তাইওয়ানে চীনের সম্ভাব্য হামলাকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সঙ্গে তুলনা করেছেন বাইডেন।
কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে চীন বলেছে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চীন তাইওয়ানে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেনের এই হুঁশিয়ারির মাধ্যমে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনের অস্পষ্ট অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
জাপানের টোকিওতে সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন ওই হুঁশিয়ারি দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম এশিয়া সফরে এসেছেন বাইডেন। দক্ষিণ কোরিয়া সফর শেষে তিনি জাপানে গেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাইওয়ান আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে? এক সাংবাদিক বলেন, ‘আপনি সুস্পষ্ট কারণেই ইউক্রেন সংঘাতে সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়তে চাননি। তাইওয়ান আক্রান্ত হলে আপনি কী করবেন? সামরিক পদক্ষেপ নেবেন?
জবাবে বাইডেন বলেন, ‘হ্যাঁ। এমন প্রতিশ্রুতিই আমরা দিয়েছি। আমরা একক চীন নীতির সঙ্গে একমত। আমরা এ বিষয়ে চুক্তিও করেছি। তবে তাইওয়ানকে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করা হলে কেবলমাত্র তখনই এই পদক্ষেপ (সামরিক পদক্ষেপ) নেয়া যুক্তিযুক্ত হবে।’
একক চীন নীতির আওতায় তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে চীনের দাবি যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেছে। তবে ২ কোটি ৩০ লাখ জনগোষ্ঠীর ওই অঞ্চলটি নিয়ে বেইজিংয়ের দাবির স্বীকৃতি দেয়নি ওয়াশিংটন।
তাইওয়ানে চীনের সম্ভাব্য হামলাকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সঙ্গে তুলনা করে সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, এমন ঘটনা পুরো অঞ্চলকে বিপদে ফেলবে। তিনি এ সময় ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়াকে দীর্ঘমেয়াদে মূল্য চোকাতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
বাইডেনের ওই বক্তব্যের পর হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) যেমনটা বলেছেন যে আমাদের নীতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি আমাদের একক চীন নীতি এবং তাইওয়ান প্রণালি অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি ‘তাইওয়ান সম্পর্ক আইনের’ আওতায় তাইওয়ানের নিজের সুরক্ষায় সামরিক সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে আমাদের প্রতিশ্রুতির কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’
এর আগেও বাইডেন তাইওয়ান ইস্যুতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ তিনি গত অক্টোবরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন টাউন হল অনুষ্ঠানে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। প্রতিবারই বাইডেনের বক্তব্যের পরপরই হোয়াইট হাউস পিছু হটেছে এবং ব্যাখ্যা দিয়েছে যে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করে। তবে চীন সামরিক অভিযান চালিয়ে তাইওয়ান দখলে নিতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না, তা নিয়ে বরাবরই মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান অস্পষ্ট।
বাইডেনের ওই বক্তব্যের পরপরই চীন গভীর অসন্তোষ ও কঠোর বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, চীন কখনোই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কোনো শক্তিকে হস্তক্ষেপ করতে দেবে না। চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং মূল স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোয় ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে একক চীন নীতি অনুসরণের…শব্দচয়ন ও তাইওয়ান ইস্যুতে এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতা ও বিচ্ছিন্নতাপন্থী শক্তিকে কোনো ভুল বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে তাইওয়ান প্রণালি ও চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে।’
চীনের উপকূল থেকে ১৭৭ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে তাইওয়ানের অবস্থান। চীন তাইওয়ানকে নিজের বলে দাবি করলেও সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে অঞ্চলটি স্বায়ত্তশাসিত। যদিও চীন এ পর্যন্ত তাইওয়ান নিজের দখলে নেয়ার চেষ্টা করেনি। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, চীন ও তাইওয়ানের ‘পুনর্মিলন’ অবশ্যম্ভাবী।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি ধর্মীয় শিক্ষালয়ে বোমা হামলায় তালেবানের বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা শেখ রহিমুল্লাহ হাক্কানি নিহত হয়েছেন। তালেবান কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র বিলাল কারিমি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের সম্মানিত আলেম (শেখ রহিমুল্লাহ হাক্কানি) শত্রুদের কাপুরুষোচিত হামলায় শহীদ হয়েছেন।
চারটি তালেবান সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামলাকারীর এক পা ছিলো না এবং তিনি প্লাস্টিকের কৃত্রিম পায়ে বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র তালেবান কর্মকর্তা বলেন, আমরা তদন্ত করছি যে, হামলাকারী কে ছিলো এবং কে তাকে শেখ রহিমুল্লাহ হাক্কানির ব্যক্তিগত অফিসে প্রবেশের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে এসেছিলো। এটি (হাক্কানি মৃত্যু) আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরাতের জন্য খুব বড় একটি ক্ষতি।
তবে আইএসআইএল (আইএসআইএস) সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, হামলাকারী তার পোশাকের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিস্ফোরক দ্রব্য থেকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
আইএসআইএল-এর একটি বিবৃতি অনুবাদ করে, তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট বলছে, তাদের (আইএসআইএল) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন হাক্কানি এবং তিনি ছিলেন তালেবানের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ উকিল।
এর আগেও হাক্কানির ওপর হামলা হয়েছিলো। সর্বশেষ ২০২০ সালে হাক্কানিকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারে একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটায় আইএসআইএল। ওই হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন হাক্কানি।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে বন্দুকধারীর হামলায় তিন সেনাসদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকারীরা প্রথমে জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি সেনাক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় ওই ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা গুলি ছুঁড়লে দুই বন্দুকধারী নিহত হয়।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুকেশ সিং বলেন, কয়েকজন সন্ত্রাসী পারগালের আর্মি ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেনাসদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে তিনজন সেনাসদস্য ও দুজন হামলাকারী নিহত হয়।
ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাড়াতে সেখানে আরও সেনা পাঠানো হয়েছে, যোগ করেন মুকেশ সিং।
পুলিশ বলছে, এই হামলার পেছনে জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়্যেবার মদদ থাকতে পারে।
এদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক টুইটবার্তায় নিহত সেনাসদস্যদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
২০১৮ সালে জম্মুর সুনজোয়ান ক্যাম্পে হামলার পর সেনা ক্যাম্পে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। এর আগে, ২০১৬ সালে উরি ক্যাম্পে একই ধরনের হামলায় ১৮ সেনা নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাখি পাঠিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। রাখি বন্ধন উপলক্ষে এই উপহার পাঠানো হয়।
বুধবার (১০ আগস্ট) সংসদ সদস্য শেখ আলাউদ্দিনের হাতে উপহার তুলে দেন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ।
উপহারের মধ্যে ছিল কচুরিপানা দিয়ে তৈরি রাখি, মিষ্টি, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের দুটি ছবি।
এ বিষয়ে গোপাল শেঠ সাংবাদিকদের বলেন, দুদেশের মৈত্রী বন্ধন আরও দৃঢ় করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নারীদের তৈরি কচুরিপানার রাখি পাঠানো হয়েছে।
উপহার গ্রহণ করতে আসা শেখ আলাউদ্দিন বলেন, দুই বাংলার বন্ধন অনেক দৃঢ়। রাখি বন্ধন সেটিকে আরও মজবুত করবে। একটি চমৎকার দিনে চমৎকার একটি উপহার আমাদের দিলেন তিনি (মমতা বন্দোপাধ্যায়)। আমি এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেবো।
কথা ছিলো আরব আমিরাতের দুবাইতে যাবেন রান্নার কাজ নিয়ে। সে অনুযায়ী ভারতের মুম্বাইয়ের এক স্থানীয় এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করেন চার সন্তানের মা ও বিধবা হামিদা বানু। সন্তানদের কথা চিন্তা করে অনিশ্চিত আরেক জীবনের ঝুকি নেন তিনি। রান্নার কাজ পাইয়ে দেবার কথা বলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। কিন্তু আশাহত হয়ে সেখানেই আটকে পড়েন হামিনা। রোববার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দুঃখী এই নারীর গল্প।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে প্রকাশ্যে এসেছে হামিদা বানুর জীবনের নির্মম গল্প। এখন দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তবে স্বজনদের কাছে যেতে উদগ্রীব হলেও কাগজপত্রের জটিলতায় দ্রুতই হয়তো তার ফেরা হচ্ছে না তার।
২০০২ সালে রাঁধুনির চাকরি নিয়ে দুবাইয়ে যেতে একটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে ২০ হাজার রুপি দেন হামিদা। চুক্তি অনুযায়ী দুবাইতে রান্নার চাকরি করতে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে অবৈধভাবে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। হতভাগ্য এই নারী জানান, দুবাইয়ে নেয়ার কথা বলে পাকিস্তানের হায়দরাবাদের একটি ঘরে তিন মাস আটকে রাখা হয় তাকে। এর কয়েক বছর পর করাচির এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় হামিদার। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে স্বামীর মৃত্যু হয়। এখন তার সৎ ছেলের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি।
এসবই তিনি জানান প্রতিবেশি ওয়ালিউল্লাহ মারুফ নামের পাকিস্তানের এক ব্যক্তির কাছে। গত জুলাই মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামিদার সাক্ষাতকারের এই ভিডিও আপলোড দেয়ার পরই আলোচনায় উঠে আসে তিনি।
ওই ভিডিও শেয়ার করেন মুম্বাইয়ে বাস করা ভারতের সাংবাদিক খালফান শেখ। এরপর খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। শেষ পর্যন্ত এর মাধ্যমেই হামিদার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। ভিডিওটি হামিদা নাতি অর্থাৎ ইয়াসমিনের ছেলে আমানের চোখে পড়ে। সে তার মাকে জানালে, তারা উদ্যোগী হয় মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
ভারতের খালফান আর পাকিস্তানের ওয়ালিউল্লাহ মিলে আয়োজন করেন ভিডিওকলের। ২০ বছর পর ভুার্চুয়ালি নিজের মেয়ে ইয়াসমিন শেখকে দেখতে ও কথার বলার সুযোগ পান হামিদা বানু। আবেগঘন ভিডিওকলে ইয়াসমিনকে তার মাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কেমন আছ? তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ? এত বছর কোথায় ছিলে?’ কিন্তু হামিদা বানু এসবের উত্তরে শুধু এটুকুই বলছিলেন, ‘জানতে চেয়ো না, কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি। তোমাদের খুব মনে পড়ে। ইচ্ছা করে আমি এখানে আসিনি। আমার কোনো বিকল্প ছিল না।’
হামিদার পরিবারের সদস্যরা জানান, দুই দশক ধরে তাকে খুঁজছিলেন তারা। তবে কোনোভাবেই সন্ধান মিলছিল না। ইয়াসমিন জানান, আগে যখন তার মা অন্য দেশে ছিলেন, তখন মাঝেমধ্যেই ফোন করতেন। তবে শেষবার দেশ ছাড়ার পর আর ফোন করেননি। খবর না পেয়ে একপর্যায়ে তারা রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মা ভালো আছেন একটু জানাতো। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান না বলে রিক্রুটিং এজেন্সির লোকেরা বলতো। কিন্তু কিছুদিন পর ওই এজেন্সিকেও আর তারা খুঁজে পায়নি বলে জানায় ইয়াসমিন।
হামিদার কথা শুনে তার প্রতি সহানুভূতি আসে ওয়ালিউল্লাহর। তবে দমে যান ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্কের কথা চিন্তা করে। সাক্ষাৎকারে হামিদা তার মুম্বাইয়ের ঠিকানা এবং সন্তানের নাম বলেন। এতে তার স্বজনদের খুঁজে পাওয়াটা একটু সহজ হয়। ওয়ালিউল্লাহ জানিয়েছেন, ভিডিও দেখে পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে হামিদা বানুর বিস্তারিত জানিয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তবে কবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত কবে নাগাদ আসবে তা এখনও অজানা।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে কানাডাভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। কারণগুলো হলো- সার ঘাটতি, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূল আবহাওয়া।
সার ঘাটতি
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে খাদ্য-শস্য উৎপাদনের অপরিহার্য উপাদান সারের বৈশ্বিক চালান ব্যাহত হয়।
বিশ্বে নাইট্রোজেন সারের শীর্ষ রপ্তানিকারক এবং ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার রপ্তানিতে দ্বিতীয় রাশিয়া। এ ছাড়া রাশিয়ার মিত্র বেলারুশও গুরুত্বপূর্ণ সার রপ্তানিকারক দেশ। পটাশিয়াম সারের বৈশ্বিক চাহিদার ৪০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করে এই দুই দেশ।
রাশিয়া বছরে মোট ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের সার রপ্তানি করত। প্রধান ক্রেতার তালিকায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও ব্রাজিল।
এ ছাড়া মঙ্গোলিয়া, হন্ডুরাস, ক্যামেরুন, ঘানা, সেনেগাল এবং গুয়েতেমালাসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ তাদের মোট সার আমদানির পাঁচ ভাগের এক ভাগ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমারা একের পর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এতে সংকটে পড়েছে রাশিয়া থেকে সার আমদানি করা দেশগুলো। বিপদে পড়েছে বাংলাদেশও। অন্যদিকে চীন সার রপ্তানি না করে মজুত করছে।
এমন পরিস্থিতিতে গত মাসেই কানাডার কাছে সহায়তা চেয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এক সৌজন্য সাক্ষাতে কানাডার রাষ্ট্রদূত লিলি নিকোলাসের কাছে পটাশিয়াম রপ্তানি অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রভাব ফেলেছে সার উৎপাদনে।
অন্য অনেক দেশের মতো জ্বালানি সংকটে রয়েছে বাংলাদেশও। উল্লেখ্য, গ্যাস সংকটে ২১ জুন থেকে বন্ধ রয়েছে যমুনা সার কারখানার ইউরিয়া উৎপাদন। দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কারখানা কমান্ডিং এরিয়ায় সার সংকটে আগামী মৌসুমে বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। গ্যাস সংকটে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) গ্যাস উৎপাদন গত ১৯ জুলাই বন্ধ হয়ে গেছে।
সার রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান চীনের। বছরে দেশটি ১ হাজার কোটি বেশি ডলারের সার রপ্তানি করত। এখন বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সার রপ্তানি না করে মজুত করছে দেশটি। ফলে সারের বৈশ্বিক সংকট বাড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন।
বৈশ্বিক শস্য রপ্তানি
রুশ কৃষ্ণসাগর নৌবহরের ইউক্রেনীয় বন্দরগুলো অবরোধ, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী খাদ্য রপ্তানির চেনা চিত্র বদলে দিয়েছে।
বিশ্বে গমের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের জোগান দেয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। গম বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত শস্যগুলোর একটি। এছাড়া ইউক্রেন ভুট্টা, বার্লি ও সূর্যমুখী তেলের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। চলমান সংঘাতে দেশটির খাদ্যপণ্য রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। ইউরোপের বাজারে সূর্যমুখী তেলে পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে।
সাম্প্রতিক খাদ্য ঘাটতি
রাশিয়া ও ইউক্রেন বৈশ্বিক বাজারে বছরে প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ টন খাদ্যশস্য জোগান দেয়। জাতিসংঘ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত বছর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ খাদ্যাভাবে ছিল।
সাম্প্রতিককালে তাপ, খরা ও বন্যায় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ভারতেও ফসলের ক্ষতি হয়। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রাজিলে খরা ও তুষারপাতে ফসল নষ্ট হওয়ায় কফির দাম ৭০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এসব সংকটের মুখে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি কৃষি, পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা, পানি ও সেচের মতো বিষয়গুলোয় ৩ হাজার কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
খাদ্য সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কৃষ্ণসাগরে অবরোধ শিথিল করবে রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে খাদ্য রপ্তানির পথে আর কোনো বাধা থাকবে না। চুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়নে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের মতে, বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় এই চুক্তি বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।