যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের বিরোধিতার মুখে কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থায়ন করার বিল বাতিল হয়েছে। এ অবস্থায় রোববার থেকে যুক্তরাষ্ট্র শাটডাউনের মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এজেন্সিগুলো আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। ৪০ লাখ কেন্দ্রীয় কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যাতে বন্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকারকে তহবিল জোগানোর মেয়াদ ৩০ দিন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিল আনা হয়েছিল । কিন্তু শুক্রবার রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে সেই বিল ২৩২-১৯৮ ভোটে পরাজিত হয়েছে। সেই বিলে রিপাবলিকানদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি অভিবাসন সীমিত করার প্রস্তাব ছিল। সে কারণে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত সিনেটে এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল খুবই কম। একদিকে বিল পাস হয়নি অন্যদিকে শাটডাউন এড়ানোর কোনো সুস্পষ্ট কৌশলও পাওয়া যায়নি।
শাটডাউন হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৪০ লাখ কেন্দ্রীয় কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতে পারে আর্থিক খাতের নজরদারি থেকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার তহবিল।
হোয়াইট হাউস অফিস অব ম্যানেজমেন্ট ও বাজেটের পরিচালক শালান্দা ইয়ং বলেন, ‘রিপাবলিকানরা অভ্যন্তরীণ বিভাজন শেষ করতে পারলে শাটডাউন এড়ানোর এখনো একটি সুযোগ রয়েছে।’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, ‘স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থিকে তার দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
এবার যদি শাটডাউন হয় সেটি হবে ১০ বছরে মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ শাটডাউন। এর মাত্র চার মাস আগে জাতীয় ঋণসীমা বৃদ্ধি নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল। ওই সময়ও শাটডাউনের শঙ্কা দেখা দিলেও শেষ মুহূর্তে তা এড়ানো সম্ভব হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত- দুই দেশই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইরিক গারসেটি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইওএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এই রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্রই বাংলাদেশে নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে।
বৈশ্বিক অঙ্গণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা অতীতের কোনো বিষয় না, বর্তমানে তারা যেভাবে একসঙ্গে কাজ করছে, এর আগে কখনোই এমনটি ঘটেনি।’
এই প্রথম বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন ভারতে নিযুক্ত এই মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
ইরিক গারসেটি বলেন, আমরা দুই দেশই শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চাই। এই নীতিতে একমত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এই নীতির ভাগিদার।
এ ক্ষেত্রে দুই দেশ সমন্বয় করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই- বাংলাদেশ কিংবা যে কোনো দেশই হোক না কেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা উচিত না। আমরা মনে করি, আমাদের একটি সুযোগ আছে।
সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিক সেক্রেটারির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ নিজেই এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন তিনি।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান মঙ্গলবার তার পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান তিনি। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।
লন্ডনে হাসিনা ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া ছাড়াও; সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট নিয়েছিলেন টিউলিপ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এসবের মধ্যে দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল। তারা বলছিল, টিউলিপের ওপর ব্রিটেনের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারই নাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। এতে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের নৈতিকতা হারিয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি।
সবচেয়ে কম বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, গাজার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। এছাড়া তিনি আফগানিস্তানে তালেবান শাসনকে বৈধতা না দিতেও মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী ‘ডন’ পত্রিকা এই খবর জানিয়েছে।
ইসলামাবাদে ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের নারী শিক্ষা: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে মালালাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা মন্ত্রীরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে পাকিস্তানের একটি স্কুলে পড়ার সময় স্থানীয় তালেবানদেন গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে দেশ ছাড়েন ১৫ বছর বয়সী মালালা। তবে সুস্থ হয়ে ফিরেই নারী শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এরমধ্যে হাতে গোনা দু’-একবার পাকিস্তান সফরে যান মালালা। এবার নিজ দেশে নারী শিক্ষা বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দেন এই নোবেল বিজয়ী।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য রাখেন মালালা। ইসরাইলের চলমান আগ্রাসন গাজার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে বলে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উদ্বেগ প্রকাশ করে মালালা বলেন, ইসরাইল গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি স্কুল ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই সাথে স্কুল ভবনে আশ্রয় নেওয়া নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালানোরও তীব্র নিন্দা জানান তিনি। ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন মালালা।
এদিকে, আফগানিস্তানের তালেবানদের বৈধতা না দিতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মালালা ইউসুফজাই। তিনি বলেন,তালেবানের শাসনামলে নারী শিক্ষার অগ্রগতি স্বপ্ন দেখা বৃথা। তালেবান শাসকরা শতাধিক আইন প্রয়োগ করেছে, যা নারীদের শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
এর আগে, সম্মেলনের প্রথমদিন বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৫০ জনেরও বেশি শিক্ষক, গবেষক ও মন্ত্রী যোগ দেন। পাশাপাশি ইউনেস্কো, ইউৃনিসেফও ওয়াল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
জাপানে সোমবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। স্থানীয় সময় গতকাল রাত ৯টা ১৯ মিনিটে দক্ষিণ জাপানের কিউশু অঞ্চলে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পরপরই ওই অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
টোকিও থেকে এএফপি আজ মঙ্গলবার এই খবর জানায়।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) জানিয়েছে, সোমবার ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূুমিকম্পে কেঁপে উঠেছে কিউশু অঞ্চল। তবে ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের পর মিয়াজাকি ও কোচির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রিফেকচারে এক মিটার উচ্চতার ঢেউয়ের বিষয়ে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা এক্সে জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সমুদ্রে বা উপকুলের দিকে না যাওয়ার পরমর্শ দিয়েছে।
জাপানের সরকারি গণমাধ্যম এনএইচকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়াজাকি শহরে ইতোমধ্যে ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে। প্রাদেশিক এই রাজধানীতে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর পশ্চিম জাপানের ইকাতা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্প যে অঞ্চলে আঘাত হেনেছে তার কাছাকাছি এলাকায় দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রু চালু রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে গাজার বিধ্বস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন ডলার বা আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাথমিক হিসেবে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গাজা থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে অনেক বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হতে পারে।’
তিনি বলেছেন, ‘গাজার শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনের জন্য তার দলের প্রাথমিক অনুমান হলো প্রথম দেড় বছরের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং তারপর পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।’
পিপারকর্ন বলেছেন, ‘আমরা সবাই ভালো করে জানি যে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ অকল্পনীয়। আমি আমার জীবনে বিশ্বের অন্য কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’
এদিকে ডব্লিওএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস এরই মধ্যে বলেছেন, ‘গাজার ৯০ শতাংশ হাসপাতাল ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।’
বুধবার মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ইসরাইল এবং হামাস অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। যাকে তিনি ‘সেরা খবর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
গেব্রিয়াসিস আশা প্রকাশ করেছেন, এই চুক্তি ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটাবে।
তিনি বলেছেন, ‘আসুন আমরা সবাই এই খবরকে অত্যন্ত স্বস্তির সাথে স্বাগত জানাই। কিন্তু দুঃখও আছে যে, চুক্তিটি এতো দেরিতে হতে যাচ্ছে যখন সংঘর্ষে হাজার হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
মধ্যস্থতাকারীরা যদিও বলেছেন, চুক্তিটি ১৯ জানুয়ারি রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। টানা ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে ইসরাইলের হামলা। এরই মধ্যে ইসরাইলের হামলায় গাজায় ৪৬ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
নতুন করে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় বিপদে পড়েছে চীন ও ভারত। এতে করে এই দুই দেশকে জ্বালানি তেল আমদানিতে খুঁজতে হবে বিকল্প বাজার। অন্যদিকে তেল বিক্রির বড় বাজার হারালে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে রাশিয়ার জন্য।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ক্ষমতা ছাড়ার আগমুহূর্তে এটি বাইডেন প্রশাসনের রাশিয়ার অর্থনীতিতে সর্বশেষ আঘাত বলে অভিমত ব্যবসা বিশ্লেষকদের।
রাশিয়ার তেল উৎপাদনকারী প্রধান দুটি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম এবং সারগেটনেফটগ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বড় ক্ষতি হয়েছে ১৮৩ তেলবহনকারী ভেসেল জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়।
যেসব জাহাজের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এর বড় একটি অংশ চীন-ভারতে জ্বালানি তেল পরিবহন করে। ২০২২ সালে জি-৭ দেশগুলো তেলের দাম বেধে দিলে রাশিয়া বাজার ধরতে বেছে নেয় এশিয়াকে। এদিকে সস্তায় তেল কিনতে পারায় রাশিয়া হয়ে উঠেছে চীন-ভারতের মুনাফার বড় বাজার।
নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত জাহাজগুলো ২০২৪ সালে মোট ৫৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রফতানি করেছে, যা দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির ৪২ শতাংশ। রফতানি হওয়া এ তেলের ৩০০ মিলিয়ন ব্যারেলই গিয়েছে চীনে এবং বাকিটা ভারতের বাজারে।
বাণিজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান কেপলারের বিশ্লেষণ বলছে, রুশ জ্বালানি তেলের বাণিজ্যে এটা বড় রকমের ধাক্কা। সমুদ্রে রাশিয়ার তেল বহনকারী জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিকল্প খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ভুগতে হবে দেশটিকে।
এদিকে রুশ তেলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। সর্বশেষ ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়েছে, যা নতুন বছরে সর্বোচ্চ।
গেল বছর প্রথম ১১ মাসে ভারত ৩৬ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি। একইসময়ে চীনের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেলের জোগানদাতা ছিল রাশিয়া, যা আগের বছরের থেকে ২ শতাংশ বেশি।
হঠাৎ করে রাশিয়ার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞায় ভারত-চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দিকে ঝুঁকতে হবে। রাশিয়া ও ইরানের তেল সরবরাহ কমে আসায় মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। এতদিন ভারত-চীন রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনতে পারলেও এবার বেশি দামে বিকল্প বাজারমুখী হওয়া ছাড়া দেশ দুটির সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।
এরইমধ্য সরবরাহ কমায় জ্বালানি তেলের বাজারে আবারও শঙ্কা জেগেছে অস্থিরতা সৃষ্টির। তেলের দাম বেড়ে গেলে তার প্রভাব প্রতিটি পণ্যের ওপর পড়বে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সোমবার (২০ জানুয়ারি) দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। ৭৮ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা ওয়াশিংটনের ইউএস ক্যাপিটলে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শপথ নেবেন এবং চার বছর আগে অপমানজনকভাবে ছেড়ে যাওয়া হোয়াইট হাউসে বিজয়ীর বেশে ফিরবেন।
শপথ গ্রহণের আগের দিন তিনি একটি তারকাবহুল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট ভিক্টরি ‘র্যালি’ আয়োজন করবেন। এতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী ইলন মাস্ক এবং ‘ওয়াই.এম.সি.এ.’ গানটির জন্য বিখ্যাত ব্যান্ড ভিলেজ পিপল পারফর্ম করবেন বলে জানা গেছে।
বিলিয়নিয়ার ট্রাম্পের এই প্রত্যাবর্তন একটি অসাধারণ যাত্রার সমাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি দুইবারের প্রাণনাশের চেষ্টা ও একটি ঐতিহাসিক ফৌজদারি মামলা পেছনে ফেলে প্রেসিডেন্সি পুনরুদ্ধার করেছেন।
তবে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এই উদযাপনে বাগড়া দিতে পারে একমাত্র আবহাওয়া। একটি প্রাণঘাতী 'পোলার ভর্টেক্স' তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ঠান্ডা আবহাওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। আবহাওয়া চরম আকার ধারণ করলে অনুষ্ঠানটি ঘরের ভেতরে স্থানান্তরিত হতে পারে।
প্রতি চার বছর পরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করেন। নবনির্বাচিত বা পুনর্নির্বাচিত যিনিই হোন, এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান নতুন নেতার ব্যক্তিগত ছোঁয়ায় অনন্য হয়ে ওঠে।
এখানে সোমবারের অনুষ্ঠানের এক ঝলক তুলে ধরা হলো।
শপথ অনুষ্ঠান
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হয় ২০ জানুয়ারি দুপুরে (যদি তা রবিবার পড়ে, তবে পরের দিন)। প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করেন। সম্প্রতি প্রেসিডেন্টরা ক্যাপিটলের পশ্চিম লনে ন্যাশনাল মলের দিকে মুখ করে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে শপথ নিয়েছেন।
সাধারণত, শপথ গ্রহণ পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সোমবার এটি হবে জন রবার্টসের দ্বিতীয়বার ট্রাম্পের জন্য শপথ গ্রহণ পরিচালনা। শপথ শেষে ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন।
ক্যাপিটলে ট্রাম্পের এ উদ্বোধনী ভাষণের দিকে তাকিয়ে থাকবে আমেরিকা ও বিশ্ব, যেখানে তিনি তার নতুন মেয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। ২০১৭ সালে তার প্রথম ভাষণ 'আমেরিকান কারনেজ' নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। এবারও তিনি সাহসী ও শক্তিশালী বার্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই দিন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও একই মঞ্চে শপথ নেবেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতি
ট্রাম্পের এই শপথ অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি জগতের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের উপস্থিতি হবে একটি বড় চমক। ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ এবং টিকটকের সিইও শৌ চিউসহ আরও অনেকে এই অনুষ্ঠানে ভিআইপি আসনে থাকবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন। তবে মিশেল ওবামা আসবেন না। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসও উপস্থিত থাকবেন।
প্রথাগতভাবে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো না হলেও, ট্রাম্প ইতালি ও হাঙ্গেরির ডানপন্থী নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ভিক্টর অরবান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেই এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
জনসমাগম
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে বিপুল জনসমাগম আশা করা হচ্ছে। ২২০,০০০ এরও বেশি টিকিট বিতরণ করা হয়েছে। যারা টিকিট পাননি, তারা ন্যাশনাল মলে বড় স্ক্রিনে অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন। শপথের পর ট্রাম্প ক্যাপিটল থেকে হোয়াইট হাউসে একটি জমকালো প্যারেডের মাধ্যমে যাত্রা করবেন।
নির্বাহী আদেশ ও কর্মসূচি
ট্রাম্প তার দায়িত্বের প্রথম দিনেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কার কর্মসূচি চালু করা, তেল উত্তোলন বৃদ্ধি করা এবং ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হামলায় অভিযুক্ত কিছু সমর্থককে ক্ষমা করা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সংগীত
২০১৭ সালের শপথ অনুষ্ঠানে তারকাদের উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু এবার ট্রাম্পের মঞ্চ আলোকিত করবেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীরা। কান্ট্রি গায়ক ক্যারি আন্ডারউড 'আমেরিকা দ্য বিউটিফুল' পরিবেশন করবেন। লি গ্রিনউড তার বিখ্যাত গান 'গড ব্লেস দ্য ইউএসএ' গাইবেন।
রোববারের প্রাক-উদ্বোধনী র্যালিতে ভিলেজ পিপল, কিড রক এবং বিলি রে সাইরাস পারফর্ম করবেন। এছাড়া জেসন অ্যালডিন, রাসকাল ফ্ল্যাটস এবং গ্যাভিন ডিগ্রোসহ আরও অনেক তারকা তিনটি গালা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
গালা ও র্যালি
ট্রাম্প সোমবার রাতে তিনটি গালা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এর পাশাপাশি, রোববার রাতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনায় 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন ভিক্টরি র্যালি' অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর মাত্র কয়েকদিন পরই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন থেকেই বড় ধরনের পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে আসছেন বিতর্কিত এই রিপাবলিকান নেতা, যা সম্ভব, তবে ক্যাম্পেইনের সময় দেওয়া বক্তব্য আর সরকার চালানো এক জিনিস নয়।
ট্রাম্প সরকার পরিচালনার জন্য যেসব ব্যক্তিকে বাছাই করেছেন এবং তাদের অগ্রাধিকারই নির্ধারণ করে দেবে ট্রাম্প আসলে কতটা বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন। প্রথমেই ট্রাম্পকে পরীক্ষা দিতে হবে পররাষ্ট্রনীতিতে। শুরু থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনের মধ্যে শেষ করে দেবেন। যদিও এ ব্যাপারে কাজ করতে তাকে বেগ পেতে হবে। ট্রাম্প যদি নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিয়ে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড হারানোর বিষয়টি গ্রহণ করাতে চাপ দেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
তবে তিনি যদি একতরফা বা ভারসাম্যহীন শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেন তাহলে মূলত পুতিনেরই জয় হবে। তখন ইউক্রেনের অস্তিত্ব নির্ভর করবে ইউরোপের ওপর। এক্ষেত্রে আমেরিকার অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে চীনসহ অন্যরা।
তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ক্ষেত্র হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্যও। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেন ট্রাম্প। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও এক্ষেত্রে ট্রাম্পকে বড় জয় এনে দিতে চাইবেন। তবে ট্রাম্প ইসরায়েলকে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে নাও নিয়ে যেতে পারেন। সেটা হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র।
তাছাড়া ইরানের ওপর আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারেন তিনি। তবে প্রথম মেয়াদের মতো নিষেধাজ্ঞানীতি কাজে নাও আসতে পারে। কারণ ইরান তেল বিক্রির জন্য এরই মধ্যে একটি ছায়া নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। যেমন চীন। কীভাবে চীনকে মোকাবিলা করা যায় সেটা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ইস্যু। চীনের অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা দুর্বল হলেও ট্রাম্পের প্রথম আমলের চেয়ে চীন অনেক বেশি আগ্রাসী। ফলে দক্ষিণ চীন সাগরে সংকটে পড়তে পারেন ট্রাম্প। তাই তিনি সেখানে ফিলিপাইনকে সহায়তা করবেন নাকি ত্যাগ করবেন। সেটাও একটা বড় পরীক্ষা হবে।
শুল্ক নীতিতে ট্রাম্প কতটা ভয়ংকর হতে পারেন সেটা প্রকাশ করবে চীন। এরই মধ্যে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন চীন থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এটা কি দরকষাকষি নাকি আমেরিকার অর্থনীতিকে চীনের থেকে আলাদা করার সত্যিকারের ইচ্ছা? যা ২০২৫ সালেই স্পষ্ট হবে। তালিকার শীর্ষে চলে আসবে অবৈধ অভিবাসন। গণহারে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াও ঘটতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম আমলের ট্যাক্স প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের শেষ দিকে। তাই ট্যাক্স কাটও গুরুত্ব পাবে।
প্রতিবেশী হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেছেন, এই সম্পর্কে বিদ্বেষ কোনো পক্ষের জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দেশের সেনাবাহিনী পর্যায়ে সম্পর্কে কোনো সমস্যা নেই। আর রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করা যাবে তখনই, যখন ‘নির্বাচিত সরকার’ থাকবে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও সামরিক সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ভারতের সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার (কৌশলগত অংশীদার)। কোনো ধরনের শত্রুতা দুই দেশের জন্যই ক্ষতিকর। তাতে কারও স্বার্থ চরিতার্থ হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের দুই দেশকেই একসঙ্গে বাস করতে হবে। পরস্পরকে জানতে ও বুঝতে হবে। কোনো ধরনের শত্রুতা কারও পক্ষে ভালো নয়। দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক একেবারে ঠিক রয়েছে; কিন্তু দুই দেশের সার্বিক সম্পর্কের কথা যদি বলেন তাহলে বলব, নির্বাচিত সরকার এলেই তা স্বাভাবিক হবে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। গত আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের সময় সর্বদা তারা যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন। এমনকি গত ২৪ নভেম্বরও তাদের দুজনের মধ্যে ভিডিও মারফত আলোচনা হয়েছে। তারা সব সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেছেন। এখনো সেই যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
‘বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে যদি বলতে হয়, সেটা আগের মতোই চলছে। আমাদের অফিসাররা সেখানে এনডিসিতে যোগ দিয়েছেন। ওই পক্ষ থেকেও কোনো সমস্যা নেই। শুধু একটা বিষয়, যৌথ মহড়া যেটা হতো, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেটা সাময়িকভাবে স্থগিত আছে। যখনই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, আমাদের মহড়াও হবে’, যোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর শপথ নিয়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি। সংস্থাটিতে সব ধরনের অর্থায়ন বন্ধের নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বের হয়ে যেতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিতে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিঠি পেয়েছে তারা। চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি পেয়েছি। আগামী বছরের ২২ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হবে।
সাধারণত জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা থেকে কোনো দেশ নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে চাইলে এক বছর আগে জানাতে হয়। এর আগে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মহামারির সময়েই তিনি জেনেভাভিত্তিক এই সংস্থাটি থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বাইডেন সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন। এবার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনেই এই নির্বাহী আদেশ জারি করলেন ট্রাম্প। ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ডব্লিউএইচও) আমাদের ফিরে পেতে চেয়েছিল, তাই দেখব কী হয়।’
ট্রাম্পের সই করা নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘সংস্থাটি কোভিড-১৯ মহামারি ও অন্যান্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটে ভুল পরিচালনার কারণে এবং তাৎক্ষণিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করার কারণে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অযৌক্তিক রাজনৈতিক প্রভাব থেকে স্বাধীনতা প্রদর্শন করতে না পারার কারণে’ সংস্থাটি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়া নির্বাহী আদেশে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ‘অন্যায্যভাবে ব্যাপক অর্থ প্রদান’করছে। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পর সংস্থাটিকে ‘চীনকেন্দ্রিক’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটি চীনের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছে।
বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউএইচওয়ের সবচেয়ে বড় অনুদান দাতা ছিল এবং ২০২৩ সালে তারা সংস্থার বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অবদান রেখেছিল। সংস্থাটির বার্ষিক বাজেট ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এর ফলে আমেরিকার নাগরিকদের স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এই পদক্ষেপ ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা এবং এইচআইভি/এইডসের মতো সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্জিত অগ্রগতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অবৈধ অভিবাসনবিরোধী আইনে অনুমোদন দিয়েছে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। সন্দেহভাজন বিদেশি অপরাধীদের বিচারপূর্ব কারাবাসের মেয়াদ বাড়ানোর একটি বিলও অনুমোদন করেছে কংগ্রেস। আইনসভা কংগ্রেসের অনুমোদন লাভের পর সিনেটে ৬৫-৪৫ ভোটে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী আইনটি সহজেই পাস হয়।
ওয়াশিংটন থেকে বৃহস্পতিবার এ খবর জানা যায়।
এদিকে দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানায়, কংগ্রেসের অনুমোদন লাভের পর অবৈধ অভিবাসীবিরোধী ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে চার বাংলাদেশিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত কারও কাছেই বৈধ কাগজপত্র ছিল না। এদের মধ্যে একজন এথেন্সের ও অন্যজন ভেনেজুয়েলার নাগরিক। তারা দুজনই খুনের মামলার আসামি।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এক এক্স বার্তায় বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের অবশ্যই আটক করা হবে এবং তাদের কখনও আমাদের দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
মাইক জনসন বলেন, ‘আমেরিকানরা নিরাপত্তা দাবি করে এবং নিরাপত্তা দাবির অধিকারও তাদের রয়েছে।’
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার বাংলাদেশিকে।
অভিবাসী ধরপাকড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে স্কুল-গির্জা-হাসপাতালেও।
সংবেদনশীল এসব স্থানে অভিবাসী আটক কার্যক্রমের ওপর থেকে এক দশকের বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে সেসব স্থানে ধরপাকড়ে আর কোনো বাধা নেই। এ সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত অভিবাসীরা।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কালবিলম্ব করেননি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শপথ নিয়েই শক্ত হাতে অবৈধ অভিবাসী দমন শুরু করেছেন তিনি।
ধরপাকড় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নানা অঙ্গরাজ্যে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। এর মধ্যে চার বাংলাদেশিও রয়েছেন ।
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরোর ফুলটন এলাকা থেকে ওই চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট (আইস)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের গ্রেপ্তার করে সাদা পোশাকের পুলিশ। এ ঘটনার পর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার সড়ক ও রেস্তোরাঁয় লোকজনের ভিড় নেই বললেই চলে। চরম আতঙ্কে রয়েছেন বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা।
এদিকে এখন থেকে স্কুল, গির্জা এমনকি হাসপাতালগুলোতেও অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।
আইস এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন সংস্থাগুলোর ওপর গেল এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এসব স্থানে অভিযান পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করাসহ জারি করা হয় নতুন নির্দেশনা।
এতে বলা হয়, স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে যাতে কেউ লুকিয়ে না থাকতে পারে, তাই এ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।
অপর নির্দেশনায় বলা হয়, বৈধ কাগজপত্র না থাকা কেউ গ্রেপ্তার হলে সেই ব্যক্তি যদি যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তার অবস্থান করার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে দ্রুতই দেশ থেকে বের করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেওয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন আইনজীবীরা।
সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসি এক বিবৃতিতে জানায়, এ পদক্ষেপের কারণে অভিবাসীদের পরিবার ও তাদের সন্তানের পাশাপাশি আমেরিকান শিশুরাও মারাত্মক মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে।
এরই মধ্যে মেক্সিকো সীমান্তে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। নিশ্চিত করা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীরা।
চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি এবার বাস্তবে প্রমাণ করলেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি বার্তার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথের পর দিনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। তবে নির্বাহী আদেশে চীনা ফেন্টানিল পণ্যে আপাতত ১০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনে তৈরি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা বিবেচনা করছেন তিনি। পাশাপাশি শুল্ক আরোপের তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাম। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক প্রেস কনফারেন্সে ট্রাম্প বলেন, ‘এই পদক্ষেপ চীনের ফেন্টানিল বাণিজ্যের ওপর, যা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার মৃত্যুর কারণ। তারা (চীন) মেক্সিকো ও কানাডায় ফেন্টানিল পাঠাচ্ছে। এ জন্য আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে ভাবছে প্রশাসন।’ এ সময় ট্রাম্প জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও শুল্ক আরোপ করবেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘চীন আমাদের সঙ্গে অন্যায় করছে, আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করে। তাই তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। এটাই একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন। আর মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ও মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। আর তাদের দেশে মাদক প্রবেশ করাচ্ছে চীন।
গত সোমবার শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তিগুলোর পর্যালোচনা এবং মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যায্য চর্চাগুলো চিহ্নিত করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিবেশী মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন, যা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো এই দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রবাহ বন্ধ করা। তখন এ প্রসঙ্গে চীনের নাম উল্লেখ করেননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘন্টা পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতে এবং আশ্রয়দানের ওপর নতুন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে সেনা পাঠাবেন এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করার পদক্ষেপ নেবেন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ট্রাম্প দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী যেকোনো ব্যক্তির মার্কিন নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করার বিতর্কিত আদেশ ঘোষণা করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি বড় বিষয়।’
মার্কিন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত একটি অধিকার বাতিল করার পদক্ষেপ কঠোর আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, যা একটি অনিবার্য বিষয় বলে প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন।
এই পুশব্যাক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের যথেষ্ট কারণ আছে, তবে আপনি ঠিক হতে পারেন।’
আরেকটি নির্বাহী আদেশে মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আইনি অভিবাসন আমার পছন্দ। আমার ভালো লাগে। আমাদের লোক দরকার এবং আমি এতে একেবারেই রাজি। আমরা এটা চাই।’
‘তবে, আমাদের আইনি অভিবাসন থাকতে হবে।’
এর আগে উদ্বোধনী ভাষণে ট্রাম ঘোষণা করেছিলেন, তিনি তার ‘দেশের ওপর ভয়াবহ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য’ মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে সেনা পাঠাবেন।
তিনি বলেন, ‘সমস্ত অবৈধ অনুপ্রবেশ অবিলম্বে বন্ধ করা হবে এবং আমরা লাখ লাখ বিদেশি অপরাধীকে যেখান থেকে তারা এসেছে সেখানে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করব।’
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি আগেই ঘোষণা করেছিলেন, প্রশাসন আশ্রয়দান প্রথা বন্ধ করবে।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম প্রভাব তার উদ্বোধনের কয়েক মিনিট পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং আশ্রয়প্রার্থীদের অভিভাসন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে চালুকৃত একটি অ্যাপ অফলাইন হয়ে যায়।
মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই অ্যাপে ৩০ হাজার লোকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারিত ছিল।
ট্রাম্পের প্রধান উপদেষ্টা এবং অভিবাসন নীতেতে কট্টরপন্থী প্রখ্যাত স্টিফেন মিলার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন যে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য আগ্রহী সকল অবৈধ অভিবাসীদের এখনই ফিরে যাওয়া উচিত।’
‘অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী যে কেউ বিচার এবং বহিষ্কারের মুখোমুখি হবেন।’
কেলি বলেন, প্রশাসন ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের অধীনে প্রচলিত "মেক্সিকোতে থাকুন" নীতিটিও পুনর্বহাল করবে।
এই নিয়মের অধীনে, মেক্সিকান সীমান্তে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য আবেদন করেন তাদের আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তা করার অনুমতি ছিল না।
মার্কিন-মেক্সিকান সীমান্তে হতাশা
"যেহেতু আমরা এখানে আছি, দয়া করে আমাদের প্রবেশ করতে দিন," ২৭ বছর বয়সী কিউবান তরুণী ইয়াইমে পেরেজ বলেন।
তিনি বলেন, "দয়া করে, এখানে আসার জন্য আমরা যে সব পরিশ্রম করেছি তার পরে, আমাদের আপনাদের দেশে প্রবেশ করতে দিন, যাতে আমরা জীবনে নিজেদের আরও উন্নত করতে পারি।"