মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরে তিনি ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং একটি মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার আলোচনায় তুলেছিলেন। বিবিসি মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কুড়িটি অর্থনীতির জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতেই বাইডেন ভারতে গিয়েছিলেন। ওই সম্মেলনের অবকাশে তিনি মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। অবশ্য গত রোববার সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই তিনি ভারত থেকে ভিয়েতনামের উদ্দেশে রওনা দেন।
ভিয়েতনামের হ্যানয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ওই মন্তব্যটি করেন। সেখানে তিনি আরও জানান, ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে কীভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায় তা নিয়ে মোদির সঙ্গে তার ‘বিশদ আলোচনা’ হয়েছে।
এর আগে হোয়াইট হাউস সূত্রেও বলা হয়েছিল, দিল্লিতে মোদি-বাইডেন বৈঠকের পর আমেরিকার পক্ষ থেকে একটি যৌথ সাংবাদিক বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ জানানো হলেও ভারত তাতে রাজি হয়নি।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান আরও জানিয়েছিলেন, তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠকের সময় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন না হোক, অন্ততপক্ষে একটি ‘প্রেস পুল স্প্রে’র ব্যবস্থা করারও আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এ ধরনের ‘প্রেস পুল স্প্রে’ হোয়াইট হাউসে নিয়মিতই হয়, যেখানে একঝাঁক সাংবাদিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা সফররত বিশ্বনেতাদের প্রশ্ন করার সুযোগ পান।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র অবশ্য এ দিন বিবিসিকে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারতে আসাটা কোনো পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না। তাই শুধু আলাদা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনেরও কোনো প্রশ্ন ছিল না।
তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেই এ দিন ভিয়েতনামে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভারতে যেভাবে মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আচরণ করা হচ্ছে তাতে তার প্রশাসন মোটেই সন্তুষ্ট নয়।
‘ভারতে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমশ যে অবনতি হচ্ছে, অ্যাক্টিভিস্ট ও অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা বহুদিন ধরেই সে কথা বলে আসছেন।
বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মূলত মুসলিমদের ওপর আক্রমণের ঘটনাও অনেক বেড়ে গেছে বলে তারা জানিয়েছেন। যদিও নরেন্দ্র মোদি সরকার এই সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য এ দিন পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নন।
হ্যানয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, মানবাধিকারকে মর্যাদা দেয়াটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমি সব সময় বলে থাকি। আর ওখানেও (দিল্লিতে) সেটা আমি উত্থাপন করেছি। একটা সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ গড়ে তুলতে সুশীল সমাজ ও মুক্ত সংবাদমাধ্যম যে কত বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটাও আমি মোদিকে বলেছি।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) গত মে মাসে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডমের যে সর্বশেষ সূচক বা ইনডেক্স প্রকাশ করেছে, তাতে ভারতের অবস্থান ১১ ধাপ নেমে গেছে। ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের র্যাঙ্কিং এখন ১৬১।
বাইডেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা যেন ভারতের সঙ্গে তাদের আলোচনায় এই বিষয়গুলো তোলেন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুদিন ধরেই সেই দাবি জানিয়ে আসছেন।
কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীনের উত্থানে রাশ টানার চেষ্টায় ভারতকে যেহেতু আমেরিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে দেখে তাই এ ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন খুব সাবধানে পা ফেলতে চাইবে।
‘আমেরিকা জ্ঞান দিতে চায় না’
গত জুন মাসেই নরেন্দ্র মোদি যখন রাষ্ট্রীয় সফরে আমেরিকা গিয়েছিলেন, তখন মার্কিন প্রশাসন তাকে বিপুল অভ্যর্থনায় স্বাগত জানিয়েছিল।
সেই সফরের ঠিক আগেই মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছিলেন, ‘কোনো দেশে অধিকার যখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে তখন আমেরিকা অবশ্যই নিজস্ব মতামত তাদের বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু সেটা আমরা এমনভাবে করি যেন না মনে হয় আমেরিকা জ্ঞান দিচ্ছে, কিংবা আমরা এমন কোনো ভাব দেখাই না যাতে মনে হয় আমাদের নিজেদের দেশে কোনো সমস্যা নেই’, বলে সে সময় মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
হ্যানয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর নিয়েও কথা বলেছেন, যে সমঝোতাটি দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময়ই সম্পাদিত হয়েছে।
বাইডেন এই করিডরকে একটি ‘গ্রাউন্ডব্রেকিং পার্টনারশিপ’ বা ‘যুগান্তকারী অংশীদারী’ বলেও বর্ণনা করেন।
এই করিডরে সৌদি বা আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে রেলপথে সংযুক্ত করার এবং তারপর সমুদ্রপথে একদিকে তাদের ভারতের সঙ্গে ও অন্য দিকে ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেই এই প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিল্লিতে গিয়ে পৌঁছান।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তির চাপের কাছে রাশিয়া কখনো নতি স্বীকার করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার গভীরে কোনো সামরিক হামলা হলে দেশটি অপ্রতিরোধ্য ও ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এই মন্তব্য করেন। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এই পদক্ষেপের ফলে বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক তেলের দাম প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে যায় এবং ভারত রুশ তেল আমদানি কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।
পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞাগুলো অবন্ধুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা কিছু প্রভাব ফেলবে বটে, কিন্তু রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতি বা কল্যাণে তা বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার জ্বালানি খাত এখনো আত্মবিশ্বাসী ও স্থিতিশীল।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি নিঃসন্দেহে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা। কিন্তু কোনো সম্মানিত দেশ বা সম্মানিত জনগণ কখনো চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয় না।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে রসিকতা করতে গিয়ে পুতিন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে হয়তো পশ্চিমারা রাশিয়ার টয়লেটও আমদানি করতে পারবে না। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।
পুতিন আরও সতর্ক করেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়ার রপ্তানি ব্যাহত হলে তেলের দাম হু-হু করে বেড়ে যাবে, যার প্রভাব মার্কিন বাজার ও জ্বালানি স্টেশনগুলোতেও পড়বে।
যদিও স্বল্পমেয়াদে নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর অর্থনৈতিক প্রভাব সীমিত হতে পারে, বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তিনি রাশিয়ার আর্থিক প্রবাহে চাপ তৈরি করে ক্রেমলিনকে যুদ্ধবিরতির দিকে ঠেলে দিতে চান।
তবে ভারত রুশ অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লেবাননের দক্ষিণ ও বেকা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, যেগুলোকে তারা ‘সন্ত্রাসী অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। বৃহস্পতিবারের এসব হামলায় একাধিক নিরীহ বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মেহের নিউজ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই হামলাগুলোকে ‘সন্ত্রাসী ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিহতদের পরিবার ও লেবাননের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ইসরায়েলি দখলদার শাসনকেই এসব অপরাধের জন্য বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত।
বাঘাই বলেন, ইসরায়েলের এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা থেকেই উৎসারিত।
তার মতে, লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর বারবার হামলা এবং যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিক লঙ্ঘন ইসরায়েলের ‘অন্তর্নিহিত সন্ত্রাসী ও আধিপত্যবাদী চরিত্রের’ই প্রমাণ বহন করে।
তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
ইরানি মুখপাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা ইসরায়েলের এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় এবং লেবাননসহ অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
’নতুন আক্রমণ হবে আরেকটি ব্যর্থতা’
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান বলেছেন, তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ‘পুনরায় শক্তি প্রয়োগের’আশঙ্কা করছেন তিনি। চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একটি নজিরবিহীন বোমা হামলা চালায়। ফলে যুদ্ধ শুরু হলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনাগুলোর পাশাপাশি আবাসিক এলাকাগুলোকে টার্গেট করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।
এই সংঘাত এপ্রিলে শুরু হওয়া তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরমাণু আলোচনাকে ব্যাহত করে। ২৪ জুন থেকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।
সুইস সংবাদপত্র ‘লে টেম্পসের’ সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ‘যদি কূটনীতি ব্যর্থ হয়, তাহলে আমি পুনরায় শক্তি প্রয়োগের আশঙ্কা করছি’। তার এই সাক্ষাৎকারটি বুধবার প্রকাশিত হয়।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বৃহস্পতিবার বলেছেন, গ্রোসির মন্তব্য ‘উদ্বেগের বশে নাকি হুমকি হিসেবে’ তা স্পষ্ট নয়।
তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘কিন্তু যারা এই ধরনের হুমকি দিচ্ছেন তাদের বুঝতে হবে যে একটি ব্যর্থ অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করলে তা কেবল আরেকটি ব্যর্থতার দিকেই নিয়ে যাবে’।
১২ দিনের যুদ্ধের পরপরই ইরান এবং আইএইএ’র মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তেহরান ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলার পর্যাপ্ত নিন্দা জানাতে আইএইএ’র ব্যর্থতার কারণে সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে।
সেপ্টেম্বরে, ইরান এবং আইএইএ একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামোতে সম্মত হয়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অধীনে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো ফিরিয়ে আনার পর তেহরান সেই কাঠামোটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে আসার পর এই চুক্তি কার্যকরভাবে বাতিল হয়ে যায়।
সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেছেন, যুদ্ধের পর থেকে ইরান ‘পরিদর্শনের ওপর সীমা আরোপ করেছে কারণ, এটি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ এবং শুধুমাত্র পরিদর্শকদের ‘অল্প পরিমাণে’ অনুমতি দিয়েছে।
নিউজিল্যান্ড ব্যবসায়িক বিনিয়োগকারীদের জন্য কর্ম ভিসা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশি অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের স্থানীয় ব্যবসায় বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থায়ী বসবাসের সুযোগও দেবে দেশটি। এই ভিসা আবেদনকারীরা তাদের অংশীদার এবং নির্ভরশীল সন্তানদেরও নিউজিল্যান্ডে নিয়ে আসার অনুমতি পাবেন। একবার দেশটিতে প্রবেশ করতে পারলে পুনরায় আবেদন ছাড়াই চার বছর পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা বৈধ বসবাস করতে পারবেন। সে সঙ্গে যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে স্থায়ী হওয়ার সুযোগও থাকছে। খবর দ্য ইকোনমিক টাইমসের।
এ ভিসাপ্রাপ্তির যোগ্যতার মানদণ্ড হিসেবে দুটি বিকল্প রাখা হয়েছে। তা হলো- নিউজিল্যান্ডে ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা। এর ফলে তিন বছরের কর্ম ভিসা প্রদান করা হবে। এরপর স্থায়ী হওয়ার ব্যাপারটি বিবেচনা করা হবে। অপরটি হলো, নিউজিল্যান্ডে ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা। এর ফলে ১২ মাস পরেই স্থায়ী বসবাসের পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তবে স্থায়ী হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য আবেদনকারীদের কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে পরিচালিত একটি ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে হবে। কমপক্ষে ৫০০,০০০ নিউজিল্যান্ড ডলার রিজার্ভ তহবিল থাকতে হবে। উল্লেখযোগ্য, ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা প্রদর্শন করতে হবে। যেমন, পাঁচ বা তার বেশি পূর্ণ-সময়ের কর্মচারীসহ একটি কোম্পানির মালিকানা বা বার্ষিক ১ মিলিয়ন নিউজিল্যান্ড ডলার আয় করা।
আবেদনকারীদের ৫৫ বছরের কম বয়সি হতে হবে। থাকতে হবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা। স্বাস্থ্য ও চরিত্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
তবে কিছু ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে অযোগ্য বিবেচিত হবেন। যার মধ্যে রয়েছে ছাড়ের দোকান, ড্রপ-শিপিং কার্যক্রম, ফাস্ট ফুড আউটলেট, জুয়া, তামাক এবং ভ্যাপিং ব্যবসা, প্রাপ্তবয়স্কদের বিনোদন, গৃহভিত্তিক ব্যবসা, ফ্র্যাঞ্চাইজড ব্যবসা এবং অভিবাসন পরামর্শ পরিসেবা।
প্রয়োজনীয় সময়কাল ধরে ব্যবসা পরিচালনা করার পরে বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়িক বিনিয়োগকারী আবাসিক ভিসার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। যোগ্য হওয়ার জন্য তাদের সক্রিয়ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে, মালিকানা বজায় রাখতে হবে, কমপক্ষে পাঁচটি ফুলটাইম সমতুল্য চাকরির সুযোগ তৈরি করে রাখতে হবে। নিউজিল্যান্ডের নাগরিক বা বাসিন্দার জন্য একটি নতুন ফুলটাইম চাকরির পদ তৈরি করতে হবে, ব্যবসাকে সচ্ছল রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্য ও চরিত্র পরীক্ষা ছাড়াও তিন বছর ধরে প্রতি বছর ১৮৪ দিন নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করতে হবে।
নতুন ভিসা প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো- স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অভিবাসীদের একটি আইনগত সুবিধা দেওয়া। পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বিদেশি অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা।
তুরস্কের বোডরুম শহরের অবকাশ যাপন কেন্দ্রের কাছে ইজিয়ান সাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা ডুবে সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
আজ শুক্রবার তুরস্কের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ইস্তাম্বুল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
সংবাদ সংস্থা ডিএইচএ জানায়, নৌকাডুবির পর একজন সাঁতরে তীরে উঠেছে এবং আরেকজনের সন্ধানে অভিযান চলছে।
বোডরুম শহরটি গ্রিসের কস দ্বীপের কাছে অবস্থিত। ইউরোপীয় দেশগুলোয় পৌঁছানোর চেষ্টাকারীদের কাছে এটি পছন্দের পথ। তবে, এই পথে যাত্রাকালে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, এ বছর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর প্রাণহানি ঘটেছে। সূত্র : বাসস
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গাজায় সাহায্য পাঠানোর পরিমাণ খুব একটা উন্নতি হয়নি। এমনকি ক্ষুধারও কোনো লক্ষণীয় হ্রাস পায়নি।
জেনেভা থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রিয়াসুস জেনেভা সদর দপ্তরে বক্তৃতাকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ কারণ, যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করছে তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়।’
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ১০ অক্টোবর থেকে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ‘ক্ষুধাও কমেনি। ইসরাইলি বাধার কারণে পর্যাপ্ত খাদ্য গাজায় প্রবেশ করতে পারছেনা।’
যুদ্ধের সময় ইসরাইল বারবার গাজা উপত্যকায় সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে, যা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এ কারণে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চুক্তিতে প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক প্রবেশের ব্যবস্থা থাকলেও টেড্রোস বলেছেন, বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ২শ’ থেকে ৩শ’ ট্রাক প্রবেশ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, সম্পদ নেই। ‘এতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমে যায়’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি বহাল থাকার প্রশংসা করেছেন, কিন্তু সতর্ক করে বলেছেন, ‘সঙ্কট এখনও শেষ হয়নি এবং চাহিদাও প্রচুর।
‘যদিও সাহায্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, তারপরও এইসব সাহায্য প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের অতর্কিত হামলার পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের দুই বছরের যুদ্ধের সময় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছিল।
টেড্রোস বলেছেন, ‘গাজায় সম্পূর্ণরূপে কার্যকর কোনো হাসপাতাল নেই এবং ৩৬টির মধ্যে মাত্র ১৪টিই কাজ করছে’। ‘প্রয়োজনীয় জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, সরঞ্জাম এবং স্বাস্থ্যকর্মীর তীব্র ঘাটতি রয়েছে’।
তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাসপাতালগুলোতে আরও বেশি চিকিৎসা সরবরাহ পাঠাচ্ছে। অতিরিক্ত জরুরি চিকিৎসা দল মোতায়েন করছে এবং চিকিৎসা স্থানান্তর বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘গাজার স্বাস্থ্য কাঠামো পুনর্নির্মাণের মোট খরচ হবে কমপক্ষে ৭ বিলিয়ন ডলার’।সূত্র : বাসস
পাকিস্তানের সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ড. তারিক ফজল চৌধুরী জানিয়েছেন, যদি তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে তাহলে কারাবন্দি নেতা ইমরান খানকে আদিয়ালা কারাগার থেকে তার নিজ বাড়ি বানিগালা রেসিডেন্সে স্থানান্তর করা হতে পারে।
বুধবার এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা বর্তমানে কোনো বাধা ছাড়াই জেলে তার পুরো পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। যদি দেখা করার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, আমরা তা পর্যালোচনা করবো। তারা যদি আবেদন করে, আমরা তাকে বানিগালায় স্থানান্তর করতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, আমরা অবশ্যই তাকে স্থানান্তর করব, সেখানে তিনি মানুষের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন, লুডু খেলতে পারবেন—যা ইচ্ছা করতে পারবেন। আমরা চাই পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করুন।
চৌধুরী আরও জানান, কারাগারে ইমরান খানের জন্য ফার্স্ট-ক্লাস মানের ব্যায়াম সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) বৃহস্পতিবার আদিয়ালা জেল সুপারিনটেনডেন্টকে নির্দেশ দিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সপ্তাহে দুইবার সাক্ষাতের অনুমতি সংক্রান্ত আদালতের আগের আদেশ বাস্তবায়ন করতে।
পিটিআই ও ইমরানের পরিবারের অভিযোগ, কারাগার কর্তৃপক্ষ বারবার ইচ্ছাকৃতভাবে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ বাধাগ্রস্ত বা সাবোটাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই এশিয়ায় একটি ‘বড় সফরে’ আসছেন। সেখানে সকলের নজর চীনা নেতা সি চিনপিংয়ের সঙ্গে তার প্রত্যাশিত বৈঠকের দিকে। শুল্ক এবং ভূরাজনৈতিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে এই বৈঠকের ফলাফল বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর বিশাল প্রভাব ফেলবে।
গত বুধবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মালয়েশিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি ‘বড় সফর’ শুরু করতে যাচ্ছেন।
সফরের বেশিরভাগ সময়টা অনিশ্চয়তার মধ্যে ঢাকা। হোয়াইট হাউসেও তেমন কোনো বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। ট্রাম্প এও আশঙ্কা করছেন, চলমান উত্তেজনার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় সির সঙ্গে তার প্রত্যাশিত বৈঠক নাও হতে পারে।
কিন্তু ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি চীনের সঙ্গে একটি ‘ভালো চুক্তি’ সই করতে এবং বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান তিক্ত বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশা করছেন।
মালয়েশিয়া এবং জাপান
২৬-২৮ অক্টোবর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন (আসিয়ান)-এর শীর্ষ সম্মেলনে তার প্রথম গন্তব্য মালয়েশিয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এই সম্মেলনগুলো খুব একটা পাত্তা দেননি।
ট্রাম্প মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সই করতে প্রস্তুত- তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সইয়ের তত্ত্বাবধান করা। কারণ তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত বুধবার বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার আরও ইতিবাচক ফলাফল দেখতে আগ্রহী।’
দুই দেশের কর্মকর্তারা এএফপিকে জানিয়েছেন, কয়েক মাসের টানাপোড়েনের পর সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন নেতা ব্রাজিলের নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গেও দেখা করতে পারেন।
ট্রাম্পের পরবর্তী গন্তব্য টোকিও হবে বলে মনে করা হচ্ছে- যেখানে তিনি রক্ষণশীল নেতা সানাই তাকাইচির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। সানাই এই সপ্তাহে জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
‘চূড়ান্ত পর্ব’ দক্ষিণ কোরিয়ায়
এই সফরের চূড়ান্ত পর্ব দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে ট্রাম্প আগামী ২৯ অক্টোবর এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য পৌঁছাবেন এবং এখানেই সম্ভবত শি’র সঙ্গে দেখা করবেন।
ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর দুই নেতার প্রথম বৈঠকের মাধ্যমে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান হতে পারে। তবে বেইজিংয়ের বিরল খনিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করেছে।
ট্রাম্প প্রথমে বৈঠক বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন এবং নতুন করে শুল্কারোপ করেছিলেন। তারপর বলেছিলেন, তিনি সর্বোপরি এগিয়ে যাবেন।
গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘হয়তো (বৈঠক) এটি ঘটবে না।’ কিন্তু গত বুধবার বলেন, তিনি ‘সবকিছুর বিষয়ে’ শি’র সঙ্গে একটি চুক্তি করতে আশাবাদী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চীনা নেতা রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ‘বড় প্রভাব’ রাখতে পারবেন।
উত্তর কোরিয়াও আলোচনার আলোচ্য সূচিতে থাকবে। ট্রাম্পের সফরের ঠিক কয়েকদিন আগে গত বুধবার কিম জং উনের দেশ একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গেও দেখা করার আশা করছেন। তবে এবারের এশিয়া সফরে নতুন কোনো বৈঠকে নাও হতে পারে।
ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত গাজা শহরে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এবং শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ইসরায়েলের তৈরি করা ‘কৃত্রিম বাধা’। বৃহস্পতিবার কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান বারাকাত আল জাজিরাকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি পক্ষ থেকে প্রথমেই তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করা উচিত ছিল ... তারা চুক্তির সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণভাবে এটি করেনি।’
‘এরপর তারা সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ... কিন্তু তারা ধীরে ধীরে এটি বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। তারা আশা করছে, এটি একটি সংকট তৈরি করবে এবং হামাস কোনো না কোনওভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।’
অধ্যাপক সুলতান বারাকাত আরও বলেন, অধিকৃত পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার বিষয়ে দুটি বিল এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি নেসেটের পদক্ষেপগুলো ‘সম্পূর্ণরূপে ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনকে বিরক্ত করার জন্য’ ডিজাইন করা হয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং হামাস একটি শান্তি পরিকল্পনার চুক্তিতে পৌঁছেছে। প্রথম পর্যায়ে মধ্যে সমস্ত বন্দিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি রেখার বাইরে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
১০ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়। তবে তখন থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অসংখ্যবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে।
বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েল এখনও বিদেশি সাংবাদিকদের গাজা উপত্যকায় প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের জন্য গাজায় সরাসরি সংবাদ সংগ্রহ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের প্রকৃত তথ্য গোপন ও যুদ্ধাপরাধ আড়াল করতেই বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জেরুজালেমের সর্বোচ্চ আদালতে বিদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (এফপিএ)-এর দায়ের করা মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটি সাংবাদিকদের গাজা উপত্যকায় অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলি সরকারকে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য আরও ৩০ দিন সময় দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, গাজায় বিদেশি গণমাধ্যমের প্রবেশে বাধা দেওয়া তথ্য গোপন ও যুদ্ধাপরাধ আড়াল করার প্রচেষ্টা। তারা অবিলম্বে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে এফপিএ জানিয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করছে যাতে সাংবাদিকদের প্রবেশ যতটা সম্ভব বিলম্বিত হয়।
গাজা উপত্যকায় বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে ইসরায়েল। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গণহত্যামূলক যুদ্ধের শুরুর পর কেবল নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত সময়ের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে গাজা সফর করতে পেরেছেন বিদেশি সাংবাদিকরা।
এদিকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরাই এখন গাজার ভেতর থেকে খবর পৌঁছে দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ২০০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।এত সংখ্যক সাংবাদিক নিহতের ঘটনা ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৬৮,২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৭০,৩০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
দখলকৃত পশ্চিম তীরেও একই সময়ে সহিংসতা বেড়েছে। সেখানে অন্তত এক হাজার ৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১০ হাজার ৩০০ জন আহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল ২৫০ জন দণ্ডিত ফিলিস্তিনি বন্দির পাশাপাশি গাজার ভেতর থেকে আটক করা আরও প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন গাজাবাসীকে মুক্তি দিয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী তাদের আটক করেছিল এবং দীর্ঘ মাস ধরে কোনো বিচার ছাড়াই কারাগারে রেখেছিল।
দণ্ডিত বন্দিদের মতো নয়, এই আটক ব্যক্তিদের কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি, কিংবা আদালতে তোলা হয়নি। তাদের অধিকাংশকেই ইসরায়েলি কারাগারে নিঃসঙ্গভাবে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছিল। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
ইসরায়েল দাবি করেছে, এই আটক ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নির্বিচারে অভিযান চালিয়ে অনেক সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে গেছে তথাকথিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশে, যাদের অনেকেরই কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না।
মুক্তি পাওয়া বহু বন্দি জানিয়েছেন, কারাগারে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, নিয়মিত মারধর, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাবারের অভাব ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাদের।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিপুল সংখ্যক গাজাবাসীকে আটক করে।
২০০২ সালের ‘অবৈধ যোদ্ধাদের আটক আইন’-এর আওতায় আইডিএফ (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) ও শিন বেত (ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা) গাজার ভেতর থেকে এসব মানুষকে আটক করে এবং বিভিন্ন কারাগারে পাঠায়।
তাদের অনেককে আটক করা হয় হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের উপস্থিতির অভিযোগ তোলে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবাসিক ভবন, রাস্তার চেকপয়েন্ট ও চলাচলের সময়ও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বেশিরভাগ আমেরিকান নাগরিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখনই ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং জরিপ প্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এক যৌথ সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই ফলাফল।
জরিপ অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষে জনসমর্থন ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
রয়টার্স-ইপসোসের এই ৬ দিনব্যাপী অনলাইন জরিপ গত সোমবার শেষ হয়। গতকাল বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ৫৯ শতাংশ আমেরিকান ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষে মত দিয়েছেন। অপরদিকে, ৩৩ শতাংশ এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন এবং বাকিরা এ বিষয়ে অনিশ্চিত কিংবা কোনো মতামত দেননি।
দলীয়ভাবে দেখা গেলে, ডেমোক্র্যাটদের ৮০ শতাংশ এবং রিপাবলিকানদের ৪১ শতাংশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশ এখনও ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির বিরোধী।
এই সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান মার্কিন জনগণের সামগ্রিক মতামতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর অনেকেই ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে- এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া। তবে এসব দেশের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিন অঞ্চলে অব্যাহত সংঘাতে এখন পর্যন্ত লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, আর প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়, যাতে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন এবং ২৫০ জনের বেশিকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করা হয়। এর পরদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। টানা বোমা হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। অপরদিকে, ৩২ শতাংশ এই মতের বিরোধিতা করেছেন।
গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছেন। পাশাপাশি গাজা যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করছেন তিনি।
রয়টার্স-ইপসোসের জরিপে আরও দেখা যায় ৫১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, যদি ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তি প্রক্রিয়ায় সফল হন তবে তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতির যোগ্য’ হবেন। অন্যদিকে ৪২ শতাংশ এই বিষয়ে একমত নন।
রয়টার্স ও ইপসোসের যৌথভাবে পরিচালিত এই অনলাইন জরিপে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৪ হাজার ৩৮৫ জন অংশ নিয়েছেন।
উগান্ডার একটি প্রধান মহাসড়কে দুটি বাসের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬৩ জন নিহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোররাতের দিকে দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়।
পূর্ব আফ্রিকার দেশটি পুলিশ এক্স-পোস্টে জানিয়েছে, মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি কাম্পালা-গুলু মহাসড়কে ঘটেছে। ওভারটেকিংয়ের সময় বিপরীতমুখী দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংঘর্ষ এড়াতে চালকদের মধ্যে একজন গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ সৃষ্টি হয়, যার ফলে কমপক্ষে চারটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং বেশ কয়েকবার উল্টে যায়। ফলস্বরূপ ৬৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আহতদের কিরিয়ান্দোঙ্গো হাসপাতাল এবং নিকটবর্তী অন্যান্য চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে আহতদের সংখ্যা বা তাদের আঘাতের পরিমাণ সম্পর্কে আর কোনো বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়নি।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘর থেকে চুরি হওয়া অলংকারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। প্রতি ইউরো ১৪১ টাকা টাকা হিসেবে এই বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। জাদুঘরের কিউরেটরের বরাত দিয়ে ফ্রান্সের একজন সরকারি কৌঁসুলি এ তথ্য জানিয়েছেন।
সরকারি কৌঁসুলি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, অলংকারগুলোর দামের অঙ্ক ‘অনেক বড়’। তবে অর্থমূল্যের চেয়ে এ ঘটনায় ফ্রান্সের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ক্ষতি অনেক বেশি।
জানা যায়, চুরি হওয়া সামগ্রীর মধ্যে আছে রাজকীয় অলংকার ও মূল্যবান উপহার। দুই নেপোলিয়ন সম্রাট তাদের স্ত্রীদের অলংকারগুলো উপহার দিয়েছিলেন।
গত রোববার সকালে জাদুঘর খোলার অল্প কিছুক্ষণ পরই, চোরেরা প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতির মাধ্যমে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে মাত্র আট মিনিটে লুট সম্পন্ন করে পালিয়ে যায়।
চুরির দুদিন পরও অভিযুক্তদের ধরা না পড়ায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, গয়নাগুলো ইতোমধ্যেই ধ্বংস বা পাচার হয়ে গেছে।
প্রসিকিউটর বেকো বলেন, গয়নার আনুমানিক মূল্য প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো চোরদের নিরুৎসাহিত করা, যেন তারা সেগুলো নষ্ট না করে। তিনি আরও বলেন, যদি তারা এই গয়নাগুলো গলানোর মতো ভয়াবহ ভুল করে, তাহলেও তারা পুরো অর্থ পাবে না।
চুরি হওয়া ঐতিহাসিক সামগ্রীর মধ্যে ছিল সম্রাট নেপোলিয়নের স্ত্রীকে উপহার দেওয়া হীরা ও পান্নার হার, নেপোলিয়ন তৃতীয়ের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজেনির পরা টিয়ারা এবং রানী মেরি-অ্যামেলির মালিকানাধীন আরও কয়েকটি অলংকার।
তদন্তকারীরা চোরদের পলায়নপথে সম্রাজ্ঞী ইউজেনির এক ক্ষতিগ্রস্ত মুকুট উদ্ধার করেছেন- ধারণা করা হচ্ছে, পালানোর তাড়াহুড়োয় সেটি পড়ে গিয়েছিল।
চারজন মুখোশধারী ডাকাত একটি বিশেষভাবে তৈরি ট্রাক ব্যবহার করে সেন নদীর পাশে অবস্থিত গ্যালারি দ্য আপোলন (Galerie d’Apollon)-এর ব্যালকনি দিয়ে প্রবেশ করে। ট্রাকটিতে একটি যান্ত্রিক লিফট ছিল, যার সাহায্যে তারা প্রথম তলার কাচের জানালা কেটে ভিতরে ঢোকে। এরপর তারা নিরাপত্তা প্রহরীদের হুমকি দিলে জাদুঘর খালি করে দেওয়া হয়।
পালানোর আগে তারা ট্রাকটিতে আগুন দিতে চাইলেও জাদুঘরের এক কর্মচারী তা প্রতিহত করেন। পরে দেখা যায়, চোরেরা স্কুটারে চেপে পালিয়ে যায়।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এই চুরিকে ফ্রান্সের ঐতিহ্যের ওপর একটি হামলা বলে উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার পর দেশের সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ল্যুভরের প্রতি তিনটি কক্ষের একটিতে সিসিটিভি ছিল না এবং অ্যালার্ম সিস্টেমও কাজ করেনি।
ফরাসি বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানাঁ স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তা প্রটোকল ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, চোরেরা যেভাবে পরিবর্তিত ট্রাক নিয়ে জাদুঘর পর্যন্ত যেতে পেরেছে, তা ফ্রান্সের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।
কর্তৃপক্ষের ধারণা, এটি কোনো সাধারণ চুরি নয়- বরং পেশাদার একটি সংঘবদ্ধ দলের কাজ।
শিল্পকর্ম পুনরুদ্ধার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তদন্তকারীদের হাতে চুরি হওয়া সামগ্রী উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ এক বা দুদিন সময় ছিল। এরপর সেগুলোকে স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাওয়া বলে গণ্য করা যেতে পারে।
তাদের মতে, চুরি হওয়া গয়নাগুলো সম্ভবত ইতোমধ্যেই ধাতু ও রত্ন আলাদা করে পাচার করা হয়েছে এবং প্রকৃত মূল্যের একটি ক্ষুদ্র অংশের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তজাচি হানেগবিকে বরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কাতারে হামলা ও গাজা সিটি দখলে অভিযানসহ নীতিগত কয়েকটি ইস্যুতে মতবিরোধের পর এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
হানেগবি নিজেও এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ব্যর্থতাগুলো নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের নতুন প্রধান নিয়োগ দেওয়া হবে বলে তজাচি হানেগবিকে জানিয়ে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। ফলে হানেগবির দায়িত্বকাল শেষ হচ্ছে।
হানেগবি বলেছেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলাকে ঘিরে ইসরায়েলের ব্যর্থতা নিয়ে ‘বিস্তারিত তদন্ত’ হওয়া উচিত এবং তিনি সেই ব্যর্থতার দায় নিজেও স্বীকার করছেন।
আরেক সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়থ আহরোনথ পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, হানেগবির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান গিল রেইখ। তিনি এখন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-সহ স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের ওপর চালানো বিমান হামলা এবং গাজা সিটি দখলের সামরিক অভিযানের বিষয়টি নিয়ে হানেগবির সঙ্গে নেতানিয়াহুর তীব্র বিরোধ দেখা দেয়।
অভিযান শুরু হওয়ার আগে মন্ত্রিসভায় হানেগবি নেতানিয়াহুর গাজা দখলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘গাজা সিটি দখল করলে ইসরায়েলি বন্দিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়বে। আমি সেনাপ্রধান ইয়াল জামিরের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এ কারণেই আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর দোহায় চালানো ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ হামাস সদস্য ও এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। বিশ্বজুড়ে বহু দেশ ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং এক লাখ ৭০ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
সূত্র: জেরুজালেম পোস্ট
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি বৈঠকের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে হোয়াইট হাউস। পরে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কোনো ‘অর্থহীন বৈঠকে’ বসে সময় নষ্ট করতে চান না। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, আলোচনার পথে একটি বড় বাধা হলো- বর্তমান সমররেখায় লড়াই বন্ধে রাশিয়ার অস্বীকৃতি।
এর আগে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে’ ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ‘কোনো পরিকল্পনা’ নেই। অথচ গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শান্তি প্রস্তাবের মূল পার্থক্যগুলো এ সপ্তাহে ক্রমেই আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এসব পার্থক্য দুই নেতার শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনাকে কার্যত শেষ করে দিয়েছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় তড়িঘড়ি আয়োজিত এক বৈঠকে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প ও পুতিন। তবে ওই বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল আসেনি।
ট্রাম্প-পুতিন দ্বিতীয় বৈঠকের পরিকল্পনা স্থগিত হওয়ার সিদ্ধান্তকে অনেকে দেখছেন আগের মতো অর্থহীন বৈঠক এড়ানোর কৌশল হিসেবে।
একজন জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কূটনীতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার মনে হয় রাশিয়া খুব বেশি কিছু চাইছিল, আর যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গেছে, বুদাপেস্টে ট্রাম্প কোনো চুক্তি করতে পারবেন না।’
ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের আগে এ সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, দুই মন্ত্রীর মধ্যে ইতোমধ্যেই ‘গঠনমূলক’ ফোনালাপ হয়েছে এবং আলাদা বৈঠকের আর ‘প্রয়োজন নেই’।
গত সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভ ও ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থিত এক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সমর্থন করেন। সেখানে বর্তমান সমররেখায় সংঘাত স্থির রাখার আহ্বান জানানো হয়।
ট্রাম্প সে সময় বলেন, ‘যেভাবে আছে, সেভাবেই সীমানারেখা টেনে দাও। আমি বলছি, সমররেখায় থামো, ঘরে ফিরে যাও, লড়াই থামাও, মানুষ হত্যা বন্ধ করও।’
তবে রাশিয়া বারবারই বর্তমান সমররেখা স্থির রাখার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়াকে এ প্রস্তাব একাধিকবার দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারই রাশিয়ার শর্ত।
গত মঙ্গলবার সের্গেই লাভরভ বলেন, মস্কো শুধু ‘দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তিতে’ আগ্রহী। তিনি ইঙ্গিত দেন, বর্তমান সমররেখায় সংঘাত স্থির করা মানে শুধু সাময়িক যুদ্ধবিরতি।
লাভরভ বলেন, সংঘাতের ‘মূল কারণগুলোর’ সমাধান করতে হবে। ক্রেমলিনের ভাষায়, এর মানে হলো, রাশিয়ার সর্বোচ্চ দাবিগুলো, দনবাস অঞ্চলে রুশ সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি ও ইউক্রেনীয় সেনাদের নিরস্ত্রীকরণ। এসব শর্ত কিয়েভ ও এর ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
একই দিন ইউরোপীয় নেতারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো আলোচনা শুরু হওয়া উচিত বর্তমান সমররেখা স্থির রাখার মাধ্যমে। রাশিয়া ‘শান্তির ব্যাপারে আন্তরিক নয়’ বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠক করেন ট্রাম্প। এর আগের দিন টেলিফোনে পুতিনের সঙ্গে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে শীর্ষ বৈঠক নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বৈঠক ‘বাগবিতণ্ডায়’ পরিণত হয়েছিল। একাধিক সূত্র জানায়, সম্ভাব্য এক চুক্তির অংশ হিসেবে ট্রাম্প ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিস্তীর্ণ অঞ্চল (একত্রে দনবাস নামে পরিচিত) রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে চাপ দিয়েছিলেন।
তবে জেলেনস্কি বরাবরই বলেছেন, ইউক্রেন দনবাসের যে অংশগুলো এখনো নিজেদের দখলে রেখেছে, তা কখনো ছাড়বে না। কারণ, রাশিয়া ওই অঞ্চলগুলো পরবর্তী হামলার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।