তার সংস্কারবাদী কর্মসূচিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তার নেতৃত্বকে দুর্বল করে ফেলেছে। মাখোঁর ওই সিদ্ধান্তের কারণেই বিরোধীরা তার সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন।
রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বেইজিং। মস্কো সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন। তিনি রাশিয়া ও চীনকে ‘শক্তিধর দুই প্রতিবেশী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। খবর এএফপির
চিন পিং তার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের বিষয়টি দুই নেতার এ বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পায়। চিন পিং বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে চলতি বছরেই চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এতে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলোর বিপরীতে চীন ও রাশিয়ার একটি পাল্টা জোট গঠনের ইঙ্গিত রয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, চীনের ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব নিয়ে দুই নেতার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা মতবিনিময় করেছেন। অনানুষ্ঠানিক বৈঠকেও পুতিন ও চিন পিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেছেন।
বিবিসি জানায়, চীনের ওই শান্তি প্রস্তাবে কিছু সাধারণ নীতিমালার উল্লেখ থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার ব্যাপারে কোনো বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আগের চেয়ে জোরদার হয়েছে। চীন ও রাশিয়া পরস্পরের আরও কাছাকাছি আসায় তারা শেষ অবধি কতদূর যেতে পারে, সেই ভাবনায় পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ বেড়েছে।
রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় সি চিন পিং বলেছেন, তার সরকার বেইজিং ও মস্কোর মধ্যকার সামগ্রিক অংশীদারির ওপর গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত রাখবে।
মস্কোয় চিন পিংয়ের এই সফরকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। কারণ, পুতিন ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে নানা রকমের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পুতিন বেআইনিভাবে ইউক্রেনীয় শিশুদের ফেরত পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছে।
মস্কোয় পৌঁছানোর পর গত সোমবার চিন পিং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাড়ে চার ঘণ্টার অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেন। তারা পরস্পরকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন। বৈঠকের পর দুই নেতাকে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায়।
বেইজিং যে ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে, তার প্রশংসা করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য দরজা খুলে রেখেছেন। বেইজিংয়ের প্রস্তাবে সংলাপের আহ্বান এবং সব দেশের ভৌগোলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতি সম্মান জানানোর কথা বলা হয়েছে।
দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও চিন পিংয়ের এবারের সফরে আলোচনা হতে পারে। রাশিয়া সম্প্রতি চীনে জ্বালানি রপ্তানি বাড়িয়েছে। ইউরোপীয় বাজারের প্রায় পুরোটাই মস্কোর জন্য বন্ধ রয়েছে।
দুই নেতার ওই বৈঠকের আগে রুশ গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম বলেছে, তারা পাওয়ার অব সাইবেরিয়া পাইপলাইনের মাধ্যমে চীনে গ্যাসের সরবরাহ গত সোমবার রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে।
চিন পিং মস্কোয় পা রাখার আগেই প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিউপোল সফর করে এসেছেন। শহরটি রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসার পর এটিই ছিল সেখানে পুতিনের প্রথম সফর।
ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার অভিপ্রায় জানিয়ে চীন নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মস্কোকে সহায়তার উদ্দেশ্যে বেইজিং এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, সি চিন পিংয়ের মস্কো সফর এটাই ইঙ্গিত করে যে ইউক্রেনের প্রতি সংঘটিত বর্বরতার জন্য রুশ প্রেসিডেন্টের জবাবদিহি আদায়ের ব্যাপারে চীনের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। আর কোনো ধরনের নিন্দা জানানোর পরিবর্তে এ ধরনের মারাত্মক অপরাধ অব্যাহত রাখতে রাশিয়াকে বেইজিং একধরনের কূটনৈতিক সুরক্ষা দেবে।
চীনের শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে চীন এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দেয়নি।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস সি চিন পিংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলেন।
‘মিডিয়া মোগল’ হিসেবে পরিচিত মার্কিন ধনকুবের রুপার্ট মারডক ৯২ বছর বয়সে পঞ্চমবারের মতো বিয়ে করতে যাচ্ছেন।
এবার তার স্ত্রী হতে যাচ্ছেন ৬৬ বছর বয়সী অ্যান লেসলি স্মিথ, যিনি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর পুলিশ চ্যাপলেইন (পরামর্শক) ছিলেন। ১৪ বছর আগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর একাই ছিলেন লেসলি।
মারডকের সঙ্গে তার চতুর্থ স্ত্রী জেরি হলের বিচ্ছেদ হয় গত বছর। অ্যান লেসলি স্মিথের সঙ্গে মারডকের প্রথম দেখা হয় গত সেপ্টেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ায় মারডকের আঙুরবাগানে এক অনুষ্ঠানে। ইতিমধ্যে মারডক-লেসলি তাদের আনুষ্ঠানিক বাগদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
নিজের অন্যতম প্রকাশনা নিউইয়র্ক পোস্টকে রুপার্ট মারডক বলেন, ‘প্রেমে পড়তে আমার ভয়ই হচ্ছিল। তবে আমি জানি, এটাই আমার শেষ প্রেম। সেটা হলেই ভালো, আমি খুব খুশি। জীবনের বাকি সময়টা আমরা একসঙ্গেই কাটাতে চাই।’ বিবিসি
গত নভেম্বরে জেল থেকে ছাড়া পান ববি বসটিক। ২৪১ বছরের সাজা হয়েছিল তার। ২৭ বছর কারাভোগের পর প্যারোলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এই ২৭ বছরে দুনিয়া বদলে গেছে, বদননি কেবল ববি। সবকিছুই কেমন বেমানান ঠেকে তার কাছে।
কেউ তারবিহীন ইয়ারফোন ব্যবহার করলে ববি ভাবেন, লোকটা নিজের সঙ্গে কথা বলছে কেন? ১৯৯৫-এর ডিসেম্বরের পর বাইরের দুনিয়া থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কেউ স্মার্ট স্পিকারের সঙ্গে কথা বললেও অবাক হন, ভেন্ডিং মেশিন দেখে অভিভূত হয়ে যান। সবচেয়ে অবাক করে মানুষ।
৪৪ বছর বয়সী ববি বিবিসিকে বলেন, ‘জেলের তুলনায় তারা এত মিশুক! আপনি মুদিখানায় গেলে জিজ্ঞেস করবে, “স্যার, কীভাবে সাহায্য করব?” অথচ জেলে কতগুলো ঘৃণাভরা মুখ আর হয়রানি ছাড়া কিছু নেই।’
ববির ভাষায়, ‘বাইরে কেবলই ভালো জিনিস। মানুষ হাসছে। শিশুরা আপনাকে দেখে হাত নাড়ছে। যেন এটাই জীবন। এটাই স্বাভাবিক। সবকিছু এমনই হওয়া উচিত।’
জেলে প্রায় ১০ হাজার রাত কাটিয়েছেন ববি। মুক্তি পান ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর। নিজের দখলে থাকা সবকিছু অন্য বন্দীদের জন্য রেখে আসেন। সঙ্গে নেন কেবল নিজের টাইপরাইটার। কত স্মৃতি, কত গল্প—সে কী আর ফেলে আসা যায়?
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস কারাগারে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া বন্দিজীবন শেষ হয় আলিঙ্গন দিয়ে।
মাদক গ্রহণের পর ১৬ বছরের ববি আর তার বন্ধু ডোনাল্ড হাটসন সশস্ত্র ডাকাতিতে নেমেছিলেন। অসহায়দের বড়দিনের উপহার দিচ্ছিল একদল মানুষ। তাদের ওপর চড়াও হয় তারা। গুলি চালায়। ভাগ্য ভালো যে তাতে হতাহত হয়নি কেউ। বন্দুকের মুখে এক নারীর গাড়িও ছিনিয়ে নিয়েছিল দুই বন্ধু।
ধরা পড়ার পর ববিকে নিজের দোষ স্বীকারের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ৩০ বছরের কারাভোগ করতে হবে, সঙ্গে প্যারোলে মুক্তির সুযোগ থাকবে। সে সুযোগ নেননি ববি। এদিকে দোষীও সাব্যস্ত হন। ১৭টি অপরাধের সাজা হিসেবে মোট ২৪১ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক এভলিন বেকার।
হাটসন দোষ স্বীকার করেছিলেন, তার ৩০ বছরের সাজা হয়।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের নতুন বিধানে বলা হয়, হত্যা-ভিন্ন অন্য অপরাধের সাজা হিসেবে কিশোরদের প্যারোলহীন যাবজ্জীবন সাজা দেয়া উচিত না। তবে মিসৌরি অঙ্গরাজ্য ববিকে ছাড়তে রাজী হয়নি। যুক্তি দেখানো হয়, ববির যাবজ্জীবন সাজা হয়নি, বরং ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের ভিন্ন ভিন্ন সাজা হয়েছে।
ববির মুক্তির আবেদন নাকচ করে দেয়া হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। সিংহভাগ বন্দী তাতে আশা ছেড়ে দিলেও, ববি ছাড়েননি। বারবার ফিরে গেছেন নিজের টাইপরাইটারের কাছে। একের পর এক আবেদন করেছেন।
অনেক রাত আর আবেদনের পর ডাক পড়ে ববির। ২০২১ সালের নভেম্বরে শুনানির দিন ধার্য হয়। বন্দীরা সাহায্যের জন্য একজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে রাখতে পারেন। ববি জানতেন, কার কাছে সাহায্য চাইতে হবে—যিনি তাকে ২৪১ বছরের সাজা দিয়েছেন, সেই বিচারক বেকার।
১৯৮৩ সালে মিসৌরিতে প্রথম নারী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান বেকার। অবসরের যান ২০০৮ সালের দিকে। এর বছর দুয়েক পর ববির সাজা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তিনি। সে সময় কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের কর্মপদ্ধতির পার্থক্য জানতে শুরু করেন তিনি। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে কেবল ববির দণ্ডাদেশ নিয়েই অনুশোচনা আছে বেকারের।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি নিবন্ধ লেখেন বেকার। ববির সাজাকে অন্যায্য উল্লেখ করেন তাতে। ববির শুনানিতে বেকার যুক্তি দেখান, ‘ববি ১৬ বছরের কিশোর ছিল, যাকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করেছি আমি। সেটা ঠিক না। আমি ববি ও তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। ববিকে কিশোর থেকে বিবেচক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে দেখেছি।’
বেকারের সঙ্গে ১৯৯৫ সালে ববির হামলার শিকার একজনও এগিয়ে আসেন। তাদের সাহায্যে ববির প্যারোলের শুনানি ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়।
শুনানির ঠিক এক বছর পর নভেম্বরের রোদ ঝলমলে এক সকালে মুক্ত ববিকে আলিঙ্গন করেন বেকার। বলেন, ‘আমি কাঁদতে শুরু করি। ববি এখন মুক্ত।’
২৫ বছর আগে বিচারক এভলিন বেকার ববিকে বলেছিলেন, জেলেই তার মৃত্যু হবে। অথচ নীল স্যুট গায়ে চড়িয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে এলেন তিনি।
জেল ছেড়ে সেন্ট লুইসের দক্ষিণাংশে বোনের বাড়িতে ওঠেন ববি। শহরের এই অঞ্চলেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গত কয়েক মাসে ৪০০-এর বেশি মানুষ তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।
ববি ও তার বোন মিলে একটি দাতব্য সংস্থা চালান এখন। ‘ডিয়ার মামা’ স্বল্প আয়ের মানুষদের খাদ্য, খেলনা এবং অন্যান্য সহায়তা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি শহরের কিশোর বন্দীশালায় লেখালেখি নিয়ে কর্মশালা পরিচালনা করেন প্রতি বৃহস্পতিবার। সেটাও স্বেচ্ছাসেবা।
ববি নিজের বই বিক্রি থেকে কিছু অর্থ পান। জেলে বসে নিজের টাইপরাইটারে সাতটি বই লিখেছেন, আমাজনে সেগুলো বিক্রি হয়। মাঝেমধ্যে নিজের গল্পও শোনান। সে থেকেও কিছু অর্থ আসে। এতেই তার এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া আর অন্যান্য খরচ চলে যায়। তবে পূর্ণকালীন চাকরি খুঁজছেন তিনি।
দ্বিতীয় জীবনের সুযোগ পেলেন ববি। সে জন্য তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তার বন্ধু ডোনাল্ড হাটসন সে সুযোগ পাননি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জেলখানায় মৃত্যু হয় হাটসনের। আর নয়টা মাস বেঁচে থাকলেই প্যারোলে মুক্তির আবেদনের সুযোগ অন্তত পেত।
কুয়েতের রাষ্ট্রীয় তেল উৎপাদনকারী সংস্থা কুয়েত অয়েল কোম্পানির পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে তেল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ফলে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে। খবর গাল্ফ টুডে ও আরব নিউজের।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির মুখপাত্র কুসাই আল-আমের জানিয়েছেন, পাইপলাইন ছিদ্র হওয়ার ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তেল উৎপাদনের কাজেও কোনো ব্যঘাত ঘটেনি।
পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে আশপাশের এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে। কুসাই আল-আমের বলেছেন, ঘটনাস্থলে এখনো কোনো বিষাক্ত ধোঁয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
আল-আমের আরও বলেন, কোথায় এবং কীভাবে এই ছিদ্র হওয়ার ঘটনা ঘটল, সেটি নিয়ে আমাদের লোকজন কাজ করছেন। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি থাকবে।
কুয়েত অয়েল কোম্পানির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একটি স্থল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে, সমুদ্র নয় আবার আবাসিক এলাকাও নয়।’
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করলেও নির্দিষ্ট করে ঘটনাস্থলের নামটি বলেননি কুসাই আল-আমের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি অনাবাদি জমিতে পাইপলাইন থেকে তেলে উছলে পড়ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে কুয়েত অন্যতম। তবে দেশটিতে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০১৬ ও ২০ সালেও কুয়েত তেল কোম্পানি পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটানোর কথা জানিয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৭ সালের আগস্টে কুয়েতে তেল ছড়িয়ে পড়ার দুটি ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে একটি ছিল রাজধানীর উপকূল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে।
গাল্ফ টুডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপসাগরীয় দেশটি প্রতিদিন ২৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করছে। অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) অন্যতম সদস্য দেশটির সরকারের ৯০ শতাংশ রাজস্ব আসে এই তেল থেকে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা সোমবার দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দিয়েছেন। আগামী মে মাসে সেখানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সর্বশেষ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সাবেক অভ্যুত্থানের নেতা চান-ও-চা দেশটিতে সেনাসমর্থিত শাসনের মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন।
এএফপি জানায়, ২০১৪ সালে এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন সাবেক সেনাপ্রধান প্রায়ুত চান-ও-চা। তার জনপ্রিয়তায় ঘাটতি রয়েছে। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। থাইল্যান্ডে সিনাওয়াত্রা পরিবারের জনপ্রিয়তা এখনো রয়েছে, যদিও থাকসিন এক দশকের বেশি সময় ধরে নির্বাসনে রয়েছেন। থাকসিনের অনুসারীরা বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল ফেউ থাইয়ের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন। জনপ্রিয়তা থাকলেও ২০১৭ সালে জান্তা প্রণীত সংবিধানের আওতায় দলটির ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বিবিসি জানায়, আগামী মে মাসের শুরুর দিকে থাইল্যান্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চার রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ছে ফেউ থাই পার্টি। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা।
ধনকুবের থাকসিন ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান। থাইল্যান্ডে গত কয়েক মাস ধরে পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা যায়, ৩৬ বছর বয়সী পেতংতার্ন এগিয়ে রয়েছেন। যদিও থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, দেশটির সংসদ বিলোপের ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক ডজন দল তাদের প্রচার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। রাজধানী ব্যাংককের ফুটপাতগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
রয়টার্স জানায়, সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনৈতিক দল ফেউ থাইয়ের শক্তিশালী ঘাঁটি হচ্ছে গ্রামীণ এলাকা। সেখানে পেতংতার্ন ক্লান্তিহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন, থাকসিনও ইংলাকের মতো অভূতপূর্ব জনসমর্থন পাবেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুই দিনের সফরে সোমবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় গেছেন। সেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মঙ্গলবার চীনা নেতার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কথা রয়েছে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অভিযান শুরুর পর এটিই চিন পিংয়ের প্রথম রাশিয়া সফর। বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তার এই সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার তিন দিন পর চিন পিং মস্কোয় গেলেন। বেইজিং তার এই সফরকে ‘বন্ধুত্ব ও শান্তির জন্য’ বলে উল্লেখ করেছে। আর রাশিয়া বলেছে, দুই নেতা গভীর অংশীদারি এবং কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের অবসান টানতে গত মাসে বেইজিং ১২ দফা শান্তিপ্রস্তাব দিয়েছে। তবে ইউক্রেনের সমর্থক পশ্চিমা দেশগুলো বিষয়টিকে খুব আশাব্যঞ্জক মনে করছে না। কারণ, তারা বেইজিংকে রাশিয়ার মিত্র হিসেবে গণ্য করে।
পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, রাশিয়াকে এই যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র দিচ্ছে চীন। তবে বেইজিং এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা এ যুদ্ধে কোনো অস্ত্র দেয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বাড়াতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে চীন। এরই অংশ হিসেবে সি মস্কো গিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়া সফরে ইউক্রেনের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে বেইজিংয়ের দেয়া নির্ধারিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। সি চিন পিংয়ের সফরের আগে চীনের সংবাদপত্রের জন্য লেখা এক নিবন্ধে ভ্লাদিমির পুতিন মন্তব্য করেছেন, মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের তুলনায় সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। তিনি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠক নিয়ে অনেক আশাবাদী।
এদিকে রাশিয়ার গণমাধ্যমে সি চিন পিংয়ের লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতে চীনের নেতা বলেছেন, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং শান্তির লক্ষ্য নিয়ে তিনি এবার রাশিয়া সফর করছেন। বর্তমান বিশ্ব শতাব্দীকাল ধরে একাধিক অদৃশ্য বড় পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে। এ সময় শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা এবং অভিন্ন কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা অপ্রতিরোধ্য, বিশ্বের বহু মেরুকরণ, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতান্ত্রিকায়নের ধারাও অপরিবর্তনীয় রয়েছে। একই সময়ে ঐতিহ্যগত এবং অপ্রথাগত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আর আধিপত্য এবং হুমকি-ধমকি ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে। বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার দীর্ঘ এবং কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট দূর করার জন্য একটি সহযোগিতামূলক সমাধানের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।
সিএনএন জানায়, ইউক্রেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো চিন পিংয়ের রাশিয়া সফর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে মস্কো-বেইজিং মৈত্রী আরও দৃঢ় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনা নেতার মস্কো সফরের ঠিক দুই দিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন ইউক্রেনীয় শহর মারিউপোলে আকস্মিক পরিদর্শনে যান। গত মে মাস থেকে রাশিয়া মারিউপোল দখল করে রেখেছে। চলমান যুদ্ধের সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী লড়াইগুলো সেখানে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে সৌদি আরব। সৌদি বাদশাহ সালমান এ আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন বলে তেহরান জানিয়েছে। তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য মেলেনি। খবর বিবিসির।
দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্ক চলছিল। তবে গত সপ্তাহে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরান পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে একটি সমঝোতায় এসেছে। দুই দেশের সম্পর্কের এই ইতিবাচক পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক চিত্র বদলে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
ইরানি প্রেসিডেন্টকে সৌদি আরবে সফরের জন্য এই আমন্ত্রণের কথা একটি টুইট করে জানিয়েছেন ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশিদি। তিনি আরও লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট রাইসি এই আমন্ত্রণকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে বলেছেন, সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করার জন্য ইরান প্রস্তুত রয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিন পৃথক এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই দেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে একমত হয়েছে। এ জন্য তিনটি সম্ভাব্য স্থানের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে সম্ভাব্য স্থান বা কবে নাগাদ ওই বৈঠক হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সম্পাদক সেবাস্তিয়ান উশার বলছেন, চীনের মধ্যস্থতায় কয়েকদিন ধরে আলোচনার পর অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নয়ন বড় ধরনের একটি পরিবর্তনের পথ সুগম করে দিয়েছে। দুই দেশই ঘোষণা করেছে যে, তারা আগামী দুই মাসের মধ্যে পারস্পরিক দূতাবাস খুলবে এবং বাণিজ্য ও নিরাপত্তার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।
ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্কের এই উন্নতিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ অনেকেই সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে। এর আগে তাদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছিল।
তেহরানে সৌদি দূতাবাসে ২০১৬ সালে হামলার পর সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে সৌদি আরবে অভিযুক্ত প্রধান সারির শিয়া মুসলিম ইমাম শেইখ নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
এর প্রতিবাদে তেহরানে ২০১৬ সালে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষোভকারীরা হামলা করেছিল। ওই ঘটনার পরে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিল সৌদি আরব। এরপর থেকেই সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরব এবং শিয়া অধ্যুষিত ইরানের মধ্যে প্রায়ই চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে দুই দেশ বহু বছর ধরে একে অপরকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। সিরিয়া এবং ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক যুদ্ধের ব্যাপারে তারা বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিন আরও বলেছেন, ইরান আশা করছে যে, বাহরাইনের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গেও তাদের সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে ইরান আশা প্রকাশ করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এমনটা লেখেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পর্ন তারকা স্টর্মি ডেনিয়েলসকে অর্থ প্রদান সংক্রান্ত এক তদন্তকে গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প যদি সত্যিই গ্রেপ্তার হন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তার বিরুদ্ধেই প্রথম অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হবে।
ট্রাম্পের দাবির সত্যতা জানা যাবে কাল। আপাতত এই মামলা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করা যাক।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
২০১৬ সালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পর্ন তারকা স্টর্মি ডেনিয়েলস। তার দাবি, ২০০৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল ডেনিয়েলসের। সেটার প্রমাণ বিক্রির প্রস্তাব দেন তিনি।
ট্রাম্পের কর্মীরা ঘটনাটি জানার পর তার আইনজীবী মাইকেল কোহেন মুখ বন্ধ রাখার জন্য ডেনিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। এটা আইনবিরুদ্ধ নয়। তবে কোহেনকে সে অর্থ পরিশোধের সময় ট্রাম্প সেটাকে আইনজীবীর ফি হিসেবে উল্লেখ করেন। আর ব্যবসায়িক তথ্যের ভুল উপস্থাপন নিউ ইয়র্কে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য।
একদিক থেকে এতে নির্বাচনী নিয়ম ভঙ্গও হয়েছে বলা যায়। কারণ ডেনিয়েলসের সঙ্গে লেনদেন গোপন করার অর্থ হলো ট্রাম্প সে সম্পর্কের কথা ভোটারদের জানতে দিতে চান না। আর অপরাধ গোপন রাখতে ভুল তথ্যের উপস্থাপন আরও গুরুতর অভিযোগ।
মামলাটি বেশ জটিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের নজির খুব বেশি নেই। তা ছাড়া রাজনীতিবিদদের নির্বাচনী প্রচারণার অর্থায়ন এবং ব্যক্তিগত খরচের মধ্যে সীমারেখা টানা নিয়ে করা মামলার বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে।
সত্যিই কি অভিযোগ গঠন করা হবে?
অভিযোগ গঠন করা হবে কি না তা নির্ভর করছে নিউ ইয়র্ক সিটি ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের ওপর। অভিযোগ গঠনের মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য তিনিই গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন। কখন অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে, আদৌ হবে কি না, তা কেবল তিনিই বলতে পারেন।
গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেছেন, গ্র্যান্ড জুরির সামনে নিজের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ দেয়া হয় ট্রাম্পকে। এ থেকে ধারণা করা যায়, তদন্ত শেষ পর্যায়ে।
ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলে কী হবে?
অভিযুক্ত হলে ট্রাম্পকে সাধারণ নিয়ম মেনেই গ্রেপ্তার করা হবে। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোর বাসভবন থেকে নিউ ইয়র্ক সিটির আদালতে নেয়া হবে তাকে। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় আগে ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয় ও ট্রাম্পের আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা হওয়াই বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ ট্রাম্প নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার অনুসারী আছে। ঘটনা কোনদিকে মোড় নেবে, তার ঠিক নেই। আবার ট্রাম্পের নিরাপত্তাও এখানে বিবেচ্য।
অভিযোগ গঠনের পর বিচারক নির্ধারণ করা হবে। এরপর শুনানির সময় ধার্য, ভ্রমণে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জামিন আবেদনের মতো বিষয়গুলোও আসবে, যা সাধারণ নিয়ম মেনেই হবে।
ব্যবসায়িক তথ্যের ভুল উপস্থাপনের অভিযোগে সচরাচর জরিমানা করা হয়। আর অপরাধ গোপন রাখতে ভুল তথ্যের উপস্থাপনের ক্ষেত্রে চার বছরের জেল হতে পারে। তবে জেলের আশঙ্কা দেখছেন না আইন বিশেষজ্ঞরা।
ট্রাম্পের জন্য কি প্রতিবাদ হবে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা প্রকাশের পর ট্রাম্প তার সমর্থকদের প্রতিবাদ সমাবেশের আহ্বান জানান। ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা আর এমনটা হতে দিতে পারি না। আমরা চুপচাপ বসে দেখতে থাকলে তারা এই জাতি ধ্বংস করে দেবে।’
২০২১ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গার আগেও অনেকটা একই সুরে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। এবারও সহিংসতার ঝুঁকি উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
রোববারে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফাঁস হওয়া চিঠি থেকে জানা যায়, আলভিন ব্র্যাগ এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক পুলিশ এবং আদালতের নিরাপত্তাদলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে বড় কোনো সহিংস আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত হলে ট্রাম্প কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?
অভিযোগ গঠন কিংবা দোষী সাব্যস্ত হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন। আর যত যা-ই হোক, নির্বাচন লড়ার সব ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে গ্রেপ্তার হলে নির্বাচনী প্রচারণায় তার প্রভাব তো পড়বেই।
সূত্র: বিবিসি
সুখী দেশগুলোর তালিকায় ২০-এর মধ্যে পর্যন্ত নেই এশিয়ার কোনো দেশ। এ মহাদেশের দেশগুলো কি তবে দিন দিন দুখী দেশগুলোর তালিকায় চলে যাচ্ছে? ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৩-এর তালিকা যেন সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোট ১৩৭টি দেশের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সুখী দেশের তালিকা করার ক্ষেত্রে মানুষের সুখের নিজস্ব মূল্যায়ন, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শূন্য থেকে ১০ সূচকে নম্বর পরিমাপ করা হয়। স্বাস্থ্যকর গড় আয়ু, মাথাপিছু জিডিপি, দুর্নীতির প্রবণতা, সামাজিক সহায়তা, উদারতাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এখানে সুখী দেশের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাবকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হলো ফিনল্যান্ড। টানা ষষ্ঠ বারের মতো দেশটি সুখী দেশের তালিকায় প্রথম অবস্থানে আছে। দ্বিতীয় হয়েছে ডেনমার্ক এবং তৃতীয় আইসল্যান্ড। এ ছাড়া নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ডও রয়েছে কাছাকাছি অবস্থানেই।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালের অবস্থান ৭৮। পাকিস্তান ১০৮, শ্রীলঙ্কা ১১২, ভারত ১২৬তম অবস্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম। এর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৪। অর্থাৎ আগের চেয়ে দেশে সুখী মানুষের সংখ্যা কমেছে।
অন্যদিকে সুখী দেশের তালিকায় এবার সবচেয়ে নিচে রয়েছে আফগানিস্তানের নাম। আগের বছরও এই তালিকায় সবার নিচে ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। আর যুদ্ধরত রাশিয়া এবং ইউক্রেন যথাক্রমে ৭০ ও ৯২তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন জন হেলিওয়েল। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাঙ্কুভার স্কুল অব ইকোনমিকসের ইমেরিটাস অধ্যাপক তিনি। সিএনএনকে হেলিওয়েল বলেন, ‘সমাজের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের উচিত, মানুষের কল্যাণে সে কি কাজ করছে, বা আদৌ কোনো কাজ করছে কি না, তা নিয়ে চিন্তা করা। এভাবে কোনো রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যদি অন্যের কল্যাণের কথা ভেবে কাজ করে, তাহলেই দেশটি সুখী হতে পারবে।’
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্কের একটি প্রকাশনা হলো এই প্রতিবেদনটি। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলো খুঁজে বের করার পাশাপাশি কেন এই দেশগুলো সুখী, তাও দেখানোর চেষ্টা করা হয়।
সুখী দেশের তালিকায় সামনে এগিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি গতবারের ৯ম অবস্থান থেকে এবার ৪র্থ স্থানে এসেছে। সুখী দেশের তালিকায় নেদারল্যান্ডস ৫ম, সুইজারল্যান্ড ৮ম, লুক্সেমবার্গ ৯ম এবং নিউজিল্যান্ড রয়েছে ১০ম অবস্থানে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যথাক্রমে দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, চতুর্দশ ও পঞ্চদশ।
তবে সুখের পারদ চড়চড় করে উঠছে লিথুয়ানিয়ার ক্ষেত্রে। গত ছয়টি বছর ধরে স্থির কিন্তু সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে এর সুখের প্যারামিটারগুলো। তাই তো ২০১৭ সালে ৫২তম অবস্থানে থাকলেও এবারে তালিকার ২০তম স্থানটি দখল করে নিয়েছে লিথুয়ানিয়া।
হেলিওয়ে বলেন, ‘সুখের ক্ষেত্রে আসলে কে কত বেতনের চাকরি করছে, তা মুখ্য নয়। বরং কে, কাকে, কতখানি তাৎপর্যপূর্ণভাবে সহযোগিতা করছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আর এভাবে পরোপকারের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেও সুখ খুঁজে পান। ফলে সুখ আর নিরাপত্তার অনুভূতি, অনুরণন ছড়িয়ে পড়ে পুরো সমাজে।’
টানা তৃতীয় দিনের মতো ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অন্তত ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। বিগত বছরগুলোতে এটিই সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা। পলাতক এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে ধরতেই এ পন্থা বেছে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার অমৃতপাল সিং নামে ওই নেতাকে আটকের ঘোষণা দেয় পাঞ্জাব সরকার। শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য আলাদা সার্বভৌম রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়ে আলোচনায় এসেছেন এই তরুণ। তাকে ধরার অভিযান নির্বিঘ্ন করতে প্রথমে ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
পরে ‘কোনো সহিংসতার প্ররোচনা এবং শান্তি-শৃঙ্খলায় বাধা সৃষ্টির হুমকি থাকলে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে কর্তৃপক্ষ’, এমন আইনের অধীনে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পাঞ্জাব সরকার। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানো বন্ধ করতেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
ভিডিওতে ধারণ করা বিভিন্ন দৃশ্যে এবং স্থানীয় টেলিভিশনে দেখা গেছে, অমৃতপাল সিংয়ের সমর্থনে শত শত লোক তলোয়ার ও লাঠি হাতে পাঞ্জাবের রাস্তায় হাঁটছেন। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনো পলাতক রয়েছেন অমৃতলাল।
কয়েক দশক ধরে কিছু শিখ দাবি করে আসছেন যে শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য পাঞ্জাব রাজ্যে খালিস্তান নামে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরি করা হোক। বিভিন্ন সময় এই আন্দোলনকারী ও ভারত সরকারের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষও দেখা গেছে। প্রাণও গেছে অনেকের।
শিখদের পৃথক খালিস্তান রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন করে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আলোচনায় উঠে এসেছেন ৩০ বছর বয়সী অমৃতপাল সিং। তার জন্ম ভারতে হলেও বেড়ে উঠেছেন দুবাইয়ে। কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি রয়েছে তার। দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে ভারত ফিরেই দ্রুত শিখদের একাংশের আস্থা অর্জন করে হন ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’ নামের সংগঠনের প্রধান।
গত মাসে অমৃতপাল ও তার সমর্থকরা আগ্নেয়াস্ত্র, তলোয়ার নিয়ে পাঞ্জাবে একটি থানায় হামলা চালান। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এক সহযোগীকে ছাড়িয়ে আনতে তারা থানা আক্রমণ করে বসেন। এর আগেও প্রকাশ্যে খালিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা বলে অমৃতপাল বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছেন। এমনকি তিনি পাঞ্জাবে শিখ শাসন প্রতিষ্ঠায় তীব্র আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছেন।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং বিদেশভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে অমৃতপাল সিং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।