ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এর জন্য জনগণকে সতর্ক থাকতে বললেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে রাজ্যটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে একদিনেই অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি কেরালায় করোনাভাইরাসের একটি উপধরন (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। এরপর থেকেই রাজ্যটিতে দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে শনাক্ত হয়েছিল জেএন.১। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, করোনাপ্রতিরোধী অনুমোদিত সব টিকাই জেএন.১-এর বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেবে। কেরালায় বর্তমানে ১ হাজার ৩২৪ জন কোভিড-১৯ রোগী রয়েছে। গত শনিবার রাজ্যটিতে করোনাজনিত কারণে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে এগুলোর মধ্যে ঠিক কতটি ঘটনা জেএন.১ সম্পর্কিত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভাইরাসটির বিভিন্ন ধরন শনাক্তের জন্য একেবারেই সামান্য কিছু নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় সেখানে।
কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিনা জর্জ বলেছেন, এর জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এদিকে কেরালার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরুর দিকে কেরালায় একটি নমুনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় জেএন.১ উপধরন শনাক্ত হয়। রোগী ছিলেন ৭৯ বছর বয়সি এক নারী। তার ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় অসুস্থতা ছিল এবং পরে তিনি সুস্থও হয়ে ওঠেন। করোনার এই উপধরনটি আগেই ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পাওয়া গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিনা জর্জ। প্রতিবেশী কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেরালায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনায় তারা সতর্ক নজর রাখছে। হঠাৎ করোনার সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি পরীক্ষায় বিভিন্ন হাসপাতালে মহড়া শুরু করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এর সঙ্গে জেএন.১ উপধরনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন তারা।
ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে সৌদি আরবকে পাশে পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। এ সময় তিনি এই সপ্তাহের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ‘কৌশলগত পারস্পরিক সহায়তা’ চুক্তির ওপর জোর দেন।
ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে সৌদি আরব পাকিস্তানের পাশে থাকবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের জিও টিভিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
ন্যাটো চুক্তির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে এর তুলনা টেনে খাজা আসিফ বলেন, ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘সমষ্টিগত প্রতিরক্ষা’র কথা। অর্থাৎ এক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণকে জোটের সবার ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে।
তবে পাকিস্তানের মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে এই চুক্তি আক্রমণাত্মক নয় বরং প্রতিরক্ষামূলক। আবারও ন্যাটোর সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘যদি সৌদি আরব বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হয়, আমরা যৌথভাবে প্রতিরক্ষা করব।’
এই চুক্তি কোনো আগ্রাসনে ব্যবহারের ইচ্ছে নেই বলে রয়টার্সকে জানান খাজা আসিফ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি কোনো পক্ষ হুমকির মুখে পড়ে, তাহলে স্পষ্টতই এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে উঠবে।’
তিনি আরও নিশ্চিত করেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র সৌদি আরবের ব্যবহারের জন্য থাকবে, যদিও পাকিস্তানের ঘোষিত নীতি অনুসারে এই পারমাণবিক অস্ত্রগুলো কেবল ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য।
খাজা আসিফ বলেন, ‘এই চুক্তির অধীনে আমাদের সরঞ্জাম অবশ্যই তাদের জন্য থাকবে।’ তিনি আরও জানান, পাকিস্তান সব সময় তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে এবং কখনো কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেনি।
এই চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান এখন পারমাণবিক সুরক্ষা দিতে বাধ্য কি না জানতে চাইলে এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি একটি সর্বাত্মক প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি, যা সব ধরনের সামরিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে।’
এ সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময় এই ‘পারস্পরিক প্রতিরক্ষা’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো, ‘যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে।’
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার জানিয়েছে, পাকিস্তান-সৌদির এই চুক্তি আসলে দুই দেশের দীর্ঘদিনের ব্যবস্থাকেই আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে এবং এর প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি কার্যত রিয়াদের অর্থ আর ইসলামাবাদের পরমাণু শক্তিকে একীভূত করছে, যা উভয় পক্ষের জন্য বড় সাফল্য বলা যায়।
এই চুক্তিতে পাকিস্তানের জন্য ইতিবাচক দিক হলো, শক্তিশালী আর্থিক সমর্থন আর একটি ‘আরব দেশ জোট’ গঠনের সম্ভাবনা। অন্যদিকে সৌদি আরবের জন্য এর অর্থ একটি ‘পারমাণবিক ঢাল’। এই অঞ্চলের এত দিনকার একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রপ্রাপ্ত দেশ ইসরায়েল এই চুক্তির ভবিষ্যতের ওপর নজর রাখবে, ইরানও তাই করবে।
বৃহত্তর ‘আরব জোট’ গঠনের প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শুধু বলেন, ‘দরজা এখনো বন্ধ হয়নি। আমি এখনই এর চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারছি না। তবে আমি মনে করি এখানে দেশগুলো ও জনগণের, বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার আছে তাদের অঞ্চলকে যৌথভাবে রক্ষা করার।’
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বিশ্বকে ইসরাইলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় ইসরাইল যখন বিধ্বংসী যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে ‘ক্রমাগত দখল’ চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি এ আহ্বান জানালেন।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে, ইসরাইল পশ্চিম তীর দখল ঘোষণার হুমকি দিয়েছে।
গুতেরেস বলেন, আমাদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় ভীত হওয়া উচিত নয়। কারণ আমরা কাজ করি বা না করি, ইসরাইল এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। অন্ততপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করা যায়, যাতে এসব না ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল ধীরে ধীরে পশ্চিম তীরে দখল বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে তারা গাজায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গাজায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস বলেন, আমি মহাসচিব হিসেবে কিংবা জীবনেও কখনো এ রকম মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।
তিনি জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ বর্ণনাতীত দুর্ভিক্ষ, স্বাস্থ্যসেবার সম্পূর্ণ অভাব ও পর্যাপ্ত আশ্রয় ছাড়া সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো বেঁচে আছে।
তবে তিনি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা থেকে বিরত থাকেন।
গুতেরেস বলেন, গণহত্যার আইনগত সংজ্ঞা দেওয়া আমার এখতিয়ার নয়। আসল বিষয় শব্দ নয়, আসল বিষয় হচ্ছে সেখানে যা ঘটছে।
এদিকে, চলতিসপ্তাহে ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে এবং কয়েক দিন ধরে স্থানীয়দের দক্ষিণে চলে যেতে বলছে।
কিন্তু অনেক ফিলিস্তিনি জানাচ্ছেন যে এ যাত্রা ব্যয়বহুল এবং তারা কোথায় যাবেন, তা তারা জানেন না।
আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। গতকাল শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোভিয়েত আমলে নির্মিত এই ঘাঁটিটি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ঘাঁটি ছিল। তবে ২০২১ সালে মার্কিনসেনাদের প্রত্যাহারের পর তালেবানরা এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এটি ফেরত পেতে চাই। আমরা সেই ঘাঁটিটি চাই, কারণ এর অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত- চীনের খুব কাছেই।’
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তালেবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
২০ বছর পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী দেশটি থেকে সরে দাঁড়ায়। দীর্ঘ এই যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন নিহত হন। সেনা প্রত্যাহারের পরপরই তালেবানরা ফের আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
‘অটুট বন্ধন’
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন সম্পর্ককে ‘অটুট বন্ধন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি ও প্রধানমন্ত্রী স্টারমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও পারমাণবিক জ্বালানি খাতে বৃহৎ প্রযুক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
স্টারমার বলেন, এটি ব্রিটিশ ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্যাকেজ, যার আকার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ড (২০৫ বিলিয়ন ডলার)। বিনিয়োগে যুক্ত রয়েছে মাইক্রোসফট, গুগল ও ব্ল্যাকস্টোনের মতো মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টরা।
ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘খুব বড়’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ব্রিটেন আমাদের প্রধান ন্যাটো মিত্র। আমাদের সম্পর্ক অটুট, আজ আমরা যাই করি না কেন।’
এর আগে উইন্ডসর ক্যাসেলে রাজকীয় আয়োজন শেষে ট্রাম্প বিদায় নেন এবং রাজা তৃতীয় চার্লসকে ‘মহান ভদ্রলোক ও মহান রাজা’ বলে উল্লেখ করেন।
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিন সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই সংঘাতে ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আদতে ইসরায়েলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সামরিক পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দেশটি সহায়তা দিতে গিয়ে উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র (থাড) হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় ওয়াশিংটন তেল আবিবকে সহায়তা দিতে গিয়ে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র হারিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বলছে, এ নিয়ে সম্প্রতি পেন্টাগনের বাজেট নথি প্রকাশিত হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সদ্য প্রকাশিত পেন্টাগনের বাজেট নথিতে দেখা গেছে, গত জুনে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ১২ দিনে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে মোট প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার জোন’ এবং ‘বিজনেস ইনসাইডার’এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নথিগুলোর একটিতে ৪৯৮ দশমিক ২৬৫ মিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল চাওয়া হয়েছে, যা দিয়ে থাড ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা হবে।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলকে সমর্থন দিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ওই ১২ দিনের আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ‘১০০ থেকে ১৫০টি থাড ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য আরও বাজেট বরাদ্দ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
ইসরায়েলকে কি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কোণঠাসা করা সম্ভব? একসময় যেভাবে রাজনৈতিক চাপ, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বয়কটের সম্মিলিত চাপ দক্ষিণ আফ্রিকাকে বর্ণবাদ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, ইসরায়েলেরও কি একই পরিণতি হবে?
নাকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি সরকার সে দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই এই কূটনৈতিক ঝড় সামলাতে পারবে, যাতে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ঘিরে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন?
দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও এহুদ ওলমার্ট কিন্তু এরই মধ্যে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক স্তরে অস্পৃশ্য করে তোলার অভিযোগ তুলেছেন।
নেতানিয়াহু গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন এমন দেশের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জারি করা পরোয়ানা।
জাতিসংঘে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও কানাডাসহ বেশ কয়েকটা দেশ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তারা আগামী সপ্তাহে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো, গত মঙ্গলবার কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই দেশগুলো একত্রিত হয়ে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া জানাতে দোহায় বৈঠকও করছে। যে দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক রয়েছে তাদের আরও একবার ভেবে দেখার জন্য অনুরোধও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গ্রীষ্মে গাজায় অনাহারের চিত্র প্রকাশ্যে আসা, গাজা সিটি আক্রমণ এবং সেখানে সম্ভাব্য ধ্বংসের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির মতো একাধিক কারণে আরও বেশি সংখ্যক ইউরোপীয় সরকার (ইসরায়েলের প্রতি) অসন্তোষ প্রকাশ করছে। নিছক বিবৃতি দিয়েই থেমে থাকেনি তারা।
শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহু নিজেই গত সোমবার স্বীকার করেছেন, ইসরায়েল বিশ্ব মঞ্চে এক ধরনের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হচ্ছে। জেরুজালেমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিচ্ছিন্নতার জন্য তিনি বিদেশে ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারকে দায়ী করেন।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইসরায়েলের প্রথাগত মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইনফ্লুয়েন্স অপারেশন’ অর্থাৎ ইতিবাচক মনোভাব তৈরির অভিযানে বিনিয়োগ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুতে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি থেকে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কেনাকাটা সংক্রান্ত নীতির পর্যালোচনার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বসবাসরত বেলজিয়ানদের কনস্যুলার সহায়তার ওপরও বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ তুলেছিল বেলজিয়াম। ইসরায়েলের দুই কট্টরপন্থি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং বেজালেল স্মোট্রিচকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ (অবাঞ্ছিত বা অগ্রহণযোগ্য) ঘোষণা করেছিল।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশকেই এরই মধ্যে এই জাতীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বাইডেন প্রশাসন সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম দিনই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বেলজিয়ামের ঘোষণার এক সপ্তাহ পর, স্পেনও নিজেদের পদক্ষেপ ঘোষণা করে। বিদ্যমান ডি ফ্যাক্টো অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে আইনে পরিণত করার পাশাপাশি আমদানির ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে তারা।
শুধু তাই নয়, গাজায় গণহত্যা বা যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত যে কারও জন্য স্প্যানিশ ভূখণ্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। অস্ত্র বহনকারী ইসরায়েলগামী জাহাজ ও বিমানকে স্প্যানিশ বন্দরে নোঙর করা বা সে দেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ
ইসরায়েলের জন্য উদ্বেগের কারণ এখানেই থেমে নেই। গত আগস্টে দুই ট্রিলিয়ন ডলার সার্বভৌম সম্পদের নরওয়েজিয়ান তহবিল ঘোষণা করে, তাদের তালিকায় থাকা ইসরায়েল-ভিত্তিক সংস্থাগুলোকে সরানো হবে।
ওই মাসেরই মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ২৩টি কোম্পানিকে ছাঁটাই করা হয়েছিল এবং অর্থমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন এই তালিকা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের ডানপন্থি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সে দেশের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক চুক্তি আংশিকভাবে স্থগিত করার পরিকল্পনা করছে।
১০ সেপ্টেম্বর স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন-এ দেওয়া ভাষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, গাজার ঘটনাগুলো বিশ্বের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।
পরের দিন, ৩১৪ জন সাবেক ইউরোপীয় কূটনীতিক এবং কর্মকর্তারা উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাযা কালাসকে চিঠি লিখে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করাসহ একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানান।
কেন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তুলনা
এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতায় থাকা শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা সেখানকার সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ করতেন। তারই প্রতিবাদে ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকে বর্ণবাদের শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বয়কটের প্রথা দেখা যেত।ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও এখন একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা এই প্রসঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না হলেও এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে ইসরায়েলের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
১৯৭৩ সাল থেকে চারবার এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছে ওই দেশ। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ইহুদি জাতির আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক।
তবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং স্লোভেনিয়ার মতো দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে বা ইঙ্গিত দিয়েছে, যদি ইসরায়েলকে ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় তবে তারা প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসবে।
ফিলিপিন্সে টানা অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট পানির নিচে, শহরের পর শহর কার্যত অচল। কিন্তু এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষোভ প্রকৃতির নয়, বরং সরকারের বিরুদ্ধে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বছরের পর বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন পেসো খরচ হলেও সড়ক, বাঁধ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। এর পেছনে রয়েছে দুর্নীতি ও ‘ভূতুড়ে প্রকল্প’।
এই পরিস্থিতিতে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ। রাজধানীর আশপাশে লেপ্টোসপাইরোসিস নামে এক ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে, যা মূলত ইঁদুরের মল থেকে ছড়ায়।
৩৬ বছর বয়সী এক স্কুল শিক্ষিকা, ক্রিসা তলেন্তিনো, প্রতিদিন পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তায় প্যাডেলবোটে করে স্কুলে যান। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই বন্যাকে জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছি। কিন্তু এবার আমি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।’ তিনি অভিযোগ করেন, প্রতি মাসে নিয়ম করে কর দিলেও সেই টাকা জনগণের কাজে না লেগে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যয় হচ্ছে।
এই ক্ষোভ শুধু একজনের নয়, এখন তা সারাদেশজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মানুষ প্রশ্ন তুলছে, এত অর্থ খরচ সত্ত্বেও কেন প্রতিবছর একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়?
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ ‘বংবং’ মার্কোস জুনিয়র নিজেও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেননি। একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখেন, সেটি আদৌ নির্মিতই হয়নি। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে, যাতে ধরা পড়বে কারা কারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং কত টাকা চুরি হয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, শুধু বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের প্রায় ৭০ শতাংশ দুর্নীতির কারণে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বড় অঘটন ঘটে গেছে সংসদেও। দুর্নীতির দায় না মেনেও স্পিকারের পদত্যাগ এসেছে, যা আরও সন্দেহ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, সিনেটের এক নেতাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ ২০২২ সালের নির্বাচনী প্রচারে তাকে অনুদান দিয়েছিলেন এমন এক ঠিকাদার, যিনি একটি সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছিলেন। এটি ফিলিপিন্সের নির্বাচনী আইনে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
সরকারবিরোধী ক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনেও। টিকটক, ফেসবুক ও এক্স-এ চলছে তীব্র সমালোচনা। জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের সন্তানদের বিলাসী জীবন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
‘নেপো বেবি’ হ্যাশট্যাগে চিহ্নিত করা হচ্ছে সেসব তরুণ-তরুণীকে, যারা সামাজিক মাধ্যমে দামি ডিজাইনের পোশাক, ব্যাগ বা গাড়ির ছবি দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মতে, এসব বিলাসিতা সম্ভব হয়েছে করদাতাদের টাকায়।
সম্প্রতি এক সাবেক সংসদ সদস্যের মেয়ে ফ্যাশন ব্র্যান্ড ফেন্ডি ও ডিওরের পোশাক পরে এবং দামি হারমেস ব্যাগ হাতে ছবি দিলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এই ঘটনার পর অনেকেই তাদের অ্যাকাউন্টের মন্তব্য অপশন বন্ধ করে দেন বা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে দেন।
এদিকে, ‘ক্রিয়েটরস অ্যাগেইনস্ট করাপশন’ নামে একটি নতুন সামাজিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জনপ্রিয় অনলাইন কনটেন্ট নির্মাতা এতে যুক্ত হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রচার চলবে আরও বড় পরিসরে।
বিক্ষোভের ডাকও এসেছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর, রোববার রাজধানী ম্যানিলাসহ দেশের বড় বড় শহরে জনসমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। এই তারিখটিকে প্রতীকী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে, কারণ ১৯৭২ সালের এই দিনেই ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়র সামরিক শাসন জারি করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়রের বাবা ছিলেন সেই সময়কার নেতা, যাকে ১৯৮৬ সালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয়। এবার ইতিহাস যেন নিজেকে পুনরাবৃত্ত করছে।
বলা হচ্ছে, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক জনআন্দোলনের মতো ফিলিপিন্সেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি প্রকৌশলীদের জনসমক্ষে হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মীকে সরকারি ইউনিফর্ম না পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে জনতা তাদের সহজে চিনে ফেলতে না পারে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একটি আক্রমণাত্মক ড্রোন পরীক্ষা তদারকি করেছেন এবং দ্রুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি উন্নয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সিউল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ)-এর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চালকবিহীন ড্রোনটি উড্ডয়নের পর লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করছে।
খবরে বলা হয়েছে, এই মহড়া ‘কুমসং-সিরিজের কৌশলগত আক্রমণ ড্রোনের অসাধারণ যুদ্ধক্ষমতা’ প্রমাণ করেছে এবং কিম ‘ব্যাপক সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছেন।
কিম বলেছেন, ড্রোনগুলো প্রধান সামরিক সম্পদ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিপিআরকে সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে এটি শীর্ষ অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি নতুনভাবে চালু হওয়া এআই প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি ড্রোন উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশ্লেষক হং মিন বলেছেন, কিম ড্রোন প্রযুক্তিকে দেশের ‘মহাশক্তি হিসেবে মর্যাদা’ নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
ড্রোন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কারণ এগুলো কম খরচে বেশি কার্যকর হুমকি তৈরি করে; স্বয়ংক্রিয় মিশন সম্পাদন, নির্ভুলতা ও প্রাণঘাতী ক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাপক উৎপাদনের উপযোগিতা এবং কৌশলগত নমনীয়তা বাড়ায়।
রাশিয়া থেকে শিক্ষা:
পিয়ংইয়ং গত বছর প্রথমবার আক্রমণাত্মক ড্রোন উন্মোচন করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সক্ষমতা রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বাড়তে থাকা মৈত্রী সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা উত্তর কোরীয় সেনারা আধুনিক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, বিশেষত যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের কৌশল।
দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লিম বলেছেন, এআই প্রযুক্তি ড্রোনগুলোকে এমনভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম করে, যাতে জিপিএস বা যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলেও পূর্বপ্রশিক্ষিত অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের ওপর জিপিএস জ্যামিং পরীক্ষা চালায়, যার ফলে বেশ কিছু জাহাজ ও বেসামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লিম আরও বলেন, রাশিয়ার প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০২৪ সাল থেকে উত্তর কোরিয়ায় এআই চালিত প্রযুক্তি দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছে এবং গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম সরবরাহ করেছে।
সিউল জানিয়েছে, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ৬শ’ উত্তর কোরীয় সৈন্য নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।
‘কানাডা এবং মেক্সিকোর নেতারা বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ত্রিপক্ষীয় মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তিকে সমর্থন করেছেন। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক চাপের মুখে এটিকে আরও ‘ন্যায্য’ করতে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
মেক্সিকো সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
মেক্সিকোতে প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের সঙ্গে আলোচনা শেষে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (ইউএসএমসিএ)-এর প্রতি ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
তিনি আরও বলেন, এই চুক্তি উত্তর আমেরিকাকে বিশ্বের সেরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত করতে সহায়তা করেছে।
শেইনবাম বলেন, তিনি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘আশাবাদী’। তবে ট্রাম্প চান, যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পখাতের জন্য সুবিধাজনক শর্তে চুক্তি নতুন করে করা হোক।
তিনি কার্নির সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে ইউএসএমসিএ টিকে থাকবে।’
২০২০ সাল থেকে কার্যকর থাকা এই চুক্তি আগামী বছর পর্যালোচনা করা হবে। এটি মেক্সিকো ও কানাডার অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মেক্সিকো তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ এবং কানাডা প্রায় ৭৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই কানাডা ও মেক্সিকোর কিছু রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন, যেগুলো এই চুক্তির আওতায় পড়ে না। পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসন ও মাদক পাচার বন্ধ করতে না পারলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএসএমসিএ ১৯৯০-এর দশকে হওয়া উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পরিবর্তে এসেছে। গত তিন দশকে এসব ধারাবাহিক চুক্তি উত্তর আমেরিকার অর্থনীতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। এতে তিন দেশের মধ্যে গভীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে।
তবে, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ ইতোমধ্যেই আন্তঃসীমান্ত সরবরাহ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। তিনি চুক্তির আওতার বাইরে থাকা কানাডীয় পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ এবং মেক্সিকান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
এই শুল্ক কানাডার গুরুত্বপূর্ণ অটো, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, ফলে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে মেক্সিকোর অটো ও ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রেও।
কার্নি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পরিপূরক, আমরা তাদের আরও শক্তিশালী করি, আমরা সবাই একসাথে আরও শক্তিশালী।’
তিনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন ইতোমধ্যেই ইউএসএমসিএ পর্যালোচনা করছে, এটি ‘একটি ভালো দিক’। এর ফলে শুল্ক ও স্থানীয় বিষয়বস্তুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ‘ভালোভাবে ও সুচিন্তিতভাবে নেওয়া যেতে পারে’।
রাশিয়ায় দরূপ্রাচ্যের কামচাটকা উপদ্বীপ উপকূলে শুক্রবার ভোরে ৭.৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে স্থানীয় ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়। অবশ্য পরে তা তুলে নেওয়া হয়।
মস্কো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে ঘরবাড়ির আসবাবপত্র এবং আলোর সরঞ্জাম কাঁপতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে রাস্তার পাশে পার্ক করা গাড়ি দুলছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ওই অঞ্চলটির রাজধানী পেট্রোপাভলভস্ক-কামচাটস্কি থেকে ১২৮ কিলোমিটার (৮০ মাইল) পূর্বে এবং ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) গভীরে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
যদিও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ভূতাত্ত্বিক পরিষেবা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৪। পরে আরও পাঁচবার আফটারশক অনুভূত হয়েছে।
মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র আশেপাশের উপকূলীয় এলাকায় বিপজ্জনক ঢেউ আসার সম্ভাবনায় সতর্কতা জারি করেছিল। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেয়।
আঞ্চলিক গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ টেলিগ্রামে বলেছেন, আজ (শুক্রবার) ভোরের ঘটনা আবারও কামচাটকার বাসিন্দাদের সহনশীলতার পরীক্ষা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এসময় সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান গভর্নর।
কামচাটকা উপদ্বীপটি প্যাসিফিক মহাসাগরের চারপাশে থাকা ‘রিং অফ ফায়ার’ নামে ভূমিকম্পপ্রবণ টেকটোনিক বেল্টে অবস্থিত। এটি সুনামি এবং ভূমিকম্প সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত।
জুলাই মাসে, এই অঞ্চলের উপকূলে ৮.৮ মাত্রার মেগা-ভূমিকম্পের কারণে সুনামি সৃষ্টি হয়। এতে উপকূলীয় একটি গ্রাম সমুদ্রে ভেসে যায় এবং প্যাসিফিক এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সব ধরনের সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণে তিন দিনের সামরিক মহড়া শুরু করেছে ভেনিজুয়েলা। বৃহস্পতিবার ‘ক্যারিবিয়ান ২০০’ নামের এই মহড়া শুরু হয়।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নির্দেশে, আমি সার্বভৌম ক্যারিবিয়ান মহড়া শুরু করার নির্দেশ দিচ্ছি। এটি আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা জোরদার করবে।’
তিনি জানান, তিন দিনের এই মহড়ায় ভেনিজুয়েলার সকল ধরনের সশস্ত্র বাহিনী অংশগ্রহণ করবে - মহাকাশ, বিশেষ, পুনর্গঠন, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, নৌ, বিমান, স্থল ও মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে সম্প্রতি মার্কিন নৌবাহিনী মোতায়েনের মধ্যে এই মহড়া পরিচালিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মাদুরোর মতে, ভেনিজুয়েলা গত ১০০ বছরে দেখা সবচেয়ে বড় মার্কিন আগ্রাসনের হুমকির মুখোমুখি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারকারী চক্র পরিচালনা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার যোগাযোগের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
১৯ আগস্ট পেন্টাগন সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মাদক চোরাকারবারীদের হুমকি মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভেনিজুয়েলার কাছে তিনটি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরেক প্রতিবেদনে ইউএসএস নিউপোর্ট নিউজ জানিয়েছে, সাবমেরিন, ইউএসএস লেক এরি মিসাইল ক্রুজার, অবতরণকারী জাহাজ এবং ৪ হাজার ৫০০ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোপনে কিছু ল্যাটিন আমেরিকার মাদক চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে পেন্টাগনকে সামরিক শক্তি ব্যবহার শুরু করার নির্দেশে সই করেছেন।
তবে কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভেনেজুয়েলার নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হুমকির মাধ্যমে তার দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন চাইছে।
ফরাসি সরকারের বাজেট সংকোচন ও কৃচ্ছ্র নীতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মঙ্গলবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে। রাজধানী প্যারিস থেকে মার্সেই, লিওন, নান, রেনেস, মনপেলিয়ে, বোর্দো ও তুলুজসহ বড় শহরগুলোতে জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
শিক্ষক, ট্রেন চালক, হাসপাতালের কর্মী, ফার্মাসিস্ট ও কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রবেশপথ অবরোধ করেছে।
শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বলছে, জনসেবার খরচ কমানো এবং পেনশন পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করার প্রস্তাব সম্পূর্ণ অন্যায়।
তারা দাবি করছে, ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে এবং জনসেবায় বাজেট বাড়ানো হবে।
সিজিটি ইউনিয়নের প্রধান সোফি বিনে জানিয়েছেন, যতদিন না শ্রমিকদের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন আন্দোলন চলবে। তার কথায়, বাজেটের সিদ্ধান্ত রাস্তাতেই হবে।
প্যারিসে সকাল থেকেই বহু মেট্রো লাইন বন্ধ ছিল। ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে এবং স্কুলের প্রবেশপথও বন্ধ ছিল। মার্সেইতে প্রধান সড়ক, লিওনে আবর্জনা জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। নানে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়, রেনেসে একটি বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, মনপেলিয়েতে রাউন্ডঅ্যাবাউট অবরোধ হলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। বোর্দো ও তুলুজে ট্রেন সেবা ব্যাহত হয় এবং কয়েকটি সড়ক বন্ধ হয়।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও প্রভাব পড়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি তিনজন শিক্ষকের একজন ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন।
ফার্মেসি ইউনিয়নের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৮ শতাংশ ফার্মেসি দিনভর বন্ধ ছিল।
সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি ইডিএফ জানায়, ভোরে ফ্ল্যাম্যানভিল পারমাণবিক চুল্লিতে উৎপাদন প্রায় ১.১ গিগাওয়াট কমে যায়।
ফ্রান্সের অর্থনীতি বর্তমানে বড় ধরনের বাজেট ঘাটতিতে জর্জরিত। গত বছর ঘাটতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমার প্রায় দ্বিগুণ। নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকর্নু ২০২৬ সালের বাজেট পাশ করানোর চেষ্টা করছেন, তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তা কঠিন। তার পূর্বসূরি ফ্রাঁসোয়া বেইরু ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর কৃচ্ছ্র পরিকল্পনা নিয়ে সংসদে আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ধর্মঘট ও বিক্ষোভে প্রায় ৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ৮০ হাজার পুলিশ ও জেন্ডারমেরি মোতায়েন করা হয়েছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রিটেইলউ বলেছেন, অন্তত ৮ হাজার বিক্ষোভকারী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। এজন্য দাঙ্গা দমন বাহিনী, সাঁজোয়া যান ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।
ফ্রান্সজুড়ে এই আন্দোলন শুধু অর্থনৈতিক অসন্তোষ নয়, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়নগুলো জানিয়েছে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথেই সরকারের বাজেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে।
উল্লেখ্য, ফরাসি সরকারের বাজেট সংকোচন ও কৃচ্ছ্র নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন কয়েক ধাপে বেড়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘Bloquons Tout’ (Block Everything) তত্ত্বগত আন্দোলনটি মিড-২০২৫ থেকে সক্রিয় হতে থাকে। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই তা রাস্তায় দৃশ্যমান হয়। প্রথম বড় গোলযোগ হিসেবে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ মহাসড়ক অবরোধ, ব্যারিকেড জ্বালানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর ইউনিয়নগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর জন্য দেশব্যাপী ধর্মঘট ও বিক্ষোভ ডাক দেয়।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহে নেমেছে জাজিম নামের একটি অ্যাডভোকেসি সংস্থা। এরই মধ্যে এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাজিমের পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন ৭ হাজার ৫ শতাধিক ইসরায়েলি।
সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইসরায়েলে অবস্থিত বামপন্থি ইহুদি ও আরবদের রাজনৈতিক সংগঠন জাজিম, যারা মূলত বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিবেশের অধিবেশন শুরু হবে। তাদের লক্ষ্য তার আগেই ১০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তাদের পিটিশন সেই অধিবেশনে পাঠানো।
ইসরায়েলে অবস্থিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন জাজিম, যারা বামপন্থি ইহুদি ও আরবদের নিয়ে কাজ করে, তারা স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে একটি পিটিশন শুরু করেছে। এই পিটিশনে এরই মধ্যে ৭ হাজার ৫০০-এর বেশি ইসরায়েলি স্বাক্ষর করেছেন। সংগঠনটির লক্ষ্য হলো, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই ১০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করা এবং তা অধিবেশনে পেশ করা।
সংগঠনটির পিটিশনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ইসরায়েলের জন্য কোনো শাস্তি নয়; বরং এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের উভয় জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মতো কট্টরপন্থি নেতারা বর্ণবাদ ও সহিংসতাকে উসকে দেবেন, যা ইসরায়েলকে ভবিষ্যতে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাব দিতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সে অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৭০ হাজারের অধিক।
এই অভিযান বন্ধের জন্য জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার আহ্বান জানালেও নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল ও জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যা ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজকীয় আয়োজনে নজর কেড়েছেন কেট মিডলটন। স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সফর করছেন ট্রাম্প। তার এই সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হলে রাজকীয় নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। সেখানে প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার বিখ্যাত ‘লাভার্স নট টিয়ারা’ পরে প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে হাজির হন প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন। খবর এবিসি নিউজ।
ভোজ সভায় প্রবেশের সময় উইলিয়াম ও কেট একসঙ্গে হাঁটেন। তাদের ঠিক পরেই প্রবেশ করেন প্রেসিডেন্টের মেয়ে টিফানি ট্রাম্প ও তার স্বামী মাইকেল বুলস।
কেট পরেছিলেন ব্রিটিশ ডিজাইনার ফিলিপা লেপলির ডিজাইন করা সোনালি রঙের একটি গাউন এবং বিখ্যাত লাভার্স নট টিয়ারা। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ঐতিহ্যবাহী অলংকারের একটি এই লাভার্স নট টিয়ারা মুকুট। এই সাজে তিনি সবার নজর কেড়েছেন। মুক্তা ও হীরার তৈরি এই টিয়ারাটি কেট আগেও বহু রাজকীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করেছেন। এটি তৈরি করা হয় ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ রানি মেরির জন্য। তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দাদি ছিলেন। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মুকুটটি ডায়ানাকে দিয়েছিলেন। তারও প্রিয় অলংকার ছিল এই মুকুট।
ভোজ সভায় কেটকে বসানো হয়েছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে। ট্রাম্পের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। ভোজসভায় প্রবেশের সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।
দিনের শুরুতে উইলিয়াম ও কেট উইন্ডসর ক্যাসেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডিকে স্বাগত জানান। উইলিয়াম পরেছিলেন গাঢ় স্যুট ও টাই, আর কেট পরেছিলেন মেরুন রঙের কোট ড্রেস এবং হ্যাট। তারা মেরিন ওয়ান থেকে নেমে আসা ট্রাম্প দম্পতিকে করমর্দনের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানান।
ট্রাম্প আধুনিক সময়ের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ব্রিটিশ রাজপরিবারের কাছ থেকে দুবার রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও তাকে আতিথেয়তা দিয়েছিলেন।
পরে ট্রাম্প দম্পতি ও রাজপরিবার ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে উইন্ডসর ক্যাসেলে যান এবং সেখানে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে নিয়ে রয়্যাল কালেকশনের প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এরপর কেট ও উইলিয়াম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নিয়ে একই প্রদর্শনী পরিদর্শন করান।