চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং ১ জন সামান্য আহত হয়েছেন
এলাকাটিতে ক্যাথলিক, , মেথডিস্ট গির্জা ও ইহুদি উপাসনালয় রয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি গির্জায় গুলিবর্ষণে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া আরও ৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলায় হতাহতরা তাইওয়ান বংশোদ্ভূত।
নিউইয়র্ক রাজ্যের বাফেলো শহরের একটি সুপারশপে শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারীর হামলায় ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনার একদিন পরই ক্যালিফোর্নিয়ায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।
স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বিভাগের টুইটার বার্তার বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, লস অ্যাঞ্জেলসের প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে লেগুনা উডস শহরে অবস্থিত জেনেভা প্রেসবাইটেরিয়ান গির্জায় গত রোববার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের কিছু আগে গুলির ঘটনা ঘটে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলির ঘটনায় একজন মারা গেছেন, চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং ১ জন সামান্য আহত হয়েছেন। হতাহত সবাই প্রাপ্তবয়স্ক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন একজন পুরুষকে আটক করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে গির্জার ঠিক কোন স্থানে গুলির ঘটনা ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়।
স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বিভাগের মুখপাত্র ক্যারি ব্রাউন জানিয়েছেন, গোলাগুলির সময় সেখানে প্রায় ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। গির্জার ভেতরে থাকা বেশির ভাগই তাইওয়ানি বংশোদ্ভূত।
এটি কোনো বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ কি না এবং বন্দুকধারী গির্জা কমিউনিটির কাছে পরিচিত কি না- এসব বিষয় ছাড়াও আরও অনেক কারণের দিকে নজর রাখছেন তদন্তকারীরা। এরই মধ্যে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বিভাগকে এ ঘটনায় সহায়তা করার জন্য ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্ট পাঠিয়েছে।
গোলাগুলির ঘটনা এমন একটি এলাকায় ঘটেছে যেখানে ক্যাথলিক, লুথারান, মেথডিস্ট গির্জা ও ইহুদি উপাসনালয় রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, গির্জার বাইরে জরুরি যানবাহন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের অফিস থেকে এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, গভর্নর পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
গভর্নর অফিসের টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘কাউকে তাদের উপাসনালয়ে যেতে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি সুপার মার্কেটে এক শ্বেতাঙ্গ যুবকের বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন ১০ জন। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে চালানো ওই হামলায় আহত হন আরও তিনজন। হতাহতের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক।
হতাহতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ কৃষ্ণাঙ্গ ও দুই শ্বেতাঙ্গ। টপস ফ্রেন্ডলি মার্কেটের এই হামলার পেছনে বর্ণবিদ্বেষী ও সহিংস চরমপন্থি মনোভাবকে দুষছেন স্থানীয় প্রশাসন।
দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের বাফেলো ফিল্ড অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেশাল এজেন্ট স্টিফেন বেলঙ্গিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই গুলির ঘটনাকে ‘ঘৃণাজনিত অপরাধ এবং জাতিগতভাবে সহিংস চরমপন্থি মামলা’ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি ধর্মীয় শিক্ষালয়ে বোমা হামলায় তালেবানের বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা শেখ রহিমুল্লাহ হাক্কানি নিহত হয়েছেন। তালেবান কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র বিলাল কারিমি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের সম্মানিত আলেম (শেখ রহিমুল্লাহ হাক্কানি) শত্রুদের কাপুরুষোচিত হামলায় শহীদ হয়েছেন।
চারটি তালেবান সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামলাকারীর এক পা ছিলো না এবং তিনি প্লাস্টিকের কৃত্রিম পায়ে বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র তালেবান কর্মকর্তা বলেন, আমরা তদন্ত করছি যে, হামলাকারী কে ছিলো এবং কে তাকে শেখ রহিমুল্লাহ হাক্কানির ব্যক্তিগত অফিসে প্রবেশের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে এসেছিলো। এটি (হাক্কানি মৃত্যু) আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের জন্য খুব বড় একটি ক্ষতি।
তবে আইএসআইএল (আইএসআইএস) সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, হামলাকারী তার পোশাকের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য থেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
আইএসআইএল-এর একটি বিবৃতি অনুবাদ করে, তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট বলছে, তাদের (আইএসআইএল) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন হাক্কানি এবং তিনি ছিলেন তালেবানের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ উকিল।
এর আগেও হাক্কানির ওপর হামলা হয়েছিলো। সর্বশেষ ২০২০ সালে হাক্কানিকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটায় আইএসআইএল। ওই হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন হাক্কানি।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে বন্দুকধারীর হামলায় তিন সেনাসদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকারীরা প্রথমে জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় ওই ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা গুলি ছুঁড়লে দুই বন্দুকধারী নিহত হয়।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুকেশ সিং বলেন, কয়েকজন সন্ত্রাসী পারগালের আর্মি ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেনাসদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে তিনজন সেনাসদস্য ও দুজন হামলাকারী নিহত হয়।
ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাড়াতে সেখানে আরও সেনা পাঠানো হয়েছে, যোগ করেন মুকেশ সিং।
পুলিশ বলছে, এই হামলার পেছনে জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়্যেবার মদদ থাকতে পারে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক টুইটবার্তায় নিহত সেনাসদস্যদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
২০১৮ সালে জম্মুর সুনজোয়ান ক্যাম্পে হামলার পর সেনা ক্যাম্পে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। এর আগে, ২০১৬ সালে উরি ক্যাম্পে একই ধরনের হামলায় ১৮ সেনা নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাখি পাঠিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। রাখি বন্ধন উপলক্ষে এই উপহার পাঠানো হয়।
বুধবার (১০ আগস্ট) সংসদ সদস্য শেখ আলাউদ্দিনের হাতে উপহার তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ।
উপহারের মধ্যে ছিল কচুরিপানা দিয়ে তৈরি রাখি, মিষ্টি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের দুটি ছবি।
এ বিষয়ে গোপাল শেঠ সাংবাদিকদের বলেন, দুদেশের মৈত্রী বন্ধন আরও দৃঢ় করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নারীদের তৈরি কচুরিপানার রাখি পাঠানো হয়েছে।
উপহার গ্রহণ করতে আসা শেখ আলাউদ্দিন বলেন, দুই বাংলার বন্ধন অনেক দৃঢ়। রাখি বন্ধন সেটিকে আরও মজবুত করবে। একটি চমৎকার দিনে চমৎকার একটি উপহার আমাদের দিলেন তিনি (মমতা বন্দোপাধ্যায়)। আমি এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেবো।
কথা ছিলো আরব আমিরাতের দুবাইতে যাবেন রান্নার কাজ নিয়ে। সে অনুযায়ী ভারতের মুম্বাইয়ের এক স্থানীয় এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করেন চার সন্তানের মা ও বিধবা হামিদা বানু। সন্তানদের কথা চিন্তা করে অনিশ্চিত আরেক জীবনের ঝুকি নেন তিনি। রান্নার কাজ পাইয়ে দেবার কথা বলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। কিন্তু আশাহত হয়ে সেখানেই আটকে পড়েন হামিনা। রোববার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দুঃখী এই নারীর গল্প।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে প্রকাশ্যে এসেছে হামিদা বানুর জীবনের নির্মম গল্প। এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তবে স্বজনদের কাছে যেতে উদগ্রীব হলেও কাগজপত্রের জটিলতায় দ্রুতই হয়তো তার ফেরা হচ্ছে না তার।
২০০২ সালে রাঁধুনির চাকরি নিয়ে দুবাইয়ে যেতে একটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে ২০ হাজার রুপি দেন হামিদা। চুক্তি অনুযায়ী দুবাইতে রান্নার চাকরি করতে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে অবৈধভাবে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। হতভাগ্য এই নারী জানান, দুবাইয়ে নেয়ার কথা বলে পাকিস্তানের হায়দরাবাদের একটি ঘরে তিন মাস আটকে রাখা হয় তাকে। এর কয়েক বছর পর করাচির এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় হামিদার। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে স্বামীর মৃত্যু হয়। এখন তার সৎ ছেলের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি।
এসবই তিনি জানান প্রতিবেশি ওয়ালিউল্লাহ মারুফ নামের পাকিস্তানের এক ব্যক্তির কাছে। গত জুলাই মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামিদার সাক্ষাতকারের এই ভিডিও আপলোড দেয়ার পরই আলোচনায় উঠে আসে তিনি।
ওই ভিডিও শেয়ার করেন মুম্বাইয়ে বাস করা ভারতের সাংবাদিক খালফান শেখ। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। শেষ পর্যন্ত এর মাধ্যমেই হামিদার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। ভিডিওটি হামিদা নাতি অর্থাৎ ইয়াসমিনের ছেলে আমানের চোখে পড়ে। সে তার মাকে জানালে, তারা উদ্যোগী হয় মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
ভারতের খালফান আর পাকিস্তানের ওয়ালিউল্লাহ মিলে আয়োজন করেন ভিডিওকলের। ২০ বছর পর ভুার্চুয়ালি নিজের মেয়ে ইয়াসমিন শেখকে দেখতে ও কথার বলার সুযোগ পান হামিদা বানু। আবেগঘন ভিডিওকলে ইয়াসমিনকে তার মাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কেমন আছ? তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ? এত বছর কোথায় ছিলে?’ কিন্তু হামিদা বানু এসবের উত্তরে শুধু এটুকুই বলছিলেন, ‘জানতে চেয়ো না, কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি। তোমাদের খুব মনে পড়ে। ইচ্ছা করে আমি এখানে আসিনি। আমার কোনো বিকল্প ছিল না।’
হামিদার পরিবারের সদস্যরা জানান, দুই দশক ধরে তাকে খুঁজছিলেন তারা। তবে কোনোভাবেই সন্ধান মিলছিল না। ইয়াসমিন জানান, আগে যখন তার মা অন্য দেশে ছিলেন, তখন মাঝেমধ্যেই ফোন করতেন। তবে শেষবার দেশ ছাড়ার পর আর ফোন করেননি। খবর না পেয়ে একপর্যায়ে তারা রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মা ভালো আছেন একটু জানাতো। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান না বলে রিক্রুটিং এজেন্সির লোকেরা বলতো। কিন্তু কিছুদিন পর ওই এজেন্সিকেও আর তারা খুঁজে পায়নি বলে জানায় ইয়াসমিন।
হামিদার কথা শুনে তার প্রতি সহানুভূতি আসে ওয়ালিউল্লাহর। তবে দমে যান ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্কের কথা চিন্তা করে। সাক্ষাৎকারে হামিদা তার মুম্বাইয়ের ঠিকানা এবং সন্তানের নাম বলেন। এতে তার স্বজনদের খুঁজে পাওয়াটা একটু সহজ হয়। ওয়ালিউল্লাহ জানিয়েছেন, ভিডিও দেখে পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে হামিদা বানুর বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তবে কবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত কবে নাগাদ আসবে তা এখনও অজানা।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে কানাডাভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। কারণগুলো হলো- সার ঘাটতি, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূল আবহাওয়া।
সার ঘাটতি
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে খাদ্য-শস্য উৎপাদনের অপরিহার্য উপাদান সারের বৈশ্বিক চালান ব্যাহত হয়।
বিশ্বে নাইট্রোজেন সারের শীর্ষ রপ্তানিকারক এবং ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার রপ্তানিতে দ্বিতীয় রাশিয়া। এ ছাড়া রাশিয়ার মিত্র বেলারুশও গুরুত্বপূর্ণ সার রপ্তানিকারক দেশ। পটাশিয়াম সারের বৈশ্বিক চাহিদার ৪০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করে এই দুই দেশ।
রাশিয়া বছরে মোট ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের সার রপ্তানি করত। প্রধান ক্রেতার তালিকায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও ব্রাজিল।
এ ছাড়া মঙ্গোলিয়া, হন্ডুরাস, ক্যামেরুন, ঘানা, সেনেগাল এবং গুয়েতেমালাসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের মোট সার আমদানির পাঁচ ভাগের এক ভাগ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমারা একের পর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এতে সংকটে পড়েছে রাশিয়া থেকে সার আমদানি করা দেশগুলো। বিপদে পড়েছে বাংলাদেশও। অন্যদিকে চীন সার রপ্তানি না করে মজুত করছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত মাসেই কানাডার কাছে সহায়তা চেয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এক সৌজন্য সাক্ষাতে কানাডার রাষ্ট্রদূত লিলি নিকোলাসের কাছে পটাশিয়াম রপ্তানি অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রভাব ফেলেছে সার উৎপাদনে।
অন্য অনেক দেশের মতো জ্বালানি সংকটে রয়েছে বাংলাদেশও। উল্লেখ্য, গ্যাস সংকটে ২১ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে যমুনা সার কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কারখানা কমান্ডিং এরিয়ায় সার সংকটে আগামী মৌসুমে বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) গ্যাস উৎপাদন গত ১৯ জুলাই বন্ধ হয়ে গেছে।
সার রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান চীনের। বছরে দেশটি ১ হাজার কোটি বেশি ডলারের সার রপ্তানি করত। এখন বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সার রপ্তানি না করে মজুত করছে দেশটি। ফলে সারের বৈশ্বিক সংকট বাড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন।
বৈশ্বিক শস্য রপ্তানি
রুশ কৃষ্ণসাগর নৌবহরের ইউক্রেনীয় বন্দরগুলো অবরোধ, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী খাদ্য রপ্তানির চেনা চিত্র বদলে দিয়েছে।
বিশ্বে গমের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের জোগান দেয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। গম বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত শস্যগুলোর একটি। এছাড়া ইউক্রেন ভুট্টা, বার্লি ও সূর্যমুখী তেলের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। চলমান সংঘাতে দেশটির খাদ্যপণ্য রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। ইউরোপের বাজারে সূর্যমুখী তেলে পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে।
সাম্প্রতিক খাদ্য ঘাটতি
রাশিয়া ও ইউক্রেন বৈশ্বিক বাজারে বছরে প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ টন খাদ্যশস্য জোগান দেয়। জাতিসংঘ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত বছর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ খাদ্যাভাবে ছিল।
সাম্প্রতিককালে তাপ, খরা ও বন্যায় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ভারতেও ফসলের ক্ষতি হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রাজিলে খরা ও তুষারপাতে ফসল নষ্ট হওয়ায় কফির দাম ৭০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এসব সংকটের মুখে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি কৃষি, পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, পানি ও সেচের মতো বিষয়গুলোয় ৩ হাজার কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
খাদ্য সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কৃষ্ণসাগরে অবরোধ শিথিল করবে রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে খাদ্য রপ্তানির পথে আর কোনো বাধা থাকবে না। চুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়নে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের মতে, বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।