ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর আরব বিশ্বে ফিলিস্তিনিপন্থি মনোভাব প্রবল হয়ে উঠেছে। আরব দেশগুলোর মসজিদ, ফুটবল স্টেডিয়াম ও গ্রামীণ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে স্লোগান চলছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে আরব জনতা।
ডয়চে ভেলে জানায়, আরব বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে প্রক্রিয়া চলছিল, হামাসের হামলার পর সেটির প্রতি মনোযোগ সরে গেছে। এখন ফিলিস্তিনিদের প্রতি নতুন করে আরবদের সমর্থন দেখা যাচ্ছে এবং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিশ্চিত করেছিলেন যে, দুই পক্ষ ‘প্রতিদিনই একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ’ হচ্ছে। এখন সেসব কথা যেন বহু দিনের পুরোনো বাক্য বলে মনে হয়। ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনালাপে জানিয়েছেন, সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে। সৌদি আরব এখন প্রকাশ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা বলছে এবং তাদের ফিলিস্তিনি জনগণের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে উপস্থাপন করছে। ফলে ইসরায়েলে হামলা করে ফিলিস্তিনিদের বিষয়টি আবার সামনে নিয়ে আসা যে হামাসের একটি বড় সাফল্য- সেটা বললে অত্যুক্তি হবে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো রিচার্ড লেব্যারন মনে করেন, এই হামলা সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্য সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিষয়ে পরিবর্তন আনবে।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, হামাসের হামলাকাণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার প্রতি সংহতি জানিয়েছে সাধারণ আরব জনতা। ফিলিস্তিনের রামাল্লা থেকে বৈরুত, দামাস্কাস, বাগদাদ এবং কায়রোতে মানুষ ফিলিস্তিনিদের সাফল্য কামনার জন্য প্রার্থনা জানিয়েছে। দখলকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লায় কফির দোকান পরিচালনা করেন ৫২ বছর বয়সী ফারাহ আল সাদি। তিনি বলেন, ‘সারা জীবন দেখেছি, ‘ইসরায়েলিরা আমাদের মারছে, আমাদের ভূমি কেড়ে নিচ্ছে আমাদের সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে।’ সাদির নিজের ছেলে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি। সাদি জানান, হামাস যা করেছে, তাতে তিনি খুশি। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি এই কফির দোকানদার গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ইসরায়েলে গত শনিবার হামাসের হামলার পর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও রাজধানী বৈরুতে সাধারণ মানুষ উল্লাস করে। গত ২২ বছর ধরে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ইসরায়েলি বাহিনী দখল করে রয়েছে। দুই পক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। লেবাননের একটি মসজিদের সামনে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পক্ষে সমাবেশ হয়। সমাবেশে ‘ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা চমৎকার ও নায়কোচিত মহাকাব্য লিখছেন’ বলে স্লোগান দেয়া হয়। লেবানের কৌতুক অভিনেত্রী শাদেন ফাকিহি ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের সমালোচনা করে ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘আপনারা ফিলিস্তিনিদের কাছে কী আশা করেন? তারা প্রতিদিন নীরবে খুন হবেন আর কিছুই করবে না?’
তিউনিসিয়ার রাজধানীর স্কুলগুলোয় ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সংহতি সমাবেশের ডাক দেয়। তিউনিসিয়ার সরকার ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ও দখলদারত্বের বিরুদ্ধে তাদের দাঁড়ানোর অধিকারের’ প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের অপেরা হাউসে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজার উদ্দেশে ত্রাণবাহী বহরের একমাত্র জাহাজটিকেও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উপকূলে এই ঘটনাটি ঘটে। গতকাল শুক্রবার সকালে একটি লাইভস্ট্রিম ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী জোর করে জাহাজটিতে ওঠে।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী ‘ম্যারিনেট’ নামের ওই জাহাজটিতে ছয়জন ক্রু রয়েছেন বলে জানা গেছে। এটি ছিল গ্লোবাল সামুদ ফ্লোটিলার শেষ কার্যকর নৌযান। এক সময়ের ৪৪টি জাহাজ নিয়ে গঠিত বহরের সর্বশেষ জাহাজ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাজটির ক্যাপ্টেন একটি ভিডিও বার্তায় জানান, কিছুক্ষণ আগে ইঞ্জিনে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে সেটি মেরামত করা হয়েছে এবং এখন জাহাজটি সম্পূর্ণ সচল রয়েছে। ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও জানিয়েছেন, ম্যারিনেট এখনো স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগে রয়েছে। এর সঙ্গে সরাসরি লাইভস্ট্রিমও সচল রয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ রিয়েলটাইমে পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন।
জাহাজটি ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না বলেও জানানো হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত এক পোস্টে তারা লিখেন, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। এটি সাহসের প্রতীক। এটি ভয়, অবরোধ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি।
পোস্টে আরও বলা হয়, গাজা একা নয়। ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।
উল্লেখ্য, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ছিল একটি শান্তিপূর্ণ মানবিক মিশন, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে সরাসরি গাজার মানুষের কাছে ওষুধ ও খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। আগস্টের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করা এই নৌবহরে ৪০টির বেশি বেসামরিক জাহাজ অংশ নেয়। এর মধ্যে ছিল আইনজীবী, চিকিৎসক, সংসদ সদস্য, মানবাধিকার কর্মীসহ নানা দেশের প্রতিনিধিরা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ওই বহরের অধিকাংশ জাহাজকে আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ জন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবককে। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হলেন সুইডিশ জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যাকে সম্প্রতি একটি জাহাজ থেকে সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনারা আটক করে। গ্রেপ্তারের আগে রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় থুনবার্গ বলেছিলেন, যদি আপনি এই ভিডিও দেখেন, তাহলে বুঝবেন আমি অপহৃত হয়েছি এবং ইসরায়েলি বাহিনী আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে।
এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ইতোমধ্যে তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ইতালিসহ বহু দেশ নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপজুড়ে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। ইতালি ডেকেছে সাধারণ ধর্মঘট। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এই অভিযানে ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই আক্রমণকে ‘গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা’ বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা শুধু একটি বৈধ সামরিক অবরোধ রক্ষা করছে এবং এই নৌবহর ছিল ‘উসকানিমূলক অভিযান’। তারা বলেছে, যেকোনো সহায়তা তাদের নির্ধারিত নিরাপদ রুটের মাধ্যমেই গাজায় পাঠানো যেতে পারে।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েল যে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে, তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও জাতিসংঘ ঘোষিত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’-এর লঙ্ঘন।
ইসরায়েলে আটক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অভিযাত্রীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) কমিটি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের নৌবাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনের নৌযানগুলো এবং ক্রু ও অভিযাত্রীদের আটকের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন মিশনের অভিযাত্রীরা।’
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে গাজার উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ মিশনের অন্তর্ভুক্ত ৪৩টি নৌযান। সুইডেনের নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ও রাজনীতিবিদ মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক ছিলেন সেই মিশনে। এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী।
কিন্তু গাজার জলসীমায় কাছাকাছি যাওয়ারি পরপরই একটি ব্যতীত সবগুলো নৌযান আটক করে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। নৌযান, ক্রু এবং আরোহীদের নিয়ে যাওয়া হয় ইসরায়েলের বন্দরে।
গত বুধবার রাতে প্রথমে ১৩টি নৌযান আটকায় ইসরায়েলের নৌবাহিনী; কিন্তু তারপরও বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একে একে ২৯টি নৌযান আটক করে ইসরায়েলের নৌসেনারা। সর্বশেষ নৌযানটিকে আটক করা হয়েছে আজ শুক্রবার সকালে।
এফএফসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার যেদিন অভিযাত্রীদের আটক করা শুরু হয়, সেদিনই অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।
এদিকে ইসরাইলের দীর্ঘদিনের অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে যাত্রা করেছে আরও ১১টি জাহাজের একটি বহর। আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই মিশনে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১০০ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মী। এ খবর দিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু। এতে বলা হয়, ‘কনসায়েন্স’ নামের প্রধান জাহাজটি ৮টি ছোট নৌকা নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রওনা দেয়। পরে এতে যুক্ত হয় ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ নামের আরেকটি বহর, যার সঙ্গে ছিল ফ্রান্স ও ইতালির পতাকাবাহী দুটি জাহাজ। বহরটি বর্তমানে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ক্রিট দ্বীপ উপকূলে অবস্থান করছে।
এই মিশনে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছেন আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন, সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা এবং গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধ্বংসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ জানাতে এই যাত্রা। এদিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সর্বশেষ জাহাজটিও গাজার উপকূলে পৌঁছানোর পর শুক্রবার আটক করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এর আগে একইভাবে অন্য জাহাজগুলোরও নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা।
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র সবগুলো নৌযান আটকানোর ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়েছে। ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত দেশে দেশে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে ইসরায়েলের পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার দাবি তোলেন।
ফ্লোটিলা আটকানোর ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতার’ অভিযোগ তুলেছেন ফিলিস্তিনি এক আইনজীবী।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই নৌবহরের উদ্দেশ্য ছিল অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানানো।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতার’ অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনি মানবাধিকার আইনজীবী ডায়ানা বুট্টু বলেছেন, ইসরায়েলের ফ্লোটিলা আটকানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ।
আল–জাজিরার সহপ্রকাশনা এজে প্লাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডায়ানা বুট্টু বলেন, সব জাহাজই আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করছিল। সেখানে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বিদেশি পতাকা বহনকারী জাহাজে ওঠা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এই আইনজীবী অভিযোগ করেন, ফ্লোটিলা থেকে যাত্রীদের আটক করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেখানে তাদের যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এরপর তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে প্রবেশের মামলা দিয়ে আবার বহিষ্কার করা হচ্ছে।
গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহর ইসরাইলি নৌবাহিনী হাতে আটকের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভকারীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এর জবাবে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।
প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত, বিক্ষোভকারীরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতি অসদাচরণের নিন্দা জানাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গত মাসে বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। জাতিসংঘ প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে বলে জানিয়েছে।
ইসরাইলি একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদ এবং জলবায়ু প্রচারক গ্রেটা থানবার্গসহ ৪শ’ জনেরও বেশি লোক বহনকারী ৪১টি জাহাজকে বুধবার থেকে ইসরাইলি নৌবাহিনী থামিয়ে দিয়েছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।
স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনার পৌর পুলিশ বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রায় ১৫হাজার মানুষ বার্সেলোনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভমিছিল করে, ‘গাজা, তুমি একা নও’, ‘ইসরাইলকে বয়কট করো’ এবং ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা’ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
স্প্যানিশ সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের একটি অংশকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।
বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আদা কোলাউকে বহনকারী একটি নৌকাও এগিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ তার সহকর্মীদের ইসরাইল কর্তৃক নির্বাসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ডাবলিনে আইরিশ পার্লামেন্টের বাইরেও কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী মিছিল করে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকে প্রায়শই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আয়ারল্যান্ডের শতাব্দীব্যাপী সংগ্রামের সাথে তুলনা করা হয়।
মরিয়ম ম্যাকনালি নামে এক নারী বলেছেন, তিনি ডাবলিনের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তার মেয়ে নৌবহরের সাথে যাত্রা করেছে।
ম্যাকনালি এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি আমার মেয়ের জন্য উদ্বিগ্ন, কিন্তুসে যা করছে তা নিয়ে খুব গর্বিত’।
তিনি বলেছেন, ‘মারাত্মক বিপদের মুখেও সে মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’
এএফপি’র একজন সাংবাদিক দেখেছেন, প্যারিসের প্লেস দে লা রিপাবলিক-এ প্রায় এক হাজার মানুষ মিছিল করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ ফ্রান্সের বন্দর শহর মার্সেইতে ইসরাইলের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির অভিযোগে অস্ত্র প্রস্তুতকারক ইউরোলিংকসের অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশের সময় বিক্ষোভকারীরা আটকানোর চেষ্টা করলে বিকেলে প্রায় একশ’ ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এএফপি সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন, বার্লিন, দ্য হেগ, তিউনিস, ব্রাসিলিয়া এবং বুয়েনস আয়ারসেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
- ‘অসহনীয়’ -
ইতালিতে দেশের প্রধান ইউনিয়নগুলো ফ্লোটিলার সাথে সংহতি জানিয়ে শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে কর্মীদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
রোম ছাড়াও, পুলিশ জানিয়েছে, , মিলান, টোরিনো, ফ্লোরেন্স এবং বোলোগনাসহ অন্যান্য শহরেও ১০ হাজার মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় একই রকম বিক্ষোভের একদিন পর রাজধানীর বিক্ষোভকারীরা কলোসিয়ামে জড়ো হয়ে মিছিল করে ইসরাইলের প্রতি অতি-ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা জানায়।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়েছে, ‘আমরা সবকিছু অবরুদ্ধ করতে প্রস্তুত। গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
তুরস্কের সরকার ইসরাইলের আক্রমণের তীব্র সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম। বিক্ষোভকারীদের একটি দীর্ঘ দল ‘দখলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা’সহ ব্যানার নিয়ে ইস্তাম্বুলে ইসরাইলি দূতাবাসের দিকে মিছিল করে।
২১ বছর বয়সী ছাত্রী এলিফ বোজকুর্ট এএফপিটিভি’কে বলেছেন, ‘আমরা সুমুদ নৌবহরের সকল সদস্য এবং সকল বন্দীর মুক্তি দাবি করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমরা দাবি করছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণহত্যাকারী ইসরাইলি রাষ্ট্রের সাথে সকল শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করা হোক।’
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় সংসদ ভবনের সামনেও প্রায় ৩ হাজার বিক্ষোভকারী বিক্ষোভে অংশ নেয়। সেখানে একটি ব্যানারে ইইউকে ‘অবরোধ ভাঙার’ আহ্বান জানানো হয়। এ সময় ভিড়ের মধ্যে ধোঁয়াটে বোমা এবং পটকা ফাটানো হয়েছিল।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া আইসিস নামে একজন বিক্ষোভকারী এএফপিটিভি’কে বলেছেন, ‘বার্তাটি হল প্রতিটি নৌকাকে রক্ষা করতে হবে,’ ‘প্রতিটি নৌকাকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সাথে ব্লকের চুক্তির মাধ্যমে ‘ইসরাইলে পাঠানো জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত অর্থ’ বন্ধ করার আহ্বান জানান।
- ‘বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ -
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন এএফপি সাংবাদিক এবং সুইস সম্প্রচারকদের মতে, জেনেভায় একই আকারের জনতা সমাবেশ করেছিল। বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারী কেন্দ্রীয় স্টেশনের কাছে আগুন জ্বালিয়েছিল।
এরপর বিক্ষোভকারীরা সুইস শহরের মন্ট ব্লাঙ্ক ব্রিজের দিকে রওনা দিয়ে লেক জেনেভার শেষ প্রান্তের দিকে অগ্রসর হলে সেখানে দাঙ্গা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে দাঙ্গাপুলিশ লাঠিচার্জ করে পিছু হটিয়ে দেয়।
গ্রীক রাজধানী এথেন্সে বিক্ষোভকারীদের একটি দল আতশবাজি এবং অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
গ্রীসের ওয়ার্ল্ড অ্যাগেইনস্ট রেসিজম অ্যান্ড ফ্যাসিজম গ্রুপের সমন্বয়কারী পেট্রোস কনস্টান্টিনো এএফপিটিভি’কে বলেছেন, ‘সুমুদের নৌবহরের ওপর আক্রমণ, এটি ইসরাইলি বর্ণবাদ রাষ্ট্রের বর্বরতার বহিঃপ্রকাশ। তারা গাজায় মানবিক সাহায্যের জন্য একটি পথও খুলতে চায় না’।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনেও কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী সমাবেশও মিছিল করেছে।সূত্র : বাসস
গাজা উপত্যকার উদ্দেশে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। অন্তত ৩১৭ জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা। ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজাগামী ত্রাণবাহী ৪৪টি জাহাজের মধ্যে একটি জাহাজ ছাড়া সবগুলোকে আটক করা হয়েছে।
আটক হওয়া কর্মীরা এসেছেন নানা দেশ থেকে—স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ৩৭টি দেশের নাগরিক রয়েছেন তাদের মধ্যে।
বাংলাদেশের শহিদুল আলম ছাড়াও সুমুদ ফ্লোটিলায় রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রুহি আক্তারও। শহিদুল আলম ‘কনশায়েন্স’ নামে একটি বড় জাহাজে রয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেটি আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলেছে—গাজামুখী ত্রাণবাহী বহরে থাকা কর্মীদের ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে। ভূমধ্যসাগরে একের পর এক নৌযান আটক করার পর এই ঘোষণা আসে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে জানায়, ‘নিজ নিজ ইয়টে থাকা যাত্রীরা নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে ইসরায়েলে পৌঁছাচ্ছেন। সেখান থেকেই তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন এবং সুস্থ আছেন।’ এ সময় গ্রেটা থুনবার্গসহ আটক কর্মীদের ছবি প্রকাশ করা হয়।
সংগঠকদের দাবি, ফ্লোটিলার অন্তত ২২৩ জন কর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এক্সে জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫টি নৌযান আক্রমণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আরও আটটি নৌযান আক্রমণের শিকার হতে পারে বা বর্তমানে আক্রমণের মুখে রয়েছে। এছাড়া ফ্লোটিলা তাদের ইনস্টাগ্রামে আটক হওয়া ২২৩ জন কর্মীর নাম ও জাতীয়তা প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, গাজার নৌ অবরোধ ভাঙতে ও সহায়তা পৌঁছে দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত শত কর্মী ৪৪টি নৌযানে অংশ নিয়েছেন। তবে ইসরায়েল এর আগেও এ ধরনের ফ্লোটিলা অভিযাত্রা ব্যর্থ করেছে। এবারের যাত্রাও একই পরিণতির মুখে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে গাজা অভিমুখে ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বহরে ইসরায়েলি বাহিনীর লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) পাঠানো হবে। ত্রাণ বহরের সঙ্গে থাকা আইনজীবীদের বরাতে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি জাহাজে থাকা আল জাজিরার হাসান মাসুদ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, নৌবহরে থাকা আইনজীবীরা ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক মানবিক ও সামুদ্রিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করছেন। ইসরায়েলি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো আইসিজেতে পাঠানো হবে।
হাসান মাসুদ বলেন, ‘আমরা সমস্ত ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, বেশ কয়েকটি নৌকা এখনো গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এমনকি যদি কেবল একটি নৌকা গাজায় পৌঁছায়, তবুও এটি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্য অর্জন করবে।’
তিনি আরও জানান, ইতালির সিসিলি থেকে রওনা হওয়ার পর আরেকটি নৌবহর এখন গাজার দিকে যাত্রা করছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, কর্মীরা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি নৌকমান্ডোরা গ্লোবাল ফ্লোটিলার ৪৪টি জাহাজের মধ্যে প্রায় ৪০টিতে উঠে পড়ে। তারা জিপিএস সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়ে জাহাজে থাকা শত শত কর্মীকে আটক করে।
রয়টার্সের যাচাই করা ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিওতে গ্রেটাকে সৈন্য-বেষ্টিত একটি ডেকের ওপর বসে থাকতে দেখা গেছে। আটক যাত্রীদের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাও রয়েছেন।
গাজামুখী নৌবহরটিতে ইসরায়েলি এমন হামলায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এটিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক। একই সঙ্গে এ ঘটনায় স্পেন, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক ও গ্রিসসহ বহু দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ইসরায়েলের বাধা পেরিয়ে গাজার জলসীমায় ঢুকে পড়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি জাহাজ। পথে রয়েছে আরও ২৩টি। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, মিকেনো নামে ওই জাহাজ বর্তমানে গাজার জলসীমায় অবস্থান করছে। তবে সেটি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে পড়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
আল জাজিরা জানিয়েছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক কর্মী-সামাজিক আন্দোলনকারীকে বন্দি করেছে ইসরায়েল। গাজার অবরোধ ভেঙে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে যাওয়া এই বহরে ৪০টিরও বেশি জাহাজ ছিল।
এর আগে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার জাহাজগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়, জলকামান ছুড়ে আক্রমণ চালায় এবং আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে কর্মীদের আটক করে।
তবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলছে, এই বাধা তাদের মিশন থামাতে পারবে না। ইসরায়েলকে ফাঁকি দিয়ে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সুমুদ ফ্লোটিলার অন্তত ৩০ জাহাজ। গাজা উপকূল থেকে আর মাত্র ৮৫ কিমি দূরে রয়েছে তারা।
সংগঠনটির ভাষ্যমতে, অবৈধভাবে চালানো ইসরায়েলি বাধা সত্ত্বেও তারা গাজার অবরোধ ভাঙতে এবং একটি মানবিক করিডোর খুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের দাবি, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য এই নৌবহর খাদ্য ও মানবিক সহায়তা বহন করছে।
বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন অর্থাৎ ৫০ হাজার কোটি ডলার নিট সম্পদের মাইলফলক ছুঁয়েছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ফোর্বসের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী গত বুধবার তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার ১০ কোটি ডলারে।
ফোর্বসের তালিকায় মাস্কের পর দ্বিতীয় স্থানে আছেন ওরাকল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। গত বুধবার পর্যন্ত তার নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ৭০ কোটি ডলার।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মূলত টেসলার শেয়ারের পুনরুত্থান ও নিজের মালিকানাধীন অন্যান্য প্রযুক্তি উদ্যোগের (স্টার্টআপ) বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ায় এই রেকর্ড গড়তে পেরেছে ইলন। টেসলার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার তার মালিকানায় রয়েছে। চলতি বছরে টেসলার শেয়ারমূল্য এরই মধ্য ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে ও বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার আরও ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে মাস্কের সম্পদে একদিনেই যুক্ত হয় প্রায় ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার।
রয়টার্স বলছে, ইলন মাস্কের জন্য বছরের শুরুটা অস্থির থাকলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসায় টেসলার শেয়ার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। টেসলা বোর্ডের চেয়ারম্যান রবিন ডেনহোলম গত মাসে জানান, হোয়াইট হাউসে কয়েক মাস ব্যস্ত থাকার পর মাস্ক এখন আবার ‘সম্মুখসারিতে ও একেবারে কেন্দ্রে’ ফিরে এসেছেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই মাস্ক নিজেই টেসলার প্রায় ১০০ কোটি ডলারের শেয়ার কিনে কোম্পানির ভবিষ্যতের প্রতি আস্থার বড় বার্তা দেন।
তবে গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়া ও মুনাফার চাপ অব্যাহত থাকায় শেয়ার কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে টেসলা। এর ফলে তথাকথিত ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ গ্রুপের বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে টেসলা অন্যতম খারাপ পারফরমার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত মাসে টেসলা বোর্ড মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ পরিকল্পনা প্রস্তাব করে, যেখানে উচ্চাভিলাষী আর্থিক ও কার্যকরী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে মাস্কের আরও বড় শেয়ার দাবিও এতে বিবেচনায় আনা হয়।
মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি এক্সএআই ও রকেট নির্মাতা স্পেসএক্স এ বছরেও বাজারমূল্যে বড় সাফল্য পেয়েছে। জুলাই পর্যন্ত এক্সএআইয়ের মূল্য ছিল ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে সিএনবিসির খবরে বলা হয়, নতুন তহবিল সংগ্রহের পর এর মূল্য ২০ হাজার কোটি ডলার হতে পারে। তবে মাস্ক তখন জানান, তারা কোনো মূলধন সংগ্রহ করছেন না।
অন্যদিকে ব্লুমবার্গের জুলাই মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেসএক্স নতুন অর্থ সংগ্রহ ও অভ্যন্তরীণ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছে, যা কোম্পানির মূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করবে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই সহিংসতার জেরে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তেজনা যাতে না বাড়ে, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
জেলা প্রশাসনের জারি করা আদেশে বলা হয়, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ইতোমধ্যে দাঙ্গা ও সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের দশেরা ও দুর্গাপূজার উৎসব ঘিরে জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে বেরেলিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্ট্যাবুলারি (পিএসি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ)। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় নজরদারির জন্য ড্রোনও ব্যবহার করছে নিরাপত্তা বাহিনী।
বেরেলির পাশাপাশি শাহজাহানপুর, পিলিভিত ও বদায়ুঁ জেলা প্রশাসনকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ভূপেন্দ্র চৌধুরী।
গত শুক্রবার ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ পোস্টার ইস্যুতে একটি বিক্ষোভ ডেকেছিলেন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ তৌকির রাজা খান। ওই ডাকে জুমার নামাজের পর কোটওয়ালি এলাকার একটি মসজিদের বাইরে প্রায় ২ হাজার মানুষ জড়ো হন। সেখানে হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনাও ঘটে।
ওই ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার শহরের সিবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারা চিকিৎসাধীন থাকলেও পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
তৌকির খান তার কয়েক সহযোগী, একজন আত্মীয়সহ বর্তমানে কারাগারে আছেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ১০টি এফআইআর দায়ের করেছে, যাতে ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ২ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত ৪ সেপ্টেম্বর ঈদে-মিলাদুন্নবীর মিছিলের সময়। কানপুরে মিছিলের পথে একটি তাঁবুতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা পোস্টার ঝোলানো হয়েছিল। স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলো অভিযোগ তোলে, ওই জায়গাতেই রামনবমীর মতো হিন্দু উৎসব হয়। তাই এই পোস্টার ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়া হয়েছে।
এরপর থেকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু সংগঠনগুলোর দাবি, তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিমরা অভিযোগ করেন, নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করায় তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
কয়েক সপ্তাহ পর বারানসিতে পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়। ধর্মীয় নেতারা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টারের প্রতিবাদে ‘আই লাভ মহাদেব’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেন। তারা দাবি করেন, উসকানিমূলক পোস্টারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফিলিপাইনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বৃহস্পতিবার উপকূলীয় অঞ্চলে বিপজ্জনক বন্যার সতর্কবার্তা দিয়েছেন। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় ম্যাটমো দুর্যোগ কবলিত দেশটিতে আঘাত হানার আশঙ্কায় এ সতর্কতাবার্তা দেওয়া হয়েছে।
ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার (৪৭ মাইল) বেগে বাতাস বয়ে আনা এই ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সকালে লুজনের প্রধান দ্বীপে পৌঁছানোর কয়েক ঘন্টা আগে তীব্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, ‘উত্তর ও পূর্ব লুজনের নিম্নভূমি বা উন্মুক্ত উপকূলীয় এলাকায় ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ১.০ থেকে ৩.০ মিটার (৩-১০ ফুট) উচ্চতার প্রাণঘাতী ঝড়ো হাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
ঝড়ো হাওয়া যখন সমুদ্রের বিশাল ঢেউ উপকূলের দিকে ঠেলে দেয়, তখন বন্যা, সম্পত্তির ক্ষতি ও মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দেয়।
তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়ার কোনও নির্দেশ দেয়নি। তবে আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং সমুদ্র উত্তাল এবং সকল ধরণের জাহাজের জন্য সমুদ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হবে।
মধ্য ফিলিপাইনে ৬.৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৭২ জন নিহত এবং প্রায় ৬০০টি বাড়ি ধ্বংস হওয়ার মাত্র তিন দিন পর, আফটারশকের (ভূমিকম্পন পরবর্তী কম্পনের) ভয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়েছে।
ফিলিপাইনে প্রতি বছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। এগুলো প্রায়ই দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় আঘাত হানে, ওই স্থানগুলোতে লাখ লাখ অসহায় মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে মানব-চালিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রহ উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
গত সপ্তাহে উত্তর ফিলিপাইনে টাইফুন বুয়ালোইয়ের আঘাতে ৩৭ জনে প্রাণহানি ঘটেছে এবং ৪ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে টাইফুন রাগাসার আঘাতে দেশটিতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সূত্র : বাসস
গাজা যুদ্ধের অবসান এবং বিধ্বস্ত ওই অঞ্চল পুনর্গঠনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটি মেনেও নিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘণ্টাখানেক পরই ভোল পাল্টেছেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি কখনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেবেন না এবং গাজার অধিকাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি অব্যাহত থাকবে। ট্রাম্পের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু বারবার এটার নিন্দা করে আসছিলেন।
ওই প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়ে এই পরিকল্পনায় কিছুটা গতি এনে দিয়েছে জর্ডান, মিসর, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কের মতো শীর্ষস্থানীয় আরব ও মুসলিমপ্রধান দেশ।
আলোচনার গতি বজায় রাখতে ট্রাম্প শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, এই প্রস্তাবে হামাস রাজি কি না ‘হ্যাঁ অথবা না’ তা জানাতে ‘তিন থেকে চার দিন’ সময় আছে। যদি উত্তর না হয়, তাহলে যুদ্ধ চলবে।
প্রস্তাবিত চুক্তিটি অনেকটাই জো বাইডেনের এক বছরেরও বেশি সময় আগে করা পরিকল্পনার মতো। এরপর থেকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, গাজায় আরও ধ্বংসযজ্ঞ এবং এখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মাসের পর মাস যন্ত্রণা এবং বন্দিদশা সহ্য করতে হয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যে বাইডেনের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার কারণ হলো, নেতানিয়াহু তার মন্ত্রিসভার কট্টর ডানপন্থিদের চাপের মুখে নতুন দাবি যুক্ত করেছিলেন।
এত কিছুর পরেও যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রস্তাব একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। প্রথমবারের মতো, ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। যাতে চাপে পড়েছেন নেতানিয়াহু সরকারও।
গাজায় ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহর জানিয়েছে, ইসরাইলি নৌবাহিনীর বাধা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার তাদের কয়েক ডজন জাহাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দিকে ‘জোরালোভাবে’ এগিয়ে চলেছে।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে সুইডিশ জলবায়ু প্রচারক গ্রেটা থানবার্গসহ রাজনীতিবিদ এবং কর্মীদের বহনকারী প্রায় ৪৫টি জাহাজ নিয়ে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গত মাসে স্পেন ত্যাগ করে। জাতিসংঘ বলেছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।
বুধবার ইসরাইলি নৌবাহিনী নৌবহরটিকে তাদের অবরোধের আওতায় আসা জলসীমায় প্রবেশের বিরুদ্ধে সতর্ক করার পর বাধা দেয় এবং থানবার্গের জাহাজটিকে সামনের দিকে আরো এগিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়।
কিন্তু নৌবহরটি জানিয়েছে, ইসরাইলি বাধা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ভোরে তাদের বেশিরভাগ জাহাজ তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখে গাজা উপত্যকার উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছেছিল।
নৌবহরটি এক্স-এ টাইম স্ট্যাম্পসহ পোস্ট করেছে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ২০ মিনিটে (০০২০ জিএমটি) ‘ইসরাইলি দখলদার নৌবাহিনীর অবিরাম আগ্রাসন সত্ত্বেও মাত্র ৪৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ৩০টি নৌকা এখনো জোরেশোরে গাজার দিকে যাত্রা করছে’।
ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী ২শ’ জন যাত্রী ১৩টি নৌকা আটক করেছে। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই স্পেন এবং ইতালির নাগরিক ছিলেন।
কিন্তু, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মিশন চলছে’।
তিনি অবশিষ্ট জাহাজ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা অনুপ্রাণিত এবং আজ ভোরের মধ্যে অবরোধ ভাঙতে তারা তাদের সাধ্যমতো যা যা করার দরকার সবকিছু করছে’।
নৌবহরটি জানিয়েছে, বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে এই বাধাগুলো দেয়া হয়। তারা আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করার সময় এই পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে বর্ণনা করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘নিশ্চিত বাধার বাইরেও লাইভ স্ট্রিম এবং আরো বেশ কয়েকটি জাহাজের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এক পোস্টে বলেছে, ‘নৌবহরের বেশ কয়েকটি জাহাজ নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং তাদের যাত্রীদের ইসরাইলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে’।
এক্সে ২২ বছর বয়সি থানবার্গের জিনিসপত্র উদ্ধারের ফুটেজ পোস্ট করেছে এবং আরো বলেছে, ‘গ্রেটা এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন।’
হামাস ‘আন্তর্জাতিক জলসীমায়’ নৌবহরের বাধাদানকে ‘জলদস্যুতা এবং সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদের অপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর অতর্কিত হামলা গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল।
স্পেন এবং ইতালি উভয়ই নৌ-প্রহরী পাঠিয়েছিল। তারা গাজা উপকূলে ইসরাইলের ঘোষিত নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশের আগে জাহাজগুলোকে থামার আহ্বান জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, তাদের ফ্রিগেটগুলো সেই সীমা অতিক্রম করবে না।
তিউনিসিয়ায় ১০ দিন যাত্রাবিরতির পর আয়োজকরা দুটি ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছেন। ফ্লোটিলা ১৫ সেপ্টেম্বর আবার যাত্রা শুরু করে।
গ্রুপটি জানিয়েছে, তাদের প্রধান জাহাজগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আলমা। জাহজটির চারদিকে ‘একটি ইসরাইলি যুদ্ধজাহাজ আক্রমণাত্মকভাবে প্রদক্ষিণ করেছিল।’ আরেকটি জাহাজ ‘সিরিয়াস’ ‘অনুরূপ হয়রানিমূলক মহড়ার’ শিকার হয়েছিল।
-‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’-
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর ‘ভীতি প্রদর্শন’ কৌশল সত্ত্বেও নৌবহরটি এর আগে বিধ্বস্ত উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
গ্রুপটি এক্স-এ বলেছে, ‘পূর্ববর্তী নৌবহরগুলোকে যেখানে আটক করা হয়েছিল অথবা আক্রমণ করা হয়েছিল সেই এলাকায় প্রবেশ করার সময় আমরা সতর্ক রয়েছি’।
ইতালিতে ইতোমধ্যেই নৌবহরের সমর্থনে সাধারণ ধর্মঘট হয়েছে। বুধবার রাতে রোমে শত শত মানুষ তার সমর্থনে সমবেত হন।
নেপলসে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা দক্ষিণ ইতালীয় শহরের প্রধান স্টেশনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ট্রেন অবরোধ করে এবং পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানাতে ইউনিয়নগুলো শুক্রবার আবারও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেছেন, তিনি নৌবহরকে বাধা দেয়ার কারণে তার দেশে অবস্থানরত সমস্ত ইসরাইলি কূটনীতিককে বহিষ্কার করবেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটিকে ‘সন্ত্রাসবাদের একটি কাজ যা আন্তর্জাতিক আইনের সবচেয়ে গুরুতর লঙ্ঘন এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে’ বলে অভিহিত করেছেন।
জুন এবং জুলাই মাসে ইসরাইল একই ধরনের প্রচেষ্টা রুখে দেয়।
-‘এখন থামো’-
স্পেনের ডিজিটাল রূপান্তর মন্ত্রী অস্কার লোপেজ নৌবহরটিকে গাজা থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ইসরাইলের ঘোষিত নিষিদ্ধ অঞ্চলে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
ইতালিও তাদের ফ্রিগেটটিকে সেই সীমায় থামার পর কর্মীদের ‘এখনই থামতে’ অনুরোধ করেছিল।
স্পেনের কর্মীরা বলেছেন, স্পেন এবং ইতালির সিদ্ধান্ত তাদের প্রচেষ্টাকে ‘নাশকতার’ একটি প্রচেষ্টা।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, কর্মীরা কোনো হুমকি নয় এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তাদেরকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
ইতালির জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, এই ভ্রমণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে বিপদে ফেলতে পারে, যা এখনো আলোচনাধীনে রয়েছে। সূত্র : বাসস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা ‘শান্তি’ প্রস্তাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টি অস্পষ্টভাবে এসেছে। অথচ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য যুগের পর যুগ ফিলিস্তিনিরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য বিশ্বজনমত জোরদার হয়েছে। এমনকি ইসরায়েলের মিত্র বলে পরিচিত দেশগুলোও ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে।
হোয়াইট হাউসে গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপর নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ২০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। এতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ‘অস্পষ্টতা’ এবং প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত না থাকায় এ পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও ট্রাম্প তার প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে তিন থেকে চার দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। না হলে হামাসের চরম পরিণতি হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
এদিকে ট্রাম্পের ‘শান্তি’ প্রস্তাবের পরও গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজায় প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার হামলায় ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে শর্তসাপেক্ষে এবং অস্পষ্টভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা ঘোষণার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘কয়েকটি মিত্রদেশ ‘বোকার মতো’ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে… তারা সত্যিই এটা করেছে। কারণ, আমি মনে করি যা ঘটছে, তাতে তারা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।’
এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবে গাজার উন্নয়ন এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পিএ) ‘সংস্কারকে’ শর্তহিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি তারপরও একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আলোচনা শুরু ‘হতে পারে’ কি না নিশ্চিত নয়।
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে অস্পষ্টতার বিষয়টি নেতানিয়াহুর বক্তব্যেও এসেছে। দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তখন নেতানিয়াহুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে তিনি একমত হয়েছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘ন’, কোনোভাবেই নয়।’ তিনি বলেন, ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবে এ ধরনের কিছু নেই।
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অস্পষ্টভাবে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর সাংঘর্ষিক বক্তব্য এবং তার সরকারে অতি রক্ষণশীল শরিকদের অবস্থানের কারণে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোনো কঠিন হবে। আর শেষ পর্যন্ত হামাস অতীতের মতো ‘মেনে নিয়েছি, তবে কথা আছে’- এ ধরনের জবাব দিলে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যদি উভয় পক্ষ (ইসরায়েল ও হামাস) প্রস্তাব মেনে নেয়, তবে যুদ্ধ মুহূর্তেই থেমে যাবে। গাজায় আটক সব জীবিত ও মৃত জিম্মিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে আর ইসরায়েলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। নতুন ব্যবস্থায় গাজা শাসনের দায়িত্ব নেবে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট সরকার, যার তত্ত্বাবধানে থাকবে আন্তর্জাতিক একটি পর্ষদ (বোর্ড অব পিস)। সেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। ইসরায়েলও গাজা দখল করবে না বা এই ভূখণ্ডকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করবে না।
ইউরোপ, রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশ এবং ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্বে থাকা মিসর ও কাতার ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। যদিও একই সঙ্গে এখনই এই প্রস্তাবের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী না হওয়ার কথা বলছে কাতার।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘সব পক্ষকে’ ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে গুতেরেসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এই সংঘাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া ব্যাপক ভোগান্তি লাঘব করা।’ গুতেরেস আশা প্রকাশ করেন, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে হামাস যুক্ত ছিল না। এই পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হয়েছে, যা হামাস এর আগেও প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এই পরিকল্পনা ‘সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের প্রতিপক্ষপাতদুষ্ট’ এবং এর মাধ্যমে হামাসকে নির্মূল করার ‘অসম্ভব শর্ত’ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আলোচনা সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, হামাসের আলোচকরা ‘সদিচ্ছা নিয়ে এটি পর্যালোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবেন’।
প্রস্তাবের বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সাংবাদিকদের বলেন, হামাস কর্মকর্তারা গত সোমবার রাতে পুরো পরিকল্পনাটি হাতে পেয়েছেন। বিষয়টি তারা ‘দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পর্যালোচনার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
মাজেদ আল-আনসারি আরও বলেন, সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে আগবাড়িয়ে আশাবাদী হওয়া ঠিক হবে না। তবে তিনি বলেন, পরিকল্পনাটিতে ‘সার্বিক বিষয় স্থান পাওয়ায়’ কাতার এ নিয়ে ইতিবাচক।
তবে কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান বারাকাত আল-জাজিরাকে বলেছেন, ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা ‘সমস্যাজনক’ এবং হামাসের জন্য এটি গ্রহণ করা হবে একেবারেই ‘অবিবেচকের কাজ’।
বারাকাত বলেন, এই পরিকল্পনার শুরুতেই হামাসকে তাদের সব চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার এমন এক পক্ষের কাছে ছেড়ে দিতে হবে, যাদের তারা বিশ্বাস করে না। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যেভাবে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে পরিকল্পনাটি ঘোষণা করেছেন, তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে প্রস্তাবটি ইসরায়েলের স্বার্থের দিকেই বেশি ঝুকে আছে।
শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে হামাসকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২০ দফা প্রস্তাবের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে হামাস তিন থেকে চার দিন সময় পাবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কেবলই হামাসের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছি।’ তার দাবি, সব আরব দেশ, মুসলিম দেশগুলো এতে সম্মতি দিয়েছে। ইসরায়েল সম্মতি দিয়েছে। হামাস যদি সম্মতি না দেয়, তাহলে চরম পরিণতি হবে।
হামাস যদি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তাহলে ইসরায়েলের যেখানে যা করা দরকার, তিনি তা করতে দেবেন। আর তারা সহজেই এটি করতে পারবে। প্রস্তাব না মানলে হামাসকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এটা হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের ধরন, লক্ষ্য ও সময়সীমার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে। তাই বলা যায়, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনারা কবে ফেরত যাবেন, সেটার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো হয়নি। কীভাবে ও কখন এটা বাস্তবায়িত হবে, তাও স্পষ্ট নয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, গাজা অঞ্চলটি যেকোনো ‘সন্ত্রাসী হুমকি’ থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল ‘নিরাপত্তা পরিধি’ বজায় রাখবে। তবে এসব শর্ত কখন পূরণ হবে, শর্তপূরণের মানদণ্ডকে নির্ধারণ করবে, সে সবের উল্লেখ নেই।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চলমান জাতিগত নিধন অভিযানের মধ্যেই গত আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে মোট ১ লাখ ১০ হাজার বুলেট সরাবরাহ করা হয়েছে। চ্যানেল ৪-এর একটি নতুন তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আনাদোলু এই খবর দিয়েছে।
এই চালানের মূল্য প্রায় ২০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২৭ হাজার ডলার)। ইসরায়েলে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধির একটি নমুনা হচ্ছে এটি। এই আগস্টে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে মোট চালানের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডের বেশি, যা মাসিক হিসেবে ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদন অনুসারে, একটি চালানের মাধ্যমে পাওয়া পণ্যগুলোকে ইসরায়েলের কাস্টমস কোডবুকে ‘বুলেট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।
সেই মাসে অন্যান্য চালানের মধ্যে ছিল ‘ট্যাংকের’ যন্ত্রাংশ, ‘শটগান বা রাইফেলের’ যন্ত্রাংশ। আরও ছিল বিস্তৃত ‘অন্যান্য’ বিভাগ। এর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ৪ লাখ পাউন্ড মূল্যের গোলাবারুদ ইসরায়েলি কাস্টমস দিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছে। গত তিন বছরের বেশি সময়ের মধ্যে এক মাসে ওই চালান ছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ।’
যুক্তরাজ্য সরকার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করেছিল, তারা ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির ২৯টি লাইসেন্স স্থগিত করেছে। এসব অস্ত্র ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনে ব্যবহৃত হতে পারে।’
তবে যুক্তরাজ্যে এখনো প্রায় ৩৫০টি লাইসেন্স সক্রিয় রয়েছে, যার মধ্যে ১৬০টির বেশি ‘সামরিক’ লাইসেন্স হিসেবে তালিকাভুক্ত।
সে সময় সরকার বলেছিল, তারা ‘গাজায় বর্তমান সংঘাতে ব্যবহৃত হয় এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে যায়’ এমন পণ্যের বিক্রি আটকে দিচ্ছে।
এই প্রতিবেদনটি এমন এক দিনে প্রকাশিত হয়েছে, যার ঠিক আগের দিন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি একটি প্রস্তাব পাস করেছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ইসরায়েল গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের অস্ত্র রপ্তানি জাতিসংঘের জাতিগত নিধনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণে এই উপত্যকাটি প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ভিক্ষ ও রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে গাজায় গণহত্যা যুদ্ধের কারণে ইউরোপজুড়ে তীব্র আলোড়নের মুখে জার্মান সরকার ইসরায়েলের ওপর আংশিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে লোক দেখানো এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে আবারও ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের সংসদীয় তদন্তের জবাবে জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে অস্ত্র রপ্তানির মূল্য কমপক্ষে ২.৮৯ মিলিয়ন ডলার।
ডাই লিংক দলের আইনপ্রণেতা লিয়া রেইসনার আবারও অস্ত্র রপ্তানি লাইসেন্স প্রদানের জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, জার্মান সরকার ইসরায়েলের জন্য লাখ লাখ ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম অনুমোদন করছে। অথচ সরবরাহ স্থগিতের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
তার মতে, এই অল্প সময়ের তথাকথিত ‘ফ্রিজ’ সম্পূর্ণরূপে চোখের পলক ফেলার জন্য। যেকোনো সময় ইচ্ছামতো এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
৮ আগস্ট চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ একটি আদেশ জারি করেন, যার মাধ্যমে গাজা সংঘাতে ব্যবহৃত হতে পারে- এমন সামরিক সরঞ্জাম আপাতত ইসরায়েলে সরবরাহ নিষিদ্ধ করা হয়।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধে বার্লিনের সামরিক সহায়তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জার্মানিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা গেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে জার্মানির রাজধানীতে ১ লাখেরও বেশি মানুষ সমাবেশ করে। তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানায়।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক হয়েছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক।
বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা এই কোম্পানি এবং তার অন্যান্য ব্যবসার শেয়ারের দাম বাড়ায় এ মাইলফলক স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরের পর মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ৫০০.১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল বলে ফোর্বস বিলিয়নিয়ার্স সূচক জানিয়েছে। তবে দিন শেষে তা সামান্য কমে ৪৯৯ বিলিয়ন ডলারের সামান্য ওপরে নেমে আসে।
টেসলার পাশাপাশি মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি এক্সএআই এবং রকেট নির্মাতা স্পেসএক্সের শেয়ারমূল্যও সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। এর ফলে ধনকুবের হিসেবে মাস্কের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। এসব সফলতাই তাকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি জগতের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে।
ফোর্বসের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী হলেন ওরাকল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৫০.৭ বিলিয়ন ডলার। গত মাসে ওরাকলের শেয়ারের দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়ে যাওয়ায় একসময় মাস্ককে অতিক্রম করেছিলেন এলিসন।
বিবিসি বলছে, মাস্কের বিপুল সম্পদ মূলত টেসলার ওপর নির্ভরশীল। এই কোম্পানির প্রায় ১২ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত টেসলার শেয়ারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বুধবার নিউইয়র্কে দিনের শেষে টেসলার শেয়ার আগের দিনের চেয়ে ৩.৩ শতাংশ বেশি দামে লেনদেন শেষ হয়।
মূলত সাম্প্রতিক মাসগুলোতে টেসলার শেয়ারের দাম বেশ বেড়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন মাস্ক রাজনীতির চেয়ে আবার তার কোম্পানিগুলোর প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
এছাড়া গত মাসেই মাস্ক প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের টেসলার শেয়ার কিনেছেন। বিনিয়োগকারীরা এটিকে কোম্পানির প্রতি তার আস্থার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য ও ওষুধবাহী জাহাজবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ১৩টি নৌযান আটকে দিয়েছে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। তবে এখনও গাজার উদ্দেশে এগিয়ে চলছে বহরের ৩০টি নৌযান।
বুধাবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় ফ্লোটিলার ১৩টি নৌযান আটকের তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বার্তায় বলা হয়েছে, “হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি নৌযান থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেসব নৌযানে থাকা যাত্রীদের নিরাপদভাবে ইসরায়েলের বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে।”
আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ছিলেন ফ্লোটিলার নৌযানবহরে। তাকেসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সবার্তায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “গ্রেটা থুনবার্গ এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ ও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।”
ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লেবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসানতারা—এই চার আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঐক্যমঞ্চ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে খাদ্য ও ওষুধে পূর্ণ ৪৩টি নৌযানের বহর নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা দেয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। জাহাজগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক। এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী।
বুধবার ভূমধ্যসাগরের গাজা উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহর। সেদিন সন্ধ্যার পর গাজা উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় নৌবহরের চারপাশ ঘিরে ধরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং বহরের ১৩টি নৌযান আটক করে। আটক নৌযানগুলোর মধ্যে ৩টির নাম জানা গেছে— স্পেক্টার, অ্যালমা এবং সাইরাস।
ইসরায়েলি নৌবাহিনীর আটক করা নৌযানগুলোর যাত্রীরা সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করেছেন। গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে যাওয়ার মতো একটি অহিংস উদ্যোগে ইসরায়েলের বাধা প্রদানের নিন্দা জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ইসরায়েলের নৌবাহিনীর দ্বারা অপহরণের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। অনেকে নিজের পাসপোর্টসহ ছবি-ভিডিও পোস্ট করেছেন।
বুধবার রাতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌযান আটকের পর উদ্বেগ জানান আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা বার্তায় তিনি বলেন, “আজ রাতে যা ঘটল— খুবই উদ্বেগজনক। এটি ছিল একটি শান্তিপূর্ণ মিশন, যার মূল লক্ষ্যছিল গাজায় চলমান ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শিকারদের পাশে দাঁড়ানো।”
তবে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ১৩টি নৌযান আটকে দিলেও বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উপকূলের উদ্দেশে তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। বুধবার ১৩টি জাহাজ আটকের পর এক বিবৃতিতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে ভলা হয়েছে, “ইসরায়েলের এসব অবৈধ পদক্ষেপ আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। আমরা আমাদের মিশন চালিয়ে যাব এবং গাজায় একটি মানবিক করিডর খুলব।”
প্রসঙ্গত, গত ১৮ বছর ধরে গাজার সমুদ্র উপকূল অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গাজায় কোনো সমুদ্রবন্দর নেই এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে আন্তর্জাতিক কোনো জাহাজ বা নৌযান গাজা উপকূলের কাছাকাছি যেতে পারে না। ফ্লোটিলার নৌবহর সেখানে পৌঁছালে তা হবে ১৮ বছর গাজার উপকূলে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক নৌবহরের নোঙ্গর করা।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা তার যাত্রার সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৩ টায়। সেই তথ্যে বলা হয়েছে, গাজা থেকে ৪৬ নটিক্যাল মাইল বা ৮৫ দশমিক ১৯ কিলোমিটার দূরে আছে ৩০টি নৌযান।
সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা
আইনপ্রণেতারা ব্যয়সংক্রান্ত একটি বিল পাস করতে শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার আংশিক শাটডাউন (অচল) হয়ে পড়েছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা অস্থায়ী ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারে অচলাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে সচল রাখতে স্থানীয় সময় রাত ১২টার মধ্যে ব্যয়সংক্রান্ত বিল পাস করা লাগত। কিন্তু সেই বিল পাস হয়নি।
১৯৮০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫ বার মার্কিন সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে শাটডাউন হয়েছে। শাটডাউনের সময় সরকারি খাতের আকার উল্লেখযোগ্য হারে ছোট করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে আগের শাটডাউনগুলোর তুলনায় এবার বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প সতর্ক করেন, শাটডাউনকে কাজে লাগিয়ে তিনি এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য ‘খারাপ’ হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, শাটডাউনের সময় সরকারি কর্মীদের চাকরি ও সরকারি কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ‘অনেক কিছুতে পরিবর্তন’ আনা সম্ভব। এর মধ্যে সরকারি খাতের আকার ছোট করা এবং অপ্রয়োজনীয় সেবা কাটছাঁট করার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ জনগণ শাটডাউনের প্রভাব টের পাবেন। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা যেমন সামাজিক নিরাপত্তা এবং খাদ্যসহায়তা চালু থাকবে। তবে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু কার্যক্রম এবং ছোট ব্যবসার ঋণ অনুমোদন স্থগিত থাকবে।
ডেমোক্র্যাটরা শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করছেন। সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার বলেছেন, ‘রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্যসেবা সমস্যার সমাধান না করে আমাদের শাটডাউনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’
হাউসের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে রিপাবলিকানরা ভোট দিচ্ছেন।