আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রণাধীন নাগারনো-কারাবাখ অঞ্চল ছাড়তে শুরু করেছেন জাতিগত আর্মেনীয় বাসিন্দারা। তারা আর্মেনিয়ার মূল ভূখণ্ডে চলে যাবেন।
বিবিসি জানায়, নাগারনো-কারবাখে এক লাখ ২০ হাজার আর্মেনীয় বাসিন্দা বাস করেন। গত সপ্তাহের লড়াইয়ে আজারবাইজানের কাছে পরাজয় মেনে নিয়েছে কারাবাখ কর্তৃপক্ষ। তবে আর্মেনীয় বাসিন্দারা আজারবাইজানের অংশ হিসেবে ওই অঞ্চলে বাস করতে চান না। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নাগোরনো কারাবাখের আর্মেনীয় বাসিন্দাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
কারাবাখ অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে এলাকাটি দখলে রেখেছিল আর্মেনিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয়। ২০২০ সালে ছয় সপ্তাহের লড়াইয়ে অঞ্চলটিতে উভয় পক্ষের বহু মানুষ হতাহত হন। গত ৯ মাস ধরে আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ কারাবাখ-আর্মেনিয়ার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক লাচিন করিডোর অবরুদ্ধ করে রাখে। গত সপ্তাহে জাতিগত আর্মেনিয় অধ্যুষিত এই অঞ্চলটিতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান চালায় আজারবাইজানের সেনাবাহিনী। পরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বির্তকিত অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে জাতিগত আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ।
আজারবাইজান জানিয়েছে, তারা জাতিগত আর্মেনীয়দের অধিকারের নিশ্চয়তা দেবে এবং এই অঞ্চলকে একীভূত করবে। কিন্তু আর্মেনীয়রা জানিয়েছে, তারা দমন-পীড়নের আশঙ্কা করছে। নাগোরনো কারাবাখ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘আমাদের জনগণ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে থাকতে চায় না। ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ আমাদের ঐতিহাসিক ভূমি ছেড়ে চলে যাওয়াটা বেছে নিয়েছে।
এদিকে কোনো রকম প্রতিরোধ ছাড়াই নাগোরনো-কারাবাখে আজারবাইজানের সেনাদের কাছে পরাজয় মেনে নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আর্মেনিয়ার জনতা। তারা আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ানের পদত্যাগের দাবি করে বিক্ষোভ করেন।
উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের অনত্যম তীর্থ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতের শিক্ষার্থীদের এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। কিন্তু এ বছর ‘স্টাডি ভিসা’ হিসেবে পরিচিত শিক্ষা ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ বছরের প্রথম ৯ মাসে আগের বছরের তুলনায় ভারতীয়রা ৩৮ শতাংশ ভিসা কম পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তথা স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্সের মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৬৪ হাজার ৮টি এফ-১ ভিসা বা স্টুডেন্ট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৪৯৫।
কোভিড মহামারির সময়, অর্থাৎ ২০২০ সালের পর এ বছরই সবচেয়ে কমসংখ্যক ভারতীয় শিক্ষার্থীর ভিসা অনুমোদন করা হয়েছে। সে বছর যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ৬ হাজার ৬৪৬ ভারতীয় শিক্ষার্থীকে ভিসা দিয়েছিল। মহামারির পর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ৯৩ হাজার ১৮১টি এফ-১ ভিসা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৫ হাজার ২৩৫।
তবে এফ-১ ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতই কম পেয়েছে এমনটা নয়। চীনা শিক্ষার্থীরাও চলতি বছর আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম ভিসা পেয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে চীনা শিক্ষার্থীদের জন্য ৭৩ হাজার ৭৮১টি এফ-১ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে ইস্যু করা হয়েছিল ৮০ হাজার ৬০৩টি ভিসা।
এফ-১ ভিসা একটি নন-অভিবাসী ভিসা, যা সারা বিশ্ব থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণকালীন পড়াশোনার অনুমতি দেয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত ভিসার ধরন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- ২০২৪ সালে ভারতীয়রা চীনা নন-ইমিগ্রান্টদের ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বিদেশি শিক্ষার্থী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা ওপেন ডোরসের প্রতিবেদনের মতে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৩ লাখ ৩১ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯২৩।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমেছে। ওপেন ডোরস-২০২৪ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৮। ২০২২-২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৬। অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার কম।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তোলা একটি প্রস্তাব গতকাল বুধবার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে। নিউইয়র্ক, জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
খবরে বলা হয়, অবিলম্বে জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে তোলা প্রস্তাবে ১৫৮টি ভোট পড়ে দাবির পক্ষে, বিপক্ষে পড়েছে ৯ ভোট এবং অনুপস্থিত ছিল ১৩টি দেশ।
ওয়াশিংটন তার মিত্র ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য কাউন্সিলে আগে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় হামাসের সাথে যুদ্ধ চলছে।
যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে এ ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কাজের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে।
ভোটের আগে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর রবার্ট উড বুধবার পূর্বের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা "লজ্জাজনক এবং ভুল" হবে। ইসরাইলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, "আজকের সাধারণ পরিষদে সামনে প্রস্তাবগুলো যুক্তির ঊর্ধ্বে। আজকের ভোটটি সমবেদনার ভোট নয়। এটি জটিলতার জন্য ভোট।"
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোয় বাতিল হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই এই বৈঠকের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলেও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের মতো এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ভোটের আগে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কয়েক ডজন প্রতিনিধি ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরেও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ হয়েছিল। প্রস্তাবটির পক্ষে ১৫৩টি দেশ ভোট দেয় তখন। অন্যদিকে প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেয় মাত্র ১০টি দেশ। যার মধ্যে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে জাতিসংঘ জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৪৪,৮০৫ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক ।
জন্ম নিবন্ধনের সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রগতি সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ কোটি শিশু ‘অদৃশ্য’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার-বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সংস্থাটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ‘অদৃশ্য’ এসব শিশু তাদের বৈধ পরিচয় থেকে বঞ্চিত এবং তারা রাষ্ট্রহীনতা ও অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে।
ইউনিসেফ গত মঙ্গলবার এই সতর্কতা উচ্চারণ করে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। জাতিসংঘের এই শিশু সংস্থাটি তাদের এক নতুন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সি ৭৭ শতাংশ শিশুর জন্ম গত পাঁচ বছরে নিবন্ধিত হয়েছে, যা ২০১৯ সাল থেকে দুই শতাংশ বেশি। কিন্তু এই ধরনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও ১৫ কোটি অল্পবয়সি শিশু নিবন্ধিত না হওয়ার কারণে তারা আইনি বিভিন্ন বাধার মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫ কোটি শিশু যাদের নিবন্ধন করা হয়েছে কিন্তু তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক জন্মসনদ নেই।
মূলত একজন ব্যক্তির পরিচয় এবং বয়স নিশ্চিত করার জন্য তার জন্ম সনদ গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয়তার প্রমাণ এবং শিশুশ্রম, জোরপূর্বক বিবাহ বা সামরিক বাহিনীতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিয়োগ থেকে সুরক্ষার জন্য এই জাতীয় প্রমাণ প্রায়শই অপরিহার্য।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেন, জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করে যে, শিশুরা অবিলম্বে আইনের অধীনে স্বীকৃত হয়। এটি তাদের যেকোনো ক্ষতি এবং শোষণ থেকে সুরক্ষার একটি ভিত্তিও প্রদান করে, সেইসঙ্গে ভ্যাকসিন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো পাওয়ার সুযোগও প্রদান করে।
তিনি আরও বলেন, অগ্রগতি সত্ত্বেও অনেক শিশু গণনার বাইরে এবং হিসাবহীন থেকে যায়- যা সরকার বা আইনের চোখে কার্যকরভাবে অদৃশ্য।
এই শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোতে বসবাস করে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এ অঞ্চলে শুধু ৫১ শতাংশ অল্পবয়সি ছেলে ও মেয়ে নিবন্ধিত। ইউনিসেফ বলেছে, জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনেক বাধা রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধনের যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিবারের জ্ঞানের অভাব, উচ্চ ব্যয়, অপর্যাপ্ত রাজনৈতিক ইচ্ছা এবং কিছু অঞ্চলে, লিঙ্গ, জাতিগত বা ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের মতো বিষয়ও রয়েছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগের ঘটনায় প্রতিবেশী ভারতের রাজনীতিকদের বিতর্কিত মন্তব্য থামছেই না। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও বিরোধী দল বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রায় প্রত্যেক দিনই বাংলাদেশ ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করছেন।
মমতা বন্দোপাধ্যায় আজ বুধবার কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিতর্কিত এই আবদার জানিয়ে মমতা বলেছেন, কেন্দ্রকে অবশ্যই সহিংসতা-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে হবে এবং যারা ফিরতে ইচ্ছুক তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
তবে বাংলাদেশ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের অনেকেই সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে বলেও দাবি করেছেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু অংশ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুয়া ভিডিও প্রচার করছে।
সাংবাদিকদের মমতা বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা চাই। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবশ্যই কাজ করতে হবে। যারা ভারতে ফিরতে চায়, তাদেরও ফিরিয়ে আনা উচিত।’
কয়েক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেক ধর্ম ও বর্ণের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। এই বিষয়ে ভারতের সংসদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছ থেকে বিবৃতিও দাবি করেছিলেন তিনি।
মমতার এমন উদ্ভট মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুর বলেছিলেন, মমতা শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা পুরোপুরি বোঝেন কি না তা ‘নিশ্চিত’ নন তিনি। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা শুভেন্দু অধিকারীও বাংলাদেশকে নিয়ে একের পর এক মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করছেন। মঙ্গলবার বিজেপির এই নেতা বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে হাস্যকর এক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে খবর আছে, কলকাতা দখল করার জন্য ঢাকা থেকে ৩ লাখ হাতে টানা রিকশা রওনা দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশে হাতে টানা রিকশার অস্তিত্ব নেই।’
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন দেশটির শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানি। কাবুলে শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। বুধবার কাবুলে শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বিস্ফোরণে মন্ত্রীর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন হাক্কানির ভাতিজা আনাস হাক্কানি।
নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে দেশটির সরকারি এক কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, কাবুলে শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানিসহ তার কয়েকজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।
আফগানিস্তানে তালেবানের দুই দশকের বিদ্রোহের সময় সবচেয়ে সহিংস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাপক পরিচিত দেশটির সশস্ত্র সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্ক। মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানির ভাই জালালউদ্দিন হাক্কানি এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিস্ফোরণে নিহত খলিল উর-রহমান হাক্কানি দেশটির তালেবান নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানির চাচা। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর দেশটির ক্ষমতায় আসে সশস্ত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান। আফগানিস্তানের এই গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা হ্রাস পেয়েছে।
তবে দেশটিতে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএস-কে) সক্রিয় রয়েছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রায়ই আফগানিস্তানের বেসামরিক নাগরিক, বিদেশি এবং তালেবান কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে বন্দুক ও বোমা হামলা চালিয়ে আসছে।
বিদ্রোহীদের রাজধানী দামেস্কে প্রবেশের মুখে গত রোববার পালিয়ে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার শাসক বাশার আল-আসাদ। এখন রাশিয়া জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদকে তারাই নিরাপদে দামেস্ক থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছে।
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ গতকাল মঙ্গলবার এবিসি নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে তিনি জানান, বিদ্রোহীদের ত্বরিত অগ্রযাত্রার মুখে বাশার আল-আসাদকে খুবই সুরক্ষিত উপায়ে দামেস্ক থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।
রায়াবকভ আরও বলেন, ‘তিনি (বাশার আল-আসাদ) সুরক্ষিত ছিলেন। এর অর্থ হলো, এমন বিস্ময়কর পরিস্থিতিতে রাশিয়া প্রয়োজন অনুযায়ী ভূমিকা রাখে।’
প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাশার আল-আসাদকে এখন বিচারের জন্য ফেরত দেওয়া হবে কি না? জবাবে রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এসংক্রান্ত সনদের অংশীজন নয় রাশিয়া।’
সিরিয়ায় গত রোববার বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন ঘটে। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মাত্র ১২ দিনের অভিযানে ওই দিন ভোরের দিকে ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ রাশিয়ায় পালিয়ে যান তিনি।
এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বাবা হাফিজ আল-আসাদ ও ছেলে বাশার আল-আসাদ মিলে টানা ৫৩ বছর সিরিয়া শাসন করেছেন।
তবে রোববার পালিয়ে যাওয়ার পর বাশার আল-আসাদের গন্তব্য নিয়ে দীর্ঘ সময় কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে রাশিয়া জানায়, বাশার আল-আসাদ প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে রাশিয়ায় চলে এসেছেন।
আগে থেকেই বাশার আল-আসাদের স্ত্রী-সন্তানরা মস্কোয় অবস্থান করছিলেন। রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত সোমবার জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে মস্কোতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। তবে তিনি এখন ঠিক কোথায় আছেন, তা জানায়নি ক্রেমলিন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনই সিলেট আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। মঙ্গলবার থেকে চাউর হয়, তাদের ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে কলকাতায় পলাতক আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
তবে ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মেঘালয়ের পুলিশ বলছে, তাদের রাজ্যের একটি ফৌজদারি মামলায় পালিয়ে থাকা চারজন বাংলাদেশিকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা সবাই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকর কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সিলেট মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ডাউকি থানার একটি মামলায় অভিযুক্ত ওই চারজন কলকাতা লাগোয়া নিউটাউন এলাকার একটি আবাসনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
রোববার সেখান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে শিলংয়ে আনা হয়েছে বলে মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে।
মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক ইদাশিশা নংরাং জানিয়েছেন, ‘ওই চারজনের বিরুদ্ধে ডাউকি থানার একটা মামলা ছিল। কোনো ধর্ষণের অভিযোগ নেই এদের বিরুদ্ধে। ডাউকি থানায় এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ ছিল। সেই মামলাতেই কলকাতা থেকে এদের গ্রেপ্তার করে আনা হয়েছে।’
যেসব ধারায় ধৃত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা আছে সেগুলো মূলত অস্ত্র দিয়ে হামলা (আগ্নেয়াস্ত্র নয়), হামলার জন্য জমায়েত হওয়া, এক লাখ টাকার কম পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধনের মতো অভিযোগ। এ ছাড়া অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের মামলাও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সূত্র: বিবিসি বাংলাa
কথিত ‘হিন্দু নিপীড়নের’ অভিযোগে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল চলছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির উগ্রপন্থি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সমর্থনে সিভিল সোসাইটি অব দিল্লির ব্যানারে বেশ কিছু কট্টরপন্থি এই বিক্ষোভ করে। বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লির চাণক্যপুরী থানার তিন মূর্তি চক থেকে মিছিলটি শুরু হয়। তবে তারা দূতাবাসের সামনে যেতে পারেনি।
বিবিসি বাংলার দিল্লি সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানিয়েছেন, ওই মিছিলে বিভিন্ন বয়সি পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও যোগ দিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবার হাতেই প্ল্যাকার্ড ছিল। প্ল্যাকার্ডে বাংলা ও হিন্দিতে লেখা ছিল ‘বাংলা বাঁচাও, বাঙালি বাঁচাও, বাঁচাও সনাতন!’, ‘বাংলাদেশ, একাত্তর মনে করো, জুলুমবাজি বন্ধ করো! সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ’ ইত্যাদি স্লোগান।
বিবিসি জানায়, স্মরণকালে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ভারতীয়দের এমন বিক্ষোভ এই প্রথমবার।
এর আগে কলকাতা ও আগরতলার ডেপুটি হাইকমিশনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ করা হয়। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা হাইকমিশন ভবনে হামলা ও কর্মরতদের মারধর করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়গুলো প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শিলিগুড়িতে বাংলাদেশিদের হোটেল কক্ষ ভাড়া বন্ধের ঘোষণা
এদিকে, বাংলাদেশি নাগরিকদের হোটেলের কক্ষ ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের হোটেল মালিকরা। এর আগে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদার হোটেল মালিকরা ঘোষণা করেছিলেন যে বাংলাদেশি নাগরিকদের তারা ঘর দেবেন না। যদিও পরে আগরতলার হোটেল মালিকরা সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন।
শিলিগুড়ি শহর ও আশপাশের অঞ্চলের হোটেল মালিকদের সংগঠন গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এ ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির যুগ্ম সচিব উজ্জ্বল ঘোষ বিবিসিকে জানান, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক যে সংঘাতের আবহাওয়া চলছে, বিশেষত সে দেশে ভারতের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশের উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বাংলাদেশের নাগরিকদের আমাদের কোনো হোটেলে থাকতে দেওয়া হবে না।’
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকার ১৮০টি হোটেল মালিকদের সংগঠন এটি।
তিনি আরও বলেন, শিলিগুড়ি ছাড়াও আমরা কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের হোটেল মালিকদের সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারাও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে এই ব্যাপারে। আর দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকদের সংগঠনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকরা এখনই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না বলেই আমাদের জানিয়েছেন।
পর্যটন মৌসুমে দার্জিলিংয়ে প্রায় তিরিশ হাজার মতো বাংলাদেশি পর্যটক ঘুরতে যান। শিলিগুড়ি ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশি পর্যটকরা বেশি সংখ্যায় আসছিলেন।
এদের একটা বড় অংশ শৈল শহরগুলোতে যাওয়ার আগে শিলিগুড়ির হোটেলে ঘর নেন এক বা দুদিনের জন্য। আবার শিলিগুড়ি বৃহৎ ব্যবসায়িক কেন্দ্রও, তাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও শিলিগুড়িতে কাজে আসেন।
বিবিসি জানায়, তবে শিলিগুড়ি এলাকার হোটেল মালিকরা বাংলাদেশিদের ঘর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তার প্রভাব খুব বেশি পড়ার কথা নয়, কারণ এমনিতেই এখন ভারতীয় ভিসা দেওয়ার কড়াকড়ি থাকায় ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিরা ভারতে প্রায় আসছেনই না।
দুই যুগ ধরে সিরিয়া শাসন করেছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানের মুখে অবশেষে পতন ঘটেছে তার। দেশটির রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। সিরিয়া থেকে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন বাশার আল-আসাদ। তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিবারের সদস্যসহ তিনি মস্কোয় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস ও রিয়া নভস্তির বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার পরিবারের সদস্যরা মস্কোয় পৌঁছেছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে রাশিয়া তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে।
এর আগে সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মাত্র ১২ দিনের অভিযানে রোববার বাশার সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে তার দুই যুগের শাসনের অবসান ঘটে। এর আগে বাশারের বাবা হাফিজ আল-আসাদ প্রায় ২৯ বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন বাশার। শুরুতে সংস্কারের পথে হাঁটলেও পরে বাবার মতোই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠেন তিনিও। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের দমনে ব্যাপক নিপীড়ন চালনোর অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্রোহীদের অভিযানে বাশারের পতনের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বাশার প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিয়ে দেশত্যাগে সম্মত হন। তবে তিনি কোন দেশে গেছেন বা কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে ওই বিবৃতিতে কিছু উল্লেখ ছিল না। তবে মস্কো এটাও বলেছিল, সিরিয়ার বাশারবিরোধী পক্ষগুলোর সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছে।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দিয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। সিরিয়ায় রাশিয়ার কূটনীতিক স্থাপনাগুলোরও নিরাপত্তা দেবে বিদ্রোহীরা। রুশ কূটনীতিকরা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
আসাদের আশ্রয়ের অনুমোদন দিলেন পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্যক্তিগতভাবে বাশার আল আসাদকে মস্কোয় আশ্রয় দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্কের পতনের পর সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন বলে খবর প্রকাশের পর এ তথ্য প্রকাশ করা হলো।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, পুতিন ও আসাদের মধ্যে কোনো বৈঠক হওয়ার কথা নেই। আসাদ কোথায় আছেন, সে বিষয়েও কিছু বলার নেই। আসাদকে কীভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পেসকভ বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এটা তার (ভ্লাদিমির পুতিন) সিদ্ধান্ত।
রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক মিখাইল উলিয়ানভ গতকাল সোমবার সকালে নিশ্চিত করেছেন, আসাদ ও তার পরিবার মস্কোতে রয়েছেন। এটি চ্যালেঞ্জিং সময়ে তার মিত্রদের প্রতি রাশিয়ার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। তিনি বলেন, রাশিয়া কঠিন পরিস্থিতিতে তার বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়।
এর আগে রোববার রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘মানবিক কারণে’ আসাদ ও তার পরিবারকে রাশিয়ায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সশস্ত্রবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর আসাদ পদত্যাগে সম্মত হন এবং ‘শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর’ নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
মস্কোয় সিরীয় দূতাবাসে উড়ল বিরোধীদের পতাকা
দামেস্কে বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের এক দিন পর রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় সিরীয় দূতাবাসে বিরোধীদের পতাকা উত্তোলন করেছে একদল লোক। গতকাল সোমবার দূতাবাসের এক প্রতিনিধি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, সিরিয়ার দূতাবাস খোলা হয়েছে এবং আজ নতুন পতাকার নিচে স্বাভাবিকভাবে কাজ করা হচ্ছে।
মস্কো টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূতাবাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুষারপাতের মধ্যে কয়েকজন হাততালি দেয় এবং গান গান। তারা সিরিয়ার বিরোধীদের সবুজ, লাল, কালো এবং সাদা পতাকা উত্তোলন করেন।
বিদ্রোহীদের মাত্র ১২ দিনের অগ্রাভিযানের মুখে বাশার আল আসাদের অবিশ্বাস্য পরাজয় বিস্মিত করেছে আন্তর্জাতিক সব মহলকে। সরকারবিরোধী বিদ্রোহীরা রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিলে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় উড়াল দেন। তার দেশত্যাগের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ আল-জালালি জনগণের নির্বাচিত নেতৃত্বকে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি সব পক্ষকে স্থিতিশীলতার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। তবে নতুন তথ্য হচ্ছে সমুদ্রপথে ইউরোপ প্রবেশের দ্বার হিসেবে বিবেচিত দ্বীপ দেশ ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বাংলাদেশিদের সংখ্যা। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) উদ্ধৃত করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনফোমাইগ্র্যান্টস।
ইনফোমাইগ্র্যান্টসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ইতালি যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশী শরণার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক গিয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এ সময় সমুদ্রপথে ইতালি গিয়েছে ৪৯ হাজার ৬৯১ জন অভিবাসী। এদের মধ্যে ১২ হাজার ৭০২ জনই বাংলাদেশি, যা মোট আগমনের ২০ শতাংশ। আর গত জানুয়ারি থেকে মার্চে ইতালি প্রবেশ করা অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিল ২৩ শতাংশ।
ইনফোমাইগ্র্যান্টসের গবেষণা তথ্য বলছে, গত ১০ মাসে ইতালিতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে প্রবেশ করা অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের পর দ্বিতীয় অবস্থানে সিরিয়া। মোট আগমনের ১৮ শতাংশই এসেছে এই দেশটি থেকে। এর পরই আছে তিউনিশিয়া (১২ শতাংশ), মিসর (৬ শতাংশ), গিনি (৫ শতাংশ), পাকিস্তান (৫ শতাংশ), সুদান (৩ শতাংশ), ইরিত্রিয়া (৩ শতাংশ), মালি (৩ শতাংশ) ও গাম্বিয়ার (২ শতাংশ) নাম।
বেড়েছে সিরীয় অভিবাসনপ্রত্যাশী : এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি সিরীয় ইতালি পৌঁছেছে। তখনো নতুন করে দেশটিতে সংঘাত শুরু হয়নি। ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পর এই প্রথম এত বেশিসংখ্যক সিরীয় সমুদ্রপথে ইতালিতে গিয়েছে। চলতি বছর সিরিয়া থেকে যাওয়া শরণার্থীদের ৭৭ শতাংশ পুরুষ, ৭ শতাংশ নারী, ১১ শতাংশ শিশু ও ৬ শতাংশ সঙ্গীবিহীন শিশু।
প্রসঙ্গত, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে ইউরোপে প্রবেশের দ্বার হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইতালিকে। এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানব পাচারকারীরা ইউরোপে চাকরিসহ উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে প্রথমে আফ্রিকার দেশ লিবিয়াসহ আশেপাশের দেশগুলোতে জড়ো করে থাকে। লিবিয়ায় সাবেক স্বৈরশাসক গাদ্দাফির পতনের পর দেশটির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। এরই সুযোগ নিয়ে দেশটিতে বিশাল মানবপাচার বলয় সৃষ্টি করে রেখেছে সুযোগ সন্ধানী মাফিয়ারা। চাকরির প্রলোভনে আসা বিভিন্ন দেশের ভিসাবিহীন অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূলত সেখানে জড়ো করা হয়। এরপর মাফিয়ারা এদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে আরও অর্থ পাঠাতে নির্দেশ দেয়। এরপর সাধারণ নৌকায় বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জবরদস্তির মাধ্যমে এসব বিপদগ্রস্ত মানুষকে ভূমধ্যসাগরে ভাসিয়ে দেয়। এসব নৌকার গন্তব্য থাকে ভূমধ্যসাগরের অপর প্রান্তের দ্বীপ দেশ ইতালি। এসব নৌকা উল্টে গিয়ে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়। আর যারা ইতালির কাছাকাছি পৌঁছায় স্বাভাবিকভাবেই ইতালির পুলিশ তাদের নামতে দিতে চায় না। অনেক নৌকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেও গুলি, অনাহার ইত্যাদি কারণে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু ঘটে। এরপরেও যারা প্রবেশ করে তাদের বেশিরভাগেরই কপালে জোটে হাজতবাস। ইউএনএইচসিআর যে তালিকা প্রকাশ করে মূলত তাদের বেশিরভাগই হয়ে থাকে হাজতে বা শেল্টার হোমে জায়গা পাওয়া বিভিন্ন দেশের নাগরিক- যাদের একটি বড় অংশই বাংলাদেশের, এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক আবার রোহিঙ্গা- যারা গোপনে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায় এই অজানা বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে পা বাড়ায়।
এ ছাড়াও তিউনিশিয়া, তুরস্ক ও আলজেরিয়ার উপকূল থেকে ইতালি পথে অনিশ্চিত ইউরোপযাত্রায় পা বাড়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। এ বছরের প্রথম ১০ মাসে মোট অভিবাসনপ্রত্যাশীর ৭৬ শতাংই গিয়েছে লিবিয়ার উপকূল থেকে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, নভেম্বরে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী অভিবাসীদের অন্তত ৭৫ শতাংশ ইতালির দক্ষিণের ছোট দ্বীপ লাম্পেদুসায় গিয়ে পৌঁছেছে। সমুদ্রপথে যাওয়া বাকি ২৫ শতাংশ অভিবাসী পৌঁছেছে ইতালির পোৎজালো, ত্রাপানি, জেনওয়া, রোকেলা আইওনিকা, রেজিও ক্যালাব্রিয়া, ক্রোটন, আওগুস্তা, কাতানিয়া, নেপলস, সিরাকুজে, ভিবো ভ্যালেন্তিয়া, লিভর্নো, লাম্পিওনি, পোর্তো পিনো, অর্তোনা, আনকোনা, পালেরমো, ব্রিন্দসি, সালেরনো, কাপো তেওলাদা, সিভিটাভেসিয়া ও পুলায়।
নভেম্বরে আগমন বেড়েছে ৪২ শতাংশ : গত নভেম্বরে সমুদ্রপথে আট হাজার ১০০ জন অভিবাসী ইতালি পৌঁছেছে। অক্টোবরের চেয়ে এ সংখ্যা বেড়েছে ৪২ শতাংশ। ওই মাসে সমুদ্রপথে ইতালি পৌঁছেছে পাঁচ হাজার ৭২২ জন।
গত ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
এদিকে চলতি বছর ইতালিতে অভিবাসী আগমন ২০২৩ সালের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কমেছে। এ বছরে মাসভিত্তিক হিসাবেও দেখা গেছে, আগমনের তারতম্য রয়েছে। ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে দেশটিতে গিয়েছে দুই হাজার ২৫৮, ফেব্রুয়ারিতে দুই হাজার ৩০১, মার্চে ছয় হাজার ৮৫৭, এপ্রিলে চার হাজার ৭২১, মে মাসে চার হাজার ৯৭৬, জুনে চার হাজার ৯০২, জুলাইয়ে সাত হাজার ৪৬৫, আগস্টে আট হাজার ৫২৬ জন অভিবাসী।
ইউএনএইচসিআরের কার্যক্রম : অভিবাসনপ্রত্যাশী শরণার্থীদের আগমন পয়েন্টে ইউএনএইচসিআর সক্রিয়ভাবে উপস্থিত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ইতালির কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ও ইউরোপীয় সংস্থা এবং অন্য অংশীদারদের পাশাপাশি জাতিসংঘের এই সংস্থাটিও সেখানে সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে, নতুন করে আসা অভিবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করা, বিশেষায়িত পরিষেবার মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও দুর্বল ব্যক্তিদের শনাক্ত করে যত্ন-আত্তি নিশ্চিত করা।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছে ইউএনএইচসিআর। বিশেষ করে, সমুদ্রে অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রক্রিয়া জোরদারের পাশাপাশি নিয়মিত অভিবাসনের পথ সহজ করতেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
পাকিস্তানকে ৫৯ শতাংশ বাংলাদেশি পছন্দ করেন এবং বাংলাদেশের ৫৩.৬ শতাংশ মানুষ ভারতকে পছন্দ করেন, ভয়েস অব আমেরিকা এক জরিপে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জরিপে ১ হাজার উত্তরদাতাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশকে ১ থেকে ৫ স্কেলে ‘ভোট’ দিয়ে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়। স্কেলের ১ এবং ২ মিলে হয় ‘পছন্দ’ আর ৪ এবং ৫ মিলে ‘অপছন্দ।’
উত্তরদাতাদের ৫৯ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘পছন্দ’ স্কেলে বাছাই করেন। অন্যদিকে, ভারতের ‘পছন্দ’ স্কোর ছিল ৫৩.৬ শতাংশ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই চরম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটোর মধ্যে ‘অপছন্দ’ স্কেলে বেশ বড় ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, উত্তরদাতাদের ২৮.৫ শতাংশ পাকিস্তানকে ‘অপছন্দ’ করে মত দেন। অন্যদিকে, ভারতের ‘অপছন্দ’স্কোর ছিল ৪১.৩ শতাংশ।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অফ আমেরিকার ঠিক করে দেওয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ এন্ড) প্রশ্নমালার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার এসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইং এর মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের জনতত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিপের ১ হাজার উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। সেখানে সমান সংখ্যার নারী এবং পুরুষ ছিলেন, যাদের মধ্যে ৯২.৭ শতাংশ ছিলেন মুসলিম।
ভারত এবং পাকিস্তান সম্পর্কে জরিপে প্রকাশিত মতামতে ধর্মের ভিত্তিতে পার্থক্য দেখা যায়। মুসলিম উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৪.২ শতাংশ ভারতকে ‘অপছন্দ’ করে মত দেন। অন্যদিকে, অমুসলিম উত্তরদাতাদের মাত্র ৪.২ শতাংশ ভারতকে ‘অপছন্দ’ করেন।
সার্বিকভাবে, ভারত এবং পাকিস্তান ‘পছন্দ’ স্কেলে প্রায় সমান হলেও, ‘অপছন্দের’ স্কেলে ভারতের পাল্লা বেশি ভারি। এর কারণ হিসেবে অনেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকাকে দায়ী করেন।শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মনোভাব বিভিন্ন গোষ্ঠীর কর্মসূচিতে প্রকাশ পাচ্ছে।
এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধান সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এখন ‘নিম্ন পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারত শুধু একটি দল, আওয়ামী লীগের উপর নির্ভর করেছে।
শেখ হাসিনা ৫ অগাস্ট থেকেই ভারতে আছেন এবং ভারত সরকার তার জন্য ভিআইপির মর্যাদা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের অনেকের কাছে ‘অবন্ধুসুলভ আচরণ’ বলেই মনে করা হয়।
পৃথিবী, সূর্য ও বৃহস্পতি গ্রহ আজ শনিবার একই সরলরেখায় অবস্থান করবে। এদিন বৃহস্পতি রাতজুড়ে আকাশে দৃশ্যমান থাকবে। এ অবস্থানকে ‘জুপিটারের বিপরীতমুখী (জুপিটারস অপজিশন)’ বলা হয়। বিজ্ঞানীরা এটিকে বিরল মহাজাগতিক ঘটনা আখ্যা দিয়ে জানান, আকাশপ্রেমীদের জন্য এক দুর্লভ সুযোগ এনে দিয়েছে জুপিটারস অপজিশন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিকে দেখার জন্য এ সময়ের আগে-পরে এক মাস ধরে এ বিস্ময়কর ঘটনা পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকবে। এমনকি একটি ছোট টেলিস্কোপ বা সাধারণ দূরবীন দিয়েও এই গ্রহের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব। এমন বিরল মহাজাগতিক ঘটনা কেবল সৌরজগতের রহস্য ও সৌন্দর্যের প্রতি কৌতূহল বাড়ায়। বিজ্ঞানীদের মতে, শুক্রবার সকাল ৫টায় বৃহস্পতি পৃথিবী থেকে প্রায় ৬১১ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ৩৮০ মিলিয়ন মাইল দূরে থাকবে। এ দূরত্বে বৃহস্পতি অত্যন্ত উজ্জ্বল দেখাবে। এটা টেলিস্কোপ ব্যবহারকারীদের জন্য এর মেঘবাহু এবং গ্যালিলিয়ান চাঁদগুলো (আইও, ইউরোপা, গ্যানিমিড, এবং ক্যালিস্টো) পর্যবেক্ষণের সেরা সুযোগ।
তবে শনিবার সন্ধ্যায় পূর্ব-উত্তর-পূর্ব আকাশে বৃষ রাশির (টরাস) কাছে বৃহস্পতি উঠতে দেখা যাবে। এটি সূর্যাস্তের পর ওঠা শুরু করবে এবং সূর্যোদয়ের আগে অস্ত যাবে। টেলিস্কোপ বা উচ্চ ক্ষমতার দূরবীন দিয়ে বৃহস্পতির মেঘবাহুগুলো এবং এর চারটি প্রধান চাঁদ সহজেই দেখতে পারবেন আকাশপ্রেমীরা। এ বিরল ঘটনায় বৃহস্পতির প্রতিফলিত সূর্যালোক পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ৩৪ মিনিট সময় নেবে। পৃথিবীর দ্রুতগতির কক্ষপথের কারণে বৃহস্পতি এবং সূর্যের মধ্যে পৃথিবীর অবস্থান তৈরি হবে, যা বৃহস্পতিকে সম্পূর্ণ গোলাকার অবস্থায় দেখা যাবে।
পৃথিবীর জলবায়ু খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। এই জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা না হলে, বিশেষ করে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়বে। নতুন এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি প্রাক-শিল্প সমাজের গড় তাপমাত্রার চেয়ে (১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়, এই বিলুপ্তি আরও দ্রুত ত্বরান্বিত হবে। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে পৃথিবী ইতিমধ্যে প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়েছে।
জলবায়ু প্রভাবে বিশেষত উভচর প্রাণীদের জন্য বিলুপ্তির প্রভাব আরও বেশি হতে পারে। পর্বত, দ্বীপ এবং মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্রের প্রজাতি এবং দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অনেক প্রজাতি বিলুপ্তি হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের ধরণে পরিবর্তন আসে। আবাসস্থল ও প্রজাতিগুলোর দৈনন্দিন জীবন পরিবর্তন হয়।
কিছু প্রজাতি কঠোর পরিবেশগত পরিবর্তনগুলো থেকে বাঁচতে পারে না, যার ফলে প্রজাতির জনসংখ্যা হ্রাস পায় এবং কখনো কখনো বিলুপ্ত হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার সায়েন্স জার্নালে নতুন গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ পরিচিত প্রজাতি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এতে বলা হয়, যদি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো না যায় বিশ্বব্যাপী বহু প্রজাতির মধ্যে আনুমানিক ১ লাখ ৮০ হাজার প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকবে।
কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী মার্ক আরবান লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
আরবান বলেন, আমরা যদি প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখি, তাহলে বিলুপ্তির ঝুঁকি তেমন আসবে না। কিন্তু ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বিলুপ্তির গতিপথ ত্বরান্বিত হবে। দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের প্রজাতিগুলো সবচেয়ে বড় হুমকির মুখোমুখি।
আরবান বলেন, উভচর প্রাণীরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে। কেননা উভচরদের জীবনচক্র আবহাওয়ার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে এবং বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন ও খরার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। পর্বত, দ্বীপ এবং মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্রেও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতি রয়েছে। বিচ্ছিন্ন পরিবেশ তাদের প্রজাতির জন্য প্রতিকূল। তাদের পক্ষে স্থানান্তর এবং আরও অনুকূল জলবায়ু সন্ধান করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ধীর করতে পারে। সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিলুপ্তির ঝুঁকি থামাতে পারে।
আরবান আশা করছেন, গবেষণার ফলাফলগুলো বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকদের ওপর প্রভাব ফেলবে। নীতিনির্ধারকদের জন্য মূল বার্তা হলো, এটি সম্পর্কে আরও বেশি নিশ্চিত করা।