জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর কাছে ক্রমাগত মার খাচ্ছে জান্তা সরকার। গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে অসংখ্য সেনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, অনেকে আত্মসমর্পণ করেছে বিদ্রোহীদের কাছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষজনও ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
বিদ্রোহীদের দখলে মিয়ানমার-মিজোরাম
সীমান্ত ক্রসিং:
সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দুই দিনের যুদ্ধ শেষে মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম রাজ্যের একটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের দখল নিয়েছে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী তিন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। এরা হলো- চিনল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ) এবং চীন ন্যাশনাল আর্মি (সিএনএ)।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে সিডিএফ বলেছে, শনি ও রোববার সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে এ সীমান্ত পথটির দখল নেয়া সম্ভব হয়েছে।
মিজোরামের সঙ্গে চীনের এ সীমান্ত পথটি গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার যুদ্ধ শুরুর পর জীবন বাঁচাতে মিজোরামে পালিয়ে গিয়েছিলেন সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ।
সোমবার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের অধিকাংশ ফিরেও এসেছেন। তবে সে দিন সীমান্ত পেরিয়ে মিজোরাম পালিয়ে গেছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অন্তত ৪৩ জন সদস্য। সীমান্ত পথটিতে নিজেদের পতাকা টাঙিয়েছে সিডিএফ।
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমার ও চীনের মধ্যকার একটি সীমান্ত পথের দখল নিয়েছিল জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীরা। সীমান্ত পথটি মিয়ানমারের শান প্রদেশে অবস্থিত। শানের সঙ্গে অবশ্য লাওস এবং থাইল্যান্ডেরও সীমান্ত রয়েছে।
ক্ষমতাসীন জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন অবশ্য মঙ্গলবার এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্যকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘তারা পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে এবং এ কারণেই এসব প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’
গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে বেশ কয়েকটি জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলোর সবই দেশটির জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (নাগ) সদস্য।
সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এই যুদ্ধের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ১০২৭’। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের দুটি সীমান্ত পথ, বেশ কয়েকটি শহর এবং শতাধিক সেনা ছাউনির দখল নিয়ে ফেলেছে বিদ্রোহীরা।
বিদ্রোহীদের কাছে ২৮ পুলিশ, ১০ সেনার আত্মসমর্পণ
এদিকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনে সশস্ত্র সরকারবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন অন্তত ২৮ জন পুলিশ ও ১০ জন সেনা সদস্য। মঙ্গলবার এ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধ শেষে এই পুলিশ ও সেনা সদস্যরা তাদের অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বলে জানা গেছে।
তিন সপ্তাহের এ সংঘাতে মিয়ানমারের কিছু শহর এবং সামরিক স্থাপনা দখল করেছে জান্তাবিরোধী জোট নাগের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, যা ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা আসা জান্তাকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বুধবার রাখাইন রাজ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের বিষয়ে তিনি ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিফান দুজারিক। বৃহস্পতিবার তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান দুজারিক বলেন, ‘তিনি সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন।’
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই বিষয়টি উল্লেখ করে দুজারিক বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব জোর দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে এবং এই আইন লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’
গাজার উত্তরাঞ্চল এবং খান ইউনিসকে ঘিরে যুদ্ধ বাড়ছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ইসরায়েলের হাতে আটক নগ্ন ফিলিস্তিনি পুরুষদের দেখা যাচ্ছে। বিবিসির যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ওই পুরুষদের অন্তর্বাস পরিয়ে রাখা হয়েছে এবং তারা মাটিতে বসে আছে। ইসরায়েলি সেনারা তাদের পাহারা দিচ্ছে। গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল বেইত লাহিয়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিসিকে বলা হয়েছে যে, এরপর তাদের মধ্য থেকে কয়েক জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন স্বনামধন্য ফিলিস্তিনি সাংবাদিকও রয়েছেন। এ ঘটনার পর তার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আগ্রাসী তল্লাশি ও অপমানজনক আচরণের অভিযোগ তুলেছে। এই ভিডিও সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র বলেন, যেসব ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে, তাদের সবার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার মতো বয়স হয়েছে এবং তাদেরকে এমন এক এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে, যেখান থেকে কয়েক সপ্তাহ আগেই বেসামরিক নাগরিকদের চলে যাওয়ার কথা ছিল।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক ডজন পুরুষকে পায়ে চলা রাস্তায় সারিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদেরকে তাদের জুতা খুলতে বলা হয়েছে। জুতাগুলো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ইসরায়েলি সেনা এবং সাঁজোয়া যান তাদের পাহারা দিচ্ছে। অন্য ছবিতে দেখা যায়, তাদের সামরিক যানে করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইসরায়েলি মিডিয়ায় আটককৃতদের হামাসের আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। আরেকটি ছবি যেটি বিবিসি যাচাই করতে পারেনি, সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, ওই ব্যক্তিদের চোখ বাঁধা অবস্থায় বুলডোজার দিয়ে তৈরি করা বালির গর্তের কাছে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ছবিগুলো সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। কিন্তু মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, আইডিএফ বাহিনী ও শিন বেত কর্মকর্তারা শত শত সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এদের মধ্যে অনেকে গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র আইলন লেভি বলেন, ওই ব্যক্তিদের গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া ও শেজাইয়া থেকে আটক করা হয়েছে। এই স্থানগুলো হামাসের শক্ত ঘাঁটি এবং উত্তেজনার কেন্দ্র। আমরা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে উপযুক্ত বয়সী পুরুষদের সম্পর্কে কথা বলছি, যাদেরকে এমন জায়গা থেকে আটক করা হয়েছে, যেখান থেকে কয়েক সপ্তাহ আগেই বেসামরিক নাগরিকদের চলে যাওয়ার কথা ছিল।
বিবিসি এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে- যিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বেত লাহিয়া থেকে যে দলটিকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করেছে তাদের মধ্যে তার ১০ জন আত্মীয় রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যক্তি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বিবিসির ইথার শালাবিকে বলেন, আইডিএফের সেনারা ওই এলাকায় প্রবেশ করে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে তাদের বাড়ি ও জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার পরিচালিত স্কুল থেকে বেরিয়ে আসতে বলে। তিনি বলেন, আইডিএফ ওই এলাকার নারীদের পার্শ্ববর্তী একটি হাসপাতালে চলে যেতে বলে এবং পরে পুরুষরা বাড়ি থেকে বের হয়ে না এলে তাদের ওপর গুলি চালানোর হুমকি দেয়।
সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত এই ভিডিও ফুটেজকে ‘জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেসামরিক নাগরিকদের আটক ও তাদের নগ্ন করাকে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বর্বর চিত্র’ বলে বর্ণনা করেছেন। হুসাম জমলত বলেন, এটি মানবতার ইতিহাসের কিছু অন্ধকারতম অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
আটককৃতদের ভিডিওর মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক রয়েছেন। দিয়া আল-কাহলুত নামে ওই সাংবাদিক আল-আরাবি আল-জাদিদ নামে একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি। আরবি ভাষার ওই সংবাদ মাধ্যমটি ‘নিউ আরব’ নামে ইংরেজি ভাষাতেও প্রকাশিত হয়। তারা বলেছে, আল-কাহলুত, তার কয়েকজন ভাই, কয়েকজন আত্মীয় এবং অন্য বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বেইত লাহিয়াতে আটক হয়েছেন। বৃহস্পতিবার আল-আরাবি আল-জাদিদ আল-কাহলুতকে আটকের ঘটনাকে ‘অপমানজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী ওই পুরুষদের তাদের কাপড় খুলতে বাধ্য করেছে এবং আটক করার সময় তাদের ওপর আগ্রাসী তল্লাশি চালিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে অপমানকর ব্যবহার করেছে, পরে তাদের গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
আজ রোববার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা আগামী তিন দিন চলবে। এরপর ১৮ ডিসেম্বর ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসিসহ মোট চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন করছেন। তবে বাকি যে তিন প্রার্থী রয়েছেন, তাদের কেউই হাইপ্রোফাইল নয়। ফলে মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন’ এ নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন সিসি।
২০১৩ সালে মিসরের প্রথম ও একমাত্র নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান সিসি। মিসরে এমন সময় নির্বাচন হচ্ছে, যখন দেশটির সীমান্তে চলছে গাজা ও ইসরায়েলের যুদ্ধ। এ ছাড়া মিসর বর্তমানে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সিসি যদি আবারও নির্বাচিত হন তাহলে নতুন করে আরও ছয় বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবেন। আর নির্বাচিত হয়ে তাকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট নিরসন করা এবং গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ যেন অন্য কোথাও ছড়িয়ে না পড়তে পারে, সে ব্যাপারে কাজ করতে হবে। রোববার সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর রাজধানী কায়রোতে স্বল্পসংখ্যক মানুষকে ভোটকেন্দ্রে দেখা যায়।
সমালোচকরা এ নির্বাচনকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হিসেবেই আখ্যায়িত করেননি, তারা একে একটি ‘ভুয়া’ নির্বাচন হিসেবেও অভিহিত করেছেন। কারণ সিসি ক্ষমতা দখলের পর বিরোধী মতাদর্শের যত মানুষ ছিলেন, তাদের সবার ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে অবস্থিত টেনেসি রাজ্যে তীব্র ঝড় এবং টর্নেডো আঘাত হেনেছে। এতে কমপক্ষে ছয়জন মারা গেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় আহত অবস্থায় ২৩ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার বিকেলে উত্তর টেনেসির মন্টগোমারি কাউন্টির ক্লার্কসভিল এলাকায় এই শক্তিশালী টর্নেডো আঘাত হানে। এতে একজন শিশুসহ ছয়জনের প্রাণহানি হয়। রোববার পৃথক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে গণমাধ্যম বিবিসি ও সিএনএন।
টর্নেডোর আঘাতে স্থানীয় জরুরি পরিষেবাগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং কয়েক হাজার বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে টেনেসির মন্টগোমারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘শনিবার হওয়া টর্নেডোর ফলে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং একজন শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া ২৩ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যম এক্সে ন্যাশভিল শহরে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে ন্যাশভিল অফিস অব ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট।
রাজ্যটির বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ‘শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টেনেসির ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন ছিল। মন্টগোমারি কাউন্টি শেরিফের কার্যালয় জানিয়েছে, ক্লার্কসভিল শহরের বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ড্রেসডেন শহরে একাধিক গাছ, বিদ্যুতের লাইন এবং ঘরবাড়িও ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে জরুরি পরিষেবাগুলো।
মন্টগোমারি কাউন্টির ক্লার্কসভিল শহরের জনসংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি। রাজ্যটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে যে, শনিবার বিকেলের দিকে কমপক্ষে দুটি টর্নেডো রাজ্যটিতে আঘাত হেনেছিল। যার মধ্যে একটি মন্টগোমারি কাউন্টিতে এবং আরেকটি রাদারফোর্ডের গিবসন কাউন্টি শহরের কাছে আঘাত হেনেছিল। এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপে ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলো।
গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের লাগাতার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
আজ রোববার এক বিবৃতিতে গুতেরেস জানান, জাতিসংঘের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে এই ইস্যুতে কখনো হাল ছাড়বেন না তিনি।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘গাজায় মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য আমি নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এটা খুবই দুঃখজনক যে, নিরাপত্তা পরিষদ সেই অনুরোধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তাই বলে যে সেখানে যুদ্ধবিরতির আবেদন ফুরিয়ে গেছে- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি কখনো হাল ছাড়ব না।’
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক মাত্রায় বিধ্বংসী যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে গত ২৫ নভেম্বর গাজায় চার দিনের অস্থায়ী মানবিক বিরতি ঘোষণা করে হামাস এবং ইসরায়েল। পরে তা আরও ৩ দিন বাড়ানো হয়। এই সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে নিজেদের হাতে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে ৯৪ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তার বিনিময়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৫০ জনকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে পরিষদের অন্যতম অস্থায়ী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু প্রস্তাবটির ওপর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভোটপর্ব শেষে দেখা যায়, পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টি পক্ষে সমর্থন দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তা দেয়নি। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি বা ভেটোর কারণে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্র মিশনের কর্মকর্তা ও উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড এটিকে ‘বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন’ উল্লেখ করে বলেন, এ মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি দেওয়া হলে সেটি সেখানে পরবর্তী যুদ্ধের বীজ বপন করবে।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা। হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের ভাগ্যে কী ঘটছে, তা এখনো অজানা।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের (গত শুক্রবার) এ কথা জানিয়েছেন তিনি। আগামী বছরের নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হলে পুতিনের জন্য আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার পথ আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
১৯৯৯ সালের শেষ দিনে পুতিনের হাতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছিলেন বরিস ইয়েলৎসিন। ইতোমধ্যেই জোসেফ স্টালিনের পর থেকে রাশিয়ার অন্য যেকোনো শাসকের তুলনায় বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পুতিন।
ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া রাশিয়ার শীর্ষ সেনাদের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মানে ভূষিত করেছেন পুতিন। রুশ সেনাদের সর্বোচ্চ সামরিক পদক প্রদান ওই অনুষ্ঠানেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন পুতিন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আর্টিওম ঝোগা নামের এক সেনা সদস্য ‘হিরো অব রাশিয়া’ স্বর্ণপদক পেয়েছেন। সোভিয়েত যুগে ইউক্রেনে জন্মগ্রহণকারী এই সেনা সদস্য বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করছেন। তিনি পুতিনকে আবারও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসে অবস্থিত জর্জিয়েভস্কি হলে সেনাদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করব। পুতিনের এমন ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আর্টিওম ঝোগা বলেন, আমি খুবই খুশি যে তিনি আমার অনুরোধ রেখেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার সব নাগরিক এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাবে।
গত মাসে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল যে, পুতিন আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে পুতিনের (৭১) জন্য নির্বাচন একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। রাষ্ট্রীয় সমর্থন, রাষ্ট্রচালিত গণমাধ্যম এবং জনগণের ভিন্নমত না থাকায় তার জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলা যায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই বললেই চলে।
আগামী ১৭ মার্চ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালে রাশিয়ার সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের পরদিনই পুতিন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেন। ফেডারেশন কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে ১৬২ ভোটে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের প্রস্তাব পাস হয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় এরই মধ্যে গাজায় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ‘মৃত্যুপুরী’ গাজার মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের সদর দপ্তর পরিদর্শনের সময় এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এ সময় তার সঙ্গে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট, সেনাপ্রধান হারজি হালেভি ও ওই সেক্টরের প্রধান মেজর জেনারেল অরি গর্ডিন উপস্থিত ছিলেন।
নেতানিয়াহু বলেন, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ যদি (ইসরায়েলের বিরুদ্ধে) সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে এটি নিজের হাতে বৈরুত ও দক্ষিণ লেবাননকে গাজা ও খান ইউনিস শহরে পরিণত করবে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস। এমন নজিরবিহীন হামলার জবাবে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এরই মধ্যে ১৭ হাজারের ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এত দিন উত্তর গাজায় হামলা সীমিত রাখলেও এবার দক্ষিণ গাজায় প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি স্থল সেনারা।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই হামাসের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে হিজবুল্লাহ। গাজায় ইসরায়েলি হামলার মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লেবানন সীমান্তে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর গুলি বিনিময় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখনো পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান শুরু করা থেকে বিরত রয়েছে হিজবুল্লাহ।
চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা আরও বাড়ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বশাসিত দ্বীপটিতে সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে চীন। দ্বীপটি জানিয়েছে, নির্বাচনের এক মাস আগেই গতকাল শুক্রবার ১২ চীনা যুদ্ধবিমান ও একটি সন্দেহভাজন গোয়েন্দা বেলুন তাইওয়ান প্রণালির সংবেদনশীল মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা রয়েছে। এর আগেই চীনা যুদ্ধবিমান ও গোয়েন্দা বেলুন প্রণালির সংবেদনশীল মধ্যরেখা অতিক্রম করায় দ্বীপটিতে উত্তেজনা বাড়ছে। চীন স্বশাসিত এ দ্বীপটিকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। দেশটি এ দ্বীপের চারপাশে গত চার বছর ধরে নিয়মিত সামরিক মহড়া ও টহল পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ করছে তাইওয়ান।
তাইওয়ানে আগামী বছরের শুরুতে অর্থাৎ ১৩ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী সরকার চীনের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করবে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
বিতর্কিত জলসীমায় চীনের ১৩৫ জাহাজ
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে চীনের ১২টি যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের সংবেদনশীল সীমানা অতিক্রম করেছে। এ রেখাটি চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে অঘোষিতভাবে সীমানা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এটির ওপর দিয়ে চীনের যুদ্ধবিমান নিয়মিত উড্ডয়ন করছে।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে আকাশে একটি চাইনিজ বেলুন চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি তাইওয়ানের উত্তরের শহর কিলাং থেকে ১০১ নটিক্যাল মাইল (১৮৭ কিমি) দক্ষিণ-পশ্চিমে দেখা গিয়েছে। এ বেলুনটি প্রায় এক ঘণ্টা উড্ডয়নের পর প্রণালির দিক দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চি কু চেন পার্লামেন্টে সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে এটিকে একটি আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা বেলুন হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল বিষয়টি জনগণের জন্য খোলাসা করা। কেননা অন্য কোনো বিভাগ বা দেশ বিষয়টি শনাক্ত করলে বিষয়টি জনগণের জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
চীনের এ গোয়েন্দা বেলুন বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে আসছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের একটি গোয়েন্দা বেলুন গুলি করে ভূপাতিত করেছিল। যদিও চীনের দাবি, এটি ছিল একটি বেসামরিক ক্রাফট, যেটি ভুলপথে চলে গিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও এখন আক্রমণ করছে ইসরায়েল। আর এ দক্ষিণ গাজাতেই লাখ লাখ ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ফলে ফিলিস্তিনিদের কাছে অঞ্চলটিতে নিরাপদ আশ্রয় বলে আর কিছু থাকছে না। এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফারা শরণার্থী শিবিরে গতকাল শুক্রবার অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ফিলিস্তিনের শিল্পপতি হানা আওয়াদ বলছেন, ‘আমরা এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। আমরা চাকরি হারিয়েছি, পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি, বাড়িঘর হারিয়েছি, এমনকি নিজেদের শহরও হারিয়ে ফেলেছি।’
লড়াই শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই হানা তার শহর ছেড়ে চলে এসেছিলেন। উত্তর গাজার হাজার হাজার মানুষের মতো হানা ও তার পরিবার মিসর সীমান্তের কাছে রাফাহতে চলে গেছেন। সেই সময় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীই জানিয়েছিল, উত্তর গাজা থেকে মানুষ যেন দক্ষিণ গাজার নিরাপদ জায়গায় চলে যান। কিন্তু এখন দক্ষিণ গাজাতেও ইসরায়েল সমানে বোমাবর্ষণ করছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখন খান ইউনিস শহর ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে। শহর থেকে মানুষকে পশ্চিমদিকে বা রাফাহর দক্ষিণে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু লড়াই বন্ধ করা হচ্ছে না। ইসরায়েলের দাবি, হামাস নেতারা এ শহরেই আছে। হানা জানিয়েছেন, ‘রাফাহতে থাকাটাও রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খান ইউনিস থেকে দলে দলে মানুষ এখানে আসছেন। ফলে আগে যারা এসেছেন তারা বিপাকে পড়েছেন। গাজার সব জায়গা থেকে রাফাহতে মানুষ আসছে। এখানেও ইসরায়েলের ড্রোনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তাই সত্যিকারের কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।’
যুদ্ধবিরতির সময় রাফাহ সীমান্ত দিয়ে কিছু মানবিক ত্রাণ এসেছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই মানুষের ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ হচ্ছে না। জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজার ২২ লাখ মানুষের মধ্যে ১৮ লাখ মানুষ এ যুদ্ধের ফলে মাথার ওপর ছাদ হারিয়েছেন। অনেকেই দক্ষিণ গাজায় চলে গেছেন। সেখানে জাতিসংঘের আশ্রয়শিবিরে আর ঠাঁই নেই। অনেকে গাড়িতে থাকছেন, আত্মীয়দের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকছেন। ভয়াবহ অবস্থা চলছে।
হানা বলেছেন, ‘খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। গদি, কম্বল কিছুই নেই। গত দুই দিন ধরে যারা আসছেন, তারা মেঝের ওপর নাইলনের শিট বিছিয়ে থাকছেন।’ তিনি জানান, কেউ গাড়ির ভেতর থাকছেন, প্রচুর মানুষ রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন। এই ঠাণ্ডায় এভাবে রাত কাটানো ভয়ঙ্কর কষ্টের।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় ৫ ফিলিস্তিনি নিহত
অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফারা শরণার্থী শিবিরে অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল শুক্রবার ফারা শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বাহিনীটি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনি অধিকৃত বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সে সময় অন্তত পাঁচজন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে সেনারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রামাল্লায় সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি সেনারা। হেবরনের দক্ষিণে আল-ফাওয়ার শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়েছে বাহিনীটি। কালকিলিয়ার পূর্বে কাফর কাদ্দুম ও জিনসাফুট গ্রামেও হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে দুই ফিলিস্তিনি পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কবি রেফাত আলারির নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২১টি হাসপাতালের সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বার্তা সংস্থা এপির বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা ভূখণ্ডে চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১৭ হাজার ১৭৭ জনে পৌঁছেছে। এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেন, ‘নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২৯০ চিকিৎসক নিহত হয়েছেন, ১০২টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ১৬০টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি হাসপাতাল এবং ৪৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রকে পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের কবি রেফাত আলারির নিহত
ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কবি রেফাত আলারির নিহত হয়েছেন। তিনি সেখানকার তরুণ প্রজন্মের কবি ছিলেন। ফিলিস্তিনবাসীর কথা তিনি ইংরেজিতে লিখে বিশ্ববাসীকে জানাতেন।
কবি রেফাতের বন্ধু বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাতভর চালানো ইসরায়েলি হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। রেফাতের আরেক বন্ধু গাজার কবি মোসাব আবু তোহা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে, আমার বন্ধু ও সহকর্মী রেফাত আলারির ও তার পরিবারকে কিছুক্ষণ আগে হত্যা করা হয়েছে।’
ওই পোস্টে মোসাব আবু তোহা আরও লিখেছেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা একসঙ্গে স্ট্রবেরি তুলতে ভালোবাসতাম।’
হামাস বলেছে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।
গত অক্টোবর মাসে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর কয়েক দিন পর আলারির গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে যাবেন না বলে জানান।
সে সময় গাজার উত্তরাঞ্চল ছিল হামলার কেন্দ্রস্থল। কবি রেফাতের আরেক বন্ধু আহমেদ আলনাউক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, ‘রেফাতের হত্যাকাণ্ড দুঃখজনক, বেদনাদায়ক ও নিষ্ঠুর। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল।’
দ্য লিটারারি হাব ওয়েবসাইট কবি রেফাতের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। লেখক ও সাংবাদিক রামজি বারাউদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘রেফাত আলারির শান্তিতে ঘুমাক। আমরা বর্তমান ও ভবিষ্যতে আপনাকে অনুসরণ করে যাব।’
আলারির গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ‘উই আর নট নম্বরস’ (আমরা সংখ্যা নই) প্রকল্পের সহপ্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। এখানে গাজার লেখকরা যুক্ত ছিলেন। বাইরের দেশের অভিজ্ঞ লেখক ও পরামর্শকরা গাজার লেখকদের নিজেদের অভিজ্ঞতা ইংরেজিতে লিখতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এখান থেকেই ‘গাজা রাইটার্স ব্যাক’ নামে বইটির সম্পাদনা করা হয়। প্রকাশিত হয়েছে ‘গাজা আনসাইলেন্সড’ বই। এতে তরুণ ফিলিস্তিনি লেখকরা গাজার জীবন তুলে এনেছেন।
গাজার ২১টি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২১টি হাসপাতালের সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ১১০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ২৮৭ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন। বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৫৮টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর ফলে যেখানে চিকিৎসাসেবা চালু আছে সেখানে আহতদের নিয়ে যাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মরদেহের আধিক্যে হাসপাতালগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলো আহতদের কোনো চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে না। ইসরায়েলের দখলদার সেনাদের হামলায় সব চিকিৎসা সরঞ্জাম ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি সেনারা স্বাস্থ্যকর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের তীব্র চাপের মধ্যে শুক্রবার গাজা বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর বিষয়ে বৈঠকে ভোট গ্রহণ করা হবে।
ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে এবং ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের মধ্যে জীবনযাত্রার অবস্থাকে বিপর্যয়কর হিসেবে বর্ণনা করা সত্ত্বেও সেশনের ফলাফল সম্পর্কে বলা যাচ্ছে না। খবর এএফপির।
বুধবার কাউন্সিলের কাছে একটি চিঠিতে, গুতেরেস জাতিসংঘের সনদের আর্টিকেল ৯৯ আহ্বান করার অসাধারণ পদক্ষেপ নেয়, যেখানে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক রক্ষণাবেক্ষণের এবং শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে তার মতে এমন যেকোনো বিষয় মহাসচিব কাউন্সিলের নজরে আনতে পারেন। বিগত কয়েক দশক ধরে নিয়োজিত থাকা কোনো মহাসচিব এ জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
গুতেরেস লিখেছেন, ‘ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যে, এবং আশ্রয় বা বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকায় আমি আশঙ্কা করছি যে মরিয়া পরিস্থিতির কারণে জনশৃঙ্খলা শীঘ্রই সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে, এমনকি সীমিত মানবিক সহায়তাও অসম্ভব হয়ে উঠবে।’
তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য সম্ভাব্য অপরিবর্তনীয় প্রভাব এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে এক বিপর্যয় প্রতিরোধে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানান।
কাউন্সিল গুতেরেসের জরুরি আবেদনে মনোযোগ দেবে বলে জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক আশা প্রকাশ করেছেন।
ডুজারিক বলেন, ‘বুধবার থেকে জাতিসংঘ প্রধান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন এবং অন্যান্য বেশ কটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন।’
ইউক্রেনকে নতুন করে সামরিক সহায়তা দিতে চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এতে সহায়তার জন্য তিনি বুধবার রিপাবলিকানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। বাইডেন বলেন, তারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জিততে দিতে পারেন না।
বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী হলে তা মস্কোকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্রদের আক্রমণ করার অবস্থানে নিয়ে যাবে। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়াতে হতে পারে।
ইউক্রেনের জন্য বাইডেন প্রশাসন অতিরিক্ত ১৭৫ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার পরিকল্পনা করেছে; কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল ফুরিয়ে আসছে। ইউক্রেনকে অতিরিক্ত অর্থসহায়তার বিল কংগ্রেসে পাসের জন্য রিপাবলিকানদের সমর্থন দরকার। এমন প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে কথা বললেন বাইডেন।
ইউক্রেনকে আরও অর্থায়নের বিলে সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে মার্কিন অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি চান কট্টর রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকানদের সমর্থন পেতে মার্কিন অভিবাসন নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার বিষয়ে বাইডেন তার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাইডেন বলেন, পুতিন যদি ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হন, তাহলে তিনি সেখানেই থামবেন না।
বাইডেন ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ‘তখন পুতিন ন্যাটোর মিত্রকে আক্রমণ করবেন। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন কিছু (রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ) করতে হবে, যা ওয়াশিংটন চায় না। আমরা পুতিনকে জিততে দিতে পারি না।’
বাইডেনের এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনোভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্ভাব্য সংঘাত নিয়ে বাইডেন যা বলেছেন, তা উসকানিমূলক বক্তব্য। একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক শক্তিধর দেশের কাছ থেকে এমন বক্তব্য আসাটা অগ্রহণযোগ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামনের বছর হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেড় কোটি ভোট পাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে আবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী ট্রাম্প স্থানীয় সময় বুধবার ফক্স চ্যানেল আয়োজিত এক ইভেন্টে দর্শক-সমর্থকদের সামনে এ কথা বলেন। খবর এনডিটিভির।
তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট থাকতে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যা করেছি, তা আর কাউকে করতে দেখিনি। আমি মনে করি ৭৫ লাখ নয়, দেড় কোটি ভোটার আমার সঙ্গে আছে।’
ট্রাম্প দর্শকদের ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নিরাপদ সীমান্ত, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, কম ট্যাক্স ও কম খরচ সবারই চাওয়া, যা আমি করেছি এবং করব। আপনি নিশ্চয়ই খুব সহজে কম মূল্যে নিজের বাড়িটি কিনতে চাইবেন।’
২০২৪-এর নির্বাচনে ট্রাম্প জিতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র একজন স্বৈরাচারী শাসক পাবে বলে বেশ কয়েকদিন যাবৎ ভোটারদের সতর্ক করে আসছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট ও তার দলের কিছু রিপাবলিকান রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে তিনি ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমি কখনোই স্বৈরশাসক হব না।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরে যান।
দেশটির আইন অনুযায়ী একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকতে পারেন। তাই ট্রাম্পের আরও একবার এ পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে।
পাকিস্তানে একটি চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচা পরিষ্কারের সময় মানুষের মরদেহ পাওয়া গেছে। পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরের শেরবাগ চিড়িয়াখানায় বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। এরপর চিড়িয়াখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাতে বৃহস্পতিবার এএফপি এ খবর প্রকাশ করেছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই দিন সকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী তিনটি বাঘের মধ্যে একটির মুখে মানুষের জুতা দেখতে পাওয়ার পর মরদেহটি পাওয়া যায়।
চিড়িয়াখানার দায়িত্বে থাকা প্রাদেশিক বন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আলি উসমান বুখারি জানান, লোকটি কীভাবে সেখানে প্রবেশ করেছেন তা বের করতে চিড়িয়াখানাটি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মরদেহের অবস্থা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই ব্যক্তির ওপর বাঘ হামলা করেছিল।
বুখারি জানান, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। তবে বাঘ আক্রমণ করার সময় ওই ব্যক্তি জীবিত ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি আক্রমণ করার জন্য বাঘ তার খাঁচার বাইরে বের হয়নি। লোকটি সেখানে ঢুকেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুখারি বলেন, ‘যদি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়, আমরা তা সমাধান করব। প্রয়োজনে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেওয়া হবে।’
এদিকে নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি এবং কেউ মরদেহ দাবি করতেও যোগাযোগ করেনি।
মরদেহ পাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা জহির আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, চিড়িয়াখানার কর্মীরা সবাই ঠিক আছেন। তার মতে, এটি কোনো উন্মাদের কাজ। কারণ কোনো বুদ্ধিমান মানুষ বাঘের খাঁচায় ঢুকবে না।