অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া রাজ্যের একটি সৈকতে প্রায় দুই শ পাইলট তিমির মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা গত বৃহস্পতিবার জানান, আটকে পড়া ২৩০টি তিমির মধ্যে কেবল ৩০টি জীবিত ছিল।
এতগুলো তিমি কী কারণে সেখানে আটকা পড়েছিল, আর তাদের সুরক্ষার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেত, সেসব নিয়ে প্রাণী গবেষকরা অনুসন্ধানে নেমেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি নিউজিল্যান্ডের মাসেই ইউনিভার্সিটির তিমি বিশেষজ্ঞ ক্যারেন স্টকিনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন কারণে তিমি সৈকতে আটকা পড়তে পারে। প্রাকৃতিক কারণেও এটা হয়ে থাকে। যেমন: মহাসাগরের তলদেশের আকৃতি। পাইলট তিমি ও বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ডলফিনগুলো প্রায়ই গণহারে আটকা পড়ে, বিশেষত দক্ষিণ গোলার্ধে। তাসমানিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের গোল্ডেন বে অঞ্চলে আগেও এমন দেখা গেছে। আর উত্তর গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কেপ কড উপসাগর এবং ম্যাসাচুসেটসে এমন ঘটতে দেখা যায়।
সাগরের যেসব অংশে মানুষের চলাচল বেশি, সেসব স্থানে জাহাজের যাতায়াত এবং রাসায়নিক দূষণও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। এমন এলাকায় তিমিসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর একযোগে সৈকতে আটকা পড়ার ঝুঁকিও বেশি। পাশাপাশি প্রাণীগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া অসুখ-বিসুখের কারণেও গণহারে আটকা পড়ে মৃত্যু হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমন ঘটেছে কি না সে বিষয়ে মন্তব্য করার মতো পর্যাপ্ত গবেষণা এখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন স্টকিন। একসঙ্গে এত তিমির মৃত্যুর এমন ঘটনা আটকানোর উপায় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে নেই। বহুবিধ কারণে এমন ঘটে থাকে। তাই একক পন্থায় সমাধানের উপায় নেই। তবে আবহাওয়া সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে পারলে হয়তো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শনিবার মার্কিন বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের ধারাবাহিক পদক্ষেপ, বিচার বিভাগের চিরাচরিত স্বাধীনতাকে ভেঙে দিচ্ছে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘পাম’-কে (সম্ভবত অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি) উদ্দেশ্য করে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর অ্যাডাম শিফ ও নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস, দু’জনই ডেমোক্র্যাট, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
শিফ ও জেমসের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, তারা বন্ধকি আবেদনপত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
অভিযোগ করেছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র, ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সির পরিচালক বিল পুল্ট।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমারা আর দেরী করতে পারি না, এটা আমাদের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে।’
এদিকে শুক্রবার ট্রাম্প জেমসের বিরুদ্ধে তদন্ত তদারকি করা সেই ফেডারেল প্রসিকিউটরকে বরখাস্ত করেছেন।
জানা গেছে, ওই প্রসিকিউটর বারবার বলছিলেন যে জেমসকে বন্ধকি জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানায়, ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি এরিক সিবার্ট শুক্রবার কর্মীদের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে তার পদত্যাগের কথা জানান।
শনিবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাকে (এরিক সিবার্ট) বরখাস্ত করেছি। জেমসের বিরুদ্ধে একটি শক্ত মামলা আছে এবং অনেক আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞও তাই বলছেন।’
শিফ ও জেমস দুজনেই ট্রাম্পের সঙ্গে অতীতে বিভিন্ন সময় সংঘাতে জড়িয়েছেন।
তারা এমন কিছু তদন্তের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শিফ তখন ইউএস হাউসের সদস্য ছিলেন এবং প্রেসিডেন্টের প্রথম অভিশংসন মামলার প্রধান প্রসিকিউটর ছিলেন।
সেই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইউক্রেনকে ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য চাপ দিয়েছেন।
পরে সিনেট ট্রাম্পকে অভিশংসন থেকে মুক্তি দেয়।
২০২১ সালে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার অভিশংসিত হন।
সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ৬ জানুয়ারি ২০২১ কংগ্রেস ভবন আক্রমণে তার সমর্থকদের উসকানি দিয়েছেন।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর জেমস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বড় একটি সিভিল (দেওয়ানি) জালিয়াতির মামলা করেন।
অভিযোগ, ট্রাম্প ও তার কোম্পানি বেআইনিভাবে সম্পদের মূল্য বাড়িয়ে ব্যাংক ঋণ বা সুবিধাজনক বীমার শর্ত পেয়েছেন।
একটি রাজ্য আদালত ওই মামলায় ট্রাম্পকে ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু উচ্চ আদালত পরে সেই আর্থিক দণ্ড বাতিল করে দেয়, যদিও মূল রায় বহাল থাকে।
শনিবার ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওই পোস্টে লিখেন, ‘তারা আমাকে দু’বার অভিশংসিত করেছে এবং ৫ বার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। এখন ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে!!!’
চলতি মাসের শুরুতে একটি মার্কিন আপিল আদালত লেখিকা ই. জিন ক্যারলের মানহানির মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৮৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা বহাল রেখেছে। আদালত রায় দেয় যে ট্রাম্প তাকে যৌন নিপীড়ন করেছেন।
গত বছর ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর, তার বিরুদ্ধে গোপনীয় নথির অবৈধ ব্যবহার এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগের তদন্ত স্থগিত করা হয়।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের হামলায় একজন নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহর একজন কর্মীকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে শনিবার ইসরাইল জানিয়েছে।
বৈরুত থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এটি ছিল সর্বশেষ মারাত্মক হামলা।
এএফপি’র সংবাদদাতা মারজায়ুন জেলায় ঘটনাস্থলে জরুরি সেবা কর্মীদের পরিদর্শন করতে দেখেছে। সেখানে রাস্তার পাশে একটি সাদা গাড়ির আংশিকভাবে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ পড়ে ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আল-খারদালি সড়কে একটি গাড়িতে ইসরাইলি শত্রুদের হামলায় একজন নিহত হয়েছে।’
ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের ওপর ‘গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টায় অংশ নেওয়া একজন হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে।’
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছের প্রথম চালান ভারতের বাজারে উঠেছে গত বৃহস্পতিবার। কলকাতা শহরের বাজারে সেসব মাছ এসে পৌঁছালে দুপুরের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যায়। প্রথম দিন কলকাতাবাসীর প্রত্যাশার তুলনায় উচ্চমূল্যের কারণে অনেক ক্রেতাই খালি হাতে ফিরেন। কিন্তু আরও চালান পৌঁছালে দাম বাংলাদেশের চেয়েও কমে যাওয়ার সম্ভাবনায় খুশি তারা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, মানিকতলা ও লেক মার্কেটের মতো জনপ্রিয় বাজারে প্রায় এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২০০০ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। ১.৫ কেজির বেশি ওজনের বড় মাছ প্রতি কেজি ২,৫০০ রুপিতে বিক্রি হয়। দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য মৌসুমি সুস্বাদু এই ইলিশের অপেক্ষায় থাকা ক্রেতারা এই দামেই হুড়মুড় করে সব লুফে নেন।
কসবার একজন মাছ বিক্রেতা অতুল দাস বলেন, কিছু ক্রেতা যে কোনো মূল্যে ইলিশ কিনতে চেয়েছিলেন। অনেকের কাছে এক কেজি আকারের মাছের দাম একটু বেশি মনে হয়েছে। আমরা আশা করছি শুক্রবার থেকে সরবরাহ বাড়লে পরিস্থিতি বদলে যাবে।
পাইকারি পর্যায়ে সীমিত সরবরাহের কারণে প্রাথমিকভাবে ঘাটতি দেখা দেয়। হাওড়ার পাইকারি ডিপো সাধারণত বাংলাদেশের মাছ আমদানির প্রবেশপথ বলে বিবেচিত। এখানে এক কেজিরও বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ১,৫০০-১,৮০০ রুপিতে। বৃহস্পতিবারের নিলামে বড় জাতের ইলিশ বিক্রি হয়েছিল ২,০০০ রুপিতে।
বুধবার বিশ্বকর্মা পূজার কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। বৃহস্পতিবার অনেক বাজার বন্ধ থাকে, পরিবহন ও শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। গড়িয়াহাটের মতো এলাকার মাছের দোকানগুলোও গত বৃহস্পতিবার বন্ধ ছিল। তবুও বাংলাদেশের ইলিশের খোঁজে ক্রেতাদের বিভিন্ন বাজারে ঢুঁ মারতে দেখা গেছে। বাজারের একজন ক্রেতা সন্দীপ আইচ বলেন, লেক মার্কেটে সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল না। দাম আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল। পদ্মার ইলিশ যত বড় হবে, এর স্বাদ তত ভালো হবে।
প্রসঙ্গত, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ১ হাজার ১৯২ কেজি ইলিশ মাছ ভারতের ত্রিপুরায় রপ্তানি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে দুটি পিকআপে করে মাছগুলো ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা স্থলবন্দরে প্রবেশ করে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে প্রথম চালানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৬টি প্রতিষ্ঠান ৩৭ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি করে।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকার ৩৭ জন রপ্তানিকারককে ১২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১২ ডলার ৫০ সেন্ট, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৫২৫ টাকা। ইলিশ রপ্তানি ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্য বাড়াবে বলছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ইলিশ রপ্তানিতে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়বে বলছেন সাধারণ ক্রেতারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন নির্বাহী আদেশে একটি নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রাম চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এই কর্মসূচির অধীনে উচ্চ আর্থিক সক্ষমতাসম্পন্ন বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবেন।
‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা
নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রামটির মূল লক্ষ্য হলো এমন ‘অসাধারণ’ এবং ‘শীর্ষ স্তরের’ মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা, যারা আমেরিকানদের জন্য ব্যবসা ও কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবেন।
এই ভিসার জন্য আবেদন করতে ব্যক্তিগতভাবে একজন বিদেশিকে মার্কিন ট্রেজারিতে ১০ লাখ ডলার দিতে হবে। যদি কোনো আমেরিকান করপোরেশন কোনো কর্মীকে স্পনসর করতে চায়, তবে তাকে দিতে হবে ১০ লাখ ডলার। ধনীদের জন্য এই ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা মার্কিন নাগরিকত্বের পথ সুগম করবে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এই নীতি সম্পর্কে বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে কর্মসংস্থান-ভিত্তিক গ্রিন কার্ড কর্মসূচির মাধ্যমে বছরে ২ লাখ ৮১ হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আসতেন। তারা গড়ে ৬৬ হাজার ডলার উপার্জন করতেন এবং তাদের সরকারি সহায়তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা পাঁচ গুণ বেশি ছিল। আমরা সবচেয়ে নিম্ন স্তরের লোকদের (আয়ের দিক থেকে) নিচ্ছিলাম, যা একজন গড় আমেরিকান থেকে কম। এটি অযৌক্তিক ছিল।’
লুটনিক আরও বলেন, ‘আমরা এটা করা বন্ধ করে দেব। আমরা কেবল অসাধারণ এবং সর্বোচ্চ স্তরের ব্যক্তিদের নেব, যারা আমেরিকায় চাকরি নেওয়ার চেষ্টা করার পরিবর্তে ব্যবসা এবং কর্মসংস্থান তৈরি করবে।’ তিনি দাবি করেন, এই প্রোগ্রাম মার্কিন ট্রেজারির জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রাজস্ব আনবে।
‘গোল্ড কার্ড’ ভিসার আবেদনকারীদের জন্য একটি কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া থাকবে, যার খরচ বাবদ অতিরিক্ত ১৫ হাজার ডলার ফি দিতে হবে। এই ভিসার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, আবেদনকারী যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন, তবে তাকে বিশ্বব্যাপী তার উপার্জনের ওপর মার্কিন কর দিতে হবে। এই শর্তের কারণে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত অনেক আবেদনকারী আগ্রহ হারাতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘প্ল্যাটিনাম কার্ড’ ভিসা
‘গোল্ড কার্ড’ ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসন ‘ট্রাম্প প্ল্যাটিনাম কার্ড’ নামে একটি নতুন ভিসার প্রস্তাব দিয়েছে। এর জন্য খরচ হবে ৫০ লাখ ডলার। এই ভিসা বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে ২৭০ দিন পর্যন্ত বসবাসের সুযোগ দেবে এবং এই সময়ে তাদের বিদেশি আয়ের ওপর কোনো মার্কিন কর দিতে হবে না। তবে এই প্রোগ্রাম চালু করার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এইচ-১বি ভিসার পরিবর্তন
ট্রাম্প একই সঙ্গে আরেকটি ঘোষণা দিয়েছেন—এইচ-১বি ভিসার আবেদনের জন্য এখন ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং মার্কিন কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে বলে দাবি ট্রাম্প প্রশাসনের। বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের মতে, এই নতুন ফির কারণে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো আর বিদেশি কর্মীদের নিয়ে আসতে উৎসাহিত হবে না। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বিদেশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিবর্তে আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
ট্রাম্পের এই নতুন নীতির ফলে মার্কিন অভিবাসনব্যবস্থা মূলত ‘যোগ্যতাভিত্তিক’ থেকে ‘সম্পদভিত্তিক’-এ রূপান্তরিত হচ্ছে। সমালোচকেরা বলছেন, এটি ধনী অভিবাসীদের কাছে আমেরিকার দরজা খুলে দেবে এবং শ্রমজীবী মানুষকে দূরে ঠেলে দেবে। ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ডগ র্যান্ড এই নীতিকে ‘হাস্যকরভাবে বেআইনি’ বলেছেন।
তবে, হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি উইল স্কার্ফ এই পদক্ষেপকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের পাশাপাশি এমন ব্যক্তিদের জন্য নতুন পথ খুলে দেওয়ার একটি উপায় বলে অভিহিত করেছেন, যারা আমেরিকায় অবদান রাখতে পারেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিশ্বকে ইসরাইলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় ইসরাইল যখন বিধ্বংসী যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে ‘ক্রমাগত দখল’ চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি এ আহ্বান জানালেন।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে, ইসরাইল পশ্চিম তীর দখল ঘোষণার হুমকি দিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, আমাদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় ভীত হওয়া উচিত নয়। কারণ আমরা কাজ করি বা না করি, ইসরাইল এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। অন্ততপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করা যায়, যাতে এসব না ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ধীরে ধীরে পশ্চিম তীরে দখল বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে তারা গাজায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস বলেন, আমি মহাসচিব হিসেবে কিংবা জীবনেও কখনো এ রকম মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।
তিনি জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত দুর্ভিক্ষ, স্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ অভাব ও পর্যাপ্ত আশ্রয় ছাড়া সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো বেঁচে আছে।
তবে তিনি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা থেকে বিরত থাকেন।
গুতেরেস বলেন, গণহত্যার আইনগত সংজ্ঞা দেওয়া আমার এখতিয়ার নয়। আসল বিষয় শব্দ নয়, আসল বিষয় হচ্ছে সেখানে যা ঘটছে।
এদিকে, চলতিসপ্তাহে ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং কয়েক দিন ধরে স্থানীয়দের দক্ষিণে চলে যেতে বলছে।
কিন্তু অনেক ফিলিস্তিনি জানাচ্ছেন যে এ যাত্রা ব্যয়বহুল এবং তারা কোথায় যাবেন, তা তারা জানেন না।
পরমাণু কর্মসূচির জেরে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোট গ্রহণের ঘটনায় আজ নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। এতে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্কও করেছে মস্কো।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেন, রাশিয়া বরাবরই ইরান পারমাণবিক চুক্তিতে (জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন) অংশগ্রহণকারী ইউরোপীয় দেশগুলোর উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ও অবৈধ আচরণের ব্যাপারে কথা বলেছে।
২০১৫ সালে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন নামে ইরান পরমাণু চুক্তিতে তেহরান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পাঁচটি দেশ ছিল। তারা এই চুক্তির ফলে ইরানকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেয় এবং এর বিনিময়ে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে থাকা পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
চুক্তিবদ্ধ তিন দেশের অভিযোগ, চুক্তিতে থাকা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ইরান। যদিও ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তা কার্যত মৃতপ্রায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এটি ঘটেছিল।
ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর চাপে জাতিসংঘে গতকাল শুক্রবার ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই পদক্ষেপগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই এবং এর ফলে কেবল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনা বাড়বে।
আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটির ইতিহাস যুদ্ধ, কূটনীতি ও বৈশ্বিক শক্তির নাট্য মঞ্চ। এটি ১৯৫০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত বাহিনীর আফগানিস্তান দখলকালে এই ঘাঁটিই ছিল তাদের প্রধান বিমান ঘাঁটি। মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার সামরিক অভিযান এখান থেকেই পরিচালিত হয়।
ড. নজিবুল্লাহ সরকারের পতনের পর এবং গৃহযুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটে বাগরাম একাধিকবার বিভিন্ন যুদ্ধরত গোষ্ঠীর হাতে হাত বদল হয়।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশ করার পর ঘাঁটিটি পুনরায় সক্রিয় করা হয়। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বে অন্যতম কৌশলগত ও শক্তিশালী সামরিক স্থাপনায় রূপ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে বাগরাম পরিণত হয় একপ্রকার সামরিক শহরে। যেখানে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি রানওয়ে ছিল—যেগুলো থেকে যুদ্ধবিমান, বোমারু ও বিশাল পরিবহন বিমানের চলাচল হতো। ঘাঁটির ভেতরে তৈরি হয় ব্যারাক, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, দোকান ও এমনকি জিম পর্যন্ত।
অনেক মার্কিন সেনার জন্য বাগরাম ছিল একটি দ্বিতীয় বাড়ি। যদিও কংক্রিট প্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া সব সময় যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিতো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফজল মনাল্লাহ মমতাজ বলেন, বাগরাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটি ছিল। সোভিয়েতদের সময়েও এটি কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং আমেরিকার জন্যও তাই।
গত দুই দশকে তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট—জর্জ ডব্লিউ. বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগরাম সফর করেন। জো বাইডেনও ২০১১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ঘাঁটিটি পরিদর্শন করেন।
২০২১ সালের গ্রীষ্মে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার ঠিক আগ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করেই রাতের আঁধারে বাগরাম ত্যাগ করে। পরদিন সকালে হতবাক আফগান সেনা ও স্থানীয়রা একটি ফাঁকা ঘাঁটি দেখতে পান—যেটি দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক উপস্থিতির প্রতীক ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সায়েদ আবদুল্লাহ সাদেক বলেন, আফগানিস্তান নিজেই একটি কৌশলগত স্থান, আর বাগরাম ছিল সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটিগুলোর একটি।
তবে বাগরাম কেবল সামরিক ঘাঁটি ছিল না। এর ভেতরে থাকা একটি কারাগার আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়।
সেখানে শত শত আফগান, যাদের আল-কায়েদা বা তালেবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করা হতো, বন্দি রাখা হতো এবং কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হতো।
সামরিক বিশ্লেষক আহমদ খান আনদার বলেন, এই ঘাঁটির ভেতরেই তারা একটি কারাগার নির্মাণ করে, যেখানে আল-কায়েদা ও তালেবান সংশ্লিষ্টদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা এটিকে আফগানিস্তানের গুয়ানতানামো নামে আখ্যায়িত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার (২০ বারেরও বেশি) দাবি করেছেন যে, বাগরাম কখনোই ত্যাগ করা উচিত ছিল না।
প্রায় প্রতিবারই বাগরামের প্রসঙ্গে তিনি চীনের নাম উল্লেখ করেন এবং বলেন, ঘাঁটিটি এখন চীনের হাতে চলে গেছে। যদিও তালেবান এই দাবি অস্বীকার করেছে এবং এখন পর্যন্ত এর কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরে পাওয়ার আশা নাকচ করল আফগানিস্তান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন।
কিন্তু তালেবান এক শীর্ষ কর্মকর্তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত জাকির জালাল বলেন, তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় দেশটিতে কোনো সামরিক উপস্থিতির সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে নাকচ করা হয়েছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, আফগানিস্তানে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনরায় নেওয়া সম্ভব হতে পারে, কারণ তারা আমাদের কাছ থেকে কিছু চায়।
আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে ন্যাটো বাহিনীর কেন্দ্র ছিল এই বাগরাম ঘাঁটি। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে এটি আফগান সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ২০২১ সালে জো বাইডেনের প্রশাসনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
তবে ট্রাম্প এর আগেও বলেন, তিনি বাগরাম বিমানঘাঁটি রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন আফগানিস্তানের কারণে নয়, বরং চীনের কারণে।
গত বৃহস্পতিবার তিনি আবারও এর ভৌগলিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বাগরাম ঘাঁটি পুনরুদ্ধারের কারণগুলোর একটি হলো, এটি চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জায়গা থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে।
তবে ট্রাম্প ঠিক কোন এলাকার কথা বলছেন তা স্পষ্ট নয়। বিবিসির ‘ভেরিফাই’ বিভাগ জুলাই মাসে একটি অনুসন্ধানে জানায়, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে যা বাগরাম থেকে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দূরে।
গত শুক্রবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, চীন আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। তাছাড়া আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ শুধুই আফগান জনগণের হাতে থাকা উচিত।
জাকির জালাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেন, ইতিহাসজুড়ে আফগানরা কখনো কোনো সামরিক উপস্থিতি মেনে নেয়নি। দোহা চুক্তি ও আলোচনায় এই সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করা হয়েছিল। তবে অন্যান্য সম্পর্কের দরজা এখনো খোলা রয়েছে।
গাজা ও অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষার অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান লঙ্ঘনের মুখে বিশ্ব নীরব থাকতে পারে না।
কাতারের দোহায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লীগের যৌথ বিশেষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পর স্ত্রীর এ উদ্যোগে যোগ দেন এরদোয়ানও।
সম্মেলনের সাইডলাইনে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির মা এবং ‘এডুকেশন অ্যাবোভ অল ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরবর্তীতে ফাউন্ডেশনটি ‘সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসরত শিশুদের শিক্ষার এক ভয়াবহ বছর’ শিরোনামে একটি ঘোষণা প্রকাশ করে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষা সুরক্ষা দিবসে প্রকাশিত হয়। এতে এরদোয়ান, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এবং শীর্ষ আন্তর্জাতিক কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেন।
এ ঘোষণায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় এবং চলমান লঙ্ঘন বন্ধে জরুরি বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, ২০২৪ সাল সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শিশুদের শিক্ষার অধিকারের জন্য ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গাজা, সুদান, ইউক্রেন, মিয়ানমার, কলম্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শিশু হত্যা, অনাহার, আঘাত ও মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে—বিশেষত শিক্ষার অধিকার থেকে। এতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘এডুকেশনসাইড’ বা পরিকল্পিতভাবে স্কুল, গ্রন্থাগার ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, ‘আজ আমরাও এই গণহত্যা বন্ধের আন্দোলনে শরিক হচ্ছি এবং শিক্ষা সুযোগ প্রদান ও শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের সুস্থ হয়ে ওঠায় আমাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।’
এতে এমিন এরদোয়ান, শেখ মোজা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার মিরেলা বেচিরোভিচ, কলম্বিয়ার ভেরোনিকা আলকোসের গার্সিয়া, গাম্বিয়ার ফাতুমাতা বাহ-ব্যারো, সিয়েরা লিওনের ফাতিমা মাদা বায়ো, জর্ডানের প্রিন্সেস দানা ফিরাস, মালয়েশিয়ার ওয়ান আজিজাহ ইসমাইল এবং স্কটল্যান্ডের সাবেক ফার্স্ট মিনিস্টার হুমজা ইউসুফ স্বাক্ষর করেছেন। ঘোষণাটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিক্ষা ও মর্যাদা রক্ষার পক্ষে একতাবদ্ধ অবস্থানকে প্রতিফলিত করেছে।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এরদোগান ধারাবাহিকভাবে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের কষ্ট লাঘব ও তাদের জীবন ও শিক্ষার অধিকার প্রতিটি প্রচেষ্টাকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন।
ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে সৌদি আরবকে পাশে পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। এ সময় তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ‘কৌশলগত পারস্পরিক সহায়তা’ চুক্তির ওপর জোর দেন।
ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে সৌদি আরব পাকিস্তানের পাশে থাকবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের জিও টিভিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
ন্যাটো চুক্তির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে এর তুলনা টেনে খাজা আসিফ বলেন, ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা’র কথা। অর্থাৎ এক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণকে জোটের সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে।
তবে পাকিস্তানের মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে এই চুক্তি আক্রমণাত্মক নয় বরং প্রতিরক্ষামূলক। আবারও ন্যাটোর সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘যদি সৌদি আরব বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হয়, আমরা যৌথভাবে প্রতিরক্ষা করব।’
এই চুক্তি কোনো আগ্রাসনে ব্যবহারের ইচ্ছে নেই বলে রয়টার্সকে জানান খাজা আসিফ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি কোনো পক্ষ হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে স্পষ্টতই এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে উঠবে।’
তিনি আরও নিশ্চিত করেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র সৌদি আরবের ব্যবহারের জন্য থাকবে, যদিও পাকিস্তানের ঘোষিত নীতি অনুসারে এই পারমাণবিক অস্ত্রগুলো কেবল ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য।
খাজা আসিফ বলেন, ‘এই চুক্তির অধীনে আমাদের সরঞ্জাম অবশ্যই তাদের জন্য থাকবে।’ তিনি আরও জানান, পাকিস্তান সব সময় তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে এবং কখনো কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেনি।
এই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান এখন পারমাণবিক সুরক্ষা দিতে বাধ্য কি না জানতে চাইলে এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি একটি সর্বাত্মক প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি, যা সব ধরনের সামরিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে।’
এ সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময় এই ‘পারস্পরিক প্রতিরক্ষা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো, ‘যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে।’
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তান-সৌদির এই চুক্তি আসলে দুই দেশের দীর্ঘদিনের ব্যবস্থাকেই আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে এবং এর প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি কার্যত রিয়াদের অর্থ আর ইসলামাবাদের পরমাণু শক্তিকে একীভূত করছে, যা উভয় পক্ষের জন্য বড় সাফল্য বলা যায়।
এই চুক্তিতে পাকিস্তানের জন্য ইতিবাচক দিক হলো, শক্তিশালী আর্থিক সমর্থন আর একটি ‘আরব দেশ জোট’ গঠনের সম্ভাবনা। অন্যদিকে সৌদি আরবের জন্য এর অর্থ একটি ‘পারমাণবিক ঢাল’। এই অঞ্চলের এত দিনকার একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রপ্রাপ্ত দেশ ইসরায়েল এই চুক্তির ভবিষ্যতের ওপর নজর রাখবে, ইরানও তাই করবে।
বৃহত্তর ‘আরব জোট’ গঠনের প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শুধু বলেন, ‘দরজা এখনো বন্ধ হয়নি। আমি এখনই এর চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারছি না। তবে আমি মনে করি এখানে দেশগুলো ও জনগণের, বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার আছে তাদের অঞ্চলকে যৌথভাবে রক্ষা করার।’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিশ্বকে ইসরাইলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় ইসরাইল যখন বিধ্বংসী যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে ‘ক্রমাগত দখল’ চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি এ আহ্বান জানালেন।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে, ইসরাইল পশ্চিম তীর দখল ঘোষণার হুমকি দিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, আমাদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় ভীত হওয়া উচিত নয়। কারণ আমরা কাজ করি বা না করি, ইসরাইল এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। অন্ততপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করা যায়, যাতে এসব না ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ধীরে ধীরে পশ্চিম তীরে দখল বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে তারা গাজায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস বলেন, আমি মহাসচিব হিসেবে কিংবা জীবনেও কখনো এ রকম মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।
তিনি জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত দুর্ভিক্ষ, স্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ অভাব ও পর্যাপ্ত আশ্রয় ছাড়া সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো বেঁচে আছে।
তবে তিনি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা থেকে বিরত থাকেন।
গুতেরেস বলেন, গণহত্যার আইনগত সংজ্ঞা দেওয়া আমার এখতিয়ার নয়। আসল বিষয় শব্দ নয়, আসল বিষয় হচ্ছে সেখানে যা ঘটছে।
এদিকে, চলতিসপ্তাহে ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং কয়েক দিন ধরে স্থানীয়দের দক্ষিণে চলে যেতে বলছে।
কিন্তু অনেক ফিলিস্তিনি জানাচ্ছেন যে এ যাত্রা ব্যয়বহুল এবং তারা কোথায় যাবেন, তা তারা জানেন না।
আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। গতকাল শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোভিয়েত আমলে নির্মিত এই ঘাঁটিটি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ঘাঁটি ছিল। তবে ২০২১ সালে মার্কিনসেনাদের প্রত্যাহারের পর তালেবানরা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এটি ফেরত পেতে চাই। আমরা সেই ঘাঁটিটি চাই, কারণ এর অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত- চীনের খুব কাছেই।’
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
২০ বছর পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী দেশটি থেকে সরে দাঁড়ায়। দীর্ঘ এই যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন নিহত হন। সেনা প্রত্যাহারের পরপরই তালেবানরা ফের আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
‘অটুট বন্ধন’
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন সম্পর্ককে ‘অটুট বন্ধন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি ও প্রধানমন্ত্রী স্টারমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও পারমাণবিক জ্বালানি খাতে বৃহৎ প্রযুক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
স্টারমার বলেন, এটি ব্রিটিশ ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্যাকেজ, যার আকার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ড (২০৫ বিলিয়ন ডলার)। বিনিয়োগে যুক্ত রয়েছে মাইক্রোসফট, গুগল ও ব্ল্যাকস্টোনের মতো মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা।
ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘খুব বড়’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ব্রিটেন আমাদের প্রধান ন্যাটো মিত্র। আমাদের সম্পর্ক অটুট, আজ আমরা যাই করি না কেন।’
এর আগে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজকীয় আয়োজন শেষে ট্রাম্প বিদায় নেন এবং রাজা তৃতীয় চার্লসকে ‘মহান ভদ্রলোক ও মহান রাজা’ বলে উল্লেখ করেন।
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিন সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই সংঘাতে ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আদতে ইসরায়েলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সামরিক পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দেশটি সহায়তা দিতে গিয়ে উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র (থাড) হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় ওয়াশিংটন তেল আবিবকে সহায়তা দিতে গিয়ে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র হারিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বলছে, এ নিয়ে সম্প্রতি পেন্টাগনের বাজেট নথি প্রকাশিত হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সদ্য প্রকাশিত পেন্টাগনের বাজেট নথিতে দেখা গেছে, গত জুনে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ১২ দিনে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে মোট প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার জোন’ এবং ‘বিজনেস ইনসাইডার’এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নথিগুলোর একটিতে ৪৯৮ দশমিক ২৬৫ মিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল চাওয়া হয়েছে, যা দিয়ে থাড ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা হবে।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলকে সমর্থন দিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ওই ১২ দিনের আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ‘১০০ থেকে ১৫০টি থাড ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য আরও বাজেট বরাদ্দ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
ইসরায়েলকে কি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কোণঠাসা করা সম্ভব? একসময় যেভাবে রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বয়কটের সম্মিলিত চাপ দক্ষিণ আফ্রিকাকে বর্ণবাদ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, ইসরায়েলেরও কি একই পরিণতি হবে?
নাকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি সরকার সে দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই এই কূটনৈতিক ঝড় সামলাতে পারবে, যাতে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ঘিরে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন?
দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও এহুদ ওলমার্ট কিন্তু এরই মধ্যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক স্তরে অস্পৃশ্য করে তোলার অভিযোগ তুলেছেন।
নেতানিয়াহু গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন এমন দেশের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জারি করা পরোয়ানা।
জাতিসংঘে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডাসহ বেশ কয়েকটা দেশ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো, গত মঙ্গলবার কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই দেশগুলো একত্রিত হয়ে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাতে দোহায় বৈঠকও করছে। যে দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে তাদের আরও একবার ভেবে দেখার জন্য অনুরোধও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গ্রীষ্মে গাজায় অনাহারের চিত্র প্রকাশ্যে আসা, গাজা সিটি আক্রমণ এবং সেখানে সম্ভাব্য ধ্বংসের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির মতো একাধিক কারণে আরও বেশি সংখ্যক ইউরোপীয় সরকার (ইসরায়েলের প্রতি) অসন্তোষ প্রকাশ করছে। নিছক বিবৃতি দিয়েই থেমে থাকেনি তারা।
শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহু নিজেই গত সোমবার স্বীকার করেছেন, ইসরায়েল বিশ্ব মঞ্চে এক ধরনের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হচ্ছে। জেরুজালেমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিচ্ছিন্নতার জন্য তিনি বিদেশে ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারকে দায়ী করেন।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইসরায়েলের প্রথাগত মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইনফ্লুয়েন্স অপারেশন’ অর্থাৎ ইতিবাচক মনোভাব তৈরির অভিযানে বিনিয়োগ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুতে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি থেকে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কেনাকাটা সংক্রান্ত নীতির পর্যালোচনার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বসবাসরত বেলজিয়ানদের কনস্যুলার সহায়তার ওপরও বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ তুলেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলের দুই কট্টরপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত বা অগ্রহণযোগ্য) ঘোষণা করেছিল।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশকেই এরই মধ্যে এই জাতীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম দিনই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বেলজিয়ামের ঘোষণার এক সপ্তাহ পর, স্পেনও নিজেদের পদক্ষেপ ঘোষণা করে। বিদ্যমান ডি ফ্যাক্টো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে আইনে পরিণত করার পাশাপাশি আমদানির ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে তারা।
শুধু তাই নয়, গাজায় গণহত্যা বা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত যে কারও জন্য স্প্যানিশ ভূখণ্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। অস্ত্র বহনকারী ইসরায়েলগামী জাহাজ ও বিমানকে স্প্যানিশ বন্দরে নোঙর করা বা সে দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ
ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ এখানেই থেমে নেই। গত আগস্টে দুই ট্রিলিয়ন ডলার সার্বভৌম সম্পদের নরওয়েজিয়ান তহবিল ঘোষণা করে, তাদের তালিকায় থাকা ইসরায়েল-ভিত্তিক সংস্থাগুলোকে সরানো হবে।
ওই মাসেরই মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ২৩টি কোম্পানিকে ছাঁটাই করা হয়েছিল এবং অর্থমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন এই তালিকা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের ডানপন্থি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সে দেশের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক চুক্তি আংশিকভাবে স্থগিত করার পরিকল্পনা করছে।
১০ সেপ্টেম্বর স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন-এ দেওয়া ভাষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, গাজার ঘটনাগুলো বিশ্বের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।
পরের দিন, ৩১৪ জন সাবেক ইউরোপীয় কূটনীতিক এবং কর্মকর্তারা উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাযা কালাসকে চিঠি লিখে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করাসহ একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানান।
কেন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তুলনা
এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতায় থাকা শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা সেখানকার সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ করতেন। তারই প্রতিবাদে ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকে বর্ণবাদের শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বয়কটের প্রথা দেখা যেত।ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও এখন একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা এই প্রসঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না হলেও এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে ইসরায়েলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
১৯৭৩ সাল থেকে চারবার এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছে ওই দেশ। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ইহুদি জাতির আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক।
তবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং স্লোভেনিয়ার মতো দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে বা ইঙ্গিত দিয়েছে, যদি ইসরায়েলকে ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তারা প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসবে।