রাশিয়ায় গত বুধবার একটি জেট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন নিহত হয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি আদৌ দুর্ঘটনা কি না তা নিয়ে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সংশয় প্রকাশ করেছে। প্রিগোজিনকে হত্যার উদ্দেশ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে রুশ বাহিনী বিমানটি ধ্বংস করে থাকতে পারে বলে পশ্চিমা নেতারা আভাস-ইঙ্গিতে তা বলার চেষ্টা করেছেন।
বিবিসি জানায়, প্রিগোজিনের মৃত্যুর গুঞ্জন নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ক্রেমলিন। সেই সঙ্গে ব্রিকস সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়াল বক্তব্যে এই বিমান দুর্ঘটনার কোনো উল্লেখ ছিল না।
আল-জাজিরা জানায়, গত বুধবার রাজধানী মস্কোর উত্তর-পশ্চিমের তিভিয়ের এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ১০ আরোহীর সবাই নিহত হন। প্রিগোজিন বিমানটির আরোহী যাত্রীদের তালিকায় ছিলেন। প্রিগোজিনের ঘনিষ্ঠ কমান্ডার দিমিত্রি উৎকিনও ওই বিমানের যাত্রীদের তালিকায় ছিলেন। রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বিমান দুর্ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে। তবে প্রিগোজিনের মরদেহ মিলেছে কি না তা নিয়ে কিছু জানায়নি।
বিবিসি জানায়, রাশিয়ার রোসাভিয়াতসিয়া বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, প্রিগোজিনের বিমানটি ছিল একটি এমব্রায়ার-১৩৫। এটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে যাচ্ছিল। বিমানটিতে সাতজন যাত্রী ও তিনজন ক্রু ছিল। বিমানটি কুঝেনকিনো নামে একটি গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হয়। এই গ্রামটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে যেতে অর্ধেক পথ পেরোনোর পর পরই অবস্থিত।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মিত্রদের একজন ছিলেন প্রিগোজিন। একসময় নিজের রেস্তোরাঁ থেকে ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহের কাজ করায় পুতিনের পাচক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন ব্যবসায়ী প্রিগোজিন। ২০১৪ সালে তিনি ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনী ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর প্রিগোজিনের ভাড়াটে যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে গিয়ে প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করা শুরু করেন। এর জের ধরে গত জুন মাসে প্রিগোজিন রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। এরপর থেকে পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় তার। পুতিন ওই বিদ্রোহকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ ও রাশিয়ার ‘পিঠে ছুরি মারা’ বলে আখ্যা দেন। শেষ পর্যন্ত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহে ক্ষান্ত দেন প্রিগোজিন। তবে পুতিন প্রিগোজিনকে সহজে ছেড়ে দেবেন না বলে অনেকেই তখন আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এদিকে ওয়াগনারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমানটিতে গুলি করে ভূপাতিত করেছে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। গ্রে জোন নামে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলের একটি পোস্টে বলা হয়, প্রিগোজিন ‘রাশিয়ার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার পদক্ষেপের ফলস্বরূপ’ মারা গেছেন। গ্রে জোন চ্যানেলটি ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। গ্রে জোন বলছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে স্থানীয় বাসিন্দারা দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছে এবং তারা দুটি জায়গায় ধোঁয়া দেখতে পেয়েছে। সংবাদ সংস্থা তাস বলেছে, বিমানটি মাটিতে পড়ার পর তাতে আগুন ধরে যায়। তারা জানায়, বিমানটি প্রায় আধা ঘণ্টারও কম সময় ধরে আকাশে উড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্তের নেপথ্যে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি দায়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বিমানটি দ্রুত মাটিতে পড়ার আগে ৩০ সেকেন্ড আগেও সেটিতে কোনো সমস্যার আভাস মেলেনি। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটায় এমন তথ্য মিলেছে।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তে প্রিগোজিনের সম্ভাব্য মৃত্যুর খবরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এ ঘটনায় তাদের কোনো দায় নেই।’ তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার নেপথ্যে কে জড়িত, তা প্রত্যেকেই জানে।’ জেলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইঙ্গিত করেই এমন মন্তব্য করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘প্রিগোজিনের মৃত্যুসংবাদে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি জানি না কী ঘটেছিল। তবে আমি অবাক হইনি। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ইশারা ছাড়া রাশিয়ায় কিছুই হয় না। কিন্তু এই ঘটনার ব্যাপারে আমি বেশি কিছু জানি না।’ রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই জেলেনস্কি সরকারের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবিগনিউ রাউ বলেছেন, ‘যারা পুতিনের ক্ষমতায় থাকার জন্য হুমকি, তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয় না।’ অন্যদিকে ফ্রান্স বলেছে, বিমান বিধ্বস্তের কারণ নিয়ে ‘যৌক্তিক সন্দেহ’ করার অবকাশ রয়েছে।
উত্তর আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে ৬.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বালখ প্রদেশের মাজার-ই-শরীফ শহরের কাছে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে অন্তত সাতজন নিহত এবং ১৫০ জন আহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার দিবাগত রাতে মাজার-ই শরীফের কাছে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ২৮ কিলোমিটার।
মাজার-ই শরীফের সামাঙ্গান এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র সামিম জয়ান্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট ১৫০ জন আহত এবং সাতজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে জানানো হবে।
নীল মসজিদের কথা উল্লেখ করে বলখ প্রদেশের মুখপাত্র হাজি জায়েদ বলেছেন, ভূমিকম্পে পবিত্র মাজার-ই-শরীফের কিছু অংশও ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার জনসংখ্যার শহর মাজার-ই-শরীফ। অনেক বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার ভয়ে মধ্যরাতে রাস্তায় ছুটে আসেন। সূত্র : আলজাজিরা
রাশিয়া ও চীনও গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও দেশ দুটি তা প্রকাশ্যে স্বীকার করছে না।
সিএবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই দাবি করেন। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে যথেষ্ট পারমাণবিক অস্ত্র আছে, যা দিয়ে পৃথিবীকে ১৫০ বার উড়িয়ে দেওয়া যাবে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
ট্রাম্পের দাবি, উত্তর কোরিয়া একমাত্র দেশ নয় যারা পারমাণবিক পরীক্ষা চালাচ্ছে। রাশিয়া ও চীনও তা করছে, কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। রোববার সিএবিএস নিউজের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ৬০ মিনিটস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “রাশিয়া পরীক্ষা চালাচ্ছে, চীনও চালাচ্ছে— কিন্তু তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না।”
সাক্ষাৎকারে উপস্থাপিকা নোরা ও’ডনেল তাকে বলেন, বর্তমানে কেবল উত্তর কোরিয়াই পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করছে। তখনই ট্রাম্প পাল্টা মন্তব্য করে এই দাবি করেন। মূলত কয়েকদিন আগেই ৩০ বছরের বেশি সময় পর আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “অন্য দেশগুলো পরীক্ষা চালাচ্ছে। আমরাই একমাত্র দেশ যারা এই পরীক্ষা করি না। আমি চাই না যে আমরা একমাত্র দেশ হয়ে থাকি যারা পরীক্ষা চালায় না।”
তিনি আরও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে তা পরীক্ষা না করা বাস্তবসম্মত নয়। ট্রাম্প প্রশ্ন তোলেন, “আপনি অস্ত্র বানালেন, কিন্তু পরীক্ষা করলেন না— তাহলে জানবেন কীভাবে এটা কাজ করে কিনা?”
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তি নিয়েও গর্ব প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে বিশাল পারমাণবিক শক্তি আছে— যা আর কোনো দেশের নেই। রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে, আর চীন অনেক পিছিয়ে। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা সমান পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের পর্যাপ্ত পারমাণবিক অস্ত্র আছে, যা পৃথিবীকে ১৫০ বার উড়িয়ে দেওয়ার মতো। রাশিয়ারও অনেক আছে, আর চীনও দ্রুত এগোচ্ছে।”
হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী হামলার হুঁশিয়ারি দিল ইসরায়েল। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রতিক এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় চারজন নিহত হওয়ার পরদিনই রোববার এমন ঘোষণা দিল দেশটি।
২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ইসরায়েল ও লেবাননের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর রয়েছে, তবুও ইসরায়েলি সেনারা এখনো দক্ষিণ লেবাননের অন্তত পাঁচটি এলাকায় অবস্থান করছেন ও নিয়মিত হামলা চালাচ্ছেন।
রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেন, হিজবুল্লাহ আগুন নিয়ে খেলছে, আর লেবাননের প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছেন। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা ও দক্ষিণ লেবানন থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে লেবানন সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সর্বোচ্চ মাত্রায় অভিযান চালাচ্ছি ও তা আরও জোরদার হবে। আমাদের উত্তর সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস নয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে আবার অস্ত্র মজুতের চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি লেবানন সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে অর্থাৎ হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করবে।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, লেবানন যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে, তাহলে আমরা আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করব। লেবাননকে আমরা আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে দেবো না; প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে সীমান্তে রকেট হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। এতে উত্তর ইসরায়েলের হাজারো বাসিন্দাকে কয়েক মাস ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়। টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তেজনা চলার পর দুই মাসব্যাপী খোলা যুদ্ধের মুখে পড়ে দুই পক্ষ, যার অবসান ঘটে গত বছরের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
তবে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েল লেবাননে বিমান হামলা বন্ধ করেনি। বরং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তা আরও বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি স্থলবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে এক প্রাণঘাতী অভিযানে যায়, যার পর লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আওন সেনাবাহিনীকে এমন অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।
গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধবিরতির পর আওন ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কিন্তু পরে তিনি অভিযোগ করেন, তার আলোচনার প্রস্তাবের জবাবে ইসরায়েল ও হামলা আরও বাড়িয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত শনিবার নাবাতিয়ে জেলায় ইসরায়েলি হামলায় চারজন নিহত হয়।
লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানায়, ইসরায়েলি সেনারা নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একটি গাড়িতে হামলা চালায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তাদের দাবি, নিহত ব্যক্তি হিজবুল্লাহর রাদওয়ান ইউনিটের সদস্য ছিলেন, যিনি অস্ত্র পরিবহন ও দক্ষিণ লেবাননে গোষ্ঠীটির সামরিক অবকাঠামো পুনর্গঠনে যুক্ত ছিলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ইসরায়েল ও এর নাগরিকদের জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করেছিল ও ইসরায়েল-লেবাননের মধ্যে হওয়া সমঝোতার স্পষ্ট লঙ্ঘন ছিল।
ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও, গোষ্ঠীটি এখনো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং আর্থিকভাবে টিকে আছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করে। এসময় সংগঠনের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হন।
যুদ্ধবিরতির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র লেবানন সরকারকে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্র করার জন্য চাপ দিচ্ছে। যদিও গোষ্ঠীটি ও তাদের মিত্ররা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।
লেবানন সরকার জানিয়েছে, দেশজুড়ে অস্ত্রের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ও এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে।
ফিলিস্তিনিদের মাধ্যমে গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা নিশ্চিত ও প্রশাসন গড়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ছয় মুসলিম দেশ। তুরস্কের উদ্যোগে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
রোববার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সোমবার ইস্তাম্বুলে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে গাজার নিরাপত্তা ও প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের হাতে দ্রুত হস্তান্তরের জন্য আহ্বান জানাবেন। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এই বৈঠকে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যোগ দেবেন।
সূত্রটি জানিয়েছে, ফিদান বৈঠকে মুসলিম দেশগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরবেন। বর্তমান যুদ্ধবিরতি একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তিতে রূপ দিতে এটি করা হবে। ইস্তাম্বুলে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো এর আগে সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠক করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও ইসরায়েলের গাজা থেকে প্রত্যাহারের সময়সূচির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনির্ধারিত রয়ে গেছে। ফলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সময় সময় সহিংসতা পুনরায় দেখা দিচ্ছে।
সূত্রটি জানায়, ফিদান বৈঠকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ভাঙার অজুহাত তৈরির বিষয়টি তুলে ধরা হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের ‘উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে আহ্বান জানানো হবে।
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা সূচির মধ্যে গাজায় প্রবেশ করা মানবিক সহায়তার অপ্রতুলতা এবং ইসরায়েল এই বিষয়ে নিজ দায়িত্ব পালন না করার বিষয়টিও রয়েছে।
‘নতুন গাজা’ নির্মাণের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্ভাব্য দাতাদের কাছে যে প্রধান প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে, তার মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে—গাজার পূর্বাংশ যেটি বর্তমানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; সেখানে প্রায় অর্ধ ডজন আবাসিক অঞ্চল নির্মাণ করতে চায় তারা। এ তথ্যটি আরব কূটনৈতিক সূত্র দ্য টাইমস অব ইসরায়েলকে জানিয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা এই প্রকল্পটিকে ‘নিউ গাজা’ নামে উল্লেখ করছেন, যা ‘ইয়োলো লাইন’-এর পূর্বদিকে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ‘ইয়োলো লাইন’ হচ্ছে নতুন সীমারেখা, যেখানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর, অর্থাৎ ১০ অক্টোবর আংশিকভাবে সরে যায়।
এই আংশিক প্রত্যাহারের ফলে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ পায় ইসরায়েল। তবে ট্রাম্পের যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল ধীরে ধীরে গাজার সীমান্তের অপর প্রান্তে সরে যাবে এবং গাজা ছাড়বে।
তবে এই প্রত্যাহার দুটি কঠিন শর্তের উপর নির্ভর করছে—একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন, যা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিরাপত্তা বজায় রাখবে এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ—যা এখন পর্যন্ত হামাস কোনো আগ্রহ দেখায়নি।
এই দুই শর্তই বাস্তবায়ন করা কঠিন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা না করে পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করতে চায়।
সোজা আঙুলে ঘি তোলার চেষ্টা দীর্ঘ দিন হয়েছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। এবার কি তাই আঙুল বাঁকানোর কথা ভাবছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন?
সম্প্রতি রাশিয়া পর পর দুটি পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। তার পরেই এই জল্পনা শুরু হয়েছে। কেন এই সময় হঠাৎ এই ধরনের অস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করতে গেল ক্রেমলিন?
ট্রাম্পকে কি পরোক্ষে কোনও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে? নাকি সবটাই কাকতালীয়?
আমেরিকার কাছে দূরপাল্লার শক্তিশালী টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক দিন ধরে চেয়ে এসেছে ইউক্রেন। ওই অস্ত্র হাতে পেলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ আরও সহজ, আরও ধ্বংসাত্মক হবে।
ট্রাম্প এখনো তাতে সায় দেননি। তবে সম্প্রতি পেন্টাগন টমাহকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হলে আমেরিকার কোনও সমস্যা হবে না।
যদিও রাজনৈতিক দিক বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্পই। অনেকের মতে, টমাহক নিয়েই আসলে ট্রাম্পকে চাপে রাখতে চান পুতিন। তাই এই নয়া কৌশল।
রাশিয়া কিছু দিন আগে বুরেভেস্টনিক ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে পরীক্ষা করেছে। এটি একটি পরমাণু অস্ত্রবাহী রাশিয়ান ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা খুব কম উচ্চতায় উড়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।
এর পর গত বুধবার পোসেইডন-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণও সফল হয়েছে। পোসেইডন একটি দূরপাল্লার পরমাণু অস্ত্রবাহী ড্রোন, যা সমুদ্রের নিচ দিয়ে লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে।
উভয় অস্ত্রের সফল পরীক্ষার কথাই ঘোষণা করেছেন পুতিন নিজে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে দাবি, এই ধরনের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ আসলে অনেক আগেই পরিকল্পিত ছিল।
সময় বুঝে তা কার্যকর করল মস্কো। ট্রাম্পকে বিশেষ বার্তা দিতে চাওয়ার জল্পনাও তাতে জোরদার হলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে রাশিয়া হঠাৎ এই ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করে আমেরিকাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছে তাদের ক্ষমতা। তারাও যে পরমাণু শক্তিধর, তা বোঝানো হচ্ছে।
টমাহক নিয়ে অবশ্য পৃথক বার্তা দিয়েছে ক্রেমলিন। রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম তাস-এ রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র দিলে আদতে তাতে কোনও লাভ হবে না। যুদ্ধের কোনও সমাধান হবে না।
আমেরিকার গদিতে বসার আগে থেকেই ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিনি অনায়াসে থামিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এখনো তার কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।
একাধিক বৈঠক, ফোনালাপ ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাম্প প্রকাশ্য়েই জানিয়েছেন, তিনি হতাশ। কিছু দিন আগে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠক আয়োজন করা যায়নি।
ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধ থামার বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি মিললে তবেই তিনি আবার পুতিনের মুখোমুখি বসবেন। তা না হলে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনো আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ রয়েছে। এর মাঝেই পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের পরীক্ষা জল্পনা বাড়িয়ে দিল।
সুদানে বিদ্রোহীদের চীনা ড্রোন-কামান দিচ্ছে আরব আমিরাত। এমনটিই দাবি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সম্প্রতি চীনা ড্রোনসহ নানা ধরনের অস্ত্র সুদানের বিদ্রোহী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে সরবরাহ বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের গোয়েন্দা বিভাগ ও পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত এই অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধির তথ্য পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অস্ত্রগুলো সেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে যাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দারফুরে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আরব আমিরাত আরএসএফকে বোমা ও হাউইটজার পাঠাচ্ছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরও বলেছে, সরবরাহকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে আরব আমিরাতের অর্থায়নে কেনা উন্নত মানের চীনা তৈরি ড্রোন, হালকা অস্ত্র, ভারী মেশিনগান, যানবাহন, কামান, মর্টার ও গোলাবারুদ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত মে মাসে জানায়, আরব আমিরাত চীনের তৈরি জিবি-৫০এ গাইডেড বোমা ও ১৫৫ মিলিমিটার এইচ-৪ হাউইটজার কামান দারফুরে পাঠাচ্ছে। এই অঞ্চলে আরএসএফ সে সময় অনেকগুলো শহর অবরোধ করে রেখেছিল।
গত সপ্তাহে আরএসএফ উত্তর দারফুরের শহর এল-ফাশেরে হামলা চালায় ও পরে তারা সেখানকার বেসামরিক মানুষদের হত্যার ভিডিও প্রকাশ করে। এই অভিযানের খবর প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া শান্তি আলোচনার ভেঙে যাওয়ার পরপরই। খার্তুমে পরাজয়ের পর আরএসএফ আবার দারফুর অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করে, এই অঞ্চলেই আরএসএফের পূর্বসূরি ‘জানজাওয়িদ’ মিলিশিয়া ছিল।
মিডল ইস্ট আইয়ের জানুয়ারির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরব আমিরাত এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লিবিয়া, চাদ, উগান্ডা ও সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হয়ে আরএসএফের কাছে অস্ত্র পাঠাচ্ছে।
মার্চের পর আরব আমিরাতের অস্ত্র সহায়তা আরও বাড়ে, যখন ইরান, তুরস্ক ও মিশরের সমর্থনে সুদানি সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমের পুরো নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেয়। মে মাসে আরএসএফ আরব আমিরাতের কাছ থেকে চীনা ড্রোন ব্যবহার করে সরকার-নিয়ন্ত্রিত বন্দরনগরী পোর্ট সুদানে হামলা চালায়, যাতে তুর্কি সেনা বিশেষজ্ঞ দলের কয়েকজন আহত হন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য মতে, এখন আরব আমিরাত আরএসএফকে চীনা সরকারি ঠিকাদার ‘চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশনের’ তৈরি ‘রেইনবো সিরিজ’ ড্রোন সরবরাহ করছে, যার মধ্যে ‘সিএইচ-৯৫’ মডেলের ড্রোন ২৪ ঘণ্টা টানা উড়তে পারে ও সুনির্দিষ্ট হামলা চালাতে সক্ষম।
আরএসএফের প্রধান নেতা হলেন ‘হেমেদতি’ নামে পরিচিত মোহাম্মদ হামদান দাগালো। তিনি আরব আমিরাতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও দুবাইয়ে তার ব্যাপক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড রয়েছে। হেমেদতি ও তার পরিবার দারফুরের স্বর্ণখনি থেকে উত্তোলিত বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আরব আমিরাতের মাধ্যমে পাচার করেছে।
সুদানে আরএসএফের তাণ্ডব
সুদানের দারফুর অঞ্চলে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর এল-ফাশের শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছে। পালিয়ে বেঁচে আসা অনেকেই জানিয়েছেন খুন-ধর্ষণ-নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
প্রায় দেড় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর গত সপ্তাহে উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশের সুদানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে আরএসএফের দখলে যায়। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো এরপর থেকে বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তাওইলা শহরে পালিয়ে যাওয়া তরুণ আলখেইর ইসমাইল জানান, পালানোর সময় ৩০০ মানুষের একটি দলকে থামায় আরএসএফ সদস্যরা। এক সহপাঠী ইসমাইলকে চিনে ফেলায় কেবল তাকেই বাঁচিয়ে রাখা হয়। ‘আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণকে তারা মেরে ফেলেছিল,’ বলেন তিনি।
তাহানি হাসান নামে এক নারী বলেন, হঠাৎ তিনজন আরএসএফ সদস্য এসে আমাদের থামায়, মারধর করে, কাপড় ছুড়ে ফেলে দেয়। এমনকি আমাকেও তল্লাশি করা হয়। যারা আমাকে আঘাত করেছে, তারা আমার মেয়ের থেকেও ছোট।
ফাতিমা আবদুলরহিম বলেন, তিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে পাঁচদিন হেঁটে তাওইলায় পৌঁছেছেন। ‘তারা আমাদের ছেলেদের পেটায়, সব কিছু নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি, আমাদের পেছনের দলে থাকা মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংস্থা ইউএনএফপিএ জানিয়েছে, এল-ফাশের মাতৃত্ব হাসপাতালে গত ২৯ অক্টোবর অন্তত ৪৬০ জনকে হত্যা করেছে আরএসএফ যোদ্ধারা। নিহতদের মধ্যে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী, আশ্রয়প্রার্থী ও দর্শনার্থীও ছিলেন।
পালিয়ে আসা অনেকের বক্তব্যে জানা যায়, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে বয়স, লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয় অনুযায়ী আলাদা করে মুক্তিপণ দাবি করত। এর পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ থেকে ৩০ লাখ সুদানি পাউন্ড (প্রায় ৮-৫০ হাজার মার্কিন ডলার)। মুক্তিপণ দিতে না পারলে হত্যা করা হতো।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর হিসাব অনুযায়ী, এল-ফাশের থেকে পাঁচ দিনে মাত্র পাঁচ হাজার মানুষ তাওইলায় পৌঁছেছে, যদিও পালাতে চেয়েছিল ৬০ হাজারের বেশি। সংস্থাটির জরুরি বিভাগ প্রধান মিশেল অলিভিয়ার লাশারিতে বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, যারা আসতে পারেনি তাদের হত্যা করা হয়েছে, থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বা তাড়া করে মারা হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী উত্তর কর্ডোফান রাজ্যের বারা শহরও সম্প্রতি আরএসএফের দখলে গেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখান থেকে অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ পালিয়েছে। বারায় রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ স্বেচ্ছাসেবীকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে আরএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের মুখপাত্র মোহাম্মদ এলশেইখ বলেন, বাঁচতে পালিয়ে আসা মানুষজন ভয়াবহ অবস্থায় আছে। দিনে প্রচণ্ড গরম, রাতে কনকনে ঠান্ডা—এই মরুভূমির মধ্যে বহু কিলোমিটার হেঁটে তারা এল-ওবেইদে পৌঁছাতে চেষ্টা করছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের চাপের মুখে ইরান তাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করবে না। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্প নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তার কোনো মিত্রের সঙ্গে আলোচনা করার ইচ্ছে কিংবা পরিকল্পনা তেহরানের নেই।
শনিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই তথ্য নিশ্চিত করেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্র কিংবা তার কোনো মিত্রের সঙ্গে) আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প নিয়ে কখনও আলোচনা করব না। আমাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচিও বন্ধ হবে না। যুদ্ধ করে তারা যা অর্জন করতে পারেনি, রাজনীতির মধ্যে দিয়েও তা তারা পাবে না। ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। তবে পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব।’
কোন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে—এমন প্রশ্নের উত্তরে আরাঘচি বলেন, ‘আমাদের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করা প্রয়োজন। আমরা এই নিশ্চয়তা দিতে চাই যে আমাদের পরমাণু প্রকল্পের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো এর মধ্যেই একটি সমঝোতা চুক্তি আমরা করে ফেলতে পারতাম, কিন্তু ওয়াশিংটন আমাদের সামনে যেসব শর্ত রেখেছে—সেগুলো এককথায় অগ্রহণযোগ্য এবং অসম্ভব।’
আরাঘচি পরিষ্কার করেন, ‘আমরা সবক্ষেত্রে এখন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ইসরায়েল যদি ফের হামলা করে, তাহলে আরও একবার পরাজিত হবে। আমরা পূর্ববর্তী সংঘাতগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং ইসরায়েল যদি কোনো প্রকার আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তার ফলাফল হবে ভয়াবহ।’ পরমাণু প্রকল্প নিয়ে তেহরানের এই অনড় অবস্থানের কারণে গত মাসে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইইউ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তবে এতে ইরানে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি সরকারে মধ্যে এখনো কোনো বিচলিত মনোভাব দৃশ্যমান হয়নি।
গত ৬ জুন জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক অ্যানার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর প্রধান রাফায়েল গ্রসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে বর্তমানে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ বা বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে ৪০০ কেজি। এই শুদ্ধতার পরিমাণ ৯০ শতাংশে উন্নীত করা গেলে অনায়াসেই এই ইউরেনিয়াম দিয়ে বেশ কয়েকটি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
গত ১০ জুন রাফায়েল গ্রসির সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১২ জুন দিবাগত রাতে ইরানের পরমাণু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট স্থাপনা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। ১২ দিন ধরে সংঘাত চলার পর ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়। সংঘাতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও জাতিসংঘ জানিয়েছে, সেই ইউরেনিয়ামের কোনো ক্ষতি হয়নি এবং তা অক্ষত আছে।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের কারণে দেশ ‘অন্ধকারে’ রয়েছে। এছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘আইন-শৃঙ্খলা ও বিবেচনা-শূন্যতা’র প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। খবর সামা টিভির।
স্থানীয় সময় শনিবার ডেমোক্র্যাট দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ওবামা ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থী অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্জার এবং নিউ জার্সির মিকি শেরিলের নির্বাচনী র্যালিতে যোগ দেন। সেখানে নরফোকের ওল্ড ডমিনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্ছ্বাসিত জনতার উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
বারাক ওবামা বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমাদের দেশ এবং নীতি বর্তমানে একটি অন্ধকার জায়গায় রয়েছে। এই হোয়াইট হাউস প্রতিদিন নতুনভাবে আইন-শৃঙ্খলা-হীনতা, বিবেচনা-শূন্যতা, কু-চিন্তাশীলতা এবং নিছক পাগলামি প্রদর্শন করছে।’
ট্রাম্প নীতির সমালোচনা
সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতির বিশেষ করে, শুল্ক নীতি ও আমেরিকার শহরগুলোতে জাতীয় গার্ড মোতায়েনের কৌশলের সমালোচনা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি এসব পদক্ষেপকে ‘বিশৃঙ্খল’ ও ‘ভুলধারা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের দোষারোপ করে বলেন, তারা ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমনকি যখন তারা জানতেন তিনি (ট্রাম্প) সীমার বাইরে যাচ্ছেন।
ওবামা হোয়াইট হাউসকে হ্যালোইন’র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘এখানে যেন প্রতিদিনই হ্যালোইন — তবে সবই ধোঁকা, কোনো আনন্দ নেই।’
ট্রাম্পকে বিদ্রুপ করে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সত্যি বলতে, তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মনোযোগ দিয়েছেন — যেমন রোজ গার্ডেনের মাটি যাতে জুতো ময়লা না করুক এবং ৩ কোটি ডলারের বলরুম তৈরি করা।’
সমাপনী বক্তৃতায় ওবামা ভোটারদের ‘সত্য, সহানুভূতি এবং গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র এক রাতের মধ্যে লোপ পায় না — এটি ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় যখন মানুষ খেয়াল রাখা বন্ধ করে। আমাদের সবার দায়িত্ব হলো প্রতিরোধ করা এবং যা সঠিক তা রক্ষা করা।’
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব ইউক্রেনের পোকরোভস্ক শহর দখলে রাখতে দোনেৎস্ক অঞ্চলে ১ লাখ ৭০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। শুক্রবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, পোকরভস্কের পরিস্থিতি কঠিন। কিছু রুশ ইউনিট শহরে প্রবেশ করেছে। ধীরে হলেও আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের ধ্বংস করছে।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পূর্ব ইউক্রেনের পোকরোভস্ক শহরের দখল নিতে রুশ বাহিনীর অগ্রসরের কথা জানিয়েছিল। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল মস্কো।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, রুশ সেনারা ইউক্রেনের যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। এরই মধ্যে পোকরোভস্ক শহর দখল করা হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার ইউক্রেনের নতুন ১০ এলাকা দখলে নেওয়ার তথ্য জানিয়েছে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী, দখলকৃত এলাকাগুলো ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক, খারকিভ ও জাপোরিজ্জিয়া প্রদেশের।
ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়
ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে হোয়াইট হাউসকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন। প্রতিরক্ষা দপ্তর মনে করছে, এই সরবরাহ যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক মজুতের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন তিন মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চান না। কারণ হিসেবে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য যে জিনিসগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা কাউকে দিতে চাই না।’
পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ তাদের মূল্যায়ন হোয়াইট হাউসকে অক্টোবর মাসেই জানিয়েছিল ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের ঠিক আগে। জেলেনস্কি রাশিয়ার অভ্যন্তরে আরও কার্যকরভাবে তেল ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোয় আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করে আসছিলেন। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার।
যুক্তরাষ্ট্রের এই মূল্যায়ন ইউরোপীয় মিত্রদের উৎসাহিত করেছে। দুই ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেন, এখন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ না করার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত দেখানোর মতো তেমন আর কিছু নেই বলে তারা মনে করেন। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অনেক টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা তারা ইউক্রেনকে দিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন কয়েক দিন পর নাটকীয়ভাবে তার মনোভাব পরিবর্তন করেন, এতে মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা অবাক হন। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ‘প্রয়োজন’। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি জেলেনস্কিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেপণাস্ত্র দেবে না—অন্তত এই মুহূর্তে নয়।
মস্কোর একটি হাসপাতালে গত বুধবার ইউক্রেন যুদ্ধে আহত রুশ সৈন্যদের দেখতে গিয়েছিলেন পুতিন। এ সময় তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পসাইডন’ নামের একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডোর পরীক্ষা চালিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্ত্র বিশাল তেজস্ক্রিয় সমুদ্রঢেউ তৈরি করে উপকূলীয় অঞ্চলকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
পুতিন বলেন, ‘এর মতো অস্ত্র বিশ্বের আর কোথাও নেই।’ প্রাচীন গ্রিক পুরাণের সমুদ্রদেবতা পসাইডনের নামে নামকরণ করা এই টর্পেডো সম্পর্কে খুব বেশি বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তবে এটি মূলত একটি পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন টর্পেডো এবং ড্রোনের সংমিশ্রণ। রুশ পার্লামেন্টের এক জ্যেষ্ঠ সদস্যের ভাষায়, ‘পুরো একটি রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে সক্ষম এই অস্ত্র।’
পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডো
২০১৮ সালে প্রথমবার এই অস্ত্রের কথা প্রকাশ্যে আসে। সে সময় রুশ গণমাধ্যমের দাবি ছিল, পসাইডন প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এবং এটি এমনভাবে রুট পরিবর্তন করতে পারে যে তাকে আটকানো ‘অসম্ভব’।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর ‘বুরেভেস্তনিক’ নামের নতুন এক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। দেশটির দাবি, এটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। রাশিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী, ৯এম-৭৩০ বুরেভেস্তনিক (ন্যাটো নাম এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল) হলো এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যাকে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই আটকাতে পারবে না। পুতিনের ভাষায়, ‘এটি এক অনন্য অস্ত্র, যা আর কোনো দেশের কাছে নেই।’
তবে রাশিয়ার জন্য নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করা বা সেগুলোকে প্রচার করা নতুন কিছু নয়। বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃতপক্ষে এসব অস্ত্রের সামরিক মূল্য নিয়ে প্রশ্ন আছে।
রাশিয়া-বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওটি বিবিসিকে বলেন, এসব মূলত পৃথিবী ধ্বংসকারী ‘আর্মাগেডন অস্ত্র’। এসব অস্ত্র কেবল তখনই ব্যবহার করা যায়, যখন আপনি পুরো বিশ্বকে ধ্বংস করতে চাইবেন।’
প্রসঙ্গত, ‘আর্মাগেডন’ একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ ‘পৃথিবীর শেষ সময়ে একটি ভয়ংকর যুদ্ধ’। অর্থাৎ ‘আর্মাগেডন অস্ত্র’ বলতে সেই অস্ত্রগুলোকে বোঝায়, যার ব্যবহারে পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
গ্যালিওটি জানান, পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক দুটি এই ধরনের অস্ত্র। সেই সঙ্গে এগুলো ‘সেকেন্ড-স্ট্রাইক’ অস্ত্র, যা শুধু প্রতিশোধমূলক ব্যবহারের জন্য তৈরি।
তবে এই অস্ত্রগুলো আদৌ কার্যকর কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ২০১৯ সালে একটি রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণে পাঁচজন রুশ পারমাণবিক প্রকৌশলী মারা গিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, এই রকেট ইঞ্জিন বুরেভেস্তনিকের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) তথ্যমতে, এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পারমাণবিক প্রোপালশন ইউনিটের কর্মক্ষমতা নিয়ে নানান ধরনের ‘প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ’ আছে। আইআইএসএসের তথ্যমতে, এই জায়গায় রাশিয়ার এখনো ‘অনেক ঘাটতি’।
২০১৮ সালে পুতিন ‘অজেয়’ অস্ত্রের তালিকায় পসাইডন ও বুরেভেস্তনিকের নাম ঘোষণা করেছিলেন। প্রায় সাত বছর পর, আবারও এসব অস্ত্র নিয়ে নতুন করে আলোচনায় পুতিন। প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ কেন আবার এসব অস্ত্র নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? এত দিন পর কি তবে রাশিয়া সফল হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুটি অস্ত্র নিয়ে পুতিনের ঘোষণা যতটা না নতুন, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।
কয়েক মাস ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংলাপের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এখন সেই কূটনৈতিক উদ্যোগ কার্যত ভেস্তে গেছে।
এরপর হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক হঠাৎ বাতিল করে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, মস্কো ও ওয়াশিংটনের অবস্থান এতটাই ভিন্ন যে এই বৈঠকে কোনো কার্যত কোনো ফল আসত না। এর পরপরই ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে পুতিন হয়তো ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই নতুন অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। রাশিয়া-বিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওটি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনের প্রতি সহানুভূতিশীল, আবার কখনো রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এমন দোলাচালে পুতিনের কাছে এই অস্ত্রগুলো দেখানো হলো শক্তির প্রদর্শন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের বৈঠকের পর চীনের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ পুনরায় চালু করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শনিবার এ কথা বলেছেন। চীনের সঙ্গে আলোচনায় দুই দেশ সামরিক-সামরিক যোগাযোগ পুনরায় চালু করার বিষয়ে একমত হয়েছে। যা সংঘাত নিরসন এবং উত্তেজনা প্রশমনে সাহায্য করবে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের নেতা সি চিনপিং এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচনার একদিন পর, মালয়েশিয়ায় একটি আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে হেগসেথ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুনের সাথে বৈঠক করেন।
হেগসেথ এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, আমি এইমাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছি এবং আমরা একমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে সম্পর্ক কখনও এত ভালো ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, তাদের মুখোমুখি বৈঠকের পর থেকে তিনি আবারও ডং-এর সাথে কথা বলেছেন।
তিনি ‘শক্তি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ইতিবাচক সম্পর্কের’ পথের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং আমি একমত যে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সুসম্পর্ক আমাদের দুটি মহান এবং শক্তিশালী দেশের জন্য সর্বোত্তম পথ।’
পেন্টাগন প্রধান বলেন, ডং ও তিনি ‘সম্মত হয়েছেন যে, যেকোনো উদ্ভূত সমস্যার ক্ষেত্রে সংঘাত প্রতিরোধ ও উত্তেজনা কমাতে সামরিক-সামরিক যোগাযোগ চ্যানেল গড়ে তোলা উচিত।’
হেগসেথ বলেন, ‘এই বিষয়ে আরও বৈঠক শিগগিরই হবে।’ বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ডং হেগসেথকে জানিয়েছেন যে, দুই দেশকে ‘নীতিগত পর্যায়ে সংলাপ জোরদার করে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি ও অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে,’ এবং এমন এক দ্বিপাক্ষিক সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যা ‘সমতা, শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও স্থিতিশীল ইতিবাচক গতিশীলতা’-র ওপর ভিত্তি করে। সূত্র বাসস
বিশ্বব্যাপী ভিসামুক্ত ভ্রমণের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হেনলি পাসপোর্ট সূচক ২০২৫-এ ভারতের অবস্থান নেমে এসেছে ৮৫তম স্থানে। গত বছরের তুলনায় দেশটি এবার পাঁচ ধাপ পিছিয়েছে।
এক সময় বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের পাসপোর্টের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। রুয়ান্ডা, ঘানা ও আজারবাইজানের মতো তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর পাসপোর্ট সূচক ভারতের চেয়ে ভালো। দেশ তিনটি যথাক্রমে ৭৮, ৭৪ ও ৭২তম স্থানে রয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে এক ভারতীয় পর্যটকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন—ভুটান ও শ্রীলঙ্কার পর্যটকরা সহজেই ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশের ভিসা পেলেও ভারতীয়রা দুর্বল পাসপোর্টের কারণে তা পাচ্ছেন না।
হেনলি সূচক অনুযায়ী, ভারতের পাসপোর্ট দিয়ে বর্তমানে মাত্র ৫৭ দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়। আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে দেশটির অবস্থান ৮৫তম।
অন্যদিকে, তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর—যার নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই ১৯৩ দেশে যেতে পারেন। ১৯০ দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়া এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান (১৮৯ দেশ)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের পাসপোর্টের শক্তি তার ‘সফট পাওয়ার’ এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবের প্রতিফলন। দুর্বল পাসপোর্ট মানে অতিরিক্ত কাগজপত্র, বেশি খরচ এবং ভ্রমণের সীমিত সুযোগ।
তবে আশার কথা হলো, গত এক দশকে ভারতীয়দের জন্য ভিসামুক্ত দেশের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫২ দেশ ভারতীয়দের জন্য ভিসামুক্ত সুবিধা চালু করে। যদিও সেই উন্নতি স্থায়ী হয়নি; ৭৬তম স্থান থেকে পুনরায় ৮৫তম অবস্থানে নেমে আসে ভারতীয় পাসপোর্ট।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা বলেন, “অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও পাসপোর্টের শক্তি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা বহু পশ্চিমা দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারতেন, কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলনের পর থেকে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিশ্বে ভারতের প্রভাব বাড়াতে হলে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”
সৌদি আরবের মদিনা চেম্বার অব কমার্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেছে, অঞ্চলের পর্যটকদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই মদিনাকে প্রথম গন্তব্য হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটকরা এই শহরকে প্রধান গন্তব্য হিসেবে নির্বাচনের মূল কারণ হলো এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক। ৭৩.৭ শতাংশ দর্শক মদিনা সফরের জন্য আগ্রহী।
বিশ্বব্যাপী পর্যটন সূচকে মদিনা শীর্ষ ১০০ গন্তব্যের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এবং মোট পর্যটন কার্যকারিতা সূচকে সপ্তম অবস্থান দখল করেছে। এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, মদিনা শুধু আধ্যাত্মিক শহরই নয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগত পর্যটকদের ৪৭.২ শতাংশ আল উলা গভর্নরেট সফর করেছেন, যেখানে রয়েছে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা। অন্যদিকে, দেশীয় পর্যটকদের ১৪.১ শতাংশ ইয়ানবু গভর্নরেট বেছে নিয়েছেন এর সুন্দর সৈকত, সামুদ্রিক বিনোদন এবং পরিবার-বান্ধব পরিবেশের জন্য।
মদিনা চেম্বার অব কমার্স জানিয়েছে, এসব সূচকই মদিনা অঞ্চলের পর্যটন খাতের দ্রুত বৃদ্ধির প্রতিফলন। জাতীয় পর্যটন ব্যবস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গন্তব্য উন্নয়ন এবং সৌদি আরবকে বৈশ্বিক পর্যটন মানচিত্রে আরও দৃঢ় অবস্থানে স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। এটি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রতিবেদনে মদিনা রিজিয়ন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কার্যক্রমকেও প্রশংসা করা হয়েছে, যারা পর্যটন ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
তায়েফের বাসিন্দা আহমদ আল-ওতাইবি, যিনি রিয়াদে কর্মরত, আরব নিউজকে বলেন, মদিনা সবসময় আমাদের হৃদয়ের কাছের শহর। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সবসময় মানুষের আগমন, সব মিলিয়ে মদিনার কোনো তুলনা নেই।
তিনি মদিনা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবা বৃদ্ধির কাজের প্রশংসা করেন, যা ধর্মীয় পর্যটন এবং আতিথেয়তা খাতের মান উন্নত করেছে। এর ফলে পর্যটকরা সুবিধা পাচ্ছেন, পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমানও উন্নত হচ্ছে।
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে সৌদি আরবের অন্যান্য শহরের তুলনায় মদিনার হসপিটালিটি সুবিধার হার সর্বোচ্চ ৭৪.৭ শতাংশে পৌঁছেছে। শহরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হসপিটালিটি প্রতিষ্ঠানও বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট প্রতিষ্ঠান ৫৩৮টি, যার মধ্যে নতুন ৬৯টি। মোট হোটেল কক্ষের সংখ্যা ৬৪,৫৬৯, এর মধ্যে নতুন যোগ হয়েছে ৬,৬২৮ কক্ষ।
এই সব উন্নয়ন কার্যক্রমই মদিনাকে ধর্মীয় পর্যটনের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে এবং শহরের আতিথেয়তা ও সেবা মান বৃদ্ধির মাধ্যমে সৌদি ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হচ্ছে।
সূত্র: আরব নিউজ