জাপানের হিরোশিমা শহরটির নাম আমরা সবাই জানি। কিন্তু যা জানি না, তা হলো এর ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে ওঠার গল্প। ফিনিক্সপাখির মতো ছাই থেকে নতুন করে বেঁচে ফেরার গান।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট অ্যাটমিক বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শহরটি। শহরের ৪০ শতাংশ মানুষ তাৎক্ষণিক মৃত্যুমুখে পতিত হন। যারা বেঁচে ছিলেন, তারাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লালসার ক্ষত বহন করে দুঃসহ জীবনযাপন করতে থাকেন। কিন্তু এরই মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও অর্জন করেন। তাই তো হিরোশিমা আজ এক সুন্দর, ছিমছাম শহরের নাম। যেখানে বছরে এক মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক ভিড় জমান।
দুর্বিষহ স্মৃতিকে এক পাশে রেখে শহরটি আজকে জাপানের অন্যতম শিল্প এলাকা। অটোমোবাইল কারখানা, পার্ক, দোকানপাটসহ জমজমাট এক বাণিজ্য এলাকা। যেখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আধুনিকতা হাত ধরে চলছে পাশাপাশি। অ্যাটমিক বোমা বিস্ফোরণের পর দিনই চুগোকু ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি কাজ শুরু করে দেয়। বিপুল জনবল হারানো সত্ত্বেও তৃতীয় দিনে হিরোশিমা ইলেকট্রিক রেলওয়ে চালু করা হয়। তবে পুরোদমে শহরের সংস্কারকাজ শুরু হয় ১৯৪৯ সালে। এখন হিরোশিমা এক শান্তির শহর।
২০১৯ সালে এই হিরোশিমায় তাই পর্যটকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১.৮ মিলিয়ন। এরপর করোনার কালো থাবা এসে পড়লে যদিও তা কিছুটা কমে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ওকিহিরো বলছিলেন, ‘এখনো যখন কেউ বলেন যে, পিস মেমোরিয়াল পার্কটা খুব সুন্দর। তখন আমার মনে সেই পুরোনো দুঃখবোধ দোলা দিয়ে যায়। মনে হয় চিৎকার করে বলি যে, অ্যাটমিক বোমা বিস্ফোরণের আগে এই জায়গাটিই ছিল হিরোশিমার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক এলাকা। আজ আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি ঠিকই। কিন্তু মনের মধ্যে পুষে রেখেছি গভীর বেদনা।’
সূত্র: সিএনএন
সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এক নতুন ও মারাত্মক ঢেউ দেশটিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে পুরো দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া সিরিয়ার সরকারের জন্য সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক এই সংঘাত শুরু হয় গত ১৩ জুলাই, যখন দ্রুজ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর একজন ব্যবসায়িকে অপহরণের খবর সামনে আসে।
এই খবর প্রকাশিত হতেই দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইন যোদ্ধারা মুখোমুখি হয়ে পড়ে। দুই দিন পরে, অর্থাৎ ১৫ জুলাই ইসরায়েল এই বিষয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ করে এবং দাবি করে যে তাদের সেনাবাহিনী দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মতে, গত রবিবার (১৩ জুলাই) থেকে সিরিয়ার সুইদা প্রদেশে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, দ্রুজ সংখ্যাগরিষ্ঠ সুইদা প্রদেশে ২০২৫ সালের এপ্রিল ও মে মাসে দ্রুজ যোদ্ধা ও সিরিয়ার নতুন নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বহু মানুষ হতাহত হন।
এর আগে মার্চ মাসের শুরুতে, সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশগুলো থেকে সংঘর্ষের খবর আসে যেখানে সাবেক শাসক বাশার আল-আসাদের সমর্থনকারী আলাউইত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। সিরিয়ার এই প্রাণঘাতী অস্থিরতা ও এর পরবর্তীতে ইসরায়েলের সহিংস হামলা আবার দেশটির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। তাও আবার এমন দেশে, যা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে ছিল এরপর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দামেস্ক ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়।
সিরিয়ার বর্তমান প্রধান আহমদ আল-শারা দেশটির সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দ্রুজ হচ্ছে এক ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যারা সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল এবং দখলকৃত গোলান হাইটসে বসবাস করে এবং আরবি ভাষায় কথা বলে। যদিও অন্যান্য দেশেও তাদের কিছু সংখ্যক মানুষ আছে।
দ্রুজ ধর্ম হলো- শিয়া ইসলামের একটি শাখা যার নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয় এবং বিশ্বাস রয়েছে। দ্রুজ সম্প্রদায় নিজেদের মুয়াহিদুন বলে, যার মানে যারা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে। তারা বানু মারুফ নামেও পরিচিত। দ্রুজ নামটি সম্পর্কে বলা হয় এটি দ্রুজ সন্ন্যাসী মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-দ্রুজি এর নাম থেকে এসেছে, যিনি লেবানন ও সিরিয়ায় তার বিশ্বাস প্রচার করেছিলেন বলে জানা যায়। এই সম্প্রদায়ের প্রায় ১০ লাখ অনুসারীর মধ্যে অর্ধেকই সিরিয়ায় বসবাস করে, যেখানে তারা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ।
ইসরায়েলে দ্রুজ সম্প্রদায়কে সাধারণত রাষ্ট্রের অনুগত হিসেবে দেখা হয়, কারণ এর সদস্যরা সামরিক বাহিনীতে অংশ নেয়। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের মতে, ইসরায়েল ও দখলকৃত গোলান মালভূমিতে প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার দ্রুজ বসবাস করে। সিরিয়ায় দ্রুজদের উপস্থিতি শত শত বছরের পুরোনো এবং তারা ইতিহাসের নানা সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের (বিলাদ-আশ-শাম) রাজনীতি ও যুদ্ধগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারোর বাড়ি ও রাজনৈতিক সদরদপ্তরে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
একইসঙ্গে বোলসোনারোর পায়ে নজরদারি ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তার বিদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) দেশটির সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ব্রাজিলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে বোলসোনারো জড়িত থাকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট এসব সিদ্ধান্ত দেয়।
২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বোলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিপক্ষ লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভার ক্ষমতা গ্রহণ ঠেকাতে তিনি ষড়যন্ত্র করেছিলেন। বর্তমানে তার বিচার চলছে সুপ্রিম কোর্টে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি বোলসোনারোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গত সপ্তাহে তিনি হুমকি দেন, বোলসোনারোকে আইনি ছাড় না দিলে ১ আগস্ট থেকে ব্রাজিলের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
ব্রাজিলের পুলিশের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই শুল্ক চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছেন বোলসোনারো ও তার ছেলে এদুয়ার্দো। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির পরই এই ষড়যন্ত্রের তথ্য সামনে আসে।
এরপরই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে ডি মোরেস বোলসোনারোর ওপর কড়া নজরদারির নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, বোলসোনারো ভিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে ব্রাজিলের বিচারবিভাগে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, বোলসোনারোর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় তার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তার পায়ে ইলেকট্রনিক ব্রেসলেট পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ব্রাজিলে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে প্রবেশ।
এছাড়া, বোলসোনারোর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি তার ছেলে কংগ্রেস সদস্য এদুয়ার্দোর সঙ্গেও নয়।
বোলসোনারো একে রাজনৈতিক নিপীড়ন বলে মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কখনও ব্রাজিল ছাড়ার কথা চিন্তাও করিনি।’ সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ আদেশকে ‘চরম অপমান’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
গাজা উপত্যকার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চ নামের ওই গির্জাটির সঙ্গে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস নিয়মিত যোগাযোগ করতেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গির্জাটিতে হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন গির্জার কর্মকর্তারা।
এদিকে, গির্জায় হামলার ব্যাপারটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে দুঃখ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তারা এ ঘটনার তদন্ত করবে বলেও জানিয়েছে।
এই হামলার পর ফের যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও চতুর্দশ। এক টেলিগ্রাম বার্তায় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
গির্জায় হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দুঃখপ্রকাশ করার জন্য ফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দুঃখপ্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
গত ২১ মাস ধরে চলা অব্যাহত হামলার সময় গাজার হাজারো মানুষ এই গির্জাটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজার আল-আহলি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফাদের নাইম বলেন, এই গির্জাটি খ্রিষ্টান ও মুসলিম উভয় ধর্মের লোকদের একটি আশ্রয়স্থল ছিল। বিশেষত প্রতিবন্ধী শিশুরা এখানে আশ্রয় নিয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করার সময় ভুলবশত একটি শেলের টুকরা গির্জায় আঘাত হেনেছে। এ ঘটনায় আরও তদন্ত চলছে।
যদিও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে হামাসের সদস্য লুকিয়ে আছে—এমন অভিযোগে গাজার স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতালসহ অন্যান্য বেসামরিক স্থাপনায় অব্যাহত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালায়। বেসামরিক ও ধর্মীয় স্থাপনায় ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
এদিকে, গির্জায় হামলার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে মাসের পর মাস ধরে ইসরায়েল যে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অগ্রগতির ইঙ্গিত
চলমান হামলার মধ্যেও চলছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি আলোচনা। এতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মোরাগ করিডরে সেনা উপস্থিতি নিয়ে আলাচনায় যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল, সেদিকে কিছুটা অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে জানান, মোরাগ করিডরে সেনা উপস্থিতির বিষয়ে কিছুটা ‘নমনীয়’ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তবে যেসব ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা হবে তাদের তালিকা কিংবা যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করা হবে কিনা এসব বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, একটি চুক্তি হওয়ার আশা দেখা দিয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মনে করেন না তিনি।
ইরাকের একটি শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৬১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। দুর্ঘটনাকবলিত শপিং মলটি মাত্র এক সপ্তাহ আগে চালু করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ খবর জানিয়েছে। দেশটির ওয়াসিত প্রদেশের কুত শহরে রয়েছে ওই শপিং মলটি। বুধবার (১৬ জুলাই) গভীর রাতে সেখানে আগুন লাগে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, পাঁচ তলাবিশিষ্ট কর্নিশ হাইপারমার্কেটটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, এ অগিকাণ্ডে নারী ও শিশুসহ ৬১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এ ছাড়া, ভবনে আটকে পড়া ৪৫ জনেরও বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার করেছে সিভিল ডিফেন্স টিম। তবে এখনো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল মলের দ্বিতীয় তলায়। সেখানে সুগন্ধী ও প্রসাধনী বিক্রি হতো। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষ দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এ ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী আবদুল রেদা তাহাব।
ওয়াসিত প্রদেশের গভর্নর মোহাম্মদ আল-মিয়াহি এ দুর্ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় ওই ভবনের মালিক ও শপিং মলের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
যথাযথ অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ভবনটিকে একটি শপিং সেন্টার বানানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি এই ঘটনার তদন্ত করতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
ইরাকে আগেও দুর্বল ভবন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে একটি হাসপাতাল এবং ২০২৩ সালে একটি বিয়ের হলের অগ্নিকাণ্ড উল্লেখযোগ্য। দুটি ঘটনাতেই বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বেঁচে ফেরা মানুষ ও নিহতদের স্বজনরা এবারও জবাবদিহির দাবি জানিয়েছেন।
এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা অনিচ্ছাকৃতভাবে আফগান আবেদনকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করার পর গোপন একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে হাজার হাজার আফগান নাগরিককে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছিল। সম্প্রতি সেই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পর যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের জন্য যেসব আফগান নাগরিক আবেদন করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার জনের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের আগস্টে সেই ফাঁস হওয়া কিছু তথ্য ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ্যে চলে আসে। তখন বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের নজরে আসে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই ঘটনার নয় মাস পর ফাঁস হওয়া তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি নতুন পুনর্বাসন প্রকল্প চালু করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার আফগান যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।
তবে তথ্য ফাঁস ও পুনর্বাসনের বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল। কারণ সরকার এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ ঠেকাতে একটি ‘সুপার ইনজাঙ্কশন’ জারি করে বিষয়টির জনসমক্ষে প্রকাশ হওয়া প্রতিহত করেছিল।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) হাইকোর্টের এক বিচারক গোপনীয়তা আদেশ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। এরপরই তথ্য ফাঁস, সরকারের পদক্ষেপ এবং এই প্রকল্পের অধীনে কতজন আফগান যুক্তরাজ্যে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন—এসব নিয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে আসে।
ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে ছিল আবেদনকারীদের নাম, যোগাযোগের তথ্য ও কিছু পারিবারিক তথ্য, যা তালেবানদের কাছ থেকে হুমকির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে তথ্য ফাঁসের জন্য যিনি দায়ী ছিলেন, সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করেনি ডাউনিং স্ট্রিট।
এ বিষয়ে এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, ‘ব্যক্তিগত বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না।’
ব্রিটিশ সরকার আরও জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া তালিকায় থাকা ৬০০ আফগান সেনা এবং তাদের পরিবারের ১ হাজার ৮০০ সদস্য এখনো আফগানিস্তানে রয়েছেন বলে ধারণা করছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, তবে এখনো আফগানিস্তানে অবস্থান করা আবেদনকারীদের দেওয়া পুনর্বাসনের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় রাখা হবে।
সরকারি তথ্যমতে, গোপন এই কর্মসূচির নাম ছিল ‘আফগান রিলোকেশন রুট’। এই কর্মসূচির ব্যয় এখন পর্যন্ত ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড এবং ভবিষ্যতে আরও ৪০০ থেকে ৪৫০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অজ্ঞাত কর্মকর্তার অনিচ্ছাকৃত ভুলে তথ্যগুলো ফাঁস হয়েছিল। যাদের তথ্য ফাঁস হয়েছে, এ বিষয়ে মঙ্গলবারই তাদের জানানো হয়েছে।
হাউস অব কমনসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি ঘটেছিল সরকার অনুমোদিত সিস্টেমের বাইরে একটি স্প্রেডশিট ইমেইল করার কারণে।’
এটিকে তিনি ‘গুরুতর বিভাগীয় ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনকও তার দলের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এ নিয়ে কোনো ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন নেই।
হিলি বলেন, এ ঘটনা ছিল আফগানিস্তান থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়ার সময় ঘটে যাওয়া অনেকগুলো তথ্য ফাঁসের একটি। এতে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও এমপিদের নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের একটি রায় প্রকাশ্যে আসার পর বিচারক চেম্বারলেইন বলেন, এটি পুরোপুরি সম্ভব যে ফেসবুক গ্রুপে ফাঁস হওয়া নথির কিছু অংশ যারা দেখেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তালেবান অনুপ্রবেশকারী ছিলেন বা তালেবান-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তালিকায় যেসব ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে, তারা মৃত্যু বা গুরুতর ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। এমনকি এই সংখ্যা এক লাখ পর্যন্ত হতে পারে।
তবে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত এক পর্যালোচনায় বলা হয়, কেবল ফাঁস হওয়া তথ্যের কারণে কাউকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হতে পারে—এমন সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ প্রাথমিকভাবে যেভাবে ভাবা হয়েছিল, তথ্য তার থেকে কম ছড়িয়েছে। অবশ্য এই কারণে কতজনকে গ্রেপ্তার বা হত্যা করা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করেনি মন্ত্রণালয়।
ওই পর্যালোচনায় এই গোপন প্রকল্পকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি ‘সীমিত’ ছিল বলে মত দেওয়া হয়।
এ ছাড়া, এই তথ্য ফাঁসের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের একটি ইমেইল পাঠিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেমন: নিজের অনলাইন কার্যক্রমে গোপনীয়তা রক্ষা কিংবা অপরিচিত ব্যক্তিদের কোনো বার্তার জবাব না দেওয়া ইত্যাদি।
হিলি জানান, যারা ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছেন, তাদের অভিবাসন পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পুরো ঘটনাপ্রবাহ ছিল ‘অভূতপূর্ব’
বিবিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের আগস্টে যখন মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে আসে এবং তালেবানরা সরকারি ক্ষমতা দখলে নেয়, তখন এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
ফাঁস হওয়া তালিকায় ছিল আফগান রিলোকেশনস অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্স পলিসিতে আবেদনকারীদের নাম। তালেবারনা প্রতিশোধ নিতে পারেন বলে যেসব আফগানরা আশঙ্কায় ছিলেন, তাদের দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আনার জন্য এ নীতি চালু করেছিল ব্রিটিশ সরকার।
এই পুনর্বাসন কার্যক্রমের মাধ্যমে ৩৬ হাজার আফগান যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত হন। ২০২২ সালে ব্রিটিশ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির এক তদন্তে এটিকে ‘ব্যর্থতা’ ও ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
তথ্য ফাঁসের পর যখন সরকার নতুন প্রকল্প চালু করে, তখন সংবাদমাধ্যমগুলো দ্রুত বিষয়টি আঁচ করতে পারে। এরপর সরকার আদালতের কাছে সংবাদমাধ্যমগুলোকে তথ্য ফাঁস সংক্রান্ত কোনো কিছু প্রকাশে বাধা দেওয়ার জন্য আদেশ চেয়ে আবেদন করে।
পরে আদালত এমন একটি আদেশ দেয়, যা শুধু তথ্য ফাঁসের বিবরণ নয়, এই আদেশ জারি হওয়ার তথ্য নিয়েও সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে এতদিন বিষয়টি প্রকাশ্যে আসেনি।
চীনের বিচার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রকাশিত একটি বিতর্কিত অ্যাকাডেমিক জার্নাল প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (ওইউপি)। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশনায় থাকা কিছু প্রবন্ধে ডিএনএ সংগ্রহ সংক্রান্ত নৈতিক মানদণ্ড নিয়ে উদ্বেগ থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরেনসিক সায়েন্স রিসার্চ (এফএসআর)-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ জার্নালটির প্রকাশনা বন্ধ করবে ওইউপি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের পর থেকে এফএসআরের কোনো গবেষণাপত্র প্রকাশ করবে না ওইউপি। প্রকাশিত সর্বশেষ সংখ্যাটি হবে ভলিউম ১০, ইস্যু ৪।
এফএসআর হচ্ছে চীনের অ্যাকাডেমি অব ফরেনসিক সায়েন্সের একটি জার্নাল, যা দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়ে এটি চীনের একমাত্র ইংরেজি ত্রৈমাসিক জার্নাল হিসেবে পরিচিত। ওইউপি ২০২৩ সাল থেকে এটি প্রকাশ করে আসছে।
এফএসআরে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ এরই মধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে। চীনে নজরদারির আওতায় থাকা উইঘুর ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের জেনেটিক তথ্য নিয়ে গবেষণার অভিযোগে এসব প্রবন্ধ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
সমালোচকদের ভাষ্য, এসব গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা হয়তো তাদের ডিএনএ নমুনা গবেষণায় ব্যবহারের জন্য স্বেচ্ছায় সম্মতি দেননি। তাছাড়া, এসব কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর নজরদারি আরও বাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়।
২০২০ সালে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উরুমচিতে বসবাসরত ২৬৪ জন উইঘুরের রক্তের নমুনা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়, সংশ্লিষ্টদের সম্মতিতেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং নমুনাদাতাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছিল।
তবে সেই গবেষণার প্রধান লেখকের সঙ্গে চীনের নিরাপত্তা সংস্থার সম্পৃক্ততা ছিল এবং তিনি জিনজিয়াং পুলিশ কলেজ থেকে গবেষণা অনুদান পেয়েছিলেন।
২০২৪ সালে এক্সপ্রেশন অব কনসার্ন (উদ্বেগ প্রকাশ) শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে ওইউপি, যেখানে প্রশ্ন তোলা হয়— জিনজিয়াংয়ের উইঘুররা আদৌ কোনো গবেষণায় অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোর স্বাধীনতা পান কি না। তবে এখন পর্যন্ত ওই গবেষণাপত্রটি প্রত্যাহার করা হয়নি।
ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ নিয়ে নৈতিক উদ্বেগ থাকায় ওইউপি ২০২৩ সাল থেকে এফএসআরে প্রকাশিত দুটি গবেষণাপত্র প্রত্যাহার করে। এ গবেষণাগুলোর সঙ্গেও চীনা পুলিশ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ফরেনসিক বিজ্ঞান গবেষণা সাধারণত পুলিশ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। তবে চীনে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো কোনো ভারসাম্যমূলক নিয়ন্ত্রণের আওতায় না থাকায়, এসব গবেষণা আন্তর্জাতিক নৈতিক মানদণ্ড পূরণ করে কি না— তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, উইঘুররা দীর্ঘদিন ধরে চীনা কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে তথাকথিত ‘কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে’ আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
জিনজিয়াংয়ে চীন সরকারের এসব পদক্ষেপ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার আড়ালে উইঘুরদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে তাদের ওপর নজরদারি আরও জোরদার করা যায়।
এফএসআর-এর সঙ্গে ওইউপির সংশ্লিষ্টতা ও ডিএনএ সংগ্রহের নৈতিকতা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলেন বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব লুভেনের প্রকৌশল অধ্যাপক ইভ মোরো। তিনি বলেন, ‘ওইউপির পদক্ষেপের জন্য আমি কৃতজ্ঞ, তবে তারা গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় উপেক্ষা করেছে।’
তবে এফএসআর-এর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ওইউপি।
গত কয়েক বছরে চীনের জেনেটিক গবেষণা সংক্রান্ত প্রবন্ধের নৈতিকতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যালোচনা বেড়েছে। মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগের কারণে একটি শীর্ষস্থানীয় বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা সংস্থা গত বছর চীনের ১৮টি গবেষণাপত্র প্রত্যাহার করে নেয়।
মোরো বলেন, ‘ফরেনসিক জেনেটিক্স এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন, কারণ এ গবেষণাই পুলিশি ডিএনএ শনাক্তকরণ ও ডেটাবেইসকে শক্তি জোগায়।’
তাঁর মতে, ডিএনএ শনাক্তকরণ অপরাধ সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হলেও এটি গোপনীয়তা ও নৈতিকতার প্রশ্নও তোলে। মোরো আরও বলেন, ‘জিনজিয়াং ও তিব্বতে সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক নজরদারি থাকার কারণে, চীনে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নৈতিক গবেষণা ও মানবাধিকারের প্রয়োগ নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন।’
আর্থিক নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে বার্সেলোনা, চেলসি, অ্যাস্টন ভিলা, অলিম্পিক লিওঁ ও রোমাকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা। পাশাপাশি এই ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে উয়েফার প্রতিযোগিতায় নতুন খেলোয়াড় নিবন্ধনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
উয়েফার ক্লাব ফিন্যান্সিয়াল কন্ট্রোল বডি (সিএফসিবি) এই জরিমানা করেছে। উয়েফা বলছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্লাব ফুটবলে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি।
উয়েফার আর্থিক নিরীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের উয়েফার নির্ধারিত আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ক্লাবগুলো এই জরিমানার মুখে পড়েছে। পরের মৌসুমে ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি হলে আরও বড় জরিমানা গুনতে হতে পারে ক্লাবগুলোকে।
এক বিবৃতিতে সিএফসিবি জানিয়েছে, ‘সম্পদ বিক্রি, খেলোয়াড় বিনিময় এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে খেলোয়াড় স্থানান্তরের মাধ্যমে যে আয় হয়, তা ক্লাবের হিসাব-নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।’
ক্লাব বিশ্বকাপে আজ ব্রাজিলের ক্লাব পালমেইরাসকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি। এমন খুশির দিনেও ক্লাবটিকে দুঃসংবাদ শুনতে হলো।
এই জরিমানার সবচেয়ে বড় অঙ্ক গুনতে হচ্ছে চেলসিকে। ক্লাবটিকে সর্বোচ্চ ৩১ মিলিয়ন ইউরো (৩৬.৫ মিলিয়ন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে আয়ের বিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০ মিলিয়ন ইউরো এবং স্কোয়াড গড়তে ব্যয়ের নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে আরও ১১ মিলিয়ন জরিমানা করা হয়েছে। এটি এক মৌসুমে কোনো ক্লাবকে উয়েফার করা সর্বোচ্চ জরিমানা।
তবে এই শাস্তি এখানেই শেষ নয়; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাবের আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত না করতে পারলে তাদের আরও ৬০ মিলিয়ন ইউরো (৭১ মিলিয়ন ডলার) অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হতে পারে।
অন্যদিকে, গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা বার্সেলোনার ঘাড়ে চেপেছে ১৫ মিলিয়ন ইউরো (১৭.৭ মিলিয়ন ডলার) জরিমানা খড়্গ।
এর আগেও একবার উয়েফার জরিমানার কবলে পড়েছিল বার্সেলোনা। ২০২৩ সালে আয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগে কাতালান ক্লাবটিকে ৫ লাখ ইউরো জরিমানা করেছিল সংস্থাটি।
এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা ফরাসি ক্লাব লিওঁকে জরিমানা করা হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ ইউরো। নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আরও বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হতে পারে এই ক্লাবটিকেও।
আমেরিকান ব্যবসায়ী জন টেক্সটরের মালিকানাধীন লিওঁ বর্তমানে আর্থিক দুরবস্থার কারণে ফরাসি ঘরোয়া লিগ ‘লিগ আ’ থেকে অবনমনের বিরুদ্ধে লড়ছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে ক্লাবটির করা আপিলের শুনানি হওয়ার কথা। তাছাড়া, উয়েফা-নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে লিওঁ আগামী মৌসুমে ইউরোপা লিগ থেকেও বাদ পড়তে পারে।
এই ক্লাবগুলোর পাশাপাশি আরেক ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলাকে ১১ মিলিয়ন ইউরো এবং ইতালির রোমাকে ৩ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা গুনতে হবে।
উয়েফার শর্ত অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলোকে দুই থেকে চার বছরের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উয়েফার আয়ের নীতিমালার সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য ফেরাতে হবে।
সিরিয়ায় ওপর ইসরাইলের ধারাবাহিক হামলার নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।
তেহরান থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
বুধবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ইসরাইল ‘লাগামহীন আগ্রাসন’ চালাচ্ছে যার কোনো সীমা নেই। বিশ্ববাসীকে, বিশেষ করে এই অঞ্চলকে একত্রিত হয়ে ইসরাইলের এই আগ্রাসন থামাতে হবে।’
আরাগচি আরও বলেন, ‘ইরান সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার পক্ষে রয়েছে এবং সবসময় সিরীয় জনগণের পাশে থাকবে।’
গত মাসেই ইরান ও তাদের চিরশত্রু ইসরাইল এক মাসব্যাপী যুদ্ধে জড়ায়। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
সিরিয়ার দক্ষিণের সুবাইদা প্রদেশে গত সপ্তাহের শেষ দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৫০ জন ছাড়িয়েছে।
দামেস্ক থেকে এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে নিহতের সংখ্যা ৩০০ বলে জানানো হয়েছিল।
সংস্থাটি জানিয়েছে, রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৭৯ জন দ্রুজ যোদ্ধা এবং ৫৫ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। এই সাধারণ মানুষদের মধ্যে ২৭ জনকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা। সংঘর্ষে প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৮৯ সদস্য এবং ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধাও প্রাণ হারিয়েছেন।
অবজারভেটরি জানিয়েছে, সুবাইদায় নিহতদের মধ্যে একজন মিডিয়া কর্মীও রয়েছেন, তার নাম হাসান আল-যাবি।
সিরিয়ান সাংবাদিক ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ‘অবৈধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ গুলিতে তার মৃত্যু হয়। তবে তিনি কোন সংবাদমাধ্যমে কাজ করতেন, তা উল্লেখ করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ার ভেতরে তাদের নিজস্ব তথ্যসূত্রের ওপর নির্ভর করে কাজ করে।
তারা আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় ১৫ জন প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্য নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন বহুজাতিক পানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা যুক্তরাষ্ট্রে কোকা-কোলার পণ্যে খাঁটি আখের চিনি ব্যবহারের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কোকা-কোলার পানীয় প্রস্তুতে হাই-ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ (এইচএফসিএস) ব্যবহার করা হয়। এটি একটি বিকল্প মিষ্টিকারক। এটি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এবং তার নেতৃত্বাধীন ‘মেক আমেরিকা হেলদি অ্যাগেন’ আন্দোলনের সমালোচনার লক্ষ্য হয়ে এসেছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, ‘আমি কোকা-কোলার সঙ্গে কথা বলেছি যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত কোকে খাঁটি আখের চিনি ব্যবহার করে। তারা এতে সম্মত হয়েছে। আমি কোকা-কোলা কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। এটি একটি চমৎকার পদক্ষেপ হবে, দেখবেন, এটি নিঃসন্দেহে ভালো সিদ্ধান্ত!’
তবে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যক্তিগত প্রণোদনার ব্যাখ্যা দেননি, বিশেষত এটি তার প্রিয় পানীয় ডায়েট কোক-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর তিনি ওভাল অফিসে আবার সেই বিশেষ বোতামটি বসিয়েছেন যা চাপলে তার জন্য ডায়েট কোক এনে দেওয়া হয়।
কোকা-কোলা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি। সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে তারা জানায় :
‘আমরা আমাদের প্রতীকী কোকা-কোলা ব্র্যান্ড নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উৎসাহের প্রশংসা করি। শিগগিরই আমাদের কোকা-কোলা পণ্যের নতুন উদ্ভাবনী উপস্থাপনাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।’
১৯৭০-এর দশকে কর্ন সিরাপ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কর্ন চাষে সরকারি ভর্তুকি এবং আখের চিনি আমদানিতে শুল্কের কারণে এটি আরও বিস্তৃতভাবে ব্যবহার শুরু হয়।
তবে কর্ন সিরাপ থেকে সরে আসার এই সিদ্ধান্ত মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্ন বেল্টের কৃষকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। এই অঞ্চলটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত।
এইচএফসিএস ও সুক্রোজ (আখের চিনি) উভয়েই মূলত ফ্রুকটোজ ও গ্লুুকোজ দিয়ে তৈরি। তবে এইচএফসিএস-এ এই দুটি শর্করা আলাদাভাবে থাকে (মিশ্রণে সাধারণত ৫৫% ফ্রুকটোজ ও ৪৫% গ্লুকোজ), আর সুক্রোজে এরা রসায়নিকভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।
২০২২ সালের এক পর্যালোচনা অনুসারে, এই দুটি উপাদানের মধ্যে ওজন বৃদ্ধি বা হৃদ্রোগের ঝুঁকি সম্পর্কিত প্রভাবের পার্থক্য তেমন নয়। তবে এইচএফসিএস গ্রহণকারীদের মধ্যে দেহের প্রদাহের মাত্রা কিছুটা বেশি দেখা গেছে।
তবে, অনেক মার্কিন ভোক্তা মনে করেন আখের চিনিতে তৈরি কোক (যেমন মেক্সিকান কোক) স্বাদে বেশি ‘প্রাকৃতিক’। এজন্য এটি মার্কিন বাজারে উচ্চ দামে বিক্রি হয়।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রিয় ডায়েট কোকে ব্যবহৃত হয় অ্যাসপারটেম, যা আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (ওঅজঈ) এর মতে একটি ‘সম্ভাব্য কার্সিনোজেন’ (ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এমন উপাদান) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত দেশটির সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে দামেস্কে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের কাছেও হামলা চালানো হয়েছে। বুধবার (১৬ জুলাই) লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা দামেস্কে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের প্রবেশপথে বোমা হামলা চালিয়েছে। রাজধানীতে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পরপরই ইসরায়েলি বাহিনীর এই বিবৃতি আসে।
ইসরায়েলি বাহিনী পৃথকভাবে জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার দক্ষিণে ড্রুজ-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর সুওয়াইদায় আক্রমণ করছে।
এর আগে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, শহরটিকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোনগুলো হামলা চালিয়েছে, যার ফলে বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও আজ সুয়ায়দায় সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি এই হামলার ঘটনা ঘটল।
বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের দিন থেকেই ইসরায়েল ইতোমধ্যেই সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে দামেস্কে বিশাল হামলা সত্ত্বেও সিরিয়ার সামরিক বাহিনী কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাতে পারছে না।
এর আগে সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সুইদায় দেশটির সরকারি বাহিনীর ওপর টানা দ্বিতীয় দিনের মতো হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই হামলা চালিয়েছে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে অসামরিক এলাকা হিসেবে বজায় রাখার এবং সেখানে বসবাসরত সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষার লক্ষ্যেই।
গত সপ্তাহ থেকেই সুইদায় দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বহু প্রাণহানি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সেখানে হস্তক্ষেপ করলে তাদের সঙ্গে দ্রুজদেরও সংঘর্ষ শুরু হয়।
এই উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার ইসরায়েল প্রথম দফা হামলা চালায়। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা হামলায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ঘটনাস্থল থেকে রয়টার্সের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, তারা ড্রোনের শব্দ ও অন্তত চারটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। একপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ট্যাংক টেনে নিতে দেখা গেছে। রাস্তায় পড়ে ছিল তিনটি মৃতদেহও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় গুলি ছোড়ার শব্দ ও ধ্বংসের চিত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
সিরিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত নানা চাপে পড়েছেন। সাম্প্রতিক এই সংঘাত দেশটির পুরনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং ইসলামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি সংখ্যালঘুদের অবিশ্বাসকেই নতুন করে সামনে এনেছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, 'সুইদায় ইসরায়েলের এই হামলা ও তার পরিণতির সম্পূর্ণ দায় তাদেরই নিতে হবে।' তারা সকল নাগরিক, বিশেষ করে দ্রুজ সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ইসরায়েলি হামলায় সিরীয় সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তর জানিয়েছে, কেউ যদি এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো অপরাধ করে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত টম বারাক বলেন, 'শান্তি ও সংহতির লক্ষ্যে' সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে সিরিয়ায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয়, ইসরায়েল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে হামলা বন্ধ করেছে বলে জানিয়েছে।
তবে এটিই প্রথম নয়—এর আগেও ইসরায়েল নিজেদের সীমান্ত রক্ষা এবং দ্রুজদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাতে সিরিয়ায় বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে।
সিরিয়ার প্রভাবশালী দ্রুজ নেতা শেখ হিকমত আল-হাজরি এক বিবৃতিতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে দ্রুজ যোদ্ধাদের ‘বর্বর হামলা’ প্রতিরোধে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
এই ঘটনার পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সেনাবাহিনীকে সুইদায় সিরীয় সরকারি বাহিনীর অবস্থানে এবং তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রভাণ্ডারে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন।
তারা বলেন, 'ইসরায়েলের দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সিরিয়ার দ্রুজদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা তাদের রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সীমান্ত অঞ্চলের অসামরিকীকরণ নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব।'
দক্ষিণ গাজায় প্রস্তাবিত ‘মানবিক শহর’ নির্মাণের খরচ ও প্রভাব নিয়ে ইসরায়েলি সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছে।
এরই মধ্যে ওই শিবির নির্মাণ করা হলে ফিলিস্তিনিদের জন্য সেটি মূলত একটি ‘বন্দিশিবির’ (কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প) হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইহুদ ওলমার্ট। তার এই বক্তব্য তেল আবিবের রাজনীতিতে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সব মিলিয়ে মানবিক শহর ঘিরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই চলছে তোলপাড়।
সম্প্রতি সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ গাজার ধ্বংসস্তূপে এই মানবিক শহর নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এই প্রকল্পটি হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অন্যতম জটিল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহরের ধ্বংসস্তূপে সেনা অবস্থান বজায় রাখার শর্ত দিয়েছে ইসরায়েল। সেখানেই এই শিবির নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেকোনো যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাস্তবায়নের আগে হামাস চাইছে গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক বার্তায় সংগঠনটির সিনিয়র সদস্য হুসাম বাদরান বলেন, ‘শিবির নির্মাণ পরিকল্পনা ইচ্ছাকৃতভাবে জটিলতা সৃষ্টিকারী একটি দাবি, এটি আলোচনা জটিল করে তুলছে।’
বাদরান বলেন, তাদের পরিকল্পিত ওই শিবিরটি হবে একটি বিচ্ছিন্ন শহর যা একটি গেটোর মতো দেখতে হবে। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং কোনো ফিলিস্তিনিই এতে সম্মত হবেন না।
গেটো মানে হলো একটি অবরুদ্ধ এলাকা, যেখানে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আলাদা করে রাখা হয়। এটি সাধারণত বিচ্ছিন্ন, মানবিক সেবাবঞ্চিত ও অবহেলিত পরিবেশ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ গাজার ধ্বংসস্তূপে এই মানবিক শহর নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন কাৎজ। এই শিবিরটি গাজা ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত ইসরায়েলি সামরিক ‘মোরাগ করিডর’ ও মিসরীয় সীমান্তের মাঝে নির্মিত হবে।
কাৎজ জানান, প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ মানুষকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে এবং পরে গাজার পুরো জনসংখ্যাকে সেখানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। এই শিবিরে একবার ঢোকানো হলে ফিলিস্তিনিরা কেবল অন্য দেশে যাওয়ার জন্যই বের হতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মানবিক শহরের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে এটি নিয়ে ইসরায়েলের মিত্রদের মধ্যে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, এমনকি ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেব দায়িত্ব পালন করা ওলমার্ট এই পরিকল্পনার সবচেয়ে প্রভাবশালী অভ্যন্তরীণ সমালোচক হিসেবে সামনে এসেছেন।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের জোর করে শিবিরে পাঠানো হলে তা ‘জাতিগত নির্মূলের’ সামিল হবে। তাছাড়া, ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য সেটি মূলত একটি ‘বন্দিশিবির’ (কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প) হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এই বক্তব্যের মাঝে ইসারয়েলের এই পরিকল্পিত শিবিরকে নাৎসি জার্মানির সময়কার বন্দিশিবিরের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। এতে করে তীব্র আক্রমণের শিকারও তিনি হয়েছেন।
ইসরায়েলের ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী আমিখাই এলিয়াহু ওলমার্টকে কারাবন্দি করার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি পরোক্ষভাবে তার আগের দুর্নীতির মামলার কারাদণ্ডের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
এলিয়াহু বলেন, ‘ওলমার্ট ইতোমধ্যে কারাগার খুব ভালো করেই চেনেন। তিনি যেভাবে সারা বিশ্বে ঘৃণা ও ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন, তাকে থামানোর আর কোনো উপায় নেই।’
এদিকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করলেও এই শিবির নির্মাণের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
রবিবার (১৩ জুলাই) রাতে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চিফ অব স্টাফ এয়াল জামিরের সঙ্গে নেতানিয়াহু বিরোধে জড়িয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরেই এসব প্রকাশ পায়।
এই প্রকল্পে বিপুল অর্থ ও সম্পদ ব্যয় হবে বলে অভিযোগ করেন জামির। এটি সেনাবাহিনীর সামরিক সক্ষমতা হ্রাস করবে এবং জিম্মিদের উদ্ধার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের স্থানান্তর ও গাদাগাদি করে রাখা যুদ্ধের লক্ষ্য নয় বলে এক আইনি আবেদনের জবাবে জানিয়েছিল জামিরের কার্যালয়।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, জামিরের প্রকল্প পরিকল্পনাকে অতিরিক্ত ব্যয়বহুল ও ধীরগতির বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, ‘আমি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা চেয়েছিলাম।’ এ ছাড়া, মঙ্গলবারের (১৫ জুলাই) মধ্যে আরও সস্তা ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা চেয়ে নির্দেশ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। তবে ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও এই মানবিক শহর পরিকল্পনা নিয়ে আর্থিক আপত্তি জানিয়েছেন।
দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, এ প্রকল্পের বার্ষিক ব্যয় হবে আনুমানিক ১৫ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ৩৩০ কোটি পাউন্ড)। এটি ইসরায়েলের বাজেটের ওপর বিরাট চাপ ফেলবে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ব্যয়ের বেশিরভাগই ইসরায়েলি জনগণের করের অর্থ থেকেই বহন করতে হবে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দ কমে যেতে পারে।
ইসরায়েলের আরেক পত্রিকা ওয়াই-নেট জানিয়েছে, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা বলছেন, এই মানবিক শহর নির্মাণে ব্যয় হবে আনুমানিক ২৭০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার। শুরুতে এর পুরো খরচই ইসরায়েলকে বহন করতে হবে।
সব মিলিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ‘মানবিক শহর’ পরিকল্পনাটিই এখন পড়ে গেছে অনিশ্চয়তায়।
ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মঙ্গলবার ড্রোন হামলার ফলে মার্কিন-পরিচালিত একটি তেলক্ষেত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কুর্দিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুহোক প্রদেশের সারসাং তেলক্ষেত্রে হামলা হয়েছে। এই হামলা ‘কুর্দিস্তান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের একটি কর্মকাণ্ড।’
প্রতিবেশী ইরবিল প্রদেশে একদিন আগে একই রকম ড্রোন হামলার পর নতুন এই হামলা চালানো হলো। তবে কারা হামলা চালিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়।
মার্কিন কোম্পানি এইচকেএন এনার্জি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে সারসাং ফিল্ডে তাদের একটি উৎপাদন কেন্দ্রে বিস্ফোরণটি ঘটে। স্থানটি সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এইচকেএন এনার্জির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জরুরি প্রতিক্রিয়া দলগুলো আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কুর্দিস্তান অঞ্চলে ড্রোন এবং রকেট হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কুর্দিস্তানে তিনটি বিস্ফোরক-বোঝাই ড্রোন হামলার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ড্রোন মার্কিন সেনাদের আবাসস্থল ইরবিল বিমানবন্দরের কাছে ভূপাতিত করা হয় এবং আরও দুটি খুরমালা তেলক্ষেত্রে আঘাত হানার ফলে বস্তুগত ক্ষতি হয়।