বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ভ্যাটিকানে রক্ষিত পার্থেনন মন্দিরের তিনটি খণ্ডাংশ গ্রিসকে ফেরত দিল দেশটি।
গত বছর পোপ ফ্রান্সিস আড়াই হাজার বছরের পুরোনো মার্বেলের এ খণ্ডাংশগুলো ফেরত দেয়ার ঘোষণা দেন।
এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহামূল্যবান এ ঐতিহাসিক নিদর্শন ফেরত পেল গ্রিস। তিনটি খণ্ডাংশের মধ্যে রয়েছে একটি ঘোড়ার মাথা, একটি দাড়িওয়ালা মানুষের ও একটি বালকের মাথা।
গ্রিস অবশ্য বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত পার্থেনন মন্দিরের মূল্যবান সামগ্রীগুলো ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল।
পার্থেনন গ্রিসের অন্যতম ঐতিহাসিক এক স্থাপনা। এথেন্সের ইলিসস উপত্যকায় চুনাপাথরের পাহাড়ের ওপর ২ হাজার ৫০০ বছর ধরে নানা ঝড়-ঝাপটা সহ্য করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক পুরাণের দেবী এথেনার সম্মানে নির্মিত মন্দিরটি।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯০ সালে মন্দিরের কাজ শুরু হয়। এরপর গ্রিকদের সঙ্গে পার্সিয়ানদের যুদ্ধ বাধে। ৩৩ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় পার্থেনন। যুদ্ধ শেষে আবারও মন্দিরটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেন জেনারেল পেরিক্লেস। যেহেতু স্বয়ং দেবী এথেনার সম্মানে নির্মিত হবে, সেহেতু আয়োজনের কমতি রাখেননি তিনি। মন্দির নির্মাণে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪৭ সালেই যে আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার হয়েছিল, তা বিস্মিত করে অনেককেই। পার্থেনন নির্মাণে প্রায় ১৩ হাজার ৪০০টি বড় পাথরের খণ্ড ব্যবহার করেন নির্মাতারা। শুধু এই পাথরগুলোর পেছনেই এথেনীয়রা তখন ব্যয় করেন প্রায় ৪৭০টি রৌপ্যমুদ্রা, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অতঃপর প্রায় এক হাজার বছর গ্রিকদের ধর্মীয় উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পর পার্থেনন ও এর পার্শ্ববর্তী মন্দিরগুলো খ্রিষ্টানদের দখলে চলে যায়। পঞ্চম খ্রিষ্টাব্দে এথেন্স বাইজেন্টাইন ও রোমানদের হাতে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে অটোমানদের শাসনামলে এটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অতঃপর উনিশ শতকে গ্রিস স্বাধীনতা অর্জন করার পর আবারও এথেন্স পার্থেনন মন্দিরটি ফিরে পায়। যদিও ততদিনে যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাঠামো ছাড়া এর সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। চুরি হয়েছিল ভেতরের বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী।
আর এই মূল্যবান সামগ্রীর ৫০ শতাংশই চলে গিয়েছিল ব্রিটিশ জাদুঘরে। জানা যায়, আঠারো শতকের শুরুর দিকে থমাস ব্রুস নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে পার্থেনন মন্দিরের মার্বেলগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর সেগুলো তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিক্রি করে দেন। তখন থেকেই মার্বেলগুলো ব্রিটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। সেগুলোর মধ্যেই তিনটি মার্বেল সম্প্রতি ফেরত পেল গ্রিস।
সূত্র: বিবিসি
ইরানে ২০২৫ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) বিবিসিকে জানিয়েছে, চলতি ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত তারা অন্তত ১ হাজার ৫০০ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার তথ্য যাচাই করতে পেরেছে। সংগঠনটি বলছে, এরপর আরও অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ে থাকতে পারে। খবর বিবিসির।
আইএইচআর–এর তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটি ইরানে ২০২৪ সালে ৯৭৫ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তথ্য নিশ্চিত হতে পেরেছিল। তবে এটাই প্রকৃত সংখ্যা নয়। কেননা, ইরানের কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কখনোই কোনো আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রকাশ করে না।
বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ইরানে এ বছরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অন্য পর্যবেক্ষণকারী সংগঠনের দেওয়া তথ্যের সঙ্গেও এ হিসাব মিলে যাচ্ছে।
এর আগে ইরান সরকার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে, কেবল ‘সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের’ ক্ষেত্রেই এই শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র ২০২২ সালে ইরানজুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভ হয়। তার আগে থেকেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
২২ বছর বয়সি মাশা ইরানের রাজধানী তেহরানে নীতি পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন। নিয়ম মেনে হিজাব না পরার কারণে তাকে আটক করা হয়েছিল।
এ ঘটনার পর দেশজুড়ে শুরু হওয়া প্রতিবাদ বহু বছর ধরে ইরানের ধর্মীয় শাসনের বৈধতার প্রতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের কর্তৃপক্ষ ব্যাপক দমন–পীড়ন চালায়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। আইএইচআর–এর যাচাই করা তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইরানে প্রায় ৫২০ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। পরের বছর সংখ্যাটি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩২–এ।
ইরানে বিক্ষোভকারী কিংবা ‘গুপ্তচরদের’ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের ৯৯ শতাংশই হত্যা বা মাদক–সংক্রান্ত অপরাধে দণ্ডিত ছিলেন। এ অনুপাত প্রায় অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ইস্যুতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, বৈঠকে আগের চেয়ে অগ্রগতি হয়েছে, তবে দুই-একটি জটিল বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। যার মধ্যে ভূমি ইস্যু অন্যতম। খবর বিবিসির।
যদিও বৈঠকে দুর্দান্ত অগ্রগতির কথা জানিয়ে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। আর অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন বলেও জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
এদিকে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে পুতিনের সঙ্গে ফলপ্রসূ ফোনালাপের কথাও জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সোয়া ঘণ্টার দুর্দান্ত ফোনালাপ হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিনও।
মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি জানান, ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ‘৯০ শতাংশ’ বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি প্রায় ৯৫ শতাংশ চূড়ান্ত হয়েছে।
জেলেনস্কি পরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের দলগুলো আগামী সপ্তাহে আরও আলোচনার জন্য বৈঠক করবে, যার লক্ষ্য হলো প্রায় চার বছরের যুদ্ধ শেষ করা।
মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, আমরা সব বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা করেছি এবং গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেন ও আমেরিকার প্রতিনিধিদলগুলো যে অগ্রগতি করেছে, তা আমরা গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করেছি।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়। বর্তমানে মস্কো ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাস অঞ্চলকে একটি নিরস্ত্রীকৃত এলাকা করার প্রস্তাব এখনো ‘সমাধান হয়নি’ বলে জানান ট্রাম্প।
মস্কো বর্তমানে দোনেৎস্ক অঞ্চলের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং পাশের লুহানস্কের প্রায় ৯৯ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অঞ্চলগুলো একসঙ্গে দনবাস নামে পরিচিত।
রাশিয়া চায় ইউক্রেন দনবাসের সেই ছোট অংশ থেকে সরে আসুক যা এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে। কিয়েভ বলেছে, ওই এলাকা ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারবার ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ড নিয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। সেপ্টেম্বরে তিনি সবাইকে চমক দিয়ে বলেছিলেন, ইউক্রেন হয়তো ওই এলাকা ফিরিয়ে নিতে পারবে। পরে তিনি তার বক্তব্য পরিবর্তন করেন। তিনি বলেন, এটি একটি অত্যন্ত কঠিন বিষয়। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত সমাধান হবে।
ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কাজ ‘৯৫ শতাংশ চূড়ান্ত’ হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো লজিস্টিক সমর্থন বা সেনা মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দেননি তিনি।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার সম্ভাবনার কথা উত্থাপন করেছেন এবং বলেছেন, এটি ‘সঠিক সময়ে’ হতে পারে।
এর আগে ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ হয়। যদিও ট্রাম্প ফোনালাপের অনেক বিস্তারিত জানাননি, তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন রাশিয়ার নেতা ‘ইউক্রেনের সফলতা চায়।’
একইসঙ্গে ট্রাম্প স্বীকার করেন, মস্কোর খুব বেশি আগ্রহ নেই এমন এক স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য যা ইউক্রেনকে গণভোট আয়োজনের সুযোগ দেবে।
রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, এই ফোনালাপ ট্রাম্পের উদ্যোগে হয়েছে এবং তিনি ও পুতিন যুদ্ধ শেষ করার জন্য সাম্প্রতিক ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করতে পারেন, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন আরও আলোচনা চূড়ান্ত করবে।
বৈঠকের পরে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ফোনালাপে, ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লেইন ফ্লোরিডার আলোচনাকে ‘ভালো অগ্রগতি’ হিসেবে দেখছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেনকে ‘দৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেওয়া প্রয়োজন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও বলেছেন, কিয়েভের মিত্ররা আগামী মাসে প্যারিসে মিলিত হয়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে রাশিয়ায় বিলিয়নিয়ার বা ধনকুবেরদের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভ্লাদিমির পুতিনের গত ২৫ বছরের শাসনামলে রাশিয়ার এই প্রভাবশালী বিত্তবান গোষ্ঠী, যারা অলিগার্ক নামে পরিচিত, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রভাব প্রায় পুরোটাই হারিয়েছে তারা।
বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ স্বস্তির। কারণ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এই অতি ধনী গোষ্ঠীটিকে পুতিনের প্রতিপক্ষ বানাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং পুতিনের ‘পুরস্কার ও শাস্তির’ নীতি তাদের একপ্রকার নীরব সমর্থকে পরিণত করেছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি।
শাস্তির এই কড়াকড়ি ঠিক কীভাবে কাজ করে, তা সাবেক ব্যাংকিং বিলিয়নিয়ার ওলেগ তিনকভ খুব ভালো করেই জানেন।
ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘পাগলামি’ বলে সমালোচনা করার ঠিক পরদিনই ক্রেমলিন থেকে তার ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তিনকভকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, যদি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা না হয়, তাহলে তৎকালীন রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক তিনকভ ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হবে।
নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনকভ বলেন, ‘আমি দাম নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাইনি। অনেকটা জিম্মি হয়ে থাকার মতো অবস্থা, যা অফার করা হবে, তা-ই নিতে হবে। দর-কষাকষির কোনো উপায় ছিল না।’
এর এক সপ্তাহের মধ্যে ভ্লাদিমির পোতানিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটি কিনে নেয়।
উল্লেখ্য, পোতানিন বর্তমানে রাশিয়ার পঞ্চম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। রুশ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের জন্য নিকেল সরবরাহ করেন তিনি।
তিনকভের দাবি অনুযায়ী, ব্যাংকটিকে তার প্রকৃত মূল্যের মাত্র ৩ শতাংশ দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত তিনকভ তার প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারান এবং রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য হন।
পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাদের সুযোগ নিয়ে এবং বড় বড় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কুক্ষিগত করে একদল মানুষ অবিশ্বাস্য সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই সময়ে এই সম্পদ তাদের হাতে বিপুল ক্ষমতা ও প্রভাব এনে দেয়, যার ফলে তারা অলিগার্ক হিসেবে পরিচিতি পান।
রাশিয়ার সেই সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী অলিগার্ক বোরিস বেরেজোভস্কি দাবি করেছিলেন, ২০০০ সালে পুতিনকে ক্ষমতায় বসানোর নেপথ্যে মূল কারিগর ছিলেন তিনি।
তবে এর কয়েক বছর পরেই তিনি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ২০১২ সালে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তার (পুতিন) মধ্যে সেই লোভী স্বৈরশাসক ও জবরদখলকারীকে দেখতে পাইনি, যিনি কিনা স্বাধীনতাকে পদদলিত করবেন এবং রাশিয়ার উন্নয়ন থামিয়ে দেবেন।’
বেরেজোভস্কি হয়তো নিজের ভূমিকার কথা একটু বাড়িয়েই বলেছিলেন। তবে রাশিয়ার অলিগার্করা যে একসময় ক্ষমতার শীর্ষপর্যায়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রাখতেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এই ক্ষমাপ্রার্থনার ঠিক এক বছর পরেই যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় রহস্যজনকভাবে বেরেজোভস্কির মরদেহ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে রাশিয়ার অলিগার্ক বা ধনকুবেরদের রাজনৈতিক দাপটেরও চূড়ান্ত অবসান ঘটে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে লিপ্ত আছি। তারা চায় না, আমাদের দেশ স্থিতিশীল থাকুক। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বৈঠক সামনে রেখে গত শনিবার এ মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ওয়েবসাইটে পেজেশকিয়ানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, বর্তমান যুদ্ধটি ১৯৮০-এর দশকে ইরাকের সঙ্গে ইরানের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ।
মাসুদ পেজেশকিয়ানের মতে, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরাকের সঙ্গে ইরানের যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার চেয়ে বর্তমান যুদ্ধটি ‘আরও জটিল ও কঠিন’। উল্লেখ্য, ইরাক-ইরান যুদ্ধে দুই পক্ষের প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
মাসুদ পেজেশকিয়ানের মতে, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরাকের সঙ্গে ইরানের যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার চেয়ে বর্তমান যুদ্ধটি ‘আরও জটিল ও কঠিন’। উল্লেখ্য, ইরাক-ইরান যুদ্ধে দুই পক্ষের প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে তার নির্ধারিত বৈঠকের দুই দিন আগে এ মন্তব্য করলেন পেজেশকিয়ান। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর আলোচনায় ইরান প্রসঙ্গটি অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে।
গত জুনে ১২ দিনের এক যুদ্ধে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এতে ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার, পরমাণুবিজ্ঞানীসহ প্রায় ১ হাজার ১০০ জন নিহত হন। জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে ইসরায়েলে ২৮ জন প্রাণ হারান।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আজ সোমবার ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন তিনি। এক কর্মকর্তা এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। গত শনিবার তিনি বলেন, নেতানিয়াহু রোববার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রোববার রওনা হবেন এবং একদিন পর ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে তাদের সাক্ষাতের নির্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে জানাননি তিনি।
নেতানিয়াহুর সফর এমন এক সময় হচ্ছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন এবং আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীরা গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে ওই বৈঠকে নেতানিয়াহু তেহরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ওয়াশিংটনকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এবার নেতানিয়াহুর লক্ষ্য ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প।
শুধু ইসরায়েলি কর্মকর্তারাই নন, তাদের মার্কিন মিত্ররাও আবার ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন। এবার তাদের দাবি, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রকে তৎক্ষণাৎ মোকাবিলা করতে হবে; যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে আরেকটি সংঘাত ট্রাম্পঘোষিত মার্কিন নীতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির সিনিয়র ফেলো সিনা তুসি বলেন, ট্রাম্প যেখানে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাপ দিচ্ছেন, সেখানে নেতানিয়াহু এ অঞ্চলজুড়ে সামরিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।
সিনা তুসি বলেন, ইরানকে প্রকৃত অর্থে ভেঙে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সংশ্লিষ্টতা ও অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ইসরায়েলের লক্ষ্যকেই প্রতিফলিত করে। তার (ইসরায়েল) লক্ষ্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী আধিপত্য, প্রশ্নাতীত প্রভাব ও সম্প্রসারণবাদ প্রতিষ্ঠা।
ইরানকে প্রকৃত অর্থে ভেঙে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সংশ্লিষ্টতা ও অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ইসরায়েলের লক্ষ্যকেই প্রতিফলিত করে। তার (ইসরায়েল) লক্ষ্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী আধিপত্য, প্রশ্নাতীত প্রভাব ও সম্প্রসারণবাদ প্রতিষ্ঠা।
এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটাই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মূল লক্ষ্যগুলোর একটি এবং এ পথে ইসরায়েলকে সমর্থন দিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিতে চান। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ভিন্ন দিকে যাচ্ছে এবং তারা সরাসরি কোনো মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততা ছাড়াই এ অঞ্চলকে আরও বেশি স্থিতিশীল করতে চাইছে। এ প্রেক্ষাপটে (ইসরায়েলের) অবস্থান শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি সংঘাতে গিয়ে ঠেকবে।’
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করছেন। যদিও ইসরায়েল প্রতিনিয়ত গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনিই নাকি ৩ হাজার বছরে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এনেছেন।
আর ট্রাম্প প্রশাসনের সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তাকৌশল বলছে, এ অঞ্চল ‘সহযোগিতা, বন্ধুত্ব ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে উদীয়মান হচ্ছে’। এটি এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নিরাপত্তাকৌশলে অগ্রাধিকার পাওয়া অঞ্চল নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজের সামরিক ও কৌশলগত উপস্থিতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এ সময়ে ইসরায়েল এমন এক যুদ্ধের জন্য দেন–দরবার করছে, যা ওয়াশিংটনকে আবার সংঘাতে টেনে আনতে পারে।
শুধু ইসরায়েলি কর্মকর্তারাই নন, তাদের মার্কিন মিত্ররাও আবার ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন। এবার তাদের দাবি, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রকে তৎক্ষণাৎ মোকাবিলা করতে হবে; যদিও বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে আরেকটি সংঘাত ট্রাম্পঘোষিত মার্কিন নীতির অগ্রাধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তাই ট্রাম্প নেতানিয়াহুর এ ফাঁদে পা দেবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। নেতানিয়াহু যতই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিজের নিরাপত্তা ও বিশ্বের জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করুন; ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, গত জুনে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণরূপে শেষ করে দিয়েছে।
জাপানের গানমা প্রদেশে একটি এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ৫০টির বেশি যানবাহন। এতে অন্তত দুইজন নিহত এবং আরও অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। টোকিও থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মিনাকামি শহরের কান-এতসু এক্সপ্রেসওয়েতে দুটি ট্রাকের সংঘর্ষ থেকে দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। এরপর দ্রুতগতির আরও অনেক গাড়ি এসে ওই দুই গাড়ির ওপর আছড়ে পড়ে।
সংঘর্ষের পরই একের পর এক যানবাহনে আগুন ধরে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, এতে টোকিওর ৭৭ বছর বয়সি এক নারী এবং একজন ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তুষারপাতের সতর্কতার মধ্যে নিউ ইয়ারের ছুটি শুরু হওয়ায় সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাকগুলো রাস্তা আটকে দিলে পেছন থেকে আসা গাড়িগুলো পিচ্ছিল সড়কে ব্রেক করতে না পেরে একের পর এক ধাক্কা খায়।
দুর্ঘটনার এক প্রান্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, এতে ডজনখানেক যানবাহন পুড়ে যায়। প্রায় সাত ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন দমকলকর্মীরা। পুলিশ বলেছে, আগুনে কেউ আহত হননি এবং প্রায় ৭ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
এর আগে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ গত শুক্রবার গভীর রাতে ভারী তুষারপাতের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে। সাধারণত প্রত্যেক বছর বহু জাপানি নববর্ষের ছুটি শুরু করেন। এই দুর্ঘটনার কারণ জানতে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ভারতের কাশ্মিরে জৈশ ই মুহাম্মদ ও হিজবুল কমান্ডারদের খোঁজে বড় মাপের অভিযান শুরু হয়েছে। প্রায় ২০০০ সেনা জওয়ানকে এই অভিযানে নামানো হয়েছে। এ ছাড়া হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডারের খোঁজও করছে সেনাবাহিনী। ছাত্রু গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায় সেনার এই অভিযান বিগত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে। সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, কাশ্মিরে জৈইশের স্থানীয় কমান্ডার সাইফুল্লাহ ও তার সহযোগী আদিল- এই দুজনেই এখন কিশতওয়ারের ডোডা অঞ্চলের পাহাড়ে লুকিয়ে আছে। এই জঙ্গিদের একেক জনের মাথার দাম ৫ লাখ রুপি করে। এই আবহে কিশতওয়ারের ছাত্রু নামক গ্রাম থেকে এই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ডোবা অঞ্চলের সেওজধারে চিরুনি তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি কিশতওয়ারের এলাকাতেও অভিযান শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। অন্যদিকে আরেক অভিযানে কিশতওয়ারের পাদ্দের সাবডিভিশনে হিজবুল জঙ্গি কমান্ডার জাহিঙ্গির সারুরির খোঁজ শুরু করেছে সেনা। এ ছাড়া তার দুই সহযোগী মুদ্দাসির এবং রিয়াজেরও খোঁজ চালানো হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া তার অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। যুদ্ধের এই সময়ে দেশটির সামরিক শিল্পখাতে উৎপাদন বেড়েছে সর্বোচ্চ ২২ গুণ।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) ক্রেমলিনে প্রতিরক্ষা শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে এ তথ্য জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পুতিন জানান, ট্যাংক উৎপাদন বেড়েছে ২ দশমিক ২ গুণ, সামরিক বিমান উৎপাদন ৪ দশমিক ৬ গুণ, আর আঘাত হানার সক্ষম অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে ২২ গুণ।
রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পুতিন বলেন, বিশেষ সামরিক অভিযানে (এসএমও) অংশগ্রহণকারী সেনাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করছে প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি উল্লেখ করেন, যুদ্ধের ধরন ও কৌশল ক্রমাগত পরিবর্তিত হওয়ায় সেই অনুযায়ী সামরিক উৎপাদনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নোভোস্তি-কে উদ্ধৃত করে পুতিন বলেন, ২০২২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা ব্যবস্থার ফলে প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা জোরদার করতে পেরেছে, যার ফলে অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন অস্ত্র উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
তিনি জানান, সাঁজোয়া যুদ্ধযান ও সাঁজোয়া জনবাহী যান (বিএমপি ও এপিসি) উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ গুণ, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ১২ দশমিক ৫ গুণ এবং রকেট আর্টিলারি অস্ত্র উৎপাদন বেড়েছে ৯ দশমিক ৬ গুণ।
পুতিন আরও বলেন, এটি প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। একই সঙ্গে পুরো অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিশীল আর্থিক অবস্থান না থাকলে এমন অগ্রগতি সম্ভব হতো না।
তিনি জানান, বিশেষ সামরিক অভিযানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের একটি নতুন কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। যুদ্ধ চলাকালে লড়াইয়ের প্রকৃতি, ধরন ও পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় উৎপাদন ব্যয় কমানোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেন পুতিন। পাশাপাশি অস্ত্র পরীক্ষাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সক্রিয় ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
পুতিন বলেন, অস্ত্র খাতে মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করা হচ্ছে উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যবস্থার পেছনে, যা ভবিষ্যতের সশস্ত্র বাহিনীর রূপ নির্ধারণ করবে। এর মধ্যে রয়েছে কৌশলগত পারমাণবিক বাহিনী, মহাকাশ সম্পদ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এদিকে, রিয়া নোভোস্তি জানায়, আগামী ২০২৭-২০৩৬ মেয়াদের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অস্ত্র উৎপাদন কর্মসূচিতে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ সক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট সংখ্যক অস্ত্র বা সরঞ্জামের চেয়ে। এই কর্মসূচি গত ১৭ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলাউসভ উপস্থাপন করেন।
ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ আর চরম মানবিক সংকটের মধ্যেই রোববার মিয়ানমারে হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে ঠেকিয়েছে।
নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সামরিক জান্তা ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াইয়ে বিপর্যস্ত মিয়ানমার।
এই সংঘাতের মধ্যেই চলতি বছরের মার্চে এক শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সংকট তীব্রতর হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ২ কোটি মানুষের এখন জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি আর মুদ্রার মানের নজিরবিহীন পতনের ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ হাজার ৮০০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন ৩৬ লাখের বেশি মানুষ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, আগামী বছর মিয়ানমারে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তীব্র ক্ষুধার মুখে পড়বে, যার মধ্যে ১০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির খাদ্য সংকট ও ক্ষুধার তথ্য গোপন করতে গবেষক ও ত্রাণকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে জান্তা সরকার।
এরই মধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিয়ানমারে প্রয়োজনীয় ত্রাণের মাত্র ১২ শতাংশ তহবিল সংগৃহীত হয়েছে, যা দেশটিকে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ‘আন্ডার-ফান্ডেড’ বা চরম অর্থসংকটের অঞ্চলে পরিণত করেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। ডব্লিউএফপির তথ্য বলেছে, এ বছর মিয়ানমারে ৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।
এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজনের শারীরিক বিকাশ পুষ্টির অভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
এক সময় এ অঞ্চলের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত মিয়ানমার এখন ধুঁকছে। চলতি মাসে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশে ফিরতে পারে।
মূলত ভূমিকম্প পরবর্তী পুনর্গঠন কার্যক্রম এই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তবে মূল্যস্ফীতি এখনো ২০ শতাংশের উপরে।
অন্যদিকে, বিদ্যুতের তীব্র সংকটে ভুগতে থাকা মিয়ানমারে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি বড় বিনিয়োগ চুক্তি করেছে জান্তা সরকার, যা দেশটির জ্বালানি খাতে রুশ কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে কেনেডি সেন্টারের নাম পরিবর্তন করে ‘ট্রাম্প-কেনেডি সেন্টার’ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। নাম পরিবর্তনের খবর প্রকাশ হলে এই নামটি ফেডারেল আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত এবং এটি এভাবে বদলানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছিলেন কেনেডি পরিবারের সদস্য জো কেনেডি।
জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসে ট্রাম্পের নাম যুক্ত করা নিয়ে মামলা করেছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির আইনপ্রণেতা জয়েস বিটি। মার্কিন আইনের অধীনে কেনেডি সেন্টারের বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত কয়েক জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতার একজন বিটি। তিনি মামলায় দাবি করেছেন, নাম পরিবর্তনের উদ্যোগটি অবৈধ। কারণ কেন্দ্রের নাম পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। মামলায় বলা হয়েছে, নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত বোর্ড সভায় বিটি ফোনে যুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আপত্তি জানাতে গেলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।
গত সপ্তাহে কেনেডি সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদ ভোটের মাধ্যমে এই পারফর্মিং আর্টস কেন্দ্রটির নাম পরিবর্তন করে ‘ট্রাম্প-কেনেডি সেন্টার’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটিতে ট্রাম্পের বহু মিত্র বসে আছেন। কেনেডি সেন্টারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বর্তমানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজে ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৪ জন সদস্য এবং আইনের মাধ্যমে মনোনীত আরো ২৩ জন সদস্য রয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেনেডি সেন্টারের একাধিক বোর্ড সদস্যকে বরখাস্ত করে নিজের মিত্রদের নিয়োগ দেন। এরপর বোর্ড তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে এবং তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড গ্রেনেল বোর্ডের সভাপতি হন।
নতুন বছরের শুরুতেই অর্থাৎ ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হতে পারে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৩ এর বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে, নতুন বছরের শুরুতেই গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা আছে।
চ্যানেল ১৩ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছেন যে, গাজা চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ জানুয়ারির শুরুতেই কার্যকর হবে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, গাজার নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে যান, সে বিষয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
মিডল ইস্ট মনিটরের তথ্যমতে, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এবং ট্রাম্পের পৃষ্ঠপোষকতায় গত ৯ অক্টোবর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস দুই ধাপের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও দ্বিতীয় ধাপে যেতে বিলম্বের কারণে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৭১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ফিলিস্তিনি যোদ্ধার হামলায় দুই ইসরায়েলি দখলদার নিহত
অধিকৃত উত্তর ফিলিস্তিনের জেনিন অঞ্চলে বেইত শা'ন এলাকায় এক ফিলিস্তিনির যোদ্ধার পরপর দুই অভিযানে অন্তত দুই দখলদার অবৈধ বসতি-স্থাপনকারী ইসরায়েলি নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলি রেডিও জানিয়েছে, এক ফিলিস্তিনি যুবক গাড়ি চাপা দিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে বেইত শান এলাকায় দখলদার ইহুদিবাদী বসতি-স্থাপনকারীদের ওপর হামলা চালান।
ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যম বলেছে, ওই ফিলিস্তিনি যুবক জেনিন শহরের কাছে অবস্থিত কাবাতিয়া গ্রামের অধিবাসী। তিনি কয়েক দিন আগে বেইত শান এলাকায় আসতে সক্ষম হন যা তার গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে।
প্রথমে এই যুবক একজন ইসরায়েলিকে তার গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেন ও তাকে মারাত্মকভাবে আহত করেন এবং পরে তিনি গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আরেক ইসরায়েলির ওপর ছুরিকাঘাত করলে সেই দখলদার ইসরায়েলিও পরে মারা যায়।
আরও ৬ ইসরায়েলি এই ফিলিস্তিনি যোদ্ধার অভিযানে আহত হয়েছে। ইসরায়েলি পুলিশ তার ওপর গুলি চালায় ও তাকে গ্রেপ্তার করে ঘটনাস্থল থেকে।
ফিলিস্তিনের এই বীর যোদ্ধা ইসলামী জিহাদ আন্দোলনের সদস্য বলে কোনো কোনো গণমাধ্যম জানিয়েছে।
সম্প্রতি গাজা ছাড়াও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী ও অবৈধ বসতি-স্থাপনাকারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষাপটে এই অভিযানের ঘটনাটি ঘটল।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে চুক্তির প্রস্তুতি নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই বৈঠকের আগে ইউক্রেনের রাজধানী ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) এই হামলার আগে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। যুদ্ধ থামার পর কোন পক্ষ কোন এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে এই বৈঠকে মূলত তা নিয়েই আলোচনা হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধ করার জন্য ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করলে কিয়েভে বিস্ফোরণ শোনা যেতে থাকে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। আর দেশটির বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার ড্রোনগুলো কিয়েভের পাশাপাশি দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় হামলা অব্যাহত ছিল আর আকাশ হামলার সতর্কতা জারি ছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।
রাশিয়ার হামলার সময় পোল্যান্ড তাদের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের জেশুফ ও লুব্লিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। এই দুটি শহর ইউক্রেনের পশ্চিমে। এক্স এ পোল্যান্ডের এয়ার নেভিগেশন পরিষেবা সংস্থা জানায়, এ সময় পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনী তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে উড়িয়েছিল। রাশিয়া এইসব হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই চুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে ভূখণ্ড। জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে পরিচালিত শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফার খসড়ার মধ্যে ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চুক্তি প্রায় প্রস্তুত।
‘নতুন বছরের আগেই অনেক সিদ্ধান্ত হতে পারে,’ সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার পেছনের চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন নিউজ ওয়েবসাইট পলিটিকোকে তিনি বলেছেন, ‘আমি অনুমোদন না করা পর্যন্ত তার কিছুই নেই। তাই তার কাছে কী আছে আমরা দেখব।’
বৈঠকের আগে শনিবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কি টেলিফোনে কথা বলবেন। তাদের এ কথোপকথনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা যোগ দেবেন বলে কমিশনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের রাজধানীতে শক্তিশালী বিস্ফোরণ
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) একাধিক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ সময় কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির মুখে রয়েছে রাজধানীটি।
টেলিগ্রামে বার্তা দিয়ে কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলেন, রাজধানীতে বিস্ফোরণ হয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী কাজ করছে। সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকুন।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী শনিবার ভোরে সারা দেশে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা জানায়, রাজধানীসহ ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চলের ওপর দিয়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র চলাচল করছে।
কিয়েভে থাকা এএফপির সাংবাদিকরা একাধিক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান। এর মধ্যে কয়েকটির সঙ্গে তীব্র আলোও দেখা যায়। এ সময় কমলা রঙের আলো দেখা যায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ২০২২ সাল থেকে চলা যে সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, তা বন্ধের প্রস্তাবিত একটি পরিকল্পনা নিয়ে তাদের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
রাশিয়া অভিযোগ করে, জেলেনস্কি ও তার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া পরিকল্পনাকে ‘ভেস্তে দেওয়ার’ চেষ্টা করছেন।
জেলেনস্কি চলতি সপ্তাহে যে তথ্য প্রকাশ করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, সর্বসাম্প্রতিক এই পরিকল্পনাটি ২০ দফার একটি প্রস্তাব।
এতে বর্তমান ফ্রন্টলাইনেই যুদ্ধ স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি পূর্বাঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ রাখা হয়েছে, যেখানে নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোন গড়ে তোলা হতে পারে।
ভূখণ্ড বিনিময়ের ইঙ্গিত পুতিনের
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি সম্ভাব্য চুক্তির আওতায় দখলকৃত কিছু ভূখণ্ড বিনিময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাজি হতে পারেন বলে খবর প্রকাশ করেছে রুশ সংবাদপত্র কমেরসান্ত। তবে বিনিময় হিসেবে পুতিন পুরো দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
রাশিয়ার প্রথম সারির দৈনিক কমেরসান্ত-এর ক্রেমলিন সংবাদদাতা আন্দ্রেই কোলেসনিকভ জানান, ২৪ ডিসেম্বর রাতে ক্রেমলিনে এক বৈঠকে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের কাছে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন পুতিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন যে রাশিয়া এখনো ‘অ্যাঙ্কোরেজ’ সম্মেলনে দেওয়া ছাড়গুলো মেনে নিতে প্রস্তুত। অর্থাৎ দনবাস রাশিয়ারই থাকবে—এই নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কোলেসনিকভ লিখেছেন, দনবাসের বাইরে অন্য অঞ্চলে রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখণ্ডের আংশিক অদলবদল বা হস্তান্তরের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি পুতিন।
এদিকে বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, গত সপ্তাহে মায়ামিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ২০ দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পথে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল অনেকটাই এগিয়েছে। তবে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন যে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের অবশিষ্ট অংশ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি। এ ছাড়া বর্তমানে রুশ সেনাদের দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও বিতর্ক রয়ে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী ইউরোপের এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়নে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চলতি বছরে ভারতের বিজেপি সরকার তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে বেশ সরব ছিল। নানা রাজনৈতিক বক্তব্যে এবং আলোচনায় তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটিকে তুলে আনা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার মোদ্দা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে এই তকমা। তবে ভারত সরকার সেখানেই থেকে থাকেনি। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তারা ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে অন্তত ২ হাজার ২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে ২০২৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। বৈধ অনুমতি ছাড়া দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশের পরই এই তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।
বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যানের তুলনায় এবারের অভিযানের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, ২০২৩ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ জন। ২০২৫ সালে এই নাটকীয় বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে, জাতীয় রাজধানীর সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে দিল্লি পুলিশ লক্ষ্যবস্তু করে তথাকথিত অভিযান চালায়।
দিল্লি পুলিশের মতে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিল। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, এই ব্যক্তিরা স্থানীয় জনসমষ্টির সঙ্গে মিশে যেতে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ভুয়া আধার কার্ড, জাল ভোটার আইডি কার্ড এবং অন্যান্য জাল সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল।
তবে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করেনি দিল্লি পুলিশ। এমনকি দিল্লি পুলিশ বা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই যাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেয়নি; বরং এমনও একাধিক ঘটনা আছে, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি আসামেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ আছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সোনালী খাতুন এবং আসামের সকিনা বিবি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে জোর করে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ।
খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যই বলছে, অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাঁদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ভারতেও ফিরে যান। আদালতের আদেশ থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।
একইভাবে সকিনা বিবিকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম এই নারী ২০১৬ সাল থেকে কোকরাঝাঁড় ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাকে নিয়মিতভাবে নলবাড়ি থানায় হাজিরা দিতে হতো। তিনি সর্বশেষ এই বছরের ২৫ মে থানায় হাজিরা দেন—এরপর থেকে তাঁর পরিবার তাকে খুঁজে পায়নি।
আসামের নলবাড়ি জেলার বারকুরা গ্রামের বাসিন্দা সকিনা বেগমকে গত মে মাসে তার বাড়ি থেকে হেফাজতে নেয় আসাম পুলিশ। এরপর তিনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন এবং তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। জুনের প্রথম সপ্তাহে সকিনাকে ঢাকার মিরপুর ভাষানটেক এলাকায় রাস্তার পাশে একজন পথচারী খুঁজে পান। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে কিছুদিন বন্দী ছিলেন। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তার মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।