ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য দিবস অর্থাৎ ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পহেলা বৈশাখকে বেছে নেয়া হলো। সেই সঙ্গে রাজ্যসংগীত হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি-বাংলার জল…’ গানটিকে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আনা প্রস্তাব পাস হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, তৃণমূল পরিষদীয় দল বিধানসভায় ‘বাংলা দিবস’ তোলে। প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন মমতা। যদিও ‘বাংলা দিবস’ ঘোষণার বিরুদ্ধে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানাতে রাজভবনে বিজেপি বিধায়কদের যাওয়ার কথা। তবে বিধানসভায় আনা প্রস্তাবে রাজ্যপাল স্বাক্ষর না করলেও পহেলা বৈশাখ দিনটি ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে বলে মমতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কে কি সমর্থন করবে জানি না, কিন্তু আমাদের নির্দেশ থাকবে ওই দিনই বাংলা দিবস হিসেবে পালন করার।’
এদিকে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করবেন না রাজ্যপাল।’ এই প্রসঙ্গে তিনি রাজ্যের নাম বদল, বিধান পরিষদ গঠনসংক্রান্ত প্রস্তাবের কথাও উল্লেখ করেন। এই প্রস্তাবগুলো পাস করানো হলেও এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। এর জবাবে মমতা জানান, রাজ্যপালের অনুমোদন না পেলেও রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত বদলাবে না।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন রাজভবনে দিল্লির নির্দেশে রাজ্যপাল ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেন। এমনকি আসামসহ বিভিন্ন রাজভবনে দিনটি পালন করা হয়। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ২০ জুনকে বারবার তুলে ধরতে চেয়েছে বিজেপি। ১৯৪৭ সালের এই দিনে মূলত রাজ্য বিধানসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলাকে ভাগ করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে। বিজেপির দাবি, ওই দিনটিকেই রাজ্য দিবস হিসেবে পালন করতে হবে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সেনা পাঠানোর বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নিতে পারে পাকিস্তান। দেশটির সরকারি ও সামরিক সূত্র জানাচ্ছে, সেনা পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকেই এগোচ্ছে ইসলামাবাদ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় শান্তি ও পুনর্গঠনের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্সে (আইএসএফ) পাকিস্তান সেনা পাঠাবে কি না, সে বিষয়ে ইসলামাবাদ শিগগিরই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এবং সেনা নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনা “চূড়ান্ত পর্যায়ে” পৌঁছেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানায়, পাকিস্তান গাজা মিশনে অংশ নেওয়ার দিকেই ঝুঁকছে বলে অভ্যন্তরীণ আলোচনার ধরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে গঠিত গাজা শান্তিচুক্তির অন্যতম মূল দিক হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সেনা নিয়ে গঠিত এই আন্তর্জাতিক বাহিনী। বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যে গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, হামাসকে নিরস্ত্র করা, সীমান্ত পারাপার নিয়ন্ত্রণ করা এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মানবিক ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো বিষয়গুলো থাকবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজায় মার্কিন সেনা না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, কাতার, তুরস্ক ও আজারবাইজানসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যাতে তারা এই বহুজাতিক বাহিনীতে অংশ নেয়।
তবে সোমবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডন সার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের “ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবের” কারণে তুরস্কের সেনাকে এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেন তিনি।
এর আগে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় কোন কোন বিদেশি বাহিনী প্রবেশ করতে পারবে তা ইসরায়েলই নির্ধারণ করবে।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, আজারবাইজান ও পাকিস্তানের সেনা নিয়ে গঠিত এই বাহিনী গাজায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে বলে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্যদের জানানো হয়েছে।
এছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অস্ত্র চোরাচালান রোধের দায়িত্বও আন্তর্জাতিক এই বাহিনী পালন করবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের খবরে।
রাশিয়া যদি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তবে পাল্টা হামলা চালিয়ে মস্কোকে “মানচিত্র থেকে মুছে দেবে” ন্যাটো। এমন কড়া হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থিও ফ্রাঙ্কেন।
একইসঙ্গে ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সোমবার বেলজিয়ান দৈনিক ডি মর্গেন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রাঙ্কেন বলেন, “যদি (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন ব্রাসেলসের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, আমরা মস্কোকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলব।”
ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইউরোপে যেসব সংশয় দেখা দিয়েছে, তা তিনি গুরুত্বহীন বলে মন্তব্য করেন।
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “ইউরোপে আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাত এতটাই প্রবল যে সেটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ ন্যাটো মিত্রদের পাশে থাকবে। ব্রাসেলসে ক্রুজ মিসাইল হামলা? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে কেউই দ্বিধা করবে না। পুতিনও এটা জানেন।”
তবে তিনি সতর্ক করে দেন, রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে ছোট করে দেখার ভুল যেন কেউ না করে।
তার ভাষায়, “রাশিয়া এখন তার সামরিক সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে। তাদের যুদ্ধ অর্থনীতি এখন ন্যাটোর সব দেশ মিলে যত গোলাবারুদ তৈরি করে, তার চারগুণ উৎপাদন করছে। অথচ ইউরোপের এখনো কোনো কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড নেই।”
ফ্রাঙ্কেন বলেন, “রাশিয়া ইউক্রেনে সমস্যায় পড়েছে কারণ তারা পুরো পশ্চিমা বিশ্বের বিপক্ষে লড়ছে। ইউক্রেনীয়রা আমাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ দিয়েই যুদ্ধ চালাচ্ছে, নইলে অনেক আগেই তারা পরাজিত হতো।”
আগামীদিনের পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ফ্রাঙ্কেন বলেন, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের যৌথ চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “চীন চায় ইউক্রেনের যুদ্ধ যতদিন সম্ভব চলুক, কারণ এতে পশ্চিমা বিশ্ব দুর্বল হবে। চীন বিপুল পরিমাণে রাশিয়ার কাঁচামাল কিনছে, অস্ত্র সরবরাহ করছে, আর রাশিয়ায় উত্তর কোরীয় সৈন্য পাঠানোকেও তারা ভালো চোখে দেখছে।”
ফ্রাঙ্কেন আরও বলেন, “রাশিয়া নিকট ভবিষ্যতে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে বড় আক্রমণ করবে বলে মনে হয় না। কারণ, সেগুলো ন্যাটো সদস্য। খুব শিগগিরই ইউরোপে ৬০০টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েন হবে। রাশিয়ানরা এগুলোকে ভয় পায়, কারণ তাদের পক্ষে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, তিনি এখনো রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাননি। আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার কথা বিবেচনা করছেন।
দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৮ সালে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হ্যারিস বলেন, তিনি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তবে বিশ্বাস করেন, হোয়াইট হাউস একদিন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে হ্যারিস হলিউড অভিনেতা ডোয়াইন জনসনের থেকেও পিছিয়ে আছেন। জনসন ‘দ্য রক’ নামে বেশি পরিচিত। তবে হ্যারিস বলছেন, ‘যদি আমি জরিপে গুরুত্ব দিতাম তাহলে এতদূর আসতে পারতাম না।’
সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে কমলা হ্যারিস বলেন, গত নির্বাচনী প্রচারের সময়ই তাকে ফ্যাসিস্ট বলে সতর্ক করেছিলাম। সেটি এখন সঠিক বলে প্রমাণ হয়েছে।
জো বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন হ্যারিস। গত নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন নিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তবে নির্বাচনে হেরে যান।
বর্তমানে ‘১০৭ দিন’ নামে নিজের লেখা একটি বইয়ের প্রচার করছেন হ্যারিস। বইটি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা।
যুক্তরাষ্ট্রের গাইডেড-ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস গ্রেভলি মেরিন সেনাসদস্যদের নিয়ে ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে পৌঁছেছে, যা ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে সেখানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ালো।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধজাহাজটি রোববার ত্রিনিদাদের রাজধানী পোর্ট অব স্পেন-এ পৌঁছেছে এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাহাজটি সেখানেই অবস্থান করবে। স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে মার্কিন মেরিন সেনাদের একটি দল ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া অনুষ্ঠান করবে।
এই যুদ্ধজাহাজটিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা এবং হেলিকপ্টার পরিচালনা ব্যবস্থাও আছে। এই মহড়ার আয়োজন মূলত ল্যাটিন আমেরিকায় মাদক-পাচারের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ভেনেজুয়েলাকে নিশানা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জোরদার হতে থাকা সামরিক অভিযানের অংশ।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক পাচারকারী নৌযানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানের জেরে ক্রমাগত আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মাদকবাহী নৌযানে মার্কিন হামলায় বেশকিছু মানুষ নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। গত মাসের শুরু থেকে মার্কিন বাহিনী বেশ কয়েকটি মাদকবাহী নৌযানে হামলা চালিয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে ক্যারিবীয় সাগরে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো মাদকচক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, তবে মাদুরো এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থা আরও বেড়ে যায় গত শুক্রবার, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস গেরাল্ড আর ফোর্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেয়।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালানোর এখতিয়ারও দিয়েছেন। এই বড় ধরনের সামরিক হুমকি থেকে নিজেদের উপকূল রক্ষায় ভেনেজুয়েলা প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু করেছে বলে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো শনিবার জানিয়েছেন।
ফরাসি ফার্স্ট লেডি ব্রিজিতকে সাইবার-হয়রানির অভিযোগে সোমবার প্যারিসে ১০ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। গত জুলাইয়ের শেষের দিকে তিনি এবং রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাখোঁ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি মানহানির মামলা দায়ের করার পর এই বিচার শুরু হয়।
ফ্রান্স এবং দেশটির বাইরে অনলাইনে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে, ফরাসি ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত একজন পুরুষ হিসেবে জন্মেছিলেন। ভিত্তিহীন লিঙ্গসংক্রান্ত এ দাবির বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট দম্পতিকে লক্ষ্য করে অসমর্থিত এই দাবিটি করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে ২৪ বছর বয়সের ব্যবধান নিয়েও সমালোচনা করা হচ্ছে। এই মামলার ১০ জন আসামি। এর মধ্যে আটজন পুরুষ এবং দুইজন নারী।
যাদের বয়স ৪১ থেকে ৬০ বছর। সাইবার হয়রানির মামলাটির বিচার প্যারিসের একটি ফৌজদারি আদালতে করা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে ব্রিজিতের লিঙ্গ এবং যৌনতা সম্পর্কে অসংখ্য বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এমনকি তার স্বামীর সঙ্গে তার বয়সের পার্থক্যকে ‘শিশু যৌন নির্যাতন’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বলে প্রসিকিউটরা জানিয়েছেন।
ফরাসি ফার্স্ট লেডি ২০২৪ সালের আগস্টে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যার ফলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাইবার-হয়রানির তদন্ত শুরু হয়। অসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিজিতের আইনজীবী এএফপির করা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি এবং তিনি শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন কি না তা-ও জানা যায়নি।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ৪১ বছর বয়সী অরেলিন পোয়ারসন-আটলান। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘জো সাগান’ নামে পরিচিত। আসামিদের মধ্যে নারীও রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ব্রিজিত মানহানির মামলা করেন। ৫১ বছর বয়সি ডেলফাইন জে নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক মানুষ হিসেবে দাবি করেন। তিনি ‘আমান্দিন রোয়া’ ছদ্মনামে পরিচিত।
২০২১ সালে তিনি তার ইউটিউব চ্যানেলে স্বঘোষিত সাংবাদিক নাতাশা রে-এর সঙ্গে চার ঘন্টার একটি সাক্ষাৎকার পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ব্রিজিতের পূর্ব নাম ট্রগনু এবং তিনি জ্যঁ মিশেল ট্রগনু নামে একজন পুরুষ ছিলেন, এটি আসলে ব্রিজিতের ভাইয়ের নাম।
২০২৪ সালে আপিলের রায় বাতিল হওয়ার আগে এই দুই নারীকে ব্রিজিত এবং তার ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফার্স্ট লেডি তখন থেকে মামলাটি দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালতে নিয়ে গেছেন। ২০১৭ সালে ইমানুয়েল ম্যাখোঁর নির্বাচনের প্রথম দিকেই এই দাবিগুলো আরো জোরদার করা হয়, যেখানে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার আমেরিকান সংস্কৃতি যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি ইস্যু হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি ব্রিজিত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থি পডকাস্টার ক্যান্ডেস ওউন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ব্রিজিত একজন পুরুষ’—এমন ভুয়া দাবি প্রচারের মাধ্যমে ওউন্স একটি পরিকল্পিত মানহানিকর প্রচারণা চালিয়েছেন।
মামলায় বলা হয়, ওউন্স তার ইউটিউব পডকাস্ট সিরিজ বিকামিং ব্রিগেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিকবার দাবি করেছেন, ব্রিজিত ম্যাখোঁ আসলে জন্মেছিলেন পুরুষ হিসেবে, যার নাম ছিল ‘জ্যঁ-মিশেল ট্রগনু’। তাদের মার্কিন আইনজীবীর মতে, এই দম্পতির কাছে ‘বৈজ্ঞানিক’ প্রমাণ এবং ছবি আছে, যা প্রমাণ করে ফার্স্ট লেডি ট্রান্সজেন্ডার নন।
যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে অন্তত ১৩ জন আহত হন। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েল যে গণহত্যা চালিয়েছে তাতে কমপক্ষে ৬৮ হাজার ৫২৭ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৫ জন আহত হয়েছে।
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরজুড়েও তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে। ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স ক্লাব জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় গত রাতে অভিযান চালিয়ে ৪০ জন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে থাকা কমপক্ষে ৯ হাজার ফিলিস্তিনি ‘নিখোঁজ’ বলে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, তাদের পরিবারগুলো সংগ্রাম করছে। যুদ্ধের সময় থেকেই তারা তাদের প্রিয়জনদের মরদেহ উদ্ধারের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি চেয়ে আসছে। মানুষ বেলচা, ন্যূনতম সরঞ্জাম, এমনকি খালি হাতেও প্রিয়জনদের মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে পুনর্গঠন কাজ স্থবির হয়ে আছে, আর গোটা গাজাজুড়ে হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি বোমা এখন মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে।
গাজা সিটির মেয়র ইয়াহিয়া আল-সররাজ সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না পারায় ধ্বংসস্তূপ সরানো ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক সচল রাখতে ও নতুন কূপ খনন করতে গাজা সিটিতে কমপক্ষে ২৫০টি ভারী যন্ত্রপাতি ও ১ হাজার টন সিমেন্টের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। মেয়র বলেন, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন হাজারও মানুষ এবং মানবিক সহায়তা ও ভারী যন্ত্রপাতি ঢুকতে না দেওয়ায় বেঁচে থাকা মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
আল জাজিরার গাজার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনি এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। এত বড় চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে গাজায় ঢুকতে পেরেছে। খুদারি জানান, নতুন যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ইসরায়েলি বন্দিদের মরদেহ উদ্ধারে, ফিলিস্তিনিদের নয়।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা জানেন, যতক্ষণ না সব ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতিতে কোনো অগ্রগতি হবে না।’ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাফাহ শহরে এক ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ উদ্ধার অভিযানে হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডকে সহায়তা করতে রেড ক্রসের গাড়ি পৌঁছেছে।
গাজার পুনর্গঠনকাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিস্ফোরিত না হওয়া বোমাগুলো। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজায় অন্তত ২ লাখ টন বোমা ফেলেছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন এখনো বিস্ফোরিত হয়নি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা হালো ট্রাস্টের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক নিকোলাস টরবেট বলেন, ‘গাজা নগরীর প্রায় প্রতিটি অংশেই বোমা পড়েছে,’ এবং বহু গোলাবারুদ আঘাতের পরই বিস্ফোরিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তিনি বলেন, এই বোমা অপসারণে সময় লাগছে, ফলে পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে বিলম্বিত হচ্ছে। টরবেটের মতে, সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো, ‘ছোট পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করে বোমাটিকেই উড়িয়ে দেওয়া।’
এদিকে গত রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভাষণে বলেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করতে পারবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু ইসরায়েলেরই আছে এবং তিনি দাবি করেন যে, এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রও মেনে নিয়েছে।
গতকাল রবিবার আমেরিকাজুড়ে ৮ হাজারের বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। এর কারণ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের বা কর্মীর অনুপস্থিতি। ফেডারেল সরকারের শাটডাউন ২৬তম দিনে পৌঁছেছে।
মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি বলেছেন, গত শনিবার ২২টি স্থানে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিমান পরিবহন (এফএএ) নিয়ন্ত্রণকর্মীর ঘাটতির কারণে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, ঘাটতির কারণে আগামী দিনগুলোতে আরো ফ্লাইট বিলম্ব এবং বাতিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফ্লাইট-ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের মতে, রোববার রাত ১১টা (সোমবার ০৪০০ জিএমটি) পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি মার্কিন ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে, যা শনিবার প্রায় ৫ হাজার ৩০০ থেকে বেশি। ১ অক্টোবর থেকে সরকারি শাটডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে ফ্লাইট বিলম্বিত হচ্ছে।
ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের মতে, রবিবার সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনসের ৪৫ শতাংশ বা ২ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে, যেখানে আমেরিকান এয়ারলাইনসের প্রায় ১ হাজার ২০০ বা তাদের ফ্লাইটের এক-তৃতীয়াংশ বিলম্বিত হয়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ২৪ শতাংশ— অর্থাৎ ৭৩৯টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে এবং ডেল্টা এয়ারলাইনসের ৬১০টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
প্রায় ১৩ হাজার বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রণকর্মী এবং প্রায় ৫০ হাজার পরিবহন নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে শাটডাউনের সময় বেতন না দেওয়া সত্ত্বেও, কাজ করতে হচ্ছে। বিমান ভ্রমণে বিলম্ব এবং বাতিলের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর নিবিড় নজর রাখা হচ্ছে। শাটডাউন আমেরিকানদের জীবন কীভাবে কঠিন করে তুলছে তা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে।
ফলে বাজেট অচলাবস্থা ভাঙতে আইন প্রণেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি ফক্স নিউজের ‘সানডে মর্নিং ফিউচারস’ প্রগ্রামকে বলেছেন, শনিবার এফএএ-তে ২২টি সংকেত দেখা গেছে, যা এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক স্বল্পতার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তিনি বলেন, ১ অক্টোবরের পর থেকে এটি সিস্টেমে দেখা সর্বোচ্চ সংখ্যা। ডাফি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণকর্মীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।’
এফএএ জানিয়েছে, রবিবার শিকাগোর ও'হেয়ার বিমানবন্দর, ওয়াশিংটনের রিগ্যান জাতীয় বিমানবন্দর এবং নিউ ইয়র্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মী ঘাটতির কারণে কাজ বিলম্ব হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগে গ্রাউন্ড স্টপ জারি করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন সতর্ক করে দিয়েছে, মঙ্গলবার কন্ট্রোলার বা কর্মীরা তাদের প্রথম পূর্ণ বেতন না পাওয়ায় ফ্লাইট ব্যাহত হবে। বেতন না পাওয়ার সম্ভাবনার মুখোমুখি কন্ট্রোলাররা আয়ের অন্যান্য উৎস খুঁজছেন বলেও ডাফি জানান।
এফএএ-তে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার কর্মীর ঘাটতিতে রয়েছে এবং অনেকেই শাটডাউনের আগেও বাধ্যতামূলক ওভারটাইম এবং ছয় দিনের কাজ করছিলেন। ২০১৯ সালে, ৩৫ দিনের বন্ধের সময়, কর্মীরা বেতন না পাওয়ায় কন্ট্রোলার এবং টিএসএ অফিসারদের অনুপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে কিছু বিমানবন্দর চেকপয়েন্টে অপেক্ষার সময় বৃদ্ধি পায়। কর্তৃপক্ষ নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে বিমান চলাচল কমাতে বাধ্য হয়।
ডাফি এবং অন্য রিপাবলিকানরা সমালোচনা করে বলেছেন, তারা কোনো শর্ত ছাড়াই একটি পরিষ্কার স্বল্পমেয়াদি তহবিল বিলের বিরোধিতা করেছেন। অন্যদিকে বছরের শেষে মেয়াদ শেষ হওয়া স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানানোর জন্য ডেমোক্র্যাটরা রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের সমালোচনা করেছেন।
চিত্রকর্মটি বেশ পুরোনো। গড়পড়তা চোখে দেখে অনেকে হয়তো বলবেন, এ আর এমন কী, ভয়ংকরদর্শী মানুষের মাথায় চেপে বসেছে ভিনগ্রহী কোনো বস্তু। তবে ঝানু চোখের রায় হবে ভিন্ন। খুঁটিয়ে দেখলে তিনি ঠিকই বুঝবেন, ছবিটি যেনতেন কিছু নয়। কারণ, এর আঁকিয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তিনি স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী সালভাদর দালি।
সালভাদর দালির ওই চিত্রকর্ম গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে। নামী শিল্পী, তাই দামটাও আকাশছোঁয়া। পরিচয় প্রকাশ না করা কেউ একজন সেটি কিনে নিয়েছেন ৪৫ হাজার ৭০০ পাউন্ডে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭৪ লাখ টাকার বেশি। অবাক করা বিষয় হলো- চিত্রকর্মটি মাত্র ১৫০ পাউন্ডে (২৪ হাজার টাকা) কিনেছিলেন জন রাসেল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি।
জন রাসেল একজন শিল্পকর্ম বিক্রেতা। তার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছিল দুই বছর আগে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে একটি বাড়ির পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছিল। সেখানেই ওই চিত্রকর্ম এক চোখ দেখার সুযোগ পান রাসেল। চিত্রকর্মের এক কোণে ছিল দালির স্বাক্ষর। আর পেছনে ছিল যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স-এর স্টিকার।
‘এটি হয়তো নকল’- ঠিক এ কথাই প্রথম মাথায় এসেছিল রাসেলের। তবে একটু ঝুঁকি নিতে দোষ কী? যদি ভাগ্য খুলে যায়। চিত্রকর্মটির দরাদরি শুরু করেন তিনি। তার সঙ্গে আরও একজন দরদাম করছিলেন। তবে রাসেল হুট করে ১৫০ পাউন্ড বলার পর ওই ব্যক্তি আর আগে বাড়েননি। রাসেলের কথায়, ‘জীবনে এমন সুযোগ একবারই আসে।’
চিত্রকর্মটি যে আসল, তা পরে যাচাই করে বোঝা যায়। এটি আসলে একজন ‘বৃদ্ধ সুলতানের’ ছবি। তিনি আরব্য রজনীর একটি চরিত্র। ১৯৬৬ সালে আরবের এই রূপকথা নিয়ে ৫০০ ছবির এক সিরিজ আঁকতে চেয়েছিলেন সালভাদর দালি। সুলতানের চিত্রকর্মটি তারই একটি অংশ। কোনো কারণে চিত্রকর্মটি সিরিজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
চিত্রকর্মটি কেনার পর রাসেলের অবশ্য আরও কিছু খরচ হয়েছিল। সেটি আসল কি না, যাচাই করতে পকেট থেকে বের হয়েছিল ৪ হাজার পাউন্ড। তবে কেমব্রিজের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান চেফিন্জ-এ যখন চূড়ান্ত দামটা হাঁকা হলো তখন রাসেলের মনে হয়েছিল, তিনি যেন ‘চাঁদকে ছাড়িয়ে’ গেছেন। তার একটাই কথা- ‘এটি ছিল অসাধারণ।’
চিত্রকর্মে ‘সুররিয়ালিজম’ বা ‘পরাবাস্তববাদ’ ধারার জন্য সালভাদর দালির খ্যাতি রয়েছে। তার বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলোর কয়েকটি হলো- ‘দ্য পারসিসট্যান্স অব মেমোরি’, ‘দ্য এলিফেন্টস’, ‘দ্য বার্নিং জিরাফ’ ও ‘মেটামরফোসিস অব নার্সিসাস’। ১৯৮৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই শিল্পীর।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার অভিযোগে ৫৪ ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। রোববার ভোরে হাতে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ৫০ তরুণকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। খবর এনডিটিভির।
পুলিশ জানায়, দেশে ফেরত আসা এই তরুণরা সবাই অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। এদের মধ্যে ১৬ জন কর্ণালের, ১৫ জন কৈথালের, ৫ জন আম্বালার, ৪ জন যমুনা নগরের, ৪ জন কুরুক্ষেত্রের, ৩ জন জিন্দের, ২ জন সোনিপতের এবং ১ জন করে পঞ্চকুলা, পানিপত, রোহতক এবং ফতেহাবাদের বাসিন্দা।
করনাল পুলিশ জানায়, সবাইকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে এবং কোনো দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
করনালের ডিএসপি সন্দীপ কুমার বলেন, ‘আজ আরো কিছু ভারতীয়কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে হরিয়ানার ৫০ জন। কেবল করনাল জেলা থেকেই রয়েছেন ১৬ জন। সবাই ‘ডংকি রুটে’ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিল, কিন্তু আজ ফেরত এসেছে।’
পুলিশ আরো জানিয়েছে, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এই বছরের শুরুতে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ শত শত ভারতীয় দেশে ফেরত পাঠায়। গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে তার প্রশাসন।
চলতি মাসের ১০ তারিখে গাজায় শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি। কিন্তু এর মধ্যেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩২৪ জন। শনিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার হাসপাতালে গত দুদিনে ইসরাইলি হামলায় ১৯ জন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া শনিবার ভোর থেকে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ছয় ফিলিস্তিনি আহত হন।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি গণহত্যায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ হাজার ৫১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৭০ হাজার ৩৮২ জন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল ইসরাইল ও হামাস। এর প্রথম পর্যায়ে ইসরাইলি জিম্মি মুক্তি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিবিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের মতে, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পর থেকে ৮০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এ সময় তারা বিভিন্ন এলাকা ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণ গাজার রাফা শহরের উত্তর-পশ্চিমে ইসরাইলি গুলিতে এক ফিলিস্তিনি শিশু গুরুতর আহত হয়। খান ইউনুসের পূর্বে অবস্থিত বানি সুহাইলায় ইসরাইলি বাহিনী একটি গাড়িতে গুলি চালালে দুই বেসামরিক ব্যক্তি আহত হন। শুক্রবার খান ইউনুসের দক্ষিণ-পূর্বে বাড়িতে বিস্ফোরণ এবং মধ্য গাজার পূর্ব দেইর আল-বালাহে কামান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এসব হামলায় দেইর আল-বালাহে দুই ফিলিস্তিনি ভাই নিহত হন। ইসরাইলের দাবি, তারা তথাকথিত ‘ইয়ালো লাইন’ অতিক্রম করেছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা ২০ জন জীবিত ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এছাড়া ৯ জনের লাশ ফেরত দিয়েছে। এছাড়া বাকি লাশও ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা।
এদিকে, গাজায় মানবিক সহায়তা চালিয়ে যেতে ইসরাইলকে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিএ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ইসরাইলের বর্তমান পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আধ ঘন্টার ব্যবধানে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ও একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন সকল ক্রু সদস্য। রোববার এ দুর্ঘটনা ঘটে। উভয় ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে বিস্তর অনুসন্ধান শুরু করেছে দেশটির নৌবাহিনী। খবর সিএনএনের।
রোববার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া বার্তায় মার্কিন নৌবাহিনী জানায়, মেরিটাইম স্ট্রাইক স্কোয়াড্রন (এইচএসএম) ‘ব্যাটল ক্যাটস’র জন্য নিযুক্ত একটি এমএইচ-৬০আর সিহক হেলিকপ্টার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস নিমিৎজ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সময় বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার পর, বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে স্ট্রাইক ফাইটার স্কোয়াড্রন (ভিএফএ) ২২-এর ‘ফাইটিং রেডককস’র জন্য নিযুক্ত একটি এফ/এ-১৮এফ সুপার হর্নেট ফাইটারও নিমিৎজ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সময় বিধ্বস্ত হয়। নৌবাহিনী জানিয়েছে, উভয় আকাশযানের ক্রু সদস্যরা সফলভাবে বেরিয়ে আসেন এবং তাদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।
এই বসন্তে লোহিত সাগরে নৌবাহিনীর দুটি সুপার হর্নেট জেট হারিয়ে যাওয়ার পর একই সিরিজের যুদ্ধবিমান হারানোর এটি তৃতীয় কোনো দুর্ঘটনা। নৌবাহিনীর মতে, একটি পৃথক এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমানের দাম ৬ কোটি ডলারেরও বেশি।
চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা বেষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অংশের মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অমান্য করে বেইজিং প্রায়ই সমস্ত কৌশলগত জলপথের মালিকানা দাবি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুদেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। মালয়েশিয়ায় সই হওয়া এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প নিজেও।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমও এ সময় উপস্থিতিত ছিলেন। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
এশিয়া সফরের প্রথম ধাপেই এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের পর রোববার ট্রাম্পের সামনে থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে রোববারই মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে এশিয়া সফরের সূচনা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটিতে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও সফর করবেন।
আর এই সফরের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হতে চলেছে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক। দুদেশের বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ওই বৈঠকে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে বিমানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি আশাবাদী যে চীন নতুন চুক্তিতে রাজি হবে যেন আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ঠেকানো যায়।
এবারের সফরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও সাক্ষাতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালের পর এটিই হতে পারে দুই নেতার প্রথম সাক্ষাৎ।
এদিকে মালয়েশিয়া সফর শেষে সোমবার ট্রাম্প পৌঁছাবেন জাপানে। কাল মঙ্গলবার তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ট্রাম্প তাকে ‘চমৎকার একজন নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ অনুসারী, আর এটি যুক্তরাষ্ট্র-জাপান সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক।
তাকাইচি গত শনিবার ফোনে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তার সরকারের প্রধান কূটনৈতিক অগ্রাধিকার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট আরও শক্তিশালী করা।
এরপর ট্রাম্প আগামী বুধবার পৌঁছাবেন দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে। সেখানে তিনি এপেক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এরপর আগামী বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের মধ্যে বৈঠক হবে। আর এটি হবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর সি চিন পিংয়ের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সীমান্তপথগুলো বন্ধ থাকার পনেরো দিন পূর্ণ হলো। এই দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কোটি কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন আফগান ব্যবসায়ীরা।
করাচি বন্দরের মাধ্যমে আফগান পণ্যের ট্রানজিট স্থগিত হওয়ায়, আফগানিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন বিকল্প বাণিজ্যপথ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
আফগান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নূরুদ্দিন আজিজি বলেন, এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো আফগান কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সীমান্তপথ বন্ধ, আফগান পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে, একই সঙ্গে পাকিস্তানের মাধ্যমে ট্রানজিটও স্থগিত। আমরা এখন এমন বিকল্প বাণিজ্যপথ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যাতে আফগান পণ্য আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে। গত চার বছর ধরে আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি, এখন তা আরও গতিশীল করেছি।’
অন্যদিকে, আফগানিস্তান–পাকিস্তান যৌথ বাণিজ্য চেম্বার জানিয়েছে, সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে দুদেশের বেসরকারি খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে, রপ্তানি ও ট্রানজিট কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
চেম্বারের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হলে রাজনীতি থেকে বাণিজ্যকে আলাদা রাখা জরুরি।
যৌথ চেম্বারের প্রধান নির্বাহী নাকিবুল্লাহ সাফি বলেন, ‘উভয় দেশের বেসরকারি খাত ও বাণিজ্যচেম্বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং সমস্যার সমাধান খুঁজছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিষয়টি এখন রাজনৈতিক হয়ে পড়েছে। যদি এটি কেবল বাণিজ্যসংক্রান্ত হতো, তবে সীমান্ত পুনরায় খোলার সম্ভাবনা এখনই দেখা যেত।’
কিছু আফগান ব্যবসায়ী জানান, সীমান্ত বন্ধের কারণে তাদের অনেক রপ্তানি পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে তারা মনে করেন, বিকল্প বাজার ও বন্দর খোঁজা পাকিস্তানের ওপর আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ব্যবসায়ী ওমিদ হায়দারি বলেন, ‘তোরখাম, গুলাম খান ও স্পিন বলদাক দিয়ে রপ্তানি প্রায়ই বাঁধাগ্রস্ত হয়, এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। সরকার যদি নীমরোজ ও ইসলাম কালা বন্দর ব্যবহার করে তুরস্ক ও ভারতের মতো বাজারে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ দেয়, তবে তা বড় পদক্ষেপ হবে।’
অন্যদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ট্রানজিট সাময়িকভাবে স্থগিত আছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি বলেন, ‘পাকিস্তানি নাগরিকদের জীবন যে কোনো বাণিজ্যপণ্যের চেয়ে মূল্যবান।’