আফ্রিকার দেশ সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) সংঘর্ষে অন্তত ৫৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী এবং আরএসএফ দুপক্ষই দাবি করেছে তারা দেশটির রাজধানী খার্তুমের বিমানবন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাতভর সেখানে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল।
রোববার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘর্ষে অন্তত ৫৯৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিন কর্মীও রয়েছেন। তারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে (ডাব্লিউএফপি) নিয়োজিত ছিলেন।
এর আগে গত শনিবার বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, খার্তুমে দেশটির সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিটের সঙ্গে আরএসএফের সংঘর্ষ হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ কয়েকটি জায়গায় বিস্ফোরণ ও ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এদিন উত্তরাঞ্চলীয় মেরোওয়ে শহর থেকেও লড়াইয়ের খবর পাওয়া যায়।
দেশটিতে প্রস্তাবিত বেসামরিক সরকারকে একীভূত সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়েছে বলে বিবিসির সংবাদদাতা এমানুয়েল ইগুঞ্জা জানান।
সামরিক বাহিনীর এই দুই অংশের মধ্যে সংঘাতের একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার আরএসএফ উত্তরের মেরওয়ে শহরের একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে তাদের সেনাদের মোতায়েন করে।
সুদানের নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তা আল বুরহান বলেছেন, তিনি তার ডেপুটি এবং আরএসএফের অধিনায়ক মোহামেদ হামদান দাগালোর সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক।
জেনারেল বুরহান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতরতা চলছে।
সুদানের রাজনৈতিক দলগুলো এর আগে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তারা উভয় পক্ষকেই সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে একের পর এক মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন ৩৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। তারা সবাই সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।
নৌকাটি বৃহস্পতিবার তিউনিসিয়ার বন্দর শহর এসফ্যাক্সের কাছ থেকে যাত্রা করেছিল বলে জানিয়েছেন ফাওজি এল মাসমোওদি নামে শহরটির এক আদালত মুখপাত্র। সর্বশেষ এই নিখোঁজের ঘটনাসহ মোট নিখোঁজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭ জনে।
বৃহস্পতিবার ইতালিয়ান কোস্ট গার্ড জানিয়েছিল, দক্ষিণ ইতালি থেকে দুটি অভিযানে তারা ৭৫০ জনের মতো শরণার্থী উদ্ধার করেছে। যার কয়েক ঘণ্টা আগেই তিউনিসিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি আসার পথে ৩৩ জন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
হুসেম জেবাবলি নামে তিউনিসিয়ার এক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের কোস্ট গার্ড গত দুই দিনে ইতালি যাচ্ছে এমন ৫৬টি নৌকা থামিয়ে দিয়েছে এবং ৩ হাজারেরও বেশি লোককে আটক করেছে। যাদের বেশিরভাগই সাব-সাহারা অঞ্চলের বাসিন্দা।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, এ বছরে তিউনিসিয়া থেকে যাত্রা করে অন্তত ১২ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালি পৌঁছেছে। অথচ ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩ শ।
উন্নত জীবনের আশায় দারিদ্র্য ও সংঘাতকবলিত আফ্রিকা থেকে ইউরোপে পাড়ি দেয়া একটি নিয়মিত ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রা শুরুর জন্য তিউনিসিয়ার এসফ্যাক্স উপকূল তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আগে লিবিয়া ছিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রধান পথ।
জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৭) অবশেষে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা গত শনিবার দীর্ঘ আলোচনা, বিতর্ক ও দর-কষাকষি করেন। অবশেষে ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে তারা মতৈক্যে পৌঁছান।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সহায়তার জন্য ওই তহবিল গঠন করা হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা তহবিল চেয়ে দরিদ্র দেশগুলো ৩০ বছর ধরে বিত্তশালী দেশগুলোকে চাপ দিচ্ছিল। সেই বিবেচনায় এবারের জলবায়ু সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বড় অর্জন।
তবে সমালোচকরা বলছেন, মিসরে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলন বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী কার্বন নির্গমন কমানোর ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগের ব্যবস্থা করতে পারেনি। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্য হারে কমানো কতটা জরুরি, সে বিষয়ে এবারের সম্মেলনে যথাযথ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়নি। পৃথিবী নামের গ্রহটি এখনো ‘চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের কক্ষে’ পড়ে আছে।
এবারের সম্মেলনে জলবায়ুনীতি বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়াকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি।
বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চাইতে সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার ব্যাপারে পূর্ববর্তী জলবায়ু সম্মেলনে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, সেটি বজায় রাখার ব্যাপারে এবারের সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, এই সীমারেখা লঙ্ঘন করলে কোটি কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগের শিকার হবে।
তবে জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বিভিন্ন দেশের সরকার এখন যে নীতিমালা অবলম্বন করছে তাতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর দেড় ডিগ্রি যে সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটির বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন নির্গমনে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এই দুই দেশ নিজেদের কার্বন নির্গমনের রাশ টেনে ধরার ব্যাপারে যথেষ্ট উদ্যোগী নয়। এবারের সম্মেলনেও এই দুই দেশের তেমন সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়নি।
দুই সপ্তাহব্যাপী আলোচনার পর সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো মতৈক্যে পৌঁছেছে, সেগুলোর মধ্যে কার্বন নির্গমন হ্রাস, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সীমা নির্ধারণ ও জ্বালানির ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কপ২৭-এর আলোচনায় অবিলম্বে, গভীরভাবে, দ্রুত এবং টেকসই উপায়ে কার্বন বা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এটি অপরিহার্য।