ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী ট্রেন দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে ভারত। গত শুক্রবার উড়িষ্যায় ভয়াবহ ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৬১ জন নিহত এবং ৯০০ জনের মতো মানুষ আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আহতদের মধ্যে গুরুতর অনেকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটির সরকারি কর্মকর্তারা।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের রেল ব্যবস্থাপনার সুখ্যাতি থাকলেও দেশটিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনার সংখ্যাও কম নয়। অতীতের একাধিক ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে গত শুক্রবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি।
৬ জুন, ১৯৮১: সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে বিহার রাজ্যে। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে বাগমতি সেতু পার হওয়ার সময় ভিড়েঠাসা একটি ট্রেনের পেছন দিকের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ৮০০ মানুষ।
৮ জুলাই, ১৯৮৮: একটি এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দক্ষিণ ভারতের কুইলনের কাছে বর্ষায় পানি উপচে পড়া একটি হ্রদে ডুবে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ১০৬ জন নিহত হন।
২০ অগাস্ট, ১৯৯৫: দিল্লির ২০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কালিন্দি এক্সপ্রেস ট্রেনকে ধাক্কা দেয় পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস ট্রেন। সে সময় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে সাড়ে ৩শ মানুষের মৃত্যু হয়।
২৬ নভেম্বর ১৯৯৮: পাঞ্জাবের খান্না এলাকায় গোল্ডেন টেম্পল মেইল ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ অবস্থায় পেছন থেকে এসে ট্রেনটিকে ধাক্কা দেয় জম্মু তাবি–শিয়ালদহ এক্সপ্রেস ট্রেন। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২১২ জন।
২ অগাস্ট, ১৯৯৯: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের গাইসালে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রহ্মপুত্র মেইল ট্রেনে সজোর ধাক্কা দেয় অবধ আসাম এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে ২৮৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন ৩ শতাধিক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য।
২৯ অক্টোবর, ২০০৫: দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধ্র প্রদেশে ভেলুগোন্দার কাছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে মৃত্যু হয় অন্তত ১০২ জনের।
১০ জুলাই, ২০১১: ভারতের ফতেহপুরে একটি মেইল ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ৭০ জন মারা যায়, আহত হয় তিনশর বেশি মানুষ।
২০ নভেম্বর, ২০১৬: উত্তর প্রদেশে একটি এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয় ১৪৬ জন নিহত হন। এই দুর্ঘটনায় আহত হয় দুইশর বেশি মানুষ।
২১ জানুয়ারি, ২০১৭: অন্ধ্র প্রদেশে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে ৪১ জন নিহত হন।
১৯ অক্টোবর, ২০১৮: পাঞ্জাবের অমৃতসরে দশেরা উৎসব উপলক্ষে রেললাইনের ওপর জড়ো হওয়া কয়েকশ’ মানুষের ওপর দিয়ে একটি কমিউটার ট্রেন চলে গেলে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়,আহত হন আরও ৫৭ জন মানুষ।
জাপান যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত চাল কিনতে ‘অনিচ্ছুক’- এমন অভিযোগ তুলে জাপানের রপ্তানি করা পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি লেখেন, তারা আমাদের চাল নেয় না, অথচ নিজেরাই চালের সংকটে ভুগছে। তিনি আরও লেখেন, এবার তাদের (জাপান) চিঠি পাঠানো হবে, যদিও আমরা বহু বছর ধরে দেশটিকে বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে পছন্দ করে আসছি।
তবে ট্রাম্পের অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন সেন্সাস ব্যুরোর বাণিজ্য পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ২৯৮ মিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করেছে জাপান। শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যেই তারা ১১৪ মিলিয়ন ডলারের চাল কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এমন প্রেক্ষাপটে জাপান আসলে ভবিষ্যতে চাল আমদানি বন্ধ করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে টোকিও জানিয়েছে, বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি মঙ্গলবার (০১ জুলাই) বলেন, আমরা মার্কিন পক্ষের মন্তব্য সম্পর্কে অবগত আছি। কিন্তু চলমান আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা থেকে আমরা বিরত থাকব।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পারস্পরিক সুবিধাজনক চুক্তি অর্জনের লক্ষ্যেই জাপান আন্তরিক ও সৎ আলোচনার পথে এগোবে।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের দাবি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানে চাল আমদানির প্রক্রিয়া অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও অস্বচ্ছ, যার ফলে মার্কিন চাল রপ্তানিকারকদের সেখানে কার্যকর বাজার প্রবেশাধিকার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে চাল, গাড়ি ও অন্যান্য পণ্যের ওপর ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপের একটি পরিকল্পনা সামনে এনেছে। এপ্রিল মাসে ঘোষিত এই পরিকল্পনার ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই।
এই সময়সীমার পর কী হবে তা স্পষ্ট নয়, তবে ট্রাম্প এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, নতুন করে আবারও শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রিয় জাপান, এবার গল্পটা হলো- তোমরা তোমাদের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।
এর আগে জাপানি রপ্তানির ওপর সর্বনিম্ন ২৪ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছিল, তবে শুল্ক বিরতির আওতায় তা ১০ শতাংশে নেমে আসে। হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল পরিচালক কেভিন হ্যাসেট সোমবার বলেন, সবকিছু এখনা শেষ হয়ে যায়নি। আলোচনার দরজা খোলা আছে। আমরা একটা কাঠামো পেলেও, সেখানে চূড়ান্ত করার মতো বিষয় থাকবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পরবর্তী সামরিক সংঘর্ষ হবে চূড়ান্ত। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটিকে এমন তথ্য জানিয়েছে ইরানের একটি সূত্র। সূত্রটি জানিয়েছে, ইরান এখন ইসরায়েলের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন এবং দেশটির কাছে এখনো বহু উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে সক্ষম।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর পাশাপাশি শত শত মানুষ এবং বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হন, যারা পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হয়।
২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল নাতানজ ও ফরদোর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। তেহরান বরাবরই সামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। দেশটি পাল্টা জবাব দেয় কামিকাজে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। ইরান সরাসরি ইসরায়েল এবং কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানে।
১২ দিনব্যাপী এ সংঘাত শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে, যা এখন পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) আরটিকে দেওয়া এক মন্তব্যে তেহরানের এক সূত্র জানিয়েছে, ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে পরবর্তী যুদ্ধকে চূড়ান্ত যুদ্ধ হিসেবে দেখছে। তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক উত্তেজনার সময় ইরান ইসরায়েলি শাসনের দুর্বলতা শনাক্ত করতে পেরেছে।
সূত্রটি দাবি করে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কাছে এখনো নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, এবং যুদ্ধ শুরু হলে প্রতিদিন অন্তত কয়েক শত ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হবে।
সূত্রটি জানায়, দেশের জনগণ এবং প্রবাসী ইরানিদের কাছ থেকে সরকার অভূতপূর্ব সামাজিক সমর্থন পাচ্ছে। যদিও ইরান জানে যেকোনো সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াবে, তবুও তেহরান এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানোর বিষয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, তেহরানের সামরিক জবাবে ইসরায়েলি রাষ্ট্র কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্ত ও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ না হলে জায়নিস্ট শাসন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত।
এদিকে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তেহরান যদি পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যায় বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, তাহলে আরও হামলা চালানো হবে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও ইরানের বিরুদ্ধে আরও হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
ইসরায়েলের ছোড়া প্রজেক্টাইল ধ্বংস করল ইরান
ইসরায়েলের ছোড়া প্রজেক্টাইল ধ্বংস করেছে ইরান। দেশটির সেনাবাহিনী আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে এসবের মোকাবিলা করেছে। এসব অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০১ জুলাই) মেহের নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট সফলভাবে ইসরায়েলের ছোড়া ড্রোন ধ্বংস করেছে। আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে তাদের ছোড়া ক্ষুদ্র আকারের মাইক্রো এয়ার ভেহিকলসের (এমএভি) মোকাবিলা করা হয়েছে। ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রথমে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই ইরানে আক্রমণ চালায়। দেশটির এ হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অসংখ্য সাধারণ নাগরিক নিহত হন। ইসরায়েলের এ হামলা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে ইরান।
ইসরায়েলের সঙ্গে এ হামলায় যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে। এই হামলার মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। জবাবে ইরান প্রতিরোধমূলক পাল্টা হামলা চালায়। এতে ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনা ও কাতারের আল-উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিকে নিশানা করে। কাতারে এ ঘাঁটিটি পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি।
এ ঘটনার পর সোমবার (৩০ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ শেয়ার করা এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান ও ইসরায়েল একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে চূড়ান্তভাবে সম্মতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধবিরতি ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে, এরপরই যুদ্ধকে সমাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হবে।’
ট্রাম্প আরও জানান, প্রথমে ইরান যুদ্ধবিরতি শুরু করবে, এরপর ১২ ঘণ্টা পর ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যোগ দেবে। মোট ২৪ ঘণ্টা পর এই ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বিশ্বব্যাপী সমাপ্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
তিনি লেখেন, যুদ্ধবিরতির সময় দুপক্ষই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখবে। আমরা ধরে নিচ্ছি, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে, যা অবশ্যই হবে। এ জন্য আমি ইসরায়েল ও ইরান উভয় দেশকে সাহস, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার জন্য অভিনন্দন জানাই।
এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারত- এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বছর বছর ধরে চলতে পারত, কিন্তু তা হয়নি এবং কখনোই হবে না।’ পোস্টের শেষাংশে ট্রাম্প বলেন, ‘গড ব্লেস ইসরায়েল, গড ব্লেস ইরান, গড ব্লেস দ্য মিডল ইস্ট, গড ব্লেস দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা এবং গড ব্লেস দ্য ওয়ার্ল্ড।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে যাবেন বলে সোমবার মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন।
গাজায় একটি যুদ্ধ বিরতির জন্য ওয়াশিংটনের চাপের মুখে রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এর আগে বলেছিলেন যে, জানুয়ারিতে রিপাবলিকান দল ক্ষমতায় ফিরে আসার পর নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে তার তৃতীয় বৈঠকে ‘আগ্রহ প্রকাশ করেছেন’ এবং উভয় পক্ষ এ বৈঠকের জন্য একটি একটি তারিখ নির্ধারণে কাজ করছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইরানের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ৩১ হাজার ভবন এবং ৪ হাজার যানবাহন ধ্বংসসহ ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইরানে হামলার জেরে মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলকে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে।
ইহুদিবাদী দেশটির এই ক্ষয়ক্ষতিই প্রমাণ করে যে, সংঘাতের সময় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইসরায়েলের কি বিশাল এবং অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। যদিও ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে আগে আগ্রাসন চালিয়েছিল এবং ১২ দিন ধরে ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকায় আঘাত করেছিল।
ইসরায়েলকে সাহায়তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২গত ২ জুন ইরানের নাতানজ, ফোরদো এবং ইস্পাহানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছিল। আগ্রাসনের পরপরই ইরানি সামরিক বাহিনী শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালিয়েছিল। ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্স অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩-এর অংশ হিসেবে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ২২টি প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার ফলে অধিকৃত অঞ্চল জুড়ে শহরগুলিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও, মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায়, ইরানি সশস্ত্র বাহিনী কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটিতে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা পশ্চিম এশিয়ার বৃহত্তম আমেরিকান সামরিক ঘাঁটি। ২৪ জুন কাতারের মধ্যস্থতায় কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গত রোববার একটি ধর্মীয় আদেশ বা ফতোয়া জারি করেছেন ইরানের শীর্ষ শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি। এই ফতোয়ায় তিনি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে ‘ঈশ্বরের শত্রু’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বা শাসক ইসলামের নেতা বা শীর্ষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হুমকি দেয়, সে ‘যুদ্ধপিপাসু’ বা ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
গ্র্যান্ড মুফতি আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি এই ফতোয়ায় বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে। কারণ তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বকে হুমকি দিয়েছে। ফতোয়ায় বলেন, যে ব্যক্তি বা শাসক ইসলামের নেতা বা শীর্ষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হুমকি দেয়, সে ‘যুদ্ধপিপাসু’ বা ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইরানি আইন অনুযায়ী, যারা সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাদের শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড, শূলবিদ্ধকরণ, অঙ্গচ্ছেদ অথবা নির্বাসন। ফতোয়ায় আরও বলা হয়েছে, এই শত্রুদের সঙ্গে মুসলিম বা কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে কোনও ধরনের সহযোগিতা বা সমর্থন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। সব মুসলমানের উচিত এই শত্রুদের কথাবার্তা ও কাজের জন্য তাদের অনুতপ্ত করা।
এছাড়াও এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো মুসলমান তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পথে ক্ষতি বা কষ্টের সম্মুখীন হয়, তাহলে সে সৃষ্টিকর্তার রাস্তায় সংগ্রামরত একজন যোদ্ধার পুরস্কার লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ। এই ফতোয়ার পেছনে ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনাকেই কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
ইরানি ধর্মীয় নেতারা এর আগেও ফতোয়া দিয়েছেন। ইরানের অন্যতম ভয়ংকর ফতোয়া জারি হয় ১৯৮৯ সালে। লেখক সালমান রুশদির ‘শয়তানের উক্তি’ বা দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করা হয়। অনেক মুসলমান মনে করেছিলেন যে বইটি তাদের ধর্মকে অবমাননা করেছে। সেই ফতোয়ার পর রুশদিকে আত্মগোপনে যেতে হয়।
‘৭ দিনের মধ্যে ইরানে ফের হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল’
ইরানে ফের যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তেহরানের একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের ওপর আবার হামলা হতে পারে। গতকাল সোমবার ইরান ইন্টারন্যাশনালের লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদের প্রধান ইব্রাহিম মোত্তাকি বলেন, বর্তমান যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল-আমেরিকার ‘সংঘবদ্ধ’ হওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত সময়কাল মাত্র, এবং তারা শিগগিরই ইরানের তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করবে। সাক্ষাৎকারে মোক্তাকি আরও বলেছেন, প্রাপ্ত প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন সহায়তায় ইসরায়েল সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের আকস্মিক ও ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করবে।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধবিরতিকে তাদের নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠন এবং সর্বোত্তম করার একটি উপায় হিসেবে দেখে বলে সতর্ক করেছেন ইরানি এই বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরিতে সহায়তা করেছিলযুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরিতে সহায়তা করেছিল। মোক্তাকি ইরানের কর্মকর্তাদের এই যুদ্ধবিরতি গুরুতরভাবে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরানি কর্মকর্তারা এবার হামলার লক্ষ্যবস্তু হবেন।
আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে যে শর্ত দিল ইরান
ইরান বলেছে, কূটনৈতিক আলোচনা আবার শুরু করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ওপর নতুন করে হামলার চিন্তা বাতিল করতে হবে। দেশটির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানছি বিবিসিকে এ কথা বলেছেন। এক সাক্ষাৎকারে মাজিদ তাখত-রাভানছি বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে জানিয়েছে যে, তারা আলোচনায় ফিরতে চায়। কিন্তু আলোচনা চলাকালে নতুন করে হামলার মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র এখনো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।
ইরানে দখলদার ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিলো গত ১৩ জুন। ওমানের রাজধানী মাস্কটে তার দুদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার আলোচনায় বসার কথা ছিল।
উত্তর মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজের একটি বেসরকারি একটি শ্মশানে ৩৮১টি মৃতদেহ স্তূপীকৃত অবস্থায় সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। রোববার স্থানীয় প্রসিকিউটরের কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে ।
মেক্সিকোর সিউদাদ জুয়ারেজ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
চিহুয়াহুয়া রাজ্য প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের যোগাযোগ সমন্বয়কারী এলয় গার্সিয়া এএফপিকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ৩৮১টি মৃতদেহের সন্ধান পেয়েিেছ এবং সেগুলো আমাদের কাছে আছে। মৃতদেহগুলো অনিয়মিতভাবে শ্মশানে জমা করা হয়েছিল এবং সেগুলোকে দাহ করা হয়নি।’
গার্সিয়া বলেন, শ্মশানের ভবনে বিভিন্ন কক্ষে মৃতদেহগুলো ‘স্তূপীকৃত’ অবস্থায় ছিল।
তিনি বলেন, ‘মৃতদেহগুলোএকটির ওপরে আরেকটি মেঝেতে রাখা হয়েছিল। ‘সমস্ত মৃতদেহকে সুগন্ধিকরণ করা হয়েছিল। গার্সিয়া বলেন, ছাইয়ের পরিবর্তে আত্মীয়দের ‘অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ অনুমান করেছে, কিছু দেহাবশেষ দুই বছর পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারে। গার্সিয়া শ্মশান কতৃপক্ষের ‘অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতা কে দায়ী করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যতটা প্রক্রিয়া করতে পারেন তার চেয়ে বেশি নিতে পারবেন না।’শ্মশানের একজন প্রশাসক ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রসিকিউটরদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
তবে, কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট করেনি মৃতদেহগুলো অপরাধমূলক সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের কিনা। সংগঠিত অপরাধের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ মেক্সিকো বছরের পর বছর ধরে ফরেনসিক ব্যবস্থার সংকটে ভুগছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য মৃতদেহের সংখ্যাধিক্য, কর্মীদের অভাব এবং অর্থের সীমাবদ্ধতা।
ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না বলে দাবি করেছেন জতিসংঘে দেশটির রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি। তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রবিস্তাররোধ চুক্তির অধীনে শান্তিপূর্ণ জ্বালানির উদ্দেশ্যে তাদের এই প্রকল্প অনুমোদিত।
রবিবার (২৯ জুন) সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সমৃদ্ধকরণ আমাদের অধিকার, এটি একটি অখণ্ড অধিকার এবং আমরা এই অধিকার বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ইরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ আলোচনার নাম নয়, এটি আমাদের প্রতি একটি নীতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
তবে ইরাভানি বলেন, “তেহরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু এই আগ্রাসনের পর নতুন করে আলোচনা শুরুর মতো কোনো উপযুক্ত পরিবেশ নেই এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বা আলোচনার জন্য কোনো অনুরোধও নেই।”
জাতিসংঘে ইরানের এই দূত আরও দাবি করেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি কিংবা সংস্থার পরিদর্শকদের প্রতি তাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হুমকি নেই।
যদিও কিছু ইরানি কর্মকর্তা এই পরিদর্শকদের অভিযুক্ত করেছেন ইসরায়েলের হামলাকে যৌক্তিকতা দিতে তারা সাহায্য করছে বলে। বর্তমানে আইএইএ পরিদর্শকরা ইরানে অবস্থান করছেন, তবে তারা দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না।
ফিলিস্তিনের গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় গত শুক্রবার জানিয়েছে, মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণ কেন্দ্রগুলো থেকে বিতরণ করা আটার ব্যাগে অক্সিকোডোন নামের মাদক বড়ি পাওয়া গেছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে তারা। এক বিবৃতিতে ওই কার্যালয় বলেছে, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য পেয়েছি। তারা আটার ব্যাগের ভেতরে এই বড়িগুলো পেয়েছেন।’ কার্যালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘কিছু মাদক ইচ্ছাকৃতভাবে গুঁড়া বা দ্রবীভূত করে আটার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
অক্সিকোডোন একটি শক্তিশালী মাদক, যা মূলত ক্যানসার রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি ও তীব্র ব্যথা উপশমে ব্যবহার করা হয়। এ মাদক অত্যন্ত আসক্তিকর এবং এর জীবননাশক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, বিভ্রম ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্টে গাজায় বিতরণ করা আটার ব্যাগে বড়ি পাওয়া যাওয়ার ছবি প্রকাশ হয়েছে। পরে গাজা কর্তৃপক্ষ ওই বিবৃতি দেয়।
গাজার একজন ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে জঘন্য রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফেসবুকে গাজার চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা লিখেছেন, ‘এই মাদক ‘আমাদের সামাজিক চেতনা ধ্বংস করার একটি অস্ত্র’।’ এভাবে ‘মাদকাসক্তি ছড়ানো ও ফিলিস্তিনি সমাজের বন্ধন ভেঙে দেওয়ার জঘন্য অপরাধের’ জন্য পুরোপুরি ইসরায়েলকেই দায়ী করছে গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়।
কার্যালয় আরও বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার অবরুদ্ধ অবস্থাকে ‘সাহায্য ও সহায়তার’ ছদ্মাবরণে মাদক পাচারের উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুকূপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে তারা।
জিএইচএফের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) একটি বিতর্কিত মার্কিন-ইসরায়েলি সংস্থা। বর্তমানে গাজায় ত্রাণ বিতরণে যুক্ত রয়েছে সংস্থাটি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকার অভিযোগে জিএইচএফের তীব্র সমালোচনা করেছে।
গত বুধবার ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, এ সংস্থা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত করছে এবং গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জবরদস্তিমূলক বাস্তুচ্যুতি’ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিংবা গণহত্যার মতো অপরাধে সহায়তা করে থাকতে পারে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, জিএইচএফের কার্যক্রম চলাকালে গত এক মাসে সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৫১৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, ইসরায়েলি সেনারা স্বীকার করেছেন যে তারা জিএইচএফ পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছেন। মিডল ইস্ট আই জিএইচএফের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়েছে।
গাজায় অপুষ্টিতে ৬৬ শিশুর মৃত্যু
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার প্রশাসনের অভিযোগ দুধ, পুষ্টিকর খাদ্য এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেয়াতেই এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এক বিবৃতিতে গাজার মিডিয়া প্রশাসন জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই অবরোধ একটি যুদ্ধাপরাধ। বেসামরিক লোকদের নির্মূল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে।
এদিকে গাজার তুফাহ, দেইর আল বালাহ, রাফা, খান ইউনিসসহ বেশ কয়েকটি এলাকাতেই চলছে ইসরায়েলি বিমান হামলা। গত শনিবার একদিনে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন, তাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।
আল জাজিরা বলছে, গত শনিবার ভোরে গাজা সিটির আল তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় কেঁপে ওঠে চারপাশ। বিস্ফোরণের সময় গাজাবাসী আশ্রয় নিচ্ছিল জাফা স্কুলের পাশে একটি বহুতল ভবনে। ভবনটির তিনটি তলা একসঙ্গে ধসে পড়ে। এ ঘটনায় শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। পরিবারের আহাজারি আর ক্লান্তিমাখা চেহারায় শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়ে উপত্যকাজুড়ে।
ফিলিস্তিনের স্টেডিয়ামের পাশে আরও একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ইসরায়েলি বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হন। হামলায় আহতদের অনেকেই শিফা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান।
তবে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলেও চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কেননা হাসপাতালের অর্ধেক কর্মী এরমধ্যেই নিহত বা গুম হয়েছেন। এছাড়া দেইর আল বালাহতে দুপুরের দিকে একটি রাস্তায় বোমার আঘাতে একসঙ্গে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার প্রায় চার শতাংশ। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পরোক্ষ প্রভাব যেমন: ক্ষুধা, ঠান্ডা এবং রোগ-ব্যাধির কারণেও অনেক মানুষ মারা গেছে।
‘হামাসের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ায় আছেন নেতানিয়াহু’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একটি দীর্ঘ পোস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে যুদ্ধের নায়ক হিসেবে উল্লেখ করে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ট্রাম্প। দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলার নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। শনিবার রাতের ওই পোস্টে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, ইরানের বিপজ্জনক পারমাণবিক হুমকি থেকে মুক্তি পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুর্দান্ত কাজ করেছেন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প বলেন, তিনি (নেতানিয়াহু) এখন হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, যার মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর নিজের দেশে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিষয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গত মার্চে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এমন একটি যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন যেটি সুফল বয়ে আনছিল। তার এই সিদ্ধান্তকে ওই সময় ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। এটি ছিল গাজা যুদ্ধবিরতি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী রোববার উত্তর গাজা উপত্যকার এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরে যেতে সতর্কতা জারি করেছে। এরমধ্যে গাজা শহরের কিছু অংশ এবং আশেপাশের এলাকার কিছু অংশও রয়েছে। হামাসের সাথে যুদ্ধের ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরাই উত্তর গাজার মানচিত্রের সাথে এক্স-এ এক পোস্ট করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য ‘অবিলম্বে দক্ষিণে আল-মাওয়াসির দিকে নাগরিকদের সরে যেতে’। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সক্ষমতা ধ্বংস এবং তাদের প্রতিহত করার জন্য ইসরাইলি বাহিনী এই এলাকাগুলোতে তীব্র শক্তি প্রয়োগ করবে এবং সামরিক অভিযানগুলো তীব্র এবং প্রসারিত হবে’।
শনিবার মার্কিন সিনেটররা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল’ ব্যয় বিল নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছেন। বিলটি একটি বিশাল বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রস্তাব যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভ্যন্তরীণ এজেন্ডার মূল অংশগুলো অর্জন করবে এবং একই সাথে সমাজকল্যাণ কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করবে।
ওয়াশিংট থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ দিয়ে তার উত্তরাধিকার সিলমোহর করার আশা করছেন, যা তার মেয়াদ শেষ হওয়া প্রথম-মেয়াদী কর কর্তনকে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রসারিত করবে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করবে।
তবে, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচনের দিকে নজর রাখা রিপাবলিকানরা এই প্যাকেজ নিয়ে বিভক্ত, যা লাখ লাখ দরিদ্র আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবা কেড়ে নেবে এবং দেশের ঋণে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি যোগ করবে।
শনিবার গভীর রাতে রিপাবলিকান সমর্থকরা প্রক্রিয়াগত ভোট বিলম্বিত করার পর সিনেট আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটির ওপর বিতর্ক শুরু করে। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভোটাভুটির প্রথম আহ্বানের কয়েক ঘন্টা পরেই সিনেটররা ৫১-৪৯ ভোটে বিতর্ক শুরু করার প্রস্তাবটি পাস করেন, যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তার নিজের দলের হোল্ডআউটদের সাথে আলোচনায় যোগ দেন।
অবশেষে, দুই রিপাবলিকান সিনেটর উদ্বোধনী বিতর্কে ‘না’ ভোট দিয়ে ৪৭ জন ডেমোক্র্যাটের সাথে যোগ দেন।
ট্রাম্প তার দলকে ৪ জুলাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের মধ্যে বিলটি পাস করার জন্য এবং স্বাক্ষর করার জন্য তার ডেস্কে রাখার জন্য চাপ দিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটরা আইনটির এবং ট্রাম্পের এজেন্ডার তীব্র বিরোধিতা করছেন এবং বিতর্ক চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে বিলটির সম্পূর্ণ অংশ চেম্বারে জোর দিয়ে শোনানোর মাধ্যমে শুরু করেছিলেন।
বিলটি প্রায় ১ হাজার পৃষ্ঠা দীর্ঘ এবং এটি পড়তে আনুমানিক ১৫ ঘন্টা সময় লাগবে।
সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, ‘বিলে কী আছে, রিপাবলিকানরা আমেরিকাকে তা জানাবে না, ‘তাই ডেমোক্র্যাটরা এটিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে বাধ্য করছে। এটি পড়ার জন্য প্রয়োজনে আমরা সারা রাত এখানে থাকব।’
এই সপ্তাহের শুরুতে তেহরানের এভিন কারাগারে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৭১ জন নিহত হয়েছে বলে রোববার ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, দুই চিরশত্রুর মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ বিরতি শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছে তেহরান।
বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই হামলায় এভিন কারাগারে ৭১ জন নিহত হয়েছে।’
১৩ জুন ইসরাইলের বোমা হামলা শুরু করলে সোমবার তেহরানের উত্তরে অবস্থিত ভারী সুরক্ষিত কমপ্লেক্সে ৭১ জন নিহত হয়।
ইসরাইলি বাহিনী শনিবার ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের বিধ্বস্ত অঞ্চলে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে নয়জন শিশুসহ ৩৭ জনকে হত্যা করেছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এ তথ্য জানায়। গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে জানান, বিভিন্ন স্থানে সাতটি ইসরাইলি ড্রোন ও বিমান হামলায় ৩৫ জন এবং গাজার মধ্যাঞ্চলীয় নেটজারিম জোনে খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরাইলের গুলিতে আরও দুজন নিহত হয়েছে।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়ায় একটি বাড়িতে বিমান হামলায় তিনজন শিশু নিহত হয়।
বাসাল বলেন, গাজা নগরীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি পাড়ায় কমপক্ষে ছয় শিশু নিহত হয়েছে, একটি স্কুলের কাছে আশ্রয় নেওয়া কিছু বাস্তুচ্যুত মানুষও বিমান হামলায় নিহত হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইসরাইলি সেনাবাহিনী মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
গাজায় বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট শনিবার বলেছেন ‘তার দেশ ও ইউরোপ গাজায় খাদ্য বিতরণের নিরাপত্তায় অবদান রাখতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ হামাসের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাহায্য পাওয়ার ইসরাইলি উদ্বেগেরও সমাধান করবে।
গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য বিতরণে ফ্রান্স কীভাবে সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে ব্যারোট কোনও বিবরণ দেননি।
গাজায় গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ এবং অনেক এলাকায় প্রবেশের অসুবিধার কারণে এএফপি স্বাধীনভাবে মৃতের সংখ্যা এবং উদ্ধারকারীদের দেওয়া বিবরণ যাচাই করতে পারছে না।
এএফপির ছবিতে দেখা গেছে গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতালে সাদা কাফন ও কম্বলে মোড়ানো কমপক্ষে দুই শিশু সহ সাতজনের মৃতদেহ ঘিরে শোকাহতরা কাঁদছেন।
গাজা নগরী থেকে ধারণ করা অন্যান্য এএফপির ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার পর ভবনগুলো থেকে ধোঁয়ার মেঘ উঠছে।
জাবালিয়ায়, একজন এএফপির আলোকচিত্রী বেসামরিক প্রতিরক্ষা উদ্ধারকারীদের পিঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে দেখেছেন।
পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরভস্ক দখলের চেষ্টার অংশ হিসেবে রাশিয়া সেখানে ১ লাখ ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল ওলেকসান্দর সিরস্কি। তার মতে, এই বিপুল রুশ সেনা মোতায়েন স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, পোকরভস্ককে ঘিরে রাশিয়া তাদের আক্রমণাত্মক তৎপরতা জোরদার করছে। অঞ্চলটি দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর এবং দীর্ঘদিন ধরেই রুশ বাহিনীর নজরে রয়েছে।
সেনাপ্রধান সিরস্কি শুক্রবার জানান, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলজুড়ে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সামরিক ফ্রন্টলাইনের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত লড়াই চলছে পোকরভস্ক ঘিরে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পোকরভস্ক দখলের লক্ষ্যে এক বছর ধরে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে রুশ বাহিনী। তবে প্রচুর পরিমাণে সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন করলেও এখন পর্যন্ত এটি দখল করতে পারছে না মস্কো।
ইউক্রেনের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শহরটির প্রতিরক্ষাবলয়কে এর কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। পূর্ব ইউক্রেনের পোকরভস্ক শহরকে কৌশলগত লক্ষ্য মনে করে মস্কো। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তার লক্ষ্য হলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক—এই দুই পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল পুরোপুরিভাবে রুশ নিয়ন্ত্রণে আনা, যেগুলোর কিছু অংশ এরই মধ্যে রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে শান্তি উদ্যোগ ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করার অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি, এই বিলম্ব কৌশলগত; এর মাধ্যমে রুশ বাহিনী আরও ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে।
যদিও পোকরভস্ক বড় কোনো শহর নয়, তবুও এটি পূর্ব ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। শহরটি এমন এক প্রধান সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা অঞ্চলটির অন্যান্য সামরিক কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে।
পোকরভস্ক, কোস্তিয়ান্তিনিভকা, ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক—এই চার শহর মিলে দোনেৎস্কের কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত অংশে ইউক্রেনের প্রধান প্রতিরক্ষাবলয় গড়ে তুলেছে। পোকরভস্ক শহরে একসময় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বাস করতেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর গত তিন বছরে তাদের বেশির ভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
এই পোকরভস্কেই ছিল ইউক্রেনের শেষ সক্রিয় কোকিং কয়লাখনি। কোকিং একধরনের বিশেষ কয়লা, যা উচ্চ তাপে তাপ দেওয়ার পর কোকে পরিণত হয়। কোক প্রধানত ইস্পাত উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। যুদ্ধ শুরু হলেও ওই খনির শ্রমিকের অনেকে শহর ছেড়ে যাননি, কারণ এটি সচল রাখতে তাদের দরকার ছিল। তবে চলতি বছরের শুরুতে খনিটি বন্ধ হয়ে গেলে তারাও একে একে শহর ত্যাগ করতে শুরু করেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) গত বছরের শেষ দিকে জানিয়েছিল, পোকরভস্কে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষামূলক তৎপরতা এতটাই শক্তিশালী যে, রুশ বাহিনী শহরটি সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে দখলের প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
সামনাসামনি হামলা করে পোকরভস্ক দখলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায়, রাশিয়া তাই এখন বিকল্প কৌশল গ্রহণ করেছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধে প্রায় এক লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার প্রায় চার শতাংশ। ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এই পরিসংখ্যান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হারেৎজ জানায়, শুধু ইসরায়েলি হামলায় নয়, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে ক্ষুধা, ঠাণ্ডা ও রোগবালাইয়ের কারণেও বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা গেছেন।
পত্রিকাটি লিখেছে, ইসরায়েলি মুখপাত্র, সাংবাদিক ও প্রভাবশালীরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যকে বরাবরই অস্বীকার করে অতিরঞ্জন বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা অতিমাত্রায় নয়, বরং বাস্তবের তুলনায় রক্ষণশীল হিসাব।
হারেৎজ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব হোলোওয়ের অর্থনীতিবিদ ও সংঘাতজনিত মৃত্যু নিয়ে গবেষণার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মাইকেল স্প্যাগাট গাজায় মৃত্যুর হার নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এতে গাজার দুই হাজার পরিবার অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার মানুষ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত গাজায় ৭৫ হাজার ২০০ মানুষ সরাসরি সহিংস মৃত্যুর শিকার হয়েছেন, যার বেশিরভাগই ইসরায়েলি অস্ত্রের কারণে। এই মৃত্যুর মধ্যে ৫৬ শতাংশই শিশু ও নারী। হারেৎজ বলেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় সব সংঘাতে এ ধরনের উচ্চ নারী-শিশু মৃত্যুহার বিরল।
প্রফেসর স্প্যাগাট গাজাযুদ্ধকে তিনি ২১ শতকের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সিরিয়া, ইউক্রেন ও সুদানের তুলনায় গাজায় নাগরিক ও সামরিক বাহিনীর নিহতের অনুপাত এবং জনসংখ্যার হারে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি।
তথ্য অনুযায়ী, সহিংস মৃত্যুর শিকার হওয়া নারীদের ও শিশুদের অনুপাত গাজায় ৫০ শতাংশের বেশি, যেখানে কসোভোতে তা ছিল ২০ শতাংশ, উত্তর ইথিওপিয়ায় ৯ শতাংশ, সিরিয়ায় ২০ শতাংশ ও সুদানে ২৩ শতাংশ। স্প্যাগাট বলেন, আমার ধারণা গাজার প্রায় ৪ শতাংশ জনসংখ্যা নিহত হয়েছে। ২১ শতকে এর চেয়ে বেশি জনসংখ্যার অনুপাতে মৃত্যু আর কোথাও ঘটেনি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় চরম সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে, যা আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও অব্যাহত রয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে সুখবর দিলেন ট্রাম্প
ভারত-পাকিস্তান ও ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের ইতি ঘটিয়ে এবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত নিরসনের সুখবর দিলেন ট্রাম্প। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে শুক্রবার কঙ্গো-রুয়ান্ডা চুক্তি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ট্রাম্প বলেন, তার বিশ্বাস, গাজায় এখন একটি যুদ্ধবিরতি খুব কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছে। এ সংঘাত বন্ধে যারা কাজ করছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে সদ্যই তার কথা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি বিষয়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, যুদ্ধ শেষ করার যেকোনো চুক্তির আওতায় গাজায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে, যখন হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত করা যাবে। অবশ্য হামাস অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অব্যাহতভাবে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৫৬,৩৩১ পৌঁছেছে। আর আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৩২ জন ফিলিস্তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এদিন তারা ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায়।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওইদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের মধ্যস্থতায় গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
কিন্তু বিরতির দুমাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ৮ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ২০ হাজার ৫৯১ জন।
গাজায় মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণের আটার বস্তায় আফিমজাত ট্যাবলেট
গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পরিচালিত ‘বিতর্কিত’ ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে বিতরণ করা আটার বস্তায় আফিমজাত মেডিসিন অক্সিকোডন ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু, মিডল ইস্ট আই এবং ডেইলি সাবাহর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, ‘আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি, যারা এই ট্যাবলেটগুলো আটার বস্তার ভেতর পেয়েছেন। সম্ভবত এই মাদকদ্রব্যগুলোর কিছু অংশকে গুঁড়ো করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটার মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
মিডল ইস্ট আই বলছে, অক্সিকোডন একটি অপিওয়েড (আফিমজাতীয় ওষুধ), যা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা উপশমের কাজ করে এবং সাধারণত ক্যানসার রোগীদের এই ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়। এই ওষুধটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা ও দৃষ্টিবিভ্রমসহ প্রাণঘাতী প্রভাব ফেলতে পারে।
একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ত্রাণের আটার বস্তায় অক্সিকোডন ট্যাবলেট পাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে বিবৃতি দেয় গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। ফিলিস্তিনি ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।