সৌদি আরব দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল পরিমাণ তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়াতে আগামী জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সৌদি আরবের এমন ঘোষণায় ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে।
বিবিসি জানায়, ওপেক প্লাস জোটের অন্য সদস্য দেশগুলোও নিজেদের উৎপাদন কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে। সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমান গত রোববার বলেছেন, ‘আজ একটি মহান দিন। এই চুক্তির মান নজিরবিহীন।’ তিনি বলেন, ‘নতুন তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি স্বচ্ছ ও ন্যায্য হবে।’ তিনি জানান, প্রয়োজনে জুলাইয়ের পরও ১০ লাখ ব্যারেল কম তেল উত্তোলনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তিনি একে ‘একটি সৌদি ললিপপ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এর ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।
বিবিসি জানায়, বিশ্বের খনিজ তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো এবং তাদের মিত্রদের সংগঠন ওপেক প্লাস বলছে, ২০২৪ সাল থেকে দিনে তেল উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৫ লাখ ব্যারেলের মতো কমানো হবে। বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো উৎপাদন করে থাকে। এ কারণে তাদের সিদ্ধান্ত তেলের দামের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে এশিয়ার বাজারে গতকাল সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৭৭ ডলারে ঠেকেছে।
গত মাসে যুক্তরাজ্যে ডিজেলের গড় দাম লিটারপ্রতি রেকর্ড ১২ পয়সা কমেছে। জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত রোববার রাশিয়ার নেতৃত্বে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ৭ ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠক করে। রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক জানান, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ওপেক প্লাস মোট উৎপাদন কমিয়েছে। এর ফলে তেলের দৈনিক উৎপাদন ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলে পৌঁছায়। ওপেক প্লাস ইতিমধ্যেই দৈনিক দুই মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী তেলের মোট চাহিদার প্রায় ২ শতাংশ। নোভাক বলেন, ‘আলোচনার ফলে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো গেছে।’
বিবিসি জানায়, সৌদি আরবের প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেল তেল স্বেচ্ছায় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি অপ্রত্যাশিত ছিল, তবে এটি আশ্চর্য হওয়ার মতো নয়। রিয়াদের দৃষ্টিকোণ থেকে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের ওপরে থাকা জরুরি। সৌদি কর্মকর্তারা তেলের দাম বাড়াতে চান যাতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোতে বিলিয়ন ডলার ব্যয় অব্যাহত রাখা যায়।
সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ সামনের মাসগুলোয় জ্বালানি চাহিদার অনিশ্চিত পরিস্থিতির শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মন্দার আশঙ্কা অপরিশোধিত তেলের দামের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে তেল উৎপাদনকারীরা তেলের দরপতন এবং বাজারের অস্থিরতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। পশ্চিমারা অভিযোগ করছে, ওপেক জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশ্বে জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী করে কার্যত বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করছে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্যও ওপেককে দায়ী করা হয়। এর জবাবে ওপেক বলেছে, গত এক দশকে পশ্চিমা দেশগুলোর মুদ্রানীতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে এবং তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে তাদের এই প্রধান রপ্তানি পণ্যের মূল্য ধরে রাখতে বাধ্য করেছে।
ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া করিনা মাচাদো বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অসলোতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেননি। এমনটা জানিয়েছেন নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক। তার বর্তমান অবস্থান অজানা বলেও জানান তিনি।
মাচাদো তার নিজ দেশে কর্তৃপক্ষের আরোপিত এক দশকের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং এক বছরেরও বেশি সময় আত্মগোপনে থাকার পর এই পুরস্কার গ্রহণ করার কথা ছিল। ‘দুর্ভাগ্যবশত তিনি নরওয়েতে নেই এবং দুপুর ১টায় অসলো সিটি হলে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সময় মঞ্চে থাকতে পারেন নি। ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং পুরস্কার সংস্থার স্থায়ী সচিব ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন সম্প্রচারক এনআরকেকে বলেন।
তিনি কোথায় জানতে চাইলে হার্পভিকেন বলেন, ‘আমি জানি না।’
তবে, প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন কোনো বিজয়ী উপস্থিত থাকতে অক্ষম হন, তখন সাধারণত পরিবারের কোনো ঘনিষ্ঠ সদস্য পুরস্কার গ্রহণ করেন এবং বিজয়ীর জায়গায় নোবেল বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে, মাচাদোর মেয়ে আনা করিনা সোসা মাচাদোর জায়গায় আসেন।
অক্টোবরে এই পুরস্কার জেতার পর মাচাদো এটি আংশিকভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছিলেন, বলেছিলেন যে ট্রাম্পই এই সম্মানের যোগ্য। নোবেল ইনস্টিটিউটকে আরও প্রশ্ন করা হলে তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
৫৮ বছর বয়সী মাচাদোর অসলো সিটি হলে ওই অনুষ্ঠানে রাজা হ্যারাল্ড, রানী সোনজা এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি এবং ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়াসহ ল্যাটিন আমেরিকার নেতাদের উপস্থিতিতে এই পুরস্কার গ্রহণ করার কথা ছিল।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর অদূরে একটি এএন-২২ মডেলের সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার আইভানোভো অঞ্চলের ইভানকোভো গ্রামের কাছে ঘটা এই দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজটিতে থাকা আরোহীদের কেউই বেঁচে নেই।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, বিমানটিতে সাতজন ক্রু সদস্য ছিলেন। তবে উড়োজাহাজে মোট কতজন ছিলেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে এখনো নিশ্চিত কোনো সংখ্যা জানানো হয়নি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, বিমানটি মেরামতের কাজ শেষে একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে (টেস্ট ফ্লাইট) ছিল। ঠিক সেই সময়ই মস্কো থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত আইভানোভো অঞ্চলে এটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে এবং কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে। রুশ দৈনিক কোমারসান্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত এই পুরোনো উড়োজাহাজটিতে সম্ভবত প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আবহে এই দুর্ঘটনা ঘটলেও, এর সঙ্গে যুদ্ধের কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় সাবেক বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদ নির্মাণে কোটি কোটি রুপি অনুদান জমা পড়েছে। জমা পড়েছে বহু সোনাও। বিশেষ যন্ত্র এনে দুদিন ধরে চলছে রুপি গোনার কাজ। গণনা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) শেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নগদ টাকার অঙ্কের মধ্যেই ৫ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। অনেকে স্বর্ণালংকারও দান করেছেন। অনলাইনেও আসছে প্রচুর অর্থ। ফলে সব মিলিয়ে অনুদানের অঙ্ক পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছে মসজিদের অছি পরিষদ। গত শনিবার বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানস্থলে অনুদান সংগ্রহের জন্য ১১টি স্টিলের বাক্স রাখা হয়েছিল। হাজারও মানুষ সেদিন মসজিদ নির্মাণের জন্য মুক্ত হস্তে দান করেন। সেই থেকে অনুদান এসেই চলেছে।
হুমায়ুনের দাবি, সকলে মুক্ত হস্তে দান করছেন। পরিস্থিতি এমনই যে, গোনার জন্য যন্ত্র আনতে হয়েছে। দানবাক্সে ৫০০ রুপির নোট থেকে শুরু করে খুচরো পর্যন্ত সবই পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখনো সব টাকা গোনা শেষ হয়নি। কয়েকটি দানবাক্সের গণনা এখনো বাকি। মঙ্গলবারও (৯ ডিসেম্বর) সেই কাজ চলছে। টাকা-গহনার পাশাপাশি অনেকে মসজিদ নির্মাণের জন্য ইট, বালি, পাথরও দান করছেন। হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এই বাবরি মসজিদ তৈরি করতে তিন বছর সময় লাগবে।’ এ জন্য অর্থের অভাব হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দূর-দূরান্তের হাজারও ভক্ত এই বাবরি মসজিদের জন্য উদার হস্তে দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একজন ভক্ত একাই ৮০ কোটি রুপি অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।’ মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা ও রেজিনগরের সংযোগ স্থলে জাতীয় সড়কের পাশে। এর নির্মাণকাজ বন্ধ করতে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা হলেও আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করেননি। আইনি বাধা কেটে যাওয়ার পরই আগামী শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। জানা গেছে, মূল মসজিদটি তিন কাঠা জমির ওপর নির্মিত হবে। এ ছাড়া মসজিদ চত্বরের ২৫ কাঠা জমিতে একটি হাসপাতাল ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তৈরি হবে পার্কও।
কলকাতায় স্বামীর শেষকৃত্যের জন্য গত সপ্তাহে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে ইন্ডিগোতে ফ্লাইট বুক করেছিলেন মঞ্জুরি। কিন্তু বিলম্ব হতে হতে একসময় তার ফ্লাইট বাতিল হয়।
ভারতের অন্যতম এয়ারলাইন ইন্ডিগোর ব্যবস্থাপনায় ভজঘটের কারণে মঞ্জুরির মতো লাখ লাখ মানুষ বিগত কয়েকদিন ধরে ভুগছেন। ব্যাপক ফ্লাইট সংকটে দেশটির বিমান পরিবহন খাত বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
বিমানযাত্রা সাশ্রয়ী করার মধ্যে দিয়ে ভারতে জনপ্রিয়তা পায় ইন্ডিগো। এই খাতে প্রায় ৬০ শতাংশ শেয়ার থাকার প্রতিষ্ঠানটি যেখানে দৈনিক প্রায় দুহাজার ফ্লাইট পরিচালনাও করেছে, তারা আকস্মিকভাবে এক ৫ ডিসেম্বরই হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করে। ফলে মঞ্জুরির মতো অনেকে যেমন প্রিয়জনের শেষকৃত্য ঠিকমতো করতে পারেননি, তেমনি অনেক মানুষের বিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে যায়।
মুডিস রেটিং সংস্থা বলেছে, ফ্লাইট বাতিল, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডি-জিসিএ-র সম্ভাব্য জরিমানা এবং যাত্রীদের টিকিটের অর্থ ফেরতসহ অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে ইন্ডিগোর উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির এই সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন ক্রু-রোস্টারিং নিয়ম, যেখানে পাইলট ও কেবিন ক্রুর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামের বিধান রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইন্ডিগো এসব নতুন নিয়মের জন্য পর্যাপ্ত পরিকল্পনা করেনি, ফলে পুরোপুরি বিশ্রাম না পাওয়া কর্মীর অভাবে অর্ধেকের বেশি উড়োজাহাজ হ্যাঙ্গারে পড়ে আছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পাইলটদের সাপ্তাহিক বিশ্রাম ৩৬ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টা করতে হবে এবং রাতের ফ্লাইটে অবতরণ ছয়টির বদলে দুটিতে সীমিত রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন পাইলটরা, যার ভিত্তিতে এই পরিবর্তন আনা হয়।
দুই বছর আগে ভারতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই নিয়ম ঘোষণা করে এবং চলতি বছর জুন ও নভেম্বরে দুই ধাপে এগুলো কার্যকর করার কথা ছিল।
এয়ার ইন্ডিয়াসহ অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠান নিয়মগুলো বাস্তবায়নের দাবি করলেও ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে তারা সব শর্ত সম্পূর্ণভাবে পূরণে সক্ষম হয়নি।
বিবিসিকে ফ্লাইট বিশেষজ্ঞ মার্ক মার্টিন বলেন, ‘নিয়ম মানতে হলে কয়েকশ নতুন পাইলটের নিয়োগ এবং ব্যয় বৃদ্ধি পেত। এ জন্যই কি ইন্ডিগো এই গাফিলতি করল!’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ম মানার জন্য তাদের হাতে কয়েক মাস সময় ছিল। প্রতিযোগীরা মানতে পেরেছে, ইন্ডিগো পারল না কেন?’
একাধিক বিবৃতিতে ইন্ডিগো দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা অপ্রত্যাশিত অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ, খারাপ আবহাওয়া থেকে শুরু করে নতুন নিয়ম বাস্তবায়নে পরিকল্পনার ঘাটতি ফল।
কিন্তু বিবিসির সঙ্গে কথা বলা অন্তত তিনজন ইন্ডিগো পাইলট বলেছেন, ‘এ সংকটের গভীরে রয়েছে ব্যয় সাশ্রয়ের চেষ্টা, এমনকি তা পাইলটদের কম বিশ্রামের বিনিময়ে হলেও।’
দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোম্পানিতে কর্মরত একজন পাইলট বলেন, ‘অনেক শিল্পে ওভারটাইম হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু ফ্লাইটে নিরাপত্তাই মূল এবং ক্লান্তি এখানে নীরব ঘাতক। কখন যে এর প্রভাব পড়ে, টেরই পাওয়া যায় না।’
ব্যয় কমানোর প্রবণতার পাশাপাশি নতুন আন্তর্জাতিক রুট চালুর মতো দ্রুত সম্প্রসারণও ব্যবস্থাপনাকে ‘উপেক্ষা করতে বাধ্য করেছে বলে মন্তব্য করেন বর্তমানে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলা এয়ারলাইন এয়ার ডেকান এর প্রতিষ্ঠাতা জি আর গোপীনাথ।
তিনি লেখেন, ৬০ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী ইন্ডিগো এখন প্রায় একাধিপত্য বিস্তার করেছে, যা আসলে উদাসীনতা ডেকে আনে।
গত ১৫ বছরে জেট এয়ারওয়েজ, কিংফিশার, গোএয়ারসহ বহু ভারতীয় এয়ারলাইন বাড়তি জ্বালানি মূল্যের চাপ ও ঋণে ধসে পড়ে। প্রতিযোগীরা একে একে হারিয়ে সরে যাওয়ায় ছোট শহর ও দ্বিতীয় পর্যায়ের রুটে সম্প্রসারণ করে ইন্ডিগো দ্রুত বাজার দখল করে।
এভাবে বাজারের যে পরিবর্তন এসেছে, তা ইন্ডিগোকে এমন এক অবস্থানে এনেছে যা কয়েক দশক ধরে কোনো ভারতীয় এয়ারলাইনের ছিল না।
টানা তিন বছর ধরে সাংবাদিক হত্যায় শীর্ষে আছে ইসরায়েল। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরে গাজায় ২৯ জন সাংবাদিক ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ডিসেম্বর) এএফপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্যারিসভিত্তিক সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, এ বছর বিশ্বজুড়ে ৬৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ছিল ৬৬।
নিহতদের ৪৩ শতাংশই ইসরায়েলি সেনার হামলায় নিহত হয়েছেন। যার ফলে, ইসরায়েলকে ‘সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় শত্রু’ আখ্যা দেয় আরএসএফ।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিহতদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এ বছর সাংবাদিকদের ওপর হামলার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২৫ আগস্ট। গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনা হামলা চালালে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স ও এপির দুই প্রদায়কসহ মোট পাঁচ সাংবাদিক নিহত হন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় গণহত্যামূলক হামলা শুরুর পর সব মিলিয়ে ২২০ সাংবাদিক ইসরায়েলি সেনার হাতে প্রাণ দিয়েছেন।
আরএসএফের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যায় টানা তিন বছর ধরে শীর্ষে আছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পরের অবস্থানে আছে মেক্সিকো। ২০২৫ সালে গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক নিহত হন। বামপন্থি প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবম সাংবাদিকদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও চলতি বছরে নয়জন সাংবাদিক নিহত হন।
তালিকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দেশ ইউক্রেন ও সুদান। দেশ দুটিতে যথাক্রমে তিন ও চারজন সাংবাদিক নিহত হন।
২০১২ সালে একক বছর হিসেবে সর্বোচ্চ ১৪২ সাংবাদিক নিহত হন। ওই বছর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এই অস্বাভাবিক সংখ্যার জন্য মূলত দায়ী।
আরএসএফের প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে কারাবন্দি সাংবাদিকদের সংখ্যাও প্রকাশ করেছে।
সাংবাদিকদের আটকে রাখার দিক দিয়ে শীর্ষ দেশগুলো হলো চীন (১২১), রাশিয়া (৪৮) ও মিয়ানমার (৪৭)।
২০২৫ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ করা তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ৪৭টি দেশে ৫০৩ জন সাংবাদিককে আটক রাখা হয়েছে।
সুদানের বিমান বাহিনী দেশটির আবাসিক এলাকা, বাজার, স্কুল ও বাস্তুচ্যুতদের শিবির লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। এতে অন্তত ১,৭০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। গৃহযুদ্ধ চলাকালে সেখানে বিমান হামলা নিয়ে এক তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
‘সুদান উইটনেস প্রজেক্ট’ বলেছে, সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সাম্প্রতিকতম লড়াইয়ে সরকারি বাহিনী (এসএএফ) যেসব বড় বড় বিমান হামলা চালিয়েছে এবং তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেসব তথ্য নিয়ে তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করেছে তারা।
তাদের বিশ্লেষণ দেখায়, বিমান বাহিনী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আনগাইডেড (নিয়ন্ত্রণহীন) বোমা ব্যবহার করেছে। আনগাইডেড বোমা বলতে এমন বোমা বোঝানো হয়, যা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে ছোড়া হয় না; বরং আকাশ থেকে ফেলার পর সেটি যেকোনো এলাকায় পড়তে পারে। এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।
সুদান উইটনেস প্রজেক্ট শুধু যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালানোর ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর হাতে যুদ্ধবিমান আছে। কিন্তু তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে কোনো যুদ্ধবিমান নেই।
আরএসএফ আকাশ থেকে হামলা চালাতে ড্রোন ব্যবহার করেছে। কিন্তু এ গবেষণায় ড্রোন হামলায় হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
প্রজেক্ট পরিচালনাকারী মার্ক স্নুক বলেন, ‘আমার মনে হয় এসএএফকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়া উচিত।’
বিবিসির মন্তব্য জানতে চাওয়া অনুরোধের জবাব দেয়নি এসএএফ। তবে তারা পূর্বে দাবি করেছে যে তারা কখনো বেসামরিকদের লক্ষ্য করে না-তাদের বিমান হামলা শুধু আরএসএফের সমাবেশ, অবস্থান ও ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে, যেগুলো বৈধ সামরিক লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত।
সুদান উইটনেস হলো সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেজিলিয়েন্সের (সিআইআর) পরিচালিত একটি উদ্যোগ, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রকাশের কাজ করে। এ প্রকল্পের জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তহবিল পেয়েছে তারা।
বিবিসি ওই গবেষণা প্রতিবেদনের একটি আগাম অনুলিপি হাতে পেয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদান উইটনেস ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত ৩৮৪টি বিমান হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে। এসব হামলায় ১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষ নিহত ও ১ হাজার ১২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ও আহত উভয় সংখ্যাই আরও বেশি হতে পারে। কারণ, তারা সর্বনিম্ন সংখ্যা ধরে এ হিসাব করেছে।
সুদান উইটনেস যে ৩৮৪ ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে, তার মধ্যে ৩৫টি ঘটনায় বোমাবর্ষণ করা হয় বাজার বা বাণিজ্যিক স্থাপনায়। হামলার সময় ওই সব স্থানে মানুষের ভিড় ছিল। আর ১৯টি হামলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
সুদান উইটনেস স্বীকার করেছে, তাদের গবেষণা অসম্পূর্ণ। কারণ, তাদের ফলাফল মোট হামলার সংখ্যার ভিত্তিতে নয়; বরং তাদের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
কনফ্লিক্ট ইনসাইটস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাস্টিন লিঞ্চ বিবিসিকে বলেন, ‘সুদানের সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকরাই আরএসএফ ও এসএএফের মধ্যেকার লড়াইয়ের প্রধান শিকার।’
তিনি বলেন, ‘সুদানের সংঘাত মূলত বেসামরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বিমান শক্তি ও ভারী অস্ত্র বেসামরিকদের ওপরই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে, সামরিক লক্ষ্যবস্তুর চেয়ে।’
জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাছাড়া বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন অন্তত ২ হাজার বাড়ির হাজারো বাসিন্দা। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে এসব তথ্য জানায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
গত সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিটে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে পড়ে সড়ক, অনেক বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায় ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শীতের রাতে হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। প্রথমে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৬ বলা হলেও পরে তা সংশোধন করা হয়।
জাপানের আবহাওয়া দপ্তর (জেএমএ) বলেছে, আগামী কয়েক দিনে একই মাত্রা বা আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি জানিয়েছেন, অওমোরি উপকূলের এই ভূমিকম্পে ৩০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা গুরুতর। ভূমিকম্পের পর ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সুনামি ঢেউ দেখা যায়।
জানা গেছে, এই ভূমিকম্পে হোক্কাইদো অঞ্চলে আহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশটির অগ্নিনির্বাপণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, অনেক এলাকায় রাস্তার গায়ে বড় বড় ফাটল দেখা গেছে, কোথাও গাড়ি ধসে যাওয়া গর্তে পড়ে গেছে, আর ভবনের জানালা ভেঙে কাচ ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারি মুখপাত্র মিনোরু কিহারা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে একাধিক বাড়িতে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেলেও পরে একটি বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনা নিশ্চিত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানান, মাটি প্রায় ৩০ সেকেন্ড তীব্রভাবে কেঁপেছিল। একই সঙ্গে স্মার্টফোনে সতর্ক সাইরেন বাজতে থাকে।
অওমোরির হাসিকামি এলাকার বাসিন্দা ডাইকি শিমোহাতা জানান, কম্পনটি ছিল আমাদের জীবনে সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে সবকিছু কাঁপছিল। আমরা দুই বছরের মেয়ে আর এক বছরের ছেলেকে বুকে চেপে ধরে ছিলাম। এই ঘটনায় ২০১১ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা মনে পড়ে যায়।
ভূমিকম্পের পর ২৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, অনেক অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র দ্রুতই পূর্ণ হয়ে যায়।
এদিকে, শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রায় ২৭০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। যদিও গতকাল মঙ্গলবার সকালে অধিকাংশ এলাকাতেই বিদ্যুৎ ফিরে আসে। মাত্র ৪০টির মতো বাড়িতে সংযোগ বিঘ্নিত থাকে।
প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি নাগরিকদের সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহ আবহাওয়া অফিস কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্দেশ শুনুন। ঘরের ভারী আসবাবপত্র ঠিকভাবে স্থির আছে কি না দেখুন ও আবার কম্পন অনুভব করলে দ্রুত সরে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখুন।
জাপানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি
জাপানে ২০১১ সালের ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে আঘাত হানার পর সৃষ্ট সুনামি ১৮,৫০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় ও ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
চারটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করায় জাপান বিশ্বে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি। দেশটিতে বছরে ১৫০০টিরও বেশি কম্পন অনুভূত হয়।
এ বছর জানুয়ারিতে সরকারি একটি প্যানেল জানায়, জাপানের দক্ষিণের নানকাই ট্রাফ এলাকায় আগামী ৩০ বছরের মধ্যে শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ৭৫-৮২ শতাংশ। মার্চে সরকারের নতুন হিসাব বলছে, এমন ‘মেগা ভূমিকম্প’ ও সুনামিতে ২ লাখ ৯৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ও ২ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে।
ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী আফটারশকের আশঙ্কা
জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর এলাকাটিতে শক্তিশালী আফটারশকের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, উপকূল থেকে প্রায় ৪৪ মাইল দূরে, প্রায় ৩৩ মাইল গভীরে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি। কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দূরে রাজধানী টোকিওতে ৩০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভূমিকম্পের আগে জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সি (জেএমএ) সতর্ক করেছিল যে, চলতি সপ্তাহে আট বা তার চেয়েও বেশি মাত্রার বড় ভূমিকম্প ঘটতে পারে। যদিও এটি সত্য হওয়ার আশঙ্কা তারা এক শতাংশ বলে উল্লেখ করেছিল, তবু নিজেদের জীবন রক্ষায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল সংস্থাটি।
ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কতা
ভূমিকম্পের পরপরই হোক্কাইডো, আওমোরি ও ইওয়াতে উপকূলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। তবে আশঙ্কার তুলনায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কম ছিল। ইওয়াতের কুজি বন্দরে ২ দশমিক ৩ ফুট, আর আওমোরি ও হোক্কাইডোতে ১ দশমিক ৩ ফুট উচ্চতার সুনামি ঢেউ পর্যবেক্ষণ করা হয়।
কয়েক ঘণ্টা পর সতর্কতাটি কমিয়ে সুনামি পরামর্শ জারি করা হয় এবং গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেটিও তুলে নেওয়া হয়।
পরিবহন ও বিদ্যুৎব্যবস্থায় বিঘ্ন
জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি জানান, ভূমিকম্পে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন এবং আরও শক্তিশালী ঝাঁকুনি (আফটারশক) আসার আশঙ্কা রয়েছে। একই সময় প্রধান ক্যাবিনেট সচিব মিনোরু কিহারা জানান, আওমোরিতে আগুন লাগার ঘটনা এবং বেশ কিছু জায়গায় আহতের খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পে আওমোরি ও ইওয়াতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। ফুকুশিমা থেকে আওমোরি পর্যন্ত দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু মহাসড়কও বন্ধ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আওমোরির মুত্সু শহরে একটি হোটেলসহ বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একটি গাড়ি ভেঙে যাওয়া সড়কে আটকে আছে।
তবে কিহারা জানিয়েছেন, হিগাশিদোরি ও ওনাগাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোন অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। অন্যান্য স্থাপনাগুলোও পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতুন করে সংশোধিত শান্তি পরিকল্পনা জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন। কেননা, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, রাশিয়ার কাছে কোন ধরনের ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া হবে না।
ইউরোপীয় ও ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেন, ‘ইউক্রেনের কোন অংশ ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনে, সংবিধানে, আন্তর্জাতিক আইনে কোথাও এর অনুমতি নেই। নৈতিকভাবেও আমরা তা করতে পারি না।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সীমান্ত পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হলে জনগণের গণভোটের প্রয়োজন হবে।
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র–ইউক্রেনের গোপন বৈঠকে যে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল, তা কিয়েভ গ্রহণ না করায় এই সংশোধিত পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।
ডাউনিং স্ট্রিট বৈঠক
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেরৎসের সঙ্গে ডাউনিং স্ট্রিটে এক জরুরি বৈঠকে অংশ নেন জেলেনস্কি। বৈঠকে নেতারা ইউক্রেনের প্রতি অব্যাহত সমর্থন এবং ‘ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর জোর দেন।
জেলেনস্কি বর্তমানে ইউরোপ সফরে রয়েছেন। তিনি ব্রাসেলসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে আলোচনা হবে। এসব বৈঠকের লক্ষ্য- যেকোনো শান্তিচুক্তি হলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে সক্ষম একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন।
এদিকে মস্কো দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের আলাপ ‘গঠনমূলক’ ছিল। যদিও ক্রেমলিনের অবস্থানে প্রকাশ্য কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তির পথে প্রধান বাধা জেলেনস্কিই’। এছাড়া তিনি হতাশা প্রকাশ করে জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এখনো প্রস্তাবটি পড়েও দেখেননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এও দাবি করেন, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ‘সমস্যা নেই’ বলে জানিয়েছে।
ইউক্রেনের আরও দুটি এলাকা দখলের দাবি রাশিয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেনের আরও দুটি এলাকা দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। খারকোভ ও দোনেৎস্কের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দুটি বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।
অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাইডেড বোমা, ড্রোন ও কিনঝাল মিসাইল ছুঁড়েছে সেনারা। ইউক্রেনের যোগাযোগ ও সামরিক অবকাঠামো এবং জ্বালানি ডিপো ধ্বংস করা হয়েছে।
দোনেৎস্কের দিমিত্রোভ এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে বলেও দাবি করেছে। গ্রিশিনো এলাকা থেকে পিছু হটেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। যদিও পুতিন বাহিনীর কাছে নতুন করে ভূখণ্ড হারানোর কথা স্বীকার করেনি কিয়েভ।
প্রতিরক্ষা লাইনে লড়াই অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড জানিয়েছে, পোক্রোভোস্কে রুশ সেনাদের লক্ষ্য করে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে তারা। মিরনোরাদ থেকে পিছু হটেছে রুশ সেনারা। খারকিভের একটি বাঁধ ঘিরেও রুশ সেনারা আটকা পড়েছে বলে দাবি কিয়েভের।
ভারতের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার হোয়াইট হাউজের এক বৈঠকে তিনি জানান, ভারত থেকে চাল ও কানাডা থেকে সার আমদানির ওপর তার প্রশাসন নতুন শুল্ক আরোপ করতে পারে। কারণ, দুদেশের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনায় কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি, বরং স্থবির হয়ে আছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সোমবারের বৈঠকে ট্রাম্প মার্কিন কৃষকদের জন্য কয়েকশো কোটি ডলারের কৃষি ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করেন ও একই সঙ্গে ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে কৃষিপণ্য আমদানির তীব্র সমালোচনা করেন।
রিপাবলিকান এই নেতা অভিযোগ করেন, কৃষিপণ্য আমদানি যুক্তরাষ্ট্রের দেশীয় উৎপাদকদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তিনি আবারও স্পষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের রক্ষায় তিনি শুল্ককে আক্রমণাত্মকভাবে ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর। তার ভাষায়, প্রশাসন মার্কিন কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন অর্থাৎ ১২০০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহায়তা দেবে। আর এই অর্থায়ন আসবে বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করছে, সেখান থেকে।
ট্রাম্প বলেন, আমরা সত্যিই ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য নিচ্ছি, যদি একটু ভেবে দেখেন। তিনি অভিযোগ করেন, বহুদেশ এমনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সুযোগ নিয়েছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
তিনি আরও দাবি করেন, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মুদ্রাস্ফীতি ও নিম্ন পণ্যমূল্যের প্রভাবে বিপর্যস্ত খামার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতেই এই সহায়তা অপরিহার্য। তার মতে, কৃষকরা অপরিহার্য জাতীয় সম্পদ ও যুক্তরাষ্ট্রের মেরুদণ্ড। মার্কিন কৃষিকে পুনরুজ্জীবিত করতে শুল্ককে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
দীর্ঘ আলোচনায় চাল আমদানি প্রসঙ্গ উঠলে ভারতকে প্রধান উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। লুইজিয়ানার এক উৎপাদক বলেন, ভারতীয় চাল দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের জন্য ‘ধ্বংসাত্মক’ হয়ে উঠছে। এরপর ট্রাম্পকে জানানো হয়, মার্কিন খুচরা বাজারে বিক্রি হওয়া চালের সবচেয়ে বড় দুটি ব্র্যান্ডই ভারতীয় কোম্পানির মালিকানাধীন। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ঠিক আছে, আমরা এটা দেখছি। এটা খুবই সহজ শুল্ক আরোপ করলে দুই মিনিটেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি আরও যোগ করেন, তাদের (ভারত) ডাম্পিং করা উচিত নয় আমি এটা শুনেছি, অন্যদের কাছ থেকেও শুনেছি। এটা চলতে পারে না।
এ সময় ট্রাম্প কানাডা থেকে আসা সারের ওপরও সম্ভাব্য কঠোর শুল্কের ইঙ্গিত দেন, যাতে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো যায়। তার ভাষায়, অনেক সারই আসে কানাডা থেকে। প্রয়োজন হলে এর ওপর খুবই কঠোর শুল্ক দেবো, কারণ এভাবেই আপনারা এখানে উৎপাদন জোরদার করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই এটা এখানেই করতে পারি।
গত এক দশকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাসমতি, অন্যান্য চালজাত পণ্য, মসলা ও সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি করে ভারত। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাদাম, তুলা ও ডাল কেনে ভারত। তবে ভর্তুকি, বাজার প্রবেশাধিকার ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অভিযোগ, বিশেষ করে চাল ও চিনি সংক্রান্ত বিরোধ দুদেশের আলোচনায় নিয়মিত চাপ সৃষ্টি করছে।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং নবগঠিত প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস) ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ভারতকে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে কোনো সংঘাত হলে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভারতের কোনো ‘ভুল ধারণা’ রাখা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, আগামীতে পাকিস্তানের জবাব হবে আরও দ্রুত ও অনেক বেশি তীব্র।
সোমবার রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) আয়োজিত এক গার্ড অব অনার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ হিসেবে তার নিয়োগ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে ফিল্ড মার্শাল মুনির নবগঠিত ডিফেন্স ফোর্সেস হেডকোয়ার্টারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান বিশ্বে সামরিক পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং হুমকিগুলো বহুমাত্রিক রূপ নিচ্ছে। তাই স্থল, নৌ ও বিমান—এই তিন বাহিনীর সমন্বয়ে বহুমাত্রিক সামরিক সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করেন যে, নতুন কাঠামোর অধীনে প্রতিটি বাহিনী তাদের নিজস্ব কার্যক্রম, স্বায়ত্তশাসন ও স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেই কাজ করবে। তবে ডিফেন্স ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার একীভূত উচ্চ নেতৃত্বের অধীনে তিন বাহিনীর অপারেশন সমন্বয় ও সুশৃঙ্খল পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ফিল্ড মার্শাল মুনিরের এই বার্তা এবং পাকিস্তানের সামরিক কাঠামোর এই পরিবর্তন নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তুমুল আলোচিত সেই ভাড়ার বাসা ছেড়ে অবশেষে শহরের ঐতিহাসিক ‘গ্রেসি ম্যানশনে’ ওঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ১ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর তিনি সস্ত্রীক ম্যানহাটনের ইস্ট নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাসাদে উঠবেন। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে মামদানি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি বর্তমানে কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় একটি ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার এই বাসাটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। মামদানির মূল প্রতিশ্রুতি ছিল বাসা ভাড়া না বাড়ানো। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো অভিযোগ করেছিলেন, বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ মামদানির সন্তান হয়েও মামদানি একটি ‘রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড’ বা নিয়ন্ত্রিত ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্ট দখল করে আছেন। বর্তমানে ওই অ্যাপার্টমেন্টের জন্য তিনি মাসে প্রায় ২ হাজার ৩০০ ডলার ভাড়া দেন, যেখানে নিউইয়র্কে এক বেডরুমের বাসার গড় ভাড়া প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডলার।
সোমবার এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মামদানি জানান, গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক বোটানিক্যাল গার্ডেনের ট্রেন শোতে গিয়ে তিনি তার নতুন বাসভবনটি দেখেন। এরপরই তিনি এবং তার স্ত্রী রামা জানুয়ারিতে সেখানে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন। বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, পরিবারের নিরাপত্তা এবং নিউইয়র্কবাসীর জন্য সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করার এজেন্ডায় পূর্ণ মনোযোগ দিতেই এই স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অ্যাস্টোরিয়ায় আর না থাকলেও, অ্যাস্টোরিয়া সব সময় আমার ভেতরে এবং আমার কাজের মধ্যে বেঁচে থাকবে।’
১৭৯৯ সালে নির্মিত ‘গ্রেসি ম্যানশন’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়রদের ঐতিহ্যবাহী বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাখনের মতো হলুদ রঙের দেওয়াল, সবুজ জানালা ও সাদা রেলিংয়ের এই প্রাসাদে পাঁচটি শয়নকক্ষ রয়েছে। তবে এই ঐতিহাসিক ভবনটি নিয়ে রয়েছে নানা ভৌতিক গল্প। সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর স্ত্রী চিরলেন ম্যাকক্রে জানিয়েছিলেন, এখানে দরজা নিজে নিজেই খুলে যায় ও বন্ধ হয় এবং মেঝের কাঠে ভুতুড়ে শব্দ হয়। এমনকি বিদায়ী মেয়র এরিক অ্যাডামসও ২০২২ সালে বলেছিলেন, ‘ওখানে ভূত আছে।’ তবে এসব কথায় তিনি কান দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন অ্যাডামস।
জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর মামদানি তার ছোট অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে এই ঐতিহাসিক ও কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত প্রাসাদে নতুন জীবন শুরু করবেন।
সূত্র: বিবিসি।
পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায় প্রস্তাবিত ‘বাবরি’ মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অনুদান আসতে শুরু করেছে। স্থানীয় বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ এতটাই মুক্তহস্তে দান করছেন যে, টাকা রাখার জন্য ১১টি বড় ট্রাঙ্ক পূর্ণ হয়ে গেছে। অনুদানের এই বিশাল অঙ্কের টাকা গুনতে অন্তত ৩০ জন লোক এবং টাকা গোনার মেশিন নিযুক্ত করা হয়েছে।
গত ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনটিতেই বেলডাঙায় এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেদিন প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জন্য শাহী বিরিয়ানির আয়োজন করেছিলেন হুমায়ুন কবির। সভাস্থলে ১১টি স্টেনলেস স্টিলের দানবাক্স রাখা হয়েছিল। মসজিদটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে, যার মধ্যে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি একাই ৮০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রোববার সন্ধ্যা থেকে আলেম-উলামাদের উপস্থিতিতে এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া’-এর সহায়তায় টাকা গণনা শুরু হয়। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি সম্প্রচার বা লাইভ করা হচ্ছে।
গণনা কার্যক্রমের প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মাত্র চারটি বাক্স ও একটি বস্তা গুনে নগদ ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া অনলাইনে কিউআর কোড স্ক্যান করে জমা পড়েছে আরও ৯৩ লাখ টাকা। বাকি সাতটি দানবাক্সের গণনা সোমবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে। বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করছে, অনুদানের পরিমাণ প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে এবং বিদেশ থেকেও অর্থ সহায়তা আসছে। এই বিপুল অর্থ সংরক্ষণের জন্য সিসি ক্যামেরাসহ কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের এই মসজিদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও নামটির আবেগে সাড়া দিয়েছেন অনেকে। তবে এই মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরকে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পর তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবলেও ভোটারদের আপত্তির মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। কোটিপতি এই বিধায়ক জানিয়েছেন, শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, বীরভূম ও মালদহ জেলা থেকেও একই নামে মসজিদ তৈরির প্রস্তাব আসছে, যা তিনি বিবেচনায় রেখেছেন।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তানকে সহায়তা হিসেবে আরও ১২০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির দ্বিতীয় দফার পর্যালোচনা শেষে মঙ্গলবার আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড এই ঋণ ছাড়ের সিদ্ধান্ত জানায়। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুমোদিত ঋণের মধ্যে ১০০ কোটি ডলার নিয়মিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং বাকি ২০ কোটি ডলার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলার অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে।
এর আগে ২০২৪ সালে আইএমএফ পাকিস্তানকে দুই দফায় মোট ৩৩০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল, যা ৩৭ মাসের কিস্তিতে পরিশোধের শর্ত ছিল। নতুন অনুমোদিত এই ১২০ কোটি ডলার সেই ঋণের সঙ্গেই যুক্ত হলো। গত কয়েক দশক ধরে আইএমএফের ঋণের ওপর নির্ভরশীল পাকিস্তান করোনা পরবর্তী সময়ে রিজার্ভ সংকটে পড়ে ঋণ পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। তবে সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যা সত্ত্বেও দেশটি তাদের রিজার্ভ ১ হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে, যা আইএমএফের আস্থা অর্জনে সহায়তা করেছে।
ঋণ অনুমোদনের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আইএমএফের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, এই সহায়তা প্রমাণ করে যে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংস্কার সঠিক পথে রয়েছে। সংস্কার কর্মসূচিতে সহযোগিতার জন্য তিনি দেশটির সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনিরকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে ঋণের কিস্তি নিশ্চিত করতে অর্থমন্ত্রী মুহম্মদ আওরঙ্গজেবের অক্লান্ত পরিশ্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: এএফপি, জিও নিউজ