ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশে যুদ্ধের দায়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে ঝটিকা সফরকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। পুতিনের বিচারের দাবিতে এদিন জেলেনস্কি হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদর দপ্তরে যান।
রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনীয় শিশুদের অবৈধভাবে রাশিয়ায় স্থানান্তরের অভিযোগে আইসিসি গত মার্চে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ইউরোপীয় কমিশন জানায়, ইউক্রেনে আগ্রাসনের অপরাধের দায়ে আরেকটি আন্তর্জাতিক বিচার-প্রক্রিয়ার কেন্দ্রস্থল হেগ শহরে হবে।
পুতিনকে উদ্দেশ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনে রাজধানী হেগে আমরা ভ্লাদিমিরকে অন্যরূপে দেখতে চাই। অপরাধমূলক কর্মের জন্য যার সাজা প্রাপ্য।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আমরা জিতলে একদিন এটি ঘটবে।’ এএফপি জানায়, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে জেলেনস্কি আইসিসির সদর দপ্তরে যান। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ইউক্রেনের পতাকা উড়ছিল। রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধে নেদারল্যান্ডস কিয়েভের দৃঢ় সমর্থক। দেশটির সরকার ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি।
খেরসনে রুশ হামলায় নিহত ২১
রাশিয়ার গোলাবর্ষণে বুধবার খেরসন শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে ২১ বেসামরিক লোক নিহত এবং ৪৮ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, খেরসন শহরের একটি মার্কেট, একটি রেলস্টেশন ও ক্রসিং, একটি পেট্রলপাম্প ও আবাসিক ভবনে গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়া।
খেরসন থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানান, খেরসনের একটি সুপার স্টোর গোলার আঘাতে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সুপার স্টোরের কর্মী এবং ক্রেতারা হতাহত হন। ঘটনাস্থলে রক্তে ভেসে যাওয়া মরদেহগুলো পড়ে রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার ব্যাপারে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
যুদ্ধের মধ্যে বিতর্কিত গণভোটে রাশিয়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে নিয়েছিল, খেরসন তার একটি। গত বছরের নভেম্বরে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা অভিযান চালিয়ে খেরসন শহরটি পুনরুদ্ধার করে। তবে রুশ বাহিনী বেশি দূর সরেনি, তারা নিপ্রো নদীর অপর পাড়েই আছে, সেখান থেকেই তারা এখন নিয়মিত শহরটিতে গোলাবর্ষণ করছে।
খেরসন শহরে শুক্রবার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ দিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। শহরে সেনা চলাচল ও সামরিক সরঞ্জাম বহন সহজ করতে এর আগেও এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল তারা।
সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা সব মিলিয়ে ক্ষুব্ধ তরুণরা। নিজেদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে এখন সরাসরি আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে জেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’। এই তরুণরাই জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা প্রথম প্রজন্ম। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল সমাজ, জেন-জিরা নানা উপায়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচলিত শাসন, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো। তাদের ভাষা, অভিব্যক্তি আর প্রতিক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা।
জেন-জি পরিচয়ে আসলে কারা অন্তর্ভুক্ত? শুধু তুলনামূলক সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণরা, নাকি এর ভেতরে আছেন সুবিধাবঞ্চিতরাও? এ প্রজন্ম সত্যিই কি শুধু প্রশংসাযোগ্য কাজ করছে, নাকি তাদের আছে সীমাবদ্ধতাও? এ আয়োজনে রয়েছে এসবের অনুসন্ধান।
বৈশ্বিক তরুণ আন্দোলনের ঢেউ
মরক্কোর বিভিন্ন শহরে টানা কয়েক রাত ধরে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলছে। ‘জেন-জি-২১২’ নামে সংগঠিত এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে মূলত ছাত্র ও বেকার তরুণরা। তাদের দাবি স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে।
তাদের অভিযোগ, সরকার ২০৩০ বিশ্বকাপের অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও হাসপাতালগুলোতে যথাযথ সেবা নেই, গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসুবিধা সীমিত এবং শিক্ষাব্যবস্থা ধুঁকছে। বর্তমানে দেশটির যুব বেকারত্ব ৩৬ শতাংশ; প্রতি পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের মধ্যে একজনেরও চাকরি নেই।
বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে আগাদির শহরে কয়েকজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর ঘটনায়, যাদের অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসা জটিলতায় মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এ পর্যন্ত তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচ জানান, সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ‘জেন-জি-২১২’ আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে যাচ্ছে।
উত্তাল মাদাগাস্কার
হাজার মাইল দূরে মাদাগাস্কারেও চলছে জেন-জি তরুণদের বিক্ষোভ। দেশজুড়ে পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন সরকার পতনের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
রাজোয়েলিনা সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করে বলেন, আমি তরুণদের কষ্ট বোঝতে পারছি।
তবে জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, এ ঘটনায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। সরকার অবশ্য এই সংখ্যাকে বিতর্কিত বলছে।
লাতিন আমেরিকায় তরুণদের বিক্ষোভ
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতেও তরুণদের আন্দোলন জোরদার হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের সূত্রপাত পেনশন আইনের সংস্কার নিয়ে, যা পরে দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গিয়ে এখন প্রায় তলানিতে- জুলাইয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, তার জনপ্রিয়তা মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
নেপালে জেন-জি বিপ্লব
জেন-জি তরুণদের অন্যতম আলোচিত আন্দোলন ঘটেছে নেপালে। গত সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরকার পতনের দিকে গড়ায়। অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন, রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবন আগুনে পুড়ে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীকে সরে দাঁড়াতে হয়।
এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তরুণরা জেগে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক বার্ট কামার্টস বলেন, এই প্রজন্ম মনে করছে তাদের স্বার্থ কেউ প্রতিনিধিত্ব করছে না। তারা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রাখে, কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থা তাদের আশা পূরণ করছে না।
এসওএএস সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবির সিনহা জানান, রুলিং বা ক্ষমতাসীন এলিটদের অগ্রাধিকার তরুণদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ধ্বংসাবশেষের অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ যেন বাতিল হয়ে গেছে- এমন এক বাস্তবতায় তরুণরা এখন একে অপরের হাত ধরে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে রাস্তায়
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মরক্কোতে ‘জেন-জি-২১২’ নামের একটি ডিসকর্ড সার্ভার কয়েক দিনের মধ্যেই ৩ হাজার সদস্য থেকে বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছে যায়।
একইভাবে মাদাগাস্কারে ‘জেন-জি মাদা’ ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডিজিটাল সংগঠনগুলো বিকেন্দ্রীকৃত, নেতা ছাড়া পরিচালিত হওয়ায় সরকারগুলোর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
জেন-জি প্রজন্ম এখন শুধু অনলাইন নয়, বরং বাস্তবেই পরিবর্তনের হাল ধরেছে। এবং সেই পরিবর্তনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক পর্দা থেকে সরাসরি রাস্তায়।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা হুমকি দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে রাজি থাকলে সরকার ভেঙে দিতে পারেন। লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল–মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নেতানিয়াহু সরকারের জোট সঙ্গী কট্টর ডানপন্থি ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের নেতা ও ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন-গভির সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরও হামাস টিকে থাকে, তাহলে তার দল সরকারের বাইরে চলে যাবে। তার দল নেতানিয়াহুর জোট ছাড়লে সরকারপতনের সম্ভাবনা আছে।
বেনগভির স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি এবং ওৎজমা ইয়েহুদিতের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি, যদি বন্দিদের মুক্তির পরও হামাস নামের সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে যায়, তাহলে আমরা সরকারের অংশ থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, তার দল কোনোভাবেই জাতীয় পরাজয়ের অংশ হবে না। এটা ইসরায়েলের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি অবশ্য বলেছেন, তারাও বন্দিদের ঘরে ফেরার পক্ষে। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘যে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তাদের আবার মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ আমরা মেনে নিতে পারি না।’
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর জোট সরকারের আরেক অংশীদার রিলিয়জিয়াস জায়নিস্ট পার্টি–তকুমার নেতা সরকারের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচও নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য গাজায় ইসরায়েলি অভিযান থামানো মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
স্মতরিচ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত গাজায় অভিযান থামিয়ে আলোচনায় যাওয়া গুরুতর ভুল। প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া, সেটাও যখন গাজা থেকে কোনো হামলা হচ্ছে না—এটা হামাসের জন্য সময়ক্ষেপণের সুযোগ করে দেবে।’
তিনি দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। এর ফলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব বন্দীকে দ্রুত মুক্ত করার দাবি দুর্বল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা এবং গাজাকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ—সেটিও ব্যাহত হবে।
ইসরায়েলি কারাগারে অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সুইডিশ পরিবেশ বিষয়ক অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ থেকে তাকে আটক করে ইসরাইল। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তবে থুনবার্গকে যেই সেলে রাখা হয়েছে সেখানে তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ। তাদের তরফে বলা হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পোকামাকড়ে জর্জরিত একটি সেলে তাকে আটকে রেখেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি তাকে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি দেয়া হচ্ছে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।
এতে বলা হয়, থুনবার্গের সঙ্গে বৈঠক করা এক সুইডিশ কূটনীতিকের পাঠানো ইমেইলে জানানো হয়েছে, তিনি অভিযোগ করেছেন যে তাকে পর্যাপ্ত পানি ও খাবার দেওয়া হয়নি। এতে তিনি ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভুগছেন। থুনবার্গ আরও জানান, বিছানায় পোকার কারণে তার শরীরে চুলকানি শুরু হয়েছে। আটক হওয়া অন্য এক ব্যক্তির দাবি, থুনবার্গকে পতাকা ধরিয়ে ছবি তোলার জন্য জোর করা হয়। যদিও সেই পতাকার পরিচয় জানানো হয়নি। তবে ভিন্ন একটি সূত্র বলছে, থুনবার্গকে ইসরায়েলি পতাকায় চুমো দিতে বাধ্য করা হয় এবং তার গায়ের ওপর দিয়ে পতাকা মুড়ে দেয়া হয়। এছাড়া থুনবার্গকে চুল ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ফ্লোটিলার ওই নৌবহর থেকে আরও ৪৩৭ জন অ্যাক্টিভিস্ট, সংসদ সদস্য ও আইনজীবীকে আটক করেছে ইসরায়েল। নৌবহরটিতে মোট ৪০টি জাহাজ অংশ নেয়। যার সবগুলোকেই আটক করে নিজেদের বন্দরে নিয়ে গেছে ইসরায়েল। আটক হওয়া এসব ব্যক্তির অধিকাংশকেই কেটজিওট নামের উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট একটি কারাগারে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিন থেকে আটক হওয়া বেশির ভাগকেই এই কারাগারে রাখা হয়। এদিকে সুইডিশ কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, থুনবার্গকে একটি নথিতে সই করাতে চাপ সৃষ্টি করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে থুনবার্গ সেই নথিতে সই করতে রাজি হননি।
এসব অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি দূতাবাস। তারা দাবি করেছে, আটককৃত সবাইকে পর্যাপ্ত পানি, খাবার এবং শৌচাগারের সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের আইনগত অধিকার পুরোপুরি রক্ষা করা হয়েছে।
অন্যদিকে সুইডিশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আটককৃতদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সহায়তার উপর জোর দিয়েছে এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও ত্বরিত করতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম সংসদীয় ভোট। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে গণপরিষদে এই নির্বাচন শুরু হয়েছে।
সিরিয়ার সুপ্রিম কমিটি ফর পিপলস অ্যাসেম্বলি ইলেকশনের প্রধান মোহাম্মদ আল-আহমাদ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, দামেস্ক এবং কিছু প্রদেশের প্রধান শহরগুলোতে ভোটদান বেড়েছে। দামেস্কের গ্রামীণ অঞ্চল এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে চলেছে। সিরিয়ার জনগণ গণপরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করতে পেরে গর্বিত।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে দামেস্কের জাতীয় গ্রন্থাগার ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছেন।
সিরিয়ান আরব নিউজ এজেন্সি সানা অনুসারে, পিপলস অ্যাসেম্বলির ২১০টি আসনের জন্য ১ হাজার ৫৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ নারী প্রার্থী রয়েছেন।
২১০ আসনের এক-তৃতীয়াংশ আসনের জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে নিযুক্ত হবেন। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিটি জেলার মনোনীত 'নির্বাচনী সংস্থা'র মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার কেন্দ্রে কূটনৈতিক মিশনের পর্যবেক্ষক এবং স্বীকৃত কিছু রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনী কমিটির মুখপাত্র নাওয়ার নাজমা বলেন, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকল যোগ্য ভোটারের সুবিধার্থে তা স্থানীয় বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
তিনি বলেন, সোমবার বা মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার নেতা আসাদ গত ডিসেম্বরে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ২৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টির শাসনের অবসান ঘটে। জানুয়ারিতে শারার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠিত হয়।
১৩ বছর ধরে চলা ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর, ১০ মাস আগে শারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতাচ্যুত হন দীর্ঘদিনের শাসক আসাদ। ওই ঘটনার পর, প্রথমবারের মতো দেশটিতে গঠিত হতে যাচ্ছে নতুন সরকার।
তবে, পরোক্ষ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াকে অগণতান্ত্রিক মনে করছে ভোটারদের বড় অংশ। গত মার্চ মাসে সিরিয়ায় একটি সাংবিধানিক ঘোষণা জারি করা হয়। এতে আল-শারার নেতৃত্বাধীন সরকার কীভাবে চলছে, তার কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঘোষণায় ইসলামি আইনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে নারীর অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমালোচকদের আশঙ্কা, এতে করে এইচটিএস ও অন্যান্য কট্টরপন্থিদের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা চলে যেতে পারে।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা হুমকি দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবে রাজি থাকলে সরকার ভেঙে দিতে পারেন। লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল–মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নেতানিয়াহু সরকারের জোট সঙ্গী কট্টর ডানপন্থি ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের নেতা ও ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতমার বেন-গভির সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পরও হামাস টিকে থাকে, তাহলে তার দল সরকারের বাইরে চলে যাবে। তার দল নেতানিয়াহুর জোট ছাড়লে সরকারপতনের সম্ভাবনা আছে।
বেনগভির স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি এবং ওৎজমা ইয়েহুদিতের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি, যদি বন্দিদের মুক্তির পরও হামাস নামের সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে যায়, তাহলে আমরা সরকারের অংশ থাকব না।’
তিনি আরও বলেন, তার দল কোনোভাবেই জাতীয় পরাজয়ের অংশ হবে না। এটা ইসরায়েলের জন্য চিরস্থায়ী লজ্জা এবং ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তিনি অবশ্য বলেছেন, তারাও বন্দিদের ঘরে ফেরার পক্ষে। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘যে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তাদের আবার মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ আমরা মেনে নিতে পারি না।’
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর জোট সরকারের আরেক অংশীদার রিলিয়জিয়াস জায়নিস্ট পার্টি–তকুমার নেতা সরকারের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচও নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য গাজায় ইসরায়েলি অভিযান থামানো মোটেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
স্মতরিচ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত গাজায় অভিযান থামিয়ে আলোচনায় যাওয়া গুরুতর ভুল। প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া, সেটাও যখন গাজা থেকে কোনো হামলা হচ্ছে না—এটা হামাসের জন্য সময়ক্ষেপণের সুযোগ করে দেবে।’
তিনি দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। এর ফলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব বন্দীকে দ্রুত মুক্ত করার দাবি দুর্বল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা এবং গাজাকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ—সেটিও ব্যাহত হবে।
ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। রোববার ভোরে এক্সে (পূর্বে টুইটার) দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, এবার ভারত নিজ দেশের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচেই সমাধিস্থ হবে, ইনশাআল্লাহ।
আসিফ বলেন, ভারতের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য তাদের ‘হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। তার ভাষায়, এই ধরনের বিবৃতি ভারতের নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে তীব্র চাপের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি লিখেছেন, এমন এক সুস্পষ্ট ৬-০ পরাজয়ের পর যদি তারা আবারও চেষ্টা করে, তাহলে পাকিস্তানের স্কোর আরও ভালো হবে। আসিফ দাবি করেন, ওই পরাজয়ের পর ভারতের জনমত এখন ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে চলে গেছে, যা দেশটির নেতাদের বক্তব্যেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান আল্লাহর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্র, আর আমাদের রক্ষাকারীরা আল্লাহর সৈনিক। এইবার ভারত, ইনশাআল্লাহ, নিজেদের ভূপাতিত যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষের নিচেই সমাধিস্থ হবে। আল্লাহু আকবার।
এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্রও ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একই ধরনের মন্তব্যের জবাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
ভারতের যুদ্ধোত্তেজনামূলক বক্তব্যের জবাবে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সতর্ক করে বলেছে, ভারতের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ‘উসকানিমূলক ও যুদ্ধবাজ মন্তব্য’ দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব মন্তব্য আসলে আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি করার নতুন প্রচেষ্টা, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করবে।
এক দিন আগে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান অমরপ্রীত সিং দাবি করেন, চলতি বছরের মে মাসে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের সময় ভারত পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। সেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ মডেলের যুদ্ধবিমান রয়েছে।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের তীব্র সমালোচনা করে জানায়, ভারত বহু বছর ধরে নিজেকে ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে তুলে ধরছে। অথচ বাস্তবে তারাই দক্ষিণ এশিয়া ও এর বাইরেও সহিংসতা উসকে দিচ্ছে এবং সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। আইএসপিআর জানায়, এই ভুয়া বর্ণনা এখন পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন ভারতকেই ‘আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের আসল মুখ’ এবং ‘আঞ্চলিক অস্থিরতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে চেনে।
আইএসপিআর স্মরণ করিয়ে দেয়, চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের আগ্রাসনই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশকে বড় ধরনের যুদ্ধে টেনে নিয়েছিল। ভারতীয় নেতৃত্ব এখনো তাদের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ ও পাকিস্তানের পাল্টা হামলার ভয়াবহতা ভুলে গেছে বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গে আইএসপিআর সতর্ক করে জানিয়েছে, যে কোনো নতুন সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যয়কর ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, যদি ভারত কোনো আগ্রাসন শুরু করে, পাকিস্তান কখনো পিছু হটবে না; বরং দৃঢ় প্রতিশ্রুতিতে দ্রুত, কঠোর ও বিধ্বংসী জবাব দেবে।
আইএসপিআর সতর্ক করে বলেছে, যারা নতুন ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ তৈরি করতে চায়, তাদের জানা উচিত- পাকিস্তানও তার জবাবে এক নতুন স্বাভাবিকতা তৈরি করেছে, যা হবে দ্রুত, নির্ভুল ও বিধ্বংসী।
ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় আইএসপিআর বলেছে, ভারতকে জানতে হবে, যদি এমন পরিস্থিতি আসে, তবে এই মুছে ফেলা হবে পারস্পরিক।
এদিকে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্রগুলো ভারতের এই হুমকিকে ‘ফাঁকা বুলি’ বলে অভিহিত করেছে ও জানিয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশ রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ঘটে। এতে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত অভিযোগ করে, এ হামলায় পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের সহায়তা করেছে। তবে পাকিস্তান অভিযোগ নাকচ করে ঘটনাটির আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানায়।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে গত ৬ মে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে (আজাদ কাশ্মির) হঠাৎ বিমান হামলা চালায় ভারত। এর নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের দাবি, আজাদ কাশ্মীরে থাকা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা।
ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’ চালায়। কয়েকদিন ধরে চলা এ সংঘাতে দুই পক্ষই যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। অবশেষে ১০ মে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
সংঘাত চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনী দাবি করে, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’র জবাবে গত ৭ মে রাতে তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে তিনটি ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ ও একটি এসইউ-৩০।
সংঘাত শেষে পাকিস্তান আবারও দাবি করে, তারা ভারতের মোট ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ফ্রান্সের রাফালও রয়েছে। কিছু ক্ষতির কথা স্বীকার করলেও ছয়টি বিমান হারানোর দাবি অস্বীকার করেছে ভারত।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা এখন আর প্রাসঙ্গিক নয় বলে ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
রোববার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, কায়রো চুক্তির অধীনে আইএইএর সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা আর প্রাসঙ্গিক নয়।
গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সংস্থার সঙ্গে ইরান এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যার আওতায় আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের আবারও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশাধিকার দেওয়ার কথা ছিল।
তবে জুন মাসে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর তেহরান এই সহযোগিতা স্থগিত করে।
ইরান জানায়, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এর ফলে কায়রো চুক্তি ইরানের কাছে অর্থহীন হয়ে গেছে।
আরাঘচি বলেন, তিন ইউরোপীয় দেশ মনে করেছিল নিষেধাজ্ঞা হুমকি দিয়ে তারা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। কিন্তু তারা এখন নিজেরাই দেখেছে, এতে তারা তাদের কূটনৈতিক প্রভাব হারিয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন যে, ভবিষ্যতের পারমাণবিক আলোচনায় ইউরোপীয় তিন দেশের ভূমিকা অনেক কমে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করেছে যে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে লাল রেখা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তবে ইরান এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল নাগরিক উদ্দেশে এবং তারা পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) অনুযায়ী সমৃদ্ধকরণের অধিকার রাখে।
কিছু ইরানি সংসদ সদস্য এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তাব দিলেও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, ইরান এখনো চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
আরাঘচি জানান, আইএইএর সঙ্গে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা নিয়ে তেহরানের সিদ্ধান্ত শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। তবে তিনি বলেন, কূটনীতির পথ এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিলে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। কিন্তু জুনে ইসরায়েলের ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনায় হামলার পর সেই আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।
তেহরান যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে বলেছে, তারা কূটনীতি ব্যাহত করছে এবং আলোচনায় ফেরার আগে ইরানের অধিকার স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও চলমান যুদ্ধ বন্ধের প্রতিবাদে ইউরোপজুড়ে বড় বড় শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন। যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে এসব বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। রোববার রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার স্পেনের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর বার্সেলোনা ও রাজধানী মাদ্রিদে যে বিক্ষোভ হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগেই তার ডাক দেওয়া হয়েছিল। তবে ইতালির রোম ও পর্তুগালের লিসবনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’কে ইসরায়েল আটক করার পর।
ইসরায়েলি বাহিনী ভূমধ্যসাগরে থাকতেই নৌবহরটি আটক করেছে। ইসরায়েলের নৃশংস হামলা ও দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা হিসেবে এ নৌবহর বার্সেলোনা থেকে রওনা দিয়েছিল।
নৌবহর থেকে আটক ৪৫০ মানবাধিকারকর্মী ও অন্যদের মধ্যে ৪০ জনের বেশি স্পেনের নাগরিক। তাদের মধ্যে বার্সেলোনার একজন সাবেক মেয়রও রয়েছেন। এর আগে, শুক্রবার গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইতালিতে এক দিনের সাধারণ ধর্মঘটে ২০ লাখের বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে স্পেনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। একইসঙ্গে দেশটির সরকার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চরম দক্ষিণপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করছে।
গত মাসে একটি সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ইসরায়েলি একটি দল স্পেনে গিয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। এতে প্রতিযোগিতার আয়োজন ব্যাহত হয়।
ওই সময় স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গাজায় চলমান যুদ্ধকে ‘জাতিহত্যা’ বলে আখ্যা দেন এবং আন্তর্জাতিক সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলি দলের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
ইউরোপজুড়ে যখন এই বিক্ষোভ-সমাবেশ চলছিল সে সময়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, তারা গাজা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব আংশিকভাবে মেনে নিতে রাজি আছে।
গত দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে উপত্যকাটি। বার্সেলোনার টাউন হল কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে শনিবারের বিক্ষোভে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে ধারণা পুলিশের।
১৯৪০-এর দশকে (ইউরোপে যেমন) দেখেছিলাম তেমন একটি জেনোসাইড এবার আমরা চোখের সামনে ঘটতে দেখছি, এও কীভাবে সম্ভব? এখন আর কেউ এটা বলতে পারবে না যে সেখানে কী ঘটছে তারা সেটা জানতেন না।
বিক্ষোভে অংশ নিতে অন্য একটি শহর থেকে এক ঘণ্টা যাত্রা করে বার্সেলোনা এসেছেন ৬৩ বছর বয়সি মারিয়া জেসুস পাররা। মারিয়া বলেন,‘১৯৪০-এর দশকে (ইউরোপে যেমন) দেখেছিলাম, তেমন একটি জাতিহত্যা এবার আমরা চোখের সামনে ঘটতে দেখছি, এও কীভাবে সম্ভব? এখন আর কেউ এটা বলতে পারবে না যে, সেখানে কী ঘটছে, তারা সেটা জানতেন না।’
ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে প্রাণঘাতী হামলার পর পুলিশ লন্ডনে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ স্থগিত করার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু অনুরোধ উপেক্ষা করে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে লন্ডনে একটি বিক্ষোভ-মিছিল বের হয়। পুলিশ মিছিল থেকে অন্তত ৪৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দ্য গার্ডিয়ান তার প্রতিবেদনে এই সংখ্যা ৫০০ বলে জানিয়েছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গাজায় চলমান যুদ্ধকে ‘জাতিগত হত্যা’ বলে আখ্যা দেন ও আন্তর্জাতিক সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলি দলের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টারের ওই সিনাগগে হামলায় দুজন নিহত হন। পরে পুলিশ হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে। হামলাকারী একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। হামলার পর পুলিশ লন্ডনে সিনাগগ ও মসজিদ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এদিকে পুলিশ বলেছে, শনিবারের বিক্ষোভ তাদের এ নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে।
বিক্ষোভের আয়োজকেরা পুলিশ ও সরকারের বিক্ষোভ স্থগিত করার অনুরোধ অগ্রাহ্য করে। তাদের যুক্তি, বৃহস্পতিবার সিনাগগে হামলার আগে এ বিক্ষোভ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ফিলিস্তিনপন্থি সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ জানাতে এ বিক্ষোভ ডাকা হয়েছে।
রাস্তায় নেমেছে হাজারো ইসরায়েলি
গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন প্রস্তাব এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমর্থনে তেল আবিবের রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার ইসরায়েলি। শনিবার রাতে বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে অবশিষ্ট বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, ‘এখন নয়তো কখনোই না’ - লেখা সংবলিত বিশাল ব্যানার নিয়ে জনতা বিক্ষোভ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই বার্তাটি প্রতিধ্বনিত করছেন এবং ব্যানারের ছবি পোস্ট করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান। এরপর নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে গাজায় আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং চুক্তির বিস্তারিত আলোচনার জন্য কায়রোতে একটি আলোচনা দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
শনিবার রাতের বিক্ষোভের আগে বন্দি ও নিখোঁজদের পরিবারের একটি ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছে, 'সমস্ত জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিতে আমরা দৃঢ়ভাবে পাশে রয়েছি।’
বিক্ষোভে নামা এক ইসরায়েলি বৃদ্ধ বলেন, ‘যদি উভয় পক্ষই সত্যিই ট্রাম্পের নির্দেশ মেনে নেয়... তাহলে এখনই সময় যুদ্ধবিরতি, সমস্ত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার এবং যুদ্ধ শেষ করার দিকে মনোনিবেশ করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল, জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং যুদ্ধ শেষ করা অসম্ভব। কিন্তু এখনই সময় অসম্ভবকে সম্ভব করার।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে টানা ভারী বৃষ্টিতে দার্জিলিংয়ে ভয়াবহ ভূমিধসে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত ও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
এছাড়া সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরবঙ্গে টানা ভারী বৃষ্টিতে দার্জিলিং জেলায় ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। মিরিক ও সুখিয়াপোখরিতে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দার্জিলিং জেলা পুলিশের উদ্ধার অভিযান চলছে। ভারী বর্ষণের ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দার্জিলিং-শিলিগুড়ি প্রধান সড়কও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ও কোচবিহারেও ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) গত শনিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিট ও ৩টা ৪০ মিনিটে সিকিমের ছয়টি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করে। এতে মাঝারি বজ্রসহ বৃষ্টি ও ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার আশঙ্কা জানানো হয়। পরে সকালে এই সতর্কতা কমিয়ে অরেঞ্জ অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয় পর্যটনস্থল টাইগার হিল ও রক গার্ডেনসহ সব দর্শনীয় স্থান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী টয় ট্রেন সার্ভিসও স্থগিত করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং আবহাওয়া ও সড়ক পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য নজরে রাখতে পরামর্শ দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, উত্তরবঙ্গে লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, ‘দার্জিলিং, কালিম্পং ও কুরসিয়ং অঞ্চলে ভূমিধস ও বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। শিলিগুড়ি, তরাই ও ডুয়ার্সের সঙ্গেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
তিনি দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি। উত্তরবঙ্গের মানুষের নিরাপত্তা ও কল্যাণই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা সব মিলিয়ে ক্ষুব্ধ তরুণরা। নিজেদের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে এখন সরাসরি আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে জেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’। এই তরুণরাই জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা প্রথম প্রজন্ম। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল সমাজ, জেন-জিরা নানা উপায়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচলিত শাসন, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো। তাদের ভাষা, অভিব্যক্তি আর প্রতিক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা।
জেন-জি পরিচয়ে আসলে কারা অন্তর্ভুক্ত? শুধু তুলনামূলক সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণরা, নাকি এর ভেতরে আছেন সুবিধাবঞ্চিতরাও? এ প্রজন্ম সত্যিই কি শুধু প্রশংসাযোগ্য কাজ করছে, নাকি তাদের আছে সীমাবদ্ধতাও? এ আয়োজনে রয়েছে এসবের অনুসন্ধান।
বৈশ্বিক তরুণ আন্দোলনের ঢেউ
মরক্কোর বিভিন্ন শহরে টানা কয়েক রাত ধরে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলছে। ‘জেন-জি-২১২’ নামে সংগঠিত এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে মূলত ছাত্র ও বেকার তরুণরা। তাদের দাবি স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে।
তাদের অভিযোগ, সরকার ২০৩০ বিশ্বকাপের অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও হাসপাতালগুলোতে যথাযথ সেবা নেই, গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসুবিধা সীমিত এবং শিক্ষাব্যবস্থা ধুঁকছে। বর্তমানে দেশটির যুব বেকারত্ব ৩৬ শতাংশ; প্রতি পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের মধ্যে একজনেরও চাকরি নেই।
বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে আগাদির শহরে কয়েকজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর ঘটনায়, যাদের অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসা জটিলতায় মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এ পর্যন্ত তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচ জানান, সরকার আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ‘জেন-জি-২১২’ আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করে যাচ্ছে।
উত্তাল মাদাগাস্কার
হাজার মাইল দূরে মাদাগাস্কারেও চলছে জেন-জি তরুণদের বিক্ষোভ। দেশজুড়ে পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন সরকার পতনের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
রাজোয়েলিনা সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করে বলেন, আমি তরুণদের কষ্ট বোঝতে পারছি।
তবে জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, এ ঘটনায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। সরকার অবশ্য এই সংখ্যাকে বিতর্কিত বলছে।
লাতিন আমেরিকায় তরুণদের বিক্ষোভ
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতেও তরুণদের আন্দোলন জোরদার হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের সূত্রপাত পেনশন আইনের সংস্কার নিয়ে, যা পরে দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমে গিয়ে এখন প্রায় তলানিতে- জুলাইয়ে করা এক জরিপে দেখা গেছে, তার জনপ্রিয়তা মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
নেপালে জেন-জি বিপ্লব
জেন-জি তরুণদের অন্যতম আলোচিত আন্দোলন ঘটেছে নেপালে। গত সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরকার পতনের দিকে গড়ায়। অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন, রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবন আগুনে পুড়ে যায় এবং প্রধানমন্ত্রীকে সরে দাঁড়াতে হয়।
এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তরুণরা জেগে উঠছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক বার্ট কামার্টস বলেন, এই প্রজন্ম মনে করছে তাদের স্বার্থ কেউ প্রতিনিধিত্ব করছে না। তারা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রাখে, কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থা তাদের আশা পূরণ করছে না।
এসওএএস সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবির সিনহা জানান, রুলিং বা ক্ষমতাসীন এলিটদের অগ্রাধিকার তরুণদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ধ্বংসাবশেষের অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ যেন বাতিল হয়ে গেছে- এমন এক বাস্তবতায় তরুণরা এখন একে অপরের হাত ধরে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে রাস্তায়
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই এই প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মরক্কোতে ‘জেন-জি-২১২’ নামের একটি ডিসকর্ড সার্ভার কয়েক দিনের মধ্যেই ৩ হাজার সদস্য থেকে বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছে যায়।
একইভাবে মাদাগাস্কারে ‘জেন-জি মাদা’ ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে শ্রমিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডিজিটাল সংগঠনগুলো বিকেন্দ্রীকৃত, নেতা ছাড়া পরিচালিত হওয়ায় সরকারগুলোর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
জেন-জি প্রজন্ম এখন শুধু অনলাইন নয়, বরং বাস্তবেই পরিবর্তনের হাল ধরেছে। এবং সেই পরিবর্তনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক পর্দা থেকে সরাসরি রাস্তায়।
ভারতের কমপক্ষে তিনটি রাজ্য একটি কাশির সিরাপকে নিষিদ্ধ করেছে। সিরাপটিতে একটি বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন অনুসারে, সিরাপটি খেয়ে বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
আগস্টের শেষের দিক থেকে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান রাজ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী কমপক্ষে নয় শিশুর মৃত্যুর কারণ তাদের নির্ধারিত কাশির ওষুধের সাথে সম্পর্কিত বলে জানা গেছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, শিশুদের খাওয়া সিরাপের নমুনা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এটি ডাইথিলিন গ্লাইথিলিন (ডিইজি) দ্বারা দূষিত ছিল, যা শিল্পে ব্যবহৃত একটি বিষাক্ত পদার্থ। এটি অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘পরীক্ষার পর নমুনাগুলোতে অনুমোদিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি ডিইজি পাওয়া গেছে।’
স্রেসান ফার্মা দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর একটি ইউনিটে (কারখানায়) কোল্ড্রিফ কাফ সিরাপ ব্র্যান্ড নামে এই সিরাপটি তৈরি করে।
কেন্দ্রীয় রাজ্য মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব বলেন, ‘এই সিরাপের বিক্রি সমগ্র মধ্যপ্রদেশ জুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
এই অঞ্চলেই বেশিরভাগ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সিরাপটি প্রস্তুতকারক কোম্পানির অন্যান্য পণ্য বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।’
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যের কর্তৃপক্ষও পণ্যটি নিষিদ্ধ করেছে।
ভারতে উৎপাদিত কাশির সিরাপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী তদন্তের আওতায় এসেছে এবং বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২০২২ সালে গাম্বিয়ায় ৭০ জনেরও বেশি শিশুর মৃত্যুও অন্তর্ভুক্ত। সূত্র : বাসস
ইতিহাস গড়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে জাপান। কেননা, গতকাল শনিবার রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদী সানা তাকাইচিকে দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছে জাপানের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। দলের এমন সিদ্ধান্ত তাকে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষুব্ধ জনসাধারণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে ৬৪ বছর বয়সি তাকাইচিকে নির্বাচিত করেছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। সম্প্রতি বিদেশিদের ওপর বড় ধরনের প্রণোদনা এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিরোধী দলগুলো জনসাধারণকে আকৃষ্ট করছে।
আগামী ১৫ অক্টোবর সংসদে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই ভোটে শিগেরু ইশিবার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন সানা তাকাইচি।
নতুন এলডিপি সভাপতি সম্ভবত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির নেতা হিসেবে শিগেরু ইশিবার স্থলাভিষিক্ত হবেন। তবে এটা এখনো নিশ্চিত নয় কারণ গত বছর ইশিবার অধীনে উভয় কক্ষে দল এবং তাদের জোটের অংশীদাররা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ফর দ্য পিপল এবং অভিবাসনবিরোধী সানসেইতোসহ অন্যান্য বিভিন্ন দল ক্রমাগত ভোটারদের, বিশেষ করে তরুণদের এলডিপি থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।
দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের আগে তাকাইচি তার বক্তৃতায় বলেন, সম্প্রতি আমি দেশজুড়ে কঠোর কণ্ঠস্বর শুনেছি যে, আমরা জানি না এলডিপি আমাদের জন্য কী করছে।
এই জরুরি অবস্থার অনুভূতি আমাকে তাড়িত করেছে। আমি তাদের দৈনন্দিন জীবন এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মানুষের উদ্বেগকে আশায় পরিণত করতে চেয়েছি। তাকাইচি ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে নিজের আদর্শ বলে মনে করেন।
তাকাইচি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বিনিয়োগ চুক্তি পুনর্বীকরণের সম্ভাবনাও বাড়িয়েছেন, যা জাপানি করদাতা-সমর্থিত বিনিয়োগের বিনিময়ে শাস্তিমূলক শুল্ক কমিয়েছে।
ইয়েমেন থেকে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। যার ফলে তেলআবিবে ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
আরব ও ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা মেহের রোববার সকালে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, তারা ইয়েমেন থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করেছে।
একই সময়ে জায়নিস্ট সরকারের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বিভিন্ন এলাকায় সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে।
ইসরাইলি চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে এবং বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা সফলভাবে ভূপাতিত করেছে।
সংবাদ মাধ্যমটি আরও জানায়, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ইসরাইলের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে। সতর্কতামূলক সাইরেন বাজলেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি, হতাহতের ঘটনা বা আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
আইডিএফ জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ থেকে, যখন গাজায় হামাসবিরোধী অভিযান আবার শুরু হয়, তখন থেকে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি বাহিনী ইসরাইলের দিকে মোট ৯১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। একই সময়ে অন্তত ৪১টি ড্রোন ইসরাইলের দিকে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস-ইসরাইলের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতির আগে ইয়েমেনিরা ইসরাইলের দিকে ৪০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল।
উল্লেখ্য, ইসরাইল গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু করার পর থেকেই ইয়েমেন ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি তাদের প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়ে আসছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইয়েমেন বারবার ইসরাইলবিরোধী অভিযানে অংশ নিচ্ছে।