ভুটানের পরিচিতি ‘হিমালয়ান নেশন’ বা ‘হিমালয়ের জাতি’ হিসেবে। হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত ভুটান এশিয়ার দুই বৃহত্তম শক্তি ভারত এবং চীনের মাঝে। কিন্তু ভুটানের এই অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান তাদের জন্য খুব একটা সুখকর নয়।
বিবিসি বাংলা জানায়, যে দুটি দেশের সঙ্গে চীনের এখনো সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি, তাদের মধ্যে ভুটান অন্যতম। অন্য দেশটি হচ্ছে ভারত, যাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় হিমালয় সীমান্তে চীনের বিরোধ রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে চীনের উত্থানের কারণে ভুটানের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে, যাতে তারা চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছায়। কিন্তু চীনের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সমঝোতায় পৌঁছতে হলে ভারতের অনুমোদন লাগবে।
থিম্পু এবং দিল্লির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এবং ভারত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছে ভুটানকে। হিমালয়ের উত্তর এবং পশ্চিম দিকে ভুটান ও চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ আছে।
যেসব জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে, সেগুলোর মধ্যে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ডোকলাম মালভূমি রয়েছে।
এই ডোকলাম উপত্যকা ভারত, ভুটান এবং চীনের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভুটান এবং চীন- উভয়ই ডোকলাম মালভূমি নিজেদের বলে দাবি করছে এবং ভারত এ ক্ষেত্রে ভুটানকে সমর্থন দিচ্ছে। ভুটানকে সমর্থন দেয়ার পেছনে ভারতের নিজস্ব কারণ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোকলাম মালভূমি নিরাপত্তার দিক থেকে ভারতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে যদি চীনের আধিপত্য তৈরি হয়, তাহলে বিষয়টি ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।
২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জায়গাটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সংযোগ তৈরি করেছে।
সম্প্রতি বেলজিয়ামের লা লিবরা সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বিষয়টি নিয়ে ভুটানের সীমাবদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা ভুটান একা সমাধান করতে পারবে না। আমরা এখানে তিনটি পক্ষ। এখানে বড় কিংবা ছোট দেশ বলে কিছু নেই, এখানে তিনটি দেশই সমভাবে আছে।’ বেলজিয়ামের সংবাদপত্রকে শেরিং বলেন, ‘আমরা তৈরি আছি। অন্য দুটি পক্ষ যখন তৈরি হবে, তখন আমরা আলোচনা করতে পারি।’ শেরিং আশা প্রকাশ করেন, দুই-একটি বৈঠকের মাধ্যমে ভুটান এবং চীন তাদের কিছু সীমান্ত চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।
১৯৮৪ সাল থেকে উভয় দেশ সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সীমান্তে চীন প্রবেশ করেনি।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ভারতে সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়েছে, বিশেষ করে গণমাধ্যমে।
অনেক বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, ভুটান হয়তো চীনের সঙ্গে ডোকলাম উপত্যকা নিয়ে একটি বিনিময় চুক্তি করতে পারে। অনেকে বলছেন, ডোকলাম উপত্যকা নিয়ে ভুটান তাদের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরছে না।
ভারতের সাবেক সিনিয়র কূটনীতিক পি স্টবডান বলেন, ‘ভারতের উদ্বেগ হচ্ছে, তাদের হেনস্তা করার জন্য চীন সীমান্তবিরোধ নিষ্পত্তি করতে ভুটানের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে শোরগোল শুরুর পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং গত মাসে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সাপ্তাহিক দ্য ভুটানিজকে শেরিং বলেন, ‘আমি নতুন কিছু বলিনি এবং ভুটানের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী লাদাখ অভিমুখে ন্যাশনাল হাইওয়ের পাশে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জের ধরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে ভুটানের মানুষ অবাক হয়েছে। চীনের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, ভারতের সমর্থন ছাড়া চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ভুটানকে বেশ বেগ পেতে হবে। সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিউ জংগিই বিবিসিকে বলেন, ভারত এখানে প্রতিবন্ধক। চীন এবং ভুটান মিলে যদি সমস্যার সমাধান করে, তাহলে ভারত বাদ রয়ে যাবে। আমি মনে করি না ভারত এটা হতে দেবে । তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে চীন ও ভুটান চূড়ান্ত চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে সেটি ব্যর্থ হয়ে যায়।’
চীনের সঙ্গে ভুটানের সীমান্ত বিরোধের বিষয়টি কয়েক দশকের পুরোনো ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। চীন এবং ভারতের মধ্যকার সীমান্ত পুরোপুরি চিহ্নিত নয়। উভয় দেশ পরস্পরের কাছে জমি দাবি করছে। ভারত বলছে তাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার সীমান্ত চীনের ভেতরে ঢুকে গেছে।
অন্যদিকে চীন দাবি করছে, তাদের প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সীমান্ত ভারতের ভেতরে রয়েছে। দুই দেশের সীমান্ত কার্যত শুরু হয়েছে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় লাদাখ থেকে শুরু করে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত, চীন যেটিকে দক্ষিণ তিব্বত বলে।
চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়টি ভুটানের মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। তারা মনে করে চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতা করলে ভুটানের জন্য লাভজনক হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুটানের একজন পর্যবেক্ষক বলেন, চীন একটি বাস্তবতা। চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক না রাখার কোনো বিকল্প কি ভুটানের আছে? আমি মনে করি এটা কোনো কাঙ্ক্ষিত বিষয় নয়।
১৯৪৯ সালে ভারত এবং ভুটান একটি বিশেষ শান্তি চুক্তি করে, যেখানে দিল্লির নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সালে সে চুক্তি যখন নবায়ন করা হয়, তখন বৈদেশিক নীতি এবং সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভুটানকে আরও বেশি স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল।
ভুটানের ভেতরে শত শত ভারতীয় সেনা রয়েছে এবং তারা ভুটানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়। ডোকলাম থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে তাদের হেডকোয়ার্টার অবস্থিত।
ভুটানের বিশ্লেষক ওয়াংচা সাঙ্গি মনে করেন, সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে ভুটান একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পারে, যদি ডোকলাম ভুটানের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত চাপাচাপি না করে।
আমরা কীভাবে ডোকলাম দাবি করতে পারি? ডোকলামের অংশ হিসেবে আমাদের কাছে যা আছে সেটা এখনো আমাদের অংশ। যেটা আমাদের কাছে নেই, সেটা আমরা চীনের কাছ থেকে নিতে পারি না, বলেন সাঙ্গি।
সাঙ্গির মতো বিশ্লেষকরা বলছেন, ভুটান বর্তমানে তার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানির জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে জ্বালানি তেল। প্রতিবেশী চীনের সঙ্গেও একটি বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি ভিনয় মোহান কাওয়াত্রা এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে সাংবাদিকদের বলেন, ভারত এবং ভুটানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। উভয় দেশের জাতীয় এবং নিরাপত্তা স্বার্থ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় আছে।
ডোকলাম উপত্যকার কৌশলগত গুরুত্বের কারণে এ নিয়ে ভারত কোনো পরিবর্তন চায় না। অন্যদিকে ডোকলামের ওপর দাবি ছেড়ে দেয়ার জন্য চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা ভুটানের মতো একটি পক্ষের খুবই কঠিন।
বিশ্বজুড়ে মানুষ যখন ‘এশিয়ান সেঞ্চুরি’ বা ‘এশিয়ার শতাব্দীর’ কথা বলছে, তখন চীন এবং ভারতের মতো দুটি বৃহৎ দেশের সঙ্গে সীমান্ত ভুটানের জন্য একটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারে। কিন্তু ভারত ও চীনের মধ্যে যে উত্তেজনা বিরাজমান, তাতে ভুটানের জন্য বিষয়টি নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
অনাহারে একের পর এক ফিলিস্তিনি মৃত্যুবরণ করায় আন্তর্জাতিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে গাজায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে মিসর থেকে ত্রাণের ট্রাকগুলো গাজার থেকে যাত্রা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব আল কাহেরা নিউজ টিভি।
স্থানীয় সময় শনিবার (২৬ জুলাই) গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য পুনরায় মানবিক করিডর চালুসহ আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার (এয়ারড্রপ) কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনটি এলাকার চলমান অভিযানে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করা হবে। রবিবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহরে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
যদিও বর্তমানে এসব এলাকায় সক্রিয়ভাবে অভিযান চালাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে গত কয়েক সপ্তাহে এসব এলাকায় লড়াই ও হামলা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সংস্থাগুলোকে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছাতে সহায়তার জন্য নিরাপদ রুটও নির্ধারণ করবে তারা।
রবিবার (২৭ জুলাই) আল কাহেরা টিভির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মিসর ও গাজার মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্ত থেকে দক্ষিণ গাজার কারাম আবু সালেম (কেরেম শালোম) ক্রসিংয়ের উদ্দেশে বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে শত শত টন ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
এর পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘বিতর্কিত’ এয়ারড্রপও শুরু করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
এদিকে, মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত এয়ারড্রপে সাতটি প্যালেটে ময়দা, চিনি এবং টিনজাত খাদ্যদ্রব্যের মতো সামগ্রী থাকবে, যেগুলো বিদেশি অংশীদাররা সরবরাহ করবে।
তবে মানবিক সংস্থাগুলোর মতে, এই ধরনের এয়ারড্রপ মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ এবং এটি কোনোভাবে স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা গাজায় একটি পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট সম্প্রসারণে সহায়তা করবে এবং সেটিকে ইসরায়েলি বিদ্যুৎ সংযোগে যুক্ত করবে, যদিও গত ২১ মাসের অব্যাহত অভিযানে গাজার অধিকাংশ পানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
এরই মধ্যে গাজার দিকে ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে আসার পথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ফ্রান্সের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও গাজামুখী হানদালা মিশনের সদস্য এমা ফোরো জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের জাহাজের কাছে চলে এসেছে।
তিনি আরও জানান, নিজেদের মোবাইল ফোন তারা সাগরে ছুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে, গাজায় পুনরায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কট্টরটন্থি নেতা ও ইসরায়েলে জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির।
সিএনএননের খবরে অনুযায়ী, গাজায় এই ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়াকে ‘হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত মার্চে গাজায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ইসরায়েলে। এতে প্রায় ২০ লাখ গাজাবাসী চরম খাদ্যসংকটে পড়েন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জানিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে এবং মানবিক সহায়তার জন্য অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে ত্রাণ সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।
তবে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো মানবাধিকার সংস্থার ত্রাণ এত দিন ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলতি বছরের মে থেকে গাজা হিউম্যানেটিরিয়ান ফাউন্ডেশন চালু করে তারা। তবে এই সংস্থাটির দেওয়া ত্রাণ ছিল গাজাবাসীর জন্য খুবই অপ্রতুল। ফলে উপত্যকাটিতে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
দুর্ভিক্ষে এখন পর্যন্ত ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই। এর মধ্যে অন্তত ৮৫টি শিশু বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুই শিশুসহ পাঁচ ফিলিস্তিনির অনাহারে মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হলেও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে চলমান এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ জন নিহত ও দুই লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
কম্বোডিয়ার সামরুং থেকে এএফপি জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে ট্রাম্প দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
পরে জানানো হয় যে, উভয় দেশই দ্রুত যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।
তবে রোববার সকালে ফের গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। কম্বোডিয়ার উত্তরাঞ্চল ও থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত দু’টি প্রাচীন ও বিতর্কিত মন্দিরের আশপাশে এসব সংঘর্ষ হয়।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা জানান, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে থাই সেনারা মন্দিরসংলগ্ন এলাকায় হামলা চালায়।
এএফপি’র সাংবাদিকরা জানান, ফ্রন্টলাইন থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কম্বোডিয়ার সামরুং শহরের ভবনের জানালাগুলো কামানের গোলার শব্দে কেঁপে ওঠে।
অপরদিকে থাই সেনাবাহিনীর উপ-মুখপাত্র রিচা সুকসুয়ানন বলেন, কম্বোডিয়ান বাহিনী ভোর ৪টার দিকে গোলাবর্ষণ শুরু করে।
তিনি জানান, দুই পক্ষই কৌশলগত এলাকাগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
রোববার কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জানান, তার দেশ ‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির’ প্রস্তাবে সম্মত।
এ বিষয়ে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সোখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলেও জানান তিনি।
তবে তিনি থাইল্যান্ডকে কোনো চুক্তি লঙ্ঘন না করার বিষয়ে সতর্ক করেন।
ট্রাম্পের ফোনালাপের পর থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই জানান, তার দেশ নীতিগতভাবে যুদ্ধবিরতিতে যেতে এবং যত দ্রুত সম্ভব আলোচনায় বসতে রাজি।
তবে তিনি বলেন, কম্বোডিয়াকে শান্তির প্রতি ‘সত্যিকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা’ দেখাতে হবে।
পুরোনো সীমান্ত বিরোধ থেকেই এই সংঘর্ষের সূচনা। পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা গ্রামীণ ওই অঞ্চলে এখন বিমান, ট্যাংক ও স্থলসেনা মোতায়েন রয়েছে। এলাকাটিতে স্থানীয়রা মূলত রাবার ও ধান চাষ করে।
থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, এ পর্যন্ত তাদের সাত সেনা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
কম্বোডিয়া জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের আট বেসামরিক ব্যক্তি ও পাঁচ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের সীমান্ত এলাকা থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।
শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চিয়া কেও বলেন, তার দেশ দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শনিবার দুই দেশকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে স্থায়ী সমাধানে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দুই দেশের সংঘর্ষে প্রাণহানি, বেসামরিক নাগরিকের আহত হওয়া, ঘরবাড়ি ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতিতে মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
এদিকে উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রথমে গোলাগুলি শুরু করার অভিযোগ এনেছে।
কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই বাহিনী সংঘর্ষে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড বলেছে, কম্বোডিয়ান বাহিনী বেসামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করেছে। এমনকি একটি হাসপাতালেও কামানের গোলা আঘাত হেনেছে বলে তারা দাবি করেছে।
৮শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্ত নিয়ে বহুদিন ধরেই বিরোধ চলছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে এ বিরোধ আরও তীব্র আকার নিয়েছে।
এখনো বেশ কিছু এলাকাকে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
উত্তর ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের একটি জনপ্রিয় হিন্দু মন্দিরে রোববার পুজো দিতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে ছয় জন পুণ্যার্থী নিহত হয়েছেন
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতের হরিদ্বার থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এ ঘটনায় আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
হিন্দুদের পবিত্র শহর হরিদ্বারে গঙ্গা নদীর তীরে মনসা দেবী মন্দিরে যাওয়ার সিঁড়িতে পদদলিত হয়ে এই ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ নগর পুলিশ কর্মকর্তা পরমেন্দ্র ডোভাল এএফপিকে জানিয়েছেন, পদদলিত হয়ে ছয় জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আহত অবস্থায় ১০ জনেরও বেশি লোককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।’
ভারতীয় ধর্মীয় উৎসবগুলোতে প্রায়ই প্রাণঘাতী পদদলিত হওয়া এবং জনতার ভিড়ে চাপা পড়ে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
গত জুন মাসে, উপকূলীয় রাজ্য ওড়িশায় একটি হিন্দু উৎসবে হঠাৎ করে ভিড়ের কারণে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে তিন জন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হন।
এর আগের মাসে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়াতে হাজার হাজার মানুষ একটি জনপ্রিয় অগ্নিকুণ্ডে হাঁটার অনুষ্ঠানের জন্য জড়ো হওয়ার সময় ছয় জন প্রাণ হারান।
জানুয়ারিতে, উত্তরাঞ্চলীয় শহর প্রয়াগরাজে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কুম্ভমেলায় ভোরে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৩০ জন প্রাণ হারান।
গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্যকর্মসূচি এ কথা বলেছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেখানে অপুষ্টির হার বেড়েই চলেছে এবং ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা দরকার। খবর বিবিসির।
গাজায় চলতি সপ্তাহে অনাহারের সতর্কতা আরও জোরদার হয়েছে। গত শুক্রবার অপুষ্টিতে ভোগা ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে অপুষ্টিতে এখন পর্যন্ত ১২২ জন মারা গেছে।
গাজার সব সরবরাহ প্রবেশ পথের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরায়েল বলছে, সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তারা অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। ইসরায়েলের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা গত শুক্রবার বলেছেন, বিমান থেকে সাহায্য বিতরণের অনুমতি আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেওয়া হতে পারে। এভাবে সাহায্য দেওয়াকে যথেষ্ট নয় বলে সাহায্য সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান এবার এভাবে সাহায্য দিতে পারে। জর্ডানের এক কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসিকে বলেছেন, তারা এখনো ইসরায়েলের কাছ থেকে অনুমতি পায়নি।
এই উদ্যোগ এমন সময় নেওয়া হলো- যখন গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে। গত শুক্রবার জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য অবিলম্বে সব বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় অবসানের আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসামরিক জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়াটা অগ্রহণযোগ্য।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকের মধ্যে যে পরিমাণ মত ভিন্নতা, উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে-সহানুভূতি, সত্যতা ও মানবিকতার অভাব- তার মাত্রা তিনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, গত ২৭ মে থেকে খাদ্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা করার সময় ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের নেতৃত্ব খাদ্য বিতরণের বিকল্প হিসেবে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ খাদ্য বিতরণ করতে শুরু করে, তখন থেকে এসব ঘটছে।
জিএইচএফের সঙ্গে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক ঠিকাদার অ্যান্থনিও আগুইলার বিবিসিকে বলেন, তিনি প্রশ্নহীনভাবেই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতে দেখেছেন। তিনি জানান, তিনি দেখেছেন যে আইডিএফ ও যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গোলাবারুদ, মর্টার ব্যবহার করছে এবং খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ট্যাংক থেকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করছে।
অবসরপ্রাপ্ত এই সৈনিক বলেন, আমার পুরো ক্যারিয়ারে এমন মাত্রার নিষ্ঠুরতা দেখিনি। আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে ও অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ দেখেছি।
জিএইচএফ দাবি করছে যে, এসব অভিযোগ একজন ক্ষুব্ধ সাবেক ঠিকাদারের কাছ থেকে এসেছে, যাকে অসদাচরণের অভিযোগে এক মাস আগে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-কাতার আলোচনা থেকে তাদের দল প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা এখনো অনিশ্চিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, হামাস সত্যিকার অর্থে সমঝোতা চায়নি। তিনি বলেন, আমি মনে করি তারা মরতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হামাস।
হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন যে, আলোচনা একেবারে ভেঙে পড়েনি এবং ইসরায়েলি দল আগামী সপ্তাহে দোহায় ফিরবে।
গাজার বেশিরভাগ মানুষ কয়েকবার করে ঘরবাড়ি হারিয়েছে এবং ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্স বলেছে, তারা সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এরপর যুক্তরাজ্যের এক তৃতীয়াংশ এমপি দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে একই পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে স্যার কিয়ের স্টারমার শিগগিরই এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। এটা হতে পারে বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, যার চূড়ান্ত ফল হবে- দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান।
গাজায় একদিনে ১০০ বার বোমাবর্ষণ
গাজায় আক্রমণকারী দখলদার স্থল বাহিনীকে সমর্থন করার জন্য একদিনে গাজাজুড়ে ১০০টিরও বেশি স্থানে হামলা করেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো। গতকাল শনিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিবৃতির উধ্বৃতি দিয়ে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
সেই সঙ্গে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে দখলদার বাহিনীর ৩৬তম ডিভিশন ‘অতিরিক্ত লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ সম্প্রসারণ এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস’ করার জন্য কাজ করছে বলে দাবি করেছে। অর্থাৎ হামলা আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীরে যিশুর জন্মস্থান বেথলেহেমে বসতি স্থাপনকারী এবং ইসরায়েলি সৈন্যরা আক্রমণ শুরু করেছে। এছাড়া জেরিকোতেও একই ধরনের হামলার খবর পাওয়া গেছে।
লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, বসতি স্থাপনকারীরা গ্রামগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের জমি, সম্পত্তি ও গবাদিপশু লুটপাট করেছে। স্থানীয় একজন আরব বেদুইন অধিকার কর্মকর্তা ওয়াফা সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, বসতি স্থাপনকারীরা কাছাকাছি একটি অবৈধ ফাঁড়ি থেকে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রেখেছে।
বেথলেহেমের দক্ষিণে বেইত ফাজ্জারে ইসরায়েলি সৈন্যরা আজ ৩১ বছর বয়সি এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তিকে হত্যা করার পর একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে। তার মরদেহ এখনো ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। জেনিনের পশ্চিমে বুরকিন শহরে আরেকটি অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। সেখানেও ইসরায়েলি বাহিনী বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি বাড়ি লুটপাট করেছে।
ভোর থেকে ২৫ জনকে হত্যা
গাজার হাসপাতাল সূত্র আল জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল শনিবার ভোর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ২৫ জনকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১৩ জন জড়ো হয়েছিলেন ত্রাণের আশায়। সর্বশেষ এক হামলার খবরে আল জাজিরার আরবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, উত্তর গাজা উপত্যকায় ত্রাণপ্রার্থীদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
গত জুনে ইসরায়েলি শহরগুলোতে একের পর এক আঘাত হানে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এ সময় ইসরায়েলের টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ইন্টারসেপ্টরের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এই সংকট মুহূর্তে এগিয়ে আসে মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সৌদি আরবকে ইন্টারসেপ্টর সরবরাহের অনুরোধ জানায়। তবে রিয়াদ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘যুদ্ধের সময় আমরা সবাইকে অস্ত্র অনুদানের অনুরোধ করেছিলাম। এতে যখন কাজ হয়নি, তখন আমরা চুক্তি করার চেষ্টা করেছি। এটি কোনো একটি দেশের লক্ষ্য ছিল না।’
সূত্র বলেছে, তবে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সৌদি আরব উপযুক্ত অবস্থানে ছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা রিয়াদকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, ইরান ইসরায়েলের পাশাপাশি তাদের জন্যও হুমকি। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই সৌদি আরবে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। সম্প্রতি হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন যুদ্ধ চলছিল, ওই সময় সৌদি আরব নিজস্ব সার্বভৌম তহবিল দিয়ে কেনা প্রথম থাড ব্যাটারির চালান গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রকৃতপক্ষে, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র নয় দিন পর, ৩ জুলাই সৌদি সামরিক বাহিনী এই ব্যাটারির উদ্বোধন করে। উদ্বোধনের ঠিক আগে, মার্কিন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা ছিল, ইসরায়েলে ইরানের ধারাবাহিক ও গুচ্ছ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারসেপ্টরের মজুত ‘ভয়াবহ স্তরে’ নামিয়ে আনতে পারে।
এ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন করে মিডল ইস্ট আই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মজুত এবং নিজের অ্যারো ইন্টারসেপ্টরের অস্ত্রাগার নিঃশেষ করে দিচ্ছিল। পরবর্তীতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং দ্য গার্ডিয়ান মিডল ইস্ট আই-এর এই তথ্য নিশ্চিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
দ্য গার্ডিয়ান জুলাই মাসে আরও জানায়, সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মাত্র ২৫ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রকে পেন্টাগন বিশ্বব্যাপী সমস্ত মার্কিন সামরিক অভিযানের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অস্ত্র বলে মনে করে।
ইসরায়েলের তিন-স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মার্কিন অস্ত্রের সমর্থনে গঠিত হওয়া সত্ত্বেও, যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত ইরান ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে সক্ষম হয়েছিল। দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি পাঁচটি ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের হামলার মাত্রা বিবেচনা করে আমেরিকান ও ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু সমর বিশারদের ধারণার চেয়ে ভালো কাজ করেছে। তবে ইরান এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল। বিশেষ করে সংঘাত যত দীর্ঘায়িত হচ্ছিল, ইরানের জন্য হামলা তত সহজ হয়ে উঠছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বার্কি পূর্বে মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘(এই ব্যবস্থার) দুর্বলতা হলো আপনার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমাদের কাছে কেবল নির্দিষ্ট সংখ্যক ইন্টারসেপ্টর আছে। সেগুলো উৎপাদন করার সক্ষমতাও সীমিত।’
এই ঘাটতির মধ্যে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, কিছু মার্কিন কর্মকর্তা সৌদি আরবের সদ্য কেনা থাড ইন্টারসেপ্টরগুলো ইসরায়েলে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করেছিলেন। একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনয়ী প্রস্তাব এবং চুক্তি প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করার পরেই এই আলোচনা হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ইসরায়েলের সঙ্গে ইন্টারসেপ্টর ভাগ করে নিতে বলেছিল। তবে সূত্র দুটি নিশ্চিত করেনি যে, আরব আমিরাতের কোনো ইন্টারসেপ্টর তেল আবিবে পৌঁছেছে কিনা। সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথম দেশ যারা থাড ক্রয় ও পরিচালনা করে। ২০১৬ সালে থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সক্রিয় করে আরব আমিরাত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে ইরানের সাফল্য অপেক্ষাকৃত কম সুরক্ষিত উপসাগরীয় দেশগুলোর নজর এড়ায়নি।
ইন্টারসেপ্টরের জন্য বিশ্বজুড়ে ছোটাছুটি করা কিছু মার্কিন কর্মকর্তার জন্য এখন একটি সাধারণ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তাদের মিত্র ইসরায়েল এবং ইউক্রেন উভয়ই এমন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি যারা অনেক সস্তা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের নীতিবিষয়ক কার্যালয় ইসরায়েলের সঙ্গে ইন্টারসেপ্টর ভাগ করে নিতে মার্কিন মিত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ক্রিস্টোফার মামো, তিনি গ্লোবাল পার্টনারশিপের জন্য প্রতিরক্ষা উপ-সহকারী মন্ত্রী।
তবে ইসরায়েলকে সাহায্য করতে সৌদি আরবের অস্বীকৃতি ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের জন্য নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উপসাগরীয় মিত্রদের সঙ্গে একটি বহুল আলোচিত ‘মধ্যপ্রাচ্য ন্যাটো’-এর অংশ হিসেবে একীভূত করার চেষ্টা করছিল। এর পরিবর্তে, উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে নীরব ছিল। বিশ্লেষকেরা মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করে তারা ‘সঠিক প্রমাণিত’ হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন এখনো ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ চুক্তি করতে চায়। তবে রিয়াদ এবং অন্য আরব রাষ্ট্রগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ইসরায়েলকে একটি সম্প্রসারণবাদী সামরিক শক্তি হিসেবে দেখছে। তারা মনে করে, এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত—প্রয়োজনের সময় সাহায্য করা নয়। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব চলতি মাসে সিরিয়ার সৈন্যদের দক্ষিণ সিরিয়ায় মোতায়েন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লবিং করেছিল। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মধ্যে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ওপর ইসরায়েলি হামলায় রিয়াদ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতি চোখ বন্ধ রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে ‘বিশ্ব বিবেককে চ্যালেঞ্জ করে এমন একটি নৈতিক সংকট’ বলে অভিহিত করেছেন।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সম্মেলনে ভিডিও-লিংক ভাষণে গুতেরেস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক অংশ থেকে আমরা যে মাত্রার উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা দেখতে পাই তা আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না - সহানুভূতির অভাব, সত্যের অভাব, মানবতার অভাব’।
তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি মানবিক সংকট নয়। এটি একটি নৈতিক সংকট যা বিশ্ব বিবেককে চ্যালেঞ্জ করে। আমরা প্রতিটি সুযোগে আমাদের আওয়াজ তুলে ধরব’।
হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধের মধ্যে মার্চ মাসে ইসরাইল ত্রাণ অবরোধের আওতায় থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায়, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে দুর্ভিক্ষের ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সাহায্যকারী সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে। দুই মাস পরে সেই অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করা হয়েছিল।
তারপর থেকে সাহায্যের ধারা ইসরাইলি এবং মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরে চলমান জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বিতরণ ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির সভাপতি মিরজানা স্পোলজারিক শুক্রবার বলেছেন, ‘গাজায় যা ঘটছে তার জন্য কোনও অজুহাত নেই।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ এবং মানবিক মর্যাদার অবনতির মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে সমস্ত আইনি এবং নৈতিক উভয়ই গ্রহণযোগ্য মান অতিক্রম করেছে ।
স্পোলজারিক বলেন, গাজায় আইসিআরসির ৩শ’ ৫০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছে। যাদের অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি খুঁজে পেতে লড়াই করছেন।’
সাহায্যকারী সংস্থা এবং জাতিসংঘ জিএইচএফের সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এটি ইসরাইলি সামরিক লক্ষ্যগুলোকে সহায়তা করার অভিযোগ এনেছে।
৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা করেছেন গুতেরেস। হামাসের ওই হামলার ফলে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এরপর যে মৃত্যু ও ধ্বংসের বিস্ফোরণ ঘটেছে তা কোনও ভাবেই ন্যায্যতা দিতে পারে না। এর মাত্রা এবং পরিধি আমরা সম্প্রতি যা দেখেছি তার চেয়েও বেশি,‘ তিনি বলেন।
গুতেরেস ২৭শে মে থেকে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করে, তখন থেকে খাদ্য সহায়তা পেতে চেষ্টারত ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমাদের পদক্ষেপের প্রয়োজন: একটি তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সকল জিম্মির তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তি, এবং তাৎক্ষণিক ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশাধিকার।’ তিনি এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ইসরাইল এবং হামাস যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছায়, তাহলে জাতিসংঘ গাজায় ‘নাটকীয়ভাবে মানবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি’ করতে প্রস্তুত।
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ধর্মস্থালায় অবস্থিত আলোচিত ‘ভগবান মঞ্জুনাথের মন্দির’ নিয়ে এক অভিযোগের জেরে শুরু হয়েছে তোলপাড়। এমনকি, মন্দিরে গণকবর থাকার সন্দেহে আলোচিত এই বিষয়ে খবর ও তথ্য প্রচারেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
তিন দশক ধরে অপরাধের সাক্ষী হয়ে পুড়তে থাকা এক দলিত সাফাইকর্মী, যিনি একসময় এই মন্দিরে কাজ করতেন, এবার সাহস করে সামনে এলেন। নিজেকে ‘অসহ্য গ্লানিবোধ’ও ‘অমানবিক মানসিক নির্যাতনের’ শিকার দাবি করে তিনি জানালেন, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শত শত মরদেহ তিনি কবর দিয়েছেন, যার বেশিরভাগই ছিল যৌন সহিংসতার শিকার নারী ও কিশোরীদের।
১২ বছর আত্মগোপনে থাকার পর ৪৮ বছর বয়সি এই ব্যক্তি গত ৩ জুলাই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আদালতের নির্দেশে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
আল জাজিরা পর্যালোচিত তার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি বলেন, আমি আর এই স্মৃতির বোঝা বইতে পারছি না। যে মরদেহগুলো আমি কবর দিয়েছি, সেসব নারকীয় হত্যার দৃশ্য, আমাকে মেরে ফেলার হুমকি... সবকিছু। যদি লাশগুলো কবর না দিতাম, আমাকেও মেরে সেই কবরেই ফেলা হতো।
এই ব্যক্তি এখন চান, যেসব জায়গায় তিনি মরদেহ কবর দিয়েছেন, সেগুলোর সন্ধান দিতে ও আইনগত প্রক্রিয়ায় সত্য উদঘাটনে সহায়তা করতে।
সাফাইকর্মীর অভিযোগ
ধর্মস্থলা কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার বেলথানগড়ি এলাকায় নেত্রাবতী নদীর তীরে অবস্থিত একটি ৮০০ বছরের পুরনো পবিত্র হিন্দু তীর্থস্থান। এখানে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ভক্তের সমাগম হয়।
এই মন্দিরেই ১৯৯৫ সালে সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন দলিত সম্প্রদায়ের এই ব্যক্তি। তখন থেকেই নদীর ধারে, জঙ্গলে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া শুরু হয়। তার ভাষায়, অনেক মরদেহ ছিল নগ্ন বা ছেঁড়া পোশাকে ঢাকা, শরীরে ছিল ধর্ষণের ও সহিংসতার স্পষ্ট চিহ্ন। কিছু মরদেহে আবার অ্যাসিডের ক্ষতর চিহ্নও ছিল।
তবে পুলিশে অভিযোগ না করে তিনি মরদেহ কবর দেন বা পুড়িয়ে দেন, কারণ তার দাবি- মন্দির কর্তৃপক্ষের নির্যাতন ও হত্যার হুমকিতে তিনি বাধ্য হন।
তিনি বলেন, আমাকে বলা হতো, লাশ পুড়িয়ে দাও। ডিজেল ঢেলে এমনভাবে পুড়াও যেন কোনো প্রমাণ না থাকে। এভাবে শত শত লাশ আমি ধ্বংস করেছি। তিনি আরও জানান, অনেক সময় লাশ ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের। তাদের অন্তর্বাস থাকত না, পোশাক ছেঁড়া থাকত, যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
কেন পালিয়ে ছিলেন এতদিন?
২০১৪ সালের দিকে, নিজের এক আত্মীয় কিশোরীর ওপরও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে- যা ঘটিয়েছিল মন্দির কর্তৃপক্ষেরই একজন ঘনিষ্ঠ। এরপর তিনি পরিবারসহ পালিয়ে যান। এই সাফাইকর্মী বলেন, আমি আর মানসিকভাবে সহ্য করতে পারছিলাম না। মেয়েটির ঘটনার পর বুঝেছিলাম, এখান থেকে পালানো ছাড়া উপায় নেই।
সেই থেকে তিনি একটি পার্শ্ববর্তী রাজ্যে লুকিয়ে ছিলেন, বাসা বদলেছেন বহুবার। তবে এক দশকের অপরাধবোধ আর তাকে স্থির থাকতে দেয়নি।
সম্প্রতি তিনি পুলিশের সহায়তায় একটি কবর থেকে একটি কঙ্কাল উত্তোলন করেন এবং সেটির ছবি ও হাড় পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন। তিনি ব্রেইন ম্যাপিং, পলিগ্রাফ টেস্টসহ যেকোনো তদন্তে অংশ নিতে রাজি বলে জানিয়েছেন।
ধর্মস্থলায় অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে?
ধর্মস্থলা শহরটি এর আগেও বহুবার গণবিক্ষোভ, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে উত্তাল হয়েছে। ১৯৮৭ সালে ১৭ বছর বয়সি পদ্মলতা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ হয়, তবে প্রভাবশালীদের চাপে তা দমন করা হয় বলে অভিযোগ। ২০১২ সালে ১৭ বছর বয়সী সৌজন্যার ধর্ষণ ও হত্যার পর ‘সৌজন্যার জন্য ন্যায়বিচার’ আন্দোলন শুরু হয়। এখনো সেই মামলার সুরাহা হয়নি। ২০০৩ সালে মেডিকেল শিক্ষার্থী অনন্যা ভাট নিখোঁজ হন। তার মা সুজাত ভাট বিশ্বাস করেন, তার মেয়েও ওইসব গণকবরের মধ্যে রয়েছেন।
আইনি ও মানবাধিকার মহলের প্রতিক্রিয়া কী?
কর্নাটক হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী এস বালন বলেন, ১৯৭৯ সাল থেকে এই এলাকায় ধর্ষণ, হত্যা ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে আসছে। এত বড় মাত্রায় অপরাধ স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে বিরল।
তিনি জানান, গত সপ্তাহে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে দেখা করে একটি আইনজীবী প্রতিনিধি দল এসআইটি গঠনের অনুরোধ জানায়। সরকার পরে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
ধর্মস্থলা মন্দির পরিচালনা করে হেগড়ে পরিবার, যার বর্তমান প্রধান বীরেন্দ্র হেগড়ে ১৯৬৮ সাল থেকে ধর্মাধিকারের দায়িত্বে আছেন। তিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত ও বিজেপি মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য। তার পরিবার এই অঞ্চলে অত্যন্ত প্রভাবশালী।
২০১২ সালে সৌজন্যার ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হেগড়ে পরিবারের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। সম্প্রতি ২০ জুলাই এক বিবৃতিতে ধর্মস্থলা মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ‘নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ চায় ও সত্য উদঘাটনের পক্ষে আছে।
মন্দিরের মুখপাত্র পার্শ্বনাথ জৈন বলেন, এই অভিযোগ জনমনে আলোড়ন তুলেছে। আমরা স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য তদন্ত কামনা করছি।
নিখোঁজদের পরিবার কী বলছে?
২০০৩ সালে নিখোঁজ হওয়া অনন্যা ভাটের মা সুজাত ভাট নতুন করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান, পরিচয় গোপন রাখা সাফাইকর্মীর বক্তব্য তাকে সামনে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার মেয়ের কঙ্কাল খুঁজে দিন। আমি অন্তত তাকে সৎকার করতে চাই, যাতে তার আত্মা শান্তি পায় ও আমি শেষ জীবনটা শান্তিতে কাটাতে পারি।
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) স্থানীয় সময় সকালে প্রতিবেশি দেশদুটির ছয়টি সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি ও রকেট হামলার মধ্য দিয়ে এই সহিংসতা শুরু হয়।
গতকাল শুক্রবারও সীমান্তবর্তী চারটি প্রদেশের কাছে একাধিক স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী। কম্বোডিয়ার ওপর থাইল্যান্ড বিমান হামলা চালিয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডে অন্তত ১৪ জন এবং কম্বোডিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। চলমান এই সংঘাতের কারণে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
এ নিয়ে চলতি বছর দ্বিতীয়বারের মতো সংঘর্ষে জড়াল দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশ। এর আগে মে মাসে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা শুরু হয়েছিল।
প্রতিবেশি এই দুই দেশের সংঘাতের নেপথ্যে কী আছে, চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।
সবশেষ উত্তেজনার সূত্রপাত যেভাবে
চলতি বছরের মে মাসে ছোট একটি সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির মধ্য দিয়ে সংঘাতের সূত্রপাত হয়।
সে সময় এক কম্বোডিয়ান সেনা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। দুই পক্ষই দাবি করে যে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে। এ নিয়ে তখন উত্তেজনা তৈরি হয়। এরপর একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন থাই সেনা আহত হওয়ার পর এই সামরিক উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
পরে দুই দেশ উত্তেজনা হ্রাসে একমত হয়। তবে সীমান্তে কড়াকড়ি, নিষেধাজ্ঞা ও বাকযুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
এরপর কম্বোডিয়া সীমান্তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাইল্যান্ড। এর ফলে শুধু শিক্ষার্থী, চিকিৎসাপ্রার্থী ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো মানুষ দেশটিতে যাতায়াত করতে পারছিল না। এরপর বৃহস্পতিবার পুরো সীমান্তই বন্ধ করে দেয় থাইল্যান্ড।
জবাবে থাই চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নিষিদ্ধ করে কম্বোডিয়া। এ ছাড়াও থাইল্যান্ড থেকে জ্বালানি, গ্যাস, ফলমূল ও সবজি আমদানিও বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এমনকি প্রতিবেশি দেশটির সঙ্গে কিছু আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগ ও বিদ্যুৎ সরবারহও স্থগিত করেছে নমপেন।
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ
থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বহু দশক ধরেই বিরোধপূর্ণ। এ বিরোধের মূল উৎস ১৯০৭ সালে ফরাসি উপনিবেশিক শাসনামলে আঁকা একটি মানচিত্র।
কম্বোডিয়াকে থাইল্যান্ড থেকে আলাদা করতে ওই মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। ওই মানচিত্র ধরে কিছু এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে কম্বোডিয়া। তবে মানচিত্রটি প্রত্যাখ্যান করেছে থাইল্যান্ড।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিরোধ রয়েছে প্রায় এক হাজার বছরের পুরোনো প্রেয়া ভিহেয়ার মন্দির নিয়ে। ১৯৬২ সালে কম্বোডিয়াকে এই মন্দির এলাকার মালিকানা দেয় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। যার ফরে দেশদুটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে পড়ে।
এরপর ২০১১ সালে নতুন করে সংঘর্ষ বাঁধে, যেখানে ২০ জনের মতো নিহত হন এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এরপর কম্বোডিয়া আবার বিচার আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং ২০১৩ সালে আদালত আবারও তাদের পক্ষে রায় দেয়।
বর্তমানে কম্বোডিয়া আবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তবে আদালতের এখতিয়ার মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে থাইল্যান্ড।
থাই রাজনীতিতে তোলপাড়
এদিকে, উভয় দেশের জাতীয়তাবাদী মনোভাব দুই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
এরই মধ্যে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে এক কম্বোডিয়ান শীর্ষ নেতার সঙ্গে ফাঁস হওয়া ফোনালাপের পর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে গত ১ জুলাই তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
জুন মাসে ফাঁস হওয়া ওই ফোন কলে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন সিনাওয়াত্রা এবং থাইল্যান্ডের সামরিক নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। সমালোচকরা এসব মন্তব্যকে জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি অসম্মান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হুন সেন পেতংতার্নের বাবার দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিলেন। তবে সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে তাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থাইল্যান্ডজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দেয়। এরপর পেতংতার্নকে সরিয়ে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথম ওয়েচায়াচাইকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, কনস্যুলেট জেনারেল ২২ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তাদের কার্যালয়ে একটি শোক বই খোলার ব্যবস্থা করেছে, সেখানে সর্বসাধারণ তাদের সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারবেন। আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়।
নিহতদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে একটি বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়েছে।
কনস্যুলেটের কর্মকর্তা ও কর্মীদের সঙ্গে কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বিশেষ দোয়ায় অংশ নেন।
কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক শোকাহত পরিবার এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। জাতি হিসেবে আমরা শোকাহত। আমরা আমাদের গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং সকল নিহতদের জন্য দোয়া করছি।’
এসময় বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে একটি পৃথক মোনাজাতও করা হয়।
রাশিয়ায় ক্রু ও যাত্রীসহ ৪৮ আরোহীকে নিয়ে এএন-২৪ নামের ৫০ বছর পুরোনো বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সব আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দেশটির আমুর অঞ্চলের গভর্নর ভাসিলি অরলভ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিমানে থাকা ৪৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন। তিনি ঘটনাটিকে একটি ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে আমুর অঞ্চলে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
দেশটির স্থানীয় জরুরি পরিষেবা মন্ত্রণালয় তথ্যনুযায়ী, গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির দূর প্রাচ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ৬ শিশুসহ ৪২ যাত্রী ও ৬ জন বিমান ক্র ছিলেন।
দুর্ঘটনার পর গভর্নরের দপ্তর থেকে ৪৯ জন আরোহীর থাকার কথা বলা হলেও পরে সেটি সংশোধন করে ৪৮ করা হয়। তবে সংখ্যাগত ভিন্নতার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।
মন্ত্রণালয় জানায়, দূর প্রাচ্যের তিন্দা শহরের উদ্দেশে রওনা হওয়া বিমানটি রাডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর ধ্বংসাবশেষ একটি পাহাড়ি জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়। দুর্ঘটনার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিধ্বস্তের সময় ওই এলাকায় খারাপ আবহাওয়া বিরাজ করছিল।
প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো সোভিয়েত আমলের বিমানটি খাবারোভস্ক থেকে যাত্রা শুরু করে ব্লাগোভেশচেনস্কে পৌঁছে পরে তিন্দার দিকে যাচ্ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ছবিতে দেখা যায়, বিমানের ধ্বংসাবশেষ ঘন জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আছে এবং সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছিল।
দূরপ্রাচ্যের পরিবহন প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলটি তিন্দা থেকে ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।
একটি অনলাইন বিবৃতিতে অফিসটি জানিয়েছে, বিমানটি অবতরণের জন্য দুইবার চেষ্টা করে। দ্বিতীয়বার অবতরণের চেষ্টার পর এটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়।
স্থানীয় জরুরি সেবা বিষয়কমন্ত্রী বলেন, সাইবেরিয়াভিত্তিক আনগারা নামের একটি এয়ারলাইন্স বিমানটি পরিচালনা করতো। বিমানটির নাম এএন-২৪।
‘উড়ন্ত ট্রাক্টর’ নামে পরিচিত এএন-২৪ বিমানগুলোকে রাশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পুরোনো বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
নতুন লাদোগা বিমানের ব্যাপক উৎপাদন ২০২৭ সালের আগে শুরু হবে না বলে জানা গেছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে পরিবহনের জন্য এখনও পুরোনো ‘উড়ন্ত ট্রাক্টর’-এর ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
বিমানের বয়স ৫০!
রাশিয়ানপ্লেইনস নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, আনগারা এয়ারলাইন্স মূলত রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল ও সাইবেরিয়ার দুর্গম এলাকায় ফ্লাইট পরিচালনা করে। তারা বর্তমানে ১০টি এএন-২৪ বিমান পরিচালনা করে, যেগুলো ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে তৈরি।
সোভিয়েত আমলে মোট ১ হাজার ৩৪০টি এএন-২৪ তৈরি হয়। রাশিয়ানপ্লেইনসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এর মধ্যে ৮৮টি দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়েছে, ৬৫টি গুরুতর ঘটনার শিকার হয়েছে যাত্রী হতাহতের ঘটনা ছাড়াই এবং বর্তমানে মাত্র ৭৫টি বিমান চালু রয়েছে। বিমানগুলোর বয়স বহুদিন ধরেই উদ্বেগের বিষয়। ২০১১ সালে সাইবেরিয়ায় এক এএন-২৪ বিমান দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এই বিমানগুলো গ্রাউন্ড (পরিচালনা বন্ধ) করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতি এই বিমানের পরিচালনা ও ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তার দেশ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ম্যাখোঁর এই ঘোষণায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
প্যারিস থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
এএফপির এক হিসাব অনুযায়ী, কমপক্ষে ১৪২টি দেশ এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘এটি একটি বেপরোয়া সিদ্ধান্ত যা কেবল হামাসের প্রচারণায় সাহায্য করবে’।
তিনি এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন ‘এটি ৭ই অক্টোবরের ভুক্তভোগীদের মুখে চপেটাঘাত। যা ২০২৩ সালে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের কারণ হিসেবে হামাসের হামলার কথাকে বুঝিয়েছে।
প্রায় দুই বছর আগে হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করার পর থেকে বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
ম্যাক্রোঁর এই ঘোষণা ইসরাইলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করছে’ এবং ইসরাইলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করছে।’
নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, এ সিদ্ধান্তে ‘গাজার মতো আরেকটি ইরানপন্থি শক্তি গড়ে ওঠার ঝুঁকি আছে যা ইসরাইলের পাশে শান্তিতে বসবাসের জন্য নয়, বরং ইসরাইলকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার হবে।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুসেইন আল-শেখ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘এটি দেখায় যে ফ্রান্স আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার অধিকারকে সমর্থন করে।’
হামাস ম্যাখোঁর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘এটি সঠিক পথে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা আমাদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায্য অধিকার ও স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার দাবিকে সমর্থন করে।’
হামাস আরও বলেছে, ‘বিশ্বের সব দেশকে, বিশেষ করে ইউরোপের যেসব দেশ এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি তাদের ফ্রান্সের পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানাই।’
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দফতর পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়।
বৃহস্পতিবার এই পরিদর্শনকালে ট্রাম্প ফেডের সুদের হার না কমানোয় পাওয়েলকে দায়ী করে তাকে অপসারণের হুমকি দেন। যদিও আইনত তার এমন ক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ফেড সদর দপ্তরের সংস্কার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ফেড ভবন পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সামনে এই দুজনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিব্রতকর বাক্যবিনিময় ঘটে। সংস্কারের খরচ ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বলে ট্রাম্প দাবি করলে পাওয়েল তা সংশোধন করে জানান প্রকৃত ব্যয় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্প যে কাগজপত্র দেখান, তাতে ‘উইলিয়াম ম্যাকচেসনি মার্টিন জুনিয়র বিল্ডিং’য়ের সংস্কার ব্যয়ও যুক্ত ছিল।
যদিও সেটি প্রকল্পের অংশ নয়। পাওয়েল স্পষ্ট বলেন, আপনি মার্টিন ভবনের খরচও ধরেছেন, এটি প্রকল্পে নেই।
ট্রাম্প পাল্টা বলেন, সেটিও সামগ্রিক প্রকল্পের অংশ। পাওয়েল জবাব দেন, না, ওটা পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়েছে। এটা নতুন নয়। টেলিভিশন লাইভে বিবাদ চলাকালীন উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট উত্তেজনা দেখা যায়।
এই সফর এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ট্রাম্প তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে জেফরি এপস্টেইনের মামলা বন্ধ করা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট থেকে মনোযোগ সরাতে মরিয়া।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এ বছরের বসন্তে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন, এপস্টেইনের নথিপত্রে তার নামও রয়েছে। ২০১৯ সালে কারাগারে আত্মহত্যা করার আগে, এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ধনবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন কাজে বাধ্য করার অভিযোগ ছিল।
এপস্টেইনের এ খবরকে চাপা দিতে ট্রাম্প এখন নানা টার্গেটে আঘাত করছেন। ডেমোক্রেটিক পূর্বসূরি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদেরও ছাড়ছেন না।
তিনি বুধবার সুদের হার নিয়ে জেরোম পাওয়েলকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন এবং বৃহস্পতিবারের সফরের সময় ১০ বারেরও বেশি ঋণ গ্রহণের উচ্চ খরচ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যত ভালো করছি, আরও ভালো করতাম যদি সুদের হার কম হতো।’
ফেডারেল রিজার্ভে প্রেসিডেন্টের সফর অতীতে দেখা গেছে, ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, জেরাল্ড ফোর্ড ও জর্জ ডব্লিউ. বুশ সফর করেছিলেন। তবে এবারের ঘটনাটি বেশ বিরল।
ট্রাম্প মাসের পর মাস ধরে পাওয়েলের সমালোচনা করে আসছেন, কারণ পাওয়েল সুদের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে রেখেছেন, যদিও গত বছর জো বাইডেনের শাসনে এটি তিনবার কমানো হয়েছিল।
পাওয়েল বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন নতুন আমদানি শুল্কের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে।
কিন্তু ট্রাম্প তাকে ‘মূর্খ’ ও ‘পরাজিত’ বলে কটাক্ষ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে পাওয়েল দেশের অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিচ্ছেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি কিছুটা নরম সুরে বলেন, তাদের মধ্যে ‘অর্থনীতি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে এবং কোনো উত্তেজনা ছিল না।’
ট্রাম্প বলেন, ‘একটু দেরি হয়ে গেছে বটে, তবে আমি বিশ্বাস করি তিনি সঠিক কাজটি করবেন।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ৮৮ বছরের পুরনো ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান কার্যালয় ও পাশের একটি ভবনের সংস্কার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নজরে এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। প্রাথমিকভাবে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কথা থাকলেও পরে তা ৬০০ মিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে।
এই ব্যয়বৃদ্ধির একটি বড় কারণ ভবনের নিরাপত্তা যেমন বিস্ফোরণ প্রতিরোধী জানালা ও ভবন ধ্বংস ঠেকানোর ব্যবস্থা।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ স্বাধীনভাবে নীতিনির্ধারণ করে এবং এর বোর্ড সদস্যরা সাধারণত উভয় দলীয় প্রেসিডেন্টদের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের পাওয়েলকে বরখাস্তের ক্ষমতা নেই, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্তের পর, যা ফেডের ওপর প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করে দিয়েছে।
রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আমুরের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০ আরোহী নিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনায় বিমানটির কোন আরোহীর বেঁচে থাকার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মস্কো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ কথা জানায়।
আঙ্গারা এয়ারলাইন্সের আন্তোনভ-২৪ বিমানটি ব্লাগোভেশচেনস্ক শহর থেকে টিন্ডা শহরের দিকে যাচ্ছিল। স্থানীয় সময় দুপুর ১:০০ টার দিকে রাডার থেকে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। বিমানটির জোড়া প্রোপেলার ছিল।
পরে একটি উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার টিন্ডা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার (১০ মাইল) দূরে একটি জঙ্গলময় পাহাড়ি ঢালে বিমানটির জ্বলন্ত অংশ দেখতে পায়।
স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারে থাকা উদ্ধারকারীরা বিমানটির কোন আরোহীর বেঁচে থাকার প্রমাণ পাননি।
তারা আরো জানায়, ‘এই মুহূর্তে ২৫ জন ও সরঞ্জামসহ পাঁচটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে এবং ক্রুসহ চারটি বিমান প্রস্তুত রয়েছে।’
একজন উদ্ধারকারী রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে জানিয়েছেন, বনভূমির কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই অঞ্চলের গভর্নর ভ্যাসিলি অরলভ জানান, বিমানটিতে ৪৩ জন যাত্রী এবং ছয় জন ক্রু সদস্য ছিলো।
তিনি বলেন, যাত্রীদের মধ্যে পাঁচ জন শিশুও ছিল।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, বিমানটি প্রায় ৫০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
বিমান পরিষেবার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এটি আরো জানায়, ২০২১ সালে, বিমানটির ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া সোভিয়েত আমলের বিমান থেকে আধুনিক জেটে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে পুরানো হালকা বিমানগুলি এখনও দূরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটে।