ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মুখোমুখি বৈঠক করেছেন। উজবেকিস্তানের সমরখন্দে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে এক টেবিলে বৈঠক করেন তারা। দুই নেতা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে নিজেদের কৌশলগত সম্পর্কের প্রশংসা করেন।
সমরখন্দে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে পুতিন-চিন পিংয়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুই দেশের অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পুতিন তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজের মনোভাব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সম্প্রতি একমুখী বিশ্ব গড়ার যে চেষ্টা শুরু হয়েছে তা খুবই বাজে এবং একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
এ সময় ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করেন পুতিন। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাইওয়ান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপের সমালোচনায় মুখর হন পুতিন। তিনি ‘একক চীন’ নীতির প্রতি রাশিয়ার সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং তাইওয়ান প্রণালি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের উপগ্রহ কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানান। উল্লেখ্য, তাইওয়ানে সামরিক বাহিনীকে সরাসরি শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে মার্কিন সিনেট কমিটি গত বুধবার থেকে কাজ শুরু করেছে।
তাইওয়ান-চীনের সম্পর্ক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। স্বশাসিত দ্বীপটিকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে চীন। গত আগস্টে তাইওয়ানে মার্কিন কংগ্রেস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর খেপে আছে চীন। অপরদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে কিয়েভকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পাহাড় চাপিয়েছে।
বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্টকে চিন পিং বলেন, পরাশক্তির ভূমিকা গ্রহণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক চীন। সামাজিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত বিশ্বে স্থিতিশীলতা ফেরাতে ও ইতিবাচক শক্তি জোগাতে পথপ্রদর্শকের ভূমিকাও পালন করতে চায় বেইজিং।
চীনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, পারস্পরিক গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী চীন।
সম্মেলনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্র্রী নরেন্দ্র মোদির গতকাল শুক্রবার একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা জানানো হয়েছে।
একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আরও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। শনিবার শুরু হওয়া নতুন আলোচনার পর তারা এই প্রস্তাব দিয়েছে । গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর উভয় পক্ষের মধ্যে এই আলোচনা শুরু হলো। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতেই ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৯ জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত নতুন চুক্তিতে প্রতিদিন ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের গাজায় প্রবেশ এবং অসুস্থ বা রোগীদের গাজা থেকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে।
দোহায় দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবিত চুক্তি সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা এই আলোচনার আগে জানিয়েছে যে, তারা গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার বা যুদ্ধ বন্ধের কোনো অঙ্গীকার করবে না। জবাবে ইসরায়েল হামাসের হাতে এখনো আটকে থাকা সব জিম্মি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। অভিযানে বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। কারণ ইসরায়েল খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা সেখানে যেতে দিচ্ছে না।
এর আগে হামাসকে ধ্বংস করতে ও গাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযানের কথা বলেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা থেকে সাংবাদিক ঘাদা আল কুর্দ বিবিসি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে সেখানে ব্যাপক হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ফুটেজগুলোয় ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, গাজায় বহু মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না। কিন্তু ইসরায়েল সরকার বারবার গাজায় খাদ্য সংকটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল থেকে ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়ো রোজ বিবিসি রেডিও ফোর-এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, তার টিম অবসন্ন হয়ে পড়েছে এবং কর্মীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওজন হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিশুরা খুবই লিকলিকে হয়ে পড়েছে। আমরা অনেককে পেয়েছি যাদের দাঁত পড়ে গেছে। অনেকে পুড়ে আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ইনফেকশনের প্রবণতা আছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ৫ মে বলেছেন, তারা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ওই অঞ্চলে তার সফর শেষ করেছেন। আইডিএফ বলছে, সব জিম্মির মুক্তি এবং যত দিন হামাসকে আর কোনো হুমকি মনে না হবে, তত দিন তাদের অভিযান চলবে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে নিহত ১০০
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে কমপক্ষে ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে নতুন করে মধ্যস্থতা শুরু করেছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল-দেকরান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘রাতভর আমরা অন্তত ১০০ জন শহীদের খবর পেয়েছি। অনেক পরিবার পুরোপুরি মুছে গেছে নাগরিক নিবন্ধন তালিকা থেকে।’
বিমান হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে গাজাজুড়ে বিস্তৃত হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল, যার লক্ষ্য হলো নতুন একটি স্থল অভিযান চালিয়ে গাজার নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ’নিশ্চিত করা।
ইসরায়েল মার্চের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানির প্রবেশ বন্ধ রেখেছে, যাতে হামাসকে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি দিতে চাপ দেওয়া যায়। একই সঙ্গে গাজা পুরোপুরি দখল ও ত্রাণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও অনুমোদন করেছে দেশটি। হামাস বলেছে, তারা কেবল যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলিদের মুক্তি দেবে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন দফায় মধ্যস্থতা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। তবে আলোচনার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ আরাবিয়া ও বিবিসি জানিয়েছে, হামাস একটি প্রস্তাব দিয়েছে- যার আওতায় তারা দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রায় অর্ধেককে মুক্তি দিতে চায় এবং এর বদলে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের ছাড়ার দাবি জানিয়েছে।
রয়টার্সকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের অবস্থান অপরিবর্তিত- তারা শুধু নিজেদের জিম্মিদের মুক্তি চায়, যুদ্ধ শেষের কোনও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই। এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতিতে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবরে। তবে হামাস বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি, আর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও কোনও মন্তব্য আসেনি।
ইসরায়েলের এই সংকটের মধ্যেও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পরিবর্তে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে দায়ী করেছেন এক জিম্মির মা। মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার এক্স-এ লিখেছেন, সরকার শুধু আংশিক চুক্তিতে আগ্রহী। তারা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে ইচ্ছাকৃত। আমাদের সন্তানদের ফেরত আনুন, সব, ৫৮ জনকেই!’
রাতের এক হামলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে একটি তাঁবুতে আঘাত হানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এতে নারী-শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হন, আহত হন অনেকে এবং বেশ কয়েকটি তাঁবু আগুনে পুড়ে যায়। হামাস এই ঘটনাকে নতুন একটি নৃশংস অপরাধ বলে অভিহিত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকেই এই সহিংসতার জন্য দায়ী করেছে।
ভারতের সেনাবাহিনী বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী আরো জানিয়েছে, প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির মেয়াদের কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ আজ এই খবর জানায়।
রোববার একজন সেনা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী ছিল এবং আজই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশনস) আলাপচারিতায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তার কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই।’
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, রোববার ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমওদের মধ্যে কোনো আলোচনা হওয়ার সময়সূচী নির্ধারিত ছিল না।
এর আগে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ১৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ১০ মে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে, ভারত ও পাকিস্তান ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভারত ও পাকিস্তানের চার দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার পর এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর দীর্ঘ আলোচনার পর তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতব্যাপী দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ পরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে ভারত ও পাকিস্তান।
ফিলিস্তিনের গাজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো হামাসকে পরাজিত করা এবং যারা এখনো হামাসের হাতে জিম্মি আছে তাদের মুক্ত করা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই ঘোষণা দিয়েছে। অপারেশন গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামে এই অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা বলছে, এই অভিযানে গাজার কৌশলগত এলাকা দখল করবে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। গত মার্চে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সমাপ্তির পর ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, গাজায় অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের এক পোস্টে অপারেশন গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামটি ব্যবহার করেনি। তবে তারা বলেছে, হামাস যতদিন হুমকি হিসেবে থাকবে এবং সব জিম্মি ফিরে না আসে, ততদিন অভিযান চলবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা গাজাজুড়ে ১৫০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে, বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ইসরায়েল সীমান্তে ট্যাঙ্ক ও সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে যুদ্ধবিরতির দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এই নতুন অভিযান থেকে বোঝা যাচ্ছে, কূটনৈতিক চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামটি বাইবেলের একজন যোদ্ধার নাম থেকে নেওয়া এবং এই অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনারা গাজার কিছু এলাকা দখল করে রাখবে, বেসামরিক লোকজনকে দক্ষিণে পাঠাবে, হামাসকে আক্রমণ করবে এবং ত্রাণের ওপর হামাসের নিয়ন্ত্রণ ঠেকাবে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভল্কার টার্ক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েলের এই তীব্র আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। তিনি বলেন, যেভাবে মানুষকে জোর করে সরানো হচ্ছে, এলাকাগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে এবং মানবিক সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে এতে গাজায় স্থায়ীভাবে মানুষের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা জাতিগত নির্মূলের মতো এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার জনগোষ্ঠী বর্তমানে ‘চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে’ রয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার বারবার দাবি করে আসছে, গাজায় কোনো খাদ্য সংকট নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার উদ্দেশ্য ওই এলাকা তাদের দখলে রাখা। তবে ইসরায়েলি সরকার এটিও বলেছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই অভিযান শুরু হবে না। শুক্রবারই ট্রাম্প সফর শেষে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপরই ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখনো হামাসের কাছে ৫৭ জন জিম্মি রয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে।
গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন হলিউড তারকারা
গাজায় চলমান সহিংসতা ও ‘গণহত্যা’র বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র শিল্পের নীরবতার নিন্দা জানিয়ে একটি উন্মুক্ত প্রতিবাদপত্রে নতুন করে যোগ দিলেন হলিউডের জনপ্রিয় তারকারা। সম্প্রতি অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স, পেদ্রো পাসকাল, রিজ আহমেদ ও পরিচালক গুইয়ারমো দেল তোরোদের মতো শিল্পীরা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা।
আরব নিউজ জানিয়েছে, এই চিঠিতে ৩৭০ জনেরও বেশি অভিনেতা, পরিচালক ও চলচ্চিত্রকর্মী স্বাক্ষর করেছেন। তারা গাজায় ফাতিমা হাসুনা নামে এক ফটোসাংবাদিকের হত্যারও তীব্র প্রতিবাদ জানান। ফাতিমা ‘Put Your Soul in Your Hand and Walk’ নামক একটি তথ্যচিত্রে কাজ করেছিলেন, যা বৃহস্পতিবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কান উৎসবের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশও। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিনোশ বলেন, ‘সে (ফাতিমা) আজ আমাদের সঙ্গে এখানে থাকার কথা ছিল।’ তিনি জানান, ফাতিমা তথ্যচিত্রটি কানে নির্বাচিত হওয়ার খবর জানার পরদিনই পরিবারের আরও ১০ সদস্যসহ ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রাণ হারান। এ ছাড়া প্রতিবাদপত্রে যোগ দিয়েছেন, রুনি মেরা, মার্কিন স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক জিম জারমাশ এবং ‘লুপিন’ সিরিজের তারকা ওমর সি-ওর মতো হলিউডের পরিচিত মুখ।
চিঠিতে আরও স্বাক্ষর করেছেন ‘শিন্ডলারস লিস্ট’খ্যাত রেইফ ফাইনস, রিচার্ড গিয়ার, মার্ক রাফালো, গাই পিয়ার্স, সুসান সার্যান্ডন, হাভিয়ের বারডেম, পরিচালক ডেভিড ক্রোনেনবার্গ, পেদ্রো আলমোডোভার, আলফোনসো কুয়ারন, মাইক লি প্রমুখ। তারা বলেন, আমরা লজ্জিত যে আমাদের শিল্পজগৎ গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ নিয়ে মুখ খুলছে না।
ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের ছক যুক্তরাষ্ট্রের
ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে দিতে একাধিক আফ্রিকান দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ প্রচেষ্টা আরও স্পষ্ট হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটকে নতুনভাবে সমাধানের নামে গাজাবাসীদের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানায়, গাজাবাসীদের জন্য মরক্কো, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডকে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশগুলোর রাজনৈতিক দুর্বলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে এসব অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরপর মার্চে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, পূর্ব আফ্রিকার ৩টি দেশ-সুদান, সোমালিয়া ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে আলোচনা করেছে।
ভারতের হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইওম-ই-তাশাকুর পালন করছে পাকিস্তান। দেশটিতে ভারতের হামলায় নিহত সেনা ও শহীদদের জন্য এ দিবস পালন করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইওম-ই-তাশাকুর পালন করে পাকিস্তান। খবর জিও নিউজের ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানজুড়ে শুক্রবার নাগরিকরা একত্রিত হয়ে ইউম-ই-তাশাকুর (কৃতজ্ঞতা দিবস) পালন করেছে। অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুসের সাফল্য উদযাপন এবং পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।
জিও নিউজ জানিয়েছে, হাফিজাবাদে আঞ্জুমান তাজিরান প্রেস ক্লাব থেকে ফাওয়ারা চক পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটি র্যালি করা হয়েছে। এছাড়া কামালিয়ায় সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে কালমা চক পর্যন্ত একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সমাবেশে নাগরিকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
সুক্কুরে মিউনিসিপাল করপোরেশন ওয়াকিং ট্র্যাক পার্কে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে সিন্ধের সবচেয়ে উঁচু জাতীয় পতাকা ৩০০ ফুট উচ্চতায় উত্তোলন করা হয়। মুলতানে জেলা কাউন্সিল অফিস থেকে চক কাচেরি পর্যন্ত একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ধর্মীয় পণ্ডিত এবং নাগরিকরা অংশগ্রহণ করেন।
মুজাফফারাবাদে এ দিবসে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। এ সময় সেখানে মন্ত্রী এবং প্রধান সচিব ফুলের মালা অর্পণ করেন। এ ছাড়া প্রশাসন তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করে। একইভাবে, আথমুকামে জেলা কমপ্লেক্সে একটি পতাকা সম্মান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় এবং পুলিশ পাকিস্তানি ও কাশ্মীরি পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
ফয়সালাবাদে জেলা কাউন্সিল চক থেকে ঘণ্টাঘর চক পর্যন্ত একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, আরপিও এবং স্থানীয় এমএনএরা। ডেরা গাজী খানের সম্প্রদায় পুলিশ লাইন্স মসজিদে শহীদদের সম্মানে কোরআন খতম করা হয়েছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে চকলালা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জাতীয় ঐক্য ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া এবং পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গোজরায় আঞ্জুমান তাজিরান এবং রেলওয়ে রোডের বাসিন্দারা বিশাল সমাবেশ পালন করেছেন। এতে বার অ্যাসোসিয়েশন এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অংশগ্রহণ করে এবং শহীদদের জন্য কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করা হয়।
এর আগে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ভারতের অপ্রত্যাশিত ও কাপুরুষোচিত আক্রমণে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ১১ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭৮ সেনা। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এ যুদ্ধে ৪০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাত নারী ও ১৫ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া হামলায় আরও অন্তত ১২১ জন আহত হয়েছেন।
আইএসপিআর জানায়, গত ৬-৭ মে রাতে ভারত পেহেলগাম হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে অপারেশন সিঁদুরের নামে পাকিস্তানে বিমান হামলা শুরু করে, যার ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর উভয়পক্ষ সপ্তাহব্যাপী ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করে আমেরিকা। গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপিত হয়েছে।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, কনিয়া এবং আশেপাশের কয়েকটি শহরে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে অনুভূত হওয়া এ ভূমিকম্পে সাময়িক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল কনিয়ার কুলু জেলা। ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকাল নাগাদ অনুভূত হয় এবং রাজধানী আঙ্কারাসহ মধ্য তুরস্কের বেশ কয়েকটি প্রদেশে এর কম্পন সুস্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায়।
এএফএডি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং সম্ভাব্য আফটারশক বা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মাথায় রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে রাজধানী আঙ্কারায় ভূমিকম্পের কম্পন বেশ তীব্রভাবে অনুভূত হওয়ায় লোকজন ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানা গেছে, তবে তা খুব দ্রুতই পুনরুদ্ধার করা হয়।
তুরস্ক একটি প্রবল ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। কারণ দেশটি ইউরেশিয়ান এবং আনাতোলিয়ান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ফলে মাঝেমধ্যেই এখানে মাঝারি ও শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্প বড় ক্ষতির কারণ না হলেও, এটি একটি সতর্কবার্তা। নগর পরিকল্পনা ও নির্মাণনীতিতে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে, গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় এক দিনে ১৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মেডিকেল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্প থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, আল-তাওবাহ ক্লিনিকের ওপরের তলায় রোগীরা হতাহত হয়েছেন। এখানকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। যদিও সরকার পরিচালিত মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ এবং ধারণা করা হচ্ছে তারাও মারা গেছেন। ফলে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে আনুমানিক এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে নেওয়া হয়।
গাজা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করায় বেন কোহেন বহিষ্কার
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোয় মার্কিন সিনেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আইসক্রিম কোম্পানি বেন অ্যান্ড জেরির সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রবীণ প্রগতিশীল অ্যাকটিভিস্ট বেন কোহেনকে। সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার কারণে তিনি সাময়িক গ্রেপ্তার হন, পরে মুক্তি পান।
গত বুধবার মার্কিন পার্লামেন্টের সিনেটের বাজেট শুনানির সময় ৭৪ বছর বয়সি বেন কোহেন উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের বাজেট প্রস্তাবের বিরুদ্ধাবস্থায় কোহেন এবং অন্যান্য প্রতিবাদকারী সদস্যরা কংগ্রেসের সামনে স্লোগান দিতে শুরু করেন। কোহেন বলেন, ‘কংগ্রেস গাজায় শিশু হত্যা করতে বোমা কেনে, অথচ দেশের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সুবিধা কমিয়ে দেয়।’ এই প্রতিবাদে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হন।
গ্রেপ্তারের আগে তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। মার্কিন ক্যাপিটল পুলিশ জানায়, কোহেনের বিরুদ্ধে একটি অপকর্মের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আরও ছয় প্রতিবাদকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
বেন কোহেন পরবর্তীতে বলেন, এ পরিস্থিতি আর সহ্য করার নয়। যুক্তরাষ্ট্র দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক খাত সংকুচিত করে, একই সঙ্গে ইসরায়েলের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বরাদ্দ করে আসছে, যা একটি ‘কেলেঙ্কারি’। তিনি বলেন, আমেরিকার নাম ও অর্থ ব্যবহার করে যে কাজগুলো করা হচ্ছে, তা দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রতি অবমাননাকর। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি জনমত ক্রমশ নেতিবাচক হচ্ছে।
কোহেন এটিকে শুধু রাজনৈতিক নয়, এক গভীর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংকট হিসেবেও দেখেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য আমাদের অর্ধেকের বেশি বাজেট ব্যয় হলে যদি তার অর্ধেকটাই মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দেওয়া যেত, তাহলে বিশ্বে এত সংঘাত হতো না।’ কোহেনের বক্তব্য স্পষ্ট যে, শান্তি ও মানবতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ন্যায্য ও সমন্বিত নীতি গ্রহণ করা।
এদিকে ফের ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা দখল করার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় একটি অনুষ্ঠানে গাজা নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ভালো হবে। এরপর সেখানে ‘ফ্রিডম জোন’ তৈরি করা হবে। এতে সেখানে সব মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘গাজার জন্য আমার পরিকল্পনা আছে। যেগুলো আমি মনে করি ভালো। চলুন গাজাকে একটি ফ্রিডম জোন হিসেবে তৈরি করি। এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত হতে দিন। আমি খুবই গর্বিত হবো, যদি গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র নেয় এবং এটিকে একটি ফ্রিডম জোনে পরিণত করে। ভালো কিছু হতে দিন। মানুষকে এমন বাড়িতে রাখুন, যেখানে তারা নিরাপদে থাকবে। গাজার সমস্যা কখনো সমাধান করা হয়নি। তবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে আগে হামাসকে মোকাবিলা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দখলদার ইসরায়েলে চালানো হামাসের অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড নিয়েও মন্তব্য করেন। ট্রাম্প দাবি করেন, এটি মানব ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনা ছিল। তিনি বলেন, হামাসকে মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখুন, বিশ্বের ইতিহাসে ৭ অক্টোবর ছিল অন্যতম খারাপ দিন। আমি মনে করি শুধু এই অঞ্চলে নয়, এটি ছিল (পুরো বিশ্বে) সবচেয়ে নৃশংস হামলা, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।
হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটার দিকে খান ইউনিস থেকে ৫৬ জন, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে চার জন এবং মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল। মুখপাত্র আরো জানান, খান ইউনিসের ১৩ সদস্যের সামুর পরিবারের নাম নাগরিক নিবন্ধন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোর পাশাপাশি উত্তরে বেসামরিক নাগরিকদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজা সিটির বাসিন্দাদের ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ‘তীব্র হামলা’ শুরু হওয়ার আগেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য চলে যেতে বলা হয়েছে। বিশেষভাবে ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, আল-শিফা হাসপাতাল এবং তিনটি স্কুল খালি করার কথা বলেছে ইসরায়েল।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের অবসানে কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করতে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাওয়ার পর—তা পুনরায় শুরুর উদ্যোগের অংশ হিসেবে জেলেনস্কি এই সফর করছেন।
জেলেনস্কি বলেন, তিনি ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে প্রস্তুত।
বুধবার(১৪ মে) জেলেনস্কি বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়া থেকে কে আসবেন—তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নেব—ইউক্রেনের কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের বরাতে তাদের কাছ থেকে পাওয়া ইঙ্গিতগুলো বিশ্বসযোগ্য নয়।’
তবে ক্রেমলিন ঘোষণা করেছে, বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলের শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দেবেন না। তবে, রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্টের সহকারী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি।
আনাতোলিয়ায় ন্যাটোর অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ‘ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনা আশা করি আমাদের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’
এরআগে ২০২২ সালের মার্চে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকে উভয়পক্ষ যুদ্ধ বন্ধে একমত হতে পারেননি।
এবারের শান্তি আলোচনায় পুতিনের যোগ না দেওয়াতে পশ্চিমারা তার ব্যাপক সমালোচনা করছেন। ক্রেমলিন সত্যিই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান প্রচেষ্টায় আগ্রহী নয় বলেও প্রশ্ন তুলছেন তারা।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৮২ জন নিহত হয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার (১৫ মে) লাইভ আপডেট প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবরুদ্ধ উপত্যকাজুড়ে রাতভর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৭ জন ফিলিস্তিনি। পরে বৃহস্পতিবার সকালে গাজার খান ইউনিস শহরে চালানো হামলায় আরও অনেক হতাহত হয়। সবমিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা জানান, হতাহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপিরে এক ফটোগ্রাফার জানান, বুধবার দিবাগত রাত ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খান ইউনিস শহরে অন্তত ১০টি বিমান হামলা তিনি প্রত্যগণনা করেছেন। হামলায় নিহতদের লাশ শহরের নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নিহতদের অনেকের দেহ খন্ড বিখন্ড ছিল। যেগুলোকে একটি ব্যাগে ভরানো হয়েছিল। হাসপাতালটির মর্গ সূত্র ৫৪ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কাতারের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল আরারি টিভির সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। টেলিভিশন নেটওয়ার্কটি তাদের সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, পরিবারের ১১ সদস্যসহ সাংবাদিক হাসান সামুর খান ইউনিসে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলি বাহিনী হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানায়নি।
বুধবার থেকে গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে রাতভর এটি দ্বিতীয় ভয়াবহ বিমান হামলা। যাতে অসংখ্য নারী ও শিশু হতাহত হয়েছে।
ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ২৭ জায়গার নতুন নামকরণের ঘোষণা দিয়েছে চীন। এ কারণে চীনকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে ভারত। গতকাল বুধবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বেইজিংয়ের এই প্রচেষ্টাকে ‘অকার্যকর ও হাস্যকর’বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নয়াদিল্লি বলেছে, চীনের এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, চীন বারবার ভারতের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নাম দিয়ে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আমরা এমন প্রচেষ্টা স্পষ্টভাবে নাকচ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের সৃজনশীল নামকরণ বাস্তবতা বদলাতে পারে না। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য ও অখণ্ড অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।’
গত ১১ মে চীনের বেসামরিক-বিষয়ক মন্ত্রণালয় অরুণাচলের ২৭টি জায়গার নতুন নামকরণ করে। যার মধ্যে রয়েছে ১৫টি পাহাড়, চারটি রাস্তা, দুটি নদী, একটি লেক এবং পাঁচটি বসতি এলাকা।
সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, চীন পঞ্চমবারের মতো অরুণাচলের জায়গার নাম পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে দুই দেশের সেনারা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) থেকে সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার চুক্তি করার পর প্রথমবারের মতো বেইজিং আবার অরুণাচলের জায়গার নাম পরিবর্তন করেছে।
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ২০ ভারতীয় ও চার চীনা সেনা নিহত হয়। এরপর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তবে সম্প্রতি দুই দেশ দীর্ঘ চার বছর পর তিব্বতে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়েছে। এছাড়া একে অপরের প্রতি আস্থা তৈরির কাজও করছে।
তা সত্ত্বেও সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে সংঘর্ষ হয় সেটিতে চীন পাকিস্তানকে সহায়তা করে।
চীনের নামকরণের বিস্তৃতি
চীন বরাবরই অরুণাচল প্রদেশকে ‘জাংনান’ বা ‘দক্ষিণ তিব্বত’ হিসেবে দাবি করে আসছে এবং বারবার বিভিন্ন জায়গার নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ওই দাবি জোরালো করার চেষ্টা করছে। চীন এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ দফায় অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে।
২০১৭, ২০২১, ২০২৩, ২০২৪ ও সবশেষ গত ১১ মে অরুণাচলের কয়েকটি স্থানের নতুন নাম প্রকাশ করেছে বেইজিং।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, চীনের বেসামরিক-বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবার অরুণাচলের ২৭টি স্থানের নতুন নাম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫টি পাহাড়, পাঁচটি বসতি, চারটি পাহাড়ি পথ, দুটি নদী ও একটি হ্রদ।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ নিয়ে নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মজিদ তাখত-রাভাঞ্চি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনায় ইরানি প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য। রাভাঞ্চি জানিয়েছেন, ইরান এখনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ও সক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করেনি।
তিনি বলেন, ‘একটি কাঠামো হিসেবে আমরা উল্লেখ করেছি যে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা, সক্ষমতা ও অনুরূপ পারমাণবিক বিষয়গুলোর ওপর সীমিত সময়ের জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞা আমরা বিবেচনা করতে পারি। যেগুলো আস্থা গঠনের পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে’।
ইরানের এই উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হলে তবেই ইরান এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে রাজি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো একতরফা নয়, বরং পারস্পরিক পদক্ষেপের অংশ। যার মাধ্যমে প্রমাণ করা হবে আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।’
তাখত-রাভাঞ্চি এ সময় সাম্প্রতিক কিছু গুজবও নাকচ করে দেন। যেখানে বলা হয়েছিল আলোচনায় ২৫ বছরের মতো দীর্ঘ সময়সীমা নির্ধারণ করা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সময়সীমা হোক বা সমৃদ্ধকরণের শতকরা হার- এ ধরনের কোনো ধারণাই নিশ্চিত নয়’।
এদিকে, পরমাণু ইস্যু নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সামরিক বাহিনীর সমরাস্ত্র বিষয়ক গবেষণা সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ডিফেন্সিভ ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চের (এসপিএনডি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন সিনিয়র কর্মকর্তা ও একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
ওই তিন কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের নাম-পরিচয় গোপন রাখলেও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়া এই কর্মকর্তারা ইরানের পরমাণু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে ওই তিন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সম্পদ ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে এবং যতদিন এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠানও তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আর্থিক চুক্তি করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ‘জ্যাকোপা’ নামে একটি চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এই চুক্তি থেকে সরে আসে। যার ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে যায় এবং ইরানও তার পরমাণু প্রকল্পে মনোনিবেশ করে।
এরপর চলতি বছরে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প নিজেই ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি দেন। ইরান সরকারও তাতে সাড়া দেয়।
কাতারের রাজধানী দোহায় চলছে ওয়াশিংটন ও তেহরানের কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক সংলাপ। ইরানের চাওয়া অনুযায়ী সংলাপে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আছে ওমান। সংলাপের চতুর্থ রাউন্ড শেষ হয়েছে সোমবার। আর ওইদিনই তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করল ওয়াশিংটন।
গত বুধবার পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের গভীরে প্রবেশ করে এক বিশাল হামলা চালায় ভারত। মূলত পেহেলগামে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলায় ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়াও ছিল এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। ভারতের সরকার জানিয়েছে, এই অভিযান ছিল সম্পূর্ণ সফল। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির চোখে কেমন ছিল এই অভিযান? কী অর্জন এসেছে অপারেশন সিঁদুরের নিখুঁত সন্ত্রাসবিরোধী হামলার মাধ্যমে- সেটাই তুলে ধরেছে এনডিটিভি।
নয়টি জঙ্গি শিবির ধ্বংস
অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত নয়টি ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। এই ঘাঁটিগুলো ছিল জঙ্গিসংগঠন- লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মুহম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের। এই ঘাঁটিগুলোকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও কার্যকরী কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে গভীর হামলা
পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে গভীরে আঘাত হানার সদিচ্ছা প্রদর্শন করে ভারত যুদ্ধনীতির ধরন বদলে দিয়েছে। জঙ্গি এবং জঙ্গি-পৃষ্ঠপোষকরা আলাদা নয় বরং উভয়কে লক্ষ্য করে একটি নতুন নীতির সূচনা করেছে ভারত।
হামলাগুলো শুধু পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নয়, পাকিস্তানের ভেতরে শত শত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এমনকি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশেও জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়, যা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কৌশলগত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ভারত এমন সংবেদনশীল জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করেছে; যেমন- বাহাওয়ালপুর যেখানে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও কখনো ড্রোন পাঠানোর সাহস দেখায়নি।
ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তান থেকে এলে সীমান্ত রেখা বা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ভূগোল কোনো বাধা নয়। এই হামলার মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে যে পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি ভারতীয় হামলার আওতাভুক্ত।
রেডলাইন
অপারেশন সিঁদুর এমন এক রেডলাইন তৈরি করেছে, যা পাকিস্তান আর উপেক্ষা করতে পারবে না। তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে সন্ত্রাসের ব্যবহার করলে এর প্রতিক্রিয়া হবে লক্ষ্যভেদী ও দৃশ্যমান।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নতুন ধারা
প্রথমবারের মতো ভারত স্পষ্টভাবে জঙ্গি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে পার্থক্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং উভয়ের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি সেই দীর্ঘদিনের ধারণাকেও নস্যাৎ করেছে যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবশালী কিছু দুষ্কৃতকারী উপাদান অনায়াসে সন্ত্রাস চালাতে পারে।
পাকিস্তানের দুর্বল বিমান প্রতিরক্ষা
ভারতীয় বাহিনী সফলভাবে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। মাত্র ২৩ মিনিটের মধ্যে পরিচালিত দ্রুত ও নিখুঁত হামলা পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ করে। ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মিশন সম্পন্ন করে, যা প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করে।
ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রদর্শন
ভারত আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষার রূপান্তরিত রূপ তুলে ধরেছে। নিজস্ব আকাশসীমা সুরক্ষায় একটি শক্তিশালী ও স্তরযুক্ত কাঠামো তৈরি করেছে। ভারত সফলভাবে পাকিস্তানের ব্যবহৃত চীনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ভেদ করেছে। প্রতিরক্ষা মানে শুধু কেনাকাটা নয়, বরং তার কার্যকর সংযোজন- এটাই প্রমাণ করেছে।
এ ছাড়া ভারতের আকাশতীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শত শত পাকিস্তানি ড্রোন ও মিসাইল ভূপাতিত করে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে এবং এখন এটি বৈশ্বিক রপ্তানিযোগ্য পণ্যে পরিণত হয়েছে।
উত্তেজনা ছাড়াই সুনির্দিষ্ট হামলা
জঙ্গি অবকাঠামো ছাড়া প্রাথমিকভাবে কোনো সামরিক বা বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। বড় মাত্রায় উত্তেজনা সৃষ্টি না করেই ভারত তার শূন্য-সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গিবাদীদের নির্মূল
ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত একাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এক রাতেই বহু জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোর ক্ষতি
৯ ও ১০ মে রাতের অভিযানে ভারত এমন দেশ হয়ে উঠেছে, যারা একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের বিমান ঘাঁটিগুলোতে ক্ষতিসাধন করেছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে ১১টি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে নুর খান, রফিকি, মুরিদ, সুক্কুর, শিয়ালকোট, পাসরুর, চুনিয়ান, সারগোধা, স্কারু, ভোলারি এবং জ্যাকবাবাদ।
হামলায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ২০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ভারতের হামলায় ভোলারি ঘাঁটিতে পাকিস্তানের স্কোয়াড্রন লিডার উসমান ইউসুফ ও চারজন বিমানসেনাসহ ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে।
যৌথ-সেনা সমন্বয়
ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সমন্বিতভাবে হামলা চালিয়েছে, যা ভারতের ক্রমবর্ধমান যৌথ যুদ্ধক্ষমতার প্রমাণ।
বিশ্বকে পাঠানো বার্তা
ভারত বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে, জনগণকে রক্ষা করতে অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না। সন্ত্রাসবাদকে শাস্তি দেওয়া হবে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে। তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদ ও তাদের পরিকল্পনাকারীদের জন্য আর কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। যদি পাকিস্তান প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে ভারত কেবল তা প্রতিহত করতেই সক্ষম নয়, প্রয়োজনে জবাবি হামলায় আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।
বিশ্বব্যাপী সমর্থন
আগে যখনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু সংঘাতমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতো, অধিকাংশ দেশ ভারতকে সংযমের আহ্বান জানাত। কিন্তু এবার বহু বিশ্বনেতা ভারতের সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে।
কাশ্মীর নিয়ে বিবর্তিত বর্ণনা
প্রথমবার ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কেবল সন্ত্রাসবাদের আলোকে দেখা হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যু থেকে এটি পুরোপুরি আলাদা করা হয়েছে।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
হামাসের কাছে জিম্মি সর্বশেষ জীবিত মার্কিন সেনা সদস্য এডেন আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (১২ মে) তাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রেড ক্রসের হাতে হস্তান্তর করে হামাস।
বিনাশর্তে আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়াকে গাজা যুদ্ধ অবসান ও বাকি জিম্মিদের ঘরে ফেরানোর জন্য হামাসের ‘সদিচ্ছা’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়েছে, রেড ক্রসের কাছে আলেকজান্ডারকে হস্তান্তর করার পর হেলিকপ্টারে করে তাকে তেলআবিবের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় দেশটির সেনাবাহিনী।
পরে আলেকজান্ডারের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা। হাসপাতালে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন তিনি।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী ২১ বছর বয়সী আলেকজান্ডার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে (আইডিএফ) কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে তাকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। তার প্রায় ১৯ মাস পর গতকাল (সোমবার) তিনি পরিবারের কাছে ফিরেছেন।
মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় পুনরায় ইসরায়েলের হামলার শুরুর পর এই প্রথম কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
আলেকজান্ডারের মুক্তির জন্য গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়নি, যদিও হস্তান্তরের জন্য কিছু সময় লড়াই বন্ধ রেখেছিল।
এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নবায়নসহ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের উদ্যোগের অংশ হিসেবে আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া যুদ্ধের অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে হামাস। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনকে অনুরোধ করছি যেন তারা এই নির্মম যুদ্ধের অবসানের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।’
সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় গতি আনতে আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন ট্রাম্প।
রবিবার (১১ মে) নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, হামাসের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টার প্রতি সদিচ্ছার একটি পদক্ষেপ।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও তেল আবিবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি বৈঠক করেছেন। এ সময় আলেকজান্ডারের মুক্তিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
এদিকে, গাজায় অভিযান আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা দখল করে সেখানকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে আবারও স্থানচ্যুত করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার।
তাছাড়া গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। এই অবরোধ তুলে না নিয়ে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি অনাহারের মুখে পড়েছেন বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।