গাজার হামাস গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকের আলোচনায় ভাটা পড়েছে। ইসরায়েলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তুলছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষের এমন চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একথা জানিয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, হামাস ইসরায়েল সংঘাতের তীব্রতা যত বাড়ছে। এই যুদ্ধের জেরে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতির দ্রুত পরিবর্তনের আভাস মিলছে। এই সংঘাত সৌদি আরবকে ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পথে আরও ঠেলে দিয়েছে। সৌদি আরব বলেছে, তারা পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বড় সংঘাত এড়াতে চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রথমবার ফোন করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ফোনালাপে তারা ইসরায়েলের ‘যুদ্ধাপরাধ বন্ধের’ গুরুত্বের বিষয়ে একমত হন। গত মার্চে চীনের মধ্যস্ততায় মধ্যপ্রাচ্যের এই বৈরী দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়।
সূত্র দুটি রয়টার্সকে জানায়, চলমান সংঘাতের কারণে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেল। ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে সৌদি ও ইসরায়েলের নেতারা বলছিলেন, তারা ধীরে ধীরে একটি চুক্তির দিকে যাচ্ছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সৌদি আরব ধীরে ধীরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের কাছাকাছি পর্যায়ে চলে গেছে, তবে ইসরায়েল-হামাসের সংঘাতের পর সৌদি যুবরাজ সেই অবস্থান থেকে সরে গেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করতে পারে, যা মানবিক বিপর্যয়ের একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গাজার দুরবস্থা চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর ফলে যেখানে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি ত্রাণের অপ্রতুলতা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির রেডিও-৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন টম ফ্লেচার।
টম ফ্লেচার বলেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয় এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুর মুখে পড়বে। তার এই বক্তব্যে তিনি গাজার জনগণের জন্য ক্রমবর্ধমান সংকট এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা তুলে ধরেন। ফ্লেচারের মতে, ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় আরোপিত অবরোধ এবং ত্রাণ সরবরাহে বাধার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, যার ফলে শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গাজায় খাদ্য সংকট একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত শিশুদের জন্য। ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বন্ধ করে রাখার কারণে সেখানে জীবন রক্ষাকারী পণ্য ও ত্রাণের প্রবাহ অত্যন্ত সীমিত হয়ে গেছে। এই অবরোধের কারণে গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দার জন্য খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
টম ফ্লেচার এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে গাজার অভ্যন্তরে একটি মারাত্মক খাদ্য সংকট চলছে এবং বিশেষভাবে এটি শিশুদের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে পানির সংকটও তীব্র হয়েছে এবং সঠিক সময় ও পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ার কারণে অনেক শিশুর শরীরে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ছে, ফলে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। গাজার চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার কারণে বহু শিশু জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এ বছর মার্চের শুরুতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ওপর আবারও হামলা চালানো শুরু করার পর থেকে গাজার মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সোমবার প্রথমবারের মতো ইসরায়েল গাজায় ত্রাণের কিছু ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়। এই ত্রাণটি ছিল অত্যন্ত সীমিত, মাত্র ৫টি ট্রাক, যেগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য খাদ্য ও পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।
টম ফ্লেচার এই সীমিত ত্রাণপ্রবাহের জন্য গাজার পরিস্থিতিকে ‘সমুদ্রে পানির একটি ফোঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, গাজার মানুষের জন্য এই পরিমাণ ত্রাণ কখনোই যথেষ্ট নয়। যদিও ত্রাণের ট্রাকগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য খাবার ও পুষ্টিকর খাদ্য ছিল, তবে এসব পণ্য গাজায় পৌঁছানোর পরও সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানোর পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় গাজার শহর ও গ্রামগুলোর মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য আরও বেশি ত্রাণ এবং নিরাপত্তা প্রয়োজন।
গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে টম ফ্লেচার আরও বলেন, ১৯ জানুয়ারি, হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল সেই চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করে মার্চের শুরুতে।
ইসরায়েলি হামলার কারণে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় দেড় লাখ মানুষ আহত হয়েছেন। এই দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা এবং মানবিক সংকটের ফলে গাজার জনগণ প্রতিদিন আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের কারণে গাজার সব ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাজার হাসপাতালগুলোতে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে এবং বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাদের সেবার পরিসর সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে অনেক রোগী জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ত্রাণপ্রবাহে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা বাড়ছে। বিশেষত, মানবিক অধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘ বারবার ইসরায়েলকে ত্রাণপ্রবাহ সহজতর করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে কারণ গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
গাজায় মানবিক সংকট এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যদি ত্রাণ সরবরাহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত ও যথাযথভাবে পুনরুদ্ধার না করা যায়, তবে আগামী দিনগুলোতে গাজার জনগণের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা সংস্থা গাজার জনগণের জন্য আরও ব্যাপক ত্রাণ প্রেরণের জন্য সক্রিয় চাপ দিচ্ছে, কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো ত্রাণপ্রবাহ সীমিত করে রেখেছে।
‘ইসরায়েল এখন শখের বশে গাজার শিশুদের হত্যা করছে’
ইসরায়েলের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটসের নেতা ইয়ার গোলান গাজায় চলমান যুদ্ধ ও বর্তমান সরকার নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল এখন শখের বশে গাজার শিশুদের হত্যা করছে। ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি।
গোলান বলেন, যদি আমরা একটি সুস্থ ও বিবেকবান রাষ্ট্র হিসেবে আচরণে না ফিরি, তবে ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একঘরে রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি আরও বলেন, একটি সুস্থ রাষ্ট্র কখনো বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, শিশুদের হত্যা করে না ও জনসংখ্যা উচ্ছেদের মতো লক্ষ্য নির্ধারণ করে না।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রোববার দিনভর আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫১ জন ফিলিস্তিনি। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এই হামলায়। গতকাল সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রোববার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে গাজার উত্তরাঞ্চলে। সেখানে একদিনেই ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রাতের আঁধারে বোমাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। বোমা হামলার সময় লোকজন ঘুমিয়ে ছিলেন। তারা কেউ বাস্তুহারা, কেউবা আগের হামলা থেকে বাঁচতে এই কেন্দ্রের আশ্রয়ে ছিলেন। হামলায় শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ কয়েক ডজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন গিডিয়ন চ্যারট’-এর অংশ হিসেবে গাজার উত্তর ও দক্ষিণে সমন্বিত স্থল হামলা শুরু করেছে। দক্ষিণ কমান্ডের নিয়মিত ও রিজার্ভ সেনারা এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। আইডিএফ দাবি করেছে, গত এক সপ্তাহে তারা গাজায় হামাসের ৬৭০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে রয়েছে হামাসের বিভিন্ন সামরিক সেল, সুড়ঙ্গপথ এবং ট্যাংকবিধ্বংসী অবস্থান।
তাদের দাবি অনুযায়ী, এসব অভিযানে হামাসের বহু সদস্য এবং বেশকিছু অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি গাজার বেশকিছু ‘কৌশলগত’ এলাকাও দখল করে নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই দফায় হামলার তীব্রতা ও বিস্তৃতি দেখে মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গাজায় প্রতিদিন বাড়ছে লাশের সংখ্যা, কমছে নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতায় হতাশ ফিলিস্তিনিরা বলছেন- এই হামলা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়।
গাজার মানবিক বিপর্যয় ঘনীভূত হচ্ছে দ্রুত। বোমার শব্দে ঘুম ভাঙছে শিশুদের, ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের স্বপ্ন। এক দিনে দেড় শতাধিক প্রাণহানি- এ যেন যুদ্ধ নয়, এক নিঃশব্দ গণহত্যা।
গাজায় হাসপাতালের রোগীর ওপর ইসরায়েলি হামলা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের ভেতরে থাকা এক রোগীকে নিশানা করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) লক্ষ্য করেও গুলি চালানো হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে এ কথা বলেছেন।
মুনির আল-বুরশ বলেন, হাসপাতালটিতে থাকা এক রোগীকে নিশানা করে ইসরায়েলি একটি যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে। হাসপাতালের আইসিইউতেও গুলি চালানো হয়েছে। হামলার আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। এর আগে হাসপাতালটির পরিচালক বলেছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটি ঘিরে ফেলেছে। তারা হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেছে।
আল-জাজিরার প্রতিনিধি জানান, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটির ফটকে হামলা করেছে। বুলডোজার দিয়ে হাসপাতালটির উত্তর দিকের দেয়াল গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি অভিযানের সময় হাসপাতালটির ভেতরে অন্তত ৫৫ জন আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসক ও ৮ জন নার্স।
এ ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়, হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধের অর্থ হলো, জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া, বেইত হানুনসহ গাজার উত্তরাঞ্চলে আর কোনো সরকারি হাসপাতালই চালু রইল না। এর আগে গাজার কামাল আদওয়ান ও বেইত হানুন হাসপাতালে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।
‘পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল’
গাজা উপত্যকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ওই ঘোষণার সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর উদ্দেশ্যে সীমিত আকারে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট এ খবর জানিয়েছে।
নেতানিয়াহু যখন এই খায়েশ প্রকাশ করলেন তখন গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। স্থল অভিযান শুরু হলো এমন এক সময়ে, যখন কাতারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ শান্তি আলোচনা কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি বলে দুই পক্ষের সূত্র জানিয়েছে। একই সময় গাজায় সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এড়াতে খাদ্য সহায়তা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেল আবিব।
‘গাজা শাসনের ভার মিসরকে দেওয়া উচিত’
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ আবারও গাজা শাসনে মিসরকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দেশটির সরকার-নিয়ন্ত্রিত সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান’-এ এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সরকারের কাছে যদি এর চেয়ে ভালো কোনো পরিকল্পনা থাকে, তবে আমরা তা শুনতে আগ্রহী।
লাপিদের এই প্রস্তাব নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরেই তিনি গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব মিসরের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে মিসর সরকার তার এই প্রস্তাব আগে থেকেই সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। সাক্ষাৎকারে লাপিদ আরও বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ থাকা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইসরায়েলি সরকার গাজা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট কৌশল নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করে লাপিদ বলেন, আমরা এই সরকারের কৌশলহীনতার মূল্য দিচ্ছি। কেউ কি বলতে পারে, গাজায় যুদ্ধের শেষ চিত্রটা কেমন হবে? এটা স্পষ্ট যে, গাজা ইস্যুতে সরকারের কোনো সুসংহত পরিকল্পনা নেই।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এবার সামান্য পরিমাণ খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। রোববার ইরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে উপত্যকাটিকে পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে রাখে তেল আবিব। সেসময় কোন ধরনের আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় নতুন করে বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সময়ে হামাস ও নেতানিয়হু সরকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য একটি চুক্তি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনা চলছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, "গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের খাদ্য সংকট এড়াতে মৌলিক কিছু খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেবে ইসরাইল।"
এতে আরও বলা হয়, মানবিক এই সহায়তা যাতে হামাসের হাতে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে তারা।
গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ইসরাইলের এই অবরোধ চালু ছিল। যার লক্ষ্য ছিল হামাসকে চাপ দিয়ে কিছু দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিল ইসরাইল। তবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করে আসছিল যে, এই অবরোধের ফলে গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী রবিবার জানিয়েছে, তারা “গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ব্যাপক স্থল অভিযান শুরু করেছে” এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এই তীব্র অভিযান মূলত শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে পরাজিত করে জিম্মিদের মুক্ত করা। যদিও একই লক্ষ্য সামনে রেখে কাতারেও পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল ও হামাস।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আরও জানায়, প্রস্তাবিত চুক্তির মধ্যে থাকবে "সব জিম্মির মুক্তি, হামাস সন্ত্রাসীদের দেশত্যাগ এবং গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ।"
মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সমাধান আসেনি।
নেতানিয়াহু বলে আসছেন, হামাসকে পরাজিত না করে যুদ্ধ থামানো যাবে না। অপরদিকে হামাস তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করতে নারাজ।
আলোচনার সঙ্গে জড়িত হামাসের এক সূত্র জানিয়েছে, “যদি একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে তারা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে রাজি।” তবে ইসরাইল তাদের বন্দিদের এক বা দুই দফায় মুক্তির বিনিময়ে শুধু অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী।
এদিকে, রবিবার বিকেলে দক্ষিণ ইসরাইলে সাইরেন বেজে ওঠে। পরে সেনাবাহিনী জানায়, গাজা থেকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ভূপাতিত করা হয়েছে।
পরে ইসরাইলি বাহিনী গাজার কিছু এলাকায় লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এবং জানায়, এসব এলাকা থেকে রকেট ছোড়া হলে কঠোর হামলা চালানো হবে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, রবিবার বিকাল পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, গাজার দক্ষিণের আল-মাওয়াসিতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের তাঁবুতে হামলায় ২২ জন নিহত এবং অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন।
এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, লোকজন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজছে এবং আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, গত এক সপ্তাহে তারা গাজা জুড়ে ৬৭০টির বেশি হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মারওয়ান আল-হামস জানান, খাদ্য সহায়তা বন্ধের কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ জন শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে এবং এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে এএফপি স্বাধীনভাবে এই সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি। এর আগে জাতিসংঘও গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জানিয়েছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার জানায়, ইসরাইল ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে এবং প্রবেশাধিকার বন্ধ করেছে। এতে হাসপাতালটি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় গাজার উত্তরাঞ্চলে এখন আর কোনও সরকারি হাসপাতাল চালু নেই।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইল নতুন করে হামলা শুরু করার পর এখন পর্যন্ত ৩,১৯৩ জন নিহত হয়েছেন। আর পুরো যুদ্ধজুড়ে মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৫৩,৩৩৯ জনে।
একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আরও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। শনিবার শুরু হওয়া নতুন আলোচনার পর তারা এই প্রস্তাব দিয়েছে । গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর উভয় পক্ষের মধ্যে এই আলোচনা শুরু হলো। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক রাতেই ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৯ জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত নতুন চুক্তিতে প্রতিদিন ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের গাজায় প্রবেশ এবং অসুস্থ বা রোগীদের গাজা থেকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে।
দোহায় দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবিত চুক্তি সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা এই আলোচনার আগে জানিয়েছে যে, তারা গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার বা যুদ্ধ বন্ধের কোনো অঙ্গীকার করবে না। জবাবে ইসরায়েল হামাসের হাতে এখনো আটকে থাকা সব জিম্মি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। অভিযানে বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। কারণ ইসরায়েল খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা সেখানে যেতে দিচ্ছে না।
এর আগে হামাসকে ধ্বংস করতে ও গাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযানের কথা বলেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা থেকে সাংবাদিক ঘাদা আল কুর্দ বিবিসি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে সেখানে ব্যাপক হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ফুটেজগুলোয় ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, গাজায় বহু মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না। কিন্তু ইসরায়েল সরকার বারবার গাজায় খাদ্য সংকটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল থেকে ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়ো রোজ বিবিসি রেডিও ফোর-এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, তার টিম অবসন্ন হয়ে পড়েছে এবং কর্মীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওজন হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিশুরা খুবই লিকলিকে হয়ে পড়েছে। আমরা অনেককে পেয়েছি যাদের দাঁত পড়ে গেছে। অনেকে পুড়ে আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ইনফেকশনের প্রবণতা আছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ৫ মে বলেছেন, তারা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ওই অঞ্চলে তার সফর শেষ করেছেন। আইডিএফ বলছে, সব জিম্মির মুক্তি এবং যত দিন হামাসকে আর কোনো হুমকি মনে না হবে, তত দিন তাদের অভিযান চলবে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে নিহত ১০০
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক রাতে কমপক্ষে ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে নতুন করে মধ্যস্থতা শুরু করেছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল-দেকরান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘রাতভর আমরা অন্তত ১০০ জন শহীদের খবর পেয়েছি। অনেক পরিবার পুরোপুরি মুছে গেছে নাগরিক নিবন্ধন তালিকা থেকে।’
বিমান হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে গাজাজুড়ে বিস্তৃত হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল, যার লক্ষ্য হলো নতুন একটি স্থল অভিযান চালিয়ে গাজার নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ’নিশ্চিত করা।
ইসরায়েল মার্চের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানির প্রবেশ বন্ধ রেখেছে, যাতে হামাসকে জিম্মি ইসরায়েলিদের মুক্তি দিতে চাপ দেওয়া যায়। একই সঙ্গে গাজা পুরোপুরি দখল ও ত্রাণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও অনুমোদন করেছে দেশটি। হামাস বলেছে, তারা কেবল যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলিদের মুক্তি দেবে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন দফায় মধ্যস্থতা শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। তবে আলোচনার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ আরাবিয়া ও বিবিসি জানিয়েছে, হামাস একটি প্রস্তাব দিয়েছে- যার আওতায় তারা দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রায় অর্ধেককে মুক্তি দিতে চায় এবং এর বদলে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের ছাড়ার দাবি জানিয়েছে।
রয়টার্সকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের অবস্থান অপরিবর্তিত- তারা শুধু নিজেদের জিম্মিদের মুক্তি চায়, যুদ্ধ শেষের কোনও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই। এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতিতে নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হওয়ার খবরে। তবে হামাস বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি, আর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও কোনও মন্তব্য আসেনি।
ইসরায়েলের এই সংকটের মধ্যেও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পরিবর্তে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে দায়ী করেছেন এক জিম্মির মা। মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার এক্স-এ লিখেছেন, সরকার শুধু আংশিক চুক্তিতে আগ্রহী। তারা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে ইচ্ছাকৃত। আমাদের সন্তানদের ফেরত আনুন, সব, ৫৮ জনকেই!’
রাতের এক হামলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে একটি তাঁবুতে আঘাত হানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। এতে নারী-শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হন, আহত হন অনেকে এবং বেশ কয়েকটি তাঁবু আগুনে পুড়ে যায়। হামাস এই ঘটনাকে নতুন একটি নৃশংস অপরাধ বলে অভিহিত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকেই এই সহিংসতার জন্য দায়ী করেছে।
ভারতের সেনাবাহিনী বলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনী আরো জানিয়েছে, প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির মেয়াদের কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ আজ এই খবর জানায়।
রোববার একজন সেনা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী ছিল এবং আজই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশনস) আলাপচারিতায় যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তার কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই।’
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, রোববার ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমওদের মধ্যে কোনো আলোচনা হওয়ার সময়সূচী নির্ধারিত ছিল না।
এর আগে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ১৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত ১০ মে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে, ভারত ও পাকিস্তান ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভারত ও পাকিস্তানের চার দিনের পাল্টাপাল্টি হামলার পর এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর দীর্ঘ আলোচনার পর তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতব্যাপী দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ পরে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে ভারত ও পাকিস্তান।
ফিলিস্তিনের গাজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো হামাসকে পরাজিত করা এবং যারা এখনো হামাসের হাতে জিম্মি আছে তাদের মুক্ত করা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই ঘোষণা দিয়েছে। অপারেশন গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামে এই অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা বলছে, এই অভিযানে গাজার কৌশলগত এলাকা দখল করবে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। গত মার্চে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সমাপ্তির পর ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, গাজায় অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের এক পোস্টে অপারেশন গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামটি ব্যবহার করেনি। তবে তারা বলেছে, হামাস যতদিন হুমকি হিসেবে থাকবে এবং সব জিম্মি ফিরে না আসে, ততদিন অভিযান চলবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা গাজাজুড়ে ১৫০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে, বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ইসরায়েল সীমান্তে ট্যাঙ্ক ও সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে যুদ্ধবিরতির দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এই নতুন অভিযান থেকে বোঝা যাচ্ছে, কূটনৈতিক চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গিডিয়নের চ্যারিয়টস নামটি বাইবেলের একজন যোদ্ধার নাম থেকে নেওয়া এবং এই অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনারা গাজার কিছু এলাকা দখল করে রাখবে, বেসামরিক লোকজনকে দক্ষিণে পাঠাবে, হামাসকে আক্রমণ করবে এবং ত্রাণের ওপর হামাসের নিয়ন্ত্রণ ঠেকাবে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভল্কার টার্ক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েলের এই তীব্র আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। তিনি বলেন, যেভাবে মানুষকে জোর করে সরানো হচ্ছে, এলাকাগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে এবং মানবিক সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে এতে গাজায় স্থায়ীভাবে মানুষের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা জাতিগত নির্মূলের মতো এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার জনগোষ্ঠী বর্তমানে ‘চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে’ রয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার বারবার দাবি করে আসছে, গাজায় কোনো খাদ্য সংকট নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার উদ্দেশ্য ওই এলাকা তাদের দখলে রাখা। তবে ইসরায়েলি সরকার এটিও বলেছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই অভিযান শুরু হবে না। শুক্রবারই ট্রাম্প সফর শেষে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপরই ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখনো হামাসের কাছে ৫৭ জন জিম্মি রয়েছে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে।
গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন হলিউড তারকারা
গাজায় চলমান সহিংসতা ও ‘গণহত্যা’র বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র শিল্পের নীরবতার নিন্দা জানিয়ে একটি উন্মুক্ত প্রতিবাদপত্রে নতুন করে যোগ দিলেন হলিউডের জনপ্রিয় তারকারা। সম্প্রতি অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স, পেদ্রো পাসকাল, রিজ আহমেদ ও পরিচালক গুইয়ারমো দেল তোরোদের মতো শিল্পীরা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা।
আরব নিউজ জানিয়েছে, এই চিঠিতে ৩৭০ জনেরও বেশি অভিনেতা, পরিচালক ও চলচ্চিত্রকর্মী স্বাক্ষর করেছেন। তারা গাজায় ফাতিমা হাসুনা নামে এক ফটোসাংবাদিকের হত্যারও তীব্র প্রতিবাদ জানান। ফাতিমা ‘Put Your Soul in Your Hand and Walk’ নামক একটি তথ্যচিত্রে কাজ করেছিলেন, যা বৃহস্পতিবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কান উৎসবের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশও। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিনোশ বলেন, ‘সে (ফাতিমা) আজ আমাদের সঙ্গে এখানে থাকার কথা ছিল।’ তিনি জানান, ফাতিমা তথ্যচিত্রটি কানে নির্বাচিত হওয়ার খবর জানার পরদিনই পরিবারের আরও ১০ সদস্যসহ ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রাণ হারান। এ ছাড়া প্রতিবাদপত্রে যোগ দিয়েছেন, রুনি মেরা, মার্কিন স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক জিম জারমাশ এবং ‘লুপিন’ সিরিজের তারকা ওমর সি-ওর মতো হলিউডের পরিচিত মুখ।
চিঠিতে আরও স্বাক্ষর করেছেন ‘শিন্ডলারস লিস্ট’খ্যাত রেইফ ফাইনস, রিচার্ড গিয়ার, মার্ক রাফালো, গাই পিয়ার্স, সুসান সার্যান্ডন, হাভিয়ের বারডেম, পরিচালক ডেভিড ক্রোনেনবার্গ, পেদ্রো আলমোডোভার, আলফোনসো কুয়ারন, মাইক লি প্রমুখ। তারা বলেন, আমরা লজ্জিত যে আমাদের শিল্পজগৎ গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ নিয়ে মুখ খুলছে না।
ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের ছক যুক্তরাষ্ট্রের
ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজ ভূমি থেকে সরিয়ে দিতে একাধিক আফ্রিকান দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ প্রচেষ্টা আরও স্পষ্ট হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটকে নতুনভাবে সমাধানের নামে গাজাবাসীদের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানায়, গাজাবাসীদের জন্য মরক্কো, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডকে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশগুলোর রাজনৈতিক দুর্বলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে এসব অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরপর মার্চে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, পূর্ব আফ্রিকার ৩টি দেশ-সুদান, সোমালিয়া ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে আলোচনা করেছে।
ভারতের হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইওম-ই-তাশাকুর পালন করছে পাকিস্তান। দেশটিতে ভারতের হামলায় নিহত সেনা ও শহীদদের জন্য এ দিবস পালন করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইওম-ই-তাশাকুর পালন করে পাকিস্তান। খবর জিও নিউজের ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানজুড়ে শুক্রবার নাগরিকরা একত্রিত হয়ে ইউম-ই-তাশাকুর (কৃতজ্ঞতা দিবস) পালন করেছে। অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুসের সাফল্য উদযাপন এবং পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।
জিও নিউজ জানিয়েছে, হাফিজাবাদে আঞ্জুমান তাজিরান প্রেস ক্লাব থেকে ফাওয়ারা চক পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটি র্যালি করা হয়েছে। এছাড়া কামালিয়ায় সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে কালমা চক পর্যন্ত একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সমাবেশে নাগরিকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
সুক্কুরে মিউনিসিপাল করপোরেশন ওয়াকিং ট্র্যাক পার্কে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে সিন্ধের সবচেয়ে উঁচু জাতীয় পতাকা ৩০০ ফুট উচ্চতায় উত্তোলন করা হয়। মুলতানে জেলা কাউন্সিল অফিস থেকে চক কাচেরি পর্যন্ত একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ধর্মীয় পণ্ডিত এবং নাগরিকরা অংশগ্রহণ করেন।
মুজাফফারাবাদে এ দিবসে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। এ সময় সেখানে মন্ত্রী এবং প্রধান সচিব ফুলের মালা অর্পণ করেন। এ ছাড়া প্রশাসন তাদের গার্ড অব অনার প্রদান করে। একইভাবে, আথমুকামে জেলা কমপ্লেক্সে একটি পতাকা সম্মান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় এবং পুলিশ পাকিস্তানি ও কাশ্মীরি পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
ফয়সালাবাদে জেলা কাউন্সিল চক থেকে ঘণ্টাঘর চক পর্যন্ত একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, আরপিও এবং স্থানীয় এমএনএরা। ডেরা গাজী খানের সম্প্রদায় পুলিশ লাইন্স মসজিদে শহীদদের সম্মানে কোরআন খতম করা হয়েছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে চকলালা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড জাতীয় ঐক্য ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া এবং পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গোজরায় আঞ্জুমান তাজিরান এবং রেলওয়ে রোডের বাসিন্দারা বিশাল সমাবেশ পালন করেছেন। এতে বার অ্যাসোসিয়েশন এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অংশগ্রহণ করে এবং শহীদদের জন্য কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করা হয়।
এর আগে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, ভারতের অপ্রত্যাশিত ও কাপুরুষোচিত আক্রমণে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ১১ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭৮ সেনা। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এ যুদ্ধে ৪০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাত নারী ও ১৫ শিশু রয়েছে। এ ছাড়া হামলায় আরও অন্তত ১২১ জন আহত হয়েছেন।
আইএসপিআর জানায়, গত ৬-৭ মে রাতে ভারত পেহেলগাম হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে অপারেশন সিঁদুরের নামে পাকিস্তানে বিমান হামলা শুরু করে, যার ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর উভয়পক্ষ সপ্তাহব্যাপী ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করে আমেরিকা। গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপিত হয়েছে।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, কনিয়া এবং আশেপাশের কয়েকটি শহরে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে অনুভূত হওয়া এ ভূমিকম্পে সাময়িক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল কনিয়ার কুলু জেলা। ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকাল নাগাদ অনুভূত হয় এবং রাজধানী আঙ্কারাসহ মধ্য তুরস্কের বেশ কয়েকটি প্রদেশে এর কম্পন সুস্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায়।
এএফএডি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং সম্ভাব্য আফটারশক বা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মাথায় রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে রাজধানী আঙ্কারায় ভূমিকম্পের কম্পন বেশ তীব্রভাবে অনুভূত হওয়ায় লোকজন ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানা গেছে, তবে তা খুব দ্রুতই পুনরুদ্ধার করা হয়।
তুরস্ক একটি প্রবল ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। কারণ দেশটি ইউরেশিয়ান এবং আনাতোলিয়ান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ফলে মাঝেমধ্যেই এখানে মাঝারি ও শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্প বড় ক্ষতির কারণ না হলেও, এটি একটি সতর্কবার্তা। নগর পরিকল্পনা ও নির্মাণনীতিতে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতায় নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ হাজার ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে, গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় এক দিনে ১৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মেডিকেল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্প থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, আল-তাওবাহ ক্লিনিকের ওপরের তলায় রোগীরা হতাহত হয়েছেন। এখানকার ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। যদিও সরকার পরিচালিত মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ এবং ধারণা করা হচ্ছে তারাও মারা গেছেন। ফলে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে আনুমানিক এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করে নেওয়া হয়।
গাজা হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করায় বেন কোহেন বহিষ্কার
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোয় মার্কিন সিনেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আইসক্রিম কোম্পানি বেন অ্যান্ড জেরির সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রবীণ প্রগতিশীল অ্যাকটিভিস্ট বেন কোহেনকে। সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার কারণে তিনি সাময়িক গ্রেপ্তার হন, পরে মুক্তি পান।
গত বুধবার মার্কিন পার্লামেন্টের সিনেটের বাজেট শুনানির সময় ৭৪ বছর বয়সি বেন কোহেন উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের বাজেট প্রস্তাবের বিরুদ্ধাবস্থায় কোহেন এবং অন্যান্য প্রতিবাদকারী সদস্যরা কংগ্রেসের সামনে স্লোগান দিতে শুরু করেন। কোহেন বলেন, ‘কংগ্রেস গাজায় শিশু হত্যা করতে বোমা কেনে, অথচ দেশের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সুবিধা কমিয়ে দেয়।’ এই প্রতিবাদে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হন।
গ্রেপ্তারের আগে তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। মার্কিন ক্যাপিটল পুলিশ জানায়, কোহেনের বিরুদ্ধে একটি অপকর্মের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আরও ছয় প্রতিবাদকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
বেন কোহেন পরবর্তীতে বলেন, এ পরিস্থিতি আর সহ্য করার নয়। যুক্তরাষ্ট্র দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক খাত সংকুচিত করে, একই সঙ্গে ইসরায়েলের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বরাদ্দ করে আসছে, যা একটি ‘কেলেঙ্কারি’। তিনি বলেন, আমেরিকার নাম ও অর্থ ব্যবহার করে যে কাজগুলো করা হচ্ছে, তা দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রতি অবমাননাকর। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি জনমত ক্রমশ নেতিবাচক হচ্ছে।
কোহেন এটিকে শুধু রাজনৈতিক নয়, এক গভীর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংকট হিসেবেও দেখেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য আমাদের অর্ধেকের বেশি বাজেট ব্যয় হলে যদি তার অর্ধেকটাই মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দেওয়া যেত, তাহলে বিশ্বে এত সংঘাত হতো না।’ কোহেনের বক্তব্য স্পষ্ট যে, শান্তি ও মানবতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ন্যায্য ও সমন্বিত নীতি গ্রহণ করা।
এদিকে ফের ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা দখল করার কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় একটি অনুষ্ঠানে গাজা নিয়ে কথা বলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ভালো হবে। এরপর সেখানে ‘ফ্রিডম জোন’ তৈরি করা হবে। এতে সেখানে সব মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘গাজার জন্য আমার পরিকল্পনা আছে। যেগুলো আমি মনে করি ভালো। চলুন গাজাকে একটি ফ্রিডম জোন হিসেবে তৈরি করি। এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত হতে দিন। আমি খুবই গর্বিত হবো, যদি গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র নেয় এবং এটিকে একটি ফ্রিডম জোনে পরিণত করে। ভালো কিছু হতে দিন। মানুষকে এমন বাড়িতে রাখুন, যেখানে তারা নিরাপদে থাকবে। গাজার সমস্যা কখনো সমাধান করা হয়নি। তবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে আগে হামাসকে মোকাবিলা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দখলদার ইসরায়েলে চালানো হামাসের অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড নিয়েও মন্তব্য করেন। ট্রাম্প দাবি করেন, এটি মানব ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনা ছিল। তিনি বলেন, হামাসকে মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখুন, বিশ্বের ইতিহাসে ৭ অক্টোবর ছিল অন্যতম খারাপ দিন। আমি মনে করি শুধু এই অঞ্চলে নয়, এটি ছিল (পুরো বিশ্বে) সবচেয়ে নৃশংস হামলা, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।
হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটার দিকে খান ইউনিস থেকে ৫৬ জন, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া থেকে চার জন এবং মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু ছিল। মুখপাত্র আরো জানান, খান ইউনিসের ১৩ সদস্যের সামুর পরিবারের নাম নাগরিক নিবন্ধন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোর পাশাপাশি উত্তরে বেসামরিক নাগরিকদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজা সিটির বাসিন্দাদের ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ‘তীব্র হামলা’ শুরু হওয়ার আগেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য চলে যেতে বলা হয়েছে। বিশেষভাবে ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, আল-শিফা হাসপাতাল এবং তিনটি স্কুল খালি করার কথা বলেছে ইসরায়েল।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের অবসানে কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করতে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে গেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাওয়ার পর—তা পুনরায় শুরুর উদ্যোগের অংশ হিসেবে জেলেনস্কি এই সফর করছেন।
জেলেনস্কি বলেন, তিনি ইস্তাম্বুলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে প্রস্তুত।
বুধবার(১৪ মে) জেলেনস্কি বলেন, ‘শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়া থেকে কে আসবেন—তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নেব—ইউক্রেনের কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের বরাতে তাদের কাছ থেকে পাওয়া ইঙ্গিতগুলো বিশ্বসযোগ্য নয়।’
তবে ক্রেমলিন ঘোষণা করেছে, বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলের শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দেবেন না। তবে, রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির প্রেসিডেন্টের সহকারী ভ্লাদিমির মেডিনস্কি।
আনাতোলিয়ায় ন্যাটোর অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ‘ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনা আশা করি আমাদের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’
এরআগে ২০২২ সালের মার্চে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকে উভয়পক্ষ যুদ্ধ বন্ধে একমত হতে পারেননি।
এবারের শান্তি আলোচনায় পুতিনের যোগ না দেওয়াতে পশ্চিমারা তার ব্যাপক সমালোচনা করছেন। ক্রেমলিন সত্যিই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান প্রচেষ্টায় আগ্রহী নয় বলেও প্রশ্ন তুলছেন তারা।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৮২ জন নিহত হয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার (১৫ মে) লাইভ আপডেট প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবরুদ্ধ উপত্যকাজুড়ে রাতভর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৭ জন ফিলিস্তিনি। পরে বৃহস্পতিবার সকালে গাজার খান ইউনিস শহরে চালানো হামলায় আরও অনেক হতাহত হয়। সবমিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা জানান, হতাহতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপিরে এক ফটোগ্রাফার জানান, বুধবার দিবাগত রাত ও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খান ইউনিস শহরে অন্তত ১০টি বিমান হামলা তিনি প্রত্যগণনা করেছেন। হামলায় নিহতদের লাশ শহরের নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নিহতদের অনেকের দেহ খন্ড বিখন্ড ছিল। যেগুলোকে একটি ব্যাগে ভরানো হয়েছিল। হাসপাতালটির মর্গ সূত্র ৫৪ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কাতারের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল আরারি টিভির সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। টেলিভিশন নেটওয়ার্কটি তাদের সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, পরিবারের ১১ সদস্যসহ সাংবাদিক হাসান সামুর খান ইউনিসে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলি বাহিনী হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানায়নি।
বুধবার থেকে গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে রাতভর এটি দ্বিতীয় ভয়াবহ বিমান হামলা। যাতে অসংখ্য নারী ও শিশু হতাহত হয়েছে।
ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ২৭ জায়গার নতুন নামকরণের ঘোষণা দিয়েছে চীন। এ কারণে চীনকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে ভারত। গতকাল বুধবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বেইজিংয়ের এই প্রচেষ্টাকে ‘অকার্যকর ও হাস্যকর’বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নয়াদিল্লি বলেছে, চীনের এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, চীন বারবার ভারতের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নাম দিয়ে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আমরা এমন প্রচেষ্টা স্পষ্টভাবে নাকচ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের সৃজনশীল নামকরণ বাস্তবতা বদলাতে পারে না। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য ও অখণ্ড অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।’
গত ১১ মে চীনের বেসামরিক-বিষয়ক মন্ত্রণালয় অরুণাচলের ২৭টি জায়গার নতুন নামকরণ করে। যার মধ্যে রয়েছে ১৫টি পাহাড়, চারটি রাস্তা, দুটি নদী, একটি লেক এবং পাঁচটি বসতি এলাকা।
সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, চীন পঞ্চমবারের মতো অরুণাচলের জায়গার নাম পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে দুই দেশের সেনারা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) থেকে সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার চুক্তি করার পর প্রথমবারের মতো বেইজিং আবার অরুণাচলের জায়গার নাম পরিবর্তন করেছে।
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ২০ ভারতীয় ও চার চীনা সেনা নিহত হয়। এরপর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তবে সম্প্রতি দুই দেশ দীর্ঘ চার বছর পর তিব্বতে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়েছে। এছাড়া একে অপরের প্রতি আস্থা তৈরির কাজও করছে।
তা সত্ত্বেও সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে সংঘর্ষ হয় সেটিতে চীন পাকিস্তানকে সহায়তা করে।
চীনের নামকরণের বিস্তৃতি
চীন বরাবরই অরুণাচল প্রদেশকে ‘জাংনান’ বা ‘দক্ষিণ তিব্বত’ হিসেবে দাবি করে আসছে এবং বারবার বিভিন্ন জায়গার নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ওই দাবি জোরালো করার চেষ্টা করছে। চীন এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ দফায় অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে।
২০১৭, ২০২১, ২০২৩, ২০২৪ ও সবশেষ গত ১১ মে অরুণাচলের কয়েকটি স্থানের নতুন নাম প্রকাশ করেছে বেইজিং।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, চীনের বেসামরিক-বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবার অরুণাচলের ২৭টি স্থানের নতুন নাম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫টি পাহাড়, পাঁচটি বসতি, চারটি পাহাড়ি পথ, দুটি নদী ও একটি হ্রদ।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ নিয়ে নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মজিদ তাখত-রাভাঞ্চি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনায় ইরানি প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য। রাভাঞ্চি জানিয়েছেন, ইরান এখনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ও সক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করেনি।
তিনি বলেন, ‘একটি কাঠামো হিসেবে আমরা উল্লেখ করেছি যে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা, সক্ষমতা ও অনুরূপ পারমাণবিক বিষয়গুলোর ওপর সীমিত সময়ের জন্য কিছু নিষেধাজ্ঞা আমরা বিবেচনা করতে পারি। যেগুলো আস্থা গঠনের পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে’।
ইরানের এই উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হলে তবেই ইরান এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে রাজি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো একতরফা নয়, বরং পারস্পরিক পদক্ষেপের অংশ। যার মাধ্যমে প্রমাণ করা হবে আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।’
তাখত-রাভাঞ্চি এ সময় সাম্প্রতিক কিছু গুজবও নাকচ করে দেন। যেখানে বলা হয়েছিল আলোচনায় ২৫ বছরের মতো দীর্ঘ সময়সীমা নির্ধারণ করা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সময়সীমা হোক বা সমৃদ্ধকরণের শতকরা হার- এ ধরনের কোনো ধারণাই নিশ্চিত নয়’।
এদিকে, পরমাণু ইস্যু নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সামরিক বাহিনীর সমরাস্ত্র বিষয়ক গবেষণা সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ডিফেন্সিভ ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চের (এসপিএনডি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন সিনিয়র কর্মকর্তা ও একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
ওই তিন কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের নাম-পরিচয় গোপন রাখলেও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়া এই কর্মকর্তারা ইরানের পরমাণু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে ওই তিন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সম্পদ ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে এবং যতদিন এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠানও তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আর্থিক চুক্তি করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ‘জ্যাকোপা’ নামে একটি চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এই চুক্তি থেকে সরে আসে। যার ফলে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে যায় এবং ইরানও তার পরমাণু প্রকল্পে মনোনিবেশ করে।
এরপর চলতি বছরে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প নিজেই ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি দেন। ইরান সরকারও তাতে সাড়া দেয়।
কাতারের রাজধানী দোহায় চলছে ওয়াশিংটন ও তেহরানের কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক সংলাপ। ইরানের চাওয়া অনুযায়ী সংলাপে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় আছে ওমান। সংলাপের চতুর্থ রাউন্ড শেষ হয়েছে সোমবার। আর ওইদিনই তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করল ওয়াশিংটন।