রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
২৭ আশ্বিন ১৪৩২

কুয়েতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

ঘটনাস্থলে কাজ করছেন সংস্থাটির কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
২১ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৯
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২১ মার্চ, ২০২৩ ১১:৫৫

কুয়েতের রাষ্ট্রীয় তেল উৎপাদনকারী সংস্থা কুয়েত অয়েল কোম্পানির পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে তেল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ফলে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে। খবর গাল্ফ টুডে ও আরব নিউজের।

রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির মুখপাত্র কুসাই আল-আমের জানিয়েছেন, পাইপলাইন ছিদ্র হওয়ার ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তেল উৎপাদনের কাজেও কোনো ব্যঘাত ঘটেনি।

পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে আশপাশের এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়েছে। কুসাই আল-আমের বলেছেন, ঘটনাস্থলে এখনো কোনো বিষাক্ত ধোঁয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

আল-আমের আরও বলেন, কোথায় এবং কীভাবে এই ছিদ্র হওয়ার ঘটনা ঘটল, সেটি নিয়ে আমাদের লোকজন কাজ করছেন। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি থাকবে।

কুয়েত অয়েল কোম্পানির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একটি স্থল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে, সমুদ্র নয় আবার আবাসিক এলাকাও নয়।’

দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করলেও নির্দিষ্ট করে ঘটনাস্থলের নামটি বলেননি কুসাই আল-আমের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি অনাবাদি জমিতে পাইপলাইন থেকে তেলে উছলে পড়ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে কুয়েত অন্যতম। তবে দেশটিতে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০১৬ ও ২০ সালেও কুয়েত তেল কোম্পানি পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটানোর কথা জানিয়েছিল। এ ছাড়া ২০১৭ সালের আগস্টে কুয়েতে তেল ছড়িয়ে পড়ার দুটি ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে একটি ছিল রাজধানীর উপকূল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে।

গাল্ফ টুডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপসাগরীয় দেশটি প্রতিদিন ২৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করছে। অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) অন্যতম সদস্য দেশটির সরকারের ৯০ শতাংশ রাজস্ব আসে এই তেল থেকে।


শিগগিরই বড় ঘোষণা দেবেন পুতিন

ভ্লাদিমির পুতিন
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রাশিয়া নতুন একটি কৌশলগত অস্ত্র তৈরি করছে। এ বিষয়ে মস্কো শিগগিরই একটি বড় ঘোষণা দিতে পারে। কেননা বিশ্বে ইতোমধ্যেই একটি ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ চলছে।

শুক্রবার তাজিকিস্তানে এক শীর্ষ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমনটাই জানিয়েছেন।

পুতিন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা করা নতুন অস্ত্র সম্পর্কে রিপোর্ট করার সুযোগ পাব। এই অস্ত্রগুলো তৈরি এবং পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষাগুলো সফলভাবে এগিয়ে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার অভিনবত্ব অন্য যে কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের তুলনায় বেশি। আমরা সক্রিয়ভাবে এটির সবকিছুই বিকাশ করছি। আমরা আগের বছরগুলোতে যা উল্লেখ করেছি, তা বিকাশ করছি; আমরা এটি চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছি।’

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কার্যকর হওয়া ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তিটি ছিল মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সবশেষ বড় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি। চুক্তিটি ২০১০ সালে সই হয়েছিল, যার মাধ্যমে দুই দেশ কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েনের সংখ্যা সীমিত করে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রাশিয়া এটি এগিয়ে নিতে চাইলেও ওয়াশিংটন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবে সম্মত হয়নি।

‘ট্রাম্পকে নোবেল না দেওয়ায় এ পুরস্কারের সম্মান কমে গেছে’

রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জটিল আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানে ‘অতি আপ্রাণ প্রচেষ্টা’ করছেন।

পুতিন দূশানবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে কমিটি এমন ব্যক্তিদের নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছে যারা শান্তির জন্য কিছুই করেনি।’

তিনি যুক্তি দেখান, এর ফলে নোবেল পুরস্কারের সম্মান ও কর্তৃত্ব কমে গেছে। তবে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ‘তবুও ট্রাম্প দীর্ঘকাল ধরে চলা জটিল সংকট সমাধানে অনেক কাজ করছেন।’ তিনি বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে উল্লেখ করে বলেন, যদি ট্রাম্পের ২০-পয়েন্ট পরিকল্পনা গাজা অঞ্চলে কার্যকর হয়, তা হবে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ট্রাম্প আন্তরিকভাবে যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছেন। এ যুদ্ধ ইতোমধ্যেই তিন বছর ছয় মাস অতিক্রম করেছে।

এর আগে শুক্রবার নরওয়ের নোবেল কমিটি ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া করোনা মাচাদোকে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। মাচাদোকে ‘ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার জন্য’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যদিও ট্রাম্প নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন, তবু কমিটি তার পরিবর্তে মাচাদোকে পুরস্কৃত করেছে।

পুতিনের মন্তব্যে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ!’ এবং পুতিনের বক্তব্যের ভিডিও শেয়ার করেছেন।


গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে মিসরে যাচ্ছেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

চলতি সপ্তাহে মিসরে অনুষ্ঠিতব্য গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এই সম্মেলনের আয়োজন করছেন এবং ইউরোপ ও আরব বিশ্বের কয়েকজন নেতাকে এতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

সম্মেলনটি আগামী মঙ্গলবার (একদিন আগেও হতে পারে) লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এখানেই সম্প্রতি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল, যেখানে কাতার, মিশর ও তুরস্ক মধ্যস্থতা করেছিল।

এই সম্মেলনে অংশ নেবেন জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জর্ডান, তুরস্ক, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নেতারা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।

মার্কিন প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে সম্মেলনে অংশ নেবেন, যদিও হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

অ্যাক্সিওস জানায়, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন তৈরি করা। বর্তমানে গাজার শাসন, নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন ইস্যুতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা রয়ে গেছে।

ট্রাম্প আগামী সোমবার সকালে ইসরায়েলে পৌঁছাবেন, যেখানে তিনি কেনেসেটে ভাষণ দেবেন এবং ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি মিশরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং তার শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।


যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ১৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল

গাজায় ফিরছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে নতুন করে ১৯ জন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া এদিন গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৫৫ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

একই সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার জানানো হয়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি আবাসিক এলাকায় ঘাব্বুন পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৬ জন নিহত হন।

এছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের কাছাকাছি এক বিমান হামলায় আরও দুই ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং পূর্ববর্তী হামলায় আহত একজন ফিলিস্তিনির চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয়।

বোমাবর্ষণের মাত্রা কিছুটা কমে আসায় এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজার কয়েকটি অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ায় উদ্ধারকারী দলগুলো অবশেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া পাড়া-মহল্লায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তারা গত দুই বছরের ধারাবাহিক ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করছে।

সরছে ইসরায়েলি বাহিনী

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজার কিছু প্রধান এলাকা থেকে তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধের মধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি তাদের পরিত্যক্ত ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করেছেন।

এর আগে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে ইসরায়েল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে, যার ফলস্বরূপ আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় শুরু হওয়ার কথা, যা দুই বছরের এই ভয়াবহ যুদ্ধ অবসানের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছে এবং জিম্মি মুক্তি পর্ব শুরু হয়েছে। এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বহনকারী শত শত ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারবে, যা বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ মানুষের জন্য জীবনদায়ী ত্রাণ বয়ে আনবে।

যেভাবে জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি

যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো- জিম্মি ও বন্দি বিনিময়। আশা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রথমে তাদের কারাগারে থাকা ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে, যারা দীর্ঘ মেয়াদে সাজা ভোগ করছেন। এরপর যুদ্ধের সময় গাজায় আটক হওয়া আরও ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই যে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে ১৫ জনকে পূর্ব জেরুজালেমে ও ১০০ জনকে পশ্চিম তীরে পাঠানো হবে এবং বাকি ১৩৫ জনকে নির্বাসিত করা হবে বলে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। তবে হামাস মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় মারওয়ান বারঘৌতির মতো কিছু হাই-প্রোফাইল ফিলিস্তিনি নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

গাজায় হামাসের নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে তারা এই মর্মে গ্যারান্টি পেয়েছেন যে যুদ্ধ শেষ। এই চুক্তি গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ অবসানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রথম ধাপ। এই ধাপে ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে, যদিও তারপরও গাজার প্রায় অর্ধেক অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

গাজার কিছু স্থান থেকে সেনা প্রত্যাহার

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গত শুক্রবার দুপুর থেকে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অবস্থান গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, কিছু ইসরায়েলি সেনা গাজার পূর্ব দিকে সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে পিছু হটেছে। তবে সেখানে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। মধ্য গাজার নুসেইরাত শিবির এলাকায় কিছু ইসরায়েলি সেনা তাদের সামরিক অবস্থান গুটিয়ে ইসরায়েলি সীমান্তের দিকে চলে গেলেও শুক্রবার ভোরের দিকে গোলাগুলির শব্দ শোনার পর বাকি সেনারা সেই এলাকাতেই থেকে যায়। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে গাজা সিটির দিকে যাওয়ার রাস্তা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে এসেছে। এই অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার আশায় শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিল; কিন্তু কাছাকাছি গোলাগুলির শব্দ শোনে অনেকে সামনে এগোনোর বিষয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফ্রিন গাজার বাসিন্দাদের ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং তাদের চুক্তি মেনে চলার ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ধ্বংসস্তূপেই ফিরছে মানুষ

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দুই বছরের যুদ্ধের মধ্যে উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে তাদের অবশিষ্ট জিনিসপত্র পিঠে নিয়ে হেঁটে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন। যারা সামর্থ্যবান, তারা গাধার গাড়ি বা ছোট ট্রাক ভাড়া করে এই যাত্রা করছেন। অবশ্য দুই বছরের যুদ্ধে তাদের বেশিরভাগেরই ঘরবাড়ি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। তবে ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও নিজ এলাকায় ফিরতে পেরেই খুশি সবকিছু হারিয়ে নিঃস হয়ে যাওয়া এই ফিলিস্তিনিরা।

৪০ বছর বয়সি মাহদি সাকলা বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবর শুনে আমরা খুব খুশি, গাজা সিটিতে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। অবশ্য এখন আর বাড়ি নেই; সব ধ্বংস হয়ে গেছে; কিন্তু ধ্বংসস্তূপ হলেও সেখানে ফিরে যেতে পারলে আমরা খুশি। এটাও এক দারুণ আনন্দ। গত দুই বছর আমরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বাস্তুচ্যুত হয়ে কষ্ট সহ্য করেছি।’

স্ত্রী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে খান ইউনিসে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া স্কুলশিক্ষক আলা সালেহ বলেন, ‘রাস্তা দীর্ঘ ও কঠিন, খাবার বা পানি নেই। আমি পরিবারকে পেছনে ফেলে উত্তরে হাঁটা শুরু করেছি। আমার চারপাশে হাজার হাজার মানুষ সংগ্রাম করছে। একটি গাড়ি ভাড়া করতে প্রায় ৪ হাজার শেকেল (১ হাজার ২২৭) খরচ হয়, যা বেশিরভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে।’


অবশেষে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করল ইসরায়েল

গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে ইসরায়েল। ছবি : সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দীর্ঘ দুই বছর যাবত নৃশংস গণহত্যা চালানোর পর অবশেষে গাজা উপত্যকার কয়েকটি এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজা ভূখণ্ড থেকে তিন ধাপে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। তবে সেনা প্রত্যাহার করা হলেও গাজার ৫০ শতাংশের বেশি এলাকা ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
গাজার বাসিন্দারা স্থানীয় সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব দিকে সরে গিয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমও নিশ্চিত করেছে যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনারা এমন স্থানে ফিরে যাবে যেখানে ইসরায়েলের গাজা উপত্যকার প্রায় ৫৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক পোস্টে বলেছেন, ‘একটি নির্ধারিত সীমারেখা পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
কোনো কোনো এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে তা নিয়ে গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। এ মানচিত্রে হলুদ রেখা দিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের প্রাথমিক প্রত্যাহারের সীমারেখা দেখানো হয়েছিল। তখনই জানানো হয়েছিল, এটি সেনা প্রত্যাহারের তিন ধাপের প্রথম ধাপ।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার আহত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফের তথ্য মতে, এ যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৪২ হাজারের বেশি শিশু; যাদের মধ্যে অন্তত ২১ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
হামাস কি অস্ত্র সমর্পণ করবে?
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস সমঝোতায় পৌঁছালেও, এখনো বহু জটিল ইস্যু অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে—সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, হামাস কি তার অস্ত্রসমূহ সমর্পণ করবে?
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র হতে হবে, পাশাপাশি গাজা শাসন থেকে সরে গিয়ে সংগঠন হিসেবে নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে।
অন্যদিকে, হামাস প্রকাশ্যে অস্ত্র সমর্পণের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তারা অংশিকভাবে অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে গোপনে কিছু নমনীয়তা দেখিয়েছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিশেষজ্ঞ হিউ লাভাট বলেন, নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে হামাসের অবস্থানেই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। গোপনে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আক্রমণাত্মক অস্ত্রগুলোর একটি অংশ তারা নিষ্ক্রিয় করতে রাজি হতে পারে।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যেসব প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে
মিশরে তিন দিন ধরে পর্দার আড়ালে চলা নিবিড় আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল এবং হামাস তার প্রস্তাবিত ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এর অর্থ, সব জিম্মিকে খুব দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে। একইসাথে, একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েল তাদের সৈন্যদের একটি নির্দিষ্ট সীমানায় ফিরিয়ে আনবে।’
তবে এই প্রথম ধাপের বিস্তারিত বিবরণ তিনি দেননি।
এই সমঝোতা এমন এক সময়ে হলো, যখন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের চালানো হামলার দুই বছর দুই দিন পূর্ণ হয়েছে। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই অভিযানে ৬৭, ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে বিপন্ন করে তুলতে পারে—যদি হামাস সম্পূর্ণভাবে অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গাজাভিত্তিক গবেষক আজমি কেশাওয়ি বলেন, হামাস হয়তো স্বল্প ও দীর্ঘ পাল্লার রকেটের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সমর্পণ করতে পারে। কিন্তু ছোট অস্ত্র বা গোপন টানেল নেটওয়ার্কের মানচিত্র কখনোই দেবে না।
তার মতে, হামাস কেবল তখনই অস্ত্র ছাড়বে, যখন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ইসরায়েল তার দখল শেষ করবে।
গাজার অনেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় হামাসের কিছু সামরিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, কারণ ইসরায়েল গাজায় কিছু গ্যাং সংগঠনকে সহায়তা দিয়েছে—যারা এখন মানবিক সহায়তা লুট করছে।
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন বিশ্লেষক তাগরিদ খোদারি বলেন, ইসরায়েল নিজেই এমন গ্যাং তৈরি করেছে যারা এখন নিজেদের জনগণকে হত্যা করছে। হামাস না থাকলে গাজায় নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে।
লাভাটের মতে, হামাস একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা টাস্কফোর্সের সঙ্গে আংশিক সহযোগিতায় রাজি হতে পারে, যদি সেই বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা না করে।
আইসজি-এর কেশাওয়ি বলেন, ইসরায়েল হামাসকে যতই দমন করুক না কেন, গোষ্ঠীটি পুরোপুরি নির্মূল হবে না।
হামাস এখন কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি একটি প্রতিরোধের প্রতীক। তারা এমন এক যুদ্ধ লড়েছে যা কেউ কল্পনাও করেনি বলে জানান তিনি।


কনশায়েন্সের ক্যাপ্টেন অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েলি কারাগারে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম যে জাহাজটিতে ছিলেন, সেই দ্য কনশায়েন্সের ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলীয় নারী মেডেলেইন হাবিবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাগারে পাঠিয়েছে ইসরায়েল। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন শুক্রবার জানিয়েছে, একটি মুচলেকায় সই করতে অসম্মতি জানানোয় তাঁকে কেৎজিয়েত কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

অভিজ্ঞ এ নারী নাবিকের সঙ্গে কারাগারে বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ার কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা। তখন তিনি জানান, তিনি মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন। তাঁকে খেতে দেওয়া হয়েছে বাসি রুটি ও খয়েরি রঙের পানি। তবে শারীরিক হেনস্তা করা হয়নি।

এদিকে গাজার দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভূমধ্যসাগর হয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিশ্বের ১৪৪ বিশিষ্টজনের সঙ্গে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম কারামুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। শনিবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। শহিদুল আলমকে বরণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও মানবাধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব, আলোকচিত্রী ও গবেষক মুনেম ওয়াসিফসহ সহকর্মীরা। ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তির পর শুক্রবার দুপুরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। পরে তিনি দেশের উদ্দেশে রওনা করেন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ভোর ৫টার পর তিনি বের হন।

শহিদুল আলম বলেন, ‌‌‘বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা আমাকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, গাজার মানুষ এখনও মুক্ত হয়নি। গাজার মানুষ এখনও আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে। সেটা যতক্ষণ না হয়, আমাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়নি।’ দৃকের ফেসবুক পেজে তাঁর এই বক্তব্য পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টে শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘সারা পৃথিবী থেকে বাংলদেশিরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, দোয়া করেছেন, বাংলাদেশ সরকার ও টার্কিশ সরকার যেভাবে সাহায্য করেছে- সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি যেতে পেরেছি, অনেকে পারেনি। অনেকে যেতে চেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমাদের মতো আরও হাজার ফ্লোটিলা যাওয়া দরকার, যতদিন না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়। আমাদের আসল সংগ্রাম এখনও বাকি আছে। ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের জাহাজবহরের সবচেয়ে বড় নৌযান দ্য কনশায়েন্সে ছিলেন শহিদুল আলম। তাঁর সঙ্গে ওই বহরের আরও ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মী আটক হন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলীয় নারী মেডেলেইন হাবিবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েলের মরুভূমির কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট) শহিদুল আলমকে বহনকারী ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান। পরে ইস্তাম্বুলের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম স্বাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাগরিক অধিকার নিয়েও সোচ্চার তিনি। গাজা অভিমুখী একটি নৌবহরে অংশ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হন। ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ ও গাজায় নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজামুখী নৌযাত্রায় তিনি অংশ নেন।

ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা আরেক উদ্যোগ ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’র আটটি নৌযানও এ যাত্রায় অংশ নেয়। ৯টি নৌযানের এ বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। বুধবার ওই নৌবহরে আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা। পরে শহিদুল আলমসহ আটক অনেককে ইসরায়েলের মরুভূমির কুখ্যাত কেৎজিয়েত কারাগারে নেওয়া হয়। ইসরায়েলে আটক হওয়ার পর থেকেই শহিদুল আলমের মুক্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল।

শহিদুল আলমের মুক্তি ও ইসরায়েল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।


মার্কিন সেনাবাহিনীকে বিস্ফোরক সরবরাহ করা কোম্পানিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসে একটি বিস্ফোরক কোম্পানিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তারা সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। কোম্পানিটি মার্কিন সেনাদের বিস্ফোরক সরবরাহ করত।

বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ‘অ্যাকুরেট এনার্জিটিক সিস্টেম’ নামে ওই কোম্পানিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তাদের ১৩০০ একরের ক্যাম্পাসের একটি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধসে গেছে। বিস্ফোরণের মাত্রা এত বেশি ছিল যে, এটি কয়েক মাইল দূরের বাড়িঘরেও অনুভূত হয়েছে।

বিস্ফোরণস্থল বিস্ফোরকে বোঝাই থাকায় সেখানে উদ্ধারকারীরা প্রথমে যাননি। তাদের আশঙ্কা ছিল আবারও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

টেনিসের হাম্পপ্রিস কাউন্টির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ক্রিস ডেভিস বলেছেন, “বলার কোনো ভাষা নেই। এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।” তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে সংখ্যাটি কত সেটি প্রকাশ করেননি।

কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, তারা সেনাবাহিনী, অ্যারোস্পেস এবং ভবন ভাঙার কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বিস্ফোরক সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া বিদেশি সেনাবাহিনীও এসব বিস্ফোরক ব্যবহার করে।

বাকসনোর্ট শহরের বনাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকায় তাদের কোম্পানি অবস্থিত। সেখানে আটটি ভবন ছিল। এগুলো নাসভিলের দক্ষিণপূর্বের ৯৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

পাবলিক নথি থেকে জানা গেছে, অ্যাকুরেট এনার্জিটিক সিস্টেম বিস্ফোরক ও অস্ত্র তৈরির বেশ কয়েকটি সামরিক চুক্তি পেয়েছে। যেগুলো বেশ পুরোনো।

সূত্র: এপি


যেসব কারণে শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করেছে ভেনিজুয়েলার গণতন্ত্রকামী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে। কমিটি জানিয়েছে, মাচাদোকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ভেনিজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পক্ষে তার দীর্ঘ ও সাহসী সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ।
নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দশকেরও বেশি সময় আগে, ‘সুমাতে’ নামের গণতান্ত্রিক উন্নয়নকেন্দ্রিক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মারিয়া কোরিনা মাচাদো ভেনিজুয়েলায় মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনই তিনি অস্ত্র নয়, ব্যালটের মাধ্যমে পরিবর্তনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরপর থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও জনগণের প্রতিনিধিত্বের পক্ষে কথা বলে আসছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে, মাচাদো বহু বছর ধরে ভেনিজুয়েলার জনগণের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি বিরোধীদলীয় জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু স্বৈরশাসন তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়। এরপর তিনি অন্য দলের প্রার্থী এডমুন্ডো গনজালেজ উরুতিয়াকে সমর্থন জানান।
তার নেতৃত্বে শত-সহস্র স্বেচ্ছাসেবক রাজনৈতিক বিভাজন পেরিয়ে একত্রিত হন এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, যেন স্বচ্ছ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় — এমনকি গ্রেফতার, নির্যাতন ও নিপীড়নের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও।
নোবেল কমিটি বলেছে, মাচাদোর এই আন্দোলন ছিল নাগরিক সাহস, শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ এবং গণতান্ত্রিক দৃঢ়তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।’
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। পুরস্কারটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হবে ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে।


গাজায় যুদ্ধবিরতি ‘কার্যকর’

নিজ এলাকায় ফিরছে ফিলিস্তিনিরা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে কার্যকর হয়েছে। উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে থাকা সেনাদের সরিয়ে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সীমানায় নেওয়া হচ্ছে। বাস্তুচ্যুত হয়ে গাজার দক্ষিণে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের উত্তরের দিকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সকালে হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদনের পর এমন ঘোষণা এলো। তবে তাৎক্ষণিক হুমকি মোকাবিলায় ইসরায়েলি সেনারা প্রস্তুত থাকবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি দেবে উভয়পক্ষ। বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় আগামী সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে জীবিত থাকা ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতি কার্যকর ঘোষণার সময় থেকেই এই ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আবিচায় আদ্রায়ে বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রধান সড়ক ধরে উত্তরের দিকে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে। তবে গাজার কয়েকটি এলাকায় ইসরায়েলি সেনার সক্রিয় থাকবে। বাসিন্দাদের সেদিকে যেতে দেওয়া হবে না। কারণ এই এলাকাগুলো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’।
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সৈন্য ও সশস্ত্র যানগুলো গাজা সিটি এবং খান ইউনিস থেকে সরে যাচ্ছে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা এখন নিজ বাড়িতে ফেরার আশায় আছেন।
গাজায় অবস্থানরত এএফপির সাংবাদিকরা হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে গাজা উপকূলের পাশের রাস্তা ধরে হাঁটতে দেখেছেন। খান ইউনিসে আমীর আবু (৩২) নামে এক ব্যক্তি বলেন, শোক নিয়েই আমরা নিজ এলাকার দিকে যাচ্ছি। যদিও সবকিছু এখন ধ্বংসস্তূপ। তবুও সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করেছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে যা বলল আইডিএফ
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। বাহিনীর সদস্যরা এখন চুক্তিতে নির্ধারিত মোতায়েন সীমারেখায় ফিরে গেছে বলে জানিয়েছে তারা।
মোতায়েন সীমারেখা বলতে নির্দিষ্ট অঞ্চলে সামরিক বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের সর্বোচ্চ সীমা বা সীমাকে বোঝায়, যা দেশ বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এই সীমারেখা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, নির্দিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা, বা জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত হতে পারে।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানায়, সৈন্যরা শুক্রবার দুপুর থেকে হালনাগাদ মোতায়েন সীমারেখা বরাবর নিজেদের অবস্থান গ্রহণ করতে শুরু করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দক্ষিণ কমান্ডের আওতাধীন এলাকায় মোতায়েন থাকা আইডিএফ সদস্যরা সেখানে অবস্থান করবে ও যেকোনো তাৎক্ষণিক হুমকি দূর করার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সর্বশেষ তথ্যমতে, আইডিএফ বর্তমানে গাজা উপত্যকার ৫৩ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যার অধিকাংশই শহরাঞ্চলের বাইরে অবস্থিত।
এদিকে, এখন থেকে প্রতিদিন ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাককে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির আর্মি রেডিওর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, যুদ্ধ চলাকালে গাজা ছেড়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ঘরে ফেরারও অনুমতি দেওয়া হবে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ দিক থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে এই ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো সালাহ আল-দিন ও আল-রাশিদ সড়ক দিয়ে চলাচল করবে। এসব ট্রাকের মাধ্যমে খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, আশ্রয়সামগ্রী ও জ্বালানি সরবরাহ করা হবে।
ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে থাকবে জাতিসংঘ, স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত একটি ব্যবস্থা, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর্মি রেডিওর তথ্যমতে, গাজার বাসিন্দারা রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিসরেও যাতায়াত করতে পারবেন, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারির চুক্তির আওতায় আগেও সীমিতভাবে অনুমোদিত ছিল। তবে এই যাতায়াত ইসরায়েলের অনুমোদনসাপেক্ষে হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শনের অধীনে পরিচালিত হবে, বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।


ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল না পাওয়ায় হোয়াইট হাউস এর প্রতিক্রিয়া

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার না পাওয়ায় হোয়াইট হাউস নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চিউং বলেছেন, নোবেল কমিটি প্রমাণ করেছে যে তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

শুক্রবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চিউং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ট্রাম্প একজন মানবতাবাদী হৃদয়ের অধিকারী, এবং তার মতো দৃঢ়চেতা নেতা বিরল। তিনি আরও বলেন, নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে তারা প্রকৃত শান্তির চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

ট্রাম্প বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। গতকালও তিনি দাবি করেন যে তার প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি গাজা যুদ্ধসহ অন্তত আটটি বৈশ্বিক সংঘাতের সমাধান করেছেন। তবে এসব সংঘাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থায়ী শান্তি নয়, বরং অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা আঞ্চলিক সমঝোতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন।

এই বছরের শুরুতে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধের মধ্যস্থতায় ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে অন্যান্য সংঘাত, যেমন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে তার জড়িত থাকার প্রমাণ তুলনামূলকভাবে সীমিত। কারণ নয়াদিল্লিও তার ভূমিকার গুরুত্বকে খাটো করে দেখেছে।

এছাড়া ট্রাম্প মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ বাঁধ নিয়ে বিরোধ নিরসনের কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যদিও সেই আলোচনায় তার কোনো স্পষ্ট সাফল্য দেখা যায়নি। তার প্রথম মেয়াদে সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তিতেও তিনি কূটনৈতিক সাফল্যের দাবি করেছিলেন, কিন্তু চুক্তির বেশিরভাগ শর্তই বাস্তবায়িত হয়নি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে ট্রাম্পের এই হতাশা নতুন নয়। অতীতেও তিনি একাধিকবার অভিযোগ করেছেন যে নোবেল কমিটি তার আন্তর্জাতিক অবদানকে উপেক্ষা করেছে।


সুদানে মসজিদে হামলা, নিহত ১৩

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সুদানের এল-ফাশের শহরের একটি মসজিদে আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং ২০ জন আহত হয়েছে । বুধবার বিদ্রোহী গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এ হামলা করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই মসজিদটিতে যুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত ৭০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। উত্তর দিক থেকে মসজিদে বোমা হামলা চালানো হয়। ফলে ১৩ জন মারা যায় এবং মসজিদের একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। আরএসএফ আবু শৌক শরণার্থী শিবির দখলের পর সেখান থেকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র হামলা চালাচ্ছে। গত মাসে আরেকটি মসজিদে আরএসএফ এর এক ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বুধবার বিকেলের দিকে বোমা হামলার পর আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করি এবং তাদের দাফন করি।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এল-ফাশের শহরে আরএসএফের সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। আরএসএফ প্রতিদিনই আর্টিলারি ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে এবং আশপাশের শরণার্থী শিবির দখল করছে। এসব হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য মতে, যুদ্ধের ফলে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী এল-ফাশের গত বছরের মে মাস থেকে আরএসএফের অবরোধে রয়েছে। এটি এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ বড় শহর। ধীরে ধীরে সেনা ও তাদের মিত্রদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছোট হয়ে আসছে।


পাকিস্তানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশযুদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশযুদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৯ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:১৬
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সম্পর্কের উষ্ণতায় নতুন অধ্যায় সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে অত্যাধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এআইএম-১২০ উন্নত সংস্করণ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়—যা আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত ছিল—এক সরকারি ঘোষণায় ইসলামাবাদকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।

এই অনুমোদন আসে কয়েক সপ্তাহ পর, যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

চুক্তির বিবরণ

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রে-থিয়ন একটি পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষা চুক্তির সংশোধিত সংস্করণে ৪১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। এর আওতায় ক্ষেপণাস্ত্রের সি–৮ এবং ডি–৩ মডেল তৈরি করা হবে।

নতুন এই সংশোধিত চুক্তিতে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ফলে পুরো প্রকল্পের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই দশমিক পাঁচ এক বিলিয়ন ডলার। উৎপাদন কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সালের মে মাস পর্যন্ত।

চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল, তুরস্কসহ ৩০টিরও বেশি দেশ রয়েছে।

ভারতের জন্য অর্থ ও তাৎপর্য

কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান পেতে যাচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই অনুমোদন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণের ইঙ্গিত বহন করছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্র শুধুমাত্র এফ–১৬ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারযোগ্য—যা পাকিস্তান বিমানবাহিনীর মূল আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা নির্ধারণ করে। পাকিস্তানের সংবাদপত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ–২১ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছিল।

ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষণী ওয়েবসাইট কুওয়া জানিয়েছে, এআইএম–১২০ সি–৮ সংস্করণটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ডি–শ্রেণির রপ্তানি সংস্করণ। পাকিস্তান এর আগের সি–৫ সংস্করণ পরিচালনা করছে, যা ২০১০ সালে তাদের নতুন ব্লক–৫২ এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছিল।

এআইএম–১২০ ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের অন্যতম কার্যকর দীর্ঘপাল্লার আকাশযুদ্ধ অস্ত্র। এর বিশেষত্ব হলো ‘লক্ষ্যে ছুড়ে ভুলে যাও’ বা ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট প্রযুক্তি—যার ফলে এটি পাইলটের নিরবচ্ছিন্ন নির্দেশনা ছাড়াই নিজস্ব রাডার ব্যবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্য শনাক্ত ও আঘাত হানতে সক্ষম।

পাকিস্তান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের পটভূমি

সম্প্রতি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নতির ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে গত মে মাসে ভারত–পাকিস্তানের চার দিনের সীমান্তযুদ্ধের পর। পাকিস্তান প্রকাশ্যে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আনার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল মুখ্য এবং ইসলামাবাদ এমনকি তার নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও প্রস্তাব করেছে।

অন্যদিকে ভারত দাবি করে, যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হয়েছিল দুই দেশের সামরিক পরিচালকদের (ডিজিএমও) সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছাড়াই।

বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া

ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এতে পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় শক্তির ভারসাম্য নড়বড়ে করতে পারে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রি ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করবে না,’ তবু বাস্তবে এটি দিল্লি–ওয়াশিংটন সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

পাকিস্তানের পক্ষে এটি কেবল সামরিক শক্তি বাড়ানোর পদক্ষেপ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতারও এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। ভারতের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক মিত্রতার সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে।


গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনাই ‘সেরা’: রাশিয়া

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পারস্পরিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা থাকলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে সমর্থন করে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এ তথ্য জানিয়েছেন।

ল্যাভরভ অবশ্য বলেছেন, গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য এই মুহূর্তে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘সেরা’ হলেও ‘আদর্শ’ নয়। তিনি আরও বলেছেন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য ইসরায়েল, হামাস এবং তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার যদি রাশিয়ার কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা চায়, তাহলে তা দিতে প্রস্তুত আছে মস্কো।

মার্কিন সাময়িকী ফরেন অ্যাফেয়ার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ল্যাভরভ। সেখানে গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং ট্রাম্পের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা বাস্তববাদী। সেই সঙ্গে আমরা অনুভব করতে পারছি যে গাজায় রক্তপাত বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি সেরা। আলোচনার টেবিলে এই মুহূর্তে এটির বিকল্পর আর কিছু নেই।’

‘এটি সেরা হলেও আদর্শ প্রস্তাব নয়। কারণ এই যুদ্ধের একদম মূল পয়েন্ট হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। ট্রাম্পের প্রস্তাবে এ বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, শুধু ফোকাস করা হয়েছে গাজার ওপর।’

‘তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় রক্তপাত থামানো। এ কারণেই ট্রাম্পের প্রস্তাবটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আশাব্যাঞ্জক।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার পাশে ছিলেন।

সেদিন ট্রাম্প বলেছিলেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং স্থায়ী শান্তি স্থাপন সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনার কপি ইসরায়েল, হামাস এবং যুদ্ধের অপর দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং হামাস ব্যতীত বাকি সবাই তার পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে।

৩ অক্টোবর শুক্রবার হামাস সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। তারপর ৬ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর শারম আল শেখ- এ ট্রাম্পের প্রস্তাবের ওপর বৈঠক শুরু হয় ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে।

সেই বৈঠকে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলার পর ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইসরায়েল-হামাস। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাম্প।

প্রসঙ্গত, রাশিয়া শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান (টু স্টেট সলিউশন)-এর দৃঢ় সমর্থক। গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাব দিতে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী; সে সময় প্রথম যেসব দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল— তাদের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম। ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবার গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া।


‘জিম্মি উদ্ধারের পর হামাসকে ধ্বংস করতেই হবে’

বেজালেল স্মোত্রিচ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইসরায়েলের চরম ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, গাজা থেকে জিম্মিরা দেশে ফেরার পর হামাসকে ধ্বংস করতে হবে। বৃহস্পতিবার এক্সে (পূর্বে টুইটার) এই মন্তব্য করেন স্মোত্রিচ।

স্মোত্রিচ লেখেন, জিম্মিরা যখন দেশে ফিরবে, তখনই ইসরায়েল সব শক্তি নিয়ে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ও নির্মূলের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যাতে তারা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি আরও বলেন, তিনি গাজা যুদ্ধ শেষ করতে হামাসের সঙ্গে হওয়া কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে ভোট দেবেন না। তবে তিনি নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে সমর্থন প্রত্যাহারের বা সরকার পতনের হুমকি দেননি।

স্মোত্রিচ আরও সতর্ক করেন যে, আমরা যেন ৭ অক্টোবরের আগের ভুল ধারণার কাছে ফিরে না যাই। আমরা যেন এমন কিছু না করি, যাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ বন্ধক রেখে ভয়াবহ মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই রাজি হয়েছে বলে গত বুধবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা এ পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে। এরই মধ্যে নেতানিয়াহু নেসেটে (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট) ভাষণ দিতে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও উপত্যকাটিতে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন জিম্মিকে (জীবিত ও মৃত) মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিপরীতে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের অনেককেই মুক্তি দেওয়া হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো জিম্মি। এর মধ্যে ২৫ জন আর বেঁচে নেই বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অন্যদিকে ওই দিন থেকেই গাজায় টানা বর্বর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু।


banner close